একান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক। তার নিত্যদিনের আসা যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কথা নিয়ে কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন " চলবে...
টানাপোড়েন ৬১
আশা সম্ভাবনাময় সকালের জন্য
একটা দুশ্চিন্তা রেখাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে কোন কাজে মন লাগাতে পারছে না।
কাকিমা বললেন ' ননী তুই তো একেবারে চুপ হয়ে গেলি।'
রেখা বলল 'কিছু বলছো কাকিমা?'
কাকিমা বললেন' কিছু চিন্তা করিস না। সামান্য জ্বর এসেছে ।চিন্তার কি আছে?'
রেখা বলল 'না গো কাকিমা, আমি যদি বাড়িতে থাকতাম ।তাহলে এতটা চিন্তা হতো না ।আসলে একা বাড়িতে আর ওর একটু শরীর খারাপ হলে, ও কেমন বাচ্চা হয়ে যায়। তারমধ্যে ওই ছোট ছোট বাচ্চাগুলো রয়েছে ওদের দেখভাল...।
কাকু বললেন 'তুই বললি যে পাশের বাড়ির পার্থকে থাকতে বলেছিস রাত্রিতে।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ কাকু তা হলেও মনের থেকে কি আর দুশ্চিন্তা যায় বলো?'
কাকিমা বললেন 'সেটা তো ঠিকই ।নিজের লোকের ,আপনজনের কিছু হলে মাথা ঠিক থাকে না।"
কাকু বললেন 'হ্যাঁ ,গো ,আমাদের ননী কিছু খেয়েছে ,সন্ধ্যেবেলায় নাস্তা করেছে?"
কাকিমা বললেন 'তুমিও যেমন ।দেখছো শোনার পর থেকে কেমন শুয়ে পড়ল আর সমানে ফোনটাকে দেখে যাচ্ছে ।কখন একটা কল আসে।'
রেখা উঠে বসলো 'না গো কাকিমা ।কালকে থাকব না ভাবছি। এখনই রাত্রিবেলায় ফোন করে দিই মনোজকে ।কালকে যেন গাড়ি পাঠিয়ে দেয়।'
কাকিমা অবাক হয়ে বললেন' কালকে চলে যাবি?'
রেখা বলল 'না গিয়ে উপায় কি? ভেবেছিলাম তো কটা দিন থাকবো।'
কাকু বললেন 'দেখ কালকেই জ্বর কমে যাবে?'
রেখা বলল 'তাই যেন হয় কাকু।"
কাকিমা বললেন 'তাহলে কালকে কেন গাড়ির কথা বলবি ননী?'
রেখা বলল ' কালকেই চলে যাই ।অন্য একদিন আসব।'
কাকিমা বললেন 'বড্ড আশা নিয়েছিলাম। ননী কদিন থাকবি?'
রেখা বলল' সে তো আমিও চেয়েছিলাম কাকিমা। কি করবো বলো?'
এমন সময় রেখার ফোন বেজে উঠলো ।রেখা দ্রুত টেবিলের উপর থাকা ফোনটাকে নিয়ে বলল,' হ্যালো'
রেখার এতটা চিন্তা মাথায় ছিল যে ফোনটা কে করেছে সেটারও দেখার সুযোগ পায় নি।
অপরপ্রান্ত থেকে কণ্ঠ ভেসে আসলো' হ্যাঁ রে রেখা ?'আমি রিম্পা দি বলছি।'
রেখা বলল , হ্যাঁ বল'
রিম্পা দি বলল হ্যাঁ রে তোকে কতবার কল করা হয়েছে ।তুই ফোন রিসিভ করলি না ।'
রেখা বলল 'ও তুমি ফোন করেছিলে?
রিম্পাদি বলল 'অন্য কারোর আশা করছিলি?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ গো?'
রিম্পাদি বলল 'কার কি হয়েছে?'
রেখা বলল' মনোজের?
রিম্পাদি 'বলল কি হয়েছে?'
রেখা বলল 'জ্বর এসেছে।'
রিম্পাদি বলল' তার জন্য এত চিন্তা করছিস?'
রেখা বলল 'না শুধু জ্বর এসবের জন্য চিন্তা করছি না । ভয় তো করোনার জন্য।'
রিম্পাদি বলল 'অত চিন্তা করিস না। ওসব কিছু হয় নি?'
রেখা বলল 'তাই যেন হয়।'
রিম্পাদি বলল' হ্যাঁ রে স্কুল থেকে ফোন এসেছিল?'
রেখা বলল 'বড়দির মিসকল দেখেছি। ঘড়ি আর আমি ফোন ব্যাক করি নি।'
রিম্পাদি বলল 'হ্যাঁ বড়দি আমাকেও ফোন করেছিলেন।'
রেখা বলল:' কী জন্য গো?'
রিম্পা দি বলল '16 তারিখে স্কুল আছে ওইদিনই একটা anti-drug এর ওপর প্রোগ্রাম আছে।'
রেখা বলল 'ও বুঝতে পেরেছি।'
রিম্পাদি বলল' ওই প্রগ্রামে অ্যাটেন্ড করার জন্য।'
রেখা বলল 'স্কুলে কি আর কোন কলিগ নেই।'
রিম্পাদি বলল ' যা বলেছিস। সব সময় একজনকে নিয়েই টানাটানি?"
রেখা বলল 'সেই তো? আমরা হচ্ছি সর্বঘটে কাঠালি কলা।'
রিম্পাদি বলল 'তুই কবে আসবি?'
রেখা বলল 'ভেবেছিলাম কালকে থাকবো কিন্তু না মনোজের শরীরটা ভালো নেই। থাকাটা ভালো দেখাবে না।'
রিম্পাদি বললো 'তাহলে সেটা জানিয়েছিস মনোজকে ?'
রেখা বলল' 'এই ফোন করতে যাব তখন তুমি ফোন করলে ?'
রিম্পা দি বলল 'ঠিক আছে। আমিএখন রাখছি। তুই কথা বলে নে।'
রেখা বলল 'ok
রেখা রিং করল মনোজের ফোনে?
কয়েকবার ফোন বেজে যাবার পর ফোনটা ধরল।
রেখা বলল"হ্যালো'
অপরপ্রান্ত থেকে বলল" হ্যালো"!
রেখা বলল তোমার শরীর কেমন আছ?
মনোজ বলল 'আগের থেকে একটু ভালো।"
রেখা বলল 'পার্থ এসেছে?'
মনোজ বলল তু'মি কি আবার পার্থকে বলেছিলে?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ"
মনোজ বলল 'আবার ওকে কেন বলতে গেছো কাজের মানুষ।'
রেখা একটু অভিমানের সুরে বলল এমনি কি আর বলেছি বলো ?চিন্তা হয় তো পার্থ পাশে থাকলেও তবু তো রাত্রে একটু দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে পারব।:
মনোজ চুপ করে থাকে
রেখা আবার বলল'কালকে পার্থ ব'লো যেন গাড়িটা পাঠায় । আমি চলে যাব।'
মনোজ বলল' কালকে তো তোমার আসার কথা নয়।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ ,কিন্তু আমি কাল যাব।'
মনোজ বলল 'কেন আরেকটা দিন থেকে এসো।'
রেখা বলল ' না আমি যা বলছি ,তুমি সেটা শোনো।'
মনোজ বলল 'আর তো একটা দিনের ব্যাপার।
আমাকে নিয়ে অত ভাবছো কেন?'সাধে কি আর ভাবি সেবারের কথা মনে নেই। সামান্য জ্বর তোমাকে কেমন কাবু করে দিয়েছিল তারপর সেই কটা দিন তুমি এমন বিফ করেছিলে ভয় পেয়ে গেছিলাম।
রেখা এবার রেগে গিয়ে বলল 'তোমাকে যেটা বলছি সেটা করো ।কেন কথা শুনছো না বল তো?'
মনোজ বলল 'ঠিক আছে !পার্থকে জানাবো।'
রেখা বলল 'নটা বাজতে চলল এখনো যদি না আসে তাহলে মিলিরা কখন খাবার খাবে?'
মনোজ বলল 'দে'খো ওকে তো আমরা জোর করতে পারি না ,।না?'
এমন সময়ই বাড়িতে কলিং বেলের আওয়াজ জয় গনেশ জয় গনেশ জয় গনেশ দেবা
মনোজ বলল' রেখা তুমি ফোনটা এখন রাখো দেখি কে এসেছে?'
মনোজ দরজাটা খুলে দিতেই দেখে পার্থ ।
পার্থ বলল' 'দাদা উঠলেন কেন? শুয়ে পড়ুন ।যা করার আমি করছি।'
রেখা বলল 'পার্থ এসেছে?'
মনোজ বলল' হ্যাঁ'।
মনোজ এসেছে বলেই ,এবার ফোনটা রাখে।'
রেখা বলল ok
আর বলল আগামীকাল যেন নতুন আশায় ভরা আর নতুন নতুন সম্ভাবনাময় বিশ্বাসের অটুট বন্ধনে সকাল দেখতে পারি।