২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

কবি সৌমিত বসু'র কবিতা


বৃষ্টিকথা


আগুন মুখে করে উঠে আসছি

আর মনে পড়ছে জলপরীদের কথা

এবার থেকে কাদের নিশ্বাস লেগে

অস্পষ্ট হবে জানালার কাঁচ?

ভাত বেড়ে রোদ আড়াল করতে

কেই বা মেলে দেবে সমস্ত প্রশ্রয়?

নীচে পাতা পড়ে স্তুপ,

তার ওপর ঝ'রে পড়া জলে শুঁড় বুলিয়ে

দেখে নিচ্ছে পিঁপড়ের দল,

ক্রমাগত চুরি হ'তে গিয়ে

জলপরীদের হাতে ক্রমশই ছোট হয়ে যাচ্ছি।


এক একটা সময় আসে, যখন জানালার পাশে বসে থাকা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না।পোকামাকড়দের সাথে বন্ধুত্ব করতে গেলে জিভ আটকে যায়, হাত ধুতে গেলেনখ বেয়ে নেমে আসে তাচ্ছিল্যের কালো

যে অন্ধকার একদিন আমাদের সঙ্গী ছিলো আজ বড়ো বড়ো পা ফেলে সে একাই এগিয়ে চলেছে, ভীরু পাতারা এক এক করে গাছের নীচ থেকে তুলে নিচ্ছে ডিভিডেন্ড, আমরা অসহায়।


মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জলপরীদের কথা একবার জেনে নিতে চাই

মাথার ভেতর জড়িয়ে ধরেছে যে মুদ্রাদোষ,এইমাত্র সে আকাশ পেরিয়ে শুতে যাবে।


     অলঙ্করণ : সানি সরকার

রেহানা বীথি 'র গল্প


 জাল


এটুকু থাক। 

রেখে দিলাম ছেঁড়া পৃষ্ঠার এই অংশটুকু। ওটুকুতে জমা আছে অন্তিম রহস্যের গন্ধ। 

যে মধ্যাহ্ন থেকে বেরিয়ে এসেছিল মাকড়সার জাল, জালে জালে রহস্য বুনে থুতনিতে ভর দিয়ে বড় ভাবনায় পড়ে গেছে সে। 

আমি জানতে চাইনি, 'এত ভাবনা কেন?'

ভাবুক। মাঝে মাঝে ভাবনার প্রয়োজন আছে। ভাবনার ভাবে মন উদাস হয়। 

উদার হয়। 


    অলঙ্করণ : প্রীতি দেব


নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে আমাদের যত আয়োজন, ছেঁড়া পৃষ্ঠার তা নেই। ওর অক্ষরের রহস্যময়তা উৎসুক করে আমাদের; এই প্রাপ্তি সম্পর্কেও নেই কোনও মস্তিষ্কবেদনা। একটি গোটা পৃষ্ঠা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা কিনা  জানি না, তবে কখনও কখনও বিচ্ছিন্ন হওয়ার মধ্যেও আনন্দের অনুষঙ্গ থাকে। কে জানে, এই আনন্দ তাকে আলোড়িত করেছে কিনা! হয়তো করেছে, হয়তো করেনি। রহস্যের আবরণে থাক না কিছু বার্তা।

উদঘাটনে মরিয়া কেন হতে হবে?

আমিনা তাবাসসুম এর দুটি কবিতা


আবহাওয়ার চাদর টেনে



এখনও নদীর জলে

বিনম্র ছায়া নেমে আসে


তোমার অমোঘ বৃষ্টির মতো

এই হৃদয়

        ভালোবাসা

                    স্বপ্ন


আবহাওয়ার চাদর টেনে

ঢেকে রাখি হাজার বছরের পুরনো সম্পর্ক


কেবল তুমি জানো

আর যে পাতার ওপর বৃষ্টির ফোঁটা এসে পড়ে

তার খতিয়ান নম্বরের বুকপকেট!



                             অলঙ্করণ : রৌদ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

অনাবশ্যকীয় দ্বিপ্রহর 


এ এক অনাবশ্যকীয় দ্বিপ্রহর

      শব্দ খুঁড়িয়ে চলে

            ঘাড়ের আঁচিল থেকে 

                         বুক পকেটে...


না কোনো বন্ধকী কথা

না কোনো নিছক আদিখ্যেতা

     পাউরুটি

            চাউমিন

                   চিলি সস

একান্নবর্তী কবিতার ঘর সংসার।


যেভাবে দুঃখ মোছে সাবান

আর-

বিনষ্ট পেয়ারার মধু চেটেপুটে খায়

                 কাঠবেড়ালীর সহধর্মিণী


ততটা সহজতা নিয়ে নিয়ম ও মধ্যাহ্ন

ততটা আশা রাখা 

       দেহতত্ত্ব বুকের খাঁজে ।

কাজী মোছা শামীমা আক্তার




ইমানের দাওয়াত


এই সংসারে অহমিকার

নেইতো কোন কিছু,

স্রষ্টার তরে তুলে দুই হাত

মাথা করো নিচু।


পাঁচ কলেমা নামাজ রোজা

নাহি ভুলো কাজে,

ইবাদতে সামিল থেকো

পাঁচ ওয়াক্তের মাঝে। 


দীন দুনিয়ার মোহ মায়ায়

থেকো নাকো ভুলে।

পাপ পুণ্যেরই  হিসাব হবে

আমলনামার মূলে।


রোজ হাশরের ময়দানেতে

কেউ থাকবে না সহায়,

সাফায়াত না করলে নবী

নাই যে বাঁচার  উপায়।


সময় থাকতে আমলনামা 

পুণ্যে ভারী করো,

আল্লাহ রাসূল হাদীস কোরআন 

বুকে আঁকড়ে ধরো।

মমতা রায়চৌধুরী'র উপন্যাস "টানাপোড়েন" ৬

অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করবার মতো আকর্ষণীয়  মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন" পড়ুন ও অপরকে পড়তে সহযোগিতা করুন  



 

                       উপন্যাস-টানাপোড়েন (পর্ব-)

                                                     দ্বিধা


আজকাল বুম্বা বেশ চুপচাপ হয়ে গেছে।  স্বতঃস্ফূর্তভাব পরবর্তী লক্ষ্য করা যায় না। আগে খাবার টেবিলে বসে অনর্গল দাদু ঠাকুমার সাথে যেত। আমি তোমার সেই রূপকথার গল্পটা বল না রাজকন্যাকে পাতালপুরীতে নিয়ে গেল দৈত্যরা এসে.. তারপর? ঠাম্মি হেসে বলেন"না দাদু ভাই, আর গল্প নয় এখন তোমার পড়ার সময় তাড়াতাড়ি খেয়ে ওঠো। পড়ার পরে তোমাকে গল্প শোনাবো কেমন?

বুম্বা ''ঠিক আছে ঠাম্মি  ।তাহলে কিন্তু দুটো গল্প? বলেই তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে ,পড়তে বসে যায়।

 খাবার টেবিলে বসে ঠাকুরমা দাদু নাতির এই সম্পর্ক বৌমা মানতে পারে না। ভাবে তার ছেলের মাথাটা চিবোচ্ছে এই বুড়ো বুড়ি।কাজেই কি করে এদের হাত থেকে তার ছেলেকে রক্ষা করা যায় তার প্লান আটতে থাকন। ছেলে সুধাময় বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে ছেলের কান ভারি করা হয়। মাঝেমধ্যেই ছেলে-বৌমার মধ্যে কটা কথা কাটাকাটি হয়। একদিন তো বৌমার কথাতেই স্পষ্ট হলো বুম্বা ,এরপর তো তোমাকে খাবার টেবিলে একা একাই খাবার অভ্যাস করতে হবে তখন কোথায় গল্প পাবে ?

বুম্বা, ঠাকুমা -দাদুর দিকে তাকিয়ে । সুরূপা লক্ষ্য করেই আমল না দিয়ে বলে  'নাও ।অত বায়না করো না।'

প্রভাদেবী বলেন 'কি এমন বায়না করে দাদুভাই ।দু' একটা গল্প শুনতে চায় ।

 বৌমা 'হ্যাঁ আপনারা ওই আস্কারা দিয়ে দিয়েই ওর মাথাটা খাচ্ছেন।'

প্রভাদেবী আর কোন কথা বাড়ান না। 

সদানন্দ বাবু নিজের স্ত্রী প্রভাদেবীকে বলেন  'ছাড়ো না, ওদের সন্তান। ওরা যেভাবে মানুষ করতে চায় করতে দাও। 

মাঝেমধ্যেই নাতি বুম্বা পড়ার ফাঁকে ঠাকুমা- দাদুর ঘরে ঢুকে পড়ে ।এসেই ঠাকুমার গলা জড়িয়ে ধরে ।ছোট ছোট দুই হাত ধরে যখন গলা জড়িয়ে ধরে প্রভাদেবীর ।প্রভাদেবী যেন স্বর্গ সুখ পান। প্রভাদেবী আদরের সুরে সঙ্গে বলেন ' কি দাদুভাই। কি মতলব তোমার'?

বুম্বা -কানের কাছে এসে বলে( আবদার করে) 'ঠাম্মি আমাকে কিন্তু তিলের নাড়ু খাওয়াবে? '

প্রভাদেবী 'এই কথা ।খাওয়াবো দাদুভাই'। 

দরজার কাছে একটু তাকিয়ে থেকে আবার ছুটে এসে ঠাম্মিকে বলে -'মাকে কিন্তু ব'লো না।'

প্রভাদেবী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। 

তখনি ছুটে চলে যায় পড়ার ঘরে। সেদিন তো হাতেনাতে ধরা পড়ে গেছে বুম্বা ।কি মারটাই না মারলে ওর মা। 

প্রভাদেবী ছুটে এসে বলেন-'বৌমা এত মারছো কেন?'

বৌমা বলেন-'দেখুন আমার ছেলেকে শাসন করার সময় আপনি এখানে আসবেন না। একেতেই আপনাদের আশকারাতে আমার ছেলের মাথাটা যাচ্ছে।'

প্রভাদেবী ঘরে চলে আসেন‌ চোখের জল ফেলেন।

সদানন্দ বাবু প্রভাদেবীর কাছে এসে তাঁকে সান্ত্বনা দেন আর বলেন আজকাল দিন পাল্টে গেছে প্রভা ।আজকাল বয়জ্যেষ্ঠদের মতামতের কোনো প্রয়োজন নেই এদের। ওদের ছেলে যেভাবে মানুষ করতে চায় ওদের করতে দাও। কষ্ট পেওনা। 

সুধাময় বাড়িতে আসলেই শুরু হল তুমুল ঝগড়া। শেষ পর্যন্ত সুধাময়কে স্ত্রীর কাছে হার মানতে হলো। ওদের ফ্ল্যাট কেনাই ছিল। শুধু মাত্র সুধাময়ের মনে একটা দ্বিধা তৈরি হয়েছিল ,বাবা -মাকে রেখে কি করে ফ্ল্যাটে যাবে? কিন্তু ছেলের কথা ভেবে আজকে তাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেই হলো। তাই মা -বাবার রুমে এসে জানিয়ে দিয়ে গেল আগামী ৭দিনের মধ্যে তারা কলকাতার ফ্ল্যাটে শিফট করছে। 

প্রভাদেবী বলেন  'হ্যাঁ তোদের সন্তানকে সঠিকভাবে মানুষ করবি ,তোদের তো ফ্ল্যাটে যেতেই হবে। তবে একটা অনুরোধ বাবা । নাতিকে আমাদের কাছে মাঝে মাঝে নিয়ে আসিস। 

সুধাময় বলে "ঠিক আছে মা।"

এত তাড়াতাড়ি মা বা-বা মেনে নেবেন ,সুধাময়এর ও কল্পনার অতীত ছিল। সুধাময় এর আর কোন বাঁধা রইলো না। শেষ পর্যন্ত সুরূপার জয় হলো। 

কিন্তুএখানে এসেই সেই সমস্যাটা আরো বেশি করে দেখা দিল। ছেলে বুম্বা দিনকে দিন মনমরা হয়ে যাচ্ছে। লেখা পড়ায়  মন নেই। সুধাময় একদিন ছুটির দিন দেখে বাবা-মায়ের কাছে ছেলেকে নিয়ে আসলো। কিন্তু সুরূপা আসলো না। আগে থেকে বলেই রেখেছিল সুধাময় মাকে ফোন করে। তাই ছেলে নাতির পছন্দমত সব খাবার বানিয়েছিলেন প্রভাদেবী। বুম্বা ঠাকুমা দাদুর কাছে এসে আগের মত সতেজ হয়ে উঠলো। এরমধ্যে সুধাময়ের মনের  মেয়ে মোমবাতি এসেছে বলে দু'জনে উঠোনে খেলতে নেমে গেল। আর ঠাম্মির কাছ থেকে তিলের নাড়ু নিয়ে খুশিতে ডগোমগো হলো। বুম্বার আনন্দ যেন দ্বিগুন বেড়ে গেল।সুধাময় ভাবতে লাগলো এ বাড়িতে এসে বুম্বাকে আগের মত দেখতে পেয়ে সুধাময় খুব খুশি  হল। কিন্তু মা -বাবাকে মুখ ফুটে বলতে পারল না। ফিরে যাবার সময় বুম্বার সে কি কান্না। শুধু বাবাকে বলতে লাগলো ' বাপি ঠাম্মি দাদুকে নিয়ে চল না কলকাতার ফ্ল্যাটে? সুধাময় ছেলেকে সান্তনা দেবার জন্য বলল পরের বার এসে নিয়ে যাবো ।আসলে সুধাময় এর ভেতরে দ্বিধা তৈরি হয়েছে ।সেটা যে তৈরি করেছে তার স্ত্রী সুরূপা। যদি কলকাতার ফ্ল্যাটে তার বাবা-মাকে নিয়ে আসে তাহলে সুরূপা সঙ্গে সুধাময়ের তুমুল ঝগড়া হবে। তার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে চায় না। সুধাময় সে কথাটা তার বাবা-মাকে খুলে বলতে পারে নি ।তাই ঠিক করেছে এবার থেকে একটু কম আসবে মা-বাবার কাছে। যাবার সময় যতদূর দেখা যায় বুম্বা দূর থেকে তাকিয়ে থাকে তার ঠাকুমা দাদুর দিকে। দাদু ঠাকুমা হাত নেড়ে নেড়ে বলতে থাকে দাদুভাই পরের রবিবার এসো। আমি তোমার জন্য তিলের নাড়ু আর নতুন একটা গল্প বলবো। বুম্বা খুশি হয়ে চলে যায়। এবার বাড়িতে গিয়ে ভালো করে পড়াশোনা করতে থাকে আর দিন গুনতে থাকে রবিবারের। শনিবার দিন রাত থেকে ওর ভেতরে উত্তেজনা দাদু -ঠাকুমার কাছে যাবে বলে। কিন্তু পরের দিন রবিবার যাবার সময় হলেও যখন তার বাবা তাকে নিয়ে যায় না ।এমনকি ও ঠাকু মা ফোন করলেও যখন ফোন ধরতে দেয়া হয় না ।তখন সে অঝোরে কাঁদতে থাকে। সুরূপা এসে ছেলেকে ভালো করে ধমকায় আর বলে এবার থেকে আর তোমার ওখানে যাওয়া হবেনা। তোমায় শুধু পড়াশোনা করতে হবে ভালো করে এই কথাটা মাথায় নিয়ে নাও। ভালো স্কুলে ভর্তি হয়েছ। বুম্বা জানে এটা কিসের ভালো স্কুল যেখানে দাদু ঠাকুমা কে নিয়ে কোন কথাই কেউ বলে না। ও যদি কারো কাছে সে গল্প করতে চাই তারাও সেটা শুনতে চায় না। তারা মোবাইলের নানা গেমস গুলোর কথা নিয়ে আলোচনা করতে থাকে। এরমধ্যে বুম্বা জানে তাদের ফেলে আসা গ্রামের ঠাকুমার গায়ের গন্ধ ঠাকুমার হাতের তৈরি নাড়ুর অসাধারণ স্বাদ ।ঠাকুমা -দাদুর বলা গল্প সমস্ত যেন নগন্য বলে মনে হয় শহরের পড়ুয়াদের কাছে। শহরের দামি দামি রেস্তোরাঁর খাবার এর কাছে বুম্বার ঠাকুমার নগণ্য তিলের নাড়ুর মূল্য কিসের?বুম্বার ভেতরে যে ওলট পালট হচ্ছে। তার ভেতরে যে কতটা কষ্ট হচ্ছে সে খবর রাখার প্রয়োজন করে নি কেউ ।এমন কি ওর বাবা-মা ও। আজকে বুম্বা নিজের ভেতরে গুমড়ে গুমড়ে ওঠা কষ্টটাকে চাপা দেওয়ার জন্য। সে ভেবে পায়না শহরের মানুষগুলো এত নিষ্ঠুর কেন। এই শহর যেমন সবুজহীন, এমনি মানুষগুলো নিষ্ঠুর। সে ফিরে পেতে চায় তারা গ্রামবাংলার সবুজ গাছপালার স্পর্শ বেড়ে ওঠা গ্রামের  জয় -নিতাইদের সহজ-সরল সান্নিধ্য, ফিরে পেতে চায় ঠাকুমা দাদুর স্নেহ ভরা দুটি শীতল হাতের স্পর্শ। তাই একদিন স্কুল ছুটির শেষে সে নিজেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ফেরার সময় পার্কের কাছে একটি পুকুরে ধারে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়ে অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করতে থাকে তারপর হাতে একটা নুড়ি তুলে নিয়ে ছুড়ে মারে জলে। সে ভাবতে থাকে সে যে চুপিচুপি মশারি সরিয়ে তার ঠাকুমার কাছে গিয়ে শুয়ে পড়তো তারপর তার ঠাকুমা তাকে কাছে টেনে ফিসফিস করে বলতো দাদুভাই আজকে কি মতলবে বোম্বা তাকে জড়িয়ে ধরে কত কথাই না বলতো আজকে তার ঠাকুমার গায়ের আশ্চর্য সুন্দর গন্ধ তার কল্পনায় একবুক নিঃশ্বাসে টেনে নিল তার ভেতরের যে কষ্ট সেই কষ্টটা সে কাউকে বাড়িতে গিয়ে শেয়ার করতে পারে না। মা তো শুনতেই চায় না কোনো কথা। সে ভেবে পায়না তার ঠাকুমা দাদু কলকাতার ফ্ল্যাটে আসলে তাদের কি এমন অসুবিধা হতে পারে সে ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে যায় এখানে তার না আছে সঙ্গী সাথী, সে কিছুতেই এই পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারছে না।


মাঝে মাঝেই তার মা ঠাকুমা দাদু সম্পর্কে নানারকম মিথ্যে কথা বলে তার মনটাকে বিষিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে তার মনে দ্বিধা তৈরি করতে বাধ্য করছে তার শিশুমন সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না।



ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৬ ক্রমশ

ঈমাম উদ্দিন



কি মায়ায় বান্দিলে 


না দেখিলে হিয়ার ভিতর করে আনচান   

আমার, কি মায়ায় বান্দিলে 

সোনা চান আমারে,কি মায়ায় বান্দিলে 

সোনার চান।


সকাল সন্ধ্যা না দেখিলে তোরে হয়ে 

যাই দিওয়ানা,হৃদ গগনে তুমি আমার 

চান্দেরও জোছনা মন যারে চায় সেই 

তুমি আমার জানের জান, কি মায়ায় 

বান্দিলে সোনার চান,না দেখি হিয়ার 

ভিতর করে আনচান আমার

কি মায়ায় বান্দিলে সোনার চান আমারে 

কি মায়ায় বান্দিলে সোনার চান।


এক পলক দেখিয়া তোরে জুড়ায় 

নারে মন,দেখে দেখে সাধ মিটাবো 

অনন্ত জনম,শীতল হয় দেখিলে  তোমায়   

উতলা পরান,কি মায়ায় বান্দিলে

সোনার চান, না দেখিলে হিয়ার ভিতর 

করে আনচান আমার,কি মায়ায় বান্দিলে 

সোনার চান আমারে।


তুমি আমার হৃদপিঞ্জরে পরান পাখি 

ময়না মাতাল ঈমাম কয় তোমার প্রেমে  

জগত করলাম বায়না 

হাসি মুখে সইবো আমি শত অপমান 

কি মায়ায় বান্দিলে সোনার চান 

না দেখিলে হিয়ার ভিতর করে আনচান 

কি মায়ায় বান্দিলে সোনার চান আমারে 

কি মায়ায় বান্দিলে সোনার চান।

মতিউর রহমান আরব


 প্রজাপতি


প্রজাপতি, তুমি এলেই যখন তবে চুপ করে চলে গেলে কেন?

তোমার গায়ের গন্ধ ছড়িয়ে আছে এখনো আমার  বসার চেয়ারটাই। 

নিশ্চয় তুমি লম্বা পায়াওয়ালা কোঁকড়ানো হাতোলের চেয়ারটাই খানিক ক্ষণ বসেছিলে।

নিশ্চয় তুমি আমার শুবার বিছানটাই একটু গা এলিয়েছিলে।


তোমার এলোচুলের মেহেদী গন্ধের তীব্রতা বালিশে

হাতের নৈপূন্যতা লেগে আছে চাদরে, আলনাতে, জুতার বাক্সে।

কি চমৎকার সাজিয়েছো ঘরটা!


সত্যি তুমি পারো প্রজাপতি! 

আমি অনন্তকাল তোমার আশায় বুদ হয়ে থাকি

উদোম দুপুর চেয়ে থাকি

তুমি আসবে বলে।

অথচ তুমি এলে নির্জনে, আমি নেই

আমার অনুপস্থিতি তোমার কি ভীষণ প্রিয় 

নাকি লজ্জা নাকি অন্য কিছু? 


আমি সংসার, ধর্ম, সমাজ, প্রেম-পিরিতি বুঝিনা

আমি এক উড়নচণ্ডী ভবঘুরে, উদ্ভট বটে।

যেটুকু মানি সে শুধু তোমার জন্য।


ফিরে এসেছি জট বাঁধা আওলা চুলের বাউলা থেকে 

সে তো তোমারই টানে, তোমারই ছোঁয়াতে।


তুমি আমাকে শুদ্ধ করেছো, ধন্য করেছো

দিয়েছো ভালোবাসা 

তুমি হীনা নিঃস্ব আমি 

তুমিই ভরসা।

অনির্বাণ বসাক সোমনাথ এর গল্প


 


                           অপূর্ব ভালোবাসা 


                                           চিঠিটা পার্থ ঠিকিইপায়।কিন্তু পড়ে না কারন সে খুব ব‍্যাস্ত থাকে এখন।মানুষের চিঠি পড়ে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না,তাই সেই খাম বন্দী করেই বইয়ের পাতার ভাজে রেখে দেয়।

একদিন রাতে হঠাৎ পার্থের মন কেমন কেমন করতে লাগল,অচেনা এক অস্থিরতায় ভূগতে থাকে। হঠাৎ মনে পড়ে ফিওনার দেয়া সেই চিঠিটার কথা।মেয়েটা এমন পাগল কেন?ফোনে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি তাই এখন চিঠি দিয়ে জ্বালাচ্ছে উফফ! এতো অপমান এর পরও কোন লজ্জা নেই।কবে যে এর থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাবো।ভাবতে ভাবতে চিঠিটা খোলে পার্থ।


          অলঙ্করণ : সোমাশ্রী সাহা


প্রিয়,

অনেকদিন পর তোমায় লিখতে বসেছি।বসেছি বললে ভুল হবে।হেলান দিয়ে আছি।বসতে এখন খুব কষ্ট হয়।তোমাকে কিছু বলার ছিল,আমি আর কিছু দিন পর তারা হয়ে যাব। কিন্তু আমি তো আরও কিছুদিন আকাশের নিচে থাকতে চাই।তুমি কিছু করো না Plz আমি বাচঁতে চাই প্রিয় তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখি জানো?আমি প্রায়ই কল্পনা করতাম আমাদের প্রথম দেখায় কি হবে,তোমার বাইকের পিছনে বসে কাধে হাত রাখবো রাখবো করে আর রাখা হল না,তুমি হঠাৎ ব্রেক করবে।তারপর আমি শক্ত করে তোমার কাধে আমার হাত দিয়ে চেপে ধরবো।আর ছাড়বোনা।তারপর যখন পড়ন্ত বিকেল এ পাশাপাশি হাটবো,বাতাসে আমার চুল গুলো বাধ ভেঙে উড়তে থাকবে।

তুমি এক দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রবে। আমার যেই চুলগুলো দেখে বলতে কাকের বাসা,সেই চুলের প্রেমে পড়বে তুমি।চোখ সড়াতে পারবে না,আমি তখন লজ্জায় লাল হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকব।তুমি আমার চুলের দিকে তাকিয়ে হাটতে থাকবে হঠাৎ সামনে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খাবে। তখন আমি হেসে কুটি কুটি হবো।তুমি আমার হাসির রহস্য খুজতে খুজতে হাড়িয়ে যাবে আমার মাঝে। হঠাৎ হাসি থামিয়ে তোমার চোখের মাঝে হাড়িয়ে যাব আমিও।

আহ্ তোমার সেই দৃষ্টি! যেই দৃষ্টি তে পরেআমাকে ভালোবাসতে বাধ‍্য করেছ।এর পর গোধুলিতে কি করব জানো? সমুদ্রের তীরে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখবো,লাল টুকটুকে রৌদ্রটাকে তুমি আমার হাতে ধরিয়ে দিবে।পেছন থেকে আমার হাতের নিচে তোমার হাত রাখবে আমি লজ্জায় লাল হবো,তুমি আর আমি মিলে একসাথে রৌদ্রটাকে হাতে নেব।

কিন্তু বড্ডো  নিষ্ঠুর সময়। আমার স্বপ্ন গুলো এরা পূরণ হতে দিতে চায় না । Plz তুমি যেখানেই থাকো ফিরে এসো। আসার সময় একটা খাঁচা নিয়ে আসবে,সেই খাঁচায় সময়টাকে বন্দী করে রাখব হুম।। জানো আমার এই ব‍্যাধীর কথা পরিচিত,অর্ধ পরিচিত যে কেউ শুনলেই ছুটে চলে আসে আমাকে একবার দেখতে।এসে দেখে আমি বাচ্চা ছেলের মত বাচ্চাদের সাথে খেলছি।মিছে স্বপ্ন গুলোর মতো মিছে মিছে রাধঁতেছি। আচ্ছা চিঠিটা পাওয়ার পর কি ছুটে এসে বলবে প্রিয় বলে?আসবে কি?

কি দেখবে জানো!আমি সত‍্যি রাধঁতেছি,তোমার জন‍্য খিচুড়ি। মনে পড়ে তোমার?একবার জিঙ্গেস করেছিলে তুমি কি খিচুড়ি রাধঁতে পাড়ো! আমি বলেছিলাম নাতো!কেনো?

তুমি বলেছিলে খেতে ইচ্ছে করছে খুব।তুমি কি জানো,তার কিছু দিনের মধ‍্যেই আমি খিচুড়ি রান্না শিখে নিয়েছিলাম। আমার না খুব অসহায় লাগছে।

তুমি আমার সাহস ছিলে!শুনছো তুমি? আমার সাহস ছিলে তুমি।আমার বড় বড় পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে তোমার কাছে সাহস নিতাম।

মনে পড়ে তোমার,তুমি তখন বারবার আমায় ছেড়ে চলে যেতে চাইতে।আমি যেতে দিতাম না। পরীক্ষার বাহানায় তোমাকে আটকে রাখতাম। কারণ তুমি আমার জীবনে থাকা মানেই সাহস থাকা। কিন্তু আজতো তুমি নেই plz plz ফিরে এসো না!

আমার সাহস হয়ে আবার ফিরে এসো। আমার জন‍্য আসার সময় মনে করে খাঁচাটা নিয়ে আসবে।

সময়টাকে বন্দী করে রাখা খাঁচা নইলে আমি খুব রাগ করব কিন্তু।তোমায় আসতেই হবে,আচ্ছা!

তোমার কি মনে আছে? আমি তোমাকে একটা নামে রাগাতাম,পোকা ডাকতাম তোমায়।তুমি সেই পোকার মত ভাব নিয়ে একটা ছবি তুলেছিলে। আমাকে দেওয়ার পর দেখে খুব হেসে ছিলাম।কবে থেকে যে ওভাবে আর হাসি না! তুমি ফিরলে ঠিক হাসবো।

ও হ‍্যাঁ বলতেই ভুলে গেছি, আমার মাথায় এখন একটা পোকা ঢুকেছে।এই পোকাটা আমায় আর হাসতে দেয় না।এই পোকাটা কষ্ট দেয়।তোমার স্মৃতি গুলো এলোমেলো করে দেয়,পোকাটা ভীষণ দুষ্টু মাথার মধ‍্যে দৌড়ায় শুধু,আমি ধরার আগেই পালায়।

তুমি এসে এটাকে ধরে দিও plz হুম।এটাকেও খাঁচায় বন্দী করে দেবে। তুমি আমার মিষ্টি পোকাটা হয়ে ফিরে এসো plz.........!

জলদি ফিরে এসো। নইলে ভীতু বলে ডাকবো কিন্তু!

এসো একবার,আমার হতে হবে না,শুধু তোমার হাতটা আমার হাতে রাখলেই হবে।

না ফিরলে সত‍্যি তারা হয়ে যাব!!

ইতি

তোমার বউ মণি


চোখ ঝাপসা হয়ে যায় পার্থের!হাত পা থরথর করে কাঁপতে থাকে,এতো কেনো ভালোবাসে মেয়েটা ঊফফ!

কি করব? অনেক খোঁজার পর মিলল ফিওনার নাম্বার ও এটা তো ওর মায়ের নাম্বার,ফিওনার নাম্বারটা মনে নেই।অনেকদিন আগের কথা তো ভুলে গেছি।

ফিওনার মাকে ফোন দিতেই বলে ফিওনা নেই।তোমায় দেখার জন‍্য ছটফট করছিল,আজ সে আকাশের চাঁদ। দুচোখ বয়ে অশ্রু জল ছাড়া আর কিছুই দিলাম না মেয়েটাকে আজ বড়ই অপরাধী আমি।

রাকিব সরকার



 স্বাধীনতা 


স্বাধীনতা  তুমি নাকি, 

            একটি মিষ্টি মধুর  ফুল,

তোমার সুভাষ পেয়ে নাকি

                          সবাই মশগুল?


স্বাধীনতা তুমি নাকি, 

                         সবার মুখের  হাসি 

তোমাকে পেয়ে নাকি,

                        আনন্দিত  বিশ্ব ভারতবাসি?

 

 স্বাধীনতা তুমি নাকি,

                          মিষ্টি জ্যোৎস্না রাত 

  তুমি নাকি অপেক্ষারত 

                     প্রেমিকের দুঃখ উড়ানোর খাত?


স্বাধীনতা তুমি নাকি,

                 সোনালী সকাল বেলা,

 তুমি নাকি  বাদল দিনের 

                    ছেলেবেলার  খেলা?


 স্বাধীনতা তুমি  নাকি, 

                  কবিতার  বিদ্রোহীন ভাষা,

তুমি নাকি সাহিত্য  মহলের 

                      জেগে ওঠার  আশা?


স্বাধীনতা তুমি  নাকি ,

                     অন্ধকারের  আলোর  পথ, 

তুমি নাকি সমস্ত ভারতবাসির 

                     দেশ গড়ার ঐক্যমত।

ghgbg

 vcbcfb

vgggb

 gfbvbb

sdscc

 addsd