১৪ নভেম্বর ২০২০

তৈমুর খান এর দুটি কবিতা



কীর্তন


ঘরে ঘরে বৃষ্টি নামবে 

আজ কীর্তনের আসর বসেছে

মেঘ ছেয়ে গেছে সারা পাড়া 

তুমি পড়শির মেয়ে

আমি মাখন চোরা


পাঞ্জাবিতে ফুল ফুটেছে 

ততোধিক সুগন্ধ আনকোরা

সারারাত ঝরবে আলো 

জ্বলবে বিষহরি


তুমি বলবে জয়দেব

আমি বলব পদ্ম

প্রেমে দামোদর ভাসবে

জগৎ হবে অন্ধ।



 নৌকা নদী গান


তোমার দেহ হিল্লোলিত নদী 

চোখদুটি নৌকা-ভ্রমর

আমার এখন তাই 

স্বচ্ছ নাবিক হতে দেরি


চোখে ভাসে নৌকাডুবি 

কান শোনে ঢেউয়ের গর্জন

তবু শান্তি পারাপার ছবি

জলজ মায়ার শীতল সোহাগ


ঠান্ডা আলো বিস্ময়ের গান

তীব্র শরীরী নিমন্ত্রণ

গতির ভাষাও শিখে নিই 

সংকেত বাজাতে থাকে 

               নিষিদ্ধ স্বরলিপি।

ফাহমিদা ইয়াসমি

কবির নদীতে জমা শখ


সোনা রোদে এঁকে যাই তোমার ছবি

তুমি ব্যস্ত নগরীর ভ্রান্ত পথে ছোটা কবি

দেখে যাই তোমার নাগরিক জীবন, ধূলোমাখা সময়

কখনো কাব্যের শরীর খুঁজে দেখেছো কি কয়?


আমি জানি তোমার বাঁকে বাঁকে শব্দ জয়ের জিদ

রাতকে নদী করো দিনকে ছুটি দেওয়া হারানো নিদ

নিদ্রা হারানো তুমি রঙিলা পাখির পাখা ঝরা দুপুর

চলো ছবি নয় কবি হই কবিতার শব্দে গাথা নুপুর।


ভুলগুলো তুলো হয় ঝরে যাউক শিশির হয়ে

আমাদের সুখগুলো দুঃখকে ছুটি দেওয়া দ্বন্দ ক্ষয়ে।



                                        ( যুক্তরাজ্য ) 

শ‍্যামল রায়



নীল খামে চিঠি


নীল খামে চিঠি, নীল আকাশে

তুমি বৃষ্টি , উত্তরের জানালায় বাতাস।

 তুমি  বৃষ্টি হয়ো, বৃষ্টি পাবো

 তৃষ্ণার্ত মনে-- সোহাগ দিয়ে

নতুন প্রাণে ভালোবেসো।

সজীব হয়ে উঠবো তোমায় পেয়ে

নতুন পৃথিবী তো -------

নীল খামে পাঠানো একটি চিঠি আকাশে।

বুকের উপর বৃষ্টির ফোটায়

সোহাগ ভরা অক্ষরে অক্ষর

আমাকে ছুঁয়ে দেখো আলিঙ্গনে

তুমিতো বৃষ্টি ফোটা-----।

রং তুলির টানে প্রতিটি সাদা পাতায়

অক্ষরে ভালোবাসার গন্ধ হয়ে থেকো

নীল খামে চিঠি পাঠালাম,

নীল আকাশে ,আঁকড়ে ধরো

আঁচলে জড়িয়ে চিরদিনের মতো।

সজীব হয়ে উঠবো, তোমায় পেয়ে

তুমি তো এক নতুন পৃথিবী হবে

 শুধুই আমার কাছে--------।

রণজিৎ সরকারের আঞ্চলিক লিমেরিক



অসুরোছায়া


বছর বছর কী কামে আস তুমি মা গো

দশ হাত তুইলা আশিষ বিলাও  কাগো

অসুরেরা চারিদিকে হামলায়

দাপাদাপি অগো কেডা সামলায়

বাঁচতে যদি চাও তয় ইহান থিকা ভাগো

জারা সোমা

অখন্ড


প্রিয় হেমন্ত, চুপিচুপি এসে কতোই না কথা বলো 

নতুন করে জানতে চাও কুশল সংবাদ 


প্রতিরাতে বিছানার পাশে সাজিয়ে রাখো কামিনী

নিজের প্রতি যত্ন নিইনা বলে অভিযোগ করো

শীতল বাতাসে ভেসে বাড়িয়ে দাও ক্ষুধা 

নিঃস্ব রিক্ত করে প্রমাণ করো ভালোবাসা 

তবুও পারিনা তোমাকে ছুঁতে 


প্রতিবার মনে হয় সংসার করব তোমার সাথে

তোমাকে দেব নবান্ন-ঘ্রাণ

চাষিবউয়ের মতো মেখে দেব একথালা পান্তা 

খেলব রোদ-ছায়ার বাঘবন্দিখেলা 


তবুও শেষ পর্যন্ত পারিনা কিছুই 


আমার অশ্রুসিক্ত কলমে লেখা হয় ধর্মগ্রন্থ 

বিষাক্ত কীট প্রতিবার খুঁচিয়ে তোলে বিভেদ 

দাঙ্গার ছক কষে মন্দির-মসজিদে 


প্রিয় ঋতু প্রতিদিন ভাঙে আমার স্বপ্ন 

প্রিয় হেমন্ত আমাকে দাও অখন্ড নিজস্বতা।।।

সাইফুল আলিম এর গল্প



আসামীর জবানবন্দি


বিজ্ঞ আদালতে একজন মেয়ে তার স্বামীর বিরুদ্ধে সি আর মামলা দায়ের করা হয়েছে অভিযোগটি ছিল ৫০০০০০ (পাঁচ লক্ষ টাকা) যৌতুক দাবি করে মারধর করে। অভিযোগের ভিত্তিতে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয় এবং পরবর্তীতে ধার্য তারিখে আদালতে আসামী স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করার জন্য এ্যডভোকেট সাহেব এর মাধ্যমে আদালতে হাজির হয়। বিজ্ঞ কৌশলির শুনানীন্তে বিচারক সাহেব আসামীকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে যে,

তুমি যদি আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দাও তাহলে তোমাকে পুরষ্কার দেওয়া হবে ।


সত্যি বলছেন সার!


জি আজ্ঞে সত্যি বলছি 


নাম কি তোমার ?

হেসে হেসে বল্লো - প্রান্ত 

কি করো তুমি ?

ব্যবসা। 

তোমাদের বিয়ে হয়েছিল কতো দিন হলো?


এক বছর তিন দিন।


নাম কি তোমার স্ত্রীর?

নদী। সার্টিফিকেটে - তামান্না আক্তার নদী 


কাবিন হয়েছে কতো টাকা?

৫ লাখ টাকা।


ডিভোর্স দিয়েছো বিয়ের কতো মাস পর?


তিন মাস পর। 


ভরনপুষন এর খরচ দিয়েছো ?


না সার ।


মেয়ের কাবিনের টাকা কখন দিয়েছো?


দেই নাই। 


মেয়েকে নিয়ে সংসার করবে না কেন?


মেয়ে ভালো না,

কি খারাপ মেয়ে তোমাকে পাগলের মতো ভালবাসে?


না সার,স্বাভাবিক ভাবে ভালোবাসতো। তবে অন্য ছেলের সাথে হষ্টিনষ্টি করতো ।


মেয়ের বাবা কি করে?


রিক্সা চালক।


প্রেমের বিয়ে না ম্যারেজ ?


হেসে হেসে বল্লো - লাভ ম্যারেজ।


তাহলে কি তিন মাসে ভালবাসা ফুরিয়ে গেছে? তিন মাসে  তো বিয়ে করা বৌ এর ঘ্রান ই  যায় না।


একটি মুশকি হাসি দিয়ে......


সার মেয়ে সুন্দর চেহারা দেখিয়ে আরো কয়েকটা ছেলের সাথে রিলেশন করেছে ।


তুমি দেখেছো 


না সার শুনেছি।


কোথায় থেকে শুনেছো? কে বলেছে তোমাকে?


অনিকা।


কে সে?

বোন সার, অনিকা আমার ছোট। সে আই এ থার্ড ইয়ারে আছে সার।

খুব আদরের দুলালি সার।

মাঝে মাঝে অন্য বোনের সাথে ঝগড়া করে।

কিন্তু আমাকে খুব ভালোভাসে।


তুমি কয়টি মেয়ের সাথে প্রেম করো।


সাতটি । 


কয় নাম্বার প্রেম তোমার?


আট নাম্বার। সার বিথিলা ও ব্রেকি এই মাল দুটি অনেক কিউট সার। শাপলা সার আরো সুন্দরী সার। না দেখলে বিশ্বাস ই করতে পারবেন না সার।


কতোটা wetting?


ছয়টি। 


কিভাবে তাদের সাথে প্রেম হয়েছে?


সব সার ফেইসবুক কালেকশন। ফেইসবুক পছন্দ মেসেন্জারে প্রেমালাপ। তার পর সার আরো কতো কি........... 


টাকার জন্য কে গিয়েছিল তোমার বাবা মা না তুমি?

আমি যাইনি সার,  আমার মা পাঠিয়েছে।


তোমার ব্যবসার প্রয়োজনে কতো টাকা চেয়েছিলে তাহার কাছে?

মাত্র দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলো মা ।

কি বলেছে? দেওয়ার কথা বলেছে কি?


না সার,

মা, বাবা তো রিস্কা চালিয়ে আমাদেরকে অন্ন বস্ত্র দিতে কষ্ট হয়ে যেতো কিন্তু আমাদের পড়া লেখার খরচ দিতে পারতো না। আমি টিউশনি করে ভাই বোনের পড়া লেখার খরচ চালাতাম। কোথায় পাবো এতো টাকা?

দেশে যায়গা জমি বিক্রি করে আমার ছেলের ব্যবসার জন্য টাকা নিয়ে আসো যাও। আমার ছেলের জন্য কোটি পতি মেয়ের বাবা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে ।

বুঝতে পেরেছো? 


উকিল সাহেব কিছু বলার জন্য দাড়িয়ে গেলে.......


অর্ডার অর্ডার অর্ডার কেহ আদালতে হৈ চৈ করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।

বিজ্ঞ লার্নেড অনুগ্রহ করে বসে পড়ুন। জবানবন্দি রেকর্ড করে নেই তার পর আপনি যা যা বলার বলবেন।


আপনারা কয় ভাই কয় বোন?

তিন ভাই ৫ বোন।

পড়া লেখা কতোটুকু করেছো ?


আন্ডার মেট্রিক।


স্ত্রী কি পাশ করেছে?

এই ধরেন বিয়া পাশ।


মানে?


বাদী পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবী দাড়িয়ে

অবজেকশন ইউর অনার ।

আমার মোয়াক্কেলকে ইনসাল্ট করা হচ্ছে।

আমার মোয়াক্কেল বি. এ পাশ করেছে সার।


আদালতে সবাই হাসা হাসি করতে লাগলো....


অর্ডার অর্ডার অর্ডার।


ডিভোর্স লেটার কে পাঠিয়েছে?


উকিল সাহেব।


ডিভোর্স দেওয়ার কথা কে বলেছে তোমাকে?


মা আর অনিকা।


বর্তমানে কি বিয়ে করেছো?

না সার, তবে ফাইনাল কথা বার্তা চলছে আগামী সপ্তাহে বিয়ে করাবে বলেছে অনিকা,অনিকা ও মা মেয়ে অনেক সুন্দরী আবার দশ লাখ টাকাও দিবে বলছে।

সেই টাকা দিয়ে সার এবার আমরা মাছের আড়ৎ এ বড় দোকান পজিশনে লইতে পারবো।


কিসের টাকা?


এখনকার যুগে ছেলেকে কিছু দিতে হয় না সার। ঐটাই

অনেকেই বলে এটা নাকি যৌতুক।

আমাকেও ব্যবসা করার জন্য পাচঁ লাখ দেবে আপাতত ...

আসামী পক্ষের আইনজীবী খুব ফেডাপ হয়ে আছে আসামীর প্রতি।


কোর্টের পিউন - আদালত নামছে

আসামী চিৎকার করে বলতে থাকে

সার আমার পুরুষ্কাকার।


ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব মুচকি হাসি হেসে বললেন

তুমি জেলখানার মধ্যে কয়েক বছর ঘুরে আসো তার পর তোমাকে পুরুষ্কাকার দেওয়া হবে। 


নথি পর্যালোচনায আদেশ,আসামী ভিতরে যাবে।

শর্মিষ্ঠা মজুমদার



মৌরুসী-পাট্টা

গাছ,তুমি এত অগোছালো কেন?

ডালপালা এমন ভাবে  ছড়ায়!!

জানোনা! এটা মরুভূমি

এখানে শুধু  কাঁটা জন্মায়...

মোড়লের কথায় ,বিষন্ন গাছ বলে,

জীবন আগুনে জ্বলে-পুড়ে 

মানুষ  দুপুরে , আমার ছায়ায়

একটু শান্তি পায়,সে কি বৃথা তবে?

আর ঐ পাখিগুলো ! যারা গান গায়

তারাই বা বাঁচবে কিভাবে ?

শুনে মোড়ল বলে,ভুলে যাও সব

তোমার যত ছল,বড় হওয়ার কৌশল,

কৌলীন‍্য কোথায় তোমার,বুনো ভূত

জঞ্জাল,আগাছা কোথাকার!

গাছের পাতা মৃদু দুলে বলে,

ক্ষতি কি,যদি আমার মত 

দু একটা বুনো আগাছা জন্ম নেয়?

কাঠফাটা দুপুরে ,তবুওতো 

একমুঠো ,শান্তি কাউকে দেয়।।

পার্থ ব্যানার্জ্জী


ফেরাবে


তোমার দু'চোখের আলতো ঢেউ

দেখে ধরতে হাত বাড়ালাম

তুমি পাখি হয়ে উড়ে গেলে,

আকাশকে কতো ডাকলাম

সাড়া দিলো না, চুপচাপ। 

বাতাসকেও ডাকলাম, চুপ।

কাকে ডাকবো, ভেবে পাচ্ছিলাম না,

হঠাৎ মনে পড়লো আলোর কথা,

গাছেদের কথা, পাহাড়ের কথা।

ওরা নিশ্চয় শুনবে, আমাকে বুঝবে,

ভালোবাসার ইচ্ছাকে সমুদ্র হয়ে

বারবার ঢেউয়ের দোলায় দুলিয়ে

ফিরিয়ে ওকে আনবোই,

আনন্দ নিয়ে বাঁচার নাম জীবন,

সেটা ওকে দেখিয়ে দিতে হবে, 

পারবে ওরা, আমার প্রিয় বন্ধুরা,

ওকে হারিয়ে যেতে দেবে না,

পালিয়ে যেতে দেবে না কিছুতেই,

বিশ্বাস বারবার জোর দিয়ে বলছে,

ফেরাবোই প্রিয়ার ওষ্ঠের ললিত স্বর

আর তোমার ভালোবাসা,

দেখেছি ওদের চোখে একরাশ

আশা, ফিরিয়ে আনার ভরসা।

ফিরিয়ে আন বন্ধুরা প্রিয়তমাকে।

মুন চক্রবর্তী

 


দীপান্বিতা 



 প্রদীপ আলোতে ভেসে আসছে অন্ধকারের বন্দনা

জ্বলে উঠে নিঃশব্দ তরঙ্গ শিখা রেখে যায় অমলিন শিশির কণা।

বিন্দু থেকে সিন্ধুপারে লিখে গেছে আরধনার সাহিত্য

প্রচ্ছদের শরীর ছুঁয়ে সৃজন কল্পে আলোক মন্ডিত 

দীপান্বিতার আশায় প্রদীপ সমীপে শান্ত শিখা।

গোলাম কাদের



মানচিত্র

বিন্দু বিন্দু দূষিত ঘামে রক্তে জমাট বাঁধা,

ইতিহাসের লুপ্ত ইতিহাস অজস্র আঁকা!


ফোস্কা হাতে নিরন্তর কোদাল, গাঁইতি, শাবল

ইটে ইটে নখের আখর কীর্তি নত স্বর্নোজ্জ্বল।


ক্রমে সমতল ছেড়ে সাগর থেকে হিমালয়ে

পরিচয় দিয়ে বদলে যাচ্ছে পবিত্র মাতৃকোলে।


সৃষ্টির উল্লাসে মগ্ন নীরব ভগবান 

পোড়া চাম পায়ে দুর্গন্ধ ভুবন আলোকিত। 


কঙ্কাল বুকে খোদাই বহু ব্যথার উপগল্প। 

স্ত্রীলোক বিড়ি বেঁধে খেতে পায় খুব অল্প! 


 দেশ গড়ার দায়ে ওরা বাড়ি থেকে দূরে দূরে 

ভেঙে পড়েছে বাড়ি, আর্ত পরিবার অনাহারে। 


দেশ টা যাদের জন্য, যাদের কল্যাণে গড়া 

মিথ্যা গনতন্ত্র, মিথ্যা শপথ ফানুষে মোড়া। 


ভোট বাক্স হাপিত্যেশে গলা ছেড়ে হাঁকে, ওহে

কোথায় তুমি, অভুক্ত আমিও তোমার মত যে!