২৮ নভেম্বর ২০২০

জাফর রেজা



পৃথিবীর ভিড়ে 

কোনদিন যদি তার সাথে

দেখা হয় আবার 

পৃথিবীর পথে,

হয়তো তখন নীল হারিয়ে যাবে

আকাশকে সিঁদুর পরিয়ে

ক্লান্ত পাখিরা

ফিরে আসবে পৃথিবীতে।

জেগে উঠবে নক্ষত্র

খণ্ডিত চাঁদের ম্লান আলোয়

সেই  নারী জানতে চাইবে

কেমন ছিলে, কেমন আছো ?

মৃদু হেসে বলবো,অবশেষে ফিরে এলে , 

তোমাকে হারাইনি তবে

পৃথিবীর ভিড়ে ?

‌মোঃ হা‌বিবুর রহমান মুক্তগদ্যে তুলে ধরলেন মন-মানুষে কথা



অধরা মন

মন জা‌নে না ম‌নের খবর, কথাটা ঠিক আ‌ছে কিন্তু কিছু ব্যাপা‌রে মনটা আবার বেশ এক‌নিষ্ঠভা‌বেই কাজ ক‌রে আর মন ঠিকই তার পছন্দসই জি‌নিস‌টি, ম‌নের মানুষ‌টি বা একান্ত প্রিয় বস্তু‌টি বাছাই ক'র‌তে কিন্তু একদমই ভুল ক‌রে না।


মানু‌ষের দু‌'টি মন থা‌কে। এক‌টি প‌জি‌টিভ মন আর অপর‌টি নে‌গে‌টিভ মন। প‌জে‌টিভ মন মানু‌ষকে ভাল প‌থে চালায় আর নে‌গে‌টিভধর্মী মন‌টি মানুষকে মন্দ বা খারাপ প‌থে প‌রিচালনা ক‌রে থা‌কে। 


খারাপ ও ভাল ম‌ন্দের ঠেলা‌ঠে‌লি বা দ্ব‌ন্দ্ব চ‌লে রাত‌-দিন অহ‌র্নিশ। ‌শেষ‌মেশ এ‌দের জয়-পরাজয় নির্ভর ক‌'রে স‌র্বোপরী মানু‌ষের ইচ্ছাশ‌ক্তি বা 'Will Power' এর উপর। 


খারাপ মন‌টি কোনক্র‌মে ভাল ম‌নের উপর প্রভাব বিস্তার ক'র‌তে পার‌লেই কিন্তু ভাল মানুষ‌টি ‌নি‌জেই নি‌জের কাছে নি‌মি‌ষেই হে‌রে যে‌য়ে হ‌'য়ে যায় মুহূ‌র্তেই যেন একদম কু‌পোকাত বা ধরাশায়ী । 


ভাল-ম‌ন্দের এমন দোলাচা‌লে তাই মানুষ জয়ী হ‌'তে পার‌লেই কিন্তু তাঁরা একটা বেশ সন্মানজনক স্থা‌নে পৌঁছা‌তে পা‌রে আর এ কা‌জে যারা ব্যর্থ হয় তারাই প‌রিণা‌মে কিন্তু আস্তাকু‌ড়েই নি‌ক্ষিপ্ত হয়।

মতিয়ার মিল্টন



প্রথম বেলার রৌদ্র

প্রথম বেলার রৌদ্রের মত পথ চলার দৃপ্ত প্রত্যয়ে--অনেকটা পথ হেঁটে এসেছি।

পড়ন্ত বিকেলে,ঢলে পড়া সূর্যের মত পাটে বসে আয়ুস্কাল হাতছানি দেয়;

যেন জীবন থমকে যাবে গোধূলি বেলায়!


শেষ বিকেলের রৌদ্র ওম হয়ে মিশে থাকে রাতের শরীরে,

তাই সকালে সোনা হয়ে ঝরে।


অথচ জীবন থমকে যায় ট্র্যাফিক-জ্যামে,

রৌদ্রের মত নতুন করে যায় না বারবার শুরু করা।


গোধূলি লগ্নে এসে সোনালী অতীতও ফিকে হয়ে যায়।

তবু অপেক্ষায় থাকি --

রাত্রি সাগর পাড়ি দিয়ে প্রথম বেলার রৌদ্র হতে।


কিন্ত জীবন ডুব দেয় একদিন সাগরের বুকে, 

সূর্যের মতো ফিরে আসে না আর সকাল হয়ে।

আইরিন মণীষা


  প্রতীক্ষা

সেদিন তুমি এসেছিলে

ক্ষনিকের তরে ওগো তুমি,

কেন যে আমায় ভালো বেসেছিলে

এখনো প্রতীক্ষায় আছি আমি।। 


ভালোবেসে তুমি বলেছিলে

যাবে না তুমি আমাকে ছেড়ে,

প্রতীজ্ঞাবদ্ধ তুমি বেশ কেঁদেছিলে

নিয়েছিলে তুমি আমারি মন কেড়ে। 


যাবার বেলায় তুমি লিখেছিলে

আসবে তুমি ফিরে আমার জীবনে, 

আমার ক্রন্দনে তুমি খুব হেসেছিলে

আর বলেছিলে তুমি ফিরবে সৃজনে।


বিদায় বেলায় বলেছিলে

আজীবন তুমি রাখবে মোরে ধরে,

সত্যিই কি যে তুমি ভেবেছিলে 

তোমারি বিহনে আমি থাকব মরে পড়ে।

রেহানা বীথি



কমলা পাহাড়ের আগুন ও নক্ষত্র দৌড়

তারপর খুলে রাখলাম জলের বোতল 

আর চেয়ে দেখলাম 

কোনও কোনও হারিয়ে যাওয়া কিংবা আবির্ভাব 

যখন নক্ষত্রদের একান্ত দৌড়ের ভেতর 

আমরা তো কিংবদন্তি ভ্রমণ পিপাসু 

আমরা তখন তারাদের সাথে হাত মেলাচ্ছি... 

ক্যানভাসে এঁকে নিতে চাইছি  অর্ধসমাপ্ত সেই মুখচ্ছবি 

জলের বোতল থেকে বেরিয়ে আসছে বুদবুদ 

একটি শলাকা এবং বারুদের গন্ধে 

পুড়ে ছাই হতে হতে একটি কমলা পাহাড় 

নিজস্ব আগুন জ্বেলে দিচ্ছে সপ্তাহের জমানো স্তূপে

শ্যামল রায়



কবিতার জন্য প্রহর গুনছি 

কবিতার নাম আর কতক্ষণ

কবিতা তুমি কি করছো ---

খেয়েছো?

সব কাজ সেরে ফেলেছো?

আর কতক্ষণ!

আমাকে অপেক্ষা করতে হবে?

কবিতা তোমার সাজগোজ হয়েছে

আকাশী রঙের শাড়িটা

ঠোটে লিপিস্টিক

কপালে টিপ

এসবের কাজ

শেষ হয়েছে কবিতা!

আর কতক্ষণ

আমি তো অপেক্ষা করছি

অনুভবে অনুভূতিতে  প্রহর গুনছি

দু ঠোঁট এগোচ্ছে বারবার

ভালোবাসার কাছাকাছি

সম্মতি চাইতে----

কবিতা তুমি কোথায়?

তোমার চিঠিটা এখনো খামে আছে

মন বলছে ,চিঠির মধ্যে

 তোমার অনেক আদর সযত্নে রাখা

এখন শুধু অপেক্ষা রিংটোন এর

খুঁজি বৃষ্টির জন্য

উষ্ণতায় তোমার হাত দুটি ।

আঙ্গুলগুলোয় ছুয়ে দেখতাম

আর কতক্ষণ।

তোমার জন্য বালিশের কাছে

 রেখে দিয়েছি, গোলাপ

একটি রিংটোন পেলে

শরীরের ভেতর অনুরণন হতো

তাই প্রহর গুনছি

 অপেক্ষার পর অপেক্ষায়।

অলোক দাস এর আতিত জড়ানো মুক্তগদ্য



জেনারেশন 

অপূর্ব বিশ্লেষণ, এতো আমার জীবনের কথা, হ্যাঁ, কলেজ পাশ কোরে হটাৎ প্রফেসর দেখা দিলে রাস্তায়, সিগারেট অমনি মুখ থেকে পড়ে যেতো, ছেলে মেয়ে একসঙ্গে গুলি খেলেছি, ভাইবোন হারিকেনের আলোয় চিৎকার কোরে পড়াশুনা করেছি, পাঠশালাতে মাস্টারমশাই বেত দিয়ে মারতো যদি অঙ্ক ভুল হতো, বাড়ি এসে কিছুই বলতাম না, পাড়ার দাদারা কিছু অন্যায় করলে মারতো, বাড়িতে বলতাম না, বেশি সময় মাঠে খেলতাম, আজ আর মাঠটা নেই, দশতলা বাড়ি হোয়ে গেছে, পুকুরে ছিপ ফেলতাম, অনেক মাছ ধরতাম, পুকুরের মালিক এলে, জামা প্যান্ট সমেত পুকুরে জাপ মারতাম, ভোর চারটে উঠে দুই বন্ধু মিলে আম চুরি করতাম, মালিক বলতো কে? আমরা বলতাম তোর বাবারে, মালিক ভয়ে আলো নিভিয়ে দিতো, সেই গাছ ও মালিক ও নেই, বাড়ি হয়ে গেছে, পুকুরে বিনয় ও আমি দু ঘন্টা চান করতাম (বিনয় পাঁজা, মোহনবাগান ক্লাবের স্ট্রাইকার ছিলো ), বাড়ির পাশে জঙ্গল ছিলো, শিয়াল ডাকতো, স্কুল ছুটি দেবে না, এ কখনো হয়, সামান্য বৃষ্টি, সবাই মিলে সব বেঞ্চি জলে ভিজিয়ে দিতাম, হেডমাস্টার আসতো, মালি ঘন্টা বাজিয়ে দিতো, ছুটি ছুটি, আমাকে ভাড়া কোরে ক্রিকেট খেলতে নিয়ে যেতো অনেক ক্লাব, বন্ধুরা বাড়ি আসতো, চ আজ খেলা আছে, আমি হয়তো মাদুর পেতে পড়ছি, মাকে বল, মাসিমা আজ খেলা আছে, মাকে ভীষণ ভয় পেতাম, চার /পাঁচটা উইকেট বাঁধা ছিলো, কতো প্রাইজ, আজও আছে, হ্যাঁ, আমরাই শেষ জেনারেশন, বয়স্ক বৃদ্ধ, বৃদ্ধাদের সম্মান করেছি, আমরাই রেডিওতে BBC খবর ও গান শুনেছি, এখন আর ভেসে আসে না, আকাশবাণী, খবর বলছি দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, নমস্কার,

মাহমুদা রহমান ( যুক্তরাষ্ট্র )



ফেরিওয়ালা 

আমি ভালোবাসার ফেরিওয়াল

 নই ,

আপন মনে মনের কথা কই !

মন যে এক উদাসীন গায়ক পাখী ,

হৃদয়ের ধূলা মাখামাখি কাদা  

মুখ লুকিয়ে কাঁদি ! 

গাছের মত ছায়া আমার নাই ,

রৌদ্রজলে কাতর আমি তাই ,

সবার দুঃখে ভারাক্রান্ত হই 

জন্ম কেনো বিষন্নতা নিজের 

মনে সই।

আব্দুল কাইয়ুম (প্রিয়ম)


  ছ্যাঁচড়া যাযাবর

যার জন্যে বাঁধি ঘর

সেই আমারে করে পর।


হাতের তালুর উল্টো পিঠে মুঁছি চোঁখের জল

জলের মূল্য দিবে দেখি কেউ নাই এ ধরাতল!


কেঁটে ফেলা বৃৃক্ষের যে ঘোড়া 

অনেক কষ্টের পর

 ফের সেও দেয় জন্ম  ডাল দুই জোড়া।


ছোট গল্পের মতো শেষে রয় সে রেশ

সেখান থেকেই শুরু বেশ

ভাঙনে ভাঙনে ফের মনটা ভাঙাচোরা।


তার বহু বছরের ও পর

আসলো যে মেঘ বালিকা

প্রযত্নে দিলো মনোবল আমি তো আছি

নিজে যে করে নিলো ঘর

ভাবা যায় অতঃপর

খেলারত সেও করিলে শেষে পর।


মুখোশ পরিহিত  

নকল মানুষ দেখেছি জীবনভর


আমাকে রাত জানে ভালো আপন

জানে পথের ধুলাবালি অলিগলি তেপান্তর -


জানে আকাশের তারা

 মিটিমিটি জ্বলা নেভা জোনাকিরা

জানে শুল্কপক্ষের চাঁদের আলো ছু-মন্তর 

 আমি সব হারিয়ে  নিঃস্ব;  এক ছ্যাঁচড়া যাযা

প্রবীর বেপারী




 গোধূলী বিকাল

গোধূলী বিকালে বসেছি নির্জনে 

মিষ্টি রোধ বিদায় জানালো

আঁধার আসলো নেমে।


হঠাৎ দৃষ্টিতে সম্মুখে তাকাতে 

দেখতে পাই এক প্রতিচ্ছবি,

ধূসর কালো কেশে 

দাড়িয়েছে সকাশে

অধরে মৃদু হাসি।


হস্তে প্রদীপ পড়নে শাড়ী

মনে হয় যেন সে প্রেমের রাই কিশোরী।

কি অপরুপ দেখিতে সেই রুপ!

ভুলিতে নাহি কোনো কালে,

সে প্রেমের পূজারী দীন ভিখারী

আমি বন্দী তার মায়াজালে।