একান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক। তার নিত্যদিনের আসা যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "।
টানাপোড়েন (৪১)
শুভেচ্ছা বার্তা
শিখার আজকের সকালটা অনেক সুন্দর। সোনালী রোদ্দুরে আভা তার চোখে-মুখে লেগেছে ।
শিখা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে সকালবেলার রক্তিম সূর্যালোকের প্রথম আলোটুকুর পুরো আস্বাদ নেবে বলেই হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় ।জানলার কাছে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে, সূর্যদেবকে দেখে মানুষের জীবন শুরু হয় ,অন্ধকার দূরীভূত হয় । তার আলোকের স্পর্শে জীবন হয় আলোকিত । হঠাৎই ভাবনার ব্যাঘাত ঘটে ফোন বেজে ওঠায় ।একটু ঘাবড়ে যায় ।কে ফোন করবে তাকে? ফোন করার মতো কেউ নেই ।
তবে কি বিএড কলেজের সৌমিলি ফোন করলো ?ধরি তো ফোনটা ।ধরতে গিয়ে কেটে যায় ।আবার ফোনটা বেজে ওঠে।
শিখা বলল' হ্যালো'।
অপরপ্রান্ত থেকে বলল 'কেমন আছো?'
কথাটায় একটু হকচকিয়ে যায় শিখা ।
তারপর বলে 'কে বলছেন বলুন তো?'
কল্যাণ বলে 'বাবা এর মধ্যে ভুলে গেলে তোমার নেট সেটের বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছে ?ওই জন্য ফোনটা করলাম।'
শিখা বললো ' ও আপনি? কেমন আছেন ?'
কল্যাণ বলল 'প্রথমে তো আমি জিজ্ঞেস করলাম। তার উত্তরটা পাইনি।'
শিখা বলল ' হ্যাঁ মোটামুটি আছি।'
কল্যাণ বলল 'মোটামুটি কেন?'
শিখা বলল 'আগে আপনি বলুন ?কেমন আছেন?'
কল্যাণ বলল 'আমিও মোটামুটি ছিলাম ।তবে এখন ভালো আছি.।'
শিখা বলল 'হঠাৎই ভালো হয়ে গেলেন।'
কল্যাণ বলল ' তার কারণ অবশ্য আছে।'
শিখা বলল 'কারণটা কি বলা যাবে?'
কল্যান বললো 'বলা যেতেই পারে, যদি সেই জায়গাটা তৈরি হয়।'
শিখা বললো 'ঠিক আছে ,।থাক বাবা।
অ্যাপ্লিকেশনটার লাস্ট ডেট কবে?'
কল্যান বলল ' হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিচ্ছি। দেখে নিও কেমন,?"
শিখা বলল ,'হ্যাঁ 'সেটাই ভালো হবে।'
আরেকটা তোমাকে পাঠাবো একটা কবিতা আমার খুব ভালো লেগেছে । আধুনিককালের আনকোরা কবি বা লেখিকা বলতে পারো ?তবে ভালো লিখছেন উনি ।তাই তোমাকে আমি বলছি ওই লেখাটা পড়বে?তাহলে পাঠাবো?'
শিখা বললো 'নিশ্চয়ই আপনি পাঠাবেন?'
কল্যাণ বলল ' ঠিক আছে তাহলে রাখছি আজকে। আর আমি ওটার টেক্সট করে দিচ্ছি তোমাকে।
এক্ষুনি আমাকে পড়ে জানাবে কিন্তু?'
শিখা বলল' ইয়েস স্যার।'
কল্যাণ বলল 'ঠিক আছে রাখছি ।ভালো থেকো।'
শিখা বলল ' আপনিও?'
ফোন কেটে শিখা মাধু বৌদির বাবার বাড়ির কথাগুলো সব মনে করার চেষ্টা করছে। কল্যাণের সঙ্গে প্রথম দেখা ।তারপর কি কি ঘটনা ?সমস্ত কিছুর স্মৃতিচারণ করছে ।
এমন সময় দেখছে পর পর মেসেজ ঢুকে যাচ্ছে। শিখা ফোনটাকে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপটা চেক করে দেখে একটা কবিতা ঢুকেছে আর নেট সেট এর বিজ্ঞপ্তির মেসেজটা।
শিখা মনোযোগের সঙ্গে পড়ল কবিতাটি।
সত্যি দারুন লিখছেন তো ?তবে কবির নামে দেখা যাচ্ছে ।নামটা তো চেনা চেনা লাগছে।এই নামে তো অনেকেই থাকে । ঠিক আছে বৌদিভাইকে ডেকে দেখানো যেতে পারে ।
পড়তে পড়তেই শিখা উচ্ছ্বসিতভাবে বলল ' বৌদিভাই,বৌদিভাই ,বৌদি..।'
মাধু খুন্তি হাতে বলল ' কি হয়েছে রে, এত ডাকছিস কেন?'
শিখা ফোনেটার মেসেজ গিয়ে দেখিয়ে বলল 'বৌদিভাই, দেখো কি সুন্দর একটা কবিতা ?'
আরও বলল 'আচ্ছা এখানে না যিনি লিখেছেন তার নাম রেখা ।তুমি একটু কথা বলবে দাদার বন্ধু মনোজের সঙ্গে?''
মাধু বলল ' কেন রে কি হয়েছে?'
শিখা বলল- 'আসলে কবির নাম হচ্ছে রেখা। এখন সেই রেখাবৌদি কিনা সেই জন্য?'
মাধু বলল ' ওয়েট কর।দাদাকে দিচ্ছি ।'
বলতে বলতেই 'হ্যাঁ গো ,এটা দেখো তো আমাদের রেখার কবিতা কিনা?'
সুরঞ্জন বলল 'রেখা কলেজ লাইফে লিখত শুনেছি ।ইদানিং লিখছে কিনা জানা নেই ।ঠিক আছে ।খোঁজ নিয়ে বলছি।'
হঠাৎই ফোন বেজে ওঠে মনোজের।
মনোজ তখন বাথরুমে।
রেখা বলল 'কি গো ,তোমার ফোন বেজে যাচ্ছে?'
মনোজ বলল 'ফোনটা ধরো?'
রেখা বললো 'তোমার ফোন আমি ধরবো?'
মনোজ বাথরুম থেকে জলের কলটা বন্ধ করতে করতে বলল 'আরে বাবা,ধরো না। তুমি ধরবে না তো কে ধরবে?'
রেখা একটু কিন্তু কিন্তু করে বললো 'না ।মানে...।'
আবার ফোন বেজে উঠলো।
রেখা ফোনটা রিসিভ করে বলল ' হ্যালো'।
ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলল ' হ্যালো। মনোজ আছে?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ আছে ।ও তো বাথরুমে ।কে বলছেন?'
সুরঞ্জন বললো 'আরে, রেখা তো?'
রেখা অবাক হয়ে বলল 'হ্যাঁ বলছি।'
সুরঞ্জন বলল 'আমি বলছি।'
রেখা বলল 'ও সুরঞ্জনদা ভালো আছেন?'
সুরঞ্জন বলল ' হ্যাঁ ,ভালো আছি ।তোমরা কেমন আছো?ও কোথায় গেল সাতসকালে?'
রেখা বলল ' দাদা, অফিসে যাবে বলে তো বাথরুমে ঢুকেছে।'
সুরঞ্জন বলল,'ঠিক আছে তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি।'
রেখা একটু অবাক হয়ে বলল ' কি কথা দাদা?'
সুরঞ্জন বলল- 'তোমার কবিতা কি পত্রিকায় বেরিয়েছে?'
রেখা চুপ করে আছে।
সুরঞ্জন বলল 'বলো না? একটু দরকার আছে।'
রেখা বলল 'এখনো আমার দেখার সৌভাগ্য হয় নি দাদা ।তবে একজন আমাকে বললেন সেজন্য নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।'
সুরঞ্জন বলল 'তোমার কবিতার নাম কি?'
রেখা বলল 'প্রতীক্ষা'।
সুরঞ্জন উৎসাহিত হয়ে বলল 'তাহলে
ওটাই তোমার কবিতা? একটু ওয়েট করো তোমাকে টেক্সট করে দিচ্ছি ।তোমার ফোন নম্বরটা বল তো?'
রেখা বলল '****0475
সুরঞ্জন ব্যগ্রভাবে বলল 'ঠিক আছে ।ফোনটা রাখছি তুমি দেখে নাও।'
রেখা বলল 'ঠিক আছে দাদা । পড়ে আপনাকে জানাবো।'
সুরঞ্জন বলল 'অ্যাডভান্স তোমাকে কনগ্রাচুলেশন্স জানালাম।'
রেখা বললো 'থ্যাংক ইউ দাদা।'
মনোজ বাথরুম থেকে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে এসে বলল ' কে ফোন করেছিল গো?'
রেখা বলল 'সুরঞ্জনদা'।
মনোজ বললো 'কিছু মেসেজ রাখলো আমার জন্য?'
রেখা বলল ' আমার জন্য।'
মনোজ অবাক হয়ে গিয়ে বলল 'সে কি রেখা?
আমার জন্য নয় ।তোমার জন্য । তাহলে আমার ফোনে ফোন করেছিল কেন হাঁদাটা?'
রেখা বলল আসলে আমার ফোন নম্বরটা বোধ হয়
ছিল না দাদার কাছে?'
মনোজ ভেজা গামছাটা খুলে তড়িঘড়ি করে ফোন করল-'হ্যালো।'
সুরঞ্জন বলল'' বল?'
মনোজ বললো কি ব্যাপার রে আজকাল আমার ফোনে ফোন করছিস অথচ আমার খোঁজ খবর না নিয়ে ,আমার বউয়ের খোঁজ নিচ্ছিস ঘটা করে?'
সুরঞ্জন বলল 'একটা গুড নিউজ আছে?'
মনোজ বলল "কি?'
সুরঞ্জন বলল 'আগে কনফার্ম হয়ে নি।তারপর তোকে জানাবো।'
মনোজ বলল "'ঠিক আছে।'
এদিকে রেখা whatsapp-এ পাঠানো কবিতাটা পড়ে অবাক হয়ে যায়। তারপর টেক্সট করে সুরঞ্জনদাকে।'
সুরঞ্জন মেসেজটা খুলে দেখে। রেখা পাঠিয়েছে
। হ্যাঁ , ওটা আমারই।'
রেখা আনন্দে অভিভূত হয়ে রিম্পাদিকে সুরঞ্জনদার পাঠানো মেসেজটা ফরওয়ার্ড করে।
রিম্পাদি সঙ্গে সঙ্গে মেসেজটা দেখে রেখাকে ফোন করে।' হ্যালো'।
রেখা বলল ' 'হ্যাঁ, রিম্পদি তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।'
রিম্পাদি বলল "যাক ।অবশেষে তোর লেখা প্রকাশিত হলো। আমি ভীষণ ভীষণ খুশি হয়েছি রে।'
রেখা বলল 'তুমি জানতে?'
রিম্পা দি বলল 'বেরোবে জানতাম। কিন্তু কবে জানতাম না।'
রেখা বললো 'তাহলে বুঝলে কি করে?'
রিম্পাদি বলল ' তুই এত খুশি খুশি মনে আমাকে ফোন করেছিস। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছিস আর আমি বুঝবো না।
তোর লেখা এভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে চলুক ।অনেক শুভকামনা থাকলো।'
এবার মনোজ বললো 'কি ব্যাপার গো ?আজ এত তোমার ফোন আসছে।'
রেখা বলল 'এই মেসেজটা পড়ো।'
মনোজ অধীর আগ্রহের সঙ্গে মেসেজটা পড়ল। এবং বলল ' রেখা কনগ্রাচুলেশন্স।'
রেখা বলল ,'থ্যাঙ্ক ইউ।'
ইতিমধ্যেই স্কুলের বিভিন্ন কলিগ রেখাকে শুভেচ্ছাবার্তা জানাতে শুরু করেছে।
মনোজ বলল 'আজ আর অফিসে যাব না।'
রেখা অবাক হয়ে বলল 'কেন?'
মনোজ গান গেয়ে উঠলো 'আমার সারাটা দিন। মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি ।তোমাকে দিলাম। শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছ থেকে চেয়ে নিলাম।'বলেই রেখাকে দুই বাহু বন্ধনে জড়াল।
রেখা অবাক হয়ে বলল 'হঠাৎ এত রোমান্টিক কাব্য প্রেমিক হয়ে উঠলে যে?'
মনোজ আবার গান গেয়ে ওঠে 'হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি। বাতাসের বাঁশিতে কান পেতে থাকি। তাকেই কাছে ডেকে মনের আঙিনা থেকে বৃষ্টি তোমাকে তবু ফিরিয়ে দিলাম।'
রেখা মুগ্ধ হয়ে শোনে মনোজের গান। মনোজের কন্ঠ বরাবরই ভাল। কেন যে গানটা রেগুলার মাফিক করে না, কে জানে?'(রেখা মনে মনে ভাবল)।
রেখা বলল " কিন্তু আমি তো স্কুলে যাব?'
মনোজ জিজ্ঞাসু নেত্রে চেয়ে বলল 'এরপরেও তুমি স্কুলে যাবে?'
রেখা বলল 'না, তোমার পানে চেয়ে চেয়ে দিন কাটাবো।'
মনোজ খুশিতে রেখাকে জড়িয়ে ধরল। আর বলল এভাবেই যেন আমরা সারাটা জীবন একসঙ্গে কাটাতে পারি।
অন্যদিকে শিখা বৌদির কাছ থেকে রেখা বৌদির লেখার খবরটা জানতে পেরেই, কল্যানকে মেসেজ করল -'যে সত্যিই কবিতাটি খুব অসাধারণ হয়েছে ।আর যিনি লিখেছেন সর্ম্পকে তিনি তার বৌদিভাই হন।'
কল্যান মেসেজটা পড়ে বলল 'তাই বুঝি ?উনাকে দেখার আগ্রহ থাকলো আর সঙ্গে অনেক কবিতা শোনার..?'
শিখা বলল 'অবশ্যই ।আপনি যে একজজন গুনগ্রাহী পাঠক ।সে কথাটা তো বৌদিভাইকে জানাতেই হবে।'
কল্যান বলল ,'উনি কি হাউস ওয়াইফ?'
শিখা বলল 'না ।তার সঙ্গে তিনি একজন স্কুল টিচার'।
কল্যান বলল-আমার শুভেচ্ছাবার্তা ওনাকে জানিও।'
রেখা বলল 'কেন আপনি জানিয়ে দিন?'
কল্যান বলল 'না ।আমার কাছে তো কোন ফোন নম্বর নেই ,আর তাছাড়া..?'
শিখা বলল 'ফোন নম্বরটা আমি দিয়ে দিচ্ছি।'
কল্যান বলল' দিলে মন্দ হয় না?'
শিখা চুপ করে থাকায় কল্যান গান গেয়ে উঠলো 'তুমি কি এমনি করে থাকবে দূরে?.. রয়েছিএকা একা ।কবে যে পাব দেখা?'
হেসে বলল তাহলে শুভেচ্ছাবার্তাটা পাঠিয়ে দিও কেমন?'