টানাপোড়েন ৬৬
অসময়ের বাদলে
মমতা রায় চৌধুরী
ঘন মেঘ বলে ঋ /দিন বড়ো বিশ্রী। যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে টানা তিন দিন তাতে মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে ।তাই রবি ঠাকুর এর লাইন রেখার মনে পড়ে গেল । বৃষ্টিতে বাড়িতে থাকতে বেশী ভালো লাগছে। জানলার কাছে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির জল হাতে নিয়ে গান ধরেছে' আজ ঝরো ঝরো মুখর বাদল ও দিনে'
শীতের হিমেল হাওয়া অসময়ে বৃষ্টি তবু সে বাদল দিনের গান মনে পড়ে যায় রেখা র। মনোজ অগোচরে রেখার পাশে দাঁড়িয়ে রেখাকে দুই হাত দিয়ে আলিঙ্গন করে এবং বলে' নীল নবঘনে, আষাঢ়গগনে ,তিল ঠাঁই আর নাহি রে ।ওগো, আজ তোরা যাস নে, ঘরের বাহিরে।'রেখা হেসে উঠলো আর বলল এমন রাবীন্দ্রিক হয়ে উঠলে যে বড়ো।
মনোজ বলল 'বাহ রে, আমার বউ রবীন্দ্র সংগীত গাইছে, আর আমি একটু...
রেখা বলল তা বেশ ভালো লাগলো।
এমন সময় রেখার ফোন বেজে উঠলো
রেখা রিংটোন টা একটু চেঞ্জ করেছে
তাই মনোজ প্রথমে বুঝতে পারে নি, কার ফোন বাজছে?
আবার রেখার ফোন বেজে উঠল' এমনও বরষা ছিল সেদিন, শিয়রে প্রদীপ ছিল মলিন...'।
মনোজ বলল 'কার ফোন বাজছে?'
রেখা বলল' আমার ফোন?'
মনোজ বলল রিংটোন চেঞ্জ কবে করলে?
রেখা বলল আজ কি করলাম এই বৃষ্টি দেখে।
মনোজ বলল' দুবার কিন্তু মিস কল হল ।যাও কারো জরুরিও হতে পারে, দেখো কে করল?।'
রেখে একটু বিরক্তি ৮ বলল ধুত ভাল লাগে
না ছাই।"
মনোজ এক প্রকার ঠেলেই পাঠালো।
রেখা ফোনটা গিয়ে দেখে বড়দির মিসকল হয়ে আছে। রেখা বারান্দায় বেরিয়ে এসে মনোজকে বলল 'স্কুল থেকে ফোন এসেছিল। বড়দি করেছিল।'
মনোজ বললো বললাম 'না দেখো কোন ইম্পরট্যান্ট কল হতে পারে?'
রেখা বললো বড়দি কেন ফোন করল স্কুলে যেতে বলবে নাকি?
মনোজ বলল'আহা,ফোনটা করেই দেখ না।'
রেখা মাথা নেড়ে বলল' হ্যাঁ করছি।"
রেখা ফোন করল বড়দির ফোন বাজলো 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে'।
রেখা বেশ গানটা শুনছিল মনোযোগ দিয়ে ।হঠাৎ গুরু গম্ভীর গলায় 'হ্যালো'।
রেখা বলল 'ও বড়দি আমি রেখা বলছি ।আপনি ফোন করেছিলেন?'
বড়দি বললেন 'হ্যাঁ ,তুমি ব্যস্ত ছিলে নাকি ?ফোনটা বেজে গেল।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ দিদি।'
বড়দি বললেন 'রেখা আজকে তোমাকে একটু স্কুলে আসতে হবে।'
রেখা অবাক হয়ে বলল' আজ?'
বড়দি বললেন 'কেন তোমার অসুবিধা আছে? তোমার হাজব্যান্ড তো ঠিক হয়ে গেছে।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ, তা ঠিক হয়েছে ।কিন্তু এখনও উইক ।নিজে নিজে কিছু করতে পারবে না দিদি।'
বড়দি বললেন 'আমি তোমাকে অনুরোধ করবো শুধু আজকের দিনটা স্কুলে আসলে খুব ভালো হতো ।একেতে বৃষ্টি, তারমধ্যে মিড ডে মিল এর কাজ বুঝতেই পারছ?'
রেখা বলল' হ্যাঁ, সে তো বুঝতে পারছি কিন্তু আমি স্কুলে গেলে বাকিদের কোন সমস্যা হবে না তো?'
বড়দি বললেন 'তুমি ওটা নিয়ে ভেবো না। তুমি টেস্ট করিয়েছো তো?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ দিদি ।আমি টেস্ট করিয়েছি?,'
বড়দি বললেন' রিপোর্ট নিশ্চয়ই নেগেটিভ এসেছে?'
রেখা হেসে বলল' হ্যাঁ দিদি।'
বড়দি বললেন 'এই জন্যই তোমার কাছে অনুরোধ রাখছি । তুমি ভরসার পাত্রী। ম্যাক্সিমাম টিচার অফ গ্রুপে জানিয়েছে। তারমধ্যে অনিন্দিতার তো বিয়ে।'
রেখা বলল 'সব ই বুঝতে পারছি কিন্তু দিদি আমি ক'টার ট্রেন ধরবো ?ওই ট্রেনটা তো পাবো না।'
বড়দি বললেন 'অত চিন্তা করো না । অসময়ের বাদল দিনে ,কোন অসুবিধা হবে না, এস।
রেখা বললো 'তাহলে আমি একটু গুছিয়ে নিই ।তারপরের ট্রেনে যাব তাহলে।'
বড়দি বললেন 'ঠিক আছে, তাই করো। এট লিস্ট স্কুলেতে এসে তো পৌঁছাও।'
রেখা বললো 'ঠিক আছে, দিদি।'
বড়দি বললেন 'ঠিক আছে ,রাখছি ফোন।'
রেখা ফোন ছেড়ে হন্তদন্ত হয়ে রান্নাঘরের দিকে ছুটল রান্নাঘরের গ্যাসের চুল্লিতে মিলি আর ওর বাচ্চাদের খাবার বসিয়ে দিয়ে স্নান করতে ঢুকে গেল।
মনোজ পেছন থেকে বলেই গেল কি ব্যাপার হঠাৎ এত তাড়াহুড়ো করে কাজ করছ?'
রেখা বাথরুমে জলের কলটা ছাড়ল, জলের শব্দ শুরু হয়েছে সো সো করে, বলল'স্কুলে যাব।'
মনোজ বলল 'এখন ট্রেনটা তো পাবে না?'
রেখা বলল' আমি জানি বড়দি পরের টায় যেতে বললেন।'
মানুষের মনটা খারাপ হয়ে গেল ।রেখা থাকবে না বলে। অসুস্থতা থেকে রেখাকে ছাড়া এক পাও চলতে পারে না। মনোজের এই করুন অবস্থা রেখার অগোচরে থাকলো ।রেখা কিছুই দেখতে পেল না ।দেখলে হয়তো অনেক কিছুই হত।
মনোজ গিয়ে বারান্দাটায় বসলো। তখনো অঝোরে বৃষ্টি ঝরে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে, রেখা এই বৃষ্টি মাথায় করে স্কুলে যাবে ?আবার আসবে বৃষ্টিতে ভিজে ওর আবার শরীর খারাপ না হয়ে যায়? কোথায় ভাব নেন অসময়ের বাদলের দুজনে পাশাপাশি থাকবো, চোখে চোখ রেখে আসমুদ্রহিমাচল দেখব।'
এরইমধ্যে বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজ হলো ক্রাক করে ।রেখা বেরিয়ে একবার রান্নাঘরের দিকে উঁকি মারলো গ্যাসটা সিমে দিয়ে গেছিল ।দেখলো না ঠিকঠাকই জ্বলছে ।এবার ড্রেস পরে নিয়ে ঠাকুর ঘরে পূজো করতে শুরু করলো। পুজো শেষ করেই রান্নাঘরের মিলিদের খাবারটা নামিয়ে ফেলল ।মনোজের ব্রেকফাস্টে দুধ কলা,ডিম রাখল। মনোজের ঔষধ রাখল।নিজের নাস্তা টিফিন বক্সে পুরে নিল। তারপরে মিলিদের খাবারটা ঠান্ডা করতে দিল ঠান্ডা হয়ে গেলে মিলিদের কাছে গিয়ে খেতে দিল।
মনোজ বলল 'এত তাড়াতাড়ি খেতে দিচ্ছ ওদের?'
রেখা বলল'-তোমার সুবিধার্থে?
তুমি তো খেতে দিতে পারবে না ।তাই একটু আগে আগেই খেয়ে খাইয়ে দিলাম। শুধু বাচ্চাদের দুধ রুটি টা একটু তুমি ওদের কাছে দিয়ে দিও । দুধ গরম করে রাখা আছে ফ্লাক্সে।তাহলেই হবে ।যদি আমি ঠিক টাইমে ফিরতে না পারি।'
রেখা মনোজের মুখটা লক্ষ্য করলো, মনে মনে হাসলো ।তারপর মনোজের দিকে তাকিয়ে বলল' কি ব্যাপার ওমন সুন্দর চাঁদপানা মুখ বাংলার ৫ করে রেখেছো কেন?'
রেখা শাড়ি পরতে লাগলো ।
মনোজ বলল 'কখন ফিরবে?'
রেখা বললো ,এখনো পৌঁছান গেল না ।আরো বলল
খাবার টেবিলে তোমার নাস্তা দিচ্ছি ।খেয়ে নাও চটপট।'
মনোজ বাধ্য ছেলের মতো খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো।
রেখা এবার ট্রেন ধরবে বলে বেরিয়ে গেল।
যথারীতি স্কুলে পৌঁছে গেল।
স্কুলে দীর্ঘ এক মাস পর ছাত্রীদের দেখতে পেয়ে মনটা আনন্দে নেচে উঠলো।
বড়দি রেখাকে দেখে খুব খুশি হলেন।
কিন্তু স্কুলে এসে রিম্পাদিকে দেখতে পেল না
বড়দি বললেন'আজ রিম্পা আসতে পারে নি।'
রেখা নিজের ঘরে চলে গেল সেখানে গিয়ে দেখল কয়েকজন টিচার মিড ডে মিলের ঘরে আর কয়েকজন টিচার পাশের রুমে মডেল অ্যাক্টিভিটির উত্তরপত্রজমা নিচ্ছে। রেখা নিজেও উদাসী বাউল মনটাকে সরিয়ে, সেই রুমে বসে পড়ল এবং কাজে মনোনিবেশ করল।'