৩০ মার্চ ২০২২

আইরিন মনীষা'র কবিতা "রিক্তের বেদন"




রিক্তের বেদন
আইরিন মনীষা 

বড়  অভিমানী মেয়ে আমি
অল্প শোকে কাতর
হারানো প্রেমের বিরহে আজি
হয়েছি আমি পাথর।

হাজারো স্বপ্নের পসরা নিয়ে
করেছিনু বুনন কাব্য
সেই কাব্যটির প্রতিটি পাতায়
আমার দুঃখের নাট্য। 

বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সা
ছিলোনা কিছুই চাওয়া
সুখে দুঃখে থাকবো দুজন
হলোনা তাও পাওয়া। 

বিনা দোষে ছাড়লে আমায়
বাঁধলে অন্যে ঘর,
আমার যতো আবেগ অনুভুতি
করলে তুমি পর। 

সময় যেন ঘনিয়ে এলো 
ডাকছে আমার রব
মরণের পরে মাটির ঘরে
ফিরবো হয়ে শব।

নাসিমা মিশু এর কবিতা "কুর্নিশ"




কুর্নিশ 
নাসিমা মিশু

কুর্নিশ মহাশয়- বাপ জী,ভাই, দাদা গুরুজন, 
বড় বড় শিক্ষিত, অধিপতি, কর্তা ব্যক্তিগন
আপনাদের কুর্নিশ ।
ছোট আমি ,অতি ছোট্ট দীন হীন, 
জরাজীর্ণ সব হীন; 
কেনো ই বা এই দুর্দশা! 
কুর্নিশে হাত জোড় ঠিক ; 
মাথা মোর ণত নহে, দেখো দুচোখ বাড়িয়ে ।
চেয়ে দেখো ভালো করে, মোর আঁখির তীব্রতা 
প্রখর দীপ্তিময় নয় কী ?
মোর দু'নয়নে উপছে উঠেছে তোমাদের কীর্তি ।
দুর্নীতি, ঘুষ, সুদ, দৌড়াত্ব,দাপট... 
ডুবে গেছো তোমরা ।
টাকা আর টাকা  হায়!কেড়ে নিয়েছে তোমাদের বোধ ।
শুধু কী তাই ?
দেখছি পড়ছি শুনছি পবিত্র সংসদ কলুষিত হলো হায়
মানব পাচার ঘৃণ্য মানুষ নামের দানবের পদচারণায় ।

এক মা পারে কী ! এমন লোভী দানবদের থাবা থেকে আমাদের রক্ষা করতে... 

আমি, আমরা বলি থামো এবার ;হাত যবে উঠিয়েছি,
কুর্নিশটা দাও করতে ভক্তি ভরে বিনম্র বিশ্বাসে ।
একটু হলেও দাও পরিচয় তোমাদের শ্রেষ্ঠত্বের ।
শিক্ষা, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে পরিবার সব তো করেছো কলুষিত! 
এবার থামাও তোমাদের নির্লজ্জতা, 
কুর্নিশটা নাও সৎ, সত্য ও সততার সাথে ।
আর কত চাও?
শুনছি, পড়ছি বিদেশে ব্যাংক নাকি পেট ফুলে ফেঁপে হয়ে উঠেছে কলাগাছ তোমাদের টাকায় ।
পত্র পত্রিকায় বড় বড় হরফে একজনের বাণীতে চোখ মোর কপালে- 
বেতন দিতে হলে ছয় মাস পড়ে ছাপাতে হতে হবে টাকা 
বেসামাল মদ খোর যতটা না বেসামাল মদ্যপ পানে,
তারচেয়ে ও অধিক বেসামাল লজ্জার মাথা খাওয়া তোমাদের কর্ম ।
এখনও আছে সময়- 
কুর্নিশ কুর্নিশে বলছি দয়া করো, আমাদের বাঁচতে দাও।
তোমাদের ধৃষ্টতা, আমাদের অক্ষম অপারগতার একদিন হবে শেষ- 
একথা জেনো নিশ্চিত ।
এপার ওপার কোনো পাড়ে না হলেও, হবে হবে পরপারে হবে।
কুর্নিশ বাপজী ভাই জী, আবার ও বলছি- 
শোনো শোনো দেশ জননীর কথা- 
জননীর সাথে সততার দৃষ্টান্তে হাত মিলিয়ে দেশটাকে করো রক্ষা ।
শোনো শোনো বলি-
মরে গেলে পচে যাবে 
মাটির সাথে মিশে যাবে মাটি তৈরি দেহ 
থেকে যাবে কর্ম কীর্তি, কর্মের দায়।

কুর্নিশ কুর্নিশ তোমাদের কুর্নিশ বিনম্র শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসে ।

ভালো থেকো তোমরা, ভালো থাকতে দিও আমাদেরকে এই মিনতি আর্জিত কুর্নিশে তোমাদের কাছে মোর ।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৮০




ধারাবাহিক উপন্যাস 


শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৮০)
শামীমা আহমেদ 

শায়লা এবার উঠতে হবে,চলো। দুপুরের খাবারের সময় অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে।সাড়ে তিনটা বাজতে চলেছে।চলো,কোথাও কিছু খেয়ে নেই। শিহাব শায়লাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললেও শায়লা যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। শিহাবের কথায় স্বাভাবিকে এলো। অস্ফুট স্বরে বললো,হ্যাঁ, চলো, তবে খাওয়ার জন্য অন্য কোথাও নয়।এখানে কিছু খাবারের দোকান আছে, সেখানে বসে কিছু খেয়ে নেই। শিহাব একমত হলো।দুজনেই উঠে দাঁড়ালো।শিহাব চোখের ভাষায় যেন শায়লাকে আবার সব কিছু মনে করিয়ে দিচ্ছে। আর তাতে শায়লার অকপটে উত্তর,তুমি ভেবোনা। আজ আর আমি বাসায় ফিরছিনা। জীবন আজ থেকে অন্যরকম হবে।
দুজনে এখানেই একটা রেস্টুরেন্টে বিফ বার্গার আর কোল্ড ড্রিংকস দিয়ে লাঞ্চ সেরে নিলো। শিহাব শায়লাকে নিয়ে ভাবছে। এখন কি তবে শায়লাকে অফিসে নিয়ে যাবে নাকি ওর নিজের ফ্ল্যাটে  রেখে আসবে?কিন্তু বাসায় শায়লা একা একা কি করবে ? শিহাবের আজ অফিসে বেশ কিছু জরুরী কাজ আছে।অফিস থেকে বেরুতে  রাত হয়ে যাবে।এতক্ষন শায়লাকে অফিসে বসিয়ে রাখাও খুব একটা ভালো দেখাবে না। কি করা যায় ? ভাবতেই শায়লা শিহাবের মুখভঙ্গি যেন পড়ে নিলো।শিহাব কি নিয়ে চিন্তিত জানতে চাইলো। 
তুমি কি আমাকে নিয়ে বিব্রত বোধ করছো শিহাব ? 
একেবারেই না, তুমি আমার সাথে চলো, আমরা একসাথেই থাকবো। কাজ শেষ করে একসাথেই বাসায় ফিরবো।
কথাটা বলেই শিহাবের মন আনন্দে নেচে উঠলো!  শায়লাকে আজ সে আপন করে পেতে যাচ্ছে। শিহাবের সেই রবীন্দ্র সংগীতটির কথা মনে পড়ছে... ন্যায় অন্যায় জানিনে জানিনে জানিনে শুধু তোমারে জানি, তোমারে জানি,ওগো নন্দিনী। 
শায়লা হাত বাড়িয়ে দিলো। শিহাব হাত এগিয়ে শায়লাকে ধরলো। শিহাব দেখলো শায়লার হাতে তার দেয়া সেই ব্রেসলেটটা ! শিহাব খুবই পুলকিত হলো! দুজনে দ্রুত হেঁটে  বাইকের দিকে এগিয়ে গেলো। শিহাব বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো, শায়লা আজ আমার বাসায় গেলে ওর জন্যতো কিছু পোশাক প্রয়োজন। কিন্তু কখন যে বেরুবো ? 
শায়লা শিহাবের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো, কি ভাবছো ?
এইতো,ভাবছি তোমার জন্য কিছু পোশাক কেনা দরকার কিন্তু,,, 
শিহাবকে থামিয়ে শায়লা বললো, কোন কিছু প্রয়োজন নেই। আমি তোমার টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে থাকবো। শিহাব যেন একটা উপায় খুঁজে পেয়ে স্বস্তি পেলো।
শিহাব বাইক স্টার্ট দিলো।শায়লা পিছনে বসতেই আর এক মূহুর্তও দেরি না, শিহাবের পংখীরাজ বাইক যেন উড়ে চললো। 
শিহাবের অফিসে ঢুকতে প্রায় পাঁচটা হয়ে গেলো। শিহাব শায়লাকে তার অফিস রুমে রাখা ঐপাশের সোফায় বসতে বললো। শায়লা শিহাবের কথামতো সোফায় চুপটি করে বসে রইল। সে বুঝতে পারছে, বাসায় এখন কি পরিস্থিতি হতে পারে। 
শায়লা এখনো বাসায় ফেরেনি। বিষয়টি রুহি খালা খুব একটা ভালো ভাবে নিচ্ছে না। সে শায়লার মাকে নানান আক্রমনাত্মক কথা শোনাচ্ছেন। আজ আর বড় বোনের মত সম্মান করে কোন কথা বলছে না। সে একেবারে হিংস্র বাঘিনীর মত ক্ষেপে আছে। সে  রাহাতকে কল করে শায়লার বাসায় না ফেরার কথা জানালো, শায়লা এখনো বাসায় ফেরেনি রাহাত। আজ ওকে একা বাইরে যেতে দেওয়া ঠিক হয়নি।
রাহাত ভীষণ অবাক হলো! ঘড়িতে সময় বিকেল পাঁচটা।সেই দুপুর বারোটায় বেরিয়েছে।  রাহাত শায়লাকে কল দিলো। শিহাবের অফিস রুমে সোফায় ক্লান্তিতে  শায়লার চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রাহাতের কলে সে জাগলো। ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে রাহাতের কল দেখে কিভাবে তা মোকাবেলা করবে একটু ভেবে নিলো।
ওপ্রান্তে রাহাতের উৎকন্ঠিত জিজ্ঞাসা, 
আপু তুমি এখনো বাসায় ফেরোনি, অনেক বেলা হয়েছে। তাড়াতাড়ি বাসায় এসো।
শায়লা রাহাতকে জানালো, আজ আমি আর বাসায় ফিরে যাচ্ছিনা রাহাত। আমি শিহাবের সাথে আছি। বাকী জীবন শিহাবের সাথেই কাটিয়ে দিবো।
শায়লার এমন কথায় রাহাত ভীষণ অবাক হয়ে গেলো।সাথে মান সম্মানের কথা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়লো। তবু্ও শায়লাকে মানাতে
সে বললো, না আপু এটাতো কথা ছিল না।তুমি কাজের জন্য বাইরে গিয়েছো। কাজ শেষ করে তোমাকে বাসায় ফিরে আসতে হবে।
না, আমি ফিরবো না। আমি শিহাবের সাথেই থাকবো। আর যদি পারো,নোমান সাহেবকে দেশে আসতে নিষেধ করে দাও।আমি তার সাথে কোথাও যাবো না।
শায়লার এমন কথা শুনে রাহাতের আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেলো। এমন কথা রুহি খালা বলেছিল, সে শোনেনি। সে বুঝতে পারেনি, আপু যে এভাবে বদলে যাবে ! রাহাত তাকে যতই বাসায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছে, শায়লা ততটাই  শক্ত হয়ে যাচ্ছে। যেন শিহাবের কাছে নিজেকে সঁপে দিচ্ছে। রাহাত আর কোন দিক বুঝতে না পেরে কল কেটে দিলো।নিজের বোকামির খেসারত নিজেকেই দিতে হচ্ছে।
ওপাশ থেকে শিহাব সবই শুনছিল।শায়লা বেশ দৃঢ়ভাবেই রাহাতকে ফিরিয়ে দিলো।
তাহলে শায়লাকে নিয়ে তার বাসাতেই ফিরতে হবে। শিহাব জানালো, শায়লা আমার কাজ গুছাতে রাত আটটা বেজে যাবে। তুমি অপেক্ষা করতে পারবে না ? শায়লা বললো,খুব পারবো। বাসার কথা মনে হতেই বাসার  চাবির কথা মনে হলো। সে কেয়ারটেকার বিল্লালকে কল দিয়ে বাসার কথা জানতে চাইলো, বিল্লাল আমার ফ্ল্যাটের চাবি তোমার কাছে নিয়েছো ?
না ছার, ঘরে তো সেই বিদেশি ম্যাডাম। এইতো অর্ডার দিয়া পিজা নাস্তা আনাইলো।আমি উপরে গিয়া দিয়া আসলাম ।ম্যাডাম আমারে বখশিশ দিলো। আমি নিতে চাই নাই ছার,কিন্তু  জোর কইরা দিলো।
উফ! বিল্লালের মুখ যেন রেলগাড়ির মত চলছে। শিহাব তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলো। 
শিহাব বুঝতে পারছে না, রিশতিনা কেনো এখনো যায়নি। সে তাকে সেই সকালেই চলে যাওয়ার কথা বলে এসেছিলো। কেন সে যায়নি ? সে কি বুঝতে পারছে না, তার সাথে আমি আর জীবন এগিয়ে নিতে চাইছি না।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। একটু পরে রাত হয়ে যাবে। এখন তাকে  যেতে বলা মানে অন্য বিপদ ডেকে আনা। শিহাব কি করবে তা গভীর ভাবে ভেবে  নিলো।শায়লাকে নিয়ে তবে আজ রাতে কোন হোটেলেই উঠতে হবে।কাল সকালে বন্ধু রোমেলকে ডেকে রিশতিনাকে বিদায় জানাতে হবে। 
শায়লা শিহাবের জন্য অপেক্ষায় সোফায় একেবারে ভাবলেশহীনভাবে বসে আছে।যেন সবকিছু তার শিহাবের উপরে ছেড়ে দেয়া। আজ শিহাব যেখানে নিয়ে যাবে শায়লা নির্দ্বিধায়  সেখানেই যাবে। শিহাব সোফায় এসে শায়লার পাশে বসলো। শায়লার হাত ধরে বললো, শায়লা আমার একেবারেই বিশ্বাস হচ্ছে না, তুমি যে পুরোপুরি আমার হয়ে গেছো।
তোমাকে আপন করে পেতে যাচ্ছি। তুমি আজীবন আমার হয়েই থেকো।
শায়লা শিহাবের কাঁধে মাথা রেখে বললো, শিহাব আমি সারাজীবন শুধু দিয়েই গেছি।তুমি আমাকে আমার নিজের করে নিযের জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষকে কেমন করে কাছে নিতে হয় সেটা শিখিয়েছো। শিহাব আমি তোমার মাঝেই সব নির্ভরতা খুঁজি।তোমার কাছেই সবটুকুর আবদার যাচি। তোমাতেই বিলীন হওয়ার জন্য নিজেকে উজার করে দিতে জানি। শিহাব তুমি আমায় গ্রহন করো। আমার আমিটাকে তোমার করে নাও আর তোমাকে পাওয়ার পূর্ণ সুখে আমাকে ভরিয়ে নিতে দাও।
ঠিক আছে শায়লা, তোমার চাওয়াই আমার কাছে শিরোধার্য। তবে আমার বাসায় এখনো রিশতিনা আছে।তাকে বলেছিলাম চলে যেতে কিন্তু সে এখনো আছে। আমি চাইনা তোমরা দুজন মুখোমুখি হও।এতে আরো ঝামেলা বাড়বে।তাই আমরা আজ উত্তরায় আমার এক কাজিনের হোটেলে থাকবো। যদি  তোমার কোন আপত্তি না থাকে।
শায়লার স্পষ্ট উত্তর,আপত্তির কিছু নেই। তুমি সাথে থাকলে এই পুরো পৃথিবীটাই আমার।
ঠিক আছে উঠো।গুছিয়ে নাও। চলো বের হবো।শিহাব সব গুছিয়ে কবিরকে অফিস লক করে দিতে বললো।
শায়লা আর শিহাব সবদিক ভেবে নিয়ে, সব কিছুকে উপেক্ষা করে নতুন জীবনের সন্ধানে একটা নতুন স্বপ্ন নিয়ে পদধাপে দরজার কাছে এগিয়ে গেলো। দুজনার মুখে বিজয়ীর হাসি।
হঠাৎই শায়লার মোবাইল মেজেজ রিং বেজে উঠলো। শায়লা হাতে ধরা মোবাইল মেসেজে চোখ রাখতেই ভীষণ অবাক হলো! ছোট বোন নায়লার  ম্যাসেজ।
আপু, মা বাসায় স্ট্রোক করেছে। রুহি খালা আমাকে জানালো। রাহাত ভাইয়া অফিসে।মাকে দ্রুত হসপিটালে নিতে হবে। আমি এম্বুলেন্স কল করেছি।তুমি আমাদের মাকে বাঁচাও আপু, দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাও।
শায়লার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না!"


চলবে....

মমতা রায় চৌধুরী ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৪৪




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৪৪
পাল তুলেছে খুশির হাওয়া
মমতা রায় চৌধুরী



মনোজ চোখ বুঝে আছে কিন্তু মন বোঝেনি। আজকে অফিস যেতে ভালো লাগছে না। সকাল থেকেই মেজাজটা কেমন খাটটা হয়ে গেছে। রেখার উপর অকারনে চিৎকার ,চেঁচামেচি করলো। সারাদিন এর রেশ থেকে যাবে। রেখার হিম শীতল উত্তরটা অনেকটা ট্রেনে অন্যমনস্ক যাত্রী বসে থাকলে হঠাৎ করে হুইসেল বেজে গেলে যেরকম হয়, ঠিক সে রকম জোরে ধাক্কা দেয়ার মত।
এদিকে সুরোদের বাড়িতে সত্যিই যাওয়ার দরকার যা ক্ষেপে আছে রেখা। সত্যিই তো, ওর তো কোন দোষ ছিল না।। আমার যে মাথাটা কেন মাঝে মাঝে এরকম হয় নিজেই বুঝে উঠতে পারছি না। এক্ষুনি স্কুলে বেরিয়ে যাবে ।একবার বলব গিয়ে।
রেখা তখন স্কুলের জন্য রেডি হচ্ছে ।
মনোজ দরজায় নক করল। রেখা শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে আড় চোখে  তাকিয়ে দেখল মনোজ কিছু বলল না। তারপর পিনাপটা ঠিকঠাক করে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে চুলটা আচড়ে ক্লেচার লাগিয়ে নিল, সিঁদুর পরে নিল।
 তখন ও মনোজ দাঁড়িয়ে দরজার কাছে ।মনোজ একটু হালকা কেশে নিল মনোজের অস্তিত্বটাকে বোঝানোর জন্য ।
রেখা সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছে।
মনোজ খেয়াল করল রেখা মোটামুটি রেডি হয়ে গেছে ।এখন ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বেরোনোর চিন্তা ঠিক তখনই মনোজ বলল' রেখা সকালে তোমার সঙ্গে ওই রকম ব্যবহার করাটা আমার ঠিক হয়নি। তার জন্য সরি।'
রেখা কোন সাড়া দিচ্ছে না। এবার রেখা ব্যাগে র চেনটা বন্ধ করে চশমাটা পরে নিল। এবার বেরোতে যাবে দরজা আগলে দাঁড়ালো 
মনোজ । হচ্ছেটা কি ?কি হল? তুমি সাড়া দিচ্ছ না ?
তখনও রেখা কিছু বলছে না।
 মনোজ বলল' তুমি উত্তর না দিয়ে কোথাও যেতে পারবে না ।
'তখন রেখা বলল 'আমি তো তোমাকে কিছু বলিনি। তুমি বলেছ আমি শুনে নিলাম। তুমি সরি বললে আমি শুনে নিলাম'।
তুমি কিছু বলবে না?
' কি বলবো বলব? আমার কথা তুমি শোনো ?না বোঝো বোঝার চেষ্টা করো?
 ঠিক আছে সরো বেরোতে হবে, স্কুলে যেতে না হলে দেরি হয়ে যাবে ট্রেন পাব না।'
'আজকে তোমার স্কুলে যাওয়া হবে না বলে হাত দুটো ধরল রেখার।'
'কি করছো তুমি? আমি রেডি হয়ে গেছি স্কুলে যাব না তাই কখনো হয় নাকি?'
কোন কাজ বাকি আছে কি?'
'তোমার সঙ্গে আমার কতগুলো কথা আছে।'
রেখা মনে মনে ভাবলে এই জন্যই মনে হচ্ছে রেখার ঘরে এসেছে।
'কি কথা?'
'আগে বলো রাগ করোনি?'
'আজকাল আমার না কোন কিছুতে কিছু এসে যায় না ।আমি জানি রাগ করে তো কোন লাভ নেই। কার ওপর রাগ করবো বলো তো? যে রাগের গুরুত্ব বোঝেনা ।মান অভিমানের গুরুত্ব বোঝেনা ।তার সঙ্গে ?আমি এই বেশ ভালো আছি জানো তো?'
 মনোজ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
'ঠিক আছে তুমি এবারকার মত আমাকে ক্ষমা করে দাও।'
'আমি তো তোমার প্রতি রাগই করি নি। ক্ষমা করার প্রশ্নটা কোথা থেকে আসছে?'
Ok
তাহলে এস এখানে বসো। হাত দুটো ধরে রেখাকে   সোফাতে  বসালো। মনোজও তার পাশে বসলো।
তারপর রেখাকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে আসলো।
রেখা যেন কেমন হয়ে গেল ।সবকিছু যেন ভুলে গেল ।ও যেন একটা নিশ্চিত আশ্রয় খুঁজছিল নিজের ভেতরের যে ক্লান্তি কষ্ট সেগুলোকে ঝেড়ে মুছে ফেলে দেবার জন্য।
মনোজ  বলল' রাগ কমেছে?'
রেখা মনে মনে ভাবছে আসলে মেয়েরা এরকমই স্বামীর একটু ভালোবাসা আদর পেলে সবকিছু গলে যায়।
রেখা বলল 'দরজা খোলা আছে।'
'আমি কি পর নারীর সঙ্গে পরকীয়া করছি নাকি?
'আমার নিজের বউয়ের সাথে প্রেম করছি।'
'বাপরে বীরপুরুষ?'
'ওই দেখো মা?'
বলতেই মনো জ   রেখাকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে দিল।
রেখা খিল খিল করে হেসে উঠলো
'ও তুমি আমার সাথে দুষ্টু দুষ্টু করলে?'
এইবার রেখা কে পুরো জাপটে ধরে মনোজের ঠোটটা স্পর্শ করালো রেখার ঠোঁটে।  ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে লাগলো ।রেখা ও যেন কেমন পাগলের মতো হয়ে যেতে লাগলো।
এরকম চলেছে কতক্ষণ নিজেদের হিসেব নেই তারপর হঠাৎ শান্ত স্নিগ্ধতায় ভরে গিয়ে রেখা বলল' সত্যিই আজকে স্কুলে যাওয়া হলো না। তুমি যে কি করো না মাঝে মাঝে।'
'আমি কি করেছি গো?'
মনোজের বুকে দুই  চার দুমদুম করে কিল দিয়ে বলল 'আমি জানি না।'
"এবার জরুরী কথা শোনো?"
"স্কুলে যখন যাওয়া হলই না, বলো শুনি?'
মনোজের কাঁধে মাথা রেখে বলল।
'বলছি সুরোদের বাড়িতে যেতে হবে তো  নাকি?'
রেখা বললো 'এই যা ,হ্যাঁ, কবে যেন?
' আরে কালকে বিয়ে তো?'
'কবে যেতে চাইছ?'
'আজকে যাবে?'
রেখা বলল' কিন্তু বাচ্চা গুলো?'
'সে আমি চৈতির মা কে বা সেন্টুদাকে বলে 
দেব ।
'আর মাসি আসবে তো?'
'মাসিকে  তাহলে ফোন করতে হবে?'
এক্ষুনি ফোন করে কনফার্ম হয়ে নাও।'
রেখা বলল ''ok
রেখা সঙ্গে সঙ্গে ফোন লাগালো ।রিং হতে না হতেই মাসির বৌমা ফোন ধরল।
বলল "হ্যালো'।
'বলছি মাসির শরীর কেমন আছে গো?'
'আগের থেকে ভালো আছে।'
'বলছি কালকে কাজে আসতে পারবে কিনা একটু বলতে পারবে?'
মাসির বৌমা ,মাসিকে ফোনটা দিল তারপর বলল "তোমার শরীর কেমন?'
ওই আছি।
'কি হয়েছে বৌমা?'
"ও বৌমা।'
 ফোন করেছি কাজে আসতে পারবে কিনা…?

"তুমি কি বলছ কালকে আসতে পারবে?'
দেখি?
'ও মাসি দেখি বললে হবে না। কালকে থাকবো না ।তুমি আসলে আমার খুব উপকার হয়। বাচ্চা গুলোর ভাতগুলো করে দিতে পারতে। ওরা কি খাবে না হলে বলো সারাদিন?'
'ঠিক আছে যাবো।'
'তোমাকে ডাক্তার কি বলেছেন?'
'পেশার লো ছিল বৌমা?
আর কি কি যেন বলল?
"যাক ওষুধ দিয়েছেন তো?'
"হ্যাঁ ,বৌমা দিয়েছে।"
'আচ্ছা মাসি তুমি রেস্ট নাও  
তাহলে ।কালকে এসো ।আসলে আমার খুব সুবিধে হয়। আসলে ওরই বন্ধুর বোনের বিয়ে তো যেতে হবে। আজকেই বেরোবো। আজকে আমি রান্নাবান্না করে রেখেই যাবো। কালকে বিয়ে বাড়ি আছে।'
'কালকে তোমরা ফিরতে পারবে?'
'ধরে রাখো ফিরতে পারবো না।'
'আচ্ছা ঠিক আছে বৌমা, চিন্তা করো
 না। তোমার যে দুদিন মনে হয় তুমি কাটাও । বাচ্চা গুলোকে নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি খাইয়ে দাইয়ে  ঠিকই  দেবো।'
'তুমি তো জানো কোথায় কি থাকে ওদের মাংস রাখা থাকবে তুমি ভাত মাংস ওদের করে দিও আর তুমি তোমার খাবারগুলো করে নিও এখান থেকে। পারলে থেকে যেয়ো।'
'আমি থাকবো !তোমার শাশুড়ি মা…?
শাশুড়ি মায়েদের ও তো নেমন্তন্ন ।গেলে ভালো, যদি না যায় তাতে কি হয়েছে তোমার তো থাকার ঘর আলাদা আছে মাসি। তোমার অসুবিধা কি তোমাদের ছেলে সব বলে দিয়ে যাবে মাকে ।তোমার কোন অসুবিধা হবে না।।
'আচ্ছা বৌমা।'
মনোজ আনন্দে উল্লাসে বলে' উঠলো হুর রে.রে ।
'ঠিক আছে শান্তি এবার।'
মনোজ হাত দুটো নিয়ে নিজের গালে আলতো করে স্পর্শ করছে ।
 তারপর বলল 'বুকে হাত দিয়ে দেখো শান্তি।'
'দেখো কতদিন আমাদের যাওয়া হয় না কোথাও চলো একটু মজা করেই আসি নাকি?
'যাও দেখো মা দিদিরা যাবে কিনা বল ওদের।'
'তুমি গুছিয়ে নাও তাহলে আজকে আমরা সন্ধ্যার ট্রেনটা ধরছি।'
Ok
'সন্ধ্যার ট্রেন ধরবে কেন তার আগেই চল না? "
"হ্যাঁ তার আগে বলে চলে যাব ।দেখি এবার মা দিদিরা কি আবার বলে?'
'আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী…।'গান গাইতে গাইতে মনোজ চলে গেল রেখার শাশুড়ি মায়ের ঘরে।
রেখা সব গোছ-গাছ করে নিতে থাকলো।
ওয়ারড্রব টা খুলে শাড়ি সিলেট করতে থাকলো কোনটা পড়বে ।মনোজের ব্লেজার টা নিয়ে নিল ওর ব্লেজারের কালারটা হচ্ছে পিংক ।তাহলে রেখা কি  ভাইলেট কালারের ওপালাটা পরবে নাকি চাঁদনী বেনারসি টা পড়বে? রেখা
এই ভাবছে। 
'অন্যদিকে মনোজ তার মাকে বললো মা তাড়াতাড়ি গোছগাছ করে নাও ।দিদি গোছগাছ করে নাও। বিয়ে বাড়িতে যাব।'
মা দিদি দুজনে সমস্বরে  বলে উঠল 'কার বিয়েতে?'
'কেন সেদিন বলল না? সুরোর বোনের বিয়ে, শিখা ।তুমি ভুলে গেলে?'
 মনোজের মা মেয়ের দিকে তাকালো।
মনামী  বলল 'কিন্তু আমি কি করে  যাই  ভাই ?আমি তো ভালো শাড়িই আনি নি।'
'শাড়ির সমস্যা হলে তুই রেখার শাড়ি পরবি?'
'রেখার শাড়ি পড়বো?'বলেই কেমন একটু বাঁকা হাসি হাসলো।
"কেন না পড়ার কি আছে?"
', না না আমি ওর শাড়ি পরবো না।'
"তাহলে কি করবি যাবি না তো?'
'না আমি যাব না।।"
মনোজের মায়ের যাবার ইচ্ছে ছিল মেয়ের না যাওয়ার জন্য বলল "তাহলে আমি কি করে যাব বল?'
তোমার না যাবার কি আছে মা?
দিদি বাড়ি থাকবে।'
'নারে ও একা থাকবে। থাক, তোরাই ঘুরে আয় আমরা দুজন বাড়ি থাকি।'
'দেখো যেটা ভালো বোঝো ।আমি আর কি বলবো।'
মনামী বলল'কুকুরের বাচ্চা ওদেরকে কে খেতে দেবে?'
'প্রথমে দিদি তোকে একটা কথা বলি কুকুর বলে সম্বোধন করিস না। ওদেরকে কিন্তু আমরা কন্যাস্নেহে  লালন পালন করছি। ওদের তো নাম আছে। নাম বললেই তো যথেষ্ট।'
মনামী একটু ভেঞ্চি কেটে বলল' বাববা এত গায়ে লাগছে কুকুরকে কুকুর বলবো না?'
কুকুরকে কুকুর বলবি না কেন কিন্তু যেখানে আমরা ওদের নাম রেখেছি ওই নামে ডাকলে কি অসুবিধা আছে
 দিদি ?সব সময় এত নেগেটিভ কথা বলিস কেন?'
'ওই নিয়ে তোদের ভাবতে হবে না সে ব্যবস্থা আমরা করেই যাব। মাসি 
থাকবে ।মাসি রান্নাবান্না করবে খাওয়াবে দাওয়াবে।'
মনামী বলল 'ও আচ্ছা'।
আর একটা কথা বলি মা দিদি তোমাদের দুজনকেই। মাসির সঙ্গে কিন্তু খিট খিট করবে না ।মাসি কিন্তু খুবই ভালো মনের মানুষ। দেখো কোন ঝগড়া টগরা বাঁধিয়ে দিও না।'
মনামী বলল 'কেন রে ভাই ,আমরা কি ঝগড়া করি?'
'আমি সে কথা বলছি না।'
'কথায় কথা বাড়বে তোদেরকে যেটুকু বলার ছিল বললাম।'
'মাসিও কিন্তু এখানেই খাবে।'।
'ও মা মাসির রান্না কে করবে রে ভাই?'
এটা তোদের করতে হবে না তোদেরটা তোরা রান্না করে খাস ।মাসিকে বলা আছে মাসি নিজে করে নেবে।'
মনোযের মা আর দিদি দুজনেই পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
মনোজ কথাগুলো বলেই ঘরে গেল সব জিনিস গোছগাছ ঠিকঠাক হয়েছে কিনা দেখতে ।
কেমন যেন একটা উন্মত্ত ফূর্তি কাজ করছে ।প্রচন্ড একটা সেলিব্রেশন করার মোক্ষম উপায় পেয়েছে ।সেই সেলিব্রেশনটা হবে শিখার বিয়েকে উপলক্ষ করে ।অনেকদিন পর রেখা আর মনোজ যেন আবার পরস্পর পরস্পরের কাছাকাছি হতে চলেছে। এই ভাবেই বোধহয় মানুষের জীবনে কোন পালা পার্বণকে কেন্দ্র করে একত্রিত হবার একটা প্রচেষ্টা চলে ।কত ঝড় বয়ে গেছে ওদের দুজনের মধ্যে । আজ যেন প্রবল ভাবে ভালোলাগার জোর নাড়া দিতে লাগলো। এত দিনের যে তীব্র বিষ ফুল ঝরে পড়েছিল মনোজের হৃদয়ে আজকে সেই গন্ধটাকা ক্রমশ অসহ্য মনে হচ্ছে। সেই বিষ ফুলের ছেয়ে যাওয়া অস্তিত্বকে তার গন্ধটা কে নাকে রুমাল চাপা দেবার মত একটা প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু তাতেই কি সেই গন্ধ বিলুপ্ত হবে? এইসব ভাবনায় যেতে চায় না মনোজ আজ হৃদয়ে খুশির পাল
 তুলেছে তাই হারিয়ে যেতে চায় অনেক দূরে।।।

শিবনাথ মণ্ডল এর কবিতা "মদের   জগৎ"






মদের   জগৎ
শিবনাথ মণ্ডল



ধন‍্য,ধন‍্য মদ তুমি
তোমার কেন বদনাম
চিরকাল মাতালের
বাঁচাও তুমি প্রাণ।
মদ খায়না এ জগতে
ক'জন মানুষ আছে
মদ খাওয়ার কত গুণ
মাতাল শুধু বোঝে।
পূজোবাড়ি বিয়েবাড়ি 
মদের সম্মান কত
দেশিমদ বিলাতিমদ
নাম আছে যত।
রাস্তা দিয়ে কত মাতাল
টলতে টলতে চলে
মুখে আসা কথা গুলো
আপন মনে বলে।
মদের মধ‍্যে কি'যে যাদু
ধরলে ছাড়েনা
সংসারে অশান্তি বাড়ায়
শান্তি থাকেনা।
ছেলে বুড়ো সবাই এখন
মদকে ভালোবাসে 
বারোমাসে তেরপাব্বন
আছে প্রতিমাসে।।

Yhg6

LOVE