১১ এপ্রিল ২০২২

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৫০




লেখকের এই ধারাবাহিকতাকে কুর্নিশ জানাই । স্বপ্নসিঁড় সাহিত্য পত্রিকা'র পক্ষ হতে আপনাকে হার্দিক অভিনন্দন । ১৫০ তম দিন ।


উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৫০
টান
মমতা রায় চৌধুরী

রেখার হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে যায় কোনরকমে হাত ঘড়িটা হাতরে হাতরে নিয়ে টাইম টা দেখে সাড়ে চারটে বাজে । মনে মনে ভাবছে, মনোজকে কি ডাকবে? না ,ডেকেও কোন লাভ নেই। ওর ঘুম হচ্ছে কুম্ভ কর্ণের ঘুম। অসময়ের ডাকে আরো কাজের ব্যাঘাত ঘটবে। বরং ও একটু ঘুমোক তারপরে নয় ডাকব। এই বলে রেখাও পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ" জয় গনেশ, জয় গনেশ, জয় গনেশ দেবা।
রেখার কানে আওয়াজটা গেল কিন্তু গুরুত্ব দিলো না তারপর আবার কলিং বেল বেজে ওঠে, জয় গনেশ জয় গনেশ জয় গনেশ দেবা ।প্রথমে রেখা ভাবছিল স্বপ্ন দেখছে। পরে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে , কান খাড়া করে শুনছে, না এ তো বাস্তব স্বপ্ন নয়   ।এ বাবা মাসি এসে গেছে। কত বেলা হয়ে গেছে ।মনোজকে ধাক্কা দিয়ে দু চারটে কিল মেরে দিল। মনোজ তো বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল' কি করছো তুমি?'
"কি করছি মানে ?তোমার জন্য আজকে আমার দেরি হয়ে গেছে?'
'মানে?'
"মানে মাসি এসে গেছে, এখনো রেডি হতে পারলাম না। কখন যাবো বলো?'
"যাবে তো?'
" কোথায়?'
"মানে? তুমি সব ভুলে গেছো?'
"আমাকে ঘুমোতে দাও রেখা, কানের কাছে বাজ খাই গলায় এত চিৎকার করো না তো, ভালো লাগছে না বিরক্ত করো না। বলেই ভোস ভোস  করে নাক ডাকতে শুরু করল।
"আমি পাগল হয়ে যাবো তো লোকটাকে নিয়ে। এ বাবা নিজেই সব ভুলে গেছে। কি ,কোথায়, কখন কিভাবে যাবে?"
বকবক করতে করতে রেখা গিয়ে দরজাটা খুললো।
মাসি বলল" কিগো বৌমা? আজ দেরি করলে এতো?"
"আর বোলো না মাসি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।"
"তা বেশ করেছিলে।"
দরজাটা বন্ধ করতে করতে রেখা বললো" মাসি তুমি একটু তাড়াতাড়ি কাজগুলো সেরে নাও আজকে এক জায়গায় বেরোবো?"
'কোথায় যাবে?'
"আমার দেশের বাড়িতে কাকু কাকিমার কাছে।"
"ও তাই বুঝি যাও ঘুরে এসো।"
"কিন্তু..
"আর কিন্তু কিন্তু করো না তো তোমার বাচ্চাদের নিয়ে তো আর চিন্তা নেই, আমি আছি তো।'
"সে তো আমি জানি  মাসি ।'
" তাহলে আবার কিন্তু কিন্তু করছ কেন?'
"যার সাথে যাব তারই তো এখনো ঘুম ভাঙ্গলো না।"
"যাও গিয়ে তাড়াতাড়ি ছেলেকে তোলো।
"একটু সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ো।'
রেখাও খুব খুশি হল। মাসি নিজের থেকেই বলাতে রেখা চলে গেল নাচতে নাচতে মনোজের কাছে মনোজকে ডাকল "কিগো ওঠো, যাবে তো !না যাবে না?"
হুঁ
*মানে যাবে না?"
"কখন বললাম আমি?"
"তাহলে।"
"যাব তো।"
রেখা কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি রান্না ঘরের দিকে ছোটে মাসির জন্য এবং নিজেদের জন্য চায়ের জল বসিয়ে দেয় অন্যদিকে ফ্রিজ থেকে ময়দা বের করে পরোটার লেচি কাটতে শুরু করে পরোটা বাজবে বলে  অন্যদিকে ক্যাপসিকাম আলু ভাজার সবজি কেটে নেয়। চা হয়ে গেলে মাসিকে ডেকে চা-বিস্কিট দেয়।
তারপর রেখা বলে 'মাসি তুমি পরোটা এখানে খাবে তো ?"
মাসির চা খেতে খেতে চুপ করে থাকে কোন জবাবই দেয় না।
রেখা সমস্তটা বুঝতে পারে মাসির সংসারে অভাব নিজের খাবারের ভাগটা যদি নাতি নাতনিদের দিতে পারে তাহলে অনেকটা সাশ্রয় হয় ।সেজন্যই কোন কথার উত্তর দেয়নি। রেখা বলল,' ঠিক আছে ।তুমি এখানে দুটো খাও আর দুটো নিয়ে যাবে।'
মাসিnখুব খুশি হলো ।তারপর বলল "আমি তাড়াতাড়ি কাজগুলো গুছিয়ে নিচ্ছি তারপর বাড়ি যাই ।'
রেখা বলল" হ্যাঁ বাড়িতে কি কি জিনিস আনার আছে সেটা নিয়ে চলে এসো।"
"মাসি বাচ্চাগুলোর খাবারটা একটু দিয়ে যাও না।"
মাসি বলল' হ্যাঁ  দাও আমি খাবারটা দিয়ে যাচ্ছি। 'তাহলে তুমি এদিকে তাড়াতাড়ি রেডি হতে পারবে।'
রেখা খুব খুশি হল এবং আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পরে নিল।।
মনোজ ঘর থেকে বলল' তুমি রেডি হয়ে গেছো?'
রেখা বললো হ্যাঁ।
বলেই মনোজের কাছে  এসে দাঁড়ালো। 
মনোজ আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে বলল' তুমি শাড়ি পড়ে যাবে?'
রেখা বলল' মানে? শাড়ি পড়েই তো যাব।:
"তুমি শাড়িটা খুলে সালোয়ার কামিজ করে নাও।"
"কেন?"
"আরে বাবা সালোয়ার কামিজ করে বাইকে গেলে সুবিধে বেশি।"
রেখা অভিযোগের সুরে বলে' তাহলে তুমি আগে বলনি কেন?"
"তুমি তো দেখতে পাচ্ছ কতটা ব্যস্ত থাকি।'
মনোজ রেখাকে কাছে ডেকে বলল" তোমাকে শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর লাগে, এত সৌন্দর্য তুমি কাকে দেখাবে,।"
রেখা গাল ফুলিয়ে বলল" তার মানে আমাকে সালোয়ার কামিজের ভালো লাগেনা?*
"আমি আবার সেটা কখন বললাম।'
'ঠিক আছে ,ঠিক আছে ।আমি যাচ্ছি চেঞ্জ করে নিচ্ছি।"
* বৌমা আমি যাচ্ছি।'
রেখা বললো" হ্যাঁ, মাসি, যাচ্ছি বলতে নেই। এসো তাড়াতাড়ি এসো।'
মনোজ বলল'আমার চা টা দিয়ে যাও।,'
রেখা বললো "ফ্লাক্সে আছে একটু ঢেলে নাও না।"
চা খেয়ে মনোজ ওয়াশরুমে গেল।
এরমধ্যে আবার কলিং বেল বেজে উঠলো ।রেখা ,বললো "এখন আবার কে আসলো উফ কি জ্বালা।"
রেখা দরজা খুলতে গিয়ে দেখে মাসি
"ও মাসি তুমি এসে গেছ।"
মাসি যাও আমি রান্না ঘরে কিছু খাবার রাখা আছে আগে খেয়ে নাও। আর শোনো তরকারি করা আছে তুমি তোমার মত করে ভাত করে নিও কেমন।'
আর্ ঠিক সময়ে তুমি আমার ওই বাচ্চাদেরকে খেতে দিও ।ওদেরকেখেতে দেওয়ার পর দেখবে আরো কিছু বাচ্চা আসে ওপার ও পাড়া থেকে ওদেরকেও দিও।
ঠিক আছে
ওদেরকে কি বাইরে ছেড়ে দিয়েছো?
হ্যাঁ মাসি, ওরা আর ভিতরে থাকতে চাইছিল না।
শুধু শুধু আরও ভেতরে রেখে কি করব বাইরেটা থাকবে আর গ্যারেজের দরজাটা খোলা থাকবে সারাদিন ওখানে এসে শুতে পারবে।
ভালোই করেছো।
আসলে এতদিন রেখেছিলাম তো বাচ্চাগুলো নিরাপত্তার কথা ভেবে আর রাখা যাবে না।
তোমরা কখন বেরোবে তাড়াতাড়ি বেরোও।
হ্যাঁ মাসি।
মনোজ ঘর থেকে বলল আমার প্যান্ট জামাটা কোথায় রেখেছো?
দেখনা, বের করে নিতে পারো না একটু।
মনোজ ঘর থেকে বলল 'তুমি তো জানো…।!
"দেখো সোফার উপরে রেখেছি।'
রেখা মাসি কে বলল" মাসি ফ্রিজ থেকে ইলিশ মাছটা আছে ওটা প্যাকেট কর আমরা যাবার সময় আমাকে দেবে ওটা হাতে।।
মনোজ রেডি হয়ে বলল "আমি কিন্তু রেডি ।নাও চলো চলো তাড়াতাড়ি বেরোও।'
"হ্যাঁ, তুমি এগোও, আমি আসছি।"
মনোজ বাইরে থেকে হাঁক দিল 'তোমার হেলমেটটা নিয়ে আসবে।'
"ঠিক আছে।"
রেখা গিয়ে বাইকে বসলো।
 মাসি এসে বলল "এই নাও ব্যাগটা ,মাছের ব্যাগটা নাও।"
বাইক স্টার্ট করলো
রেখা হঠাৎ হাসির দিকে তাকালো, তখন বলল মনোজকে ওয়েট ওয়েট ওয়েট।
"কি হলো?"
রেখা বাইক থেকে নেমে মাসির কাছে এসে বললো " মাসি তুমি ঘামছো কেন?'
"বোধহয় তাড়াহুড়ো করেছি তো এইজন্য।"
'না ,না তোমার তো প্রেসার আছে তুমি  ওষুধ খেয়েছো তো?'
"মাসি চুপ করে আছে।'
বুঝতে পেরেছি তুমি ওষুধ খাও নি।
মাসি বললো 'আসলে ওষুধটা শেষ হয়ে গেছে "কিনতে পারিনি গো বৌমা।'
"ঠিক আছে  আমি পার্থকে বলে দিচ্ছি ও ওষুধ এনে দেবে ।তুমি কি ওষুধ খাও মনে করতে পারবে?
"আরে আমি তো তোমাদের এই যে সামনের দোকান সঞ্জীবনী ওখান থেকে ওষুধ কেনেও না ওখানে গিয়ে বললেই উনারা জানেন আমি কি ওষুধ খাই।"
'ঠিক আছে, আমি পার্থকে বলে দেব কোন চিন্তা করো না আর এই যে ছোট ফোনটা রেখে গেলাম আমরা প্রয়োজনে ফোন করে নেব আর তোমার যদি এমনি কোন অসুবিধা হয় তাহলে পার্থ আছে সামনে সেন্টুদা আছে পাশের বাড়ির চৈতীর মা আছে ঠিক আছে কোন টেনশন করো না।
না গো বৌমা তোমরা সাবধানে এসো।
ঠিক আছে তাহলে আসছি।
মনোজ গাড়ি স্টার্ট করলে রেখা পেছনে বসে।
 মাসি বলতে থাকে "দুগ্গা দুগ্গা দুগ্গা।"
রেখা ভাবতে থাকে সত্যিই ঈশ্বরের অশেষ করুনা মাসির মত একজন বিশ্বস্ত লোককে রেখার কাছে পাঠিয়েছে। আর কত আন্তরিকতার সঙ্গে সবকিছু করে, যেন আপনার জন।
মনোজ কিছুদূর যাবার পরে এমন জোরে ব্রেক কষে রেখা আরেকটু হলে পড়েই যেত ।মনোজকে জড়িয়ে ধরে।।
"মনোজ হো হো হো করে হাসতে থাকে এই জন্যই তো ব্রেকটা কষে।'
"যেন মনে হচ্ছিল পরের বউকে নিয়ে বাইকে যাচ্ছি।'
রেখা বলল" মানে?'
"হ্যাঁ সেরকমই তো তুমি এত দূরে বসে আছো বাইকে বসেছি কোথায় আমাকে জড়িয়ে ধরবে চালানোর সময় একটা গতি আসে আমার।"
রেখা বলে "কি করে জড়িয়ে ধরবো সামনে ব্যাগ আছে ব্যাগটাইতো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
মনোজ বলে "দেখো, যদি মনের ইচ্ছে থাকে কোন বাধাই কিন্তু বাগ মানে না।'
রেখা মনোজকে জড়িয়ে ধরে বসলো আর মনোজ গান গাইতে থাকলো "এই পথ যদি শেষ না হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো….?"
এভাবে বাইক শহর ছাড়িয়ে ক্রমশ গ্রামের দিকে রেখাদের নির্মল  গ্রাম গাছ-গাছালি পুকুর দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ পেরিয়ে ,পঞ্চা কাকাদের বাড়ি, বুলু কাকিমা দের বাড়ি ছাড়িয়ে নিজের ভিটে বাড়ির গেটের কাছে এসে দাঁড় করালো।
গেটটা ভেজানোই ছিল।
এ কাজটি করে খুলতে গিয়ে আওয়াজ পেল কাকিমা রান্নাঘরে কিছু একটা করছে আর এদিকে ভোলা কাকার সাথে বকবক বকবক করছে।
হ্যাঁ রে ভোলা, দিনকে দিন তোর বয়স কমছে না 
বাড়ছে তোর এখনো খাবার টাইম হলো না?'
'এইতো ছোট বৌদি হয়ে গেছে যাচ্ছি।"
হ্যাঁ রে ভোলা গেটে আওয়াজ হলো না?
, রাশুর মা আসলো।
আরে ,মামনি!
কাকিমা বলল তুই কি জীবনেও শোধরাবি না এখন কত বয়স।'
"কেন আমি আবার কি করলাম?'
রাখাল আর বাঘের গল্প শুনেছিস?
রাখাল রোজ গরু চরাতে যেত আর বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতো। আর প্রত্যেকে আওয়াজ শুনে ছুটে আসলে হো হো  করে হাসত।
দিন সত্যি কারে যখন বাঘে ধরল তখন চেঁচানো সত্বেও কেউ আসেনি। তাকে বাঁচানোর জন্য।
রেখা চুপি চুপি রান্নাঘরের কাছে গিয়ে বলল  কাকিমা।
রেখা কিছুক্ষণ পর আবার ডাকতে থাকে কাকিমা।
পিছন ফিরে তাকাতেই কাকিমা আনন্দ উল্লাসে বলে ওঠে তুই?
"কিগো ব্যাগটা নিয়ে এসো।"
রেখা বলল "যাচ্ছি।"
"আর হাতে ওটা কি?"
 ইলিশ মাছ আছে।
"কাকু খেতে চেয়েছিল না।"
ভোলা নিয়ে যা তোর দাদার কাছে ওদেরকে।।
দেখো কারা এসেছে।
কাকু বলল "কে ননী?'
আয় আয় আয় আমার বুকে আয় মা।
ভোলা দেখ কি টান।'
কাকিমা বলল' ইলিশ মাছ এনেছে।'
তাই মা আমার কবে থেকে গঙ্গার ইলিশ খেতে ইচ্ছে করেছিল রে মা।"
"তুই একাই এসেছিস? মা গাড়ি এসেছে?"
"না না তোমাদের জামাই এসেছে বাইকে এসেছি।
কিগো এদিকে এসো।"
মনোজ এসে কাকাকে প্রণাম করলো।।
কাকিমা বলল "আমি ওদিকে যাই।রান্নাবান্না গুলো করি।'
হ্যাঁরে, রাশুর মা আসলো?
ভোলা বলল "খেয়াল করিনি আসলে তো দেখা করতো।"'
রেখা বলল 'রাশুর মা টা কে? কাকিমা । নতুন কাজের লোক।"
"তোর মনে আছে কিনা জানিনা আমাদের বাড়িতে বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে সাবিত্রী কাজ করতে এসেছিল তোর মনে আছে?'
রেখা বললো মানে সাবিত্রী জেঠিমা যে বাঙ্গাল ভাষায় কথা বলতো আর ঠাকুমাও বাঙ্গাল ভাষায় কথা বলতো।'
একদম ঠিক ।তোরা তখন খুব ছোট ছিলিস।
তোর তো স্মৃতিশক্তি বেশ ভালো।
হ্যাঁ, ওই সাবিত্রির সঙ্গে ওর মেয়ে আসত। নাম সতী।'
"এই সতী হলো রাশুর মা।'
"ও তাই বুঝি?'
এসে হাতে পায়ে জড়িয়ে ধরেছে একটু আশ্রয়ের জন্য আমাদেরও তো এই হাল তারপরেও দেখলাম যে থাক কাজকর্ম করবে একটু খাবে?'
রেখা বলল ঠিকই করেছ।'
'
তবে জানিস তো ননী, আমি সতীকে বলেছি আমাদের গ্রামে আশেপাশে বাড়িগুলোতেও কাজ করে দেবে। তাতে ওর হাত খরচাটা আসবে।
ইতিমধ্যেই গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বকবক করতে করতে আসছে কি  দ্যাশ আসইলাম। দয়া মায়া নাই।"
ভোলা বলল" ছোট বৌদি এসে গেছে।
রেখার কাকিমা বলল সতী এসে গেছো ?
কি কমু এই দ্যাশ মানুষ বাস করে।
কি হয়েছে সত্যি?
আরে পাশের বাড়ির কাম করি বউডারে কইলাম একটু জল খাবার দাও
কথা হুইনা আকাশ থেইকে পইড়লাম।
কয় কি জল খাবার দিবার কথা তো হয় নাই।
কাকিমা বলল'ঠিক তুমি আজকে খাবারই খাওনি।"
"ননী দেখ তো কি কি আছে ঘরে দে তো ওকে খেতে। "
রেখা ঘরে গিয়ে মুড়ি আর রেখা রাজি মিষ্টি নিয়ে ছিল দুই সেটা দিল।
সতী বলল "এইডা কে?'
কাকিমা বলল "আমার মেজো  ভাসুরের মেয়ে ।'
"কি মিষ্টি মাইয়া ,যেন চান্দ নাইমা আইছে।'
তারপরেই আবার বাংলাদেশের কথা আপন মনে বলছে।
"কি দ্যাশ ছাইরা কি দ্যাশে আইলাম।'
রেখা মনে মনে ভাবে নাড়ির টান এমনই। ও দেশ থেকে ছিন্নমূল অবস্থায় এসেও এ দেশটাকেও নিজের দেশ ভাবতে পারল না।। ও দেশের কথা মনের ক্যানভাসে স্বর্ণাক্ষরে আটকে আছে।
তারপর আপন মনে গান গাইতে থাকলো'আমার হাত বান্ধিবী, পা বান্ধিবী মন বান্ধিবী কেমনে ….. পরান বান্ধিবী কেমনে।'
কাকিমা বলল ছেলেটাকেও হারিয়ে স তী যেন আরো একা হয়ে গেছে।
সতীর দিকে তাকিয়ে রেখা ভাবতে লাগলো সত্যিই তাই শিকড়ের অস্তিত্ব মাটির অনেক গভীরে চলে গেছে তার থেকে উপ ড়ে ফেলা অতো সহজে নয়।।
রেখার ও অস্তিত্ব এই গ্রামের সাথে এই মাটির সাথে এমন ভাবে মিশে গেছে, যার টানে বারবার ফিরে আসে।
কাকিমা বলল ননী, আয় মা ফ্রেশ হয়ে নে।

কবি শেখ রাসেল এর কবিতা "বলি শোন"




বলি শোন 
শেখ রাসেল 

বলি ঐ শোনরে জালিম
              দম্ভ মিছে বক্ষ জুড়ে, 
যদি চায় ফেলবে তোকে
             স্রষ্টা তবে গগণ ফুঁড়ে। 

মুখে যাঁর ঈমান তব
           আল্লাহ নাম শক্তি ভরা,
যাবে কি দমন কথায়
            অগ্নি নামের দগ্ধ খরা।

বলি ঐ শোনরে কাফের 
          ঈমান ভিতে রক্ত তাজা,
দলি তোর কপাল জুড়ে 
       নেশায় গিলা তিক্ত গাঁজা। 

কেন তোর হুঁশ থাকিতে 
             এই ধরাতে রুষ্ঠ বীণা,
চেয়ে দেখ বিশ্ব বাসির
               কন্ঠে তব তিক্ত ঘৃণা। 

বলি ঐ শোনরে বেকুব 
            তুচ্ছ কেন বাক্যে নারী,
তবে তোর জন্ম মিছে
        গর্ভে যেজন ধরছে তারি।

চোখে তোর নগ্ন ধূলায়  
             মূর্তি আঁকা প্রতিচ্ছবি, 
দেখে মন আঁতকে উঠাস
            আল্লাহু নাম দীপ্ত রবী।

কবি মিতা নূর এর কবিতা "মা'গো তোমার হাসিতে জান্নাত




মা'গো তোমার হাসিতে জান্নাত 
 মিতা নূর 



স্বার্থপর এই পৃথিবীতে,
সবাই সবাইকে ছেড়ে চলে যায়, 
সবাই সবাই'কে  যায় ভুলে।
শত আঘাত শত ব্যথা পেয়েও 
শুধু একজনই আঁকড়ে ধরে রাখে 
পাঁজরের পাঁজর করে,দেয়না ছুড়ে ফেলে।

মৃত্যু'কে করে জয় যে দিয়েছে জান।  
সে তো আমার মা, আমার জননী, 
এই ভুবনে মাগো  অসীম তোমার  দান।
যতই দুঃখ আসুন, আসুক  তুফান, 
মা'গো বলে জড়িয়ে ধরলে জুড়ায় আমার প্রাণ।

মা'গো গুটি গুটি হাত ধরে শিখিয়েছ পথ চলতে।
শিখিয়েছ হোটচ খেয়েও উঠে দাঁড়াতে, 
শিখিয়েছো দুঃখ পেলেও হাসি মুখে কথা বলতে।
মা'গো তুমিই আমার বড়ো শিক্ষক, 
শিখিয়েছ আমায় কঠিন জীবন গড়তে। 

মা আমার মা- কতো মধুর ডাক, 
তুমিই আমার সব, অল্প থেকে অনেক। 
মা'গো খোদার পরে  তোমার আসন, 
আসমানের সমান।

মা'গো পাপী আমি,করিও আমায় ক্ষমা।
তুমি আমার মা'জননী, তুমি আমার-মা,
অজান্তে,কতই না দিয়েছি তোমায় আঘাত। 
তোমার কান্নায় মা'গো আরশ উঠে কেঁপে, 
মা'গো- তোমার হাসিতে জান্নাত।




১০/০৪/২০২২--ইং-- রাতঃ--১০ঃ৩৪,

শামীমা আহমেদএর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৮৬






ধারাবাহিক উপন্যাস

শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৮৬)
শামীমা আহমেদ 

শিহাব তার বাইক ছুটিয়ে ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালের দিকে চলছে। উত্তরা থেকে চার চারটি ট্রাফিক সিগন্যাল পেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে তার প্রায় দুপুর সাড়ে বারোটা বেজে গেলো। ব্যস্ত শহরের ব্যস্ততায় চলাচল করা গাড়িগুলোর ট্রাফিক সিগন্যালে বসে থাকা যেন এক ভয়াবহ শাস্তি। ভেতরে উৎকন্ঠা  নিয়ে শিহাব হাসপাতালের গেটে এসে বাইক থামালো।বাইক পার্কিংএর জায়গায়  শিহাবের  জন্য তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে।শিহাব দেখলো,বাবার চোখে মুখে থমথমে ভাব।প্রায় কেঁদে দেয়া অবস্থা। যেন সে তার কোন ভুলের জন্য ছেলের কাছে ক্ষমা চাইছে। শিহাব খুব ভালো করেই জানে, আরাফ এই পরিবারের সবচেয়ে মূল্যবান  সম্পদ।শিহাবের বাবা মা ভাই ভাবী সবাই আরাফকে অতি যত্নে আদর ভালোবাসায় বড় করে তুলছে। দূরে থেকেও শিহাব যেন নিশ্চিন্ত থাকতে পারে সে ব্যাপারে সবার সজাগ দৃষ্টি ছিল।কিন্তু কিভাবে কি হয়ে গেলো!  সবাই যেন অপরাধ বোধে ভুগছে।শিহাব  তার বাবাকে সান্ত্বনা  দিয়ে বাবার হাত ধরে লিফটে তিনতলায় উঠে গেলো।তিনশ চার নম্বর কেবিনে আরাফকে রাখা হয়েছে। কেবিনে ঢুকতেই দেখা গেলো মা ভাবী আরাফের বিছানায় ওর মাথার পাশে বসে আছে।শিহাবকে দেখে মা কেঁদে উঠলেন।ভাবী ভীত হরিণীর মত শিহাবের দিকে তাকালো। তিনি যেন আরাফের দূর্ঘটনার জন্য নিজেকে দায়ী ভাবছে। শিহাব সবাইকে শান্ত করতে স্বাভাবিকভাবে আরাফের কাছে এগিয়ে গেলো।আরাফ গভীর ঘুমে।সম্ভবত ঘুমের ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে। আরাফের কপালের কোনায় ব্যান্ডেজ দিয়ে রাখা।সেখানে তিনটি সেলাই পড়েছে। শিহাবের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবী ডুকরে কেঁদে উঠলেন! কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলেন, আমার জন্যই আজ ছেলেটা ব্যথা পেলো।আমি সকালে মায়ের সাথে দেখা করে নেমে আসছিলাম। ও আমার সাথে আসতে চাইলে আমি বললাম, ঘরের কাজ গুছিয়ে তোমাকে একটু পরে নিয়ে যাবো।কিন্তু ও যে একা একা আমার পিছু পিছু এসেছে তা বুঝতে পারিনি। শিহাব,তুমি আমাকে ক্ষমা করো।তখন যদি আমি ওকে নিয়ে আসতাম তবে এই দূর্ঘটনা হতো না।বলেই সুমাইয়া  আরো আবেগী হয়ে উঠলেন।আরাফের জন্য ভাবীর সবসময়ই  এরকম মাতৃসুলভ  আচরন। শুধু সে আরাফকে নিজে পেটে ধরেনি তবে তার কাছে আরাফ  তার পেটের সন্তানদের চেয়েও বেশী।শিহাবের ভাবী সুমাইয়া যেন এক মায়াবতী নারী।
শিহাব ভাবীকে শান্ত করতে বললো,  না ভাবী এভাবে ভেবোনা। ছোট শিশুদের এমনিভাবে দূর্ঘটনায় রিস্ক সবসময়ই থাকে।তুমি তো ওকে কত যত্নেই আগলে রেখেছো। ঠিক আছে ভাবী, আরাফ এখন ঘুমাচ্ছে, তুমি একটু শান্ত হউ।সব ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তাররা কি বলেছেন? 
এখনো রিপোর্ট পাইনি।আমরা ইমার্জেন্সিতে আসলেই ওরা ওটিতে পাঠিয়ে দেয়।অনেক রক্ত পড়ছিল।আরাফ ভীষণ কাঁদছিল।বাবা বাবা করে ডাকছিল। এরর হঠাৎই সুমাইয়া কড়া গলায় বলতে লাগলেন,শোন শিহাব,ইনশাআল্লাহ এবার আরাফ সুস্থ হয়ে উঠলে হয় তুমি এখানে এসে ওর কাছে থাকবে, নয়তো ওকে তোমার কাছে নিয়ে যাবে।সুমাইয়ার এমন শক্ত কথায় শিহাবের মা বাবা দুজনেই চমকে উঠলেন! আজ পর্যন্ত সুমাইয়া কখনোই আরাফকে নিয়ে বিরক্ত হয়নি অথচ আজ! 
সবার অভিব্যক্তিতে সুমাইয়া বুঝে নিলো, এই সময় এই কথাগুলোর জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু সুমাইয়া ভাবলো, আজ তাকে এই শিশুটির ভবিষ্যতের জন্য কঠোর হতে হবে। বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা ছাড়া একটা  শিশু কখনোই পরিপূর্ণ মায়া মমতায় বড় হতে পারে না। ভাবী শিহাবকে আদেশের সুরে বললেন, আমি কিছু বুঝতে চাইনা শিহাব, তুমি এবার ওর মা এনে দিবে, সে যেই হউক।আমি আর কিছু জানিনা।
সুমাইয়া আসলে কি বলতে চাইছে শিহাব তা ঠিকই বুঝতে পারছে।আর এজন্যই তো সে শায়লাকে আপন করে নিতে এতটা অস্থির হয়ে উঠেছে। কিন্তু ভাগ্য যেন কিছুতেই তার প্রতি সুপ্রসন্ন হচ্ছে না।যতবারই শায়লাকে নিজের করে আনতে চাইছে ততবারই  নিয়তি যেন তার বিপক্ষে যাচ্ছে। শিহাব মায়ের দিকে এগিয়ে গেলো,মাথায় হাত রাখলো।ওদের কথার মাঝে মা অবিরত  কেঁদেই যাচ্ছেন।বাবা বৃদ্ধ মানুষ,সবকিছু একসাথে নিতে পারছেন না।কেমন যেন অগোছালো হয়ে যাচ্ছেন।
শিহাব আরাফের মুখটির দিকে তাকাতেই তার ভেতরটা  দুমড়ে মুচড়ে গেলো।সে ভাবতে লাগলো, বেচারাকে আমরা খেলার ছলে পৃথিবীতে এনে আজ এতটা কষ্টের সাগরে ফেলেছি। শিহাবের চোখের ভাবনায় শায়লা-আরাফ আর নিজেকে নিয়ে একটা কল্পিত সংসারের  ছবি যেন ভেসে উঠলো !  শায়লা তোমাকে যে আজ আমার আরাফের জন্য, আমার জন্য ভীষণ প্রয়োজন। আমি খুব করে জানি তুমি এলেই আমার আরাফের আর কোন কষ্ট থাকবে না। ও দিনে রাতে সারাবেলা  তোমার বুকে নিশ্চিন্তমনে মুখ লুকাবে। তুমি তোমার নিজ হাতে ওকে খাইয়ে দিবে। আরাফকে তুমি বুকের মাঝে আগলে রাখবে। 
কিন্তু এত ভাবনা কি সত্য হবে ? আজ শায়লার জীবন অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। সেকি পারবে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে। 
শিহাব ভাবলো, শায়লার একটা খোঁজ  নিতে হবে।পার্লার থেকে বেরিয়ে নিশ্চয়ই আমাকে খুঁজেছে।আমাকে দেখতে না পেয়ে মনটা ভেঙে গেছে। কিন্তু তারতো কিছুই করার ছিল না। তবে রাহাতকে সে এই শেষ  সময়েও অনেক অনুরোধ করে এসেছে। যদি তারা শায়লাকে ভালো রাখতে চায় তবে শিহাবের কথাগুলো রাহাতের খুব গভীর ভাবে ভাবতে হবে। শিহাব মোবাইলে শায়লার মেসেজ দেখতে পেলো।
আমি আজীবন তোমার অপেক্ষায় থাকবো। আরাফের খবর জানিও।চিন্তায় থাকবো।শায়লার মেসেজে শিহাব ভীষণ আবেগতাড়িত হয়ে গেলো। সে কেবিনের বাইরে চলে এলো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁচের বাইরে নিচে গাড়ি চলাচল দেখতে লাগলো।
শায়লাকে এমন একটা অবস্থায় রেখে এসে তারও ভাল লাগছে না। আজ অফিসেও যাওয়া হবে না। অফিসে কবিরকে সবকিছু জানাতে হবে। আজ অফিসে কিছু পাওনাদার আসার কথা।কিছু বিল তারা আজ বুঝে নিবে। শিহাব  কবিরকে ফোনে জানিয়ে দিলো, তার টেবিলের বাঁ পাশের ড্র‍য়ারে দুটো  ব্ল্যাংক চেক সাইন করা আছে। 
দুটোতে এক এক দুই লাখ টাকার একাউন্ট বসিয়ে যেন সোবহান আর মামুন সাহেবকে দেয়া হয়। শিহাব কখনোই কোন বিল আটকে রাখার পক্ষে নয়। সবকিছু সময়মত দেনা পাওনা  মেটানো ব্যবসার ক্ষেত্রে কমিটমেন্ট রক্ষায় সততার পরিচয় পাওয়া যায়। শিহাব বুঝতে পারছে আজ আর তার অফিসে যাওয়া হবে না।আরাফের সাথে সারাদিন থাকতে হবে। ওর ঘুম ভাঙলে কাছে থাকতে হবে। শিহাব জানেনা ওদিকে শায়লার বাড়িতে কী ঘটে যাচ্ছে। শিহাব শায়লাকে মেসেজের উত্তর জানালো, আরাফ ভালো আছে। কপালে তিনটা সেলাই পড়েছে । এখন ঘুমাচ্ছে । তুমি কেমন আছো শায়লা ? আমি চিন্তায় আছি।

শায়লার বাসায় এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য কয়েকজন মুরুব্বি গোছের মানুষ, সাথে রুহি খালার হাজবেন্ড, রাহাত আর শায়লার সঙ্গী করে বুবলীকে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে। যদিওবা এরই মধ্যে চোখের ভাষায় শায়লা এয়ারপোর্টে না যাওয়ার অনীহা প্রকাশ করেছে তবে তা বাড়ির লোকজনকে  বুঝতে দেয়া যাবে না একেবারে। রুহি খালা  শায়লাদের বাসায় ঘুরঘুর করছে। তার ইচ্ছা শায়লা লাল শাড়ি পরে বউয়ের মত সেজেগুজে যেন নোমান বাবাজিকে আনতে যায়। কিন্তু শায়লা তাতে একেবারেই আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আবার খালি বাসায় শায়লাকে রেখে যেতে রাহাত ভরসা পাচ্ছে না। 
শায়লা রাহাতের ভাবনা বুঝতে পেরে রাহাতের ঘরে এগিয়ে গেলো।ভাই বোন মুখোমুখি হতেই রাহাতের অপরাধবোধ যেন আরো স্পষ্ট হয়ে উঠলো। শায়লা  সেদিকে একেবারেই খেয়াল না দিয়ে নিজের মতামত জানিয়ে দিলো।
তোমরা নতুন অতিথিকে আনতে এয়ারপোর্টে যাচ্ছ যাও, তবে আমি যাবো না।আর এ নিয়ে তুমি ভয় পেয়োনা। আমি পুরোটা সময় মায়ের ঘরে মায়ের পাশে বসে থাকবো। তুমি নিশ্চিন্ত থেকো। আমি একা কোথাও যাবো না। আমি নিশ্চিত শিহাব  আরাফকে সুস্থ করে সে নিজে এসে আমাকে নিয়ে যাবে।
কথাগুলো বলেই শায়লা রাহাতের উত্তরের অপেক্ষা না করে মায়ের ঘরে চলে গেলো। রাহাত বুঝতে পারছে না, আজ বাসায় কী ঘটতে যাচ্ছে। সবকিছুর জন্য সে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না। বুবলী রাহাতের ঘর থেকে শায়লাকে বেরিয়ে যেতে দেখলো। শায়লা আপুকে খুব একটা স্বাভাবিক লাগছে না। ভাইবোনের মাঝে কিছু একটা দ্বন্দ চলছে সেটা বুবলীর বুঝতে আর বাকী রইল না।পার্লারের সামনে ভাইবোনের অমন ইতস্ততভাব বুবলীর মনে প্রশ্ন এনেছে।কিন্তু সে ঠিক বুঝতে পারছে না, এদের কি হয়েছে? বুবলী রাহাতের সামনে এসে দাঁড়ালো। রাহাতের করুন চাহনীতে বুবলী চমকে গেলো! কিন্তু রাহাত মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছে না।
অত্যন্ত বুদ্ধিমান বুবলী রাহাত আর শায়লার মাঝে কি কথা হলো তা জানতে রাহাতকে তার চাহনীতে দূর্বল করে দিলো। রাহাত বুবলীর হাত ধরে বললো, বুবলী আমি খুব সমস্যায় পড়েছি। কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।  কিন্তু কাউকে না কাউকে এর সমাধান করে দিতে হবে। যদিও ওরা আমার কাছেই সমাধান চেয়েছিলো। 
ওরা ? মানে কারা ? রাহাত ভাইয়া ?
এবার রাহাত বুবলীকে সব খুলে বললো। সবকিছু শুনে বুবলী  বললো, রাহাত ভাইয়া তুমি চিরকালই ভীতু রইলে। তাইতো কোনদিন সাহস করে আমার চোখের ভাষাও বুঝনি।আর শায়লা আপুর বিষয় টা এতদূর গড়ানো তোমার ঠিক হয়নি। আগেই নোমান দুলাভাইকে সব জানানো উচিত ছিল। তাহলে সে আর দেশে এসে এই পরিস্থিতে পড়তো  না। 
বুবলী  এখন কি করবো ? শায়লা আপু এয়ারপোর্টে যেতে চাইছে না। রাহাতের আকুল জিজ্ঞাসা। পরক্ষণেই বুবলীর সাহসী উত্তর, চিন্তা করোনা। অপেক্ষা করো। দেখি, কি করা যায়। শায়লা আপুর মনটা তোমার বুঝা উচিত ছিল। এখন যতটা পারা যায়, আপু আর নোমান ভাইয়ার এটাচমেন্ট কম করতে হবে। তবে এখনতো এয়ারপোর্টে তাকে রিসিভ করতে যেতে হবে।
চলো, আমি যাচ্ছি তোমার সাথে সাথে। শায়লা আপুর হয়ে আমি প্রক্সি দিচ্ছি নোমান  ভাইয়াকে। 
নীচে মাইক্রো এসেছে, যারা  এয়ারপোর্টে যাবে তারা প্রস্তুত হয়ে ডাইনিং এ এসে দাঁড়ালো।বিয়ে বাড়ির ছোট ছোট  ছেলেমেয়েদের নতুন জামাই বরণ করার সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।মায়ের ঘরে মায়ের পাশে বসে শায়লা শিহাবের মেসেজের উত্তর দিল, শিহাব,
তুমি আরাফের কাছে থাকো।ওকে সুস্থ করে তবেই আমাকে নিতে আসবে।আমি অপেক্ষায় থাকবো।
চলবে....

কবি শক্তি অধিকারী এর কবিতা "এলোমেলো আজকে ভীষণ তুই"




এলোমেলো আজকে ভীষণ তুই
শক্তি অধিকারী
         
এলোমেলো আজকে ভীষণ তুই...
হয়তো মনে বইছে ঝোড়ো হাওয়া !
পারবি কি তুই ভিরতে খেয়াঘাটে ?
উজানস্রোত কঠিন বড়ো বাওয়া!

মনের কোনে তুফান সেদিন ছিলো..
ঝড় হবে তা, বুঝবো কেমন করে !
আজ যদি সে সর্বনাশী হয়...
পারবি তাকে রাখতে বুকে ধরে ?

ইচ্ছেগুলো ঘুর্ণি হয়ে নয়-
যাক ভেসে আজ মিথ্যে বাঁধন ছিঁড়ে..
তটের পরশ লাগবে তবু গায়-
মিশবি যখন, সাগর ফেলে তীরে...

তাণ্ডবে তার, অতীত হবে সব
পড়বে ছিঁড়ে স্বাধের খোলসখানি...
পিছনফিরে তাকাসনা আর তুই
বইবে চোখে, অশ্রু তোরও জানি!