১৪ এপ্রিল ২০২২

কবি দেবব্রত সরকার এর কবিতা "পয়লা"




পয়লা 
দেবব্রত সরকার


সেদিন তোমায় মনে পড়ে
যেদিন তুমি আসো ঘরে
বাঙালিরাই আপন করে
পয়লা কথা বুকে ধরে
বৈশাখের ওই গন্ধ ছুড়ে
ওঠো তুমি বছর ফুঁড়ে
ভালোবাসার আঁচল ছুঁয়ে
রঙবে রঙের জীবন ধুয়ে

প্রতিদিন পয়লা জীবন
এই খেলা রিপুর বাঁধন

শেষেতে একটু খানি কথা
ভুলে যাও অশ্রু তিক্ত ব্যথা
নতুন কাজের সঙ্গ ধরে
সব ভালো হোক দুঃখ ভুলে ।
          

           

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৯০




ধারাবাহিক উপন্যাস


শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৯০)
শামীমা আহমেদ 

শিহাব  হাসপাতালের নীচ থেকে এসে তিনতলায় আরাফের  কেবিনের সামনের সোফায় বসে রইল।সারাদিনের ছুটোছুটিতে তার ভীষণ ক্লান্ত লাগছে । মনের ভেতর শায়লাকে নিয়ে চলমান অস্বস্তি কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না। সাথে ছোট্ট আরাফের এমন অবস্থায় শিহাব ভীষণ চিন্তিত হয়ে যাচ্ছে। এখন আরাফ ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ঘুমিয়ে আছে কিন্তু যখন জাগবে তখন তাকে শান্ত রাখতে হবে। শিহাবের আরাফকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ভেতরে রুবিনা আছে। শিহাব নিজেকে ভেতরে যাওয়া থেকে নিবৃত্ত করলো। রুবিনা শিহাবকে চাইলেও শিহাবের এতে কিছু করার নেই। যদিও রুবিনার সাথে দেখা হওয়ার অনেক পরে শায়লার পরিচয়।কিন্তু একটু একটু করে শায়লা যেন কিভাবে শিহাবের মনে জায়গা করে নিলো। যদি রুবিনা এভাবে তার মনে জায়গা করে নিতো তবে হয়তো রুবিনাই আজ সবচেয়ে কাছের মানুষ হতো। অবশ্য সেটা সম্ভব নয়।রুবিনাদের আর্থিক অবস্থান অনেক উপরে। রুবিনার বাবা একজন শিল্পপতি। তাদের সাথে মধ্যবিত্ত শিহাবের কোনদিনই মানায় না। যদিও কিছুদিন প্রায়ই রুবিনা শিহাবকে কল করত্য, কথা বলতে চাইতো। কিন্তু শিহাব কখনোই তা গ্রহন করেনি। আজ রুবিনার জীবনে এমনটা ঘটে যাওয়াতে এতটা কাছে আসতে চাইছে। তবে মেয়েটি যে আরাফকে অনেক ভালোবাসে সেটা স্পষ্ট। আরাফকে খুব করে জড়িয়ে ধরে রাখছিল। যদিও তার চোখের ভাষায় শিহাবের থেকে কিছু শুনতে চাইছিল।  দূর্ভাগ্যের স্বীকার মেয়েটি শিহাবকে আপন করে পেতে চাইছে। যদিও তার বসবা ইচ্ছে করলে মধ্যবিত্ত পরিবারের যেকোন ছেলেকে কিনে নিতে পারে।শিহাব সোফায় বসে আছে।হাসপাতালের নার্স আর অন্য কেবিনের মানুষের চলাচলে শিহাবের প্রতি সবারই দৃষ্টি আটকে যাচ্ছিল।শিহাবকে দেখার জন্য  অকারণেই তাদের চলাচল বেড়ে গেছে। শিহাব তা বুঝতে পেরে সানগ্লাস পরে বসে রইল শিহাবের এই এক সমস্যা কোথাও একা স্থির হয়ে থাকা মানেই মানুষের নজরে পড়া।বিশেষ করে মহিলাদের ঘুরাঘুরি বেড়ে যায়। শিহাব চুপচাপ বসে রইল। তবে তা আর সম্ভব না হওয়াতে হাতে মোবাইল  নিয়ে অযথাই নাড়াচাড়া চলছিল। শায়লার খবর জানা হচ্ছে না অনেকক্ষন। শিহাবের ইচ্ছে করছিল শায়লাকে একটা মেসেজ পাঠাতে। কিন্তু শায়লা এখন কি অবস্থায়  আছে।বাড়িতে লোকজন। বিদেশি মেহমান চলে এসেছে।নিশ্চয়ই সবাই খুব দ্রুতই চাইবে শায়লা যেন তার স্বামীর কাছে যায়।তারা দুজনে একান্তে সময় কাটাক।না, শিহাব আর ভাবতে পারছে না। এতটা কাছে এসেও দুজন আজ কতটা দূরত্বে চলে যাচ্ছে। তার জীবনে বারবার কেন এমন হচ্ছে ? কত মেয়েরাই তো তাকে ভালোবাসতে চেয়েছে, কাছে পেতে চেয়েছে সেতো কখনো তাদের চাওয়া নিয়ে মিথ্যে কোন আশ্বাস বা আনন্দ ফূর্তি করে বেড়ায়নি। সে সবসময়ই মেয়েদের সম্মানের চোখে দেখেছে। মোবাইলে হঠাৎ  কল এলো। অফিস এসিস্ট্যান্ট কবিরের ফোন। শিহাব  রিসিভ করতে জানালো সোবহান আর মামুন  সাহেব চেক বুঝে নিয়েছেন।তারা আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাইছেন। শিহাব কবিরকে বললো  সোবহান সাহেবকে ফোন দিতে। সোবহান সাহেব ভীষণ কৃতজ্ঞচিত্তে শিহাব সাহেবকে ধন্যবাদ জানালো। শিহাবের সাথে একসাথে পরবর্তীতে আরো কাজ করবার ইচ্ছা জানালো। শিহাব জানালো, তার কোম্পানির একটা গুড উইল আছে। আমরা লেনদেন এর ব্যাপারে ভীষণ পরিষ্কার। কোন ঘুটচাল আমাদের নেই। মানুষকে ঘুরানো আমাদের প্রিন্সিপাল এ নেই। সোবাহান সাহেব ভীষণভাবে বিনীত হয়ে গেলো শিহাবের প্রতি। শিহাব কথা সংক্ষিপ্ত করে তাদের বিদায় জানালো। শিহাবের কিছুই ভালো লাগছে না। কখন  আরাফ জাগবে। আরাফ তাকে বাবা বলে ডাকবে। কতদিন হলো ছেলেটাকে বুকে জড়িয়ে একটু আদর করা হয় না। ছোট্ট ছেলেটা মায়ের আদর পায়না। শিহাবের মনটা ব্যথায় ভরে উঠলো। শিহাবের ইচ্ছে ছিল  শায়লাকে সে আরাফের মা করে আনবে। শায়লা আরাফকে খুবই আপন করে নিয়েছিল। আজ সবই স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। শিহাবের মন রাহাতের প্রতি অভিমানে ভরে উঠলো। রাহাতের প্রতি সে অনেক ভরসা রেখেছিল।রাহাত তাকে কথা দিয়েছিল শায়লা যেন তার সাথে একসাথে জীবন কাটাতে পারে। কিন্তু রাহাত মাঝপথে এসে নিজেকে বদলে ফেলে। রাহাত এমনটি করবে জানলে সে রাহাতের অপেক্ষায় থাকতো না। শায়লা আর তার চাওয়া তাদের কোনদিন আলাদা করতে পারতো না।কিন্তু রাহাত এখসবে ডাবল গেম খেলেছে।তাকে ভরসা দিয়েও শায়লাকে কানাডা পাঠানোর সব আয়োজনই করেছে। রাহাতের এমন কর্মকান্ডে শিহাবের মনটা একেবারেই ভেঙে গেছে। সে চাইলে শায়লাকে যেকোন সময়ই তার বাসায় নিয়ে যেতে পারতো। তাতে শায়লার কোন আপত্তি থাকতো না। কিন্তু শিহাব চেয়েছিল সম্মাঞ্জনকভাবে শায়লাকে তার কাছে আনা। যেন তাদের পরিবারের কোন অসম্মান না হয়। তবে আজ সকালে শিহাব রাহাতকে স্পষ্ট করেই বলে এসেছে। যদি তারা শায়লার সুখ চায় তবে যেন তাকে কানাডায় যেতে না দেয়। শিহাবের কিছুই আর ভাবতে ইচ্ছে করছে না। নিশ্চয়ই শায়লাকে এতক্ষণে তার স্বামীর সাথে কথা বলতে বাধ্য করা হয়েছে। হঠাৎ নার্স এসে জানতে চাইলো,আপনি কি কেবিন তিনশ চাররের বেবী আরাফের এটেন্ডেট ? শিহাব জানালো হ্যা।আমি আরাফের বাবা।  তাহলে ভেতরে আসুন।আরাফের স্যালাইন এখন শেষ হবে। আর একটু পরেই আরাফের সেন্স ফিরে আসবে। ভেতরে রোগীর কাছে কে আছে ?  ওর মা ? আপনিও ভেতরে আসুন। আরাফ জাগলে তখন মা বাবাকে দেখলে সে শান্ত থাকবে। রুবিনাকে নার্সের আরাফের মা ভাবাতে শিহাব একটু বাধা দিয়ে বলতে চাইলেও সে আবার তা ফিরিয়ে নিলো। নার্সের কাছে সবটা বলার কোন প্রয়োজন  নেই। আর রুবিনা যেভাবে আরাফকে ঘিরে আছে তাতে তাকে যে কেউই আরাফের মা ভাবতে পারে। শিহাব নার্সের সাথে কেবিনের ভেতরে গেলো। নার্স আরাফের স্যালাইনের শেষটুকু পাস হওয়ার অপেক্ষায় কেবিনে দাঁড়িয়ে রইল।মমধ্যবয়সী নার্স টুকটাক প্রশ্ন করে আরাফের কিভাবে দূর্ঘটনা হলো,দূর্ঘটনার পর কি করলেন রুবিনাকে আরাফের মা ভেবে তা জানতে চাইলে শিহাব আর রুবিনা মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো।বাবা হয়েও সে আরাফের কাছে ছিল না আর রুবিনাও কাছে থাকার প্রশ্ন আসে না।দুজনার অভিব্যক্তিকে নার্স একটু দ্বিধায় পড়ে গেলো। সে সরাসরিই জানতে চাইলো, তাহলে শিশুটি কার কাছে থাকে ? তবে কি আপনারা সেপারেশনে আছেন ? মুরুব্বী গোছের মানুষের এই এক সমস্যা। তারা কিছু বলতে শুরু করলে আর থামতে চায় না।তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সব কিছু হিসেব করে। শিহাব আর রুবিনা এত প্রশ্নের মুখে নিরুত্তর রইল। হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ট্রেতে করে  দুইকাপ রঙ চা আর লেক্সাস  বিস্কুটের প্যাকেট রেখে গেলো। শিহাব নার্সের উপস্থিতিতে রুবিনাকে চা অফার করতে পারছে না। নার্স হয়তো  তাদের সম্পর্ক কিছুটা আঁচ করতে পারছে। তারা স্বামী স্ত্রী হলে এতটা নীরব থাকতো না। নিশ্চয়ই কথোপকথন অন্য রকম হতো। নার্স স্যালাইন শেষ করে নিডল খুলে ফেললো।জানিয়ে গেলো, আর দশ পনের মিনিটের মধ্যেই আরাফ জেগে উঠবে। আপনারা ওর কাছে থাকুন। ও জেগে মা বাবাকে কাছে চাইবে। আপনারা শিশুটির কাছ থেকে একেবারেই দূরে থাকবে না।নার্স তার দ্বায়িত্ব সেড়ে সন্দেহজনক মন নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতেই শিহাব রুবিনাকে এক কাপ চা এগিয়ে দিলো। আপনার অনেকক্ষন কিছু খাওয়া হয়নি,প্লিজ বিস্কিট দিয়ে চা খেয়ে নিন। শিহাব বেশ বিনীতভাবেই রুবিনাকে কথাগুলো বললো। শিহাব চায়ের ট্রে এগিয়ে ফিলো।রুবিনা চায়ের কাপ নিয়ে পাশে রাখলো। শিহাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে শিহাবকেও আরেক কাপ চা নিতে বলে বিস্কিটের প্যাকেট খুলে শিহাবকে বিস্কিট নিতে অনুরোধ করলো। শিহাব হাত বাড়িয়ে তা নিয়ে রুবিনকে ধন্যবাদ জানালো। দুজনেই কেবিনে নিঃশব্দে চা খেতে লাগলো। ওরা আরাফের জেগে উঠার অপেক্ষায়। শিহাব ভাবলো,রুবিনা তার সন্তানের জন্য এতটা  করছে তার সাথে অন্তত একটু কথা বলা উচিত। তাছাড়া উনি নাকি প্রায়ই আরাফকে সময় দেয়। শিহাবতো সেটুকুও দিতে পারে না। তাই শিহাব হালকা আলাপচারিতায় রুবিনার কুশলাদি জানতে চাইলো।রুবিনা তাতে ভীষণ আপ্লুত হয়ে গেলো। শিহাবের কথা বলায় রুবিনার মুঝের সেয় দুঃখভাবটা নিমেষেই কেটে গেলো। তার চোখে মুখে বিজলী খেলে গেলো! সে শিহাবকে জানালো, আমি ভালো আছি। যদিও তার ভালো থাকাটা একেবারেই সত্য নয়।
আপনি কেমন আছেন ? আপনিতো  উত্তরায় থাকেন তাইনা ? রুবিনা ইঙ্গিতে কিছু একটা জানতে চাইলো। শিহাব কি একাই উত্তরা থাকে না সাথে অন্য কেউ থাকছে ? 
শিহাব রুবিনার প্রশ্নের খুব সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলো। যেখানে হ্যা বা না কিছুই বুঝালো না।শিহাব বললো, এইতো আছি আরকি।শিহাব প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো , আপনিতো অনেকক্ষন হয় এখানে এসেছেন নিশ্চয়ই বাসার সবাই আপনাকে খোঁজ করবে।
রুবিনা খুবই বিষন্ন মুখ করে বললো, বাসায় অতি আপন বলে কেউ নেই যে আমার খোঁজ করবে। আমি আরাফের সাথেই আছি সেটা ওরা জানে। রুবিনার এমন উত্তরে  শিহাবের খুবই মায়া হলো। শিহাব খেয়াল করলো, রুবিনা গোলাপী রঙের একটা শাড়ি পরেছে।যার আভা তার চোখেমুখে ছড়িয়ে গেছে।
দরজার নক করার শব্দে শিহাব উঠতেই নার্স রুমে ঢুকলো। আরাফ একটু একটু করে চোখ খুলছে। শিহাব দ্রুত আরাফের বেডের কাছে এলো। রুবিনা আরাফের দিকে আরো ঝুঁকে গেলো।যেন আরাফ চোখ মেলেই তাকে দেখতে পায়। আরাফ সম্পূর্ণ চোখ মেলে শিহাবকে দেখতে পেয়েই আব্বু বলে ডেকে উঠলো। শিহাব আরাফের হাত ধরে কপালে চুমু খেলো।  রুবিনা আরাফের হাত তার গালে বুলাতে লাগলো।আরাফ এবার রুবিনার দিকে তাকিয়েই বললো, রুবি আন্টি,তুমি কখন এসেছোভ ? আমি তোমার সাথে খেলা করবো। আরাফ শিহাবের দিকে তাকিয়ে বললো, আম্মু কোথায় আম্মু,দাদু, আরুশ ভাইয়া,,সবাই কোথায় ? নার্স ওদের পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল। তার সন্দেহের মেঘ কিছুটা কাটলেও আরাফের প্রকৃত মা কে তা বুঝতে চাইছে।আরাফ তার চাচী সুমাইয়াকে মা বলে ডাকছে তাকে দ্রখতে চাইছে। শিহাব আরাফের পাশে বসে ওর মাথা নিজের বুকের কাছে টেনে নিলো।
আরাফ বলে উঠলো, বাবা আমি সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি।মা আমাকে বাসায় নিয়ে যায়নি। আমি তাই পড়ে গেলাম। আরাফ তার দূর্ঘটনার আগের সবকিছু মনে করতে পারছে দেখে নার্স নিশ্চিন্ত হলো। আর সে বুঝে গেলো কেবিনে থাকা দুজন নারী পুরুষ আসলে স্বামী স্ত্রী নয়। যেন বিরাট একটা কিছু জয় করে ফেলেছে এমন আনন্দে সে বেরিয়ে গেলো।আরাফ শুধু বলেই যাচ্ছে মা কোথায় ? মা কোথায় ? 
শিহাব বাসায় খবরটি জানানোর জন্য তার মাকে কল করলো। এরপর সুমাইয়াকে কল করে আরাফ তার
মাকে অর্থাৎ  সুমাইয়াকে দেখতে চাইছে জানাতেই,ওপ্রান্ত থেকে সুমাইয়া জানালো, কেন রুবিনা ওখানে আছে না ? তুমি আরাফকে বলে দাও, এখন থেকেই এই আন্টিই তোমার মা।
ভাবীর এমন দুষ্টুমি শিহাব সহজভাবে নিতে পারলো না।কিন্তু যেহেতু সে ভাবী, দেবরের সাথে একটু ফান সে করতেই পারে। শিহাব কিছুক্ষণ নীরব থেকে কল এন্ড করলো। সে মুখ ঘুরাতেই দেখলো, রুবিনা তার দিকে তাকিয়ে আছে। শিহাব আরাফের দিকে মনযোগী হয়ে তার সাথে কথা চালিয়ে গেলো।
চলবে...

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৫৩




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৫৩
অনুভবে কাছাকাছি
মমতা রায় চৌধুরী

২৯.৩.২২ রাত্রি ২২.৩৯

মনোজ রেখাকে নিয়ে দ্রুত গাড়ি ছুটিয়ে চলেছে কখনো ভালো ,কখনো খারাপ রাস্তা দিয়ে। গাড়ি ছুটছে তো ছুটছেই। মনোজ বললো, 'তুমি ভালো করে আমাকে ধরে থেকো ,আমি কিন্তু স্পিডে গাড়ি চালাব।'
রেখা ভাবলো' আজ কি সুন্দর দুজনে একসঙ্গে এটা অনুভব করতেই একটা আলাদা শিহরণ জেগে যাচ্ছে সমস্ত শরীরে।'
এক সময় গাড়ি ব্যস্ত রাস্তায় এসে পড়ে রাস্তার গাড়ি চলাচলের আওয়াজ, গাড়ির হর্ন লোকজনের কোলাহল সবের মধ্যে এসে পড়ে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে আকাশে চাপ চাপ কালো মেঘ দেখে যেন মনে হচ্ছে , সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। মনোজ  বলল 'বৃষ্টি হবে কিনা কে জানে?'
রেখা বলল 'তাই তো এখনো তো পৌঁছাতে সময় লাগবে।'
"আমি টানার চেষ্টা করছি।'
'না না তাই বলে অত দ্রুত গাড়ি না চালানোই ভালো।,'
মনোজ বলল" রায়দার হোটেলে 'দাঁড়াবো?
রেখা বলল' কেন?'
'চা টা, স্ন্যাক্স  খেয়ে নাও।'
'তা মন্দ হয় না ।চায়ের নেশা চেপেছে।'কিন্তু..?
মনোজ বললো' আবার কিন্তু কিসের?'
রেখা বলল 'বাড়ি পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে।'
'চা খেতে আর কত সময় লাগবে ? চলো তো।'
'ঠিক আছে চলো।'
মনোজ বলল 'চা না খেয়ে কফি খাই'
রেখা সম্মতি জানালো।
মনোজ কফি অর্ডার করল সঙ্গে পনির পকোড়া আর স্যাকা পাপড় ।
রেখা চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল'রায়দার হোটেলে চা টা কিন্তু দারুন।'
মনোজ হেসে বলল' দারুন তাই না? আর তুমি বলছিলে থাক খেতে হবে না।'
'হ্যাঁ বলেছি , দেখো পনির পকোড়াটাও কি ভালো বানিয়েছে গো?'
'রাত্রি-এর জন্য কিছু নিয়ে যাব কি?'
'কি নেবে বল তো?'
'কালকে তো আবার রিম্পাদিদের ওখানে যেতে হবে। সংবর্ধনা আছে?'
'তাহলে তুমি কালকে স্কুলে যেতে পারছ না?'
'কি করি বলতো?'
'না, না ছুটি নিয়ে নাও। উনারা আয়োজন করেছেন এটা তো তোমার একটা সম্মান প্রাপ্তি না?'
'আমিও সেটাই ভাবছি।'
'ওই জন্যই বলছি খাবারটা নিয়ে যাই ।ফ্রিজে রেখে দেবে। কালকে ওটাই গরম করে খেয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে। আর এত রাত্তিরে ফিরে তোমার আর কালকে সকালে উঠে রান্না করার সেই ধৈর্য থাকবে?'
' তা অবশ্য ঠিকই বলেছ? এমনিতেও খুব টায়ার্ড লাগছে।'
'মিলিদের রান্নাটা মাসিকে বললেই করে নেবে।'
'একদমই তাই। কিন্তু কি নেবে বলো তো?'
'ঠিক আছে তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও আমি যা ভালো বুঝছি সেটা নিচ্ছি।'
'ঠিক আছে তাহলে ওদের অর্ডারটা দিয়ে দিই বুঝেছ ?লেট করলে হবে না এদিকে আকাশের অবস্থা ভালো নয়।'
'ওয়েটার।'
'বলুন স্যার।'
'বলছি আমাদের একটা প্যাকিং লাগবে।'
'অর্ডারটা দিন।'
রেখা বলল 'পনিরের কিছু আইটেম নাও না। 'পনিরটা ভালো লাগলো আমার। 
'ঠিক আছে। ও ভাই পনির রেজালা হবে?'
'হ্যাঁ হবে।'
'পনির রেজালা প্যাক হবে আর তন্দুরি চিকেন।'
'যথারীতি টাকা পেমেন্ট করে মনোজ রেখাকে বাইকে চাপিয়ে স্টাট দিল ।দ্রুত গতিতে ছুটলো বাইক।
মনোজ গান ধরল'আমারো পরানো যাহা চায় তুমি তাই তুমি তাই গো….।'
রেখা অনুভব করছে কতদিন পর মনোজ আবার আগের মুডে ফিরে এসেছে এক সঙ্গে কতদিন এইভাবে কাছাকাছি বসে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে যাওয়া হয়নি। মাঝে যে সময়গুলো কেটেছে অনেকটা তিক্ততা, সম্পর্কের অবনতি আর আজ যেন অনেকটাই সেখানে স্বস্তির নিঃশ্বাস 
ফেলছে । এ যেন সত্যিই মাঝে মাঝে স্বামী-স্ত্রীর একটু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করা উচিত।
রেখা ভাবতে থাকে মাঝে মাঝে কেন এরকম হয় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কে জানে ?অথচ রেখা নিজের দোষটাই খুঁজে পায় না ।মাঝে মাঝে আত্মসমালোচনা করেছে নিজেকে নিয়ে কি করলে ভালো হয় কিন্তু খুঁজে পায় নি কিছু।
এসব ভাবতে ভাবতেই'গাড়ি এবার নিজের চেনা ডেরায় পৌঁছে গেল।
গাড়ি গেটের কাছে থামতেই  চির পরিচিত অরোকেরিয়া গাছ আনন্দে অভিবাদন জানা'লো তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল পুরো ব্যাটেলিয়ান ।লেজ নেড়ে নেড়ে রেখা আর মনোজকে তারাও অভিবাদন জানালো। শুধু তাই নয়। সঙ্গে তারা ভালোবাসার বার্তাটা ছড়িয়ে দিচ্ছিল সারা শরীরে।
কিছুটা অভিমান ও  কাজ করেছে তাদের কিন্তু সেই অভিমান বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি তাদের চির পরিচিত মালিক মালকিন কে দেখে।
ওদের চেঁচানোর আওয়াজ শুনে মাসি গেট খুলে বাইরে আসলো। রেখা তখনও ওদেরকে আদর করে যাচ্ছে। মাসি দরজাটা খুলেই এই দৃশ্য দেখে বললো 'ওই জন্যেই এত আওয়াজ করছে। এতক্ষণে বুঝলুম।'
'তোমরা এসে গেছো বৌমা?'
'ওদের খেতে দিয়েছে মাসি?'
'হ্যাঁ দিয়েছি গো।'
'তাহলে কি আমি চলে যাব?'
'তুমি চলে যাবে? যদি মনে হয় থাকতে পারো, অসুবিধে নেই মাসি।'
'না গো বউটা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে একা থাকবে 
তো ,চলেই যাই।'
'কিন্তু মাসি কালকেও কিন্তু তোমাকে একটু থাকতে হবে?'
'কালকে আবার কি আছে?'
'খারাপ লাগছে তোমায় বারবার বলতে ।বাড়ি ছেড়ে তোমাকে এসে থাকতে হচ্ছে।'
'আরে আমাকে তুমি এরকম ভাবো বৌমা ।আমার অসুবিধে থাকলে তো আমি বলে দেবই যে আমি আজকে পারব না ।কি করব একটু যদি কারোর উপকার হয়।'
'কালকে আমার একটা সংবর্ধনার অনুষ্ঠান আছে ওখানে যেতে হবে । আজকেই খবরটা পেলাম।'
'ঠিক আছে তাই হবে।'
'তবে তুমি চলে যাবার আগে তুমি খাবার বানিয়েছো তো তাহলে নিয়ে যাও খাবার।'
'ঠিক আছে।'
রেখা একগাল হেসে মাসিকে বিদায় জানাল।
রেখা মাসি কে বলল 'কালকে এসে কিন্তু মিলিদের খাবার বানাবে তুমি। আর নিজের খাবারটাও।'
'মাসি মাথা নেড়ে চলে গেল।'
এবার মনোজ কলাপ সিপ ল  গেট লাগিয়ে
 দিল ।দরজা বন্ধ করল । তারপর হাত পা ছড়িয়ে সোফায় বসলো ', আজ অনেকটা জার্নি হল গো।'
'হ্যাঁ তোমার খুব কষ্ট হল।'
', তা ঠিক। তবে ভালোও লেগেছে।'
কথাটা বলেই রেখার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো মুচকি মুচকি হেসে।।
রেখা বলল তুমি হাসছো কেন এরকম?
এমনি?
'তুমি এমনি হাসার মানুষ, পাগল তো নও?'
'আজ আমরা দুজনে অনুভবে কাছাকাছি, পাশাপাশি ,মনে মনে টানাটানি।'
'আচ্ছা নাও উঠো ,ফ্রেশ হয়ে নাও ।তারপর খাবার  খেয়ে একেবারে ঘুম দেব।:
'তুমি আগে ফ্রেশ হও।'
'হ্যাঁ আমি আগে যাচ্ছি তোমাকে বলে গেলাম। তোমার তো আবার বসে বসেও ঘুম হয়।'
রেখা কথাগুলো বলে দিয়েই বাথরুমে চলে গেল।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে  রেখা বলতে লাগলো 'তোমার জন্য দুটো রুটি করব, না তিনটে,?'
কোন উত্তর না পেয়ে আবার প্রশ্ন করে
'কি গো কথা বলছো না?'
সাড়া না পেয়ে রেখা কাছে এসে দেখে মনোজ 
ভোস ভোস করে নাক ডাকছে।

রেখা কাছে এসে বলল 'এই তো তোমার ঘুম?'
মনোজ বললো কোথায় ঘুমিয়েছি,। ।তুমি শুধু আমাকে ঘুমোতেই দেখো।'
'বেশ তুমি ঘুমোচ্ছ না ।এবার তুমি ফ্রেশ হও গিয়ে খাবার দেবো।'
মনোজ আরমোরা কেটে বললো 'হ্যাঁ যাই।'
রেখা এর মধ্যে দুটো রুটি করে ফেলল।
তারপর ফয়েলের প্যাকেট খুলতে যাবে তখন মনোজকে বলল 'এখন কি খাবে ?পনির খাবে ,না চিকেন খাবে?'
মনোজ বাথরুমে গান ধরেছে' সখি ভাবনা কাহারে বলে সখি যাতনা কাহারে বলে, তোমরা যে বলো দিবস রজনী..।'
রেখা তখন দরজার কাছে গিয়ে নক করে বলল "কি গো শুনতে পাচ্ছ?'
মনোজ বললো 'কি?'
"আজ চিকেন খাবে ,না পনির?'
মনোজ বললো 'পনির ,পনির।'
"নাও তাড়াতাড়ি বের হও আর গান করতে হবে না'।
রেখার কথাটা শেষ না হতেই মনোজ দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ল।'
মনোজ  বলল'তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো? যাও গিয়ে তাড়াতাড়ি খাবারটা বার করো.।'
'হ্যাঁ যাই।'
মনোজের খাবারটা দিয়ে রেখা খেতে বসতে যাবে এমন সময় ফোন বেজে উঠলো।
রেখা বলল 'দেখলে একটু শান্তিতে বসার উপায় নেই।'
মনোজ বললো ' যাও আগে ফোনটা ধরে নাও না হলে বেজেই যাবে।'
 'ঠিক বলেছ।'
রেখা ফোনটা রিসিভ করে বলল' হ্যালো।'
'বলছি ম্যাডাম। বসন্তের সংখ্যাতে আপনার কবিতা বেরিয়েছে।খুব  সাড়া পাচ্ছি।'
রেখা বলল'অসংখ্য ধন্যবাদ।'
"আর বলছি ম্যাডাম আজকের লেখাটা কি পাবো?"
"চেষ্টা করছি?"
"Ok ম্যাম।'
রেখা এটা জানতো যে আজকেও লেখা পাঠাতে হবে  তাই গতকালকেই লেখাটা লিখে রেখেছে।
ফোনটা রেখে রেখা খেতে বসতে যাচ্ছে ঠিক তখনই আবার ফোনের আর্ত না দ।
মনোজ বলল' এত রাত্রে আবার কে ফোন করলো দেখো'।
রেখা ফোনটা রিসিভ করে বলল 'হ্যালো'।
হ্যাঁ রে ফিরেছিস?'
'ও রিম্পাদি হ্যাঁ ফিরেছি।'
'অনেক রাত হলো বেশি কথা বলবো না কালকে কিন্তু আসছিস? আর শোন আমার এখানে খাওয়া দাওয়া করবি?'
'আবার কেন তোমার ওখানে ঝামেলা করবো বলো তো,?'
'ঝামেলা কিসের রে ?আমি যা বললাম সেটা শুনবি। ঠিক আছে রাখছি।'
মনোজ বললো 'ভালই তো হলো।'
রেখা বলল' ভালো তো হলোই।' কিন্তু ওদিকে কাকিমা কাকুকে তো খবর দেয়া হলো না একবার ফোন করবে?'
'এত রাত্রে?'
'হোক রাত নাহলে চিন্তা করবে করে দাও।'
'ওকে।'
ঘরে ঢুকে রেখা মোটামুটি কালকে কি বলবে একটা খসড়া লিখে ফেলল।'
মনোজ লেখার উপর চকিতে শেষবারের মতো একটা সন্ধানী দৃষ্টি বুলিয়ে নেয়। যেন মনে হলো ইর্ষুক নজর কেড়েছে আজ রেখার সৌভাগ্যফলক।

কবি রুকসানা রহমান এর কবিতা "অন্ধকারে বয়ে যাওয়া এক রাত"




অন্ধকারে বয়ে যাওয়া এক রাত

রুকসানা রহমান

আমি হঠাৎ একটি নির্মল সকালে ঘুৃৃম থেকে উঠে
জড়িয়ে,ছিলাম,সূর্যের বাহুবন্ধনে।
দখিনা বাতাস কে বলেছিলাম তুমি বয়ে যাও
সূর্য,যেখানে দিনের শরীরে পড়িয়ে গিয়েছে
লাল শাড়ি।
কেন তবে দূরত্বের ভিতর তুমি গুটিয়ে যাও?
আমার কল্পনার ভিতর,নিশ্বাসের ভিতর,জীবন
রূপের ভিতর মিশে যেয়ে।
 একই আত্মার মাঝে, আমি ছিন্ন গোলাপের রূপান্তরের ভিতর দাঁড়িয়ে আছি মৃত জগতে
কান্নার সাগরে শেষ রজনীতে।
একদিন যেখানে প্রতিদিন সূর্য অন্তরঙ্গ হয়ে উঠতো
আলোর ঠিকনায়, 
সেখানে কেবলই অরণ্য আঁধারে ভালোবাসার সিঁড়ি
 ছুঁড়ে দেওয়া হলে ছায়াপথে হাঁটা যায়
 বিবর্ণ মৌনতায়। 
কিন্ত স্মৃতিচিহ্নের আদিত্য মাঠে মগ্নতা দাউ দাউ
করে জ্বলছে 
সেখানেই নিঃশ্বেস হয়ে যায় মাটির দেহ
জীবন্ত মৃত্যুর ভিতর এক অন্য রকম মৃত্যুর মাঝে
আলিঙ্গনের নিষ্প্রাণ তরী
সেখানেই ভেসে যাচ্ছি নাবিকবিহীন। 
 তুমি কেবলই আজ স্মৃতির অন্ধকারে বয়ে যাওয়া একরাত। 

১৫/০৩/২০২২

কবি সেলিম সেখ এর কবিতা "বর্ষবরণ"




বর্ষবরণ
সেলিম সেখ

বরণডালা সাজিয়ে হাতে
করব বর্ষবরণ,
মনের মাঝে জেগেছে
কিসের যেন শিহরন।

নতুন বর্ষের আগমন
হোক সকলের ভালো,
অশান্তি দূর করে
কাটুক মনের কালো।

বছর শেষে নতুন বছর
আসে বারবার,
শুরু হয় নতুন খাতা
দোকানে ফুলের সমাহার।

নতুন বছর কাটুক সবার
মন যেমনটি চাই,
নাচে গানে মন মাতিয়ে
সুখের গীত গাই।

কবি মিতা নূর এর কবিতা "শোনাবো"





শেনাবো 
মিতা নূর



পুরোটা লেখা শেষ হোক
তারপর না হয় কোন একদিন
আবৃত্তি  করে শোনাবো,
কোন এক থেমে যাওয়া  বৃদ্ধ বিকেলে,
চায়ের কাপে তোমার সাথে
মাতামাতি হবে খুব,
বাড়াবাড়ি হবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে।
পুরোটা লেখা শেষ হোক
তারপর না হয়!  তার পর না-হয় কোন একদিন, 
আবৃত্তির ছলে বিরক্ত করব
নিঃশ্বাসে মারা পড়তে চাইব শতাব্দী
জুড়ে,
আমাদের দেখে দেয়ালে ঝুলানো
ময়না টিয়ারও
ইচ্ছে হবে খুনসুটিতে  মেতে উঠতে, 
চাহনী বিনিময়ের অপরাধে জেল
হবে এক হাজার বছর।
পুরোটা লেখা শেষ হোক
তারপর না হয় কোন একদিন
আবৃত্তির  ছলে প্রেমে পড়ব,
পরিব্রাজক হয়ে বেরিয়ে পড়ব
খুজতে শতকোটি কবিতার উপাদান,
সব হবে,
ঘাটে ঘাটে একদান।।
হাতে হাত রেখে কাউকে না
জানিয়ে বেরিয়ে পড়ব,
রাত বিরাতে মাইকিং হবে, ভূমি  কাঁপিয়ে।  
আমাদের খুজতে আসবে ওদের
কয়েকটা ঘরছাড়া শহর,
আমরা আশ্রয় চাইব,
আমাদের আশ্রয় দেবে প্রবীণ ঘুমঘোর।।
নিয়ন বাতিগুলো এক মিনিট নীরবতা
পালন করবে,
তন্বীদের বাসার দারোয়ানটাও
নিস্তেজ হয়ে পড়বে,
সব কিছু হয়ে যাবে সুনশান,
আমরা চাইব,
আমরা চাইবো দু'জনের পৃথিবী
আর পিচপথের রোমান্টিক অবদান।।
পুরোটা লেখা শেষ হোক
তারপর না হয় কোন একদিন,
কোনো একদিন  তোমাদের দেয়াল টোপকে
আবৃত্তি করে শোনাব,
কেউ জানবে না,
এই আবৃত্তি, এই প্রণয়োপখ্যান।।





১৩/০৪/২০২২--ইং--বিকেলঃ--০৫ঃ০৫,

কবি এস.এ. তালুকদার এর কবিতা "বিষাদ ভাবনা"




বিষাদ ভাবনা
এস.এ. তালুকদার 

মায়ার বাঁধনে বাঁধিয়া নিজেরে
বেদনা এনেছো টানি
আপন হৃদয়ে বিষের জ্বালা
কপোলে চোখের পানি। 

কার অনুভবের অনন্ত ক্লান্তি 
হৃদয়ে ধারণ করে
বিষাদ ভাবনায় ভেসে চলেছো
দিবস রজনী ধরে। 

কেনো অনুকম্পার সুরা ঢালো
সাধ্য কি তোমার বলো
শুকিয়ে দিতে পারো কি তুমি
আঁখি যার ছলোছলো। 

শুকনো কিছু শান্তনার বাণী 
কি লাভ হবে তায় 
যার জীবনের সোনালী প্রহর
বিফলে বয়ে যায়। 

মিথ্যে  শান্তনা  দিওনা আর
মিছেমিছি বারেবারে 
অষ্ট প্রহরের কষ্টের জ্বালা
ভুলিতে দাওহে তারে।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৮৯




ধারাবাহিক উপন্যাস 


শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৮৯)
শামীমা আহমেদ 


শায়লাদের বাসার অতিথিরা রাহাতের এয়ারপোর্ট থেকে  ফিরে আসার অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে আছে । শায়লা মায়ের পাশে একেবারে নীরব  হয়ে বসে আছে । চারদিকে সকলের সব আয়োজন  যেন হঠাৎ করে থমকে গেলো ! রাহাত ও বুবলী ঘরে ঢোকা মাত্রই সবাই তাদের ছেঁকে ধরলো। সবাই প্রকৃত  অবস্থাটা  রাহাতের মুখ থেকে জানতে চাচ্ছে। একের পর এক প্রশ্নে রাহাত জর্জরিত হলো।যার সারমর্মে একটা কথাই দাঁড়ায়।জামাইকি অন্য কোনদিন আসবে না একেবারে আসবেই না ? সবার প্রশ্নের মুখে রাহাত একেবারে নিরুত্তর হয়ে রইল।
শায়লা আপুকে সে কিভাবে মুখ দেখাবে এই ভেবে ভেতরে ভেতরে সে কুঁকড়ে যাচ্ছে। শায়লার মনে চাওয়ার বিরুদ্ধে এতদিন রাহাত সব করছিলো। 
 রাহাত সবাইকে শান্ত করতে ড্রইং রুমে গিয়ে বসলো।রাহাতের পাশে বুবলীও বসলো। মুরব্বিরা রাহাতকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এলো। কেমন করে কি হলো সবাই তা জানতে চাইছে।রাহাত সবাইকে বিনীতভাবে সব উত্তর দিচ্ছে। সবাই কোন আশার কথা শুনতে চাইছে।আজ না হয় অন্য কোন দিন অন্য কোন তারিখে আসার সম্ভাবনা আছে কিনা ? রাহাত তেমন কিছুই বলতে পারলো না। এরপর সবাই এই বিয়ের উদ্যোক্তা রুহি খালাকে খোঁজাখুঁজি করতে লাগলো।   কানাডায় ফোন করে  রুহি খালা যেন নোমান সাহেবের সাথে কথা বলে সব জেনে নেয়,কেউ কেউ  তেমন পরামর্শ দিচ্ছে। এর মাঝে  কেউ একজন বলে উঠলো, রুহি খালা বেশ কয়েকবার কানাডায় ফোন করেছে কিন্তু নোমান সাহেব কল রিসিভ করেননি। এমন কথায় আত্মীয়স্বজনেরা আর কোন আশাই দেখতে পেলো না।সবাই  চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। রাহাত কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। এত বিশাল আয়োজন নিমেষেই মিথ্যে হয়ে গেলো ! এমন লজ্জা আর অপমান নিয়ে আত্মীয়দের কাছে তার ছোট হতে হলো। রাহাতের মোবাইলে একে একে নানানদিক থেকে ফোন আসতে লাগলো।ডেকোরেটরের লোক,ছাদে স্টেজ সাজানো, বাসর ঘর সাজানো, রাতে বেলা সারাবাড়ি লাইটিং করা। যদিও বাড়ির মেইন গেট  জামাইয়ের প্রবেশের জন্য গতকালই সাজানো হয়েছে। আশেপাশে প্রতিবেশী, পথচারীরা জেনে গেছে আজ এই বাড়িতে একটা বিয়ের আয়োজন আছে। সকলেই উৎসুক হয়ে বাড়ির ভেতরে তাকিয়েছে । কিন্তু এমন হৃদয়বিদারক ঘটনায় সবই অর্থহীন হয়ে গেলো। গত কয়েকদিনে নোমান সাহেবের সাথে রাহাতের কয়েকবার কথা হয়েছে। সবসময়ই তিনি দেশে আসার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে। ফ্লাইট নম্বর,সময়, সব জানিয়েছে। কিন্তু আজ কেন এলোনা রাহাতের কাছে তা স্পষ্ট নয়। এমন সাজানো বিয়ের গেট দিয়ে এখন আত্মীয়স্বজনেতা বেরিয়ে গেলে পাড়ার লোকজন হাসাহাসি করবে। চিরকাল মানুষ আঙুল তুলে বলবে, এই বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেছে। জামাই বিদেশে থেকে আসেনি। মেয়েটাকে ধোঁকা দিয়েছে । উফ! রাহাত আর কিছু ভাবতে পারছে না। পরক্ষণেই রাহাত ভাবলো, না,এ হতে দেয়া যাবে না।আর এতে মা ভীষণ আহত হবেন।এত বড় শোক মা সইতে পারবে না। এমনিতেই আপু আর শিহাব ভাইয়াকে নিয়ে নানান ঝামেলা সয়েছে।এখন এই বয়সে এত বড় ধাক্কা মা নিতে পারবে না। রাহাত ভাবলো,এখন শায়লা আপুই একমাত্র ভরসা যদি সে সবকিছুকে সহজভাবে নিতে পারে। তাহলে আত্মীয়স্বজনকে এখন যেতে দেয়া যাবে না। রাহাত মনের ভেতরে আশার দীপ জ্বালিয়ে রাখলো। যদিই হঠাৎ করে নোমান সাহেব আসার কোন তারিখ জানায় ! সে ভাবলো, আর চারপাশের মানুষকে সব কিছু স্বাভাবিক বুঝাতে বাড়িতে বিয়ের সকল প্রস্তুতি চালু রাখবে। আত্মীয়দের এভাবে খালিমুখে যেতে দেয়া যাবে না। রাহাত বাড়ি লাইটিং,রান্নার ডেকোরেটর, ছাদের স্টেজ সাজানো, শায়লার ফুলের গহনা, বাসর ঘর সাজানোর জন্য সব লোকদের কল করে তারা যেন এসে কাজ শুরু করে তা জানিয়ে দিলেন।অতিথিরা রাহাতের কর্মকান্ডে বেশ অবাক হলো ! রাহাত সবার উদ্দেশ্য জানিয়ে দিলেন কেউ বিয়ে বাড়ি থেকে খালিমুখে যাবেন না। বিয়ের রান্না হবে,বাড়ি লাইটিং হবে, স্টেজ হবে, আপনারা সবাই থাকুন।কেউ যাবেন না। 
রাহাতের এমন সিদ্ধান্তে বুবলী ভীষণ অবাক হয়ে গেলো ! সে রাহাতের কথাগুলোকে পাগলের প্রলাপ ধরে নিলো। সবকিছু শুনে বুবলীর হঠাৎ শায়লার কথা মনে পড়তেই সে দ্রুত শায়লার কাছে গেলো।শায়লা মায়ের পাশে বসে জানালায় উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বুবলী শায়লার খুব কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই শায়লা তার দিকে তাকালো। বুবলী ভীষণ চমকে গেলো ! শায়লার চোখ দুটো জলে ভরে ছলছল করছে।মূহুর্তেই শায়লা বুবলীর বুকে মুখ লুকিয়ে ডুঁকরে কেঁদে উঠলো।বুবলী বুঝতে পারছে না এ কান্না কি নোমান ভাইয়া না আসাতে অপমানে নাকি শিহাব ভাইয়াকে না পাওয়ার বেদনাতে। বুবলী শায়লাকে কি বলে সান্ত্বনা দিবে। বুবলীর সব রাগ গিয়ে পড়ছে রাহাতের উপর।অল্প থাকতেই এই সমস্যাটার সমাধান করা উচিত ছিল। দুইটি অতৃপ্ত হৃদয় দুই দিকে কেঁদে যাচ্ছে আরেকদিকে একজন অচেনা মানুষের কাছে শায়লা আপু অপমানিত হচ্ছে। বুবলী ভাবছে, শায়লা আপু যদি আগে থেকে তাকে কিছু জানাতো তবে সে রাহাতকে এ ব্যাপারে চাপ দিয়ে আদায় করে নিতো। তবে কি এখন সে শিহাব ভাইয়ার সাথে কথা বলবে ? 
বুবলী শায়লাকে কথাটা বলতেই শায়লা তাতে অসম্মতি প্রকাশ করলো। আজ নোমান সাহেব আসেনি বলে তোমরা  শিহাবের খোঁজ করছো ? কিন্তু কেন ? শিহাবের কী কোন আত্মসম্মান নেই।তোমরা নোমান সাহেবের এমন আচরণের বদলে শিহাবকে ভাবছো? ছিঃ বুবলী কেমন করে এ কথা আমি শিহাবকে জানাবো ? সারাজীবন এই কথা আমার শুনতে হবে। আমি তো শুধুই ভালোবেসে শিহাবকে পেতে চেয়েছি,কারো আসবার বা না আসবার  বদলে নয়। বুবলী শায়লার কথার সবটাই বুঝতে পারলো আর শিহাবের প্রতি শায়লার ভালোবাসার গভীরতাটা টের পেলো। বিছানায় শুয়ে মা শায়লা আর বুবলীর সব কথাই শুনলো।নির্বাক মায়ের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। কেন বারবার আমার এই মেয়েটা কেবল কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে ? যেন বিধাতার কাছে  মায়ের নিঃশব্দে জানতে চাওয়া। 
শায়লা তার নিয়তির  বারবার এই খেলায় আজ নালিশ জানাতেও ভুলে গেছে।সেতো নোমান সাহেবের স্ত্রী হয়েই তার সামনে যেতে চেয়েছিল যদিও তার মন পুরোটায় শিহাবের কাছে সঁপে দেয়া ছিল। হয়তো নোমান সাহেবের কাছে সে সব খুলে বলতো।
বুবলী ও শায়লাকে ভীষণ অবাক করে দিয়ে শায়লার মোবাইল বেজে উঠলো !  দুজনেরই চোখ গেলো মোবাইল স্ক্রিনে।  অত্যাশ্চর্য একটা কিছু ঘটে গেছে এমন অভিব্যক্তিতে দুজন ভাষা হারিয়ে ফেললো। শায়লার মোবাইল স্ক্রিনে ইংরেজিতে ভেসে উঠেছে মিঃ নোমান এর নাম!  বুবলী শায়লাকে কলটি ধরার জন্য তাড়া দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু শায়লা তাতে অনীহা দেখাচ্ছে। বুবলী তাকে বারবার বুঝাতে চাচ্ছে কলটা ধরা জরুরি। নিশ্চয়ই উনি কিছু বলতে চাইছেন। শায়লা কলটি ধরে, হ্যালো বলেই তা জোরপূর্বক বুবলীর হাতে গুঁজে দিলো। শায়লার একেবারেই কথা বলার ইচ্ছে নেই যেন ! ওপ্রান্তে নোমান সাহেব শায়লা শায়লা করেই যাচ্ছে। শায়লার কন্ঠে হ্যালো শুনে আশ্বস্ত হলেও মোবাইল এখন বুবলীর কানে লেগে আছে। নোমান সাহেব ওপ্রান্তে শায়লার কাছে শুধু সরি সরি বলে যাচ্ছে। শায়লা তোমাকে আমার অনেককিছু বলার আছে। আমি কেন আসিনি তা তোমাকে জানাতে চাই।যদিও রুহি চাচী আমায় অনেক কল দিয়েছেন তবুও আমি কল ধরিনি, তাকে কিছু বলিনি।আমি তোমাকে সব কিছু খুলে বলতে চাই, শায়লা।
এ প্রান্তে বুবলী একেবারে চুপ।করে নোমান সাহেবের সব কথা শুনে যাচ্ছে। যা কানাডায় বসে নোমান সাহেব একেবারেই বুঝতে পারছে না। 
শায়লা তোমাকে আমার সব কথা বলা হয়নি। এটা অবশ্য আমারই দোষ। আমি বলিনি তুমিও কিছু জানতে চাওনি আমার সম্পর্কে। বরাবরই তুমি আমার সম্পর্কে উদাসীন ছিলে। কেন এমন ছিলে তা আমি  বুঝতে পারিনি।
শায়লা আজ কি আমি তোমাকে আমার সবকিছু জানাতে পারি ? যদিও আমি দেশে না আসাতে তোমরা আমার প্রতি ভীষণ রেগে আছো। বাট আই এম আনডান। প্লিজ ফরগিভ মি।
গতকাল সকালে সাডেনলি আমার দুই বাচ্চার মা আমার এক্স ওয়াইফ পামেলা তার সন্তানদের কাছে ফিরে এসেছে। তার ভুলের জন্য অনেক কান্না করেছে। আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। তার বয় ফ্রেন্ড তার সাথে চিট করেছে । সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে ।সে আমার কাছে আবার ফিরে এসেছে । শায়লা তুমি বিলিভ করবে না বাচ্চাদুটো ওদের মাকে ফিরে পেয়ে কতটা আনন্দিত! ওরা ওদের মাকে এক ঘন্টা শুধু চুমুই দিয়েছে।মাকে আঁকড়ে ধরেছে।পামেলাও অঝোর ধারায় কেঁদেছে।মা সন্তানের এই বন্ধনতো আমি ভাঙতে পারি না। ওরা আবার মায়ের বুক ফিরে পাক এটাই আমার চাওয়া।যদিও এতে তোমাকে অনেক কষ্ট দেয়া হয়। কিন্তু সন্তান পিতামাতাহারা হলে কতটা কষ্টে তাদের জীবন কাটায় তা আমি জানি। তুমি আমার সবটা জানো না।আমি সেই তিন বছর বয়সে বাবা মাকে হারিয়েছি।এরপর তোমার রুহি খালার হাজবেন্ড আমার দূর সম্পর্কের চাচা তার কাছে কিছু দিন থাকি।এরপর একটি এনজিওর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এক দম্পতি আমাকে দত্তক নেয়। বুবলী সব শুনছে আর সে অবিরল ধারায় কেঁদেই যাচ্ছে।ওপ্রান্তে নোমান সাহেব বলেই যাচ্ছেন।
আমার খুব ইচ্ছে ছিল এবার তোমার কাছে এসে নিজের সবটা খুলে জানাবো। তোমরা বাঙালি মেয়েরা স্বামী সন্তান সংসারের জন্য নিজেদের জীবনে সব কিছু ছাড়তে পারো। তোমার মাঝে সেই রূপটি আমি দেখেছি কিন্তু আজ যখন পামেলা তার সন্তানদের কাছে ফিরে এলো আমি দেখলাম সব মায়েদের একই রূপ। শায়লা তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমি বাঙালি লাইফ স্টাইল নিজের মাঝে নিতে পারিনি। অনেক ছোট বেলায় এই দেশের সাথে বিচ্ছেদ ঘটে। তবে তোমাকে দেখে আমার খুব ইচ্ছে ছিল তোমার সবটা জানবো।আমার সন্তানদের মা  নীল নয়না আর গোল্ডের কার্লি হেয়ারের পামেলা একজন আমেরিকান মেয়ে। ও কাজের জন্য কানাডায় আসে। খুব অল্প দিনের পরিচয়ে আমরা বিয়ে করি। আমি তার নীল চোখের প্রেমে পড়ে যাই, তাকে খুব ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু ওরা তোমাদের বাঙালি মেয়েদের মত নয়। ওরা একজনের সাথে প্রয়োজন  ফুরালে আরেকজন নতুন বয় ফ্রেন্ডের সাথে চলে যায়। কিন্তু আজ যখন সে ফিরে এসেছে আমি নিশ্চিত সে আর কোনদিন আমায় ফেলে যাবে না। শায়লা তুমি আমায় ক্ষমা করো। আমি তোমার জীবনের অনেক সুন্দর সময়কে নষ্ট করেছি।
আজ আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম। তোমার উপর আমার সব অধিকার তুলে নিলাম। সুন্দর মনের কাউকে পেলে তাকে বিয়ে করে নিও।নিশ্চয়ই সেও তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসবে।
বুবলী নীরব শ্রোতা হয়ে সবকিছু শুনছিল। ওপ্রান্ত থেকে কল কেটে যাওয়ায় বুবলী মোবাইল নামিয়ে রাখলো। নোমান সাহেবের শেষ কথাগুলোতে বুবলী ভীষণ আবেগতাড়িত হয়ে গেলো। তবে পরক্ষণেই তার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক খেলে গেলো ! শায়লা কিছুই বুঝতে পারছে না নোমান সাহেব কী এমন বললো যে বুবলী খুশিতে ডগমগ হয়ে রাহাতের কাছে ছুটলো ! 
রাহাত ভাইয়া এক্ষুনি শিহাব ভাইয়ার সাথে শায়লা আপুর বিয়ের ব্যবস্থা করো। নোমান সাহেব আর দেশে আসবেন না।
রাহাত সবকিছু শুনে  কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে রইল। বুবলীর কাছে সবটা শুনে সে একে একে ডেকোরেটর,লাইটিং, স্টেজ সাজানো  আর বাসর ঘর সাজানোর লোকজনকে কল করতে লাগলো! আনন্দ উচ্ছাসে রাহাত হতবিহ্বল হয়ে গেলো!


চলবে....