উপন্যাস
টানাপোড়েন ৮২
সম্পর্ক
মমতা রায়চৌধুরী
সকালবেলায় শিখার ফোনে মেসেজ এল 'শিশিরভেজা সকালের উষ্ণ ভালোবাসা থাকলো 'সুপ্রভাত।'
শিখা খুব কৌতুহলী হয়ে উঠলো, 'বাব্বা, হঠাৎ করে আমাকে উষ্ণ ভালোবাসার শুভেচ্ছা কে পাঠালো?
এ তো মনে হচ্ছে কল্যানদার কাজ।'
শিখা নিউজ পেপারে চোখ বুলাচ্ছিল ভাবল' সুপ্রভাত জানাতে মেসেজ পাঠাবে, কি পাঠাবে না?'
শেষ পর্যন্ত ভেবেচিন্তে শিখা ঠিক করলএকটা ভদ্রতা বলেও তো কথা আছে।পাঠিয়ে দিল মেসেজ-
'শিশিরভেজা কোমল হাওয়া,
নরম ঘাসের আলতো ছোঁয়া।
মিষ্টি রোদের নরম আলো,
আঁখি মেলে দেখবে চলো।'
কল্যান অনলাইনে ছিল সঙ্গে সঙ্গে রেসপন্স করলো-
'চুপিসারে মেখে নাও,
অচেনারে জেনে নাও।
উপলব্ধিতে মিশে যাও'
অনুরণনে ঢেউ তোলাও।'
শিখা আবার টেক্সট করে বলল 'বাহ, দারুন কাব্য করতে জানেন তো?'
কল্যাণ ও টেক্সট করে বলল' তাই বুঝি?
শিখা বলল' তাই না তো কি?'
কল্যাণ বলল' কাব্যের উপর কাব্য করেছি।'
শিখা বলল' ছাত্র-ছাত্রীরা কিন্তু রোমান্টিক হয়ে যাবে।'
কল্যান বলল' বলছো পারব?'
শিখা দৃঢ়তার সঙ্গে যেন আড়চোখে তাকিয়ে
বলল 'অফকোর্স পারবেন'।
কল্যাণ বললো 'আশার আলো দেখতে পেলাম।
শিখা একটু অবাক হয়ে বলল 'মানে?'
কল্যাণ বললো 'বুঝে নাও '।
শিখা বলল ' বুঝতে পারলাম না বুঝিয়ে দিন।'
কল্যান বলল 'তাহলে আমার ছাত্রী হতে হবে।'
শিখা এবার মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগল।
কল্যান বলল 'খুব হাসা হচ্ছে না?'
শিখা বলল 'বাহ রে, তাহলে কি আমি কাঁদতে বসবো নাকি?'
কল্যান বলল'রুমাল ধরার কেউ থাকবে না?'
শিখা বলল 'আজকে আপনার কলেজ নেই?'
কল্যান বলল' আছে একটু পরে যাব।'
শিখা মনে মনে ভাবছে' কল্যানদার সঙ্গে তার সম্পর্ক টা কি আদপে?'
এরমধ্যেই মাধুরী বৌদি শিখাকে নিচে থেকে ডাকছে শিখা শিখা শিখ.আ.আ.আ।'
শিখা টেক্সট করল 'বৌদি ভাই ডাকছে।'
কল্যান বলল ok
শিখা বলল' যাই বৌদি ভাই।'
শিখা খুব খুশি খুশি মনে তরতর করে নিচে নেমে গেল সিঁড়ি দিয়ে।
বৌদি ভাই শিখাকে দেখে বলল'কি হয়েছে রে তোর?'
শিখা বললো 'কই কিছু না তো?'
বৌদি ভাই বলল 'এত খুশি খুশি লাগছে।'
শিখা হেসে বলল'কী যে বলো না বৌদি ভাই?'
বৃষ্টি বলল' পি মনি পার্কস্ট্রিটে যাবে এক্সমাস উৎসব দেখতে।'
শিখা বলল' বৃষ্টি খুব দুষ্টু হয়ে গেছো তুমি।'
মাধুরী বললো'ও সেই আনন্দে?'
শিখা বলল 'না গো বৌদি ভাই?'
মাধুরী ব্রেকফাস্টে মটর শুটির কচুরি আর আলুর দম প্লেটে দিতে দিতে বলল' তা কার সঙ্গে যাবি?'
শিখা বলল 'না গো বৌদি ভাই বৃষ্টির কথা ছাড়ো তো ,কি শুনতে কি শুনেছে?'
মাধুরী বললো 'তা বেশ যা না, ঘুরে আয়।'
বৃষ্টি বলল'আমিও যাব পি মনি তোমার সঙ্গে।'
মাধুরী বললো' না তোমাকে যেতে হবে না।'
বৃষ্টি এবার খাওয়া বন্ধ করে বলল 'না ,আমি যাব ।না ,আমি যাব।'
মাধুরী এবার ধমক দিয়ে বলল' এত বায়না করবে না।'
বৃষ্টি বলল 'পি মনি যে যাবে?'
মাধুরী বললো তাহলে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তো বৃষ্টি তুমি বড়, না পিমনি ?'
বৃষ্টি বলল' পি মনি বড়ো'।
মাধুরী বলল ' তাহলে চুপ করে থাকো। সেরকম হলে তোমার বাবা নিয়ে যাবে।'
বাবার কথা শুনে বৃষ্টির চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
মাধুরী বলল' এবার খাওয়া স্টার্ট করো এবং তাড়াতাড়ি শেষ করো, হোম ওয়ার্ক আছে, করতে হবে।'
শিখাকে বলল, 'আর দুটো নিবি কচুরি?'
শিখা বলল 'না বৌদি ভাই?'
মাধুরী বলল' সে কি রে খেতে ভালবাসিস আর দুটো নে।'
শিখা বলল 'না বৌদিভাই, তুমি আমাকে মোটা করেই ছাড়বে দেখতে পাচ্ছি।'
মাধুরী বলল' তোদের এই এক রোগ জানিস তো ডায়েট ডায়েট।'
শিখা বললো" বৌদিভাই তোমার মতো যদি আমি হতাম না? দেখতে?'
মাধুরী বলল''আর আমার গুণগান গাইতে হবে না?"
শিখা বলল'ও বৌদি ভাই, দাদা ভাই কোথায় গেল?'
মাধুরী বলল-' বাজার আনতে গেছে? কেন কিছু বলবি?'
শিখা বলল' না তেমন কিছু নয় ও বাড়ির রেখা বৌদির কথা জিজ্ঞেস করতাম।
শিখা বলল'তুমি খেলে না বৌদি ভাই?'
মাধুরী বলল 'তোর দাদা আসুক বাজার থেকে।'
শিখা বলল 'আজকে দাদা অফিসে যাবে না?'
মাধুরী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল 'হ্যাঁ, যাবে তো লেট করছে কেন বল তো?'
শিখা বললো' একবার ফোন করবো দাদাভাইকে।'
মাধুরী বলল" হ্যাঁ কর।'
শিখা ডায়াল করল'******১২৩৪"। রিং হল 'দূরে থাকো ,শুধু আড়াল রাখো, কে তুমি, কে তুমি ,আমায় ডাকো?'শিখা বললো বৌদি ভাই রিং হচ্ছে ।
মাধুরী বলল 'ঠিক আছে দাদা ধরলে জিজ্ঞেস কর কখন আসছে?'
শিখা বলল ''রিং হয়ে গেল ধরল না তো?'ঠিক আছে
আবার করছি। আবার ডায়াল করল। রিং হল 'কেন দূরে থাকো ,শুধু আড়াল রাখো ।কে তুমি ,কে তুমি ,আমায় ডাকো?'
এবার সুরঞ্জন ফোনটা ধরে বলল' হ্যালো'।
শিখা বললো' দাদা ভাই তুমি ফিরছ তো এখন?'
সুরঞ্জন বলল-হ্যাঁ ফিরছি রাস্তায় আছি জ্যামে আটকে ছিলাম।'
শিখা বলল' 'ঠিক আছে সাবধানে এসো। বৌদি ভাই তোমার জন্য ওয়েট করছে।'ফোনটা ছেড়ে দিয়ে শিখা বলল'বৌদি ভাই দাদাভাই রাস্তায় আছে আসছে।'
মাধুরী রান্নাঘরে জলখাবারের বাসন ধুতে ধুতে বলল "ঠিক আছে শুনতে পেয়েছি।'
শিখা মনে মনে ভাবল' দাদাভাইয বৌদির সম্পর্কটা খুবই সুন্দর ।একে অপরের জন্য কতটা কেয়ার করে। পরিপূরক।সবথেকে বড় কথা পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস।'
শিখা বলল 'বৌদিভাই, দাদাভাই কত সুন্দর রিংটোন লাগিয়েছে শুনেছো? বাবা তোমাদের কি রোমান্টিকতা?'
মাধুরী বললো' বড়দের সঙ্গে ইয়ার্কি মারছিস লজ্জা করছে না?'
শিখা বলল 'আরে আমিও তো বড় হয়ে গেছি।'
বৃষ্টি ওপরের বারান্দা থেকে শুনতে পেয়ে বলল' আমি কবে বড় হব পি মনি?'
মাধুরী বলল 'ওই দেখ, ঠাম্মা কি বলছে? সব কথাতে তোর অতো কান কেন রে বৃষ্টি ?পড়াতে ধ্যান দাও।'
শিখা লক্ষ্য করলো বৃষ্টির ফর্সা গাল দুটো কেমন রাগে লাল হয়ে গেল।
মাধুরী দিয়ে কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে ডাইনিং টেবিলে এসে বলল' জানিস তো বহরমপুর থেকে মেজ পিসি ফোন করেছিল?'
শিখা বললো' মেজ পিসি কেন?'
মাধুরী বলল 'পিসির নাকি শরীর খারাপ। ছেলের বউ নেই ।বেড়াতে গেছে?'
শিখা বলল' তো তুমি কি করবে?'
মাধুরী বলল 'না তোর দাদাকে বলে তাহলে পিসি মাকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতাম ।এ সময় তো আর আমি যেতে পারব না ওখানে?
শিখা বলল 'তো। বৌদি ভাই নিজে খেটে খেটে মরছ আবার এখন পিসিকে নিয়ে আসবে আর জানো তো সব সময় তোমার পেছনে পড়ে থাকে। ভাল লাগে না ছাই?'
মাধুরী বললো 'মাথা ঠান্ডা কর শিখা ।তুই এখন বড় হয়েছিস। তোর বিয়ে-থা হবে সম্পর্কগুলোকে ঠিক রাখতে হয় জানিস তো?'
শিখা বলল' বৌদি ভাই তোমার মতো তো আমি ভালো নই।'
মাধুরী বলল 'কেন রে তুই কি কম ভালো নাকি?'
শিখা বলল' দেখো বৌদি ভাই সব সময় ওই মেজ পিসি তোমার এসে খুঁত ধরতো ।আমার একদম ভালো লাগে না এসব।'
মাধুরী শিখাকে দুই হাত ধরে কাছে টেনে এনে বলল 'ওরে আমার পাগলি মেয়ে ,তো কি হয়েছে। বড়রা বলবে না বল?'
শিখা জোরের সঙ্গে বলল ' না বলবে না ?আমার বৌদি ভাইকে বলবে না?'
মাধুরী বলল দেখ' আজকে যদি মা বেঁচে থাকতেন তাহলে কষ্ট পেতেন না ?আমাকে সব দায়িত্ব দিয়ে গেছেন ।আমাকে তো সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে না?'
শিখা মুখ গোমরা করে বলল 'সব দায়িত্ব যেন তোমার?'
মাধুরী হেসে বললো 'বোকা মেয়ে টা একটা পরিবারে থাকতে গেলে করতে হয় বুঝেছিস? (গালে একটা চুমু খেয়ে )।'
বৃষ্টির উপর থেকে বলল 'পি মনি তুমি ছোট হয়ে গেছো?'
মাধুরী বলল'ওই দেখ ইন সে কথাটা কেমন ঘুরিয়ে বলল বল?'
শিখা উপরের দিকে তাকিয়ে বলল'-আমি এখন ছোট্ট বৃষ্টি হয়ে গেছি।'
বৃষ্টি বলল 'আমি তো বৃষ্টি?'
শিখা বলল' তুই বৃষ্টি আর আমি মেঘ।'
এর মধ্যেই সুরঞ্জন ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে এসে বললো ধরো ধরো ধরো। শিখা ছুটে গিয়ে একটা ব্যাগ নিল।
সুরঞ্জন ব্যাগ রাখতে রাখতে বলল' মাধু আমাকে খাবার দাও তাড়াতাড়ি ।দেরি হয়ে যাচ্ছে।'
মাধুরী তাড়াতাড়ি করে ডাইনিংয়ের প্লেটে কচুরি আর আলুর দম সাজিয়ে ফেলল সঙ্গে একটা রসগোল্লা।
সুরঞ্জন হাত মুখ ভালো করে ধুয়ে এসে খাবার টেবিলে বসে বলল 'wow কি করেছ?'.
শিখা বলল 'দাদাভাই আলুর দমটা যা হয়েছে না?'
মাধুরী বলল' বহরমপুর থেকে মেজ পিসি ফোন করেছিল?'
সুরঞ্জন বলল' হ্যাঁ আমাকেও করেছিল। ওই জন্যই তো বাজার খুলে দেখো ইলিশ মাছ আনা হয়েছে।'
শিখা বলল 'দেখলে বৌদি?'
মাধুরী বলল 'আজকে কি পিসি আসছে?'
সুরঞ্জন বলল' হ্যাঁ ,মনে হয় আজ ছেড়ে দিয়ে যাবে?'
মাধুরীবলল 'সে কথা তো আমাকে বলল না ?তাহলে রান্না করবো তো?'
সুরঞ্জন বলল 'তোমাকে অত ব্যস্ত হতে হবে না। ও
ঠিক জানিয়ে দেবে ।এখনো ঢের সময় বাকি আছে? বলতে বলতেই খাবার টেবিল থেকে উঠে পড়ল।
মাধুরী বলল' কি উঠে যাচ্ছ? আর নেবে না তুমি?'
সুরঞ্জন বলল' সময় নেই।'
মাধুরী বলল' তাহলে কি টিফিন ক্যারিয়ারে দিয়ে দেবো?'
শিখা বলল-'হ্যাঁ , হ্যাঁ দিয়ে দাও বৌদি ভাই।''
মাধুরী বলল 'শিখা ,টিফিন বক্সটা দে তো সোনা।'
শিখা টিফিন বক্স এগিয়ে দিল বৌদির কাছে আর বৌদিভাইকে এক দৃষ্টিতে দেখতে লাগল কত নিপুণভাবে সবকিছু সাজিয়ে দিচ্ছে।আর ও ভাবছিলো ওর বৌদিভাইয়ের মতো আর কারোর বৌদি ভাই হবে না। সব সম্পর্কগুলোকে দৃঢ়তার সাথে বেঁধে রাখার চেষ্টা করে। শিখা বৌদিভাইয়ের জন্য প্রাউড ফিল করে।'