৩১ ডিসেম্বর ২০২১

কবি এরশাদ এর কবিতা




একটি কবিতার আত্মহুতি


তোমার ভালোবাসার চাতক পাখি কি ঘরে ফিরেছে?
অভূতপূর্ব কোন মায়াজাল থেকে
নিজের অস্তিত্বটুকু বিলীন হয়েছে কবে আমার! 
সেই কবে আমি তোমার পথ থেকে
নিজের পথের বাঁক নিয়েছি।

তুমি কি দেখো
আমার চোখ এখন নির্ঘুম থাকে সারাক্ষন
আমি এখন আজন্ম ক্রিতদাস আমার অমানিশার কোঠরে।
মুষ্টিমেয় ভালোবাসার চৌকাঠ পেরিয়ে
আমার উঠোনে এখন
নির্বাসিত পায়রার চাষ।

তুমি এখনও উড়ন্ত বলাকা হে প্রিয় আমার?
আমি তোমাকে অবাধে দিয়েছিলাম আমার আকাশ
এখন আমার নির্মল মেঘ ফুঁড়ে
শূন্য ক্যানভাস শুধু
আমার রংতুলিতে
ধূসর পালক আর মৃত করোটির বিকট হাসি।

শান্তা কামালী/৫৪ পর্ব 




বনফুল
(৫৪ পর্ব ) 
শান্তা কামালী

অলিউর রহমান বাসায় পৌঁছে লাঞ্চ করে, অনেকটা সময় চিন্তা ভাবনা করছেন কি ভাবে কি করা যায়। বিয়ে বলে কথা.... 
মাঝখানে মাত্র দুটো দিন, হঠাৎ করে মাথায় এলো কাবিনের বিষয়টা! সাথে সাথে অলিউর রহমান সাহেব মনিরুজ্জামান সাহেবকে ফোন করে অহনার একাউন্ট নাম্বার দিতে বলেছেন। মনিরুজ্জামান সাহেব বললেন ঠিক আছে কাল সকালে আমি মেসেজ করে অহনার একাউন্ট নাম্বার দিয়ে দেবো। তারপর অলিউর রহমান সাহেব স্ত্রীর রুমে ঢুকে অহনার জন্য করা বাজার গুলো একটা একটা করে দেখালেন , উনি বুঝতে পারছেন আজ রাহেলা খাতুন সুস্থ থাকলে কতো আনন্দ উল্লাস হতো এই বিয়েতে। 
রাগেলা খাতুন সব বাজার-সদায় দেখে খুব খুশি হলেন, স্বামীকে বললেন আমি ও তোমার মতো এতো সুন্দর জিনিস-পত্র কেনাকাটা করতে পারতাম কি না জানিনা। অলিউর রহমান স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন...।
 রাতে খাওয়ার সময় হয়ে গেল, সৈকত মায়ের খাবার নিয়ে আসতেই সৈকতের বাবা বললেন আজ আমি খাওয়াবো তোমার মাকে। 
ডিনার শেষে ঔষধ খাইয়ে শুইয়ে দিলেন অলিউর রহমান সাহেব...। 
ছেলেকে নিয়ে নিজেও ডিনার শেষ করে আপন মনে কিছুটা সময় পায়চারি করছেন দেখে সৈকত বললেন আব্বু তুমি কি কোনো রকম ডিপ্রেশনে আছো? 
সৈকতের বাবা বললেন তুমি বসো বাবা, তোমার সাথে কথা আছে। সৈকত বসলো, ছেলের কাছাকাছি বাবাও বসেছেন,আস্তে আস্তে  অলিউর রহমান সাহেব সৈকতকে উদ্দেশ্য করে বললো বাবা এ-সব কথা আমার  বলার কথা নয়,কিন্তু  আমাদের সিচুয়েশন বাধ্য করেছে...., তুমি শুনেছো কি না আমি জানিনা।তবুও বলছি শোনো, আগামী বৃহস্পতিবারে তোমার বিয়ে ঠিক করেছি অহনার সাথে... তোমার কোনো রকম আপত্তি নেই তো?  
সৈকত বললো, বাবা  তুমি যা ভালো মনে করবে সেইটা আবার ই করবে, আমার কোনো আপত্তি নেই। এই বলে সৈকত নিজের রুমে চলে গেল।
অলিউর রহমান ও নিজেদের রুমে শুতে গেলেন। 

ওদিকে অহনা জুঁইকে ফোন করে ডিটেইলস বললো, সব শুনে জুঁই বললো অহনা ভালোই হলো অন্তত খালাম্মা তোর হাতের যত্ন-আত্তি পাবে। অহনা বললো জুঁই তুই কি বুধবারে আসবি? জুঁই বললো হুমম দেখেছি.... গুডনাইট বলে জুঁই ফোন কেটে দিয়ে জুঁই পলাশকে ফোন করলো, পলাশ বললো জুঁই আজ যে তুমি আমার ফোনের অপেক্ষা না করেই ফোন করলে? আজ তোমাকে একটা খবর দেওয়ার আছে, কি হয়েছে জুঁই? তোমার শরীর ঠিক আছে তো? আমি একদম ফিট্, অহনা সৈকতের বিয়ে আগামী বৃহস্পতিবারে,আন্টির অবস্থা ভালো না তাই তাড়াহুড়ো করে বিয়ে দিচ্ছেন। পলাশ বললো জুঁই আমার দুর্ভাগ্য দুই মাস পরে হলেই আমি থাকতে পারতাম,জুঁই বললো পলাশ তুমি দুঃখ করো না।
তুমি ফিরে এলে আমরা একসাথে পার্টি দেবো,তখন অনেক অনেক আনন্দ করতে পারবো। তারপরই জুঁই গভীর আবেগে আবদার করে বলে, কবে ফিরে আসবে বলো না,মাই সুইটহার্ট। 


চলবে....

রাবেয়া পারভীন/৫মপর্ব




দুরের বাঁশি 
রাবেয়া পারভীন
 (৫মপর্ব)


অনুমতি পাবার পরে কেবিনের ভিতরে এলেন ডাক্তার  সাথে  গায়ত্রী ।  সেই  দাঁত কেলানো হাঁসি।
-বাহ  একদম ভাল হয়ে গেছেন দেখছি। 
-আজকে  আমাকে রিলিজ দিয়ে দিন  ডক্টর।
-বাড়ী  যাবার  জন্য  খুব ব্যাস্ততা দেখছি !  
কপাল কুঁচকে  ডাক্তারের দিকে তাকালো  লাবন্য । 
আবার সেই দাঁত কেলানো হাঁসি
-ঠিক আছে  রিলিজ করে দিচ্ছি। যে ওষুধ  লিখে দিচ্ছি ঠিকমত খাবেন। ঠান্ডা লাগাবেন  না । ও  আর একটা কথা  আপনার কন্টাক্ট  নাম্বারটা  দিয়ে যান  যাতে মাঝে মাঝে আপনার  স্বাস্থ্যের খোঁজ  খবর নিতে পারি।  মনে মনে দাঁত কড়মড় করলো  লাবন্য । মনে মনে  বলল
- নিকুচি  করি নাম্বারের। 
ডাক্তার চলে যাবার পরপরই  শুভকে ফোন করে লাবন্য।
- হ্যালো  শুভ  আজকে আমি হাসপাতাল থেকে  রিলিজ হচ্ছি। 
খুশি হয়ে উত্তর দিল শুভ
- বাহ। খুব ভাল। সুস্থ  হয়ে বাড়ী ফিরে এসো। খুব চিন্তায় ছিলাম  লাবন্য।   এখন  বেশ ভালো লাগছে।
- শুভ  আমি বাড়ী এলে আমাকে তুমি দেখতে আসবে তো ?  
-  হ্যাঁ  অবশ্যই  দেখতে আসবো। আজকে বাসায় এসো আগামীকাল  তোমার  আর আমার  দেখা হবে। 

বাসায় এসে  আনন্দে  আটখানা  হয়ে যায়  লাবন্য।  আগামী কালটা  যে কখন আসবে। উফ্ !  আর তর সইছেনা । পরের  দিন  সময় কাটছেনা  লাবন্যর। কখন বিকেল হবে  শুভ আসবে । শুভ বলেছে পাঁচটার দিকে আসবে । আয়নার  সামনে  দাঁড়িয়ে  একবার ভাবল  খুব সাজবে। গাঢ় করে চোখে কাজল দিবে  গাঢ় রঙে ঠোঁট রাঙ্গাবে  কপালে বড় একটা লাল টিপ পরবে।  কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে  ভিষন লজ্জা পেল সে। নাহ্ থাক !  এমনিই ভালো। ভাবনার  দোলাচলে দুলছিল  লাবন্য। এমন সময়  শুভ এলো। সেই চিরসুন্দর  মুখের হাসিটি। লাবন্য দু চোখ ভরে দেখতে লাগলো। লাবন্যকে দুহাতে বুকে জড়িয়ে চুমু  খেল। বলল
- বেশ  লাগছে তোমাকে  একটুও অসুস্থ  মনে হচ্ছেনা 
- সত্যি  বলছো? 
-একদম সত্যি ! 
শুভর দৃষ্টি তখন রোমান্টিক । লাবন্যর কপোলে লালিমা। পাগলের মত লাবন্যকে বুকে জড়িয়ে নিল শুভ।  ওর লোমশ বুকে মুখ লুকিয়ে সুখের আবেশে চোখ বুজে এলো লাবন্যর।,,,,,,

তেষ্টায় গলা শুকিয়ে গিয়েছিল লাবন্যর। ঘুম ভেঙে  ধড়ফড় করে  বিছানায়  উঠে  বসল সে  জানলা  দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো  সন্ধা নেমে আসছে। কিন্তু  শুভ কোথায় গেল ?  চিৎকার করে ডাকতে  চাইল, শুভ  তুমি কোথায় ?কোথায় তুমি ?  তবে কি তুমি  মিথ্যে  বলেছিলে আমাকে ?  কেন  বললে ?  তোমার  দেয়া কথা আমার কানে বেজে চলেছে  আমি আসবো  আজকে আমাদের দেখা হবে । ব্যাথিত  চোখে জানলা দিয়ে  বাইরে  তাকিয়ে  রইল লাবন্য। সেই  দুরের বাঁশির সুরটি লাবন্যর  বুকের ভিতরে  করুন হয়ে বেজে চলল।


চলবে....

অলোক কুমার দাস




 বিনয় 



ছিল আমার এক বন্ধু। 
খেলাধুলায় ছিলো দক্ষ। 
কি টেনিস, কি ফুটবল, কি সাঁতার 
আমরা দুজনে সাঁতারে ছিলাম দক্ষ।

হঠাৎ সেদিনটা মনে পড়ে গেল। 
আমাকে বললো “তুই তো গোলকিপার” বল আমি জোরে মারবো,

তুই বুকে ধরতে পারবি না। 
আমি বললাম ‘চ্যালেঞ্জ”। 

বিনয় সুতীব্র জোরে মারলো সর্ট, 
আমি বলটা গ্রীপ করে নিলাম।

বুঝলাম ও অনেক বড়ো হবে। হ্যাঁ ও বড়ো হয়েছিল। মোহনবাগান ক্লাবে খেলেছিল, আজ বিনয় নেই। কিন্তু ওর স্মৃতিটা হৃদয়ে রয়ে গেছে।


শিবনাথ মণ্ডল




কনেটাকে সাজায়ে দে

শিবনাথ মণ্ডল


আজ বাজা মাদল বাজা
কনেটাকে সাজা
বিয়ে বাড়িতে আসবে সবাই 
হবে ভাড়ি মজা।
পাকড়ী মাথায় আসছে বর
চড়ে গরুর গাড়ী
ধামসা মাদল বাজিয়ে তারা
আসছে সারিসারি।
শ‍্যামলা রঙের মেয়ে আমার
নাকে নোলক পরা 
হলুদ শাড়ী অঙ্গে তার
আলতা পায়ে তোঁড়া।
বরের সাথে বর যাত্রী
মাদল বাজায় তালে
হাডিয়ার হাঁড়ি মাথায়
আসছে টলেটলে।
বিয়ে বাড়িতে জুটেছে সবাই 
দুঃখ‍ জ্বালা ভুলে
বরকে সবাই বরণ করে
নাওগো ঘরে তুলে।।

শামীমা আহমেদ /পর্ব ৪৫







শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৪৫)
শামীমা আহমেদ 

পথের দূরত্ব আর যানজট পেরিয়ে শিহাব  বাইকটি জেট বিমানের গতিতে চালিয়ে ওরা প্রায় তিরিশ মিনিটের মধ্যেই পূর্বাচলে পৌছে গেলো। শায়লাকে সাবধানে নামতে বলে খুব সুন্দর একটা যায়গায়  শিহাব বাইকটি থামালো। সামনে একটা বিশাল মাঠ,পাশে জলাশয় আর বড় বড় ঘাস দিয়ে ভরা জায়গাটার চারপাশ  ছোট করে বাউন্ডারী ওয়ালে ঘেরা।নিশ্চয়ই এই প্লট বিক্রয়ের জন্য তৈরি বা ইতিমধ্যে বিক্রয়  হয়ে যাওয়া।  শিহাব সময় নষ্ট না করে কথা বলে উঠলো।
শায়লা,বেশ কিছু জরুরী বিষয় নিয়ে তোমার সাথে কথা বলা প্রয়োজন। তাই এমন কোলাহলমুক্ত একটা যায়গায় এলাম।আমার মনের জমানো কথাগুলো বলতে হলে একা একা আমি এখানে এসে চারপাশের আকাশ বাতাসকে কথাগুলি বলি।ওরা সাক্ষী হয়ে থাকে।আজ তুমিও যা বলবে বলে মনস্থির করেছো এখানে সবকিছু মন খুলে তা বলবে।
শিহাব বলে চললো, জীবনের এক রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি এতদিন ছিলাম।আজ তা পালটে ফেলতে চাইছি আর তা কেবলি আমার প্রতি তোমার এতটা ভালবাসার কারণে। আমাকে নিয়ে তোমার এতটা আবেগ আর ভালোলাগায় আমিও তোমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি। আমার জন্য সেদিন তুমি প্রায় মরতে বসেছিলে। এই বিষয়টা আমাকে ভীষণভাবে আহত করেছে। আমিও তোমাকে, তোমার প্রতি, দিনে দিনে অনেকটা নির্ভরতায়  একটু একটু করে বদলে গেছি।
আর তাইতো বাকী জীবনে তোমাকে পাশে পেতে চাইছি,আমিও পাশে থাকতে চাইছি।
শায়লা,রিশতিনা আমার জীবনে ক্ষনিকের জন্য এসেছিল।ভাগ্য বিড়ম্বিত আমরা দুজন।আমাদের জীবন আর এগোয়নি।তবে সে তার স্মৃতিচিহ্ন রেখে গেছে।আরাফ আমার জীবনের এক অমূল্য সম্পদ হয়ে আছে। এখন জীবনের কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে আরাফকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারি না।
ভীষণ আকুতিভরা দুটি চোখ শায়লার কাছে অনুরোধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
শায়লা শিহাবের দূর্বল জায়গাটা বুঝতে পারলো। শায়লার দেখা শিহাব একটি অনন্য উচ্চতার মানুষ।তার ভাবনা চিন্তায় ভীষণ স্বচ্ছতা।এমন মানুষটিকে রিশতিনা জীবন সঙ্গী করে নিয়েও নিয়তি তাদের একসাথে চলতে দেয়নি। তাই বলে শিহাব তাকে ভুলে যায়নি।  তাকে ছাড়া জীবন উপভোগ করেনি।যেখানে কত কত পুরুষেরা ঘরে স্ত্রী সন্তান রেখেও আনন্দ ফূর্তি করে বেড়ায়, সেখানে শিহাব আরাফের জন্য নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে রেখেছে। শায়লা শিহাবকে ভীষণভাবে বুঝতে পারে।শিহাবের ভেতরে এক সাগর দুঃখের বাস আর আরাফ সেখানে এক টুকরো আশার ভেলা, বেঁচে থাকার অবলম্বন। 
শায়লার ভেতরেও মাতৃত্বের এক হাহাকার।
স্বামী সন্তান সংসারের তীব্র চাওয়া তার মাঝেও আছে।তার সমবয়সীরা অনেকেই অনেক আগে মা হয়েছে।এমনকি ছোট বোন নায়লাও মা হওয়ার অপেক্ষায়।
আরাফের জন্য শায়লার মনটা হু হু করে উঠলো।  আরাফের অমন মায়াভরা মুখটা ভেসে উঠলো। 
শায়লা শিহাবের খুব কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল, আরেকটু এগিয়ে শিহাবের হাত ধরে  একেবারে নিঃশ্বাসের দূরত্বে দাড়িয়ে শিহাবের চোখে চোখ রেখে শিহাবকে আশ্বস্ত করে বললো, তুমি একেবারেই ভেবো না শিহাব।আমার মনটাকে তো তুমি বুঝেছো, আমার কাছে আরাফ মায়ের আদর ভালবাসা পাবে এ নিয়ে তুমি মোটেও ভাববে না।আরাফ আমাদের সন্তান হয়ে আমাদের সাথেই থাকবে।
আর আমি?শিহাবের এমন প্রশ্নে শায়লা থমকে গেলো, কি বলবে?  একেবারেই সে অপ্রস্তুত হয়ে নির্বাক হয়ে গেলো! কি হলো,বললে না? খানিকবাদে
শায়লা বুঝতেও পারলো না কোথা থেকে হঠাৎ কতগুলো কথা  তার মনে ভীড় করলো।এবার সে চোখেমুখে একরাশ দুষ্টুমি  নিয়ে বলে উঠলো, আর তোমাকে প্রচন্ড গরমের দিনে এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবতের মত ভালবাসবো, খুব শীতের দিনে দুই মগ কফির মত আর ঝুম বর্ষার দিনে খিচুড়ি মাংসের মত আর তোমার খুব একাকীত্বের জীবনে জোড়া শালিক হয়ে ঘর বাঁধবো। কথাগুলো বলে শায়লা শিহাবের বুকে মুখ লুকালো। তার চোখের জলে শিহাবের শার্ট ভিজে গেলো। শিহাব খুব নীরব হয়ে রইল।শায়লার ভেতরের জমাটবাধা কষ্টগুলো কান্নায় বেরিয়ে এসে তা শিহাবের বুকে শার্টের আবরণে আশ্রয় খুঁজে নিক,শিহাব সে ভরসাস্থল থেকে শায়লাকে নিরাশ করলো না।
শায়লা মুখ তুলে বলে উঠলো,
আমিও বন্ধন মুক্ত নই শিহাব।আমিও একটা শর্তে আবদ্ধ হয়ে আছি।আমার জীবনেও যা ঘটে গেছে তা থেকে এখনো আমি মুক্ত নই। আমার জীবনটা আমি পরিবারের উপরই ছেড়ে দিয়েছিলাম।তোমার সাথে হঠাৎ পরিচয়ে সবকিছু ওলোট পালোট করে দিলো। মনে হলো, আমার ঘুমন্ত মনটা জেগে উঠেছে।প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। নিজের ভেতর নিজের অজান্তেই  তোমাকে নিয়ে এত এত স্বপ্ন বাসা বেঁধেছে।
হ্যাঁ,শায়লা, তোমার কানাডার বিষয়টার একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে।রাহাতের সাথে আমার এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আজ তোমার আমার কথার পর রাহাত তোমার ডিভোর্সের ব্যাপারে আগাবে। শায়লা, এখনো সময় আছে,তুমি খুব ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিও।কানাডায় উন্নত বিশ্বের জীবন। আর আমার কাছে, সন্তান,মা বাবা, আমার পরিবারকে নিয়ে তোমার মধ্যবিত্তের জীবন কাটাতে হবে।
শায়লা বাধা দিয়ে বললো, আমি তো উচ্চাভিলাষী বা লোভী নই। মনের সাড়া যেখানে মিলেছে আমি শুধু তার উত্তর দিয়েছি।এটা আমারই পাওনা ছিল। তবে,হ্যাঁ,এতে নোমান সাহেবকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তবে বিষয়টি উল্টোও তো ঘটতে পারতো।আর কই, এতদিন হয়ে গেলো,যদি সে সত্যই আমাকে চাইতো,তবেতো খুব দ্রুতই সবকিছু করে আমাকে নিয়ে যেতো।সে স্বামীর দায়িত্ব পালন করতো।
না,নোমান সাহেব তোমাকে জোর করতে চাননি।
জোর কেন? ভালবাসার ডাকে,বন্ধনেও তো সে আমার মন জয় করে নিতে পারতো?
সে কেবল তার সন্তানদের জন্য আমাকে চেয়েছে।উন্নত বিশ্বের একটি দেশে আমাকে নিতে চাইছে কেবল সন্তানদের দেখভালের জন্য।এটাতো আমার জীবন হতে পারে না।
শায়লা কথাগুলো বলছিলো আর তার চোখদুটো দৃঢ়তায় স্থির হয়ে ছিল।
শিহাব শায়লারকে কখনো এমন স্পষ্টভাষী হতে দেখেনি।
ঠিক আছে।তুমি রাহাতের সাথে কথা বলে দ্রুতই তাকে ডিভোর্সের কাগজপত্র পাঠিয়ে দাও।আমিও আমার মা ভাবীকে তোমার কথা বলবো।আর আমার বিশ্বাস তারা তোমাকে খুবই আপন করে নিবে।শুধু....
শুধু কী শিহাব?
শুধু একটি দিন তোমাকে আমার ঝিগাতলার বাসায় সারাদিন আরাফের সাথে কাটাতে হবে।যেন ওর সাথে তোমার একটা বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ভাবী এতদিন আরাফকে দেখেছে,মায়ের আদর দিয়ে এতটা বড় করেছে এবার ভাবীকে এ দায়িত্ব থেকে মুক্ত করতে চাই।
তুমি ভেবোনা শিহাব, আরাফকে ভালোবেসে 
সম্পূর্ণ তোমাকেই আমি জয় করে নিতে চাই কারন আরাফ তোমার জীবনের অংশ,হৃদয়ের স্পন্দন। 
শায়লার কথায় শিহাব অনেকটাই স্থির হলো।আরাফের বিষয়টিতেই এতদিন শিহাবের মন 
দোদুল্যমানতায় ছিল।আজ শায়লা তাকে আশ্বস্ত করাতে সামনে এগুতে আর বাধা রইল না।শিহাবের মায়ের কথা মনে পড়লো।নিশ্চয়ই শায়লাকে মায়ের পছন্দ হবে।আর শায়লাতো পছন্দ করার মতই একটা মেয়ে।
শিহাবকে মা সংসারী দেখতে চায়।আরাফের জন্য বাবা মায়ের আদর নিশ্চিত করতে চায়। মায়ের চাওয়াতো বিফলে যাবে না।
একটা ছোট্ট ছেলে ওদের চারপাশে ঘুরাঘুরি করছিল।শিহাব জানতে চাইল,কিছু বলবে?
স্যার চা, কফি লাগবো।ঐ যে আমাদের চায়ের দোকান।আপনি চাইলে চা,কফি নিয়া আসতে পারি। আর স্যার এই জায়গাটায় খুব বেশীক্ষণ থাইকেন না।সন্ধ্যার আগেই ফিরা যাইয়েন।
শিহাব চোখের ইশারায়  শায়লার অনুমতি নিয়ে কফি আনতে বললো।ছেলেটি এক দৌড়ে ছুটে গেলো কফি আনতে। শিহাব বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সহসাই সে শায়লাকে খুব কাছে টেনে নিলো। শায়লা শিহাবের কাঁধে মাথা রাখল। দুটি হাতের বন্ধন চারহাতের বন্ধনে খুব নিবিড় হয়ে রইল।স্পর্শে অনুভবে শায়লা রাঙা হয়ে উঠলো! 
পশ্চিম আকাশে সূর্যাস্তের প্রস্তুতি চলছে।একটু একটু আঁধারের আয়োজন।  আকাশে দল বেঁধে পাখিদের ঘরে ফেরার তাড়া।তাদেরও ঘরে ফিরতে হবে।কিন্তু কারোই মন চাইছে না ফিরে যেতে।দুজনার উষ্ণতার আলিঙ্গনে সময় বয়ে যাচ্ছে।
স্যার কফি আনছি,
ছেলেটির ডাকে শিহাব নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। শায়লা বেশ বিব্রত হলো।
এনেছো,দাও,বলতেই শায়লা হাত বাড়িয়ে 
কফি কাপ দুটো নিয়ে নিলো।শিহাব দাম চুকিয়ে এক কাপ কফি হাতে নিলো।
এখানেতো এইটুকু ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না।চলো,উত্তরায় গিয়ে কোথাও বসে বিকেলের নাস্তা সেরে নিবো।
শায়লা বাধা দিয়ে বললো,না আজ নয়, ফিরতে হবে। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। আরেকদিন নাস্তা করা যাবে।তাছাড়া মা ফিরে এসে দেখতে না পেলে চিন্তিত হয়ে উঠবে।তোমার ব্যাপারটিতো মাকে এখনো জানানো হয়নি।জানিনা,মা বিষয়টি কিভাবে নিবে।রাহাতই ভরসা।তাকে দিয়েই মাকে ম্যানেজ করাতে হবে।
দুজনেই কথার ফাঁকে কফি শেষ করে নিল।
শিহাব তার প্যান্টর পকেট থেকে একটা ছোট্ট প্যাকেট বের করলো।
শায়লা বেশ অবাক হলো। শিহাব প্যাকেট থেকে একটা সুন্দর চকচকে সোনালী বেশ কারুকাজ করা একটা ব্রেসলেট বের করে শায়লা দেখালো।নিজেই শায়লার ডান হাতটি টেনে নিয়ে ব্রেসলেটটি পরিয়ে দিলো।মূহুর্তের মধ্যে এত কিছু ঘটে গেলো! শায়লা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না।
আজ সকালে কিনেছি।গুলশান গিয়েছিলাম।সেখান থেকে।আমাদের আজকের এই বিকেল সন্ধ্যাটা স্মরণীয় করে রাখতে তোমায় ভেবে কিনেছি।পছন্দ হয়েছে?
শায়লা হ্যাঁ সূচক ভঙ্গিতে মাথা ঝুকালো।
চলো শায়লা,ফিরতে হবে।খোলা জায়গায় সূর্যাস্তটা স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে।দুজনেই তাকিয়ে দেখছে।আজ এই সূর্যাস্তের পর আগামীকাল ভোরের সূর্যোদয় যেন আমাদের জন্য একটা নতুন জীবন বয়ে আনে।শিহাবের কথায় শায়লার চোখ চকচক করে উঠলো।
শিহাব শায়লাকে শক্ত করে এক গভীর বন্ধনে আঁকড়ে ধরলো।আর এভাবে কতটা সময় চলে গেলো কারোরই তা খেয়ালে রইল না।


 চলবে....

মমতা রায়চৌধুরী/৮২





উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৮২

সম্পর্ক

মমতা রায়চৌধুরী


সকালবেলায় শিখার ফোনে মেসেজ এল 'শিশিরভেজা সকালের উষ্ণ ভালোবাসা থাকলো 'সুপ্রভাত।'
শিখা খুব কৌতুহলী হয়ে উঠলো, 'বাব্বা, হঠাৎ করে আমাকে উষ্ণ ভালোবাসার শুভেচ্ছা কে পাঠালো?
এ তো মনে হচ্ছে কল্যানদার কাজ।'
শিখা নিউজ পেপারে চোখ বুলাচ্ছিল ভাবল' সুপ্রভাত জানাতে মেসেজ পাঠাবে, কি পাঠাবে না?'
শেষ পর্যন্ত ভেবেচিন্তে শিখা ঠিক করলএকটা ভদ্রতা বলেও তো কথা আছে।পাঠিয়ে দিল মেসেজ-
'শিশিরভেজা  কোমল হাওয়া,
নরম ঘাসের আলতো ছোঁয়া।
মিষ্টি রোদের নরম আলো,
আঁখি মেলে দেখবে চলো।'
কল্যান অনলাইনে ছিল সঙ্গে সঙ্গে রেসপন্স করলো-
'চুপিসারে মেখে নাও,
অচেনারে জেনে নাও।
উপলব্ধিতে মিশে যাও'
অনুরণনে ঢেউ তোলাও।'
শিখা আবার টেক্সট করে  বলল 'বাহ, দারুন কাব্য করতে জানেন তো?'
কল্যাণ ও টেক্সট করে বলল' তাই বুঝি?
শিখা বলল' তাই না তো কি?'
কল্যাণ  বলল' কাব্যের উপর কাব্য করেছি।'
শিখা বলল' ছাত্র-ছাত্রীরা কিন্তু রোমান্টিক হয়ে যাবে।'
কল্যান বলল' বলছো পারব?'
শিখা দৃঢ়তার সঙ্গে যেন আড়চোখে তাকিয়ে
 বলল 'অফকোর্স পারবেন'।
কল্যাণ বললো 'আশার আলো দেখতে পেলাম।
শিখা একটু অবাক হয়ে বলল  'মানে?'
কল্যাণ বললো  'বুঝে নাও '।
শিখা বলল ' বুঝতে পারলাম না বুঝিয়ে দিন।'
কল্যান বলল 'তাহলে আমার ছাত্রী হতে হবে।'
শিখা এবার মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগল।
কল্যান বলল  'খুব হাসা হচ্ছে না?'
শিখা বলল 'বাহ রে, তাহলে কি আমি কাঁদতে বসবো নাকি?'
কল্যান বলল'রুমাল ধরার কেউ থাকবে না?'
শিখা বলল 'আজকে আপনার কলেজ নেই?'
কল্যান বলল' আছে একটু পরে যাব।'
শিখা মনে মনে ভাবছে' কল্যানদার সঙ্গে তার সম্পর্ক টা কি আদপে?'
এরমধ্যেই মাধুরী বৌদি শিখাকে নিচে থেকে ডাকছে শিখা শিখা শিখ.আ.আ.আ।'
শিখা টেক্সট করল 'বৌদি ভাই ডাকছে।'
কল্যান বলল ok
শিখা বলল' যাই বৌদি ভাই।'
শিখা খুব খুশি খুশি মনে তরতর করে নিচে নেমে গেল সিঁড়ি দিয়ে।
বৌদি ভাই শিখাকে দেখে বলল'কি হয়েছে রে তোর?'
শিখা বললো 'কই কিছু না তো?'
বৌদি ভাই বলল 'এত খুশি খুশি লাগছে।'
শিখা হেসে বলল'কী যে বলো না বৌদি ভাই?'
বৃষ্টি বলল' পি মনি পার্কস্ট্রিটে যাবে এক্সমাস উৎসব দেখতে।'
শিখা বলল' বৃষ্টি খুব দুষ্টু হয়ে গেছো তুমি।'
মাধুরী বললো'ও সেই আনন্দে?'
শিখা বলল 'না গো বৌদি ভাই?'
মাধুরী ব্রেকফাস্টে মটর শুটির কচুরি আর আলুর দম প্লেটে দিতে দিতে বলল' তা কার সঙ্গে যাবি?'
শিখা বলল 'না গো বৌদি ভাই বৃষ্টির কথা ছাড়ো তো ,কি শুনতে কি শুনেছে?'
মাধুরী বললো 'তা বেশ যা না, ঘুরে আয়।'
বৃষ্টি বলল'আমিও যাব পি মনি তোমার সঙ্গে।'
মাধুরী বললো' না তোমাকে যেতে হবে না।'
বৃষ্টি এবার খাওয়া বন্ধ করে বলল 'না ,আমি যাব ।না ,আমি যাব।'
মাধুরী এবার ধমক দিয়ে বলল' এত বায়না করবে না।'
বৃষ্টি বলল 'পি মনি যে  যাবে?'
মাধুরী বললো তাহলে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তো বৃষ্টি তুমি বড়, না পিমনি ?'
বৃষ্টি বলল' পি মনি   বড়ো'।
মাধুরী বলল ' তাহলে চুপ করে থাকো। সেরকম হলে তোমার বাবা নিয়ে যাবে।'
বাবার কথা শুনে বৃষ্টির চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
মাধুরী বলল' এবার খাওয়া স্টার্ট করো এবং তাড়াতাড়ি শেষ করো, হোম ওয়ার্ক আছে, করতে হবে।'
শিখাকে বলল, 'আর দুটো নিবি কচুরি?'
শিখা বলল 'না বৌদি ভাই?'
মাধুরী বলল' সে কি রে খেতে ভালবাসিস আর দুটো নে।'
শিখা বলল 'না বৌদিভাই, তুমি আমাকে মোটা করেই ছাড়বে দেখতে পাচ্ছি।'
মাধুরী বলল' তোদের এই এক রোগ জানিস তো ডায়েট ডায়েট।'
শিখা বললো" বৌদিভাই তোমার মতো যদি আমি হতাম না? দেখতে?'
মাধুরী বলল''আর আমার গুণগান গাইতে হবে না?"
শিখা বলল'ও বৌদি ভাই, দাদা ভাই কোথায় গেল?'
মাধুরী বলল-' বাজার আনতে গেছে? কেন কিছু বলবি?'
শিখা বলল' না তেমন কিছু নয় ও বাড়ির রেখা বৌদির কথা জিজ্ঞেস করতাম।
শিখা বলল'তুমি খেলে না বৌদি ভাই?'
মাধুরী বলল 'তোর দাদা আসুক বাজার থেকে।'
শিখা বলল 'আজকে দাদা অফিসে যাবে না?'
মাধুরী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল 'হ্যাঁ, যাবে তো লেট করছে কেন বল তো?'
শিখা বললো' একবার ফোন করবো দাদাভাইকে।'
মাধুরী বলল" হ্যাঁ কর।'
শিখা ডায়াল করল'******১২৩৪"। রিং হল 'দূরে থাকো ,শুধু আড়াল রাখো, কে তুমি, কে তুমি ,আমায় ডাকো?'শিখা বললো বৌদি ভাই রিং হচ্ছে । 
মাধুরী বলল 'ঠিক আছে দাদা ধরলে জিজ্ঞেস কর কখন আসছে?'
শিখা বলল ''রিং হয়ে গেল ধরল না তো?'ঠিক আছে
আবার করছি। আবার ডায়াল করল। রিং হল 'কেন দূরে থাকো ,শুধু আড়াল রাখো ।কে তুমি ,কে তুমি ,আমায় ডাকো?'
এবার সুরঞ্জন ফোনটা ধরে বলল' হ্যালো'।
শিখা বললো' দাদা ভাই তুমি ফিরছ তো এখন?'
সুরঞ্জন বলল-হ্যাঁ ফিরছি রাস্তায় আছি জ্যামে আটকে ছিলাম।'
শিখা বলল' 'ঠিক আছে সাবধানে এসো। বৌদি ভাই তোমার জন্য ওয়েট করছে।'ফোনটা ছেড়ে দিয়ে শিখা বলল'বৌদি ভাই দাদাভাই রাস্তায় আছে আসছে।'
মাধুরী রান্নাঘরে জলখাবারের বাসন ধুতে ধুতে  বলল "ঠিক আছে শুনতে পেয়েছি।'
শিখা মনে মনে ভাবল' দাদাভাইয বৌদির সম্পর্কটা খুবই সুন্দর ।একে অপরের জন্য কতটা কেয়ার করে। পরিপূরক।সবথেকে বড় কথা পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস।'
শিখা বলল 'বৌদিভাই, দাদাভাই কত সুন্দর রিংটোন লাগিয়েছে শুনেছো? বাবা তোমাদের কি রোমান্টিকতা?'
মাধুরী বললো' বড়দের সঙ্গে ইয়ার্কি মারছিস লজ্জা করছে না?'
শিখা বলল 'আরে আমিও তো বড় হয়ে গেছি।'
বৃষ্টি ওপরের বারান্দা থেকে শুনতে পেয়ে বলল' আমি কবে বড় হব পি মনি?'
মাধুরী বলল 'ওই দেখ, ঠাম্মা কি বলছে? সব কথাতে তোর   অতো কান কেন রে বৃষ্টি ?পড়াতে ধ্যান দাও।'
শিখা লক্ষ্য করলো বৃষ্টির ফর্সা গাল দুটো কেমন রাগে লাল হয়ে গেল।
মাধুরী দিয়ে কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে ডাইনিং টেবিলে এসে বলল' জানিস তো বহরমপুর থেকে মেজ পিসি ফোন করেছিল?'
শিখা বললো' মেজ পিসি কেন?'
মাধুরী বলল 'পিসির নাকি শরীর খারাপ। ছেলের বউ নেই ।বেড়াতে গেছে?'
শিখা বলল' তো তুমি কি করবে?'
মাধুরী বলল 'না তোর দাদাকে বলে তাহলে পিসি মাকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতাম ।এ সময় তো আর আমি যেতে পারব না ওখানে?
শিখা বলল 'তো। বৌদি ভাই নিজে খেটে খেটে মরছ আবার এখন পিসিকে নিয়ে আসবে আর জানো তো সব সময় তোমার পেছনে পড়ে থাকে। ভাল লাগে না ছাই?'
মাধুরী বললো 'মাথা ঠান্ডা কর শিখা ।তুই এখন  বড় হয়েছিস। তোর বিয়ে-থা হবে সম্পর্কগুলোকে ঠিক রাখতে হয় জানিস তো?'
শিখা বলল' বৌদি ভাই তোমার মতো তো আমি ভালো নই।'
মাধুরী বলল 'কেন রে তুই কি কম ভালো নাকি?'
শিখা বলল' দেখো বৌদি ভাই সব সময় ওই মেজ পিসি তোমার এসে খুঁত ধরতো ।আমার একদম ভালো লাগে না এসব।'
মাধুরী শিখাকে  দুই হাত ধরে কাছে টেনে এনে বলল 'ওরে আমার পাগলি মেয়ে  ,তো কি হয়েছে। বড়রা বলবে না বল?'
শিখা জোরের সঙ্গে বলল ' না বলবে না ?আমার বৌদি ভাইকে বলবে না?'
মাধুরী বলল দেখ' আজকে যদি মা বেঁচে থাকতেন তাহলে  কষ্ট পেতেন না ?আমাকে সব দায়িত্ব দিয়ে গেছেন ।আমাকে তো সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে না?'
শিখা মুখ গোমরা করে বলল 'সব দায়িত্ব যেন তোমার?'
মাধুরী হেসে বললো 'বোকা মেয়ে টা একটা পরিবারে থাকতে গেলে করতে হয় বুঝেছিস? (গালে একটা চুমু খেয়ে )।'
বৃষ্টির উপর থেকে বলল 'পি মনি তুমি ছোট হয়ে গেছো?'
মাধুরী বলল'ওই দেখ ইন সে কথাটা কেমন ঘুরিয়ে বলল বল?'
শিখা উপরের দিকে তাকিয়ে বলল'-আমি এখন ছোট্ট বৃষ্টি হয়ে গেছি।'
বৃষ্টি বলল 'আমি তো বৃষ্টি?'
শিখা বলল' তুই বৃষ্টি আর আমি মেঘ।'
এর মধ্যেই সুরঞ্জন ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে এসে বললো ধরো ধরো ধরো। শিখা ছুটে গিয়ে একটা ব্যাগ নিল।
সুরঞ্জন ব্যাগ রাখতে রাখতে বলল' মাধু আমাকে খাবার দাও তাড়াতাড়ি ।দেরি হয়ে যাচ্ছে।'
মাধুরী তাড়াতাড়ি করে ডাইনিংয়ের প্লেটে কচুরি আর আলুর দম সাজিয়ে ফেলল সঙ্গে একটা রসগোল্লা।
সুরঞ্জন হাত মুখ ভালো করে ধুয়ে এসে খাবার টেবিলে বসে বলল 'wow  কি করেছ?'.
শিখা বলল 'দাদাভাই আলুর দমটা যা হয়েছে না?'
মাধুরী বলল' বহরমপুর থেকে মেজ  পিসি ফোন করেছিল?'
সুরঞ্জন বলল' হ্যাঁ আমাকেও করেছিল। ওই জন্যই তো বাজার খুলে দেখো ইলিশ মাছ আনা হয়েছে।'
শিখা বলল 'দেখলে বৌদি?'
মাধুরী বলল 'আজকে কি  পিসি আসছে?'
সুরঞ্জন বলল' হ্যাঁ ,মনে হয় আজ ছেড়ে দিয়ে যাবে?'
মাধুরীবলল 'সে কথা তো আমাকে বলল না ?তাহলে রান্না করবো তো?'
সুরঞ্জন বলল 'তোমাকে অত ব্যস্ত হতে হবে না। ও 
ঠিক জানিয়ে দেবে ।এখনো ঢের সময় বাকি আছে? বলতে  বলতেই খাবার টেবিল থেকে উঠে পড়ল।
মাধুরী বলল' কি উঠে যাচ্ছ? আর নেবে না তুমি?'
সুরঞ্জন বলল' সময় নেই।'
মাধুরী বলল' তাহলে কি টিফিন ক্যারিয়ারে দিয়ে দেবো?'
শিখা বলল-'হ্যাঁ , হ্যাঁ দিয়ে দাও বৌদি ভাই।''
মাধুরী বলল 'শিখা ,টিফিন বক্সটা দে তো সোনা।'
শিখা টিফিন বক্স এগিয়ে দিল বৌদির কাছে আর বৌদিভাইকে এক দৃষ্টিতে দেখতে লাগল কত নিপুণভাবে সবকিছু সাজিয়ে দিচ্ছে।আর ও ভাবছিলো ওর বৌদিভাইয়ের মতো আর কারোর বৌদি ভাই হবে না। সব সম্পর্কগুলোকে দৃঢ়তার সাথে বেঁধে রাখার চেষ্টা করে। শিখা বৌদিভাইয়ের জন্য প্রাউড ফিল করে।'

কবি সঞ্জয় আচার্য এর কবিতা




৮০র গ্রাম:বিকেল


যুবতী আলপথ হেঁটে আসে অগ্রহায়ণের খামার বাড়িতে
কৃষানীর বাড়া ভাতে ঝুমকো গাঁদার পাশে,

দু’পাড়ের ঝুঁকেপড়া ধানের ছায়ায়
শিশির খাওয়া আগাছাও চায়
বেড়ে ওঠা ঋতুস্রাবে পেটপোরা পুষ্টি
চাতালের ঘুম।

ওদিকের হাত আসনে বুনে রাখা বিগত যৌবনা
আকর্ষ ধরে উঠে যাওয়া বল্লরী বেদনা
কবে যেন ফেলে এসে আবার আজ
                             আত্মলিপি খুঁজে খুঁজে
ফিরে যেতে চায় আটচালা গল্পগাথায়,

দাওয়ায় বসেছে ভেবে দেখি এবং বসেছিল
পাড়াতুতো দুই প্রৌঢ়া বিকেল।



সঞ্জয় আচার্য
20 A/3 শীল লেন, ট্যাংরা
কোলকাতা 700015
9830437268