২৯ নভেম্বর ২০২১

কবি আমিনা তাবাসসুম এর কবিতা



  
কটা পাখির জন্য এই রাত 



একটা পাখির জন্য এই রাত

এই মাত্র হুইসেল বাজিয়ে যে বাসটি বেরিয়ে গেল
অন্ধ দাঁড়কাক, অর্ধমৃত কাচের সিঁদুর
আর নোংরা গলির খানাখন্দে পড়ে থাকা
পানের পিক তার তোয়াক্কা করে না

আসলে সব আলো কুরেকুরে 
অন্ধকার গিলতে থাকে
আর প্রতিটা অন্ধকারের গভীরে
সকাল বিকেল সন্ধ্যে
নিয়ম করে ফুঁসে ওঠে 
               চিরন্তন দোজখ।

উম্মে হাবীবা আফরোজা




রক্তিম সূর্যের দেশ


ধরেত্রির বুকে বিশ্ব মানচিত্রে আঁকা স্বাধীন এই দেশ,
আমার প্রিয় বাংলাদেশ।

উন্নত শির লক্ষ প্রাণের স্মৃতিসৌধের স্বাধীন এই দেশ,
আমার প্রিয় বাংলাদেশ।

বীর শহিদের আত্মত্যাগের শহিত মিনারের স্মৃতিস্তম্ভের এই দেশ,
আমার প্রিয় বাংলাদেশ।

অমুর একুশ,৭১-এর ফাগুন রাঙা ফুল শিমুলের, শাপলা ঝিলের সজ্জিত এই দেশ,
আমার প্রিয় বাংলাদেশ।

ইলশে মজা পান্তা ভাতের,
বর্ষবরণ হাল খাতার,
নবান্ন উৎসবের এই দেশ,
আমার প্রিয় বাংলাদেশ।

মুক্ত বাতাসে উড়ন্ত লাল সবুজ পতাকার এই দেশ,
আমার প্রিয় বাংলাদেশ।

ময়ুর পঙ্খী হাওয়ার পাল তোলার নৌকার নদীর দেশ,
আমার প্রিয় বাংলাদেশ।

দোয়েলের মুখে মিষ্টি সুরের গানের এই দেশ,
আমার প্রিয় বাংলাদেশ।

পূব আকাশে উদিত রক্তিম সূর্যের উজ্জ্বল রঙের এই দেশ,
আমার প্রিয় স্বাধীন বাংলাদেশ।

শামরুজ জবা




দীর্ঘশ্বাস
 

পড়ে আছে আকাশ একা
সীমানাহীন অন্ধকার,
নীরব-নিথর মাটির বুকে
শব্দবিহীন হাহাকার। 

ব্যথার ফাঁদে বন্দিনী চাঁদ
বুকের ভাঁজে দীর্ঘশ্বাস,
সবুজ ঘিরে ফুল- ফসলে
কুহেলিকার উপহাস। 

ঝরছে পাতা শাখা থেকে
কেউ রাখে সেই খবর,
কত হাসি চোখের পাতায়
কান্না জলে দেয় কবর। 

এই পৃথিবী চলছে শুধুই
স্বার্থবাদের ব্যঞ্জনায়,
মহাকালটা সাঁতার কাটে
রক্ত নদীর মোহনায়।

যাচ্ছে তবু কালের চাকায়
সময় ছুটে ঊর্ধ্বশ্বাস,
নিঃসঙ্গতায় বুকের ভেতর
আমার জমে দীর্ঘশ্বাস।

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন" ৫৫

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কথা  নিয়ে  কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন  চলবে...
 





টানাপোড়েন (৫৫)

সমানুভূতি


'আ.আ.আ. মেরে ফেলল'-পাশের বুলু জেঠিমাদের বাড়ি থেকে  চিৎকারটা আসছে। রেখা ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল। হন্তদন্ত হয়ে ছাদ থেকে নেমে এসে ডাকতে শুরু করলো,  'কাকিমা, কাকিমা ও কাকিমা?'
কাকিমা রান্নাঘর থেকে গলা বাড়িয়ে বলল  'কি হল রে ননী।'
রেখা বলল 'তুমি এখনো রান্নাঘরে?'
কাকিমা বললেন  'আর বলিস না সাড়ে তিনটে বাজে। এখনো তো লক্ষী আসলো না?'
রেখা বলল'তাই বলে তুমি এখন বাসন মাজতে বসবে?'
কাকিমা বললেন'না মেজে উপায় আছে? সকাল হোলেই তো বাসনের দরকার হবে।'
রেখা বলল ' তাহলে তুমি আমাকে বলতে পারতে?'
কাকিমা বললেন'না ননী ,তোরা শ্বশুর বাড়িতে কত কাজ করিস। বাপের বাড়িতে এসে একটু রেস্ট নিবি না।'
রেখা বলল  'যদি মেয়েরা বড় হয়ে মায়েদের কাজেই না লাগে ,তাহলে কি ভালো দেখায়?'
কাকিমা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে  চিবুক  ধরে আদর করে বললেন  'লক্ষী মেয়ে কত সুন্দর ভাবনা।  বুকের মধ্যে টেনে নিলেন।'
রেখা বলল ' কাকিমা ,আমি না তোমার মধ্যে আমার মায়ের গন্ধ পাচ্ছি।'
দু চোখ বেয়ে জল পড়তে লাগলো।
কাকিমা ওর চোখের জল মুছে দিতে দিতে বললেন ' ভাবনা কিসের মা ।আমরা তো এখনো বেঁচে আছি।'
রেখা বলল 'কাকিমা, যখন বাড়িতে একা থাকি তখন খুব মায়ের কথা মনে হয়। অনেক অনেক দেখতে ইচ্ছে করে মা কে। মায়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে।'
কাকিমা বললেন  'সে তো করবেই মা ।তোমার জন্মদাত্রী ।তার জন্য তো তোমার কষ্ট হবেই।'
কাকু ঘর থেকে বললেন  'তোমাদের রান্না খাওয়া দাওয়া হলো। এবার তো ননীকে  নিয়ে বেরোবে একটু।'
কাকিমা বললেন 'হ্যাঁ বেরোবো। আর বোলো না একটু দেরি হয়ে গেল। লক্ষ্মী কাজে আসে নি।'
কাকু উদগ্রীব হয়ে বললেন  ' লক্ষী কামাই বেশি করে না ।করলেও তোমাকে বলে যায়। আজকে তাহলে কি কিছু হল?'
কাকিমা বললেন  'কে জানে আমিও তো সেটাই ভাবছি।'
রেখা বলল  'কাকিমা তোমাকে যে কথাটা বলার জন্য ছুটে এসেছিলাম ।'
কাকিমা বললেন ' কি কথা রে?'
রেখা বলল 'বলছি  তুমি কোন চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়েছো ?'
কাকিমা বললেন'হইচইয়ের আওয়াজ একটা কানে আসলো বটে কিন্তু আমি অতটা আমল দিই  নি জানিস ননী ?তখন আমার রান্নাঘরেই ধ্যান ছিল।'
'রেখা বলল  'ওই আওয়াজটার কথাই বলছি ।আমি তো ছাদে ছিলাম ।স্পষ্ট আসছিল আওয়াজটা।'
কাকিমা বললেন  'তোর কি মনে হয় কোন দিক থেকে আসছিল আওয়াজটা।'
রেখা বলল  'বুলু জেঠিমাদের  বাড়ি থেকে।'
কাকিমা বললেন  'কি রকম আওয়াজ বল তো?'
রেখা বললো  'মনে হচ্ছিল যেন অসহায় ভাবে কোন আর্তনাদ।'
কাকিমা বললেন 'সে কিরে?'
রেখা বলল  'হ্যাঁ ,কাকিমা'।
কাকিমা বললেন  'ড্যাম সিওর গাধাটা ঠিক দিদিকে..?'
রেখা বলল  'কে গো কাকিমা? কার কথা বলছো?'
কাকিমা বললেন ' আজ যদি ওরা দিদিকে  কেউ কিছু করেছে ,আমার হাত থেকে ওরা পার পাবে না। এটা দিনকে দিন আর সহ্য করা যাচ্ছে না।'
রেখা বলল  'কেন কাকিমা ওরা  কি করে বুলু জেঠিমাকে?'
কাকিমা বললেন  'ভেবেছিলাম কথাটা তোকে বলব না ।কষ্ট পাবি।এখন দেখি বলতেই হচ্ছে।'
রেখা বললো  'কি কথা?'
কাকিমা বললেন ' সে অনেক কথা মা।বুলুদি, উনি মানসিক ভারসাম্য হারান নি। অনেক মেন্টাল টর্চার করা হয়েছে রে।'
রেখা বলল  "সেকি কথা কাকিমা?'
কাকিমা বললেন  'এই ছোট ছেলে আর ছোট ছেলের বউটা যে কি ধুরন্ধর ,কি বলবো তোকে?'
রেখা বলল  'তাই?'
কাকিমা বললেন  'হ্যাঁ ,রে মা ।আমার তো মনে হয় নীলাঞ্জন এর সঙ্গে ওরা এমন কিছু করেছে ,যার জন্য নীলাঞ্জন বাড়িতে আসে না।'
রেখা বললেন 'কেন এরকম করেছে?'
কাকিমা বলছেন ' সবই সম্পত্তি বুঝেছিস?'
দাদা মারা গেলেন এইসব চিন্তা করতে করতে।
এখন বুলুদিকে এরা পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে।'
কাকিমা  বললেন 'আচ্ছা, চল মা ।তোকে  একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি ,।জেঠিমাকে দেখবি বলছিলি?'
রেখা বললো  'চলো কাকিমা।'
কাকিমা কাকুকে উদ্দেশ্য করে বললেন ' কি গো একটু খেয়াল রেখো ।আমি দরজা লক করে দিয়ে যাচ্ছি ।তোমার কাছে একটা চাবি আছে না ,ওটা রেখো তোমার কাছে। একটু ননীকে নিয়ে ঘুরে আসি।'
কাকু  বললেন'  'সেই ভালো।'
কাকিমা বললেন ' চল রে ননী‌'।
গেট লক করে বেরোতে যাচ্ছেন ,ঠিক সেসময় ভোলা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল 'ছোট বৌদি ছোট বৌদি?'
কাকিমা পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখেন' ভোলা।
কাকিমা বললেন  'কিরে ভোলা এত হাঁফাচ্ছিস কেন ?কি হয়েছে?'
ভোলা বলল 'বুলু বৌদিদের বাড়ি থেকে প্রচন্ড আওয়াজ আসছে ।কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না ।মনে হচ্ছে বুলু বৌদিকে  মারছে।'
রেখা তো একে বারে অবাক হয়ে গেল।
কাকিমা একটু রেগে গিয়ে বললেন  'চল তো দেখি ?ওদের কিছু না বলে বলে ,ওদের বড্ডো বাড় বেড়েছে।'
কাকিমা দ্রুতবেগে হাঁটতে লাগলেন সঙ্গে ভোলা এবং রেখা ও।
কাকিমা গেটের কাছে গিয়ে থমকে গেল ।গেট লক করা। বাধ্য হয়ে তখন কাকিমা লালের উদ্দেশ্যে চেঁচাতে  লাগলেন।
কাকিমা ঊর্ধ্বস্বরে চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন 'লাল ,লাল গেট খোল।'
এতক্ষণ চিৎকার-চেঁচামেচিতে গেটের কাছে লোক জড়ো হয়ে গেছে।
ঘরের থেকে আওয়াজ আসলো  'কাকিমা, মা আজকে বড্ড বাড়াবাড়ি করছে ।তাই গেট খুলছি না।'
কাকিমা বললেন 'ঠিক আছে। দরজা খোলো আমরা ভিতরে ঢুকবো'।
অলরেডি গেটের সামনে প্রচুর লোকের ভিড় জমে গেছে।
পরী এসে গেট খুলে দিল। কাকিমা দ্রুতগতিতে ভেতরে ঢুকলেন।
কাকিমা ভেতরে ঢুকেই লালকে বললেন'কি হয়েছে এত চিৎকার করছে কেন বুলু দি।'
বুলু  জেঠিমা ভয়ে ভয়ে কাকিমার পেছনে এসে দাঁড়ান।
লাল (লালমোহন) বলল 'রোজ রোজই পাগলামি দেখতে আর ভাল লাগছে না।'
কাকিমা বললেন  'বুলুদি তো এরকম ছিল না। তোমরা  দিদিকে এরকম অবস্থায় এনেছো। এখন বলছ রোজ রোজ পাগলামি?'
লালের হাতে একটা লাঠি ছিল । কাকিমা লালের হাত থেকে লাঠিটা নিয়ে বললেন  'এবার তোমার পিঠে পড়বে লাঠি।'
বুলু জেঠিমা হাততালি দিয়ে বললেন 'বেশ হবে। বেশ হবে।'
রেখার চোখে যেন ঝিলিক খেলে গেল।
মীনাক্ষী কাকিমা বললেন'ভালো করে তোমার মায়ের টিটমেন্ট করাও আর একটা কথা শুনে রাখ ।এরপর যদি আবার কখনো এই দিদির গায়ে হাত তুলতে দেখি বা শুনি ।তাহলে কিন্তু আমরা আইনের দ্বারস্থ  হবো।"
প্রতিবেশিদের সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন ' কি আপনারা সবাই সাক্ষী দেবেন তো?'
সকলে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন 'হ্যাঁ ,হ্যাঁ ,দেবো দেবো।'
মীনাক্ষী কাকিমা বললেন ' আগে গ্রামে শাসন ছিল ।মুরুব্বীরা ছিলেন গ্রামে বিচার হতো ।এখন সে সব উঠে যাচ্ছে বলে ,আজকের প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সব ভুলে যাচ্ছে ।তাই যা খুশি তাই করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এটা কিছুতেই হতে দেয়া যায় না'।
মাঝখান থেকে লাল এর বউ পরী বলে উঠলো 'এটা তো আমাদের পারিবারিক ব্যাপার। আপনারা এর ভিতরে ঢুকছেন কেন?'
মীনাক্ষী কাকিমা বললেন 'ঢোকার দরকার হতো না ,পরিবারের মধ্যেই ব্যাপারটা সীমাবদ্ধ রাখলে। হঠাৎ হঠাৎ এত চিৎকার করছেন দিদি কি কারণে ?সেগুলো প্রতিবেশী হিসেবে আমাদেরও দেখা উচিত?
আর প্রতিবেশী হিসেবে সেই কাজটাই করার চেষ্টা করছি।'
অন্যান্য প্রতিবেশীরা বললেন  'একদম ঠিক। একদম ঠিক । না হলে সব অনাচার বেড়ে যাবে।'
মীনাক্ষী কাকিমা আরো বললেন ' শোনো লাল। তোমার দাদা নীলকে সব ব্যাপারে জানিয়েছ তো ,নাকি সে ধোঁয়াশার মধ্যেই আছে?'
লাল চুপ করে রইলো।
 কাকিমার এই মারমুখীমূর্তি একদিকে যেমন মরিয়া অন্যদিকে মারিয়া ও বটে -এই মহামারী রূপ রেখার  চোখে  প্রথম।
যেন কাকিমার মধ্যে সেই দুর্গতিনাশিনী দুর্গা মায়ের মূর্তি প্রত্যক্ষ করল।
কাকিমা তো ভালই কিন্তু কাকিমার ভেতরে প্রতিবেশীদের প্রতি সহানুভূতি ,সমানুভূতি -এটা দেখে রেখার গর্বে বুক ভরে উঠলো আর ভাবল সে এই পরিবারে মেয়ে। এঁদের জন্য শ্রদ্ধায় মাথা নত করতে ইচ্ছে করলো। রেখার মনে বারবার সেই গানটি অনুরণিত হতে লাগল' দুর্গে ,দুর্গে ,দুর্গতিনাশিনী ।মহিষাসুরমর্দিনী...?'

এপার ওপার ইছামতী







২৮ নভেম্বর  ২০২১ মহাবোধি সোসাইটি হলে  উদযাপিত হলো এপার ওপার ইছামতী পত্রিকা  শঙখ ঘোষ  সংখ্যার প্রকাশ অনুষ্ঠান।  প্রধান অতিথি ছিলেন কলকাতা  বিশ্ববিদ্যালয়ের  স্বনামধন্য  অধ্যাপক  ড. সনৎকুমার  নস্কর।  সভাপতিত্বে ছিলেন লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরির  প্রতিষ্ঠাতা  চালক শ্রী সন্দীপ দত্ত  মহাশয়। 




এবারের পত্রিকা  সংখ্যাটি ২০২১ বৈশাখ  ও শারদ যুগ্ম সংখ্যা। কবি শঙখ ঘোষ  সম্পর্কিত অজস্র  প্রবন্ধ এবং গল্প কবিতা আনমনে পর্যায়ের লেখায় সমৃদ্ধ। অনুষ্ঠান টিও অত্যন্ত মনোজ্ঞ ছিলো। মুখ্য সম্পাদক শ্রীমতী চৈতালী ব্রহ্মের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে  কবিতাপাঠ  আবৃত্তি গানে ভরে উঠেছিলো এই সন্ধ্যাটি। 






পত্রিকাটি এরপর পাওয়া যাবে ধ্যানবিন্দু কলেজ স্ট্রীটে। এছাড়া এই ফোন নম্বরে ফোন করলে কলকাতা ও কলকাতার বাইরে কুরিয়ার ও হবে। 

আইরিন মনীষা





নিঃসঙ্গতা 


আজ কতদিন হয়ে গেলো 
একাকীত্বের সাথে আমার নির্লিপ্ত বসবাস
যেখানে ধুসর বিবর্ণ আকাশের হাতছানি 
এভাবেই বেদনায় আশাহত অন্যায্য সহবাস। 

রঙ্ধনুর সাত রঙ আজ বড়ই ফিকে
যেখানে আর রাঙেনা আমার অধরা স্বপ্নের পালক,
একসাথে পথ চলার সেই আকাঙখিত আশার প্রতীক্ষায়
নিঃসঙ্গতার পথ চলায় আমিই আমার চালক। 

নগ্ন পায়ে শিশিরের সাথে স্পর্শ 
যেখানে ছিলে তোমার অবাধ বিচরণ, 
বিমুগ্ধ নয়নে আমার হাত দুটি ধরে হাঁটতে
শিহরণে যেথায় তোমাতেই চাইতাম বাঁচতে। 

বাদল দিনের রিমঝিম ছান্দিক বারিধারায় 
কি দারুণ এক সুখানুভুতি হাতছানি দিতো,
যেথায় আমার আরাধ্য হারানো দিনের গান
বাজতো গ্রামোফোনে যেথায় আমার মন কেড়ে নিতো।

বসন্তের মাতাল সমীরণে সেই উদ্দীপনা 
এখনো আমায় কাছে টানে একান্ত একাকীত্বে
ভুলা কি যায় তারে মধুময় স্মৃতি মাখা ক্ষণ
আমার নিঃসঙ্গতার সঙ্গী তব বিরহী বিস্মৃতির   সম্ভিতে।

bxcv

LOVE

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল"৩২

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল" 
 




বনফুল
৩২ পর্ব


জুঁই বাসায় ফিরে হাত মুখ ধুয়ে বাবা-মায়ের  সাথে ঘন্টা খানেক বসে কথাবার্তা বললো।
ওয়াজেদ সাহেব মেয়ের খুশি দেখে ভিতরে ভিতরে নিজেও খুব খুশি হলেন । ঘড়িতে দশটা বাজতেই জুঁই ময়নাকে ডেকে বললো খাবার পরিবেশন কর।ময়না ওভেনে সব খাবার গরম করে পরিবেশন করে বললো আপা, খালাম্মা খালুকে নিয়ে টেবিলে আসেন।বাবা-মার সঙ্গে খাওয়া শেষ করে গুডনাইট বলে জুঁই উপরে উঠে গেলো।
 নিজের কিছু কাজকর্ম সেরে পলাশকে ফোন করলো জুঁই। ওপাশ থেকে পলাশ বললো আই মিস ইউ..... জুঁই।
 সেম টু ইউ...বলে  জুঁই বললো আজ আর বেশি কথা বলবো না, ঘুমাবো....। 
আমি ফোন না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে তুমি চিন্তা করতে তাই ভাবলাম ফোন দিয়ে ঘুমাতে যাই। 
পলাশ বললো থ্যাংকস জুঁই, গুডনাইট।
জুঁই ও বললো গুডনাইট।

 ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে সৈকত। সব বন্ধু বান্ধবরা এসে ভীড়  করে মিষ্টি এবং অন্যান খাবার খেয়ে যে যার বাড়িতে চলে গেলো। বাড়িতে মেহমানরা থাকার কারনে সৈকত আর ফোন দিতে পারেনি অহনাকে। ভীড়  কমার সাথে সাথেই সৈকত নিজেন রুমে ঢুকে অহনাকে ফোন দিলো। স্যরি অহনা, অনেকটা সময় ব্যস্ত থাকায় তোমাকে ফোন দিতে পারিনি।এইমাত্র বন্ধু বান্ধবরা গেছে, তাই তোমাকে ফোন দিতে পারছি। 
অহনা বললো স্যরি বলার কিছু নেই।
সৈকত বললো দ্যাটস লাইকে এ গুডগার্ল।
 অহনা বললো সারাদিন তোমার উপর অনেক ধকল গেছে এখন ঘুমাও। কালকে কথা হবে , গুডনাইট। 
সৈকতেও গুডনাইট বলে ফোন কাটলো।
চলবে....

শামীমা আহমেদ





শায়লা-শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ২২)
শামীমা আহমেদ 

শায়লার সাথে পরিচয়ের পর থেকেই শিহাবের মনে কেমন যেন একটা পরিবর্তন হয়ে যায়।কোলাহল হৈ চৈ বন্ধু আড্ডা পার্টি কিছুতেই আর ভাললাগাটা আসেনা। নীরবতাই বেশি উপভোগ করে। কেমন যেন সঙ্গীহীন জীবনে একাকীত্বের কষ্টটা পেয়ে বসেছে।একটা না পাওয়া বোধের অনুভুতি সারাক্ষন  ভেতরে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। শিহাব বুঝতে পারছে না কেন এমন হচ্ছে।হঠাৎ করে শায়লা যেন তার হৃদয়ের শান্ত দীঘিতে কিসের আলোড়ন তুলে দিলো! ঘুমন্ত মনটাকে জাগিয়ে তুললো। সে তো ছিল একরকম।সব স্মৃতি ঢেকে রেখে স্বাভাবিক জীবনে চলছিল। কিন্তু আজকাল ইচ্ছে অনিচ্ছেগুলোও মনের অনুমতির কাছে ঘুরপাক খেতে থাকে।কতদিনের অভ্যস্ত জীবনযাপনে কেমন যেন পাল্টে যাওয়ার হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। দিনরাত্রি  অন্যরকম একটাভাবনায় ডুবে থাকা। যেখানে বারবার শায়লার মুখটাই ভেসে উঠে!
ঘুরে ফিরে শায়লার কথাগুলোই কানে বাজে। রিশতিনার সাথে হাতে গোনা কিছু দিনের জীবনযাপন। রিশতিনার সবটুকু বুঝে উঠার আগেই সে হারিয়ে যায়।তারপর বহুদিন আর কোন মেয়েই তার ভাবনায় আসেনি।জীবনের উপর এমন ঝড় বয়ে যাবে তা কখনো শিহাব ভাবেনি।মা, ভাবীর শত চেষ্টাও তার মনকে ভুলাতে পারেনি।কিন্তু শায়লার মত এমন  সহজ সরল অচেনা একটি মেয়ে কেমন করে এতটা ভাবনার গভীরে চলে এলো? সে প্রশ্ন শিহাব নিজেকে বারবার করেও তার কোন উত্তর পায় না।তবে কি কেউ কারো শুন্যতাটা পূরণ করতে পারে? তবে কি শায়লাকে রিশতিনার জায়গায় ভাববে শিহাব?শায়লা কি রিশতিনার ভিন্নরূপে এসেছে?
শিহাবের এলোমেলো ভাবনায় আজ মনটা অস্থিরতায়।আজ আর অফিসে যেতে মন চাইছে না আর তেমন কোন জরুরী কাজও রেখে আসেনি।যদিও প্রতিক্ষণই যোগাযোগে থাকতে হচ্ছে। শিহাব অফিস এসিস্ট্যান্টকে কল দিয়ে  জানিয়ে দিলো সে আজ অফিসে যাচ্ছে না। কোন জরুরী প্রয়োজন হলে যেন কল করে। তাছাড়া বাইকটারও একটি সারভিসিং দরকার।কমতো ডিউটি দিচ্ছে না।আজ দুপুরের পরে বেরিয়ে ওয়ার্কশপে দিয়ে আসবে।আর বিকেলটা  বন্ধুদের সাথে কাটিয়ে দিবে।মাঝে মাঝে রুটিনের বাইরে যেতে শিহাবের ভালোই লাগে।তবে এটা মনে হয় সবার জন্যই প্রয়োজন।
শিহাব চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। বারান্দার টবে বেশ ফুল ফুটেছে!  একেবারেই খেয়াল করা হয়নি।সেই সকালে বেরিয়ে গিয়ে রাতে ফেরা।সে খুব শখ করে টবের গাছগুলো লাগিয়েছে। শিহাব চারতলায় সিঙ্গেল ফ্ল্যাটে থাকে।উপরে বা পাশেও আর কোন ভাড়াটিয়া নেই।বেশ নিরিবিলি থাকা যায়।অবশ্য এগুলো দেখেই বাসাটা তার ভালো লেগে যায়।

মোবাইলটা ঘরে বিছানায় ছিল।হঠাৎ মোবাইলের রিং টোন কানে এলো। শিহাব ঘরে এসে মোবাইল হাতে তুলে নিলো। শায়লার কল। শায়লাকেই ভাবছিল এতক্ষন।তবে ভাবনার শায়লা একরকম আর বাস্তবে অন্যরকম।কারন ভাবনায় শায়লাকে শিহাব অনেকখানি ভেবে নিয়েছে,  বাস্তবের শায়লার তা অজানা। 
কেমন আছেন?
শায়লার প্রশ্নে শিহাব সঠিক করে বলতে পারছে না আসলে সে কেমন আছে।শায়লার ভাবনায় কতখানি ডুবে আছে।
এইতো ভালো আছি।
অফিসে কখন এলেন?
শিহাব দেখলো দুপুর একটা বাজছে।শায়লাকে জানালো, নাহ! আজ অফিসে যাইনি।
কেন শরীরটা খারাপ করেছে কি? শায়লার উদ্বিগ্নতায় জিজ্ঞাসা।
না না তেমন কিছু না।আজ তেমন একটা কাজ নেই।তাছাড়া মাঝে মাঝে একা থাকতে ভালোই লাগে।কিছু বলবেন?
না, সকাল থেকে কোন মেসেজ পাইনি, তাই ভাবলাম কেমন আছেন জেনে নেই।
শিহাবের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে,এই জানতে চাওয়াটা কি এমনিতেই নাকি আমাকে ভাবনাটা মন থেকে চাওয়া।অবশ্য তা আর জানা হয়না।
শিহাব বলে উঠলো, আপনি আর আমি একদিন কোন একটা খোলা জায়গায় ঘুরতে যাবো।আপনার কোন আপত্তি নেইতো?
শায়লা প্রায়ই একটা স্বপ্ন দেখে।খুব দূরে খোলা একটা যায়গায় সে আর একটি ছেলে  হাঁটছে।স্বপ্নে শায়লার খুব চেষ্টা থাকতে সে মুখটি দেখবার।কিন্তু তা কখনোই স্পস্ট হয়না।তবে কি সেখানে শিহাবই থাকে?
কি হলো বললেন না? যাবেন একদিন ঐ খোলা যায়গাটায়।যেখানে আমি একা একা প্রায়ই যাই।
শায়লা আনমনা হয়ে যায়।কল্পনায় বহু দূর চলে যায়। সে আর শিহাব হাত ধরে একটা ছোট্ট নদীর তীরে দুজনে বসে আছে।নদীটার পানি তীর ছুইছুই করছে। মাঝে মাঝে শায়লা শিহাবের কাঁধে মাথা রাখছে। শিহাব তার চমৎকার কন্ঠে একটা গানের কলি গাইছে।কিন্তু ঘুম ভেঙে শায়লা আর কখনোই সেই গানটির কতজা মনে করতে পারে না।কাজের ফাঁকে কিংবা অবসরে খুব চেষ্টা থাকে গানটি স্মরণে আনবার।
শিহাবের ডাকে শায়লার সম্বিৎ ফিরে এলো।আর কিছু না ভেবেই বলে উঠল, হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই যাবো। কবে যাবেন বলেন?
আমি জানাবো। আপনার মায়ের অনুমুতি নিয়ে রাখবেন।আর সেদিন আমি আপনাকে আমার জীবনের সব কথা খুলে বলবো।
যদি চোখে জল ধরে রাখতে পারেন তবে বুঝবো আপনি খুব কঠিন মনের একজন মানুষ। আর যদি আমার দিকটা ভাবেন তবে দেখবেন কেমন করে একটা মানুষের সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েও বেঁচে থাকতে হয়।
শায়লা  কথাগুলো শুনছিল আর এক অজানা আশংকায় চিন্তিত হয়ে উঠছিল।মনে মনে বলে উঠলো, না শিহাব আমি তোমার কোন অতীত শুনতে চাইনা।অতীতের তুমিটা অন্যকারো হয়েছিলে কিন্তু বর্তমানের এই তুমিটাকেই আমার ভালো লাগে। এই তুমিটাই আমার কাঙ্খিত। 
শায়লা চোখ বন্ধ করে শিহাবের মুখটা ভেবে নিল।
শিহাব ওপ্রান্তে শায়লার সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায়। 
চলবে....

রাবেয়া পারভীন





স্মৃতির জানালায় 
(ম পর্ব)


মেয়েটি উচ্চকন্ঠে ডাকল,
- বাবলু এই বাবলু
ডাক শুনে একটি আট নয় বছরের ছেলে এসে ঘরে ঢুকল।ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বোঝা গেল ছেলেটি  মেয়েটির ভাই। কাছে এসে ছেলেটি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল  
- কেন ডেকেছো আপা ?
- কাজেম কো বলো আমাদের কে চা নাস্তা দিতে।
-আচ্ছা
বলে বলে ছেলেটি বেরিয়ে গেল। মাহতাবের দিকে তাকিয়ে মেয়েটি বলল
- আব্বা এলে যে আপনার কথা বলব,  আপনার নামটাই তো জানা হলোনা।
আবার ঢোক গিলে মাহতাব
-আমার নাম মাহতাব উদ্দীন। 
- আমার নাম শবনম।  আপনি কোথায় থাকেন ?  
-বকসীবাজার  মেসে থাকি।
-গ্রাম থেকে এসেছেন বুঝি ?
-হ্যাঁ 
- কে কে আছেন  বাড়ীতে ?
- বাবা  আর দুই বোন।
-আর মা ?  
- মা নেই ,  অনেক আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
বলতে গিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মাহতাবের। এতক্ষনে তাঁর মনে হলো বুকও বুঝি শুকিয়ে  যাচ্ছে। আস্তে  করে বলল
-আমাকে  এক গ্লাস  পানি দিবেন ? 
- এক্ষুনি আনছি।
শবনম উঠে পানি আনতে গেল  এবং ফিরে এলো কাজের ছেলেটিকে সাথে  নিয়ে। ছেলেটির হাতে নাস্তার ট্রে। শবনম  ট্রে  টা নিজের হাতে নিয়ে মাহতাবের সামনে  টি টেবলের উপর রাখলো। কাজেম কে বলল 
- কাজেম তুই শিপলু বাবলু কে  ডেকে নিয়ে  আয়
মাহতাব পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেল। শবনমের সাবলীল ব্যাবহার  তার ভয় কমিয়ে দিচ্ছিল। সে স্বাভাবিক  হয়ে বসে শবনমের হাত থেকে সেমাই এর প্লেট নিয়ে খেতে লাগল। দুটি ছেলে এসে ঘরে ঢুকল,  একজনকে আগেই দেখেছিলেন  বাবলু, পাশের জন সম্ভবত  শিপলু। বয়স তের চৌদ্দ  হবে। শবনম পরিচয় করিয়ে দিল
- এরা আমার ছোট দুই ভাই  শিপলু আর বাবলু। শিপলু ইনি তোমাদের একজন ভাইয়া,  আব্বার ছাত্র।
ছেলেগুলি  মাহতাবকে ছালাম দিয়ে নাস্তা খাওয়ায় মনোযোগ দিল। এখন মাহতাবের আর মনেই হলোনা  এই বাড়ীতে সে প্রথম এসেছে। মনে হচ্ছে এদের অনেকদিন  ধরে চেনে। কত যেন আপন। চা খাওয়া শেষ হলে সেদিনের মত উঠে পড়ল মাহতাব। শবনমের কাছে বিদায় নিল। বলল
- আমি তাহলে আজকে যাই, স্যাররকে বলবেন
-ঠিক আছে যান,  আবার আসবেন। অনেক ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে ফেলেছি কিছু মনে করবেন না।
মৃদু হেসে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো মাহতাব। রাস্তায় হাটতে হাটতে মনে হলো এতোক্ষন ধরে ঘটে যাওয়া  ঘটনাটি যেন বাস্তব নয় স্বপ্ন। কিছুক্ষন আগে দেখা মেয়েটিকে  সে কি সত্যিই দেখেছে?  নিজের গায়ে চিমটি কাটলো সে। তারপর নিশ্চিত  হলো স্বপ্ন নয়  এতোক্ষন যা ঘটেছে সব সত্যি। তারপর কতদিন পেরিয়ে গেছে কখন যে শবনমের সাথে  তার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে গিয়েছিলো বুঝতেই পারেনি।
 চলবে.....