২৭ অক্টোবর ২০২১

শান্তা কামালী




বনফুল 
( ১৫ তম পর্ব ) 


দুজনেই বেশ চুটিয়ে গল্প করছে, পলাশ মাঝে মাঝে গভীর ভাবে জুঁইয়ের দিকে তাকাচ্ছে, তবে এই তাকানোতে কোনো পাপ নেই, আছে একে-অপরকে জানা, বুঝার নিবিড় ভালোবাসা। 
এরইমধ্যে খাবার চলে এলো, ওয়েটার  খাবার পরিবেশন করতেই জুঁই আশ্চর্য!  
এতো সব জুঁইয়ের পছন্দের খাবার অর্ডার করেছে...... 
পলাশ একটু মুচকি হেসে বললো জুঁই আমি তোমার কিছু কিছু পছন্দ জেনে গেছি। 
জুঁই বললো হুম তাইতো দেখছি...... 
দুজনেই খেতে শুরু করলো,
পলাশ বললো জুঁই এখনতো বলো, কি সুখবর দেবে বলেছিলে?
জুঁই বললো আগামী শুক্রবার তুমি আমাদের বাসায় আসছো, বাবা-মা'কে  তোমার কথা বলাতে ওনারা তোমাকে আসতে বলেছেন। 
এবার পলাশ বুকে হাত রেখে বললো জুঁই এখন আমার সত্যি সত্যিই ভয় লাগছে, আমাকে ডেকে নিয়ে না জানি কি অপমান করবে.......... 
জুঁই বললো তুমি না পুরুষ মানুষ? 
পুরুষেরা এতো ভিতু হয় জানতাম না! 
পলাশ বললো জুঁই তুমি বুঝতে পারছনা, 
জুঁই বললো আমার এতো বুঝে কাজ নেই, তুমি শুধু শুক্রবারে আসবে।
ব্যাস, বাকী সব কিছু আমি বুঝে নেবো। 
পলাশ বললো জোহুকুম রানী সাহেবা..... 
কথা বলতে বলতে খাওয়া শেষ হলো, 
পলাশ ওয়েটারকে ডেকে বিল নিয়ে আসতে বললো।
পলাশ বললো জুঁই আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে...  
জুঁই বললো আবারো একবার এই কথাটা!
পলাশ বললো ও বলেছিলাম বুঝি?
জুঁই বললো জ্বি মহাশয় বলে ছিলে।
ওয়েটার বিল নিয়ে আসতেই পলাশ মানিব্যাগ থেকে দুটো একহাজার টাকার নোট বের করে দিলো। 
জুঁই বললো এসব কি হচ্ছে তুমি বিল দিচ্ছো কেন?  
পলাশ উত্তরে জুঁইকে বললো জুঁই আজকের বিলটা যদি আমি না দিই কবে দেবো সেটা বলতে পারো? 
তুমি আজ এতো ভালো খবর দিয়েছো  আর আমি তোমাকে কিছু খাওয়াতে পারবো না!  তাহলে আমি কিসের পুরুষ মানুষ হলাম বলো? এই বলেই হাহাহা হাহাহা হাহাহা হাসলো পলাশ... 
জুঁই বিষয়টা বেশ উপভোগ করলো। 
ওয়েটার টাকা আর বিলের কাগজ ট্রেতে করে নিয়ে এলো, পলাশ একটা পঞ্চশ টাকার নোট ট্রেতে  রেখে জুঁইকে বললো চলো এখন যাওয়া যাক।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলো, জুঁই পলাশকে পৌঁছে দিয়ে বাসায় এলো।
জুঁই তার মাকে বললো, আম্মু আমি খেয়ে এসেছি, তুমি বাবা খেয়ে নিও। এই বলে জুঁই বলে উপরে উঠে গেলো নিজের ঘরে।

রুকসানা রহমান




উদাসী মেঘের ডানায় 
( ১৯ তম পর্ব )    


তৃষ্ণা তৈরী,হয়ে,বিকেলের দিকে মাকে বললো
- মা,আমি একটু রাাইফল স্কয়ারে যাচ্ছি,মজিদ,কেন
বলো,ও যেনো ছয়টার আগে ময়নাকে নিয়ে ডাক্তার
দেখিয়ে,আনে।
মা,- তুই কিসে যাবি? 
তৃষ্ণা- এখান থেকে কাছেই রিকসায় যাবো।
তুই নিয়ে,যা,গাড়ি
তষ্ণা -আজ,ড্রাইভ করতে,ইচ্ছে হচ্ছেনা,কতকাল
রিকসায় উঠিনা।
এই বলে বের,হয়ে গেলো।
টুকটাক কেনাকাটা,করে বের হয়ে,বাসার গলির কাছে
 এসে রিকসা ছেড়ে দিয়ে কিছু ফল কিনে
হাঁটতে থাকলো। 
কোচিং সেন্টারের সামনে দিয়ে যাবার সময় দেখলো একটা উঠতি বয়সি মেয়েকে একটি প্রাইভেট গাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে উত্তেজক ভাষায় কথা বলছে মেয়টির
সাথে। তৃষ্ণা চলে যেতে চেয়েও কি মনে করে গাড়িটির
সামনে দাঁড়াতেই মেয়েটি ছুটে এসে তৃষ্ণার পাশে দাঁড়ালো।
তৃষ্ণা বললো - কি হয়েছে, গাড়ি কি তোমার?

মেয়েটি মাথা নেড়ে বললো না।

তৃষ্ণা- তাহলে কি হয়ছে।

মেয়েটি বললো - আধাঘণ্টা ধরে আমাকে আটকিয়ে
রেখেছে, যেতে দিচ্ছেনা।

তৃষ্ণা- কেন?

-আমি ওড়না পড়িনি কেন  তাকে কথা দিতে হবে আমি এখন থেকে ওড়না পরবো তারপর আমাকে যেতে দিবে।

তৃষ্ণাএবার লোকটির দিকে তাকিয়ে বললো- আপনি কি গাড়ির মালিক ?

- জ্বি না আমি ড্রাইবার।

তৃষ্ণা-কোথায় পেলিএতো সাহস?

ড্রাইভার- না মানে আমার মেয়ের বয়সি তাই উপদেশ
দেওয়াটা কি দোষের।

তৃষ্ণা রাগত কন্ঠে বললো- তুই কি ওর গার্জেন, তের এতো মাথা ব্যথা কেন, কোথায় তোর মালিক ডাক।

মালিক আসেনেি উনার ছেলেকে নিয়ে কোচিং করাতে
আসছি।

তৃষ্ণা এবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো
-তুমি এতোক্ষণ এই অসভ্যটার সাথে তর্ক না করে ইউ
ল্যাব ভার্সিটি ছেলেরা সবাই আড্ডা দিচ্ছে তুমি তাদের
ডাকনি কেন? বেশ আমি ডাকছি।

ড্রাইভার এবার ভয় পেয়ে বললো- মাপ করবেন ওদের ডাকবেননা।

এখন তোর গার্জেন গিরি মিটিয়ে দিতাম আর যেনো দেখিনা এই রোডে কোন মেয়েকে আটকিয়ে কে কি পরবে সে বিষয় মাথা ঘামাতে।

এবার মেয়টির দিকে তাকিয় বললো - তোমার বাসা কেথায়?

এইতে এই গলিতে।

তৃষ্ণা-এসো আমার সাথে।

মেয়েটিকে বাসার গেটে পৌচ্ছে দিয়ে বললো-
এদের কাছে ভয় পেলে পেয়ে বসবে বুঝতে পেরেছো
সাহসী হতে প্রতিবাদি হতে চেষ্টা করবে তাহলে আর
এরা সাহস পাবেনা কথা বলতে মনে রেখো।
এই বলে নিজর বাসার দিকে পা বাড়ালো।
চলবে...

শামীমা আহমেদ




শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৬) 
শামীমা আহমেদ 

---শায়লার মা ভাই বোন আত্মীয়স্বজনেরা অপেক্ষায়, কবে শায়লার ভিসার কাগজপত্র আসবে আর শায়লা কানাডায় পাড়ি জমাবে।শায়লা কাউকে বলতে পারছে না তার জীবনে কি ঘটে গেছে!যে আত্মীয়রা এতদিন নিশ্চুপ ছিল আজ সেই মামী চাচীরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। যেন শায়লার জন্য তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে । মেয়েকে বিয়ে দিয়ে উদ্ধার করেছে, এবার স্বামীর ঘরে পাঠিয়ে পিতৃহারা মেয়ের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করছে। সবার দৃষ্টি এখন এমন বিদেশি পাত্রের দিকে। সবার ঘরেইতো মেয়ে আছে।ইতিমধ্যে শায়লাকেও জানিয়ে রেখেছে, কানাডা গিয়ে ছোট বোনদের কথা যেন ভুলে যেও না। তোমার কাছাকাছি রেখো।যেন শায়লা কানাডা গিয়ে ফ্যাক্টরি থেকে পাত্র বানিয়ে বানিয়ে সাপ্লাই দিবে।শায়লার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় রুহি খালাকে জিজ্ঞেস করতে কেন এমন প্রতারনা করলেন আমাদের সাথে!কেন সব কিছু জেনেও,, পরক্ষণেই নায়লা,মা আর রাহাতের কথা মনে পড়ে যায়।সবার জন্য তাকেই তো ভাবতেই হতো!
রুহি খালা পুরান ঢাকার মেয়ে।ঢাকাইয়া বাপের একমাত্র মেয়ে।বাপের যত প্লাস্টিক আর চুড়ির কারখানা  সবই পেয়েছেএই 
মেয়ে ।যেমন অগাধ টাকা রুহি খালা আর তার বাপের, মনও তেমনি দিলদরিয়া।ইচ্ছে করেই তিনি ঘর জামাই রাখেননি যেন মেয়ের মনমত সংসার সাজাতে পারে। শায়লার ভাই রাহাতের পড়াশুনার খরচ নিঃস্বার্থভাবে তারাই দিয়েছে। উদার মনমানসিকতার এই পরিবারটি খুবই সহজ সরল। কে জানে নোমান সাহেবই কি তাদের কাছে সবকিছু আড়াল করেছিলো কিনা! তবে শায়লাদের পরিবারের সবচেয়ে ভালো তো তারাই চায়।এখানে  শায়লার  কী ভালো করলো সে তা বুঝে না।
কেন যে শায়লা কিছু না ভেবেই  মত দিয়েছিলো?সেই তার একার জীবন একাই রয়ে গেলো।নিজের জীবনের কিছুই যেন মিলে না।অবচেতন মনে বারবার নোমান সাহেবের প্রোফাইলটা ঘুরে আসে।অজানা মানুষটা  অজানাই রয়ে গেলো। একটা মেয়ের উন্নত বিশ্বের একটি দেশে সংসার হবে। এতে মাতৃস্থানীয়রা অনেক খুশি হয়ে যান! তাদের মত যেন সারাজীবন সন্তান পালন আর হেঁসেল ঠেলে  জীবন না কাটে এমন ভাবনায়।কিন্তু ওরা বুঝতে পারে না এর চেয়েও আরো অনেককিছু  জীবনকে সুন্দর করতে প্রয়োজন হয়।মনের এমন অবস্থায় হঠাৎ করেই একদিন শিহাবের সাথে পরিচয়টা ঘটে গেলো! ফেসবুকে প্রোফাইল পিকে সানগ্লাস পরা নায়ক ভাবের একটা ছবি। যদিও এইসব ছবি ফেইক থাকে। কিন্তু ফেসবুক বায়োতে লোকটির কথাটা শায়লাকে বেশ টেনে নিলো।চমৎকার লেখনী। 
"পেছনের একার জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে চলছি এই একা আমিই"।
কথাটা শায়লার মনে ধরে যায়। তাইতো! কথাটাতো তারও!
তবে কি লোকটিও তারই মত একা! অবশ্য মেয়েদের একাকীত্বের সুযোগ নিতে অনেকেই এইসব আবেগী কথা দিয়ে রাখে। শায়লা ভাবলো,নক দিয়ে দেখা যাক কেমন হয়। ভালো মানুষ  না হলে যোগাযোগ বন্ধ করে দিবো। নোমানের ভাবনা থেকে মনকে সরাতে হবে নয়তো তাকে নোমান সাহেবের স্ত্রী হয়ে, নয়তো তার সন্তানদের ন্যানী হয়ে জীবন কাটাতে হবে।অবশ্য শায়লা না জানালে বিষয়টি কেউই কোনদিন জানতে পারবে না। আসলে এরা দেশে আসে শিক্ষিত কাজের বুয়া খুঁজতে। বিয়ে একটা বাহানা।ওখানে নেয়ার পর চলে নির্মম আচরণ। তবুও মেয়েরা বিদেশ থেকে  হাসিমুখে বাবা মায়ের সাথে  কথা বলে।বুঝাতে চায় আমি এখানে অনেক সুখী। বাবা মা তোমরা আমাকে অনেক ভালো বিয়ে দিয়েছো। 
চলবে...

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৩৪

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "





টানাপোড়েন 
ফোন বিভ্রাট



রেখার শরীরটা ভালো নেই। প্রচন্ড জ্বর ভুলভাল বকছে। কিন্তু মনোজ কোথায়?
মনোজ একবার এসে রুমে দেখে -রেখা শুয়ে আছে ।প্রথমদিকে অতটা গা করে নি। পরে যখন আবার রুমে ঢোকে ,তখন দেখে রেখা একইভাবে কাতরাচ্ছে ।গায়ে হাত দিয়ে দেখে প্রচন্ড জ্বর। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার কে ফোন করে।
'হ্যালো'।
নমস্কার আমি মনোজ বলছি ডাক্তারবাবু। আসলে আমার স্ত্রীর প্রচন্ড জ্বর ওকে কি নিয়ে যাবো ,না আপনি ফোনেতে ওষুধ বলবেন?'
ডাক্তারবাবু ' আমি ওষুধ বলছি লিখে নাও।
মনোজ বলল 'এক মিনিট একটু হোল্ড করুন ডাক্তারবাবু ,পেনটা নিচ্ছি।(পেন নিয়ে আর একটা প্যাড নিয়ে)। হ্যাঁ বলুন।'
ডাক্তারবাবু বললেন
cifran500,paracetamol 650,ambrolite -s,syrup
মনোজ বলল  'কিভাবে খাওয়াবো?'
ডাক্তারবাবু বললেন 'cifran 500 দিনে দুবার খাবার পর।
Paracetamol ,650 এখনি একটা খাইয়ে দাও। জ্বর থাকলে পরে আর একটা খাইয়ে দেবে।
Ambrolite-s,syrup দিনে ৩ বার খাবার পর।'
মনোজ বলল 'অসংখ্য ধন্যবাদ ডাক্তারবাবু।'
ডাক্তারবাবু বললেন 'আরে ,না ,না ,মনোজ। এটা তো আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য। রেখা কেমন থাকে আমাকে জানিও।'
মনোজ বলল  'অবশ্যই ডাক্তার বাবু। আর তাছাড়া আপনি তো আমাদের পারিবারিক সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন অনেকদিন ধরে ।আপনার উপরে আমাদের সব ভরসা। ভালো থাকবেন।'
ডাক্তারবাবু হেসে বললেন  'ফোনটা রাখছি কেমন ।তোমরাও ভালো থেকো সবাই।'
মনোজ ফোনটা রেখে ওষুধটা রেখাকে খাইয়ে দিল।
একটু জলপটিও  দিয়ে দিল।
রেখা চোখ খুলে মনোজের দিকে তাকিয়ে ।
মনোজ দেখছে চোখ দিয়ে জল পড়ছে।
 রেখা মনোজকে দুই হাত দিয়ে ধরে হাত দুটোকে জড়িয়ে রাখল।
মনোজ রেখার দু চোখের জল মুছে দিল। আর বলল 'কাঁদছো কেন? নিজের দিকে দেখিয়ে বলল আমি আছি তো।'
এর ই মধ্যে আবার ফোন বেজে উঠলো। মনোজ এবার বিরক্ত হচ্ছে। রিং হয়েই যাচ্ছে।
রেখা বললো  'ফোনটা তুমি ধরো। তোমার কাজের ফোন হতে পারে। আমি ঠিক আছি। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।'
মনোজ বললো  'বাজুক। তুমি চুপ করে শুয়ে থাকো। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।'
রেখা মনে মনে ভাবতে লাগল  'মনোজের সম্পর্কে কি না কি ভেবেছে? এরকম ভাবাটা একদমই উচিত হয় নি।
স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। সে আরো মনে মনে ভাবল সুস্থ হয়ে মনোজকে সব কথা বলে দেবে ,মনোজের সম্পর্কে যা ভেবেছে এবং ক্ষমা চাইবে?''
এরমধ্যে আবার ফোন বেজে উঠলো বিরক্ত হয়েই মনোজ ফোনটা রিসিভ করল এবং বলল  'আমি যখন ফোনটা ধরছি না ,তাহলে বুঝতে হবে যে ,আমি কোন জরুরী কাজে আছি।'
তখন অপরপক্ষ বললে  'কিরে এত রেগে যাচ্ছিস কেন ?আমি আবার কখন ফোন করলাম এতবার। কে তোকে এতবার ফোন করছে রে ?রসিকতার সঙ্গে সুরঞ্জন বলল।
মনোজ এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো ' ও তুই সুরো?'
সুরঞ্জন বলল  'আমি । সুরঞ্জন সেন। কলকাতার বালিগঞ্জ..।'
মনোজ বললো  'থাক আর পরিচয় দিতে হবে না। ক্ষমা চাইছি।'
সুরঞ্জন হেসে হেসে বলল'এবার বল তো বন্ধু তুই কাকে প্রত্যাশা করেছিলি?'
মনোজ বললো  'তোকে আমি পরে সব কথা বলব ।আমি  ভীষণ সমস্যায় পড়ে গেছি তোর হেল্প চাই ভাই।'
সুরঞ্জন বলল  'মনোজ বসু আমার হেল্প নেবে, সে তো একাই একশ। কলেজ লাইফ থেকে দেখে আসছি।'
মনোজ  বলল  'না রে ,সুরো, আমি একটা বিপদের মধ্যে আছি আবার একটা এখন নতুন বিপদ।'
সুরঞ্জন বলল  'দুটো নূতন‌ বিপদ? কেমন যেন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি ।একটু খুলে বল তো? রেখা ভালো আছে তো রে?'
মনোজ বলল  'বন্ধু ।নতুন বিপদের মধ্যে একটা বিপদ হচ্ছে রেখা।'
সুরঞ্জন বলল ( অবাক হয়ে) 'রেখা! রেখার মতো ভালো মেয়ে হয় না ।ওর বিপদ হতে যাবে কেন?'
মনোজ বলল 'আরে ,আমি কি বলেছি রেখা বাজে মেয়ে? ওর প্রচন্ড শরীর খারাপ।'
সুরঞ্জন একটু চিন্তিত ও ব্যাঘ্র ভাবে বলল 'কেন রে কি হয়েছে? ডাক্তার দেখিয়েছিস?'
মনোজ বলল 'হ্যাঁ আমাদের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান সিতাংশু কাকাকে ফোন করেছিলাম ।উনি ওষুধ বলে দিয়েছেন ,সেটাই খাওয়াচ্ছি।'
সুরঞ্জন বলল 'ও জ্বর বাঁধালো কি করে রে?,'
মনোজ বলল 'আর বলিস না ।গত কাল স্কুলে যেতে হয়েছিল ।প্রচন্ড বৃষ্টি ।তাতে ভিজেছে ।তারমধ্যে সকাল সকাল উঠে পুজোর জন্য স্নান ,কাজকর্ম সারা এরমধ্যে তো আবার যে নতুন কাজের মেয়েটি আছে সে তো অর্ধেক দিন কাজে‌ই‌ আসে না । ন্যাচারালি ওকেই করতে হচ্ছে।'
সুরঞ্জন বলল  'সব জায়গায় কাজের মেয়েদের নিয়ে সমস্যা জানিস তো ?এদিকে মাধু ও ভুগছে। বাপের বাড়ি থেকে এসে সমানে কাজ করে যেতে হচ্ছে ।কাজের মেয়ে ছুটি।'
মনোজ বলল  'বৌদিকে সাবধানে থাকতে বলিস আর এত সকাল সকাল উঠে কাজকর্ম করতে বারন করিস।'
সুরঞ্জন বলল ' হ্যাঁ বলবো।তবে এবার পুজোর কটা দিন শ্বশুরবাড়িতে খুব ভালো কাটালাম জানিস তো। তোকে আসতে বললাম ।আসলে ভালো লাগতো। মাধুও অনেকবার বলছিল।'
মনোজ বলল 'যাক তোদের দিনগুলো তাহলে ভালোই কেটেছে শুনেও ভালো লাগলো।'
সুরঞ্জন বলল  'তোদের কেমন কাটলো?'
মনোজ বলল ' আরে নতুন বিপদ। রেখার দিকে একটু তাকিয়ে দেখে নিল তারপর আস্তে আস্তে বলল আরে সেই পুরনো...? ফিরে এসেছে রে?'
সুরঞ্জন বলল 'এই আমি কিছু বুঝতে পারছি না খুলে বল।'
মনোজ বলল  'পুরোটা খুলে বলতে পারছি?? তুই বুঝতে পারছিস না ,।কলেজ লাইফে চলে যা ।কি ঘটেছিল সেটা স্মরণ কর।'
সুরঞ্জনা অবাক হয়ে বলল ' দীর্ঘ দশ বছর পর।'
মনোজ বলল 'কোন মানে হয় ,তুই বল? এখন আমার পক্ষে সম্ভব?'
রেখার কথাটা আবার কানে গেল। নির্মল আকাশে হঠাৎ করে যেন কালো অন্ধকার ঘনিয়ে আসলো ।মনে হচ্ছে যেন সারা পৃথিবী তাকে গ্রাস করে ফেলবে ।ভয়ানক অন্ধকার। আকাশ থেকে বৃষ্টি হবে ।বজ্রপাতে এক্ষুনি সমস্ত কিছু তছনছ করে দেবে, ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে ।ঝড়ঝঞ্জা যেন এসে উপস্থিত হলো।
রেখা ফ্যালফ্যাল করে মনোজের দিকে তাকিয়ে রইল।
মনোজ কথা বলতে বলতে হঠাৎ সুরঞ্জনকে বলল 'তোকে আমি পরে বলব ।দাঁড়া, দেখি তো কি হলো রেখার?'
মনোজ রেখাকে বলল  'কি হয়েছে? ঠিক আছে তুমি?'
রেখা হঠাৎই যেনো কেমন আচরণ করতে লাগলো ওর যেন হঠাৎ করে বুকে কষ্ট শুরু হয়েছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
মনোজ অধীরভাবে বলল ' কি হয়েছে রেখা ?এই নাও জল খাও ।(তাড়াতাড়ি জলের গ্লাসটা এগিয়ে নিয়ে কাছে ধরে)।কষ্ট হচ্ছে ?কোথায় ?আমাকে বল।'
সুরঞ্জন তখনও ফোনটা ধরে আছে বলল  'কি হলো রে ?কি হলো রেখার? আমি ফোনটা রাখছি। তুই এখন রেখাকে দেখ।'
ফোন কেটে গেল ।মনোজ রেখার ‌পাশে বসে রেখার বুকে পিঠে ভালো করে হাত বুলাল। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল ' রেখা শান্ত হও ।কি হয়েছে ?আমাকে বল। অনেকক্ষণ পর রেখা শ্বাসটা ঠিক করে নিল।'
মনোজ ভাবছে  'রেখা কি কিছু আন্দাজ করতে পারছে ?যার জন্য ওর শরীরের ভেতরে একটা কষ্ট জমাট বেঁধে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হল।'
রেখা দুই হাত দিয়ে মনোজকে আবার আঁকড়ে ধরল। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো।
মনোজ  বলল  'রেখা তুমি এরকম করছ কেন? আমি তো তোমার পাশেই  আছি।'
রেখা আবার বললো ‌'তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেও না'।
মনোজ রেখাকে দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে বুকের কাছে মাথা রেখে বলল  'আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাব রেখা, তুমি কেন এসব ভাবছো? তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো ।তোমার মিলির বেবিরা কিন্তু তোমাকে খুব মিস করবে আর মিলি‌ তো তোমাকে দেখতে না পেলে কেমন করে তুমি জানো?'
রেখা বললো    'মিলিকে খেতে দিতে হবে।'
মনোজ বলল  'কটা বাজে তাই?'
রেখা ঘড়ির দিকে আঙুল দিয়ে দেখাল।
মনোজ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে ছয়টা বাজে।
'আরে ,তাই তো ওর তো  খাওয়ার টাইম হয়ে গেছে রেখা ।ঠিক আছে তুমি কিন্তু ব্যস্ত হবে না। চুপ করে শুয়ে থাকবে ।আমি ওদের খেতে দিয়ে আসি কেমন?'
রেখা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো।
মনোজ হাসিমুখে রেখার কপালে একটা চুম্মা এঁকে চলে গেল ।কিন্তু ফেলে গেল ফোনটা।
হঠাৎই আবার ফোন বেজে ওঠে ক্রিং ক্রিং ক্রিং।
বেশ কয়েকবার বেজেই চলল। রেখা বাধ্য হয়েই ফোনটা রিসিভ করল 'হ্যালো, হ্যালো হ্যালো'।
ও প্রান্ত থেকে কেউ কোনো সাড়া দিল না কিন্তু ফোনটা কিন্তু ধরেই আছে। রেখার একে তো শরীর ভালো নয় ।তবুও বলল ' কে বলছেন আপনি? কাকে চাইছেন?'
অপরপক্ষ কিন্তু চুপ।
এরইমধ্যে মনোজ চলে এসেছে। রেখার হাতে ফোনটা দেখে মনোজ ক্রোধে ফেটে পড়লো আর বলল 'তুমি আমার ফোন কেন ধরেছ? স্পাই গিরি করছো? তোমার না শরীর খারাপ ।তোমার লজ্জা করে না ফোন ধরতে । ফোন যখন রিসিভ করছ তখন তোমার কিন্ত শরীর খারাপের কোন লক্ষ্মন দেখা যাচ্ছে না।'
রেখা শুধু আস্তে আস্তে বলল  'অনেকবার বেজে যাচ্ছে তো তাই?'
মনোজ বলল  'বাজুক ফোন ।তোমার শরীর খারাপ তোমাকে বলেছিলাম চুপ করে শুয়ে থাকতে।'
রেখা বললো  'আসলে আমি ভাবলাম যদি তোমার কোন আর্জেন্ট ফোন হয়ে থাকে ।সেজন্য ..দিয়ে আবার খকখক করে কাশতে শুরু করল।'
মনোজ তো সমানে বলে যেতে লাগলো  'আমার  আর্জেন্ট ফোন আসলে সেটা আমি বুঝব রেখা ।তোমাকে কেউ ফোকর দালালি করতে বলে নি।'
মনোজের মুখ থেকে এই সমস্ত শব্দ শুনে রেখা কেমন যেন ভয় পেয়ে যেতে লাগল ।কি বলছে এসব মনোজ রেখাকে।
রেখা শুধু বলল  'আমি আর তোমার ফোন ধরবো না ।প্লিজ আর তুমি আমাকে এসব কথা বলো না। আমি নিতে পারছি না।'
মনোজ বলল ' অত ন্যাকামো তুমি করো না তো ।অনেক ন্যাকামো দেখেছি। অসহ্য লাগছে।'
রেখা শুধু বলল- 'আমাকে তোমার অসহ্য লাগছে। রেখার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো।'
রেখা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে নি মনোজ যেভাবে রেখাকে কথাগুলো বলবে ,সামান্য একটা ফোন ধরাকে  নিয়ে ।রেখার জীবনে তাহলে কি অশান্তির বীজ বপন হয়ে গেছে? কি হবে পরবর্তী ক্ষেত্রে ?সে চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠল।

DCXZC

LOVE

dfsd

LOVE

vczdx

LOVE