শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত
(পর্ব ৬)
শামীমা আহমেদ
---শায়লার মা ভাই বোন আত্মীয়স্বজনেরা অপেক্ষায়, কবে শায়লার ভিসার কাগজপত্র আসবে আর শায়লা কানাডায় পাড়ি জমাবে।শায়লা কাউকে বলতে পারছে না তার জীবনে কি ঘটে গেছে!যে আত্মীয়রা এতদিন নিশ্চুপ ছিল আজ সেই মামী চাচীরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। যেন শায়লার জন্য তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে । মেয়েকে বিয়ে দিয়ে উদ্ধার করেছে, এবার স্বামীর ঘরে পাঠিয়ে পিতৃহারা মেয়ের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করছে। সবার দৃষ্টি এখন এমন বিদেশি পাত্রের দিকে। সবার ঘরেইতো মেয়ে আছে।ইতিমধ্যে শায়লাকেও জানিয়ে রেখেছে, কানাডা গিয়ে ছোট বোনদের কথা যেন ভুলে যেও না। তোমার কাছাকাছি রেখো।যেন শায়লা কানাডা গিয়ে ফ্যাক্টরি থেকে পাত্র বানিয়ে বানিয়ে সাপ্লাই দিবে।শায়লার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় রুহি খালাকে জিজ্ঞেস করতে কেন এমন প্রতারনা করলেন আমাদের সাথে!কেন সব কিছু জেনেও,, পরক্ষণেই নায়লা,মা আর রাহাতের কথা মনে পড়ে যায়।সবার জন্য তাকেই তো ভাবতেই হতো!
রুহি খালা পুরান ঢাকার মেয়ে।ঢাকাইয়া বাপের একমাত্র মেয়ে।বাপের যত প্লাস্টিক আর চুড়ির কারখানা সবই পেয়েছেএই
মেয়ে ।যেমন অগাধ টাকা রুহি খালা আর তার বাপের, মনও তেমনি দিলদরিয়া।ইচ্ছে করেই তিনি ঘর জামাই রাখেননি যেন মেয়ের মনমত সংসার সাজাতে পারে। শায়লার ভাই রাহাতের পড়াশুনার খরচ নিঃস্বার্থভাবে তারাই দিয়েছে। উদার মনমানসিকতার এই পরিবারটি খুবই সহজ সরল। কে জানে নোমান সাহেবই কি তাদের কাছে সবকিছু আড়াল করেছিলো কিনা! তবে শায়লাদের পরিবারের সবচেয়ে ভালো তো তারাই চায়।এখানে শায়লার কী ভালো করলো সে তা বুঝে না।
কেন যে শায়লা কিছু না ভেবেই মত দিয়েছিলো?সেই তার একার জীবন একাই রয়ে গেলো।নিজের জীবনের কিছুই যেন মিলে না।অবচেতন মনে বারবার নোমান সাহেবের প্রোফাইলটা ঘুরে আসে।অজানা মানুষটা অজানাই রয়ে গেলো। একটা মেয়ের উন্নত বিশ্বের একটি দেশে সংসার হবে। এতে মাতৃস্থানীয়রা অনেক খুশি হয়ে যান! তাদের মত যেন সারাজীবন সন্তান পালন আর হেঁসেল ঠেলে জীবন না কাটে এমন ভাবনায়।কিন্তু ওরা বুঝতে পারে না এর চেয়েও আরো অনেককিছু জীবনকে সুন্দর করতে প্রয়োজন হয়।মনের এমন অবস্থায় হঠাৎ করেই একদিন শিহাবের সাথে পরিচয়টা ঘটে গেলো! ফেসবুকে প্রোফাইল পিকে সানগ্লাস পরা নায়ক ভাবের একটা ছবি। যদিও এইসব ছবি ফেইক থাকে। কিন্তু ফেসবুক বায়োতে লোকটির কথাটা শায়লাকে বেশ টেনে নিলো।চমৎকার লেখনী।
"পেছনের একার জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে চলছি এই একা আমিই"।
কথাটা শায়লার মনে ধরে যায়। তাইতো! কথাটাতো তারও!
তবে কি লোকটিও তারই মত একা! অবশ্য মেয়েদের একাকীত্বের সুযোগ নিতে অনেকেই এইসব আবেগী কথা দিয়ে রাখে। শায়লা ভাবলো,নক দিয়ে দেখা যাক কেমন হয়। ভালো মানুষ না হলে যোগাযোগ বন্ধ করে দিবো। নোমানের ভাবনা থেকে মনকে সরাতে হবে নয়তো তাকে নোমান সাহেবের স্ত্রী হয়ে, নয়তো তার সন্তানদের ন্যানী হয়ে জীবন কাটাতে হবে।অবশ্য শায়লা না জানালে বিষয়টি কেউই কোনদিন জানতে পারবে না। আসলে এরা দেশে আসে শিক্ষিত কাজের বুয়া খুঁজতে। বিয়ে একটা বাহানা।ওখানে নেয়ার পর চলে নির্মম আচরণ। তবুও মেয়েরা বিদেশ থেকে হাসিমুখে বাবা মায়ের সাথে কথা বলে।বুঝাতে চায় আমি এখানে অনেক সুখী। বাবা মা তোমরা আমাকে অনেক ভালো বিয়ে দিয়েছো।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much