৩০ আগস্ট ২০২১

সানি সরকার


 

কবির বারান্দা 


মুক ও বধির হয়ে থাকি... 

যেমন ওই গাছ, ওই শীতল  প্রাচীর, 

ঠাণ্ডা জলের মতন অতল ছুঁয়ে আছি 

আর কী নেবে 


খুব শান্ত ও ধীর আমাদের চাষাবাদ

খাদানের ভেতর নেমে আসি 

ওই আমাদের শস্যবীজ

ওই আমাদের অনন্ত কাঁচা মাটির গন্ধ

ওই আমার শস্যদেবী পাথর হয়ে গিয়েছে 


এখন মাঠের মধ্যিখানে খেলা করছে সার্কাস বালক

রিং নিয়ে, ঘোড়া নিয়ে, প্রাচীণ দড়ির ওপর

আর কুচকুচে কালো বুক ফুলে আছে

হাসি লেগে আছে ঠোঁটের সমস্তটায়

এতটাই চঞ্চল সে, পৃথিবীটিকে হাতের ওপর নিয়ে

ঘুমন্ত মানুষের মতো ক'য়েকবার ঘুরিয়ে দিল 


এইসব তোমার গোচরে আসে না

তবলার স্থির তালের ভেতর

আস্তে-আস্তে চাঁদের দু'পিঠ পরিক্রমণ করলে এক্ষুণি

এতটা-ই আস্তে, যেন মাথা থেকে পা-বেয়ে 

একটি-একটি করে সরীসৃপ যাতায়াত করল

এবং তুমি কিছুই টের পেলে না মুহূর্তের জন্যেও 


মুক ও বধির এই বিদ্যানিকেতনে

কেন যে কোনও ব্ল্যাকবোর্ড নেই, নৌকো নেই…

শুধু একটি ব্ল্যাকহোল, যে-যেমন আসে

আর তেমনি চলে যায় 


কবিতার মুক্তির পথের দিকে

কবির তর্জনী নির্দেশ করা... 

এইভাবে কবির কলঙ্ক জমা হয়

আত্মা ও পরমাত্মার মাঝের বারান্দায় 

কবির সার্কাস বালক ঘুমকে সিলিংয়ে টাঙিয়ে

ট্রেনের হুইশেল আর দেয়াল ঘড়ির শব্দ গুনছে 

                                          রাত্রি পৌঁনে চারটেয়...

আয়শা সিদ্দিকা




তুই নেই বলে 


তুই নেই বলে

অসময়ে বৃষ্টি এলে আজ ভিজতে যায় চলে 

তুই নেই বলে

পুরোনো কিছু স্মৃতি আর তোর মুখখানা আজও আমায় সমানভাবে  করে বিচলিত

তুই নেই বলে 

এখন কেউ মায়া দেখাতে এলে আমি অনেকটাই থাকি অাড়ালে 

তুই নেই বলে

বসন্ত এসেও বসন্ত মুখ ফিরিয়ে গেলো 

তুই নেই বলে 

কবিতার ছন্দগুলোও আজ বেশ এলোমেলো 

তুই নেই বলে

কেউ আর শাসন করে না, বকে না আমায় হাসি ঠাট্টার ছলে 

তুই নেই বলে

জানিস আজকাল কথা বলতে খুব জড়তা হয় 

তুই নেই বলে 

বালিশটা এখন রোজই ভিজে 

চোখের কিছু জলে

তুই নেই বলে 

সুখ পাখি এসে দূরে গেল চলে

তুই নেই বলে 

শ্রাবণ ধারার মেঘে,আবেগেরা আছে মুখ ঢেকে

তুই নেই বলে 

এ শহর আজ চলে মিথ‍্যে কাব‍্যের ছলে। 

প্রমি জান্নাত


 


যদি এমন হয়


ধরুন কোনো এক ভোরে ঘুম ভাঙতেই জানলেন আমি নেই!

তারপর?  আমি হীনা সকাল গুলো কেমন কাটবে আপনার?


কোনো এক মধ্যদুপুরে হঠাৎ আমার কথা মনে পড়ল ভীষণ 

কিন্তু তপ্ত দহনে পুড়াবার জন্য আমাকে আর খুঁজে পেলেন না ; আমি নেই আর, কেমন লাগবে তখন?


কোনো এক বরষায় হঠাৎ যদি আমার সাথে গল্প মাখতে ইচ্ছে হয়। আমি তখন ইহলোকের গল্পের উর্ধ্বে হারিয়ে গিয়েছি ; কি করবেন তখন?


কোনো এক গোধূলি বেলায় আমাকে নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার কথা দেয়া ছিল হয়তো তবে নির্দিষ্ট সেই গোধূলি আলো আসবার আগেই আমি সন্ধ্যার ঠিকানায় নাম লিখালাম। 


আমার সাথে হারিয়ে যাওয়া হলো না আর।


আমার অপেক্ষায় সময় কাটাবেন তখন? নাকি অন্য কোনো স্পর্শ আপনাকে আমার স্মৃতি টুকু থেকে ও নিয়ে যাবে দূরত্বে!


আসবেন বলে বলে কাছে আসার তারিখ টা কেবল পিছিয়ে দিলেন অথচ ভুলে গেলেন মৃত্যু অপেক্ষার ধার ধারে না। আপনার অবহেলা, অপেক্ষা টুকু উপেক্ষায় ফেলে যদি মৃত্যু নামক অতিথি আমাকে ডেকে নিয়ে যায়!! 


জানেন তো আপনাকে মনে পড়লেই আমি আজকাল আকাশ দেখি। আপনাকে বলতে না পারা কথা গুলো, আক্ষেপ, অভিযোগের কাব্য গুলো কেবল মেঘেদের ঠিকানায় উড়িয়ে দেই।


মন খারাপ হলেই শূণ্যতা দেখি। আমার আর তখন নিজেকে শূন্য মনে হয় না। বিশালতার আকাশের মাঝে ক্ষুদ্র আমি টা পরিপূর্ণ।



The sky cannot be seen from the Grave..

The Sky cannot be seen From the grave..


সেমন্ত, আপনি আমার আকাশ হবেন? যে আকাশ টা বুকে পুষে অতল অন্ধকারে হারিয়ে গেলেও আকাশ দেখতে না পারার দুঃখবোধ আমায় আর পোড়াবে না।

হা‌বিবুর রহমান হা‌বিব




দগ্ধ দীর্ঘশ্বাসঃ


দীর্ঘশ্বা‌সের অ‌তি দীর্ঘ দগ্ধ গু‌লো,

যতই কা‌ছে যাই,ততই দূ‌রে পাই,

দি‌কে দি‌কে শুধু ভরা হাহাকার ,

নাই শুধু নাই ।

চৈ‌ত্রের দ্বা‌হে পোড়া শুস্ক কান‌ণে,

বিরস ক‌ন্ঠে শুধু পা‌খির ডা‌কের আর্তনাদ ।

তৃ‌ষিত বুক ফাটা পিপাসায় চে‌য়ে থাকা,

অ‌গ্নি আকা‌শের পা‌নে আর পা‌নে ।।।

শিবনাথ মণ্ডল


অসুস্থ‍্য  পৃথিবী


মাটির নীচেজল কমছে

ডাঙায় জলোচ্ছৃস

আর কটাদিন পরে মানুষ

চাঁদে করবে বাস।

              বারে বারে নিম্মচাপ

                      প্রকৃতির কি খেলা

                   হরকা বানে ঘরবাড়ি  ভাসে

                         গাঙে যেন ভেলা।

মেঘ ভাঙা বৃষ্টি কোথাও

    যেখানে সেখানে ধস্

কোথাও আবার দাবানল

      মাটিতে নেই রস।

                      হিমালয় পড়ছে গলে

                              সূর্যের বেড়েছে তাপ

                         সমূদ্র থেকে উঠেআসে

                                  গভীর নিম্মচাপ।

গাছ গাছালী হচ্ছে কাটা

        বাড়ছে গাড়ী বাড়ি

পৃথিবীর ভারসাম্য এবার

দেবে আকাশ পাড়ি।।