অপূর্ব ভালোবাসা
চিঠিটা পার্থ ঠিকিইপায়।কিন্তু পড়ে না কারন সে খুব ব্যাস্ত থাকে এখন।মানুষের চিঠি পড়ে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না,তাই সেই খাম বন্দী করেই বইয়ের পাতার ভাজে রেখে দেয়।
একদিন রাতে হঠাৎ পার্থের মন কেমন কেমন করতে লাগল,অচেনা এক অস্থিরতায় ভূগতে থাকে। হঠাৎ মনে পড়ে ফিওনার দেয়া সেই চিঠিটার কথা।মেয়েটা এমন পাগল কেন?ফোনে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি তাই এখন চিঠি দিয়ে জ্বালাচ্ছে উফফ! এতো অপমান এর পরও কোন লজ্জা নেই।কবে যে এর থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাবো।ভাবতে ভাবতে চিঠিটা খোলে পার্থ।
অলঙ্করণ :
সোমাশ্রী সাহা
প্রিয়,
অনেকদিন পর তোমায় লিখতে বসেছি।বসেছি বললে ভুল হবে।হেলান দিয়ে আছি।বসতে এখন খুব কষ্ট হয়।তোমাকে কিছু বলার ছিল,আমি আর কিছু দিন পর তারা হয়ে যাব। কিন্তু আমি তো আরও কিছুদিন আকাশের নিচে থাকতে চাই।তুমি কিছু করো না Plz আমি বাচঁতে চাই প্রিয় তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখি জানো?আমি প্রায়ই কল্পনা করতাম আমাদের প্রথম দেখায় কি হবে,তোমার বাইকের পিছনে বসে কাধে হাত রাখবো রাখবো করে আর রাখা হল না,তুমি হঠাৎ ব্রেক করবে।তারপর আমি শক্ত করে তোমার কাধে আমার হাত দিয়ে চেপে ধরবো।আর ছাড়বোনা।তারপর যখন পড়ন্ত বিকেল এ পাশাপাশি হাটবো,বাতাসে আমার চুল গুলো বাধ ভেঙে উড়তে থাকবে।
তুমি এক দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রবে। আমার যেই চুলগুলো দেখে বলতে কাকের বাসা,সেই চুলের প্রেমে পড়বে তুমি।চোখ সড়াতে পারবে না,আমি তখন লজ্জায় লাল হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকব।তুমি আমার চুলের দিকে তাকিয়ে হাটতে থাকবে হঠাৎ সামনে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খাবে। তখন আমি হেসে কুটি কুটি হবো।তুমি আমার হাসির রহস্য খুজতে খুজতে হাড়িয়ে যাবে আমার মাঝে। হঠাৎ হাসি থামিয়ে তোমার চোখের মাঝে হাড়িয়ে যাব আমিও।
আহ্ তোমার সেই দৃষ্টি! যেই দৃষ্টি তে পরেআমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছ।এর পর গোধুলিতে কি করব জানো? সমুদ্রের তীরে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখবো,লাল টুকটুকে রৌদ্রটাকে তুমি আমার হাতে ধরিয়ে দিবে।পেছন থেকে আমার হাতের নিচে তোমার হাত রাখবে আমি লজ্জায় লাল হবো,তুমি আর আমি মিলে একসাথে রৌদ্রটাকে হাতে নেব।
কিন্তু বড্ডো নিষ্ঠুর সময়। আমার স্বপ্ন গুলো এরা পূরণ হতে দিতে চায় না । Plz তুমি যেখানেই থাকো ফিরে এসো। আসার সময় একটা খাঁচা নিয়ে আসবে,সেই খাঁচায় সময়টাকে বন্দী করে রাখব হুম।। জানো আমার এই ব্যাধীর কথা পরিচিত,অর্ধ পরিচিত যে কেউ শুনলেই ছুটে চলে আসে আমাকে একবার দেখতে।এসে দেখে আমি বাচ্চা ছেলের মত বাচ্চাদের সাথে খেলছি।মিছে স্বপ্ন গুলোর মতো মিছে মিছে রাধঁতেছি। আচ্ছা চিঠিটা পাওয়ার পর কি ছুটে এসে বলবে প্রিয় বলে?আসবে কি?
কি দেখবে জানো!আমি সত্যি রাধঁতেছি,তোমার জন্য খিচুড়ি। মনে পড়ে তোমার?একবার জিঙ্গেস করেছিলে তুমি কি খিচুড়ি রাধঁতে পাড়ো! আমি বলেছিলাম নাতো!কেনো?
তুমি বলেছিলে খেতে ইচ্ছে করছে খুব।তুমি কি জানো,তার কিছু দিনের মধ্যেই আমি খিচুড়ি রান্না শিখে নিয়েছিলাম। আমার না খুব অসহায় লাগছে।
তুমি আমার সাহস ছিলে!শুনছো তুমি? আমার সাহস ছিলে তুমি।আমার বড় বড় পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে তোমার কাছে সাহস নিতাম।
মনে পড়ে তোমার,তুমি তখন বারবার আমায় ছেড়ে চলে যেতে চাইতে।আমি যেতে দিতাম না। পরীক্ষার বাহানায় তোমাকে আটকে রাখতাম। কারণ তুমি আমার জীবনে থাকা মানেই সাহস থাকা। কিন্তু আজতো তুমি নেই plz plz ফিরে এসো না!
আমার সাহস হয়ে আবার ফিরে এসো। আমার জন্য আসার সময় মনে করে খাঁচাটা নিয়ে আসবে।
সময়টাকে বন্দী করে রাখা খাঁচা নইলে আমি খুব রাগ করব কিন্তু।তোমায় আসতেই হবে,আচ্ছা!
তোমার কি মনে আছে? আমি তোমাকে একটা নামে রাগাতাম,পোকা ডাকতাম তোমায়।তুমি সেই পোকার মত ভাব নিয়ে একটা ছবি তুলেছিলে। আমাকে দেওয়ার পর দেখে খুব হেসে ছিলাম।কবে থেকে যে ওভাবে আর হাসি না! তুমি ফিরলে ঠিক হাসবো।
ও হ্যাঁ বলতেই ভুলে গেছি, আমার মাথায় এখন একটা পোকা ঢুকেছে।এই পোকাটা আমায় আর হাসতে দেয় না।এই পোকাটা কষ্ট দেয়।তোমার স্মৃতি গুলো এলোমেলো করে দেয়,পোকাটা ভীষণ দুষ্টু মাথার মধ্যে দৌড়ায় শুধু,আমি ধরার আগেই পালায়।
তুমি এসে এটাকে ধরে দিও plz হুম।এটাকেও খাঁচায় বন্দী করে দেবে। তুমি আমার মিষ্টি পোকাটা হয়ে ফিরে এসো plz.........!
জলদি ফিরে এসো। নইলে ভীতু বলে ডাকবো কিন্তু!
এসো একবার,আমার হতে হবে না,শুধু তোমার হাতটা আমার হাতে রাখলেই হবে।
না ফিরলে সত্যি তারা হয়ে যাব!!
ইতি
তোমার বউ মণি
চোখ ঝাপসা হয়ে যায় পার্থের!হাত পা থরথর করে কাঁপতে থাকে,এতো কেনো ভালোবাসে মেয়েটা ঊফফ!
কি করব? অনেক খোঁজার পর মিলল ফিওনার নাম্বার ও এটা তো ওর মায়ের নাম্বার,ফিওনার নাম্বারটা মনে নেই।অনেকদিন আগের কথা তো ভুলে গেছি।
ফিওনার মাকে ফোন দিতেই বলে ফিওনা নেই।তোমায় দেখার জন্য ছটফট করছিল,আজ সে আকাশের চাঁদ। দুচোখ বয়ে অশ্রু জল ছাড়া আর কিছুই দিলাম না মেয়েটাকে আজ বড়ই অপরাধী আমি।