১১ ডিসেম্বর ২০২১

রাবেয়া পারভীন ১০ম পর্ব





স্মৃতির জানালায় 
(১০ম পর্ব) 
রাবেয়া পারভীন




                       এতোক্ষন ধরে একটা কথাও বলেনি শবনম। অন্যান্য দিন মাহ্তাব খেতে বসলে  শবনম জোর করে এটা ওটা পাতে তুলে দিত। মাহতাবের  অন্যমনস্কতা  ভাংগিয়ে দিয়ে  খালাম্মা বললেন  
-কি ব্যাপার মাহতাব  খাচ্চো না কেন ?  শবনম  তুইওতো খাচ্ছিস না,  কি হলো ? 
মাহতাব  তারাতারি বলল 
-খাচ্ছি তো 
খালাম্মা বললেন 
- রাত বেশী হয়ে গেছে তাই ক্ষুধা মরে গেছে। খেতে ভাল লাগছেনা। 
-না না খালাম্মা খুব ভালো রান্না হয়েছে  ভালো লাগছে। কোথায় আর বেশী রাত হল!  আমি তো প্রায়ই  পত্রিকা  অফিস  থেকে  অনেক রাত করে ফিরি,  খেতে খেতে বারোটা বেজে যায়। বেশী রাত করাটা অভ্যাস  হয়ে গেছে। 
খালাম্মা হাসলেন।  বললেন
- এবার  তাহলে  একটা বিয়ে কর বাবা ।  বউ ঘরে আন।  জীবনটাকে একটু গুছিয়ে নেবার চেষ্টা কর
খালাম্মার কথায় মৃদু হেসে মাথা নীচু করে খেতে লাগলো মাহতাব। বাবলু  শিপলু  একসাথে কোলাহল করে উঠল
- মাহতাব  ভাই সত্যি  এবার একটা ভাবী নিয়ে আসুন, আমরাও মাঝে মাঝে গিয়ে একটু আবদার করতে পারবো
খালাম্মাও স্যারকে উদ্দেশ্য  করে বললেন
- শুনছো , এবার ছেলের জন্য  বউ খোজো,
স্যার। বললেন
- হ্যা ভাবছি
ওদের সবার কথার ফাঁকে  শবনম কখন  উঠে চলে গেছে  মাহতাব  টের পায়নি। হঠাৎ মাথা তুলে দেখে শবনম নেই। ততক্ষনে মাহতাবেরও  খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। সে একটা দ্বীর্ঘশ্বাস  ফেলে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ল।  বেসিনে  হাত ধুয়ে রুমালে হাত মুছতে  লাগলো। খালাম্মাও খাওয়া শেষ করে বেসিনের সামনে  মাহতাবের পাশে এসে দাঁড়ালেন। প্রায় ফিস ফিস করে  মাহতাবের দিকে তাকিয়ে বললেন
- মাহতাব যাওতো বাবা,  শবনমের কি হয়েছে একটু দেখ ,  দুদিন ধরেই দেখছি মন খারাপ করে আছে। ওকে জিজ্ঞেস করো,  ওর কি  এই বিয়েতে মত নেই ?  
হাত মুছে শবনমের। ঘরে এলো মাহতাব।  হাটুতে মুখ গুজে  খাটের  এক কোনে  চুপচাপ বসে রয়েছে শবনম। খাটের অপর প্রান্তে বসে মাহতাব ডাকল
- শবনম,  এই শবনম  কি হয়েছে তোমার ?  
হাটু থেকে মুখ তুলে  মাহতাবের দিকে তাকালো শবনম। অবাক হয়ে মাহতাব দেখল শবনমের। কান্নাভেজা মুখ। বোকার মত  আবার  প্রশ্ন করল
- কি হয়েছে তোমার ?  কা্ঁদছো  কেন ?
ওড়নার  আঁচলে চোখ মুছে  জ্বলে উঠল  শবনম
-লজ্জা করেনা তোমার  এ কথা জিজ্ঞেস করতে ?
মুহূর্তের মধ্যে চুপসে গেল মাহতাব। বুঝতে  পারলোনা কেন শবনম তার সাথে রাগ করছে। কি অপরাধ তার। তাই। আবার বলল
- কেন। আমি কি করেছি ?
বুঝতে যখন পারছোনা  তখন। এখানে  এসেছো কেন।?  কে আসতে বলেছে ?  ও  আমার হাতে  অন্য  লোকে কেমন করে আংটি পরিয়ে  দেয়  তাই দেখে মজা করতে  এসেছো ?
- ছিঃ  শবনম  কি বলছো এসব।?
- ঠিকই বলেছি।  আমার যেদিন। বিয়ে হবে  সেদিন যদি  এই বাড়ী মুখি হও। তো  তোমার কপালে অনেক দুঃখ  আছে।
বলেই। আবার ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল শবনম। হঠাৎ একটা দমকা বাতাসে যেন  মাহতাবের। মনের বন্ধ দুয়ার খুলে গেল। শবনমের ঐ কান্নাভেজা মুখ মাহতাবের। মনের পর্দা  সরিয়ে দিল। ছিঃ ছিঃ সে এতো  বোকা !  কেন এতোদিন বুঝেনি ? শবনমের। মত মেয়ে  তার মত এক সাধারণ  যুবক কে যে ভালোবাসতে পারে  এ যেন কল্পনারও অতিত। এতোদিন  নিরবে নিভৃতে সে একাকি শুধু শবনমকে ভালোবেসেছে। বিনিময়ে কিছুই আশা করেনি  শুধু চেয়েছে  শবনম  ভালো থাক  সুখি হোক। ওর মত মেয়ের যোগ্য  কারো কাছেই সে সমর্পিত  হোক। শবনম  যেন এক দামী হীরের ফুল।  এই হীরার টুকরো  সাজিয়ে রাখার মত জায়গা তার কোথায়।?  তাই এতোদিন সে কোন দুঃসাহস দেখায় নি । কত রাত কেটে গেছে নির্ঘুম শুধু শবনমকে  ভেবে। সেইসব  নিস্তব্ধ  রাতের  বেদনার কথা তো  শবনমকে বলা যাবেনা। শবনমের জন্য ই  শবনমকে  আড়াল। করেছিলো সে। তবে কি তার মত শবনমও  তাকে এতোদিন  ভালোবেসেছে ?  মাহতাবের যেন  বিশ্বাস  হতে চায়না।



চলবে......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much