স্মৃতির জানালায়
(৫ম পর্ব)
মেয়েটি উচ্চকন্ঠে ডাকল,
- বাবলু এই বাবলু
ডাক শুনে একটি আট নয় বছরের ছেলে এসে ঘরে ঢুকল।ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বোঝা গেল ছেলেটি মেয়েটির ভাই। কাছে এসে ছেলেটি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল
- কেন ডেকেছো আপা ?
- কাজেম কো বলো আমাদের কে চা নাস্তা দিতে।
-আচ্ছা
বলে বলে ছেলেটি বেরিয়ে গেল। মাহতাবের দিকে তাকিয়ে মেয়েটি বলল
- আব্বা এলে যে আপনার কথা বলব, আপনার নামটাই তো জানা হলোনা।
আবার ঢোক গিলে মাহতাব
-আমার নাম মাহতাব উদ্দীন।
- আমার নাম শবনম। আপনি কোথায় থাকেন ?
-বকসীবাজার মেসে থাকি।
-গ্রাম থেকে এসেছেন বুঝি ?
-হ্যাঁ
- কে কে আছেন বাড়ীতে ?
- বাবা আর দুই বোন।
-আর মা ?
- মা নেই , অনেক আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
বলতে গিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মাহতাবের। এতক্ষনে তাঁর মনে হলো বুকও বুঝি শুকিয়ে যাচ্ছে। আস্তে করে বলল
-আমাকে এক গ্লাস পানি দিবেন ?
- এক্ষুনি আনছি।
শবনম উঠে পানি আনতে গেল এবং ফিরে এলো কাজের ছেলেটিকে সাথে নিয়ে। ছেলেটির হাতে নাস্তার ট্রে। শবনম ট্রে টা নিজের হাতে নিয়ে মাহতাবের সামনে টি টেবলের উপর রাখলো। কাজেম কে বলল
- কাজেম তুই শিপলু বাবলু কে ডেকে নিয়ে আয়
মাহতাব পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেল। শবনমের সাবলীল ব্যাবহার তার ভয় কমিয়ে দিচ্ছিল। সে স্বাভাবিক হয়ে বসে শবনমের হাত থেকে সেমাই এর প্লেট নিয়ে খেতে লাগল। দুটি ছেলে এসে ঘরে ঢুকল, একজনকে আগেই দেখেছিলেন বাবলু, পাশের জন সম্ভবত শিপলু। বয়স তের চৌদ্দ হবে। শবনম পরিচয় করিয়ে দিল
- এরা আমার ছোট দুই ভাই শিপলু আর বাবলু। শিপলু ইনি তোমাদের একজন ভাইয়া, আব্বার ছাত্র।
ছেলেগুলি মাহতাবকে ছালাম দিয়ে নাস্তা খাওয়ায় মনোযোগ দিল। এখন মাহতাবের আর মনেই হলোনা এই বাড়ীতে সে প্রথম এসেছে। মনে হচ্ছে এদের অনেকদিন ধরে চেনে। কত যেন আপন। চা খাওয়া শেষ হলে সেদিনের মত উঠে পড়ল মাহতাব। শবনমের কাছে বিদায় নিল। বলল
- আমি তাহলে আজকে যাই, স্যাররকে বলবেন
-ঠিক আছে যান, আবার আসবেন। অনেক ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে ফেলেছি কিছু মনে করবেন না।
মৃদু হেসে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো মাহতাব। রাস্তায় হাটতে হাটতে মনে হলো এতোক্ষন ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি যেন বাস্তব নয় স্বপ্ন। কিছুক্ষন আগে দেখা মেয়েটিকে সে কি সত্যিই দেখেছে? নিজের গায়ে চিমটি কাটলো সে। তারপর নিশ্চিত হলো স্বপ্ন নয় এতোক্ষন যা ঘটেছে সব সত্যি। তারপর কতদিন পেরিয়ে গেছে কখন যে শবনমের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে গিয়েছিলো বুঝতেই পারেনি।
চলবে.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much