উপন্যাস
টানাপোড়েন ১৮৭
সমাধান
মমতা রায় চৌধুরী
রেখা রান্না ঘরের জানলা দিয়ে চৈতিদের বাড়িটা দেখছিল ,লোক না থাকলে বাড়িঘর এরকমই হয় কেমন খাঁ খাঁ করছে যেন ।হ্যাঁ ঐতো ছাদে লম্বা করে দড়ি টানানো ,জামাকাপড় মিলানোর। ঝরে বাঁশের খুঁটি দুটো ভেঙে গেছে দড়ি ঝুলে পড়েছে। চৈতির মা বাড়ি থাকলে এরকম হতো? কোথা থেকে বাঁশ জোগাড় করে সঙ্গে সঙ্গে টানটান করে দড়ি টানানো হয়ে যেত। তারপর সার সার লাইন দিয়ে জামাকাপড়ে মেলানো থাকতো লোকজন কম থাকলেও কোথা থেকে খুঁজে খুঁজে জামা কাপড় বের করত কে জানে? রোজ জামাকাপড় কেচে পরিস্কার করার একটা বাতিক ছিল । পরিস্কারের বাতিক না শুচিবাই বলতে পারবো
না । রেখা এসব ভাবছে এমন সময় মনোজ হাঁক দেয় ', রেখা,রেখা, রেখা আ.আ.আ।
রেখার হঠাৎ চমক ভাঙ্গে, রান্নাঘরের জানালা থেকে সরে এসে দরজার কাছে এসে উঁকি দিয়ে বলে" কি হয়েছে ?কি বলছ?"
মনোজ তখন বেসিনের কাছে দাঁড়িয়ে দাড়ি কাটছিল। তারপর সেভিং ব্রাশে আরেকটু সাবান লাগানোর সময় বলল' বলছি আমি তো অফিসে যাব। খাবার রেডি করেছো?"
"খাবার তৈরি কিন্তু অফিস যাবে তুমি তো বলনি আমায় একবারও।"
"অফিসে তো যাবই এ আবার বলার কি আছে।'
রেখা মনে মনে ভাবল অথচ এই অফিস কামাই করে কতদিন বসে আছে কিন্তু এ নিয়ে আর কথা বাড়ালো না । বেশ কয়েকদিন পর আজ অফিস যাচ্ছে ।আজকে মনোজের মুডটাও ভালো
আছে ।কি দরকার কথা বাড়িয়ে ।
"ঠিক আছে, তুমি রেডি হও আমি খাবার দিচ্ছি।'
মনোজ দাড়ি সেভ করতে করতে বললো" তুমিও তো আজকে বেরোবে।"
"হ্যাঁ বেরোবো তো। আজকে তো কলেজে যেতে হবে ,একটা প্রোগ্রাম আছে,?'
"ও আ আ আ '
"কি হলো ?চেঁচাচ্ছ কেন আ আ আ করে।"
" কেটে গেল?"
রেখা ছুটতে ছুটতে এসে দেখলো" হ্যাঁ গালের কাছে কিছুটা অংশ ছরে গেছে।"
এত অন্যমনস্ক হয়ে কাজ করো কেন?'
রেখা সঙ্গে সঙ্গে একটু বোরোলিন গরম করে এনে দিল।
*দেখি দেখি এদিকে এসো।"
পরম স্নেহ-মমতায় রেখা গালে বোরোলিন লাগিয়ে দিতে লাগল আর বলল "যাচ্ছ একজায়গায় এই সময় আবার কেটেকুটে নিলে।"
মনোজ দেখলে সত্যিই মনোজ এর জন্য ভাবে অথচ মনোজ ই যেন রেখার সঙ্গে মাঝে মাঝে কি রকম ব্যবহার করে ফেলে।
সব ঠিক হয়ে যাবে। ও বাবা দেখো দেখো দেখো।
মনোজ বলল "কি?'
রেখা ইশারায় মনোজ এর পেছনে তাকাতে বলল।
"ও বাবা তুতু এসে দাঁড়িয়েছে পেছনে।"
'তোমার কান্ড দেখে আ আ করলে ও এসে দাঁড়িয়ে দেখছে তোমায়।'
মনোজ গাল দুটো দিন একটু আদর করে দিলো। যাও শুয়ে পড় গিয়ে ঘরে গিয়ে।
দুটো কি সুন্দর লক্ষী মেয়ের মত কথা শুনে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
ঠিক আছে সেন্টুদাকে চাবিটা দিয়ে যেও আর পার্থকে তুমি বলে দিও। দুজনার কেউ তো বাড়িতে থাকব না ,ওদিকে চৈতির মায়েরাও নেই। ওদিকটা একেবারে ফাঁকা।
দাও দাও তাড়াতাড়ি আমার ব্রেকফাস্ট দাও।"
"আর লাঞ্চ নিয়ে যাবে?"
এমন সময় মনোজের ফোনে একটা ফোন আসলো । রেখা ভাবলো মনোজকে আবার কে ফোন করল ?
মনোজ প্যান্টের চেইন লাগাতে লাগাতে বললো "হ্যালো।"
"আরে এ তো দারুন ব্যাপার।
"সকাল সকাল গুড নিউজ ঠিক আছে। পরে কথা হবে।"
ফোনটা রেখে মনোজ বলল" না ,না ,না লাঞ্চ আজকে অফিস ক্যান্টিনে করব।"
অনেকদিন পর মনোজকে খুব হাসিখুশি দেখে রেখার খুব ভালো লাগলো।
"বেশ তাহলে ব্রেকফাস্ট খাও এসো।"
মনোজ বলল 'আমি এসে গেছি ।দাও ,দাও ট্রেন ধরবো।"
অনেকদিন পর মনোজের এমন তাড়া সত্যিই রেখার যেন কাজের আবার গতি ফিরে আসছে।
সেই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে কি ব্রেকফাস্ট করেছ কি খেতে ভালোবাসে ?সমস্ত কিছু নিয়ে গল্প হত রান্নার তারিফ হতো। আজ সব যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল।
মনোজ খেতে খেতে বলল "হাঁ ,করে কি দেখছো তুমি আমাকে? মনোজ হাতটা রেখার চোখের সামনে নাড়লো আর বলল" হ্যালো ,এই যে ম্যাডাম ।আমি। চিনতে পারছ না?"
রেখা হেসে ফেলল আর মনে মনে ভাবল সেই মনোজকেই তো চিনতে চাই ছি গো ।
"আর নেবে দুটো কচুরি?'
"হিং এর কচুরি ।দেবে? দাও ।'
"আর আলুর দম ?"
"না ,না ।অনেকটা আছে আর দিতে হবে না।
তুমি কটার ট্রেন ধরবে?"
"সাড়ে তিনটের মধ্যে ঢুকতে বলেছে। আমি এখান থেকে বারোটার লোকাল টা ধরব।"
"ওকে, ওকে ।
তাড়াতাড়ি বেসিনে হাত ধুয়ে মনোজ বলল "দেখেছো হাতের কাছে রুমালটাও পাচ্ছি
না ।রুমাল দাও রেখা। রুমালটা কোথায় রে
বাবা ।"
" এই তো রুমাল সোফার ওপর পড়ে রয়েছে।"
খুব তাড়া দেখতে পায় নি ।সরি সরি।'
ঠিক আছে টা টা ।তুমিও সাবধানে যেও।"
"ফোন করে দেবে অফিসে পৌঁছে?"
"ওকে।"
"দরজাটা লাগিয়ে দাও রেখা।"
"হ্যাঁ ,দিচ্ছি।"
"ও বাবা পাই
"পাইলট সোনা তুমি তো দরজার কাছে শুয়ে আছো। সাইড দাও বাবা।"
"পাইলট কি সুন্দর লক্ষী সোনার মত একটু সরে শুয়ে পড়লো। তারপর রেখার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আসলে ওদের এখন খাওয়ার টাইম হয়েছে । রেখা বলল 'দেবো বাবা ,আমি খাবার আনতেই যাচ্ছি ভেতরে।" গাল দুটো ধরে আদর করে দিলো।
*না ,আজ মাসি তো বেপাত্তা।"
"ও বাবা আমার সাথে বেশ কয়েকদিন আগে বলেছিল যে আজকে ছেলেকে নিয়ে হসপিটালে যাবে প্রতিবন্ধী কার্ড করাতে ,আমি ভুলে
গেলাম ।কত কাজ জমে রয়েছে।'
রেখা তাড়াতাড়ি বাচ্চাগুলোর জন্য খাবার মেখে নিয়ে খেতে দিয়ে এসে ঘরটাতে ঝাঁট দিতে লাগলো, তারপর বাসন মেজে ফেলল। সে গুলোকে আলাদা জায়গায় তুলে দিল ।আজ ঘর মোছার সময় হবে না। মাসি এসে যা করার করবে পরের দিন।'
স্নান করতে গেল রেখা।
স্নানঘরে ঢুকে একটা আলাদা শান্তি রেখা অনুভব করতে লাগলো।
শারীরিক ক্লান্তি যেন অনেকটা দূর হয়েছে আসলে মনের ক্লান্তি কিছুটা কমেছে ,হয়তো এজন্যই শরীরের প্রভাব টাও কমে গেছে।"
শাওয়ারটা খুলে দিয়ে বেশ করে শ্যাম্পু করে নিয়ে ভালো করে স্নান করে নিল।
তারপর গোপালের ভোগ চাপিয়ে দিল ।এবার সেন্টু দা কে ফোন করল।
"রিং হয়ে যাচ্ছে সেটা তো ফোন ধরছেন না কেন?"
"দেরি হয়ে গেল দোকান খুললেন না?'
"আবার ফোন করল। রিং হচ্ছে "আমায় একটু জায়গা দাও…।''
এবার ফোনের ওপর দিক থেকে উত্তর দিলো "হ্যালো।"
"হ্যালো সেন্টুদা?"
"কে বলছেন?"
"রেখা ।মনোজ এর বউ।"
"হ্যাঁ,বৌদি বলুন?"
"বলছি আজকে আপনি দোকান খোলেনি কেন?"
"আজ তো কলকাতায় এসেছি বৌদি?"
"কলকাতায় আছেন কেন?"
"কিছু মাল ফুরিয়ে গেছে সেই মাল নিতে এসেছি।"
"এ বাবা!"
"কেন কি হয়েছে?"
"আরে আজকে ওই তুতুদের খাবার দেবার জন্য আমি তো থাকবো না।"
*কেন কোথায় যাবেন আপনি? বাপের বাড়ি?"
"না,না স্কুলে যাব?"
"স্কুল তো এখন ছুটি?"
"ছুটি হলে কি হবে আমার ছুটি নেই দাদা।"
"স্কুলেরএকটা কাজে যাব।"
'এদিকে আপনাদের দাদা ও মেয়ে অফিসে গেল। "মহা সমস্যায় পড়ে গেলাম।'
'কেন আপনাদের কাজের মাসি ,ওকে বলে দিন আজকের জন্য।'
"মাসি তো আজকে কাজেই আসেনি।"
কি বলি বলেন বৌদি ।আমাদের তো যেতে দেরি হবে ঠিক আছে দাদা আপনি আপনার কাজ করুন দেখি।'
এবার পার্থ কে ফোনটা লাগাল।
রিং হচ্ছে রেখা ঈশ্বরকে ডাকছে "ভগবান ব্যবস্থা ক'রো।"
ফোনটা রিসিভ করে অপরপ্রান্ত থেকে বলল "হ্যালো।"
"পার্থ ,আমি বৌদি বলছি,.।"
*কে রেখা বৌদি?"
"হ্যাঁ গো।"
"পার্থ আজকে একটা বিপদে পড়েছি উদ্ধার ক'রো।"
" বৌদি আমি নিশ্চয়ই আমার সাধ্যের মধ্যে এগুলো করব।
"বলছি আজকে তো তোমার দাদা অফিসে চলে গেল আর আমিও স্কুলের কাজে যাব । একটু বাচ্চাগুলোকে খেতে দিয়ে দেবে গো?"
"হ্যাঁ দিয়ে দেবো এভাবে কেন বলছো?'
আসলে সেন্টুদাকে বলতাম। সেন্টুদা তো কলকাতায় গেছে যাননি ফোন করলাম জানতে পারলাম।"
"এইটুকু সাহায্য করতে পারব না তাহলে আমরা কিসের মানুষ হলাম বলুন।"
'পার্থ এজন্যই তোমাদের কে এত ভালো
লাগে সকলের মানবিকতা তো এক থাকেনা আসলে ওরা তো অবলা জীব কথা বলতে পারে না ।কি যে কষ্ট পাবে খুঁজে বেড়াবে" হ্যাঁ বৌদি ঠিক আছে ওই নিয়ে কোন টেনশন ক"রো
না ,।
"খালি চাবিটা নিয়ে যেও এসে ।আচ্ছা, ঠিক আছে তুমি কটায় বেরোবে বলো?
' আমি তো বারোটার ট্রেনটা ধরবো ঠিক
আছে ।আমি তার মাঝে গিয়ে নিয়ে নেব তুমি টেনশন করো না তারপর বলল 'সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে',.
রেখা বললো '"
এই চেতনা যদি সবার জাগ্রত হত পৃথিবীটাই অন্যরকম হতো গো।
পার্থ বলল প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, থেমে থাকলে হবে না বৌদি পৃথিবীতে ভালো মানুষের সংখ্যা খুব কম দুষ্টু লোকের সংখ্যা বেশি তাদেরকে নিয়ে চলতে হবে সঠিক পথে আনতে হবে আমি কাকে জ্ঞান দিচ্ছি বৌদি একজন স্কুল শিক্ষিকাকে। যারা সমাজের মানুষ গড়ার কারিগর।"
" এইভাবে ব"লো না।"
"বৌদি তোমার কাছে একবার যাব। দাদাকে ও বলব কথাটা ।আর একটা সমস্যা হয়েছে ওটা একটু আমাদেরকে উতরে দিও।""
"আবার কি সমস্যা হলো ?তোমার যে সমস্যাটা ছিল সেটা ঠিক আছে।
" হ্যাঁ ,ওটাই কিছুটা অংশ আবার হয়েছে। "
"ঠিক আছে। কোন চিন্তা ক'রো না ।সব ঠিক হয়ে যাবে ।ভালো থেকো।'
"বৌদি ,তোমাকে ড্রপ করতে হবে না তো? যদি হয় তাহলে বোলো।।"
"Ok''
"ফোনটা রেখে রেখা এবার একটু নিশ্চিন্ত হল ।
তুতু রেখার কাছে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে ।দুটোকে একটু আদর করে বলল "তোমাদের খাবারের কোন চিন্তা নেই ।লক্ষ্মী হয়ে থাকবে ।আমি কিন্তু আজকে বাড়ি থাকবো না ।ঠিক আছে? সরো সরো তু তু ,।আমার কাজ আছে।"যাক শেষ পর্যন্ত সমাধান হলো এটাই স্বস্তির।