২৬ অক্টোবর ২০২১

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৩৩

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "





                             টানাপোড়েন (৩৩)
                                        অজানা আতঙ্ক


                                                    জ কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা। সকলে ঘরে ঘরে  মা লক্ষ্মীর আরাধনা করবে ,যাতে গৃহে সুখ-সমৃদ্ধি শান্তি বজায় থাকে । রেখা গতকাল স্কুল থেকে ফেরার সময় একটু বৃষ্টিতে ভিজেছিল। মনে হচ্ছে গা টা সকাল থেকেই একটু ম্যাচ ম্যাচ করছে ,মাথা যন্ত্রণা করছে, জ্বর জ্বর ভাব। এসব উপেক্ষা করে লক্ষ্মী পূজার জোগাড়ে মেতে উঠেছে ।সকাল থেকে কাজ গুছিয়ে নিয়ে ,স্নান করে মা লক্ষ্মীর ভোগ রান্না করে ,তারপর পুজোয় বসেছে ।এর মধ্যে একবারও মনোজ কোন খোঁজ খবর নেয় নি। সারাক্ষণ ভেতরে ভেতরে দুশ্চিন্তা 'যেন একলা আকাশ থমকে গেছে কোন এক....।' পুজোর জোগাড় করছে বটে ,কিন্তু মনোজের জন্য খুব টেনশন হচ্ছে ।আজকাল ঘনঘন মনোজের ফোন আসে। যদিও কোনো কালে রেখা ফোনের ব্যাপারে কৌতুহলী হয় নি ।তবে আজকে একটা কথাতে রেখার মনে খটকা লেগেছে ।কি হতে পারে?
 মনোজ কেন ওই কথাটি বলল 'এখন আমার পক্ষে সম্ভব নয়।'
'ভাবতে ভাবতে কাজে ভুল হচ্ছে। ওদিকে সকালের সব কাজ গোছানোর পর সুমিতা এসেছে। কিন্তু  তাকে কিছু বলার প্রবৃত্তি রেখার আজকে হয় নি ।কি বলবে ?পুটু চলে যাবার পর থেকেই এই মেয়েটি কাজে এত দেরি করে আসে ।আবার কোনদিন আসলোই না।   কামাইও প্রচুর। এই জন্য রোজ রোজ কথা বলতে ভালো লাগে না ।আজকে তো ইচ্ছেই করছে না। বাসন গুলো ছিল ,সেগুলো মেজে দিয়ে চলে গেছে। যাবার সময় বলল ' বৌদি বৌদি  বৌদি।'
রেখা ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে বলল 'চিৎকার করছো কেন?'
সুমিতা বলল  'কালকে আমাকে মাইনের‌  টাকাটা দিয়ে দেবে?,'
রেখা বলল ' এখনো তো মাস শেষ হয়নি?'
সুমিতা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল 'আমার খুব দরকার তাই..?'
রেখা বলল 'ঠিক আছে। নিয়ে নিও। সবকিছুই ঠিক আছে সুমিতা। তুমি কাজে কেন এতো লেটে আসো ?আবার যেদিন আসো না ,সেদিন বলেও যাও না। এতে যে আমাকে কত অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় ,সেটা যদি তুমি একটু বুঝতে?'
সুমিতা শুধু  পায়ের উপর পা ঘষে যেতে লাগল আর চুপ করে থাকলো।
 কালকের দিনটা সুমিতা যে কাজে আসবে ,রেখা নিশ্চিত হয়ে গেল। কারণ কালকে ও টাকা নেবে।
ওদিকে কে যেন  মনোজ মনোজ করে ডাকছে। তার আগে কলিং বেল বাজল। কিন্তু মনোজ কী করছে?
কোনো সাড়া শব্দ নেই ভাবতে ভাবতে দরজা খুলল।
রেখা  দরজা খুলেই দেখে 'সৌম্যকান্তি শুভ্র বস্ত্র পুরোহিত মশাই।'
পুরোহিত মশাই বললেন 'কখন থেকে কলিং বেল বাজাচ্ছি বৌমা'। কারোর কোন সাড়াশব্দ নেই। মনোজ কোথায়?
রেখা একগাল হেসে বলল 'ক্ষমা করবেন। আসুন ভেতরে আসুন। ও কাজ করছে বোধহয় ভেতরে।'
পুরোহিত মশাই বললেন ,'আজ লক্ষ্মীপুজো কত জায়গায় পুজো আছে জানো, একটুও সময় এদিক ওদিক হলে চলে না।'
রেখা মনে মনে ভাবল যতবারই যেকোনো পুজোতেই আসুন না কেন একই কথা?যদিও কোজাগরীতে পুজের সংখ্যাটা একটু বেশি থাকে।
পুরোহিত মশাই বললেন ' সব জোগাড় আছে  তো মা?'
রেখা বলল ' হ্যাঁ।
পুরোহিত মশাই বললেন 'জানি তোমার বাড়িতে পুজো করতে এসে আমাকে কিছু জোগাড় যন্ত্র করতে হয় না তুমি সব গুছিয়ে রাখো ।তবু একবার জিজ্ঞেস করলাম। তোমরা স্বামী-স্ত্রী লক্ষীনারায়ন।' এরপর শুরু করলেন পুজো।
এরইমধ্যে রেখা ভাবতে লাগলো আরতি করার সময় হোমের সময় মনোজ থাকে পাশে। সত্যিই খুব সুন্দর দু'জনে মিলে পূজা করে। এবারটা যে কি হলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। পুজো করতে বসেও মনে শান্তি নেই। একটু পরে আরতী শুরু হবে মনোজ কী আসবে? না কি ডাকতে যেতে হবে? বলতে বলতেই শঙ্খ বাজাতে শুরু করলো, উলু ধ্বনি দিল।
রেখা আবার ভাবছে  'মনোজ এর জন্য একটা নতুন পাজামা -পাঞ্জাবী বের করে রেখেছে। স্নান করে এসে ওটা  পরবে তো?'
পুরোহিত মশাই বললেন  'মনোজকে ডাকো, বৌমা ।আরতী শুরু হবে ।নইলে তো আবার রাগ করবে।,'
রেখা বলল  'হ্যাঁ যাই ।ডেকে আনছি।'
ওদিকে জানলা দিয়ে চৈতির মা ডাকছে ও দিদি, ও দিদি ,পুরোহিত মশাই এসে গেছেন গো?
রেখা জানলাটার কাছে দাঁড়িয়ে বলল ,' হ্যাঁ।
চৈতির মা বলল 'দিদি একটু পুরোহিত মশাইকে বলবেন তো ,এরপরে যেন আমাদের বাড়ির পুজোটা করে দেন।'
রেখা শুধু ঘাড় নাড়ল আর বলল  ,'দিদি প্রসাদ নিও,আমাদের বাড়িতে এসে।'
চৈতির মা হেসে বলল 'আজ সবার বাড়িতে পুজো আপনারাও আসবেন আমার বাড়িতে।'
অন্যদিকে পুরোহিত মশাই ডাকছেন 'বৌমা ,বৌমা দেরি হয়ে যাচ্ছে।'
রেখা গলা বাড়িয়ে  বলল  'হ্যাঁ ,যাই কাকাবাবু।'
চৈতির মা বলল  'না, না ,দিদি। বেশি কথা বলব না। যান ওদিকে দেরি হয়ে যাবে।'
রেখাও বললো  'হ্যাঁ, দিদি ।বলেই চলে গেল।
মনোজকে খোঁজ করতে গিয়ে  দেখে, ঘর অন্ধকার ।ড্রইং রুমে  বসে  ফোনে কথা বলছে।'
রেখা বলল 'তুমি আরতী করতে আসবে তো?'
মনোজ না তাকিয়ে ঘাড়টা নাড়লো।
রেখা বলল আরতি শুরু হয়ে গেছে একটু তাড়াতাড়ি এসো ।ওদিকে পুরোহিত কাকা তাড়া দিচ্ছেন ।এরপর হোম আছে।-বলেই রেখা চলে গেল পুজোর ঘরে। যেন কুকুর তাড়া করেছে।
রেখা লক্ষ্মী পূজার দিন খুব সুন্দর করে সাজে গয়নাগাটিতে ।পায়ে নুপুর পরে। নুপুরের আওয়াজে সারা বাড়ি যেন নেচে ওঠে।নুপুরটা মনোজের জন্য ই পরে।
অথচ একবারও আজকে মনোজ বলল না ,নুপুর পরে গয়নাগাটিতে তোমাকে কত সুন্দর লাগছে। মনোজ প্রতিবার এই কথাটা রেখাকে বলে ।আজ কি করে ভুলল। পুজোর ঘরে গিয়ে বসে বসে ভাবছে।
পুরোহিত মশাই  বললেন  'মনোজ আসলো না? আর কতক্ষন ওয়েট করবো বৌমা ?এবার তাহলে হোম শুরু করে দেব?'
রেখা বলল 'আসলে শরীরটা একটু খারাপ তো?'
পুরোহিত মশাই বললেন 'ও তাই বুঝি ।এই জন্যই আজকে মনোজ  পুজোর ঘরে নেই ।আমি ভাবলাম কী জানি ,আবার কি হলো। ডাক্তার দেখিয়েছো তো।
তাহলে ওকে না ডাকলেও হয়। ও রেস্ট নিক  বুঝলে বৌমা?'
রেখা শুধু ঘাড় নাড়ল।
এরমধ্যে হোমের জোগাড় করে ,হোম শুরু হয়ে গেল। রেখা করজোড়ে ঠাকুরকে ডাকতে লাগল  'ঠাকুর সবাইকে ভালো রেখো। আর তার জীবনে সবকিছু ঠিক করে দাও ।মনোজের মনে যদি কোন কষ্ট থাকে ।সেগুলো দূর করে দাও । সুখ শান্তিতে ভরিয়ে তোলো ।ভালো রেখো।'
হঠাৎই মনোজ পুজোর ঘরে প্রবেশ করে। রেখার তখনও দু চোখে জল। প্রণাম করে উঠতেই মানোজকে দেখতে পেয়ে, চোখে আবার আনন্দাশ্রু বেয়ে‌ পরে।
পুরোহিত মশাই বললেন  'বাবা মনোজ শরীর ঠিক আছে তো ?এসো ,এসো বাবা ।বসো।'
হোম অর্ধেক হতেই একটা ফোন আসে, মনোজ বেরিয়ে যেতে চায় ।
তখন রেখা বলে  'হোম শেষ না করে উঠতে নেই ।তুমি তো জানো?'
অগত্যা মনোজ বসলো। ফোনটা বেজেই যেতে লাগলো।
রেখা বলল ' ফোনটা একটু সাইলেন্ট করে দাও।
রেখা লক্ষ্য করলো মনোজ সেই নতুন পাজামা -পাঞ্জাবীটা পরে নি ।পুরোনোটাই পরেছে ।চোখে মুখে যেন একটা বিষন্ন দুশ্চিন্তা।
পুজো শেষ হয়ে গেল পুরোহিত মশাই একে একে তার সমস্ত জিনিস ঝোলায় পুরে নিতে লাগলেন। বরাবরই ভালো ভালো মিষ্টি ,নাড়ু যা থাকে ,সব ই  তুলে নেন দু-একটা রেখে ।বড় বড় গোটা গোটা ফলগুলো তুলে নেন। তারপর দক্ষিণা।
যাবার সময় প্রতিবার বলেন ' পরেরবার দক্ষিণা আরেকটু বাড়িও মা।'
একটু পরেই বাড়িতে পার্থ (পাশের বাড়ির), তার পাশের বাড়ির সকলেই প্রসাদ নিতে চলে আসে। রেখা
সবাইকে প্রসাদ বিতরণ করে। চৈতিদের বাড়িতে প্রসাদ পাঠিয়ে দেয়। সুমিতার জন্য আলাদা করে প্রসাদ ফ্রিজে ঢুকিয়ে দেয়।
এরই মাঝে পার্থ জিজ্ঞেস করেছিল  'বৌদি ,মনোজদা কোথায় গেল? দেখতে পাচ্ছি না। আজকে আমিও বেশিক্ষণ বসবো না ,আমার একটু তাড়া আছে, বৌদি।
রেখা বলল  'কাজে ব্যস্ত আছে তো?'মনে মনে ভাবল কতজনকে বলবে এই একই কথা? আর ভাবলো ভালোই হলো পার্থ বেশিক্ষণ বসবে না।না হলে হাজার প্রশ্ন উঠে আসত।
সবাই চলে যাবার পর রেখা মনোজের ঘরে প্রসাদ নিয়ে গেল ।তখনো মনোজ ফোনে কথা বলে যাচ্ছে রেখার একটু অদ্ভুত লাগছে । কি এমন আর্জেন্ট কথা আছে ,সব সময় ফোনে এরকমটা তো আগে কখনো হয় নি।
মনোজ রেখাকে দেখে একটু চমকে উঠলো। ইশারায় বলল-'প্রসাদটা রেখে যেতে।'
রেখা প্রসাদের থালাটা নামিয়ে রেখে ,এবার নিজে প্রসাদ খেয়ে ,জল খেয়ে নিল ।প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে। এই জন্য মনোজ কী করছে ,না করছে রেখার সেসব দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই ।শরীর নিয়ে জেরবার হয়ে যাচ্ছে। এর মাঝে আবার মিলিদের খেতে দিতে হবে ‌।কাজেই ঐসব দিকে রেখার থাকলে হবে না। অনেকক্ষণ থেকেই মিলি চেঁচাচ্ছে খাবার জন্য। বাচ্চা হবার পর ওর খাবারের চাহিদা বেড়েছে। এবার রেখা মিলিদের খেতে দিতে চলে গেল। ভাবলো আর নয় এবার একটু রেস্ট নেবে ।পুজোর বাসনগুলো কালকে তো সুমিতা আসবে ,ওই মেজে নেবে।
রেখার নিজের ঘরে রেস্ট নিতে যাবার সময় মনোজের হটটক শুনতে পেল। 'আমি তো বারবার বলছি ,আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারপরেও জোর করলে তো হবে না ।এখন অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেছে। সেটা তোমাকে বুঝতে হবে।'
রেখা নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে ভাবছে 'সব ঠিক আছে। 'তোমাকে বুঝতে হবে ?'তুমি' বলতে কাকে বোঝাতে চাইছে?'রেখা ভাবছে, এবার রেখা পাগল হয়ে যাবে ।রেখার জীবনে নূতন কোনো ঝড় আসতে চলেছে কিনা? নতুন করে সেই ঝড় সত্যিই সে সামলে উঠতে পারবে তো? বারবার তার গা শিউরে উঠতে লাগলো অজানা অচেনা আতঙ্কে।



ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন" ৩৩ক্রমশ

সাফিয়া খন্দকার রেখা





বাজপাখি ছুটে আসছে 


( কৃতজ্ঞতা রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, একটি লাইন কবিতার প্রয়োজনে ব্যবহার করেছি এই কবির

ল্যাম্পপোস্টর মতো অনাদর আর হাহাকারে কাঁদছে উৎসবের বর্ণীল আয়োজন। 
এখানে ওখানে বর্ণহীন নিষ্প্রভ সময় এখন।
ঘুমন্ত মানুষ নয় বিপ্লবীর খুব প্রয়োজন আজ।
মৃত্যুর মিছিলের পথ আগলে যে দাঁড়াতে পারেনা 
সে আমৃত্যু ঘুমিয়ে থাকুক। 
অন্ধকার ঠেলে দাঁড়ানো পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটির পোড়া গন্ধে কাঁদছে দূর্বাদল, 
ওদের কান্না অবিকল তোমার আমার মতো।
গনতন্ত্রের ভণ্ডামিতে সংবিধান ফিরে যেতে চাইছে বাহাত্তরে। 

সেদিন আর দূরে নেই 
বাজপাখির মতো ছুটে আসবে নতুন প্রজন্ম।
ঘুমিয়ে থাকা মানুষেরা জড়ায়ু ঠেলে ভূমিষ্ঠ হবে অন্ধ সময় তাড়াতে। 
গাঢ় সে সন্ধ্যায় জোৎস্না লুটোপুটি খাবে দ্রোহের উত্তাপে, 
আমাদের কবর কিংবা চিতায় অলৌকিক মায়া ফেলবে 
মানবতার দীর্ঘ মিছিলের ছায়া। 
আদিগন্ত ফসলের ক্ষেত ছেড়ে পালাবে
মাজড়া পোকার মতো জ্যান্ত মালিকানা। 
মায়েরা পড়াতে ভুলে যাবে শিশুদের 
" ভোর হলো দোর খোল 
খুকুমণি ওঠোরে"

শিশুরা তখন পড়ছে...
আমাদের ধর্ম হবে ফসলের সুষম বণ্টন, 
আমরা ফিরিয়ে এনেছি পৃথিবীর ভারসাম্য, 
আমরা ছিড়েখুঁড়ে ফেলেছি ধর্ম নামের মুখোশ, 
আমরাই বাজেয়াপ্ত করেছি
মানবতার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র।

জি,এম,লিটন




কষ্টের জীবন


হাজার সুখের পশরা সাজাই,
দুঃখেই কাটে দিন।
আঁধার,কালো পথেই দেখি,
শুধু স্বপ্নগুলোই রঙ্গিন। 

জীবন কাটে যুদ্ধ করে,
বাস্তবতার সাথে---
সুখের ফেরিওয়ালা সাজি আমি,
হাজার কষ্টের মাঝে।

দিন চলে যায়,মাস চলে যায়,
বছর আসে ঘুরে। 
সুখ পাখিটা দেয়না দেখা---
থাকে অচিন পুরে। 

জীবন চলার পথে আমার 
আসে শুধু বাঁধা,
যতই সামনে যাই এগিয়ে ---
দেখি গোলকধাঁধা। 

জীবন সংগ্রামে,মাঝেমাঝে ---
পথ হারিয়ে ফেলি।
তবুও,কষ্টটাকে বুকে চেপে,
হাসি মুখেই চলি।

জীবনের দুঃখ, দেখলে অনেকেই--
সামনে, আড়ালে হাসে
সান্ত্বনাতো দেয় না কেউ,
কেউ থাকেনা পাশে।

তবুও জীবন যায়না থেমে,
চলে অবিরাম। 
কষ্টের জীবন কেটেই চলে---
পাইনা কোন দাম।

তবুও জীবন সবার কাছে---
অমুল্য এক সম্পদ,
জীবন ঘড়ির জং আসিলে,
বাড়ে যে বিপদ।1

দেহের মাঝে থাকবে যতক্ষণ---
প্রাণেরই স্পন্দন। 
প্রভুর মতে সাজিয়ে নিও---
তোমারই জীবন। 

পাঁচ স্তম্ভে সাজালে কেউ---
আপনও ভুবন।
সার্থক সদা জেন তুমি,
মহিমান্বিত সেই জীবন।

রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"১৮

চলছে নতুন  ধারাবাহিক  উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম  লেখার। 
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে। 




                                                                    উদাসী মেঘের ডানায় 
                                                                             ( পর্ব ১৮


পরদিন সকাল থেকে সামিয়া একভাবে বমি করছে। বড় আপাকে কল করতেই চলে এলো বাসায়
সৈকত কে বললো ডাক্তারের কথা সৈকত বললো-
আমার আজ ভীষণ কাজের চাপ আপা আপনি যখন
এসেছেন আপনিই বরং নিয়ে যান।
বড় আপা বিকেলে নিয়ে গেলো ডাক্তারের চেম্বারে
ডাক্তার দেখেই বললো জন্ডিস খুব বেশি  বিলোরবিন টেষ্ট করিয়ে ভর্তি করুন এখনই স্যালাাইন দিতে হবে।
ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে,সৈকত কে সব বললো
সৈকত-জন্ডিস হলে আা্বার ভর্তি হতে হয় নাকি আপা
কিযে করেন আপনারা আমার বাসার রান্নাবান্না কে করবে।
বড়আপা- বুয়া আছেনা আপাতত বুয়ার হাতে খাও
আমি রাখছি।
এভাবে তিনদিন গেলো বিলোরবিন এখনো তেমন একটা কমেনি সৈকত রাতে বাসায় ফিরে যাবার সময়
দেখে যায় আর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ডাক্তার
কে বলতে ছেড়ে দিতে বাসায়।
সামিয়া বললো - বিলোরবিন আর একটু না কমলে
ছাড়বেনা, আমি বলেছি।
সৈকত- ডাক্তার তোর স্বামি না আমি। দুদিন সময় দিলাম,হাসপাতাল না,ছাড়লে ডিভোর্স দিবো তারপর
ডাক্তারের সাথে চলে যাস, এই বলে বেরিয়ে গেলো
সামিয়া স্তব্ধ হয়ে শুয়ে,রইলো কেবল চোখ থেকে জল গড়িয়ে,পড়লো এই নিরব যাতনার কান্নার কোন সাক্ষী
নেই, কেবল ইউনিভার্স ছাড়া।
ডাক্তার ছেড়ে দিলো বন্ড সই করিয়ে প্রেসক্রিপশন কাগজপত্র রেখে ভালো হলে দিবো আগামি সপ্তাহে
টেষ্ট করিয়ে যেনো রিপোর্ট  দেখায়।
বাসায় ফিরে এলো কিন্তু এবার বারবার কানে বাজছে
ডিভোর্স এর কথাটা, মন থেকে সরাতে পারছেনা কিছুতেই। আর ভাবছে এভাবে আরও কত বছর কাটাবে নিষ্ঠুর মানুষের সাথে।বাববার ওর আত্মসন্মানের উপর আঘাত করেই যাচ্ছে, এর শেষ
কোথায়? তাহলে কি এর উত্তর সামিয়াকেই দিতে হবে।
চলবে...

শাহিদা ফেন্সী





কবি কি তবে সত্য বলেছেন 


বাঙলার মানচিত্র জুড়ে আজ নৃশংসতার দাবানল
পুড়ে খাক হচ্ছে হরিকেল বঙ্গ পুন্ড্র গৌড় সমতট
 নীল খুনে রঞ্জিত পলিমাটি থেকে রাজপথ 
ফিরে এসেছে চেঙ্গিস বখতিয়ার পাবলো,গারাভিতোর দল 
মানুষের ভয়ে মানুষ হবে বুঝি আবার গুহাবাসী
 বিস্মিত ঘৃণায় তাকিয়ে দেখবে অবাক প্রাণীকুল! 

আমার সাধের মাতৃভূমি আজ মাতৃহারা
পিতৃত্বের পৌরুষ আজ বেহিসেবি উদ্ধত একরোখা 
দিকে দিকে রাক্ষস-খোক্ষসের নখ দন্ত জ্বলজ্বলে জ্বলন্ত
আজ রাষ্ট্রের অপর নাম হতাশা বিষাদ শোষণ ভয় আতংক
ত্রিশ লক্ষ শহীদের ষাট লক্ষ চক্ষু হতে ঝরছে আক্ষেপাশ্রু
 সাধের জীবন মোরা করেছি দান এ কোন সন্তানের জন্য। 

নয় ড্রোন যুদ্ধ বিমান পারমাণবিক অস্ত্র ভূমিকম্প,
চীন ভারত আমেরিকা রাশিয়া হামলা করেনি কোন
জঙ্গিরা ঘটায় সিরিজ বোমা, আগুনে পুড়ে ছাঁই হয় গৃহ
মানুষের ‘হাতে’ মানুষ মরছে সান্ত্বনা পাবো কেন?!

অন্যায়ের এক হাত উঠলে কেন দশ হাত এক হয়
প্রতিবাদের কণ্ঠ কেন তোমায় আমায় সাথে না পেয়ে 
মাঠেই মারা যায়! মিথ্যা কেন অট্ট হাসে সত্য গুমরে মরে
কবি কি তবে সত্য বলেছেন,সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে ?

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল"১৪

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল




                                                                বনফুল 
                                                                ( ১৪ তম পর্ব ) 


                                                জুঁই বাসায় ফিরে হাত মুখ ধুয়ে বাবা-মার সাথে দুপুরের খাবার খেতে বসে অনেক গল্প করতে করতে ভাবলো এই সুযোগ, বাবা-মা দুজনেই আছে,এখনই প্রস্তাব টা....।
যেমনটা ভাবা তেমনটা কাজ,সে বললো -
 আমি আমার এক বন্ধুকে তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইছিলাম, তোমরা কি বলো?  
ওয়াজেদ সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে একঝলক দেখে নিয়ে স্ত্রী মোনোয়ারা বেগমের দিকে তাকালো,তারপর  জুঁইকে বললো ঠিক আছে আগামী শুক্রবারে আসতে বলো। এবার জুঁই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো, খাওয়া শেষ করে জুঁই উপরে উঠে গেলো, ওয়াজেদ সাহেব স্ত্রীকে বললেন অনেক দিন ধরেই কিছু বলবে বলবে করে বলতে পারছিলনা। 
ওর হাসি খুশি চলাফেরা দেখছিলাম তখনই আমার কিছু একটা মনে হচ্ছিল....,দেখা যাক, কি বলে! 
 মনোয়ারা বেগম ও বললেন আমারও তাই মনে হচ্ছিল,ও কিছু একটা বলতে চেয়েও পারছিলো না।
 জুঁই উপরে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় শুয়ে পলাশকে ফোন করলো।
 পলাশ হ্যালো বলতেই জুঁই বললো ভালো খবর আছে। পলাশ জুঁইকে প্রশ্ন করলো কি খবর? 
-না বলবো না, আগে বলো কি ট্রিট দিচ্ছো.....?

পলাশ বললো, বলো তারপরে দেখাা যাবে।
 জুঁই বললো আজ বিকেলে চলো কোথাও বসে কফি খেতে খেতে কথা বলা যাবে। পলাশ বললো আচ্ছা ঠিক আছে। 
জুঁই বললো আমি তোমাকে ফোন দেবো, পয়েন্টে চলে এসো। 
বিকাল চারটায় জুঁই ফ্রেস হয়ে এসে নেভিব্লু গোলাপি পাড়ের শাড়ির  সাথে সবকিছু ম্যাচিং করে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে সাজগোজ করে নিচে নেমে এলো। বাবা-মা দুজনেই খুব আশ্চর্য হয়ে জুঁইকে দেখছিলো, আর মনে মনে ভাবছিলো মেয়ে সত্যি সত্যিই বড় হয়েছে......। 
জুঁই বাবা-মাকে বললো আমি একটু বেরোচ্ছি।

জুঁইয়ের ফোন পেয়ে পলাশ যথা সময়ে পয়েন্টে এলো। তার মিনিট  পাচেঁক পরই জুঁইয়ের গাড়ি এসে দাঁড়ালো। পলাশ গাড়িতে উঠে বসলো, ফিসফিসিয়ে বললো  আজ তোমাকে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে জুঁই। 
জুঁই থ্যাংকস জানিয়ে  ড্রাইভারকে ভালো চাইনিজ রেস্টুরেন্টে চলুন।
দুজনে পাশাপাশি বসে বেশ প্রেমলাপ হচ্ছিলো।
ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে  বললো মেমসাব, আমরা এসে গেছি। 
জুঁই আর পলাশ গাড়ি থেকে নেমে লিফটে করে পাঁচতলায় উঠে গেলো। রেস্টুরেন্টে ঢুকে একটা কর্ণারে টু-সিটার টেবিল দেখে নিয়ে  বসলো, জুঁই পলাশকে বললো আজ তোমার পছন্দের অর্ডার করে দাও। 
পলাশ ও জুঁইয়ের পছন্দ মতো অর্ডার করে দিলো।
জুঁই পলাশকে জিজ্ঞেস করলো দু-তিন মাসের মধ্যে তো তোমার  রেজাল্ট বেরোবে, তারপর কি করেবে কিছু ভেবেছো?  
- না কিছু ভাবিনি, আগে রেজাল্ট বের হোক তারপর দেখা যাবে। 

                                                             চলবে....

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"৫




                                                                 অলিখিত শর্ত ( ৫ম পর্ব)
                                                                      শায়লা শিহাব কথন 

                                                                      শামীমা আহমেদ 



                                        নীচতলার রুহি খালাম্মা এসেছেন।আজ বোধহয় একটু সুস্থ বোধ করছেন।নানান ধরণের রোগের বসতি নিয়েছে তার দেহে। রোগের নাম জানতে হলে ডাক্তারী পড়ুয়ারা শুধু তাকে জিজ্ঞেস করলেই অন্তত দশটা রোগের নাম অনুভুতি,উপসর্গ সহকারে বিস্তারিতভাবে জেনে যাবে, যা সে বহন করে চলেছে বছরের পর বছর ধরে।
---ধরতে গেলে সম্পর্কে তিনি এখন শায়লার চাচী শাশুড়ি।সে নিজের দুই মেয়েকে সেই কোনকালে  বিয়ে দিয়ে বিদেশি জীবনে পাঠিয়ে  নিজেকে শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ মনে করছেন।এই বাড়িতেই একে একে দুটো মেয়ের বিয়ে দেয়া। পিঠাপিঠি দুটো বোন সবেমাত্র স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছে।দু'বেণী ঝুলিয়ে শায়লাদের ছাদে তখনো এক্কাদোক্কা খেলে।শায়লার থেকে বয়সে  অনেক ছোট। ওদের মায়ের ধারণায় মেয়েদের বিয়ে দিতে দেরি করলে তাদের চোখমুখ  ফুটে যায়।কি হতে কি হয়! আবার কোন
পছন্দের ছেলে এনে হাজির করে!কার সাথে না আবার ভেগেই যায়!  তাই সে সুযোগ তার মেয়েদের তারা দেয়নি।অবশ্য খালু সেখানে একেবারেই বক্তব্যহীন।সংসারের চালিকা খালাম্মা একাই একশো।
তিনিই শায়লার জন্য বিয়ের প্রস্তাবটি আনেন।জানিয়েছিলেন  তার এক দূর সম্পর্কের দেবরের ছেলে আজ প্রায় চৌদ্দ বছর হলো কানাডায় আছে। বাড়ি গাড়ি নিজের ব্যবসা সব করেছে।তাই বয়সটা কোনদিক দিয়ে বেড়ে গেছে খেয়ালই করেনি।এখন বিয়ে থা করে সংসার করায় মন দিতে চায়।বিয়ে করতে দেশে আসবে।মেয়ে খুঁজছে। তা শায়লার জন্যতো ভাবতে হয়। আর কতো ঘরে বসিয়ে রাখবেন?বয়সতো আর বসে থাকে না। 
-----আসলে যখন বাড়ির মালিকের চেয়ে ভাড়াটিয়ার আর্থিক অবস্থা ভালো হয় তখন বাড়ি বয়ে এসে তারা নির্দ্বিধায় এভাবেই দু'কথা শুনিয়ে যায়।গায়ে পড়ে এইসব মহিলাদের মায়া কান্না শায়লার একেবারেই পছন্দ নয়। কিন্তু তারতো নিজের পছন্দ অপছন্দে কিছু আসবে যাবে না। তাকে ভাবতে হবে ভাইবোনের কথা। নায়লারও বিয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে।আর যেখানে তাকে এমন ধনী ছেলের পছন্দ! সেখানে শায়লাতো দেয়াল  হয়ে থাকতে পারেনা।ওদের কথাতো ভাবতে হবে।নিজেকে পথ ছেড়ে দিতে হবে। কিছুদিন পর রাহাতের বিষয়টিও এসে যাবে। আসলে এইসব মহিলাদের অপছন্দ করলেও এরা কিন্তু সেই মাটিতে কেঁচোর মত। মাটির উর্বরতার মত সমাজের কন্যাদায়গ্রস্ত দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য যেন আশীর্বাদ হয়ে আসে।কথায় আছে না---নিন্দুকের বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো। শায়লার মায়ের চোখে মুখে এক তৃপ্তির ছায়া! শায়লাকে পাত্রস্থ করা অতি জরুরী। বয়স হয়ে যাচ্ছে। এদেশে বেশি বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেয়া যেনো রীতিমত একটা যুদ্ধক্ষেত্র। কতভাবেই না মেয়ে পক্ষকে বিনীত হতে হয়।আর মায়ের স্বস্তির কাছে শায়লার অমতে থাকা, এটা যেন শায়লার বৈশিষ্ট্যতে  একেবারেই নেই।
চলবে.....

ফাহমিদা ইয়াসমিন ( ইংল্যান্ড )




প্রীতির ঘুড়ি


ডানে-বামে উড়ছে কতো নানা রঙের ফানুস
এ সব কিছু দেখছি আমি কারণ আমি মানুষ
দেখতে হবে চোখের সামনে বাবার নিথর লাশ
একটু পরেই খাবার খেতে ফিরতে হবে পাশ

চোখের সামনে ঘটবে কতো বাহারি ঘটনা
আমায় নিয়ে কাছের মানুষও ছড়াবে রটনা
তবুও ভালোবেসে উড়াতে হবে প্রীতিরঘুড়ি
এই ভাবে ঠিক বাঁচতে হবে, গড়তে স্বপ্নপুরি।