১১ ডিসেম্বর ২০২১

সজল কুমার মাইতি




অ্যানির গান

মূল রচয়িতা - জন ডেনভার
অনুবাদক - সজল কুমার মাইতি



তুমি আমার সব ভাবনা পূরণ কর
গহীন অরন্যে এক রাতের মতো 
বসন্তের পর্বতরাজির মতো 
বৃষ্টিতে হেঁটে চলার মতো 
মরুভূমির মরুঝড়ের মতো 
নিদ্রাতুর নীল সাগরের মতো 
তুমি আমার সব ভাবনা পূরণ কর
এসো আবার আমায় পূর্ণতা দাও।

এসো তোমায় ভালবাসতে দাও
আমার জীবন তুমি নাও
তোমার হাসিতে আমায় হারিয়ে যেতে দাও
তোমার বাহু বন্ধনে আমায় মরতে দাও
তোমার পাশে শুয়ে থাকতে দাও
তোমার সঙ্গে সর্বক্ষন থাকতে দাও
এসো তোমায় ভালবাসতে দাও
এসো আবার আমায় ভালবাসা দাও।

তুমি আমার সব ভাবনা পূরণ কর
গহীন অরন্যে এক রাতের মতো
বসন্তের পর্বতরাজির মতো
বৃষ্টিতে হেঁটে চলার মতো
মরুভূমির মরুঝড়ের মতো 
নিদ্রাতুর নীল সাগরের মতো 
তুমি আমার সব ভাবনা পূরণ কর
এসো আবার আমায় পূর্নতা দাও।

[ জন ডেনভার একজন আমেরিকার লোক রক সংগীত রচয়িতা ও গায়ক। তার লেখা ও গাওয়া ' অ্যানিজ সংস' বিখ্যাত অ্যালবাম।]

এ. আই. অলিউদ্দীন 





পথের ছায়ায় মনের মায়ায়



তোমার জন্য ভোর পেরিয়ে দুপুর-বিকাল রাত
তোমার জন্যই রাতের পরেই ফোটে প্রভাত।
তোমার জন্যই পাখি আসে মধ্যরাতে ঘরে
তোমার জন্যই বেঁচে আছি এত্ত বাদল-ঝড়ে।
তোমার জন্য পাখির সাথে লুকোচুরি খেলি।
তোমার জন্য কুড়ায় আনি টগর-গোলাপ-বেলি।
তোমার জন্য কাটে নাতো অপেক্ষার প্রহর
তোমার জন্য মন-কোনে গড়েছি একশহর।
তোমার জন্য সাঁজের বেলায় ঘরে জ্বালাই বাতি
আসবে বলে আসবে ঘরে হবে আমার সাথী।
তোমার জন্য রবির সাথে ঝগড়া করি দিনে
চাঁদও বলে তোমায় নাকি আনতে হবে কিনে।
তোমার জন্য মৃদু হাসি একলা বসে বেশ
ভাবি আমি, ভাবছো তুমি করে এলোকেশ।
তোমার জন্য বুঝেও আমি হয়েছি অবুঝ
তোমার জন্য তরুলতা হয়েছে সবুজ।
তোমার জন্য স্বপন বুনি নব আলোক বেলার
তোমার আশায় পথচেয়ে করছিও দিবস পার।
তোমার কথা দূর-নীলিমের চিল উড়ে যায় বলে
তোমার সাথে আমার নাকি বেশ চলে, বেশ চলে।
তোমার জন্য পথের ছায়ায় জাগে মনের মায়া
তুমি আমার সবচে আপন একলা এক জায়া।

সেলিম সেখ





সোনার ফসল
     

ওই দেখো ক্ষেতের ফসল
হয়েছে সোনালী আজ,
এই দেখে চাষিরা সব
করছে সকলে কাজ।

হয়েছে ক্ষেতে অনেক ফসল
ভরেছে চাষির মন,
তাইতো আজ ডাকে ভূস্বামী
ওরে চাষি শোন। 

গোলা ভর্তি ফসল নিয়ে
গাই যে সুখের গান, 
চাষি ভাইয়ের গানের তালে
ভরে সকলের প্রাণ। 

মাঠের ফসল গুটিয়ে নিয়ে
চলে যে চাষি মনের সুখে, 
চাষিদের ওই সোনার ফসল
ওঠে যে সকলের মুখে। 

মাঠভরা গম আর
গোলাভরা ধান, 
এরই সঙ্গে জুড়ে আছে
সোনার বাংলার মান।

বাংলার এই সোনার ফসলের 
রয়েছে নাম বিশ্ব জুড়ে, 
ওই দেখে বাংলার শত্রুদের
মুখ য়ে আজ পুড়ে।

মমতা রায় চৌধুরী৬৬





 টানাপোড়েন ৬৬
অসময়ের বাদলে

মমতা রায় চৌধুরী




                           ঘন মেঘ বলে ঋ /দিন বড়ো বিশ্রী। যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে টানা তিন দিন তাতে মানুষ  হাঁপিয়ে উঠেছে ।তাই রবি ঠাকুর এর লাইন রেখার মনে পড়ে গেল । বৃষ্টিতে বাড়িতে থাকতে বেশী ভালো লাগছে। জানলার কাছে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির জল হাতে নিয়ে গান ধরেছে' আজ ঝরো ঝরো মুখর বাদল ও দিনে'
শীতের হিমেল হাওয়া অসময়ে বৃষ্টি তবু সে বাদল দিনের গান মনে পড়ে যায় রেখা র। মনোজ অগোচরে রেখার পাশে দাঁড়িয়ে রেখাকে দুই হাত দিয়ে আলিঙ্গন করে এবং বলে' নীল নবঘনে, আষাঢ়গগনে ,তিল ঠাঁই আর নাহি রে ।ওগো, আজ তোরা যাস নে, ঘরের বাহিরে।'রেখা হেসে উঠলো আর বলল এমন রাবীন্দ্রিক হয়ে উঠলে যে বড়ো।
মনোজ বলল 'বাহ রে, আমার বউ রবীন্দ্র সংগীত গাইছে, আর আমি একটু...
রেখা বলল তা বেশ ভালো লাগলো।
এমন সময় রেখার ফোন বেজে উঠলো
রেখা রিংটোন টা একটু চেঞ্জ করেছে
তাই মনোজ প্রথমে বুঝতে পারে নি, কার ফোন বাজছে?
আবার রেখার ফোন বেজে উঠল' এমনও বরষা ছিল সেদিন, শিয়রে প্রদীপ ছিল মলিন...'।
মনোজ বলল 'কার ফোন বাজছে?'
রেখা বলল' আমার ফোন?'
মনোজ বলল রিংটোন চেঞ্জ কবে করলে?
রেখা বলল আজ কি করলাম এই বৃষ্টি দেখে।
মনোজ বলল' দুবার কিন্তু মিস কল হল ।যাও কারো জরুরিও হতে পারে, দেখো কে করল?।'
রেখে একটু বিরক্তি ৮ বলল ধুত ভাল লাগে
 না ছাই।"
মনোজ এক প্রকার ঠেলেই পাঠালো।
রেখা ফোনটা গিয়ে দেখে বড়দির  মিসকল হয়ে আছে। রেখা বারান্দায় বেরিয়ে এসে মনোজকে বলল 'স্কুল থেকে ফোন এসেছিল। বড়দি করেছিল।'
মনোজ বললো বললাম 'না দেখো কোন ইম্পরট্যান্ট কল হতে পারে?'
রেখা বললো বড়দি কেন ফোন করল স্কুলে যেতে বলবে নাকি? 
মনোজ বলল'আহা,ফোনটা করেই দেখ না।'
রেখা মাথা নেড়ে বলল' হ্যাঁ করছি।"
রেখা ফোন করল বড়দির ফোন বাজলো 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে'।
রেখা বেশ গানটা শুনছিল মনোযোগ দিয়ে ।হঠাৎ গুরু গম্ভীর গলায় 'হ্যালো'।
রেখা বলল 'ও বড়দি আমি রেখা বলছি ।আপনি ফোন করেছিলেন?'
বড়দি বললেন 'হ্যাঁ ,তুমি ব্যস্ত ছিলে নাকি ?ফোনটা বেজে গেল।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ দিদি।'
বড়দি বললেন 'রেখা আজকে তোমাকে একটু স্কুলে আসতে হবে।'
রেখা অবাক হয়ে বলল' আজ?'
বড়দি বললেন 'কেন তোমার অসুবিধা আছে? তোমার হাজব্যান্ড তো ঠিক হয়ে গেছে।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ, তা ঠিক হয়েছে ।কিন্তু এখনও  উইক ।নিজে নিজে কিছু করতে পারবে না দিদি।'
বড়দি বললেন 'আমি তোমাকে অনুরোধ করবো শুধু আজকের দিনটা স্কুলে আসলে খুব ভালো হতো ।একেতে বৃষ্টি, তারমধ্যে মিড ডে মিল এর কাজ বুঝতেই পারছ?'
রেখা বলল' হ্যাঁ, সে তো বুঝতে পারছি কিন্তু আমি স্কুলে গেলে বাকিদের কোন সমস্যা হবে না তো?'
বড়দি বললেন 'তুমি ওটা নিয়ে ভেবো না।  তুমি টেস্ট করিয়েছো তো?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ দিদি ।আমি টেস্ট করিয়েছি?,'
বড়দি বললেন' রিপোর্ট নিশ্চয়ই নেগেটিভ এসেছে?'
রেখা হেসে বলল' হ্যাঁ দিদি।'
বড়দি বললেন 'এই জন্যই তোমার কাছে অনুরোধ রাখছি । তুমি ভরসার পাত্রী। ম্যাক্সিমাম টিচার অফ গ্রুপে জানিয়েছে। তারমধ্যে অনিন্দিতার তো বিয়ে।'
রেখা বলল 'সব ই  বুঝতে পারছি কিন্তু দিদি আমি ক'টার ট্রেন ধরবো ?ওই ট্রেনটা তো পাবো না।'
বড়দি বললেন 'অত চিন্তা করো না । অসময়ের বাদল দিনে ,কোন অসুবিধা হবে না, এস।
রেখা বললো 'তাহলে আমি একটু গুছিয়ে নিই ।তারপরের ট্রেনে যাব তাহলে।'
বড়দি বললেন 'ঠিক আছে, তাই করো। এট লিস্ট স্কুলেতে এসে তো পৌঁছাও।'
রেখা বললো 'ঠিক আছে, দিদি।'
বড়দি বললেন 'ঠিক আছে ,রাখছি ফোন।'
রেখা ফোন ছেড়ে হন্তদন্ত হয়ে রান্নাঘরের দিকে ছুটল রান্নাঘরের গ্যাসের চুল্লিতে মিলি আর ওর বাচ্চাদের খাবার বসিয়ে দিয়ে স্নান করতে ঢুকে গেল।
মনোজ পেছন থেকে বলেই গেল কি ব্যাপার হঠাৎ এত তাড়াহুড়ো করে কাজ করছ?'
রেখা বাথরুমে জলের কলটা ছাড়ল, জলের শব্দ শুরু হয়েছে সো সো করে, বলল'স্কুলে যাব।'
মনোজ বলল 'এখন ট্রেনটা তো পাবে না?'
রেখা বলল' আমি জানি বড়দি পরের টায় যেতে বললেন।'
মানুষের মনটা খারাপ হয়ে গেল ।রেখা থাকবে না বলে। অসুস্থতা  থেকে রেখাকে ছাড়া এক পাও চলতে পারে না। মনোজের এই করুন অবস্থা রেখার অগোচরে থাকলো ।রেখা কিছুই দেখতে পেল না ।দেখলে হয়তো অনেক কিছুই হত।
মনোজ গিয়ে বারান্দাটায় বসলো। তখনো অঝোরে বৃষ্টি ঝরে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে, রেখা এই বৃষ্টি মাথায় করে স্কুলে যাবে ?আবার আসবে বৃষ্টিতে ভিজে ওর আবার শরীর খারাপ না হয়ে যায়? কোথায় ভাব নেন অসময়ের বাদলের দুজনে পাশাপাশি থাকবো, চোখে চোখ রেখে আসমুদ্রহিমাচল দেখব।'
এরইমধ্যে বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজ হলো ক্রাক করে ।রেখা বেরিয়ে একবার রান্নাঘরের দিকে উঁকি মারলো গ্যাসটা সিমে দিয়ে গেছিল ।দেখলো না ঠিকঠাকই জ্বলছে ।এবার ড্রেস পরে নিয়ে ঠাকুর ঘরে পূজো করতে শুরু করলো। পুজো শেষ করেই রান্নাঘরের মিলিদের খাবারটা নামিয়ে ফেলল ।মনোজের ব্রেকফাস্টে দুধ কলা,ডিম রাখল। মনোজের ঔষধ রাখল।নিজের নাস্তা টিফিন বক্সে পুরে নিল। তারপরে মিলিদের খাবারটা ঠান্ডা করতে দিল ঠান্ডা হয়ে গেলে মিলিদের কাছে গিয়ে খেতে দিল।
মনোজ বলল 'এত তাড়াতাড়ি খেতে দিচ্ছ ওদের?'
রেখা বলল'-তোমার সুবিধার্থে?
তুমি তো খেতে দিতে পারবে না ।তাই একটু আগে আগেই খেয়ে খাইয়ে দিলাম। শুধু বাচ্চাদের দুধ রুটি টা একটু তুমি ওদের কাছে দিয়ে দিও । দুধ গরম করে রাখা আছে ফ্লাক্সে।তাহলেই হবে ।যদি আমি ঠিক টাইমে  ফিরতে না পারি।'
রেখা মনোজের মুখটা লক্ষ্য করলো, মনে মনে হাসলো ।তারপর মনোজের দিকে তাকিয়ে বলল' কি ব্যাপার ওমন সুন্দর চাঁদপানা মুখ বাংলার ৫ করে রেখেছো কেন?'
রেখা শাড়ি পরতে লাগলো ।
মনোজ বলল 'কখন ফিরবে?'
রেখা বললো ,এখনো পৌঁছান  গেল না ।আরো বলল
খাবার টেবিলে তোমার নাস্তা দিচ্ছি ।খেয়ে নাও চটপট।'
মনোজ বাধ্য ছেলের মতো খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো।
রেখা এবার ট্রেন ধরবে বলে বেরিয়ে গেল।
যথারীতি স্কুলে পৌঁছে গেল।
স্কুলে দীর্ঘ এক মাস পর ছাত্রীদের দেখতে পেয়ে মনটা আনন্দে নেচে উঠলো।
বড়দি রেখাকে দেখে খুব খুশি হলেন।
কিন্তু স্কুলে এসে রিম্পাদিকে দেখতে পেল না
বড়দি বললেন'আজ রিম্পা আসতে পারে নি।'
রেখা নিজের ঘরে চলে গেল সেখানে গিয়ে দেখল কয়েকজন টিচার মিড ডে মিলের ঘরে আর কয়েকজন টিচার পাশের রুমে  মডেল অ্যাক্টিভিটির উত্তরপত্রজমা নিচ্ছে। রেখা নিজেও উদাসী বাউল মনটাকে সরিয়ে, সেই রুমে বসে পড়ল এবং কাজে মনোনিবেশ করল।'

মোঃ হা‌বিবুর রহমান ৫ম পর্ব





ইউএন মিশ‌নে হাই‌তিতে গমণ
 ৫ম পর্ব
মোঃ হা‌বিবুর রহমান



অতঃপর নি‌মি‌ষেই আমরা সব অ‌ফিসাররা মি‌নিবাস থে‌কে ঝটপট নামলাম।  বিশাল অট্টালিকাসম ইউএস নেভাল অ‌ফিসার মেসের কারুকার্যম‌ন্ডিত সৌন্দর্য্য ‌দে‌খে সে‌দিন স‌ত্যই মুগ্দ্ধ হ‌'য়ে‌ছিলাম। আজকাল অবশ্য আমা‌দের বঙ্গ‌দে‌শেও সুন্দর সুন্দর  ম‌ডে‌লের বসতবা‌ড়ি কিংবা প্রাসাদসম হ‌রেক রক‌মের ভবন নি‌র্মিত হ‌'চ্ছে আমা‌দের বঙ্গীয় সোনার ছেলে‌দের স‌ক্রিয় তত্বাবধা‌নে। 

যা‌হোক, এখন আমা‌দের জন্য প্রধান ও মূখ্য কাজ হ‌লো ঝটপট স্নানটা সে‌রে ফেলা। নেভাল সা‌র্জেন্ট সা‌হেব আমা‌দের‌কে বিশ্রা‌মের কামরাটা দেখা‌নোর সা‌থেই ব‌লে দিয়ে‌ছি‌লো যে আধা ঘণ্টার ম‌ধ্যেই আমা‌দের রে‌ডি হ‌'তে হ‌বে। একথা বলাও সারা তারপর আর সার্জেন্ট সা‌হে‌বের দেখা মি‌লে‌নি, বু‌ঝি চম্পট দি‌য়ে‌ছে অন্য কোন কা‌জের স্বা‌র্থে। 

মা‌ঝে মা‌ঝে ম‌নে হ‌'য়ে‌ছে এরা বি‌শ্বের সব‌চে‌য়ে ধণাঢ্য দে‌শের সার্জেন্ট, এ‌দের এত কাজ করার দরকার আ‌ছে কি? এরা যেন বাতা‌সের সা‌থে পাল্লা দি‌য়ে সব সময়ই চলাচল ক‌রে। তাই প্রায়ই আনম‌নে বলতাম "মাফ চাই বাবা তোমা‌দের কা‌ছে। তোমা‌দের এক‌বেলা কাজ না কর‌লে আস‌লে কি আর আ‌সে যায়"? অতঃপর, এক অদ্ভূত ব্য‌াপার ঘট‌লো, স্না‌নে ঢু‌কেই আ‌মি শুরু‌তেই যেন একট‌ু হোছট খেলাম। আমার আ‌দি নিবাস চুয়াডাঙ্গার আঞ্চ‌লিক ভাষায় ব'ল‌তে গে‌লে একেবা‌রে যেন ভ্যাঁকা-চ্যাঁকা খে‌য়ে গেলাম আর কি! কিংবা শুদ্ধ ভাষায় বল‌তে পা‌রেন কিংকর্তব্য‌বিমূঢ় হ‌'য়ে গেলাম। ‌

সে এক এলা‌হি ব্যাপার! সেই ১৯৯৪ সা‌লের স্নানাগার যে এত সুন্দর হ‌'তে পা‌রে এখন চিন্তা ক'র‌লেই যেন ঠুঁশ ক‌রে বেহুঁশ হ‌'য়ে যে‌‌তে পারি। হয়ত এই ২৬-২৭ বছর পর সুক্ষভা‌বে বর্ণনা করা আমার প‌ক্ষে ‌ঠিক এমূহু‌র্তে স‌ত্যিই ক‌ঠিন হ‌বে। ত‌বে এক কথায় বল‌তে পা‌রি- অপূর্ব! আ‌মি গোসলকার্য সমাপ‌নের সময় বেশ একটা মু‌স্কিলেই প‌'ড়েছিলাম আর‌কি। বাংলা‌দেশ সেনাবা‌হিনীতে চাক‌ুরী করার স‌ুবাদে তৎকালীন বি‌ড়িআ‌র এ ডেপু‌টেশ‌নের সময় বি‌ডিআর সদর দপ্তর, পিলখানায় পো‌ষ্টিংকালীন তখন 'ফরেন ডে‌লি‌গেশন ডি‌লিংস' কিংবা অন্য কা‌জে অ‌নেকবারই তখন পর্যন্ত ‌দে‌শের পাঁচতারা সবগু‌লো হো‌টেলের অ‌ভিজ্ঞতা‌ তো একপ্রকার হ‌'য়েই গি‌য়ে‌ছি‌লো। 

বাথরু‌মের ফি‌টিং সি‌ষ্টেম বুঝ‌তে আমার বেশ একটা মূল্যবান সময় খরচ ক'র‌তে হ‌'য়ে‌ছি‌লো। বাথরুমে গন্ডা দু'‌য়েক হ‌রেক রক‌মের তোয়া‌লে ঝুলা‌নো, কোনটা রে‌খে কোনটা ছা‌ড়ি তার সিদ্ধান্ত নি‌তেই অ‌নেকগু‌লো মি‌নিট আমা‌কে ব্যয় ক'র‌তে হ‌য়ে‌ছি‌লো। যাক সে সব কথা। বেশ ক‌য়েক‌টি পা‌নির ট্যাপ দে‌খে স‌ত্যিই হিমশিম খে‌য়ে গি‌য়ে‌ছিলাম। কোন প্রকা‌রে গোছল শেষ ক'রলাম।আহ্, সে যেন এক অনা‌বিল আনন্দ!

যা‌হোক, গোছল শেষে রু‌মে এ‌সেই সেই সেনাবা‌হিনীর কা‌লো রং‌য়ের ইউ‌নিফর্ম প‌রে আবার যথারী‌তি ফাই‌টিং ফিট হ‌য়ে গেলাম এবং মনটাও গোছ‌লের পর বেশ চাঙ্গা হ‌'য়ে গে‌লো। ম‌নে তখন ফুরফু‌রে ভাব। ইউ‌নিফর্ম প‌'রেই এ‌ন্টিরুম বা টি‌ভিরু‌মে আসলাম। ‌সে টি‌ভিরু‌মের বর্ণনা দি‌তে গে‌লে বিশাল একটা ফি‌রি‌স্তি  দি‌তে হ‌বে তাই অ‌তি সং‌ক্ষে‌পে দু' একটা কথা না ব'ল‌লেই নাই তাই ব'ল‌ছি আর‌ কি! 

আলীসান টি‌ভিরু‌মের টি‌ভিটা বিশাল সাই‌জের যা‌তে তিনশ'র অ‌ধিক স্যা‌টেলাইট চ্যা‌নেল ছি‌লো। টি‌ভির রি‌মোর্ট দি‌য়ে বেশ কিছুক্ষণ তাই গুতাগু‌তি ক'রলাম। অ‌নেক চ্যা‌নেলই তো দেখলাম কিন্ত‌ু ভারতবর্ষ/দ‌ক্ষিণ এ‌শিয়ার কোন চ্যা‌নেল চো‌খে পড়‌লো না। ‌সেই সময় আমা‌দের দে‌শে বু‌ঝি হা‌তে গোনা ১০-১২ টা স্যা‌টেলাইট চ্যা‌নেল ছি‌ল মাত্র। আমার ম‌নে আ‌ছে, ঐ সময় একটা রব প্রচ‌লিত ছি‌লো যে, প্রাক্তন প্রে‌সি‌ডেন্ট এরশাদ সা‌হেব না‌কি শুধুমাত্র ১০০ টি এ ধর‌নের স্যা‌টেলাইট চ্যা‌নেল দেখার ‌সৌভাগ্য অর্জন ক‌'রে‌ছি‌লেন। 

এরই ম‌ধ্যে সেই সা‌র্জে‌ন্টের আবার হুংকার। কলিং বেল বা‌জি‌য়ে এ‌ন্টিরু‌মে প্র‌বেশ ক‌রে একই কায়দায় বল‌লো " Sir, if you are ready then let's go to downstairs and board on the bus. Your bus is ready and we will move around our Naval Base, okay sir"? যা‌হোক, আমরা আবার সেই মিনিবা‌সে আসীন হ'লাম। যতদূর ম‌নে প‌ড়ে আমা‌দের এই ফ্লাই‌টে সি‌নিয়র এবং জুনিয়র মিলে মোট ১০ জ‌নের মত অ‌ফিসার এক‌ত্রে ভ্রম‌ণ ক'র‌ছিলাম আর বাকীরা অন্যান্য পদবীর ছি‌লো। 

তা‌দেরকে বেই‌জের অভ্যন্ত‌রে অন্য জাগায় (হ্যাংগা‌রে) রাখা হ‌'য়ে‌ছি‌লো এবং দেখভা‌লের জন্য ‌বেশ ক‌য়েকজন সা‌র্জেন্টও নি‌য়ে‌া‌জিত করা হ‌'য়েছিলো। আ‌মি অতঃপর ঐ সা‌র্জেন্ট‌কে নিঃসং‌কো‌চে জি‌জ্ঞাসা ক'রলাম, "Yes Sergeant, where is the actual location of Pearl Harbour"?  However, he smiled a while and told me, "sir, you have asked me the same question for the third time to me so far I can remember. Sir, Pearl Harbour is no more existing but the entire Naval Base itself was the actual location of Pearl  Harbour. Are you happy now sir"?

এখন বুঝ‌তে আর একটুও দেরী হ‌লো কে‌নো এ বেটা পার্ল হারবা‌রের কথা শু‌নে বার বারই ই‌তিপূ‌র্বে আকুন্ঠ মৃদু হে‌সে‌ছে। খাওয়ার কথা‌তো ভু‌লেই গে‌ছি, ত‌বে ১০০ গজ দূ‌রে দূরে হয় কমলা‌লেবুর, কিংবা আ‌পে‌লের বা আনার‌স জুই‌সের জারের সা‌রিবদ্ধতা ‌ছি‌লো লক্ষণীয়। যে কেউ ইচ্ছা ক'র‌লেই ফিল্টার থে‌কে এসব জুইস ফ্রি খে‌তে পা‌রে। 

আর এমআরই‌ তো আ‌ছেই অজস্র। যা‌হোক, শুরু‌‌তেই সার্জেন্ট আমাদের‌কে প্রশা‌ন্ত মহাসাগ‌রের ধা‌রে ‌নি‌য়ে যে‌য়ে নীল পা‌নি দে‌খি‌য়ে নি‌য়ে আস‌লো এবং তারপর এক এক ক‌রে বেইজ ক্যা‌ম্পের গুরুত্বপূর্ণ ইনস্ট‌লেশন ঘু‌রি‌য়ে আবার আন‌লো অব‌শে‌ষে জাঁকজমকপূর্ণ পূ‌র্বের সেই স্বনামধন্য অ‌ফিসার মে‌সে। আহ্ মনটা খুব খারাপ লাগ‌ছে এ মূহু‌র্তে, ভাবলাম এক বছর কিভা‌বে পরবাসী থাক‌বো এভা‌বে বি‌দেশ বিভুঁই‌তে? মুহূর্তের ম‌ধ্যে ছোট বাবু, সহধ‌র্মিনী, স্নেহময় আব্বা ও মার কথা ম‌নে পড়ে গে‌লো। 

এখনও ঘন্টা চা‌রেক বা‌কী। কি করা যায়, শরীরটা ভীষন ক্লান্ত ম‌নে হ‌'চ্ছিল যেন সারা শরী‌রে চোর পিঁটুনী দিয়ে‌ছে কেউ। ই‌তোম‌ধ্যে সেই ইউএস নেভাল সা‌র্জেন্ট আমা‌দের‌কে রে‌খে মি‌নিবাস নি‌য়ে তার আপন জায়গায় প্রস্হান ক‌'রে‌ছে স্হানীয় সময় ঠিক বিকাল চারটায় ফির‌বে জা‌নি‌য়ে। বিশ্রামরু‌মে যে‌য়ে জানালা দিয়ে পূর্ব‌দিকে উ‌ঁকি দি‌তেই চো‌খে পড়লো রাজধানী হনুলুলুর নয়না‌ভিরাম দৃশ্য। 

আর তিন ঘণ্টা বাদ আবারও একটানা ১২ ঘণ্টাব্যাপী একই প্র‌ক্রিয়ায় আকা‌শে উড়তে হ‌বে, ত‌বে এবার খুশীর খবর হলো আকাশ থে‌কে আকাশে অথবা 'Air to air refueling' অর্থাৎ এক প্লে‌ন থে‌কে অন্য প্লে‌নে জ্বালানী সরবরাহ করা লাগবেনা কারণ এ কাজ‌টি এবার হনুলুলু আন্তর্জা‌তিক বিমান বন্দর থে‌কে বিমান কর্তৃপক্ষ সে‌রে নে‌বেন। আমা‌দের পরবর্তী গন্তব্যস্হল পোর্টোরি‌কোর সেনা প্র‌শিক্ষণ কেন্দ্র ক্যাম্প সা‌ন্টিয়া‌গো‌তে। যাই দে‌খি একটু বিশ্রাম নেওয়া যায় কিনা? 


চল‌বে....

অমৃতা চট্টোপাধ্যায় 




যখন বৃষ্টি মাখে শহর 



যখন বৃষ্টি মাখে শহর 
মৃত্যুর দিন মনে পড়ে 
চৌরাশিয়ার বাঁশিতে সুর 
কেউই মুখোমুখি নই  
পাতাগুলো হলদেটে হয় 
ভাঙা নৌকো 
জানি প্রভু, সন্ধেগুলোর নাম অনেক
তবুও মৃত্যুর দিন মনে পড়ে।

নিগার সুলতানা





শিশির বিন্দু জল


মুক্তমনা আকাশ রে তুই
তুই যে আমার পৃথিবী! 
তোর মাঝে পাই যে খুঁজে
হাজার সুখের স্বপ্নগুলি।

পূর্বাকাশের সূর্য রে তুই
মধ্যাকাশের চন্দ্রতারা!
নিত্য দিনের সঙ্গি যে তুই
এই তো জীবন গড়া।

তুই যে আমার রূপের শিখায়
শুভক্ষণের সেরা সখা,
তোকে বিহীন যায়না চলা
অন্ধকার মোর জীবন বৃথা।

নিয়তির পরিহাসে ঝড়ানো
তুই যে আমার বিধির বিধান,
চাওয়া পাওয়ার দুঃখ ব্যথায়
তুই আমার একরাশ অভিমান।

মধুর কন্ঠে বেজে উঠা শিল্পি যে তুই
মিষ্টি সুরের গান!
অধিক সময় মন মাতিয়ে
গাই যে গুণগান।

তুই যে আমার মিষ্টি প্রভাত
শিশির বিন্দু জল!
শেষ বিকেলের আভা রে তুই
 সদ্য ফোটা ফুল।

তুই যে আমার উৎজ্জল প্রদীপ
বকুল ফুলের মালা!
তুই যে আমার গলারই হার
হাতের কাঁকন বালা।

রাবেয়া পারভীন ১০ম পর্ব





স্মৃতির জানালায় 
(১০ম পর্ব) 
রাবেয়া পারভীন




                       এতোক্ষন ধরে একটা কথাও বলেনি শবনম। অন্যান্য দিন মাহ্তাব খেতে বসলে  শবনম জোর করে এটা ওটা পাতে তুলে দিত। মাহতাবের  অন্যমনস্কতা  ভাংগিয়ে দিয়ে  খালাম্মা বললেন  
-কি ব্যাপার মাহতাব  খাচ্চো না কেন ?  শবনম  তুইওতো খাচ্ছিস না,  কি হলো ? 
মাহতাব  তারাতারি বলল 
-খাচ্ছি তো 
খালাম্মা বললেন 
- রাত বেশী হয়ে গেছে তাই ক্ষুধা মরে গেছে। খেতে ভাল লাগছেনা। 
-না না খালাম্মা খুব ভালো রান্না হয়েছে  ভালো লাগছে। কোথায় আর বেশী রাত হল!  আমি তো প্রায়ই  পত্রিকা  অফিস  থেকে  অনেক রাত করে ফিরি,  খেতে খেতে বারোটা বেজে যায়। বেশী রাত করাটা অভ্যাস  হয়ে গেছে। 
খালাম্মা হাসলেন।  বললেন
- এবার  তাহলে  একটা বিয়ে কর বাবা ।  বউ ঘরে আন।  জীবনটাকে একটু গুছিয়ে নেবার চেষ্টা কর
খালাম্মার কথায় মৃদু হেসে মাথা নীচু করে খেতে লাগলো মাহতাব। বাবলু  শিপলু  একসাথে কোলাহল করে উঠল
- মাহতাব  ভাই সত্যি  এবার একটা ভাবী নিয়ে আসুন, আমরাও মাঝে মাঝে গিয়ে একটু আবদার করতে পারবো
খালাম্মাও স্যারকে উদ্দেশ্য  করে বললেন
- শুনছো , এবার ছেলের জন্য  বউ খোজো,
স্যার। বললেন
- হ্যা ভাবছি
ওদের সবার কথার ফাঁকে  শবনম কখন  উঠে চলে গেছে  মাহতাব  টের পায়নি। হঠাৎ মাথা তুলে দেখে শবনম নেই। ততক্ষনে মাহতাবেরও  খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। সে একটা দ্বীর্ঘশ্বাস  ফেলে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ল।  বেসিনে  হাত ধুয়ে রুমালে হাত মুছতে  লাগলো। খালাম্মাও খাওয়া শেষ করে বেসিনের সামনে  মাহতাবের পাশে এসে দাঁড়ালেন। প্রায় ফিস ফিস করে  মাহতাবের দিকে তাকিয়ে বললেন
- মাহতাব যাওতো বাবা,  শবনমের কি হয়েছে একটু দেখ ,  দুদিন ধরেই দেখছি মন খারাপ করে আছে। ওকে জিজ্ঞেস করো,  ওর কি  এই বিয়েতে মত নেই ?  
হাত মুছে শবনমের। ঘরে এলো মাহতাব।  হাটুতে মুখ গুজে  খাটের  এক কোনে  চুপচাপ বসে রয়েছে শবনম। খাটের অপর প্রান্তে বসে মাহতাব ডাকল
- শবনম,  এই শবনম  কি হয়েছে তোমার ?  
হাটু থেকে মুখ তুলে  মাহতাবের দিকে তাকালো শবনম। অবাক হয়ে মাহতাব দেখল শবনমের। কান্নাভেজা মুখ। বোকার মত  আবার  প্রশ্ন করল
- কি হয়েছে তোমার ?  কা্ঁদছো  কেন ?
ওড়নার  আঁচলে চোখ মুছে  জ্বলে উঠল  শবনম
-লজ্জা করেনা তোমার  এ কথা জিজ্ঞেস করতে ?
মুহূর্তের মধ্যে চুপসে গেল মাহতাব। বুঝতে  পারলোনা কেন শবনম তার সাথে রাগ করছে। কি অপরাধ তার। তাই। আবার বলল
- কেন। আমি কি করেছি ?
বুঝতে যখন পারছোনা  তখন। এখানে  এসেছো কেন।?  কে আসতে বলেছে ?  ও  আমার হাতে  অন্য  লোকে কেমন করে আংটি পরিয়ে  দেয়  তাই দেখে মজা করতে  এসেছো ?
- ছিঃ  শবনম  কি বলছো এসব।?
- ঠিকই বলেছি।  আমার যেদিন। বিয়ে হবে  সেদিন যদি  এই বাড়ী মুখি হও। তো  তোমার কপালে অনেক দুঃখ  আছে।
বলেই। আবার ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল শবনম। হঠাৎ একটা দমকা বাতাসে যেন  মাহতাবের। মনের বন্ধ দুয়ার খুলে গেল। শবনমের ঐ কান্নাভেজা মুখ মাহতাবের। মনের পর্দা  সরিয়ে দিল। ছিঃ ছিঃ সে এতো  বোকা !  কেন এতোদিন বুঝেনি ? শবনমের। মত মেয়ে  তার মত এক সাধারণ  যুবক কে যে ভালোবাসতে পারে  এ যেন কল্পনারও অতিত। এতোদিন  নিরবে নিভৃতে সে একাকি শুধু শবনমকে ভালোবেসেছে। বিনিময়ে কিছুই আশা করেনি  শুধু চেয়েছে  শবনম  ভালো থাক  সুখি হোক। ওর মত মেয়ের যোগ্য  কারো কাছেই সে সমর্পিত  হোক। শবনম  যেন এক দামী হীরের ফুল।  এই হীরার টুকরো  সাজিয়ে রাখার মত জায়গা তার কোথায়।?  তাই এতোদিন সে কোন দুঃসাহস দেখায় নি । কত রাত কেটে গেছে নির্ঘুম শুধু শবনমকে  ভেবে। সেইসব  নিস্তব্ধ  রাতের  বেদনার কথা তো  শবনমকে বলা যাবেনা। শবনমের জন্য ই  শবনমকে  আড়াল। করেছিলো সে। তবে কি তার মত শবনমও  তাকে এতোদিন  ভালোবেসেছে ?  মাহতাবের যেন  বিশ্বাস  হতে চায়না।



চলবে......

শামীমা আহমেদ ২৮




শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত (পর্ব ২৮)
শামীমা আহমেদ 

বেশ কয়েকদিন জ্বরে ভুগে শিহাব আজ বিছানা ছাড়ল। শরীরটা বেশ দূর্বল লাগছে। ঘুম থেকে জেগে ঘরের চারিদিকে চোখ বুলালো। ঘরটা বেশ গোছগাছ করা। শিহাব বুঝতে পারছে না সবকিছু কিভাবে এত সুন্দর পরিপাটি করে রাখা। শিহাব নিজেকে সুস্থ ভাবছে। একবার হাত পা নাড়াচাড়া দিয়ে দেখে নিলো।হ্যাঁ ভালোই লাগছে। তবে বিছানাটা একেবারে এলোমেলো হয়ে আছে।খাটের পাশে বাটিতে পানি রাখা।জলপট্টি দেয়ার কাপড়ের টুকরাটা বালিশের 
পাশে পড়ে আছে।শিহাব বুঝতে পারছে না কিভাবে কি হলো! শুধু এটুকু মনে পড়ছে অফিসে বেশ খারাপ লাগছিল।দুপুরের পর পরই তাই অফিস থেকে চলে আসে।তারপর কোনমতে দরজা খুলে বিছানায় শুয়ে পড়ে।শিহাব দেখছে একটু দুরেই তার জুতা মোজা খোলা। গায়ে সেই দিনের অফিসের পোশাক। শিহাব আর কিছুই মনে করতে পারছে না।শিহাব পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে নিলো। একেবারেই চার্জ নেই।শিহাব বুঝতে পারছে না সে কতদিন ঘুমিয়ে ছিল? নাকি সে কী রিপ ভ্যান উইংকেলের মত কয়েকশত বছর ঘুমিয়ে ছিল?
শিহাব বুঝতে পারলো সে প্রচন্ড জ্বরে  পড়েছিল।তবে এখন ভাল লাগছে।একটু ফ্রেশ হতে হবে।অফিসে যেতে হবে।এ'কদিনে অফিসের কী অবস্থা তা আল্লাহই জানেন।
শিহাব হাত বাড়িয়ে বেড সাইড টেবিল থেকে বেন্সনের প্যাকেটটা নিয়ে খুলে দেখলো মাত্র একটি স্টিক অবশিষ্ট!  শিহাব লাইটার ক্লিক করে সিগারেট স্টিকটা জ্বালিয়ে নিয়ে বেশ লম্বা একটা সুখটান দিল।যতকিছুই জীবনে পাওয়া হোক না কেন যারা স্মোক করে তারা জানে পৃথিবীতে এরচেয়ে সুখকর আর কিছু নেই! শিহাবের মনে হলো জীবন থেকে সব দুঃখ ঝরে গেলো!
শিহাব বিছানা ছেড়ে উঠলো। মোবাইলটা চার্জে দিয়ে গিজারটা অন করে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। চারিদিকে সকালের আলো।গাছের ডালে পাখিদের কিচিরমিচির ডাকাডাকি।শিহাব বুঝলো বেঁচে থাকটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।
দরজায় কলিং বেল।শিহাব দরজার কাছে এগিয়ে গেলো। দেখলো দরজার লক খোলাই আছে।শিহাব বেশ অবাক হলো! তবে কি এ'কদিন দরজাটা ভেরানো ছিল। তবে কী সেদিন আর দরজা লাগানোই হয়নি!
শিহাব দরজা খুলতেই দেখলো কেয়ারটেকার বেলাল দাঁড়িয়ে। হাতে বিশাল একটা ট্রেতে অনেক খাবার দাবার সাজানো। শিহাব অবাক দৃষ্টিতে বেলালেরে দিকে তাকালো। 
বেলাল বললো,নীচতলার অপুর আম্মু ম্যাডামে আপবার জন্য নাস্তা পাঠাইছে। 
এই কয়দিন আপনার কি  বেদম জ্বর! 
সেইদিন আমি ছাদে তালা দিয়া নামার সময় দেহি আপনার ঘরের দরজা খোলা।অনেকবার বেল দিয়াও যখন আপনার কোন আওয়াজ পাই নাই তখন ঢুইক্কা দেখি আপনি জ্বরে বেহুশ।আমি সারারাত আপনার পাশে বইসা ছিলাম।মাথায় জলপটী দিলাম।সেকি জ্বর? আপনি শুধু শায়লা শায়লা করতাছিলেন।আচ্ছা স্যার শায়লা কে? আপনার মাইয়া?
শায়লা! নামটা শুনে শিহাব এবার যেন নিজের মাঝে ফিরে এলো! সে রাতে বেলাল জলপটী দিয়েছিল? তবে যে সে শায়লাকে দেখেছিল।সে শায়লার হাত ধরে রেখেছিল।শিহাবের অনুভুতি বলছে শায়লা তার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিল।শিহাব গভীর  চিন্তামগ্ন হতে যায়।
বেলাল বলে উঠলো,স্যার নাস্তা রাইখখা গেলাম।ভালোমত পুরাডা খাইবেন।জ্বর থেকে উঠলে খুউব কাহিল লাগে।বেলাল নাস্তার ট্রে ডাইনিং টেবিলে রেখে ঘরে থেকে বেরিয়ে গেলো।শিহাব দেখলো বেশ যত্ন করে সাজানো নাস্তার বাটি পেয়ালা।শিহাব হটপট খুলে দেখল গরম লুচি।সাথে বাটিতে লাবরা সবজি,ঘন করে বুটের ডাল,ডিম পোচ,এক বাটি পায়েশ,দুইপিস পাউরুটিতে বাটার দেয়া।আর একটা ছোট্ট ফ্লাস্কে চা।খুব কিউট একটা ফ্লাস্ক! মনে হচ্ছে একটা পান্ডা বসে আছে।শিহাব পান্ডাটির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো! হঠাৎ  শায়লার মুখটি ভেসে উঠল।শায়লা থাকলে নিশ্চয়ই ফ্লাস্ক থেকে কাপে চা ঢেলে দিতো।শায়লার কথা মনে হতেই শিহাবের মন চাইল ওকে একটা কল করতে।পরক্ষনেই ভেবে দেখল নাহ! এখন না।অফিসে গিয়ে  সময় নিয়ে কথা বলবে।শিহাব এক কাপ চা ঢেলে নিলো।সাথে সিগারেট স্টিকেও টান চলছে। দুটো শেষ করে শিহাব ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো।আহ! কতদিন পর আজ শাওয়ার ছেড়ে গোসল করবে। নিজের প্রিয় সুগন্ধির সাবান শ্যাম্পু দিয়ে আজ ওয়াশরুম সুগন্ধে ভরিয়ে দিবে।এইসব সৌখিনতা শিহাবের বহুদিনের!শিহাব গিজারের সুইচ অফ করে আকাশী নীলরঙা বড় টাওয়েল টা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে  গেলো।
বেসিনের আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিল। দাঁড়ি গোঁফে মুখ একাকার। চুলও বেশ বেড়েছে।শিহাব বেসিনের কল ছেড়ে চোখ বন্ধ করে   মুখে বেশ কয়েক ঝাপটা পানি ছুড়ে দিলো।মনটা আনন্দে ভরে উঠল! ঠিক এই সময়টায় শায়লাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে শায়লা যদি পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরত! ধূর! কি সব  আবোলতাবোল ভাবছে। শিহাব একহাতে  
 শেভিং ফোম স্প্রে আর আরেক হাতে রেজর নিলো।
আর মনে মনে ভাবলো অফিসে যাওয়ার সময় নীচতলার অপুর আম্মু ভাবীকে নাস্তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে যাবে।

শায়লার প্রতিদিন এই একটিই কাজ। আর তা হলো দুপুরের জন্য রাতেই রান্নাবান্না গুছিয়ে রেখে  দেয়া।আর সকাল হলেই নাস্তা সেরে নিয়ে লিস্টি দেখে শপিংএ বেরিয়ে যাওয়া।
নাস্তার পর শায়লা গোছলের প্রস্তুতি নিলো। 
প্রতিদিন বাইরে যেতে হচ্ছে।ধুলাবালিতে চুলের  একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। খুব সুগন্ধযুক্ত শ্যামপু শায়লার পছন্দ। আর এরজন্য তাকে শ্যাম্পু কিনতে গিয়ে অনেকবার ঠকতেও হয়েছে।শায়লা শ্যাম্পুর ঘ্রাণ নিয়েই তার কোয়ালিটি না বুঝেই তা কিনবে। 
শায়লা বেশ সময় নিয়ে গোসল সারলো। তার চুলের ঘ্রাণে ঘর ভরে গেছে।শায়লা চুলের টাওয়েল খুলে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিল। আর টাওয়েল দিয়ে ঘষে ঘষে চুল মুছছিল। হঠাৎ মনে হলো শিহাব তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে! শায়লা স্পষ্ট শিহাবকে দেখতে পেলো! পরক্ষনেই ভাবলো যাহ! এসব কি ভাবছে? আসলে সারাক্ষণ শিহাবকে ভাবনা থেকে এসব হচ্ছে। কোনদিন কি এটা সম্ভব হবে? শিহাব শায়লার বেডরুমে দাঁড়িয়ে শায়লার ভেজা চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে আর শক্ত করে শায়লার একটা হাত ধরে রেখেছে! 
এসব কি অবান্তর ভাবনা ভাবছে সে! শায়লা নিজে নিজেই লজ্জা পেলো।আজ পর্যন্ত  সে শিহাবে চোখের দিকে তাকিয়ে কথাই বলতে পারেনি তা আবার এত ঘনিষ্ঠতায় তাকে ভাবা। শায়লা ঘড়ি দেখলো।এগারোটা বাজছে। শায়লা আজ মেরুন রংয়ের একটি শাড়ি পরলো। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হলো! শায়লা মায়ের কাছে থেকে টাকা নিয়ে শপিংয়ের জন্য বেরিয়ে গেলো।

শিহাব অফিসে পৌছে এ ক'দিনের জমানো কাজের মাঝে একেবারে ডুবে গেলো। শায়লাকে আর কল করা হয়নি।দুপুর দুইটা  বাজতেই লাঞ্চ টাইম হয়ে এলো। শিহাবের এবার যেন একটু ফুসরৎ মিললো। হালকা  কিছু একটা খেতে হবে।সকালে যে জম্পেশ নাস্তা হয়েছে।রাতের আগে আর ভারি কিছু খাওয়াই যাবে না। শিহাব শায়লাকে কল দিলো। মোবাইল বেজেই চলেছে। 

শায়লা  কেনাকাটায় ব্যস্ত।ব্যাগের ভিতর ফোন বেজেই চলেছে।হঠাৎ  দোকানের ছেলেটা বলে উঠল, আফা আপনার ফোন বাজতাছে। শায়লা ফোন বের করে দেখলো শিহাবের পাঁচটা মিসকল।হায়! কিভাবে এমন হলো! শায়লা দ্রুতই কল ব্যাক কিরলো। শিহাব এক রিংয়েই ফোন রিসিভ করলো।যেন শায়লার কলের অপেক্ষাতেই ছিল।
কেমন আছো শায়লা? কোথায় তুমি এখন? 
শায়লা জানালো সে ভাল আছে আর সে শপিং এ ব্যস্ত।শায়লা আরো কিছু বলতে চাইল কিন্তু শিহাবের এই একটা দোষ  শায়লার কথা ছাড়া সে আর কিছুই শুনতে চায়না।
শিহাব বললো,অনেকবার কল দিয়েছি।
শায়লা জানতে চাইল,তুমি কোথায়?
আমি অফিসে,তুমি?
আমি এইতো নর্থ টাওয়ারে আছি। 
লাঞ্চ হয়েছে?
না,কিছু একটা খেয়ে নিবো।আজ অনেক কেনাকাটা।
শিহাব বললো, সে হবে,তুমি নর্থ টাওয়ারের নীচে নেমে আসো।আমি আসছি। তোমাকে তুলে নিয়ে একসাথে লাঞ্চ করবো।শায়লা আর কিছু বলার আগেই শিহাব কল কেটে দিল।শায়লার সম্মতি অসম্মতির অপেক্ষা না করেই।
শায়লা কেনাকাটা বন্ধ রেখে লিফটে নীচে নেমে এলো।শিহাবের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।শায়লার ভেতরে কেমন যেন একটা অনুভুতি হতে লাগলো। বারবার লিফটের বাইরে পায়চারী করতে লাগলো।শায়লা ঠিক বুঝতে পারছে না, শিহাব তাকে নিয়ে কতখানি ভাবছে।খুব বেশিদূর কি? নাকি শুধুই সময়ের বয়ে যাওয়া।
শিহাব চলে এলো। শিহাবের বাইকটা দেখে চেনা গেলো।শায়লা শিহাবের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বেশ খেয়াল করে।চোখে সানগ্লাস দেয়া শিহাব হেলমেট খুলে  শায়লাকে ইশারায় কাছে ডাকলো। শায়লা কাছে যেতেই ঘাড় ঘুরিয়ে বুঝালো পেছনে বসো।শায়লার কেমন যেন একটা বাধা লাগল।কিন্তু শিহাবের অস্থিরতায় আর অমত করা গেলো না। শিহাব বাইকে স্টার্ট দিলো। শায়লা শিহাবের চমৎকার সুগন্ধিতে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো! শায়লা আজ বেরুবার আগে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি আজ শিহাবের সাথে তার দেখা হবে!আচমকা এমন প্রাপ্তি বেঁচে থাকার ইচ্ছে জাগায়।
সিগনালে বাইক থামতেই শায়লা দেখলো  শিহাব আজ চমৎকার রঙের একটি টি শার্ট পরেছে। কি জানি কোন কারণে শায়লার শিহাবকে খুব আপন মনে হলো।সে  শিহাবকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আর ভাবতে লাগলো সেই গানটি,,,এই পথ যদি না শেষ হয়,,,,! সিগনালে সবুজ বাতি জ্ব্বলে উঠলো,শিহাব বাইকে স্টার্ট দিলো।


চলবে...

শান্তা কামালী৩৭




বনফুল
পর্ব  (৩৭)
শান্তা কামালী

ডাক্তারের পাঠানো ভদ্রলোক টি ঘরে এসে প্রথমেই দেখে নিলেন সিলিংয়ে হুক লাগানো আছে কি-না। তারপর একটা টেবিল এনে তার ওপর উঠে সেই হুকের সাথে একটা কপিকল বেঁধে দিয়ে, একটা রশি কপি কলের ভেতর দিয়ে টেনে এনে জুঁই য়ের বিছানার মাথার দিকে জানালার গ্রিলের সাথে আরেকটা কপিকল বেঁধে তার ভেতর দিয়ে এনে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিলেন। 
এরপর একটা স্টিলের তৈরি অর্ধচন্দ্রাকার মতো যন্ত্র, যার ভেতর দিকে নরম প্যাড লাগানো, সেটা জুঁই য়ের ঘাড়ে পেছনের দিকে রেখে একটা তিতলী লাগানো স্ক্রু কে আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে ঘাড় এবং দুটো থুতনিতে  সাবধানে আলতো করে লাগিয়ে দিলেন।তারপর মাথার ওপর থেকে ঝোলানো রশিটার একটা মাথা যন্ত্র টার সাথে বাঁধলেন। রশির অন্য মাথা টা য় একটা বঁড়শী র মতো হুক বেঁধে দিয়ে,ব্যাগ থেকে কয়েকটা লোহার চাকতি বের করলেন।সেগুলো কোনটা আধ পাউন্ড, কোনটা এক পাউন্ড ওজনের। সেই হুকটায় প্রথমে একটা এক পাউন্ডের চাকতি ঝুলিয়ে দিলেন। 
জুঁই তার খাটের ওপর পিঠের দিকে বালিশ দিয়ে সোজা হয়ে বসে আছে, আর ট্র‍্যাকশানের টানে ঘাড়টা সোজা হয়ে উপরের দিকে টান খেয়ে আছে। ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, ব্যথাটা কি একটু আরাম হলো। জুঁই বললো, হ্যাঁ অনেক টা, বুকের ভেতরের চাপ টা একটু কম লাগছে। 
ভদ্রলোক বললেন, এরপর আর আপনাদেরকে বেশি কিছু করতে হবে না। এটা এক পাউন্ড দিয়েছি।এরকম ভাবে পাঁচ মিনিট থাকার পরে একটা আধ পাউন্ড ওজন হুকে জুড়ে দেবেন,তার পাঁচ মিনিট পরে আধ পাউন্ড টা নামিয়ে আরেকটা এক পাউন্ড  জুড়ে দেবেন। প্রথম দিন এই ভাবে ই চলুক।তারপর উনি কেমন বোধ করছেন, ফোনে জানাবেন, আমি তখন যে ভাবে বলবো, সেভাবে ওজন বাড়াবেন। এখানে মোট পাঁচ পাউন্ড আছে। দুটো আধ পাউন্ড, চারটে এক পাউন্ড। আর এইভাবে পনেরো মিনিট পরে ঘাড়ের কাছে এই স্ক্রু টা আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে ঢিলা করে, এই ক্লাম্প টা কে ঘাড় থেকে খুলে নেবেন। দশ মিনিট বিরতি দিয়ে আবারও পনেরো মিনিট। তারপর উনি উঠে দাঁড়িয়ে নিজের দুটো হাত ঘাড়ে দিয়ে আঙুলের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে চেপে ধরে ঘাড় টা দশবার ডানে,দশবার বামে ঘোরাবেন। এটা দুবেলা ই আধা ঘন্টা সময় নিয়ে করতে হবে,মনে রাখবেন মাঝে দশ মিনিটের বিরতি দেবেন। এরপর বসে থাকতে পারে, বা চিৎ হয়ে শুয়েও থাকতে পারেন। আর হ্যাঁ, ডাক্তার বাবু বলে দিয়েছেন, ঔষধ গুলো ঠিক সময় মতো খেতে হবে। ব্যথার মলম টা ঘষে ঘষে লাগাবেন না।আলতো করে বুলিয়ে লাগিয়ে ব্যথার স্থান টা খোলা রাখবেন, যাতে হাওয়ায় মলম টা শুকোতে পারে।
ভদ্রলোক চলে গেলেন। জুঁই য়ের আব্বু পলাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই যে ম্যানেজমেন্টের ছাত্র, ঠিক মতো বুঝে নিয়েছো তো,তোমার ম্যানেজমেন্টের কোর্স তোমাকে ই করতে হবে। আমরা সময় দিতে পারবো না।দুবেলা হাজিরা চাই। 
পলাশ লজ্জা পেলো।চুপ করে  ঘাড় নেড়ে সায় দিলো।
জুঁই য়ের আম্মু সাথে সাথে বললেন, আর দুবেলা র নাস্তা টা একসাথে এখানে ই করবে কিন্তু বাবা।না বলতে পারবে না। পলাশ আরো লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। ওনারা নিচে চলে গেলেন।
জুঁই মুচকি হেসে বললো, ঠিক  হয়েছে, বেশ হয়েছে। 
পলাশ বললো, কি ঠিক হয়েছে? 
জুঁই বললো, বুঝতে পারছো না,বাবুমশাই? 
পলাশ বললো,হুমম,বুঝলাম।
কি বুঝলে? 
এখন থেকে দু'বেলা ডিউটি হয়ে গেলো। 
হুম, আমিও দু'বেলা আরো বেশি করে কাছে পাবো তোমাকে। চিন্তা নেই দু'বেলা ই তোমার জন্য গাড়ি থাকবে। তবে, দুঃখ কি জানো?
কি? পলাশ জানতে চায়। 
জুঁই রহস্য করে বলে, দুঃখ একটা ই,গাড়িতে তোমার পাশে আমি থাকবো না।একটা কাজ করো,একটা বড়সড় বার্বি ডল কিনে পাশে বসিয়ে রেখো।কিন্তু তার হাতে কিন্তু.......। কিছুক্ষণ থেমে জুঁই আবার বলে চুক চাক কোরো না। বলেই হেসে ফেলে জুঁই । 
পলাশ বলে,দুষ্টুমি হচ্ছে? ওটা আমি করি,না তুমি? আঙ্কেল আন্টি শুনতে পেলে কি হবে বলোতো? 
জুঁই বলে, ওরা যেন জানে না!
কি বললে,জানেন? পলাশ মাথায় হাত দিয়ে ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়ে।


চলবে.....