১১ ডিসেম্বর ২০২১

শান্তা কামালী৩৭




বনফুল
পর্ব  (৩৭)
শান্তা কামালী

ডাক্তারের পাঠানো ভদ্রলোক টি ঘরে এসে প্রথমেই দেখে নিলেন সিলিংয়ে হুক লাগানো আছে কি-না। তারপর একটা টেবিল এনে তার ওপর উঠে সেই হুকের সাথে একটা কপিকল বেঁধে দিয়ে, একটা রশি কপি কলের ভেতর দিয়ে টেনে এনে জুঁই য়ের বিছানার মাথার দিকে জানালার গ্রিলের সাথে আরেকটা কপিকল বেঁধে তার ভেতর দিয়ে এনে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিলেন। 
এরপর একটা স্টিলের তৈরি অর্ধচন্দ্রাকার মতো যন্ত্র, যার ভেতর দিকে নরম প্যাড লাগানো, সেটা জুঁই য়ের ঘাড়ে পেছনের দিকে রেখে একটা তিতলী লাগানো স্ক্রু কে আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে ঘাড় এবং দুটো থুতনিতে  সাবধানে আলতো করে লাগিয়ে দিলেন।তারপর মাথার ওপর থেকে ঝোলানো রশিটার একটা মাথা যন্ত্র টার সাথে বাঁধলেন। রশির অন্য মাথা টা য় একটা বঁড়শী র মতো হুক বেঁধে দিয়ে,ব্যাগ থেকে কয়েকটা লোহার চাকতি বের করলেন।সেগুলো কোনটা আধ পাউন্ড, কোনটা এক পাউন্ড ওজনের। সেই হুকটায় প্রথমে একটা এক পাউন্ডের চাকতি ঝুলিয়ে দিলেন। 
জুঁই তার খাটের ওপর পিঠের দিকে বালিশ দিয়ে সোজা হয়ে বসে আছে, আর ট্র‍্যাকশানের টানে ঘাড়টা সোজা হয়ে উপরের দিকে টান খেয়ে আছে। ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, ব্যথাটা কি একটু আরাম হলো। জুঁই বললো, হ্যাঁ অনেক টা, বুকের ভেতরের চাপ টা একটু কম লাগছে। 
ভদ্রলোক বললেন, এরপর আর আপনাদেরকে বেশি কিছু করতে হবে না। এটা এক পাউন্ড দিয়েছি।এরকম ভাবে পাঁচ মিনিট থাকার পরে একটা আধ পাউন্ড ওজন হুকে জুড়ে দেবেন,তার পাঁচ মিনিট পরে আধ পাউন্ড টা নামিয়ে আরেকটা এক পাউন্ড  জুড়ে দেবেন। প্রথম দিন এই ভাবে ই চলুক।তারপর উনি কেমন বোধ করছেন, ফোনে জানাবেন, আমি তখন যে ভাবে বলবো, সেভাবে ওজন বাড়াবেন। এখানে মোট পাঁচ পাউন্ড আছে। দুটো আধ পাউন্ড, চারটে এক পাউন্ড। আর এইভাবে পনেরো মিনিট পরে ঘাড়ের কাছে এই স্ক্রু টা আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে ঢিলা করে, এই ক্লাম্প টা কে ঘাড় থেকে খুলে নেবেন। দশ মিনিট বিরতি দিয়ে আবারও পনেরো মিনিট। তারপর উনি উঠে দাঁড়িয়ে নিজের দুটো হাত ঘাড়ে দিয়ে আঙুলের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে চেপে ধরে ঘাড় টা দশবার ডানে,দশবার বামে ঘোরাবেন। এটা দুবেলা ই আধা ঘন্টা সময় নিয়ে করতে হবে,মনে রাখবেন মাঝে দশ মিনিটের বিরতি দেবেন। এরপর বসে থাকতে পারে, বা চিৎ হয়ে শুয়েও থাকতে পারেন। আর হ্যাঁ, ডাক্তার বাবু বলে দিয়েছেন, ঔষধ গুলো ঠিক সময় মতো খেতে হবে। ব্যথার মলম টা ঘষে ঘষে লাগাবেন না।আলতো করে বুলিয়ে লাগিয়ে ব্যথার স্থান টা খোলা রাখবেন, যাতে হাওয়ায় মলম টা শুকোতে পারে।
ভদ্রলোক চলে গেলেন। জুঁই য়ের আব্বু পলাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই যে ম্যানেজমেন্টের ছাত্র, ঠিক মতো বুঝে নিয়েছো তো,তোমার ম্যানেজমেন্টের কোর্স তোমাকে ই করতে হবে। আমরা সময় দিতে পারবো না।দুবেলা হাজিরা চাই। 
পলাশ লজ্জা পেলো।চুপ করে  ঘাড় নেড়ে সায় দিলো।
জুঁই য়ের আম্মু সাথে সাথে বললেন, আর দুবেলা র নাস্তা টা একসাথে এখানে ই করবে কিন্তু বাবা।না বলতে পারবে না। পলাশ আরো লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। ওনারা নিচে চলে গেলেন।
জুঁই মুচকি হেসে বললো, ঠিক  হয়েছে, বেশ হয়েছে। 
পলাশ বললো, কি ঠিক হয়েছে? 
জুঁই বললো, বুঝতে পারছো না,বাবুমশাই? 
পলাশ বললো,হুমম,বুঝলাম।
কি বুঝলে? 
এখন থেকে দু'বেলা ডিউটি হয়ে গেলো। 
হুম, আমিও দু'বেলা আরো বেশি করে কাছে পাবো তোমাকে। চিন্তা নেই দু'বেলা ই তোমার জন্য গাড়ি থাকবে। তবে, দুঃখ কি জানো?
কি? পলাশ জানতে চায়। 
জুঁই রহস্য করে বলে, দুঃখ একটা ই,গাড়িতে তোমার পাশে আমি থাকবো না।একটা কাজ করো,একটা বড়সড় বার্বি ডল কিনে পাশে বসিয়ে রেখো।কিন্তু তার হাতে কিন্তু.......। কিছুক্ষণ থেমে জুঁই আবার বলে চুক চাক কোরো না। বলেই হেসে ফেলে জুঁই । 
পলাশ বলে,দুষ্টুমি হচ্ছে? ওটা আমি করি,না তুমি? আঙ্কেল আন্টি শুনতে পেলে কি হবে বলোতো? 
জুঁই বলে, ওরা যেন জানে না!
কি বললে,জানেন? পলাশ মাথায় হাত দিয়ে ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়ে।


চলবে.....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much