০৬ ডিসেম্বর ২০২১

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন" ৬১

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কথা  নিয়ে  কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন  চলবে...






টানাপোড়েন ৬১

আশা সম্ভাবনাময় সকালের জন্য


                                      একটা দুশ্চিন্তা রেখাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে কোন কাজে মন লাগাতে পারছে না। 
কাকিমা বললেন ' ননী তুই তো একেবারে চুপ হয়ে গেলি।'
রেখা বলল 'কিছু বলছো কাকিমা?'
কাকিমা বললেন' কিছু চিন্তা করিস না। সামান্য জ্বর এসেছে ।চিন্তার কি আছে?'
রেখা বলল 'না গো কাকিমা, আমি যদি বাড়িতে থাকতাম ।তাহলে এতটা চিন্তা হতো না ।আসলে একা বাড়িতে আর ওর একটু শরীর খারাপ হলে, ও কেমন বাচ্চা হয়ে যায়। তারমধ্যে ওই ছোট ছোট বাচ্চাগুলো রয়েছে ওদের দেখভাল...।
কাকু বললেন 'তুই বললি  যে পাশের বাড়ির পার্থকে থাকতে বলেছিস রাত্রিতে।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ কাকু তা হলেও মনের থেকে কি আর দুশ্চিন্তা যায় বলো?'
কাকিমা বললেন 'সেটা তো ঠিকই ।নিজের লোকের ,আপনজনের কিছু হলে মাথা ঠিক থাকে না।"
কাকু বললেন 'হ্যাঁ ,গো ,আমাদের ননী কিছু খেয়েছে ,সন্ধ্যেবেলায় নাস্তা করেছে?"
কাকিমা বললেন 'তুমিও যেমন ।দেখছো শোনার পর থেকে কেমন শুয়ে পড়ল আর সমানে ফোনটাকে দেখে যাচ্ছে ।কখন একটা কল আসে।'
রেখা উঠে বসলো 'না গো কাকিমা ।কালকে থাকব না ভাবছি। এখনই রাত্রিবেলায় ফোন করে দিই মনোজকে ।কালকে যেন গাড়ি পাঠিয়ে দেয়।'
কাকিমা অবাক হয়ে বললেন' কালকে চলে যাবি?'
রেখা বলল 'না গিয়ে উপায় কি? ভেবেছিলাম তো কটা দিন থাকবো।'
কাকু বললেন 'দেখ কালকেই জ্বর কমে যাবে?'
রেখা বলল 'তাই যেন হয় কাকু।"
কাকিমা বললেন 'তাহলে কালকে কেন গাড়ির কথা বলবি ননী?'
রেখা বলল ' কালকেই চলে যাই ।অন্য একদিন আসব।'
কাকিমা বললেন 'বড্ড আশা  নিয়েছিলাম। ননী কদিন থাকবি?'
রেখা বলল' সে তো আমিও চেয়েছিলাম কাকিমা। কি করবো বলো?'
এমন সময় রেখার ফোন বেজে উঠলো ।রেখা দ্রুত টেবিলের উপর থাকা ফোনটাকে নিয়ে বলল,' হ্যালো'
রেখার এতটা চিন্তা মাথায় ছিল যে ফোনটা কে করেছে সেটারও দেখার সুযোগ পায় নি।
অপরপ্রান্ত থেকে কণ্ঠ ভেসে আসলো' হ্যাঁ রে রেখা ?'আমি রিম্পা দি বলছি।'
রেখা বলল , হ্যাঁ বল'
রিম্পা দি বলল  হ্যাঁ রে তোকে কতবার কল করা হয়েছে ।তুই ফোন রিসিভ করলি না ।'
রেখা বলল 'ও তুমি ফোন করেছিলে?
রিম্পাদি বলল 'অন্য কারোর আশা করছিলি?'
রেখা বলল  'হ্যাঁ গো?'
রিম্পাদি বলল 'কার কি হয়েছে?'
রেখা বলল' মনোজের?
রিম্পাদি 'বলল কি হয়েছে?'
রেখা বলল 'জ্বর এসেছে।'
রিম্পাদি বলল' তার জন্য এত চিন্তা করছিস?'
রেখা বলল 'না শুধু জ্বর এসবের জন্য চিন্তা করছি না । ভয় তো করোনার জন্য।'
রিম্পাদি বলল 'অত চিন্তা করিস না। ওসব কিছু হয় নি?'
রেখা বলল 'তাই যেন হয়।'
রিম্পাদি বলল' হ্যাঁ রে স্কুল থেকে ফোন এসেছিল?'
রেখা বলল  'বড়দির মিসকল দেখেছি। ঘড়ি আর আমি ফোন ব্যাক করি নি।'
রিম্পাদি বলল 'হ্যাঁ বড়দি আমাকেও ফোন করেছিলেন।'
রেখা বলল:' কী জন্য গো?'
রিম্পা দি বলল '16 তারিখে স্কুল আছে ওইদিনই একটা anti-drug এর ওপর প্রোগ্রাম আছে।'
রেখা বলল 'ও বুঝতে পেরেছি।'
রিম্পাদি বলল' ওই প্রগ্রামে অ্যাটেন্ড করার জন্য।'
রেখা বলল 'স্কুলে কি আর কোন কলিগ নেই।'
রিম্পাদি বলল ' যা বলেছিস। সব সময় একজনকে নিয়েই টানাটানি?"
রেখা বলল 'সেই তো? আমরা হচ্ছি সর্বঘটে কাঠালি কলা।'
রিম্পাদি বলল  'তুই কবে আসবি?'
রেখা বলল 'ভেবেছিলাম কালকে থাকবো কিন্তু না মনোজের  শরীরটা ভালো নেই। থাকাটা   ভালো দেখাবে না।'
রিম্পাদি  বললো 'তাহলে সেটা জানিয়েছিস  মনোজকে  ?'
রেখা বলল' 'এই ফোন করতে যাব তখন তুমি ফোন করলে ?'
রিম্পা দি বলল  'ঠিক আছে। আমিএখন রাখছি। তুই কথা বলে নে।'
রেখা বলল 'ok
রেখা রিং করল মনোজের ফোনে?
কয়েকবার ফোন বেজে যাবার পর ফোনটা ধরল।
রেখা বলল"হ্যালো'
অপরপ্রান্ত থেকে বলল" হ্যালো"!
রেখা বলল তোমার শরীর কেমন আছ? 
মনোজ বলল 'আগের থেকে একটু ভালো।"
রেখা বলল 'পার্থ এসেছে?'
মনোজ বলল তু'মি কি আবার পার্থকে বলেছিলে?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ"
মনোজ বলল 'আবার ওকে কেন বলতে গেছো কাজের মানুষ।'
রেখা একটু অভিমানের সুরে বলল এমনি কি আর বলেছি বলো ?চিন্তা হয় তো পার্থ পাশে থাকলেও তবু তো রাত্রে একটু দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে পারব।:
মনোজ চুপ করে থাকে
রেখা আবার বলল'কালকে পার্থ ব'লো যেন গাড়িটা পাঠায় । আমি চলে যাব।'
মনোজ বলল' কালকে তো তোমার আসার কথা নয়।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ ,কিন্তু আমি কাল যাব।'
মনোজ বলল 'কেন আরেকটা দিন থেকে এসো।'
রেখা বলল ' না আমি যা বলছি ,তুমি সেটা শোনো।'
মনোজ বলল 'আর তো একটা দিনের ব্যাপার।
আমাকে নিয়ে অত ভাবছো কেন?'সাধে কি আর ভাবি সেবারের কথা মনে নেই। সামান্য জ্বর তোমাকে কেমন কাবু করে দিয়েছিল তারপর সেই কটা দিন তুমি এমন বিফ করেছিলে ভয় পেয়ে গেছিলাম।
রেখা এবার রেগে গিয়ে বলল 'তোমাকে যেটা বলছি সেটা করো ।কেন কথা শুনছো না বল তো?'
মনোজ বলল 'ঠিক আছে  !পার্থকে জানাবো।'
রেখা বলল  'নটা বাজতে চলল এখনো যদি না আসে তাহলে মিলিরা কখন খাবার খাবে?'
মনোজ বলল 'দে'খো ওকে তো আমরা জোর করতে পারি না ,।না?'
এমন সময়ই বাড়িতে কলিং বেলের আওয়াজ জয় গনেশ জয় গনেশ জয় গনেশ দেবা
মনোজ বলল' রেখা তুমি ফোনটা এখন রাখো দেখি কে এসেছে?'
মনোজ দরজাটা খুলে দিতেই দেখে পার্থ  ।
পার্থ বলল' 'দাদা উঠলেন কেন?  শুয়ে পড়ুন ।যা করার আমি করছি।'
রেখা বলল 'পার্থ এসেছে?'
 মনোজ বলল' হ্যাঁ'।
মনোজ এসেছে বলেই ,এবার ফোনটা রাখে।'
রেখা বলল  ok
আর বলল আগামীকাল যেন নতুন আশায় ভরা আর নতুন নতুন সম্ভাবনাময় বিশ্বাসের অটুট বন্ধনে সকাল দেখতে পারি।

হাবিবুর রহমানের নতুন ধারাবাহিক "ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন"/১

শুরু হলো হাবিবুর রহমানের নতুন ধারাবাহিক "ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন"। এ এক মন কলম ধাড়ক । যার কলম থেকে ঝরে পড়ে জীবনদর্শনের কালি




ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন-১ম পর্ব
            মোঃ হা‌বিবুর রহমান



                                                          ম‌নের গভী‌রের অন্তস্থল থে‌কে প্র‌তি‌নিয়ত স‌ন্দিহান ভ‌রে ‌যেন জানতে চে‌য়ে জিজ্ঞাসা কর‌ছে, হে ম‌নের অ‌ধিপ‌তি তু‌মি আজ ‌কি লিখবে? ভ্রমণ কা‌‌হিণী, বর্ণনামূলক না‌কি ধর্মীয় কোন বিষ‌য়ের অবতারনা ক'র‌বে? যা‌হোক, 'আ‌মি' নামক ম‌নের এ অ‌ধিপ‌তি কে-সে প্র‌শ্নের উত্তর আজও আ‌‌বিস্কার ক'র‌তে পা‌রি‌নি। ম‌নের গভী‌রের দ্বিধাদ্ব‌ন্দ্বে সৃষ্ট এমন স‌ন্দেহটি এতক্ষণে মোটা‌মো‌টি মুক্ত হ'য়ে চূড়ান্তভা‌বে ভাবলাম-হয় ভ্রমণ বিষয়ক, নাহয় বর্ণনামূলক কিংবা বাস্তবধর্মী হবে অবশ‌্যই আমার আজ‌কের লেখার উপজীব্য বিষয়টি। 

ত‌বে এমূহূর্তে তিন-চার‌টি বিষয় ম‌নের গভীর থে‌কে যেন কড়া নাড়‌ছে এবং আমা‌কে বল‌ছে যে, না তু‌মি আজ আমার সম্ব‌ন্ধেই লেখো, তাই অ‌নেকক্ষণ নিশ্চুপ থে‌কে মন‌কে বললাম, হে মন তু‌মি ঠিক ক‌'রে আমার হেড অ‌ফিস‌কে জানাও। হা, সমগ্র দে‌হের হেড অ‌ফিস না‌মে খ্যাত-ম‌স্তি‌স্ক ই‌তোম‌ধ্যে মনকে এমর্মে খবর পা‌ঠি‌য়ে‌ছে যে, তু‌মি আজ ভ্রমণমূলক কিছু একটা লি‌খে ফে‌লো। 

হেড অ‌ফি‌সের আ‌দেশ শি‌রোধার্য যা অমান্য করার সাহস ও সা‌ধ্যি কোনটাই আমার নেই। ত‌বে এত বয়স হ'ল আস‌লে 'আ‌মিটা' কে এখন পর্যন্ত না পারলাম জান‌তে, না পারলাম তা বুঝ‌তে। তাই কথাটা বার বার বল‌ছি। বোধ হয় এখন কিছুটা বেলাই‌নে চ‌'লে যা‌চ্ছি। এইতো ব‌ুঝি হঠাৎ ক‌'রেই আধ্যা‌ত্মিকতার দি‌কেই যা‌চ্ছিলাম, তাই হেড অ‌ফিস আমা‌কে সং‌কেত পাঠা‌লো এব‌লে যে, তু‌মি আজ‌কের ট‌পি‌তেই থাকো। ‌যেই হুকুম সেই কাজ।

১৯৯৪ সা‌লের ‌০৬ সে‌প্টেম্বর সকাল বেলা আনুমা‌নিক দশটার মত হবে। আমার আব্বা ও প‌রিবা‌রের দু' সদস্য এ‌সে‌ছে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জা‌তিক বিমান বন্দরে আমা‌কে বিদায় জানা‌তে। আমার ছোট প‌রিবারের সব‌চে‌য়ে ক্ষু‌দে সদস্য‌টির বয়স তখন মাত্র বছর খা‌নে‌কের কিছু বেশী হ‌বে। এখন সে বাংল‌া‌দেশ সেনাবা‌‌হিনীর মেজর পদবীর একজন অ‌ফিসার, আলহামদু‌লিল্লাহ। বাকী সদস্যা‌টি কে হ'তে পা‌রেন তা সহজেই অনু‌মেয়।

মা‌র্কিন মুল্লুক থে‌কে তদানীন্তন ক্লিনটন প্রশাসন (সরকার) ইউএসএর বিমান বা‌‌হিনীর বিশালাকার একটা বিমান পা‌ঠিয়েছে আমা‌দের নেবার জন্য। হাই‌তির রাজধানী, পোর্ট অব প্রিন্স আমা‌দের গন্তব্যস্থল। এর আ‌গে এত বড় বিমান আর দেখার সৌভাগ্য হয়‌নি আমার। দেখ‌তে ঠিক তি‌মি মা‌ছের সদৃশ। বোধ ক‌'রি এই মাছ নকল ক‌'রেই মা‌র্কিনীরা এত বড় আকা‌শ যান তৈরী ক‌'রে‌ছে। সে এক তাজ্জ্বব ব্যাপার! লে‌জের দিক থে‌কে ডজন খা‌নেক জীপ অকস্মাৎ বের ক‌'রে নি‌য়ে এ‌সে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জা‌তিক বিমান বন্দ‌রে দি‌ব্যি চা‌লি‌য়ে বেড়া‌চ্ছে যা আমা‌দের মত অন্য বাঙ্গালী‌দেরও দারুনভা‌বে নজর কে‌ড়েছি‌লো।

সা‌থে ক‌য়েকটা হেলিকপ্টারও (সি-৫) না‌মের এই বিশাল আকাশযা‌নে বহন ক‌'রে এ‌নেছিল ওরা যা এখনও আমার ম‌নে পড়ে। ম‌নে ম‌নে ভাব‌ছিলাম, কোন দে‌শে চ‌'লে‌ছি? একটু ভয় ভয় ক'র‌ছি‌লো আবার কি‌ঞ্চিত শিহরিতও হ'চ্ছিলাম। এর আ‌গে বেশ ক‌য়েকবার ডমে‌স্টিক ফ্লাই‌টে শুধুমাত্র ঢাকা-য‌শোর ক‌'রে‌ছি কিন্তু তখন অ‌ব্দি আন্তর্জা‌তিক বিমা‌নে ভ্রমণ করা কপা‌লে জো‌টে‌নি।

চল‌বে........

রুকসানা রহমান




থমকে যাওয়া বাসস্টপে


ব্যস্ত জীবন তবুও যদি আমার রোডের সামনে এসে থমকে যাওয়া বাসস্টপে,নাহয় একটু দেখে যেও চোখের তাঁরায়
এই তোমাকে...! 

শরীর জুড়ে বৃষ্টি নামা অভিমানী নিরব নদীর খবর শুনে পড়িমরি...
অচেতন এই দেহখানি রেখো ধরে বুকের কাছে 
চোখের কোনায় শুকনো জলের চিহ্ন মুছে,আলতো হাতে সুরমা এঁকো। 

যখন একলা হবে ছুটোনা আর দিশেহারা,হয়তো তখন পড়বে মনে
ধানের শীষে রোদ বিছিয়ে
সূর্য দিয়েছিলে।

হঠাৎ তখন গুমরে ওঠা কান্না যদি ভীষণ কষ্টো...
জানালার ঐ-পাল্লা খুলে
ট্যালিপ্যাথি করে দেখো
নীল আকাশের অনিঃশেষের জংশনে একলা এক ধ্রুবতারা প্রতিক্ষায়..!

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল" ৩৩

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল" 






বনফুল
শান্তা কামালী 
( ৩৩ পর্ব ) 

জুঁই ঘুম থেকে উঠলো নটায়, ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো।
 জুঁইয়ের বাবা-মা দুজনেই ওর উঠে আসার অপেক্ষা করছিলো। অবশ্য ওনারা সেই সাতটায় উঠে চা বিস্কুট খেয়ে নেন.... তারপর বসে গল্প গুজব করেন।মেয়ে উঠলেই নাস্তা করে। জুঁইকে নিচে নামতে দেখে ময়না টেবিলে নাস্তা পরিবেশন করে দিচ্ছে। জুঁই বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে নাস্তা খাওয়া শেষ করে উপরে উঠে এলো। ফোন হাতে নিতেই জুঁই আশ্চর্য হলো পলাশ ফোন দিয়েছিলো, রুমে না থাকায় ফোন রিসিভ করতে পারেনি জুঁই। জুঁই পলাশকে ফোন দিল, ওপাশ থেকে পলাশ ফোন ধরেই বললো জুঁই তুমি মনে হয় ফোনের কাছে ছিলে না। আমি ফোন দিয়েছিলাম, জুঁই বললো হুমম দেখেছি, জুঁই পলাশকে জিজ্ঞেস করল নাস্তা করেছো?  পলাশ বললো হুমম, জুঁই তোমার শরীর ভালো আছে তো?
 জুঁই একটু আশ্চর্য হলো সত্যিই তো আজ জুঁইয়ের শরীর তেমন ভালো নেই, 
কিন্তু পলাশ কি করে বুঝতে পারলো! হয়তো একেই বলে টেলিপ্যাথি....... 
জুঁই উত্তরে বললো না গো আজ আমার শরীর  খুব একটা ভালো লাগছে না, নাস্তা শেষ করেই রুমে চলে এসেছি। পলাশ বললো জুঁই আজ আমারও কেন যেন মনে হচ্ছিল শরীর ভালো নেই.....।  তুমি কি ডাক্তারের কাছে যাবে? জুঁই বললো তুমি একটু বেশি চিন্তা করছো ডিয়ার। আমার ততটা শরীর খারাপ না, যে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। আমার শরীরটা একটু উইক লাগছে রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। পরে কথা  হবে, বলে জুঁই ফোন কেটে দিয়েছে। পলাশের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল.....। 
 আজ লাঞ্চ করতেও জুঁই নিচে নামেনি দেখে জুঁইয়ের আম্মু উপরে এসে দেখেন জুঁই বেঘোরে পরে ঘুমাচ্ছে, তাই মনোয়ারা বেগম মেয়েকে ডাকলো না। বিকাল চারটায় পলাশ জুঁইয়ের কিছু পছন্দের খাবার নিয়ে জুঁইদের বাসায় হাজির। পলাশ কে দেখে জুঁইয়ের মা মনোয়ারা বেগম ময়না কে বললেন, যা তো জুঁই ডেকে নিয়ে আয়।

চলবে....

শামীমা আহমেদ /২৪




শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ২৪)
শামীমা আহমেদ 

সকালে চায়ের মগ হাতে নিয়ে শায়লা বারান্দায় চলে এলো।অনেকদিন শায়লার বারান্দায় আসা হয় না। বারান্দায়  একটা দোলনা বাঁধা আছে। সেখানে বসে দোল খেতে খেতে চা পান করতে শায়লার খুবই ভালই লাগে।শীত আসি আসি করছে। সকালের ঠান্ডা বাতাসটা শায়লার ভালো লাগলেও,শীতের শুরুতে শায়লার অসুস্থ হওয়ার জন্য অনেকটাই দায়ী। একেবারে জ্বর বাঁধিয়ে শয্যাশায়ী হবার উপক্রম হয়। শায়লা হালকা চাদরে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে। 
শায়লার বাবা শহীদুল হক সাহেব খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন। বারান্দায় দোলনা লাগিয়ে বলেছিলেন আমার তিন প্রজন্মের জন্য আনন্দের খোরাক করে দিলাম।কিন্ত সে তার দুই  প্রজন্মই দেখতে পেলো না। তিন প্রজন্মতো দূরের কথা। শায়লার মায়ের নামে বাড়িটির নাম রাখা হলো "লায়লা ভিলা"।বাবা বলতেন, খুব বেশি নয় আমার তিনসন্তানের জন্য তিনতলার বাড়ি বানাবো আর ছাদে থাকবে ফল ফুল আর ওষুধী গাছের চাষ।অবসর জীবনে মাকে নিয়ে সময় কাটাবেন। শহীদুল সাহেব প্রায়ই বলতেন তিনতলা বাড়ি বানালেও আমি আমার বড় মেয়ের সাথে নীচ তলাতেই থাকবো। কতইনা স্বপ্ন আশা সাধ নিয়ে মানুষ বাঁচতে চায়! কিন্তু নিয়তি যে তার গন্তব্য আগে থেকেই ঠিক করে রাখে। মোবাইলটা দোলনায় রেখে শায়লা উঠে দাঁড়ালো। শায়লাদের বাসার সাথে মাঝারি মাপের একটি রাস্তা চলে গেছে। শায়লাদের বাড়ির ঠিক মুখোমুখি একসময় একটা দোতলা বাড়ি ছিল।একজন সচিব বাড়িটি বানিয়েছিলেন। আজ দোতলা বাড়িটি ভেঙে দশটলা এপার্টমেন্ট হয়েছে। ছেলেমেয়েরা দেশে বিদেশে থাকলেও যার যার পাওনা ফ্ল্যাট বুঝে নিতে একবার করে দেশে এসে ঘুরে যায় আর বৃদ্ধ বাবা মাকে দেখে যায়।কিন্তু  স্থায়ীভাবে আর দেশে থাকা হয় না। এখনতো আর বাবামায়ের প্রয়োজন  নেই এখন প্রয়োজন ফ্ল্যাট সংখ্যা। 
কাজের বুয়া রেনুর মা হচ্ছে এই সকল তথ্যের সোর্স!দারোয়ান, ছুটা বুয়া আর ড্রাইভাররা সারা এলাকার হাড়ির খবর রাখে।কী জানি শায়লার কথা আবার কোন বাড়িতে বলে বেড়াচ্ছে।শায়লা খুব আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে  বাড়িটি দেখে।বাড়িটির নামটিও চমৎকার!  স্বপ্নবাড়ি! সেইতো নিজের একটা বাড়ির মালিক হবার স্বপ্ন কার না থাকে! বাড়িটির নিয়মকানুন বেশ কড়া। দারোয়ানকে অবহিত করে আর ইন্টারকমে পূর্ণ পরিচয় রেখে তবেই বাড়িটিতে ঢোকা যায়।
মেসেজের শব্দ হলো। শায়লা ঘাড় বাঁকিয়ে দেখে নিলো। শিহাবের মেসেজ।  শায়লা ফোনটা হাতে তুলে নিলো।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লেখার দিকে তাকালো।
আজ একটু দূরে  যাচ্ছি।  ফিরতে দেরী হবে।
ইচ্ছে হলে মেসেজ রাখবেন। 
আর এর সাথে সাথেই শিহাব অফলাইন হয়ে গেলেন।
শায়লা ভেবে পায়না কী মেসেজ রাখবে! আর মেসেজ রেখে কীইবা হবে? শিহাবতো নিজের অবস্থান থেকে একটুও টলবে না। তবে কেন শায়লার মেসেজের প্রত্যাশা?যাক না তার যেখানে ইচ্ছে সেখানে, যত দূর ইচ্ছে ততদূর। মিছিমিছি কেন শায়লার মনে আশার বীজ বোনা। রাগে অভিমানে শায়লার চোখ দুটো জলে ভরে গেলো। শিহাবের প্রোফাইল পিকটা লার্জ করে একদৃষ্টে চেয়ে রইল।হঠাৎ শায়লার মনে হলো ছবিটি কথা বলে উঠল!  আমি আছি তো!
কিন্তু শায়লা বিড়বিড় করে বললো, মিথ্যা,  সব মিথ্যা। আমার জীবনে তোমার আসার কোন প্রয়োজন ছিল না। 

শিহাব তার বাইক নিয়ে ছুটছে। দুপুরের মধ্যে তাকে গ্রামে পৌঁছাতে হবে।মায়ের নির্দেশে গ্রামে খালাকে দেখতে যাওয়া।আজ রাতে খালার অপারেশন। গ্রামের হাসপাতালেও আজকাল সার্জারির ব্যবস্থা বেশ ভালোই। ঢাকা থেকে বড় সার্জনরা যায়। যদিও শিহাবের মা অনেক চেয়েছিল তার বোনকে ঢাকায় এনে অপারেশনটি করিয়ে দিতে। খালার কোন ছেলে নেই কিন্তু খালার মেয়েরা মাকে শহরে পাঠাতে রাজী নয়। তারা বাড়িতে থেকেই মায়ের সেবাযত্ন করবে।  তবুও ছেলে নেই, ছেলে নেই বলে  মানুষের কেন  যে এত দুঃখ! 
শিহাবদের পরিবার সবসময় আত্মীয় স্বজনের পাশে থাকে। আর্থিকভাবে শিহাবের পরিবার বেশ স্বচ্ছল।তাইতো স্বজনদের যে কোন সহযোগিতায় তারা এগিয়ে যায় বললে ভুল হবে একেবারে রীতিমতো ছুটে যায়,ঝাপিয়ে পড়ে।শুধু  টাকা পাঠিয়ে দেয়াটাকে তারা মনে করে আত্মীয়কে অপমান করা। তাইতো নিজেরা উপস্থিত থেকে  অপারেশন শেষে নিজের হাতে বিলের টাকা দিয়ে আসবে। আনুসঙ্গিক যাবতীয়  খরচ বহন করবে। শিহাবের মায়ের এটা বহুদিনের অভ্যাস।  আল্লাহর রহমতে তাদের টাকার অভাব নেই।বড় ছেলে শাহেদ না হলেও শিহাব মায়ের নির্দেশ পালনে শুধু হুকুমের অপেক্ষায়। 
শহুরে ভাইয়ের আগমনে গ্রামে তাকে যত্নের সর্বোচ্চ  আয়োজন চলছে। শিহাব এগুলো বেশ এনজয় করে। আতিথেয়তা আর সাথে মনের আবেগ উচ্ছাস মেশানো আন্তরিকতা আজ শুধু গ্রামেই সীমাবদ্ধ। শহরে আজ অন্য কালচার ঢুকে গেছে। রেস্টুরেন্টে রেস্টুরেন্টে  মিট করে চলে আত্মীয়স্বজনের গেট টুগেদার।সবাই কাজিন্স। মামাতো চাচাতো খালাতো ফুপাতো ভাইবোন আর আলাদা নেই।মেসেঞ্জারে গ্রুপ খুলে ভিডিও কলে চ্যাটিং করে রক্তের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা। আর পিতা মাতার স্ট্যাটাসের  বৈষম্যের সাথে তাদের সম্পর্কেও থাকে টানাপোড়েন। 
শিহাব একটানা অনেকদূর বাইক চালিয়ে গ্রামে একটা চায়ের দোকানে থামল। এইপথ দিয়ে ছোটবেলায় বাবামায়ের সাথে কত গিয়েছে! তারপর একসময় শহরে স্থায়ী  হওয়া।তবুও গ্রামের সাথে নাড়ীর বন্ধন।তাইতো সুযোগ পেলেই চলে আসা। শিহাব এককাপ চা অর্ডার করে একটা বেনসন ধরালো। বেশ অনেকটা পথ এসেছে। একটু জিরিয়ে নেয়া যাক। শিহাব পরম মমতায় তার বাইকটিকে হাত বুলিয়ে নিলো। শিহাবের একটি পরম বন্ধু। যে শত অবদানেও কোন প্রতিদান চায়না।
শিহাব অনলাইন হলো।মেসেঞ্জারে ইন করলো। নাহ! শায়লার কোন মেসেজ নেই।
শিহাবের  মনে কোথায় যেন একটা ছন্দপতন হলো।


চলবে....

রাবেয়া পারভীন ৬ষ্ঠ





স্মৃতির জানালায়  
(৬ষ্ঠ পর্ব)
রাবেয়া পারভীন



                                                     আস্তে আস্তে  শবনমের অনেক  গুনের পরিচয় পেয়েছিলো  মাহতাব। শবনম শুধু দেখতেই সুন্দরী ছিলো তাই নয়,  তার আচার ব্যবহার সুন্দর, কথাবার্তা  সুন্দর এবং সে ছিলো  একজন ভালো কবি। তখনকার বিভিন্ন  খবরের কাগজে তার লেখা কবিতা  ছাপা হতো। মাহতাবের পড়ালেখা   চলাফেরা  সবকিছুর প্রতি শবনমের ছিল তিক্ষদৃষ্টি।  মাহতাবের  জীবন গড়ার পিছনে শবনমের  প্রেরণা  ছিল  সন্জীবনী  সুরার মত। এমন অসাধারণ  এক মেয়ের  কাছে  নিজেকে সবসময় ছোট মনে হতো তার। নিজের বুকের ভিতরের  ভালো লাগার কথাটুকু  বলতে কখনোই সাহস পায়নি। শুধু একদিন  বলেছিল 
- জানো শবনম   তোমার মতন  মেয়ে  আমাদের  গ্রামের  কখনো চোখে দেখেনি  শুধু রূপকথার  গল্পে শুনেছে।, আমার খুব ইচ্ছে করে তোমাকে  আমাদের  দেশে নিয়ে গিয়ে  সবাইকে দেখাই,  যাবে  আমাদের  গ্রামে ?
হেসে  শবনম  বলেছিলো
- কেন যাবোনা ?  একদিন না একদিন  তো যাবই ।
শবনমের  সেই কথাতেই  মাহতাবের  কান লাল হয়ে গিয়েছিলো। মুহূর্তেই  কল্পনায় না না স্বপ্নের জাল বুনে ফেলেছিলো  সে। শবনম  বলেছে যাবে তাহলে  সত্যিই যাবে। মাহতাব লেখাপড়ায় ভালো ছিলো বলে  স্যার তাকে খুব ভালোবাসতেন। সেই সাথে স্যারের স্ত্রী  মানে শবনমের মা ও তাঁকে খুব স্নেহ করতেন। বাসায় ভালো কিছু রান্না হলেই  মাহতাবের ডাক পড়ত। শবনমের মা  নিজের ছেলেদের সংগে  একসাথে বসিয়ে  নিজে তদারকি করে মাহতাব কে খাওয়াতেন। ক্রমে মাহতাব  রহমান সাহেবের পরিবারের  একজন সদস্য  হয়ে উঠল। এম এ পাশ করার পর একটা খবরের  কাগজে  চাকরি হলো  মাহতাবের। শবনম  বি,এ, পাশ করে  এম এ  ভর্তি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।  ততদিনে কবিতা  লিখে  অনেক নাম হয়েছিলো শবনমের। কাজের ঝামেলায়  আগের মত ঘনঘন শবনমদের  বাসায়  যাওয়া হতোনা।  অনেক সময়  পনেরো দিন পেরিয়ে  যেত। পনেরো দিন পরে  গেলে  কৃত্রিম  অভিমানের  সুরে  শবনম  বলত
-এতো দিনে বুঝি তোমার সময় হয়েছে ?  কতগুলি কবিতা লিখেছি ,কিন্তু  তুমি পড়নি  বলে ছাপতে দেইনি। চলো  আজকে  সব গুলি শুনবে তারপর যেটা  তুমি পছন্দ করবে সেটাই  ছাপতে  দেব
 স্বরচিত  কবিতা পাঠ  করত  শবনম  আর মাহতাব মুগ্ধ  বিস্ময়ে শবনম কে দেখত  আর কবিতা  পড়া শুনত। মনে মনে  ভাবত  শবনমের মত আর কোন মেয়ে কি কোথাও  আছে ? শবনম  শবনমই  তার কোন তুলনা  হয়না । এই তুলনাহীনা  মেয়েটি তার মত এক সাধারণ  মাহতাব কে সংগ দিয়ে  ধন্য করেছে। কবিতা প্রসংগ শেষ হলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে  মাহতাবের সব খবর নিত । বিগত পনেরো দিন মাহতাব কি খেয়েছে,  কি করেছে , কোথায় কোথায় গেছে, অফিসের কাজ কেমন চলছে,  বাড়ীতে বাবা বোনেরা কেমন আছে!  ঠিকমত চিঠি  লিখেছে কিনা?   এক এক করে শবনম  প্রশ্ন করতো মাহতাব ধীরে ধীরে উত্তর  দিত।  তখন  শবনম একাই যেন  এক মমতাময়ী মা, স্নেহময়ী বোন, প্রিয়ভাষিনী  এক বান্ধবী হয়ে ভরিয়ে দিত মাহতাবকে।
 

চলবে......

কবি আমিনা তাবাসসুম এর গুচ্ছ কবিতা



তোকে দেখব বলেই জেগে থাকি



তোকে দেখবো বলেই জেগে থাকি

অনন্ত পথের থেকে
নিস্তব্ধ গ্যালাক্সি থেকে
যে আলো ছাপিয়ে পড়ে 
তোর চোখে মুখে চিবুকে

সেখানে সুখ হাঁটু মুড়ে বসে
খেলা করে বিষাদের সুরে

তারপর 
বিনম্র চোখের ভাষায়
ডুবে যাই, গভীর সমুদ্র ঠিক

এ শরীরী আদরের ভাঁজে
আত্মার মিলনকে ছুঁই
চেনা কুয়াশায় ঘেরা চাদরে
বাকবিতণ্ডা নেই, মিশে থাকি
আমি আর 
         এক বুক তুই





হেঁটে গেছে কালো শোক



এই মৃত্যু উপত্যকা 
ঘটে যাওয়া ভবিতব্যের 
        সাহস ছিনিয়ে নিতে পারে না
 
কেবল তুমি এবং তোমার ঐশ্চর্য্যের থেকে

এখন বেঁচে থাকা বলতে বুনো মেঘ
যেখানে ঈশ্বর আসেন
তোমার এবং আমার কষ্টগুলো 
নিজের বুকে যত্নে রেখেও
অদ্ভুত রহস্যে হাসেন

সব নিয়মের বাইরে কোনো গণ্ডি থাকে না

এই বিষপান
অথবা ত্রিভুজাকৃতি মৃত্যুর যে সোপান
সন্ধ্যায় উঠে এসেছিল

এই রাতের স্তব্ধতায়
ভুলবশত নয় আদৌ, তোমার আনুগত্যে
বহুদূর হেঁটে গেছে কালো শোক

এখন কি আমরা এক হতে পারি না?





জারিজুরি 



অভিজ্ঞতায় হাসতে হাসতে বন্য হাঁস উঠে এলে
মেছো বক ঝাঁক বেঁধে ভালোবাসার গল্প বোনে।

কয়েকদিনের ছন্নছাড়া সময় নিয়ে 
                       উঠে বসি 
                                   ব্যালকনিতে।

               এখন রোদ্দুর নেই
রাস্তায় দৃষ্টি দাঁড় করিয়ে রেখে
নেমে আসে আলো বাতাসের রূপকথা।

তারপর শুকনো অত্যাচারে দিকভ্রম
মাছরাঙার গায়ে তখন অনির্দিষ্ট রঙের জারিজুরি।

গোলাম কবির





একবার শুধু ভালবেসেই দ্যাখ 

  
  একবার ভালবেসেই দ্যাখ না আমায়!
  ভালবাসলে গড়ে নেবো একতাল মাটি  
  থেকে ছোট্টো সোনার সংসার,
  আসমান ভরা মেঘের উদর থেকে 
  নামাবো বৃষ্টিজল, শক্ত হাতে লাঙলের  
  ফলায় মাটিকে এফোঁড়ওফোঁড় করে 
  করবো চাষাবাদ, তুলবো ঘরে সুগন্ধি
  রাতাবোরো ধান, সব্জিআনাজ, সরিষার
 ক্ষেতের হলুদ ফুলে ফুলে কার্পেট বিছিয়ে
  দেবো তোমার জন্য, তোমার জন্য ফলাবো
  নদীর বুকে জেগে ওঠা নতুন চরের মাটিতে
  লাল রসে ভরা মিষ্টি তরমুজ সহ আরো
  কতো কি! একবার শুধু ভালবেসেই দ্যাখ! 
  জানো তো, ভালবাসা পেলে পুরুষ মানুষ
  হয়ে যায় পাহাড়ের মতো অটল বিশ্বাসে
  আর আকাশের মতে উদার এবং
  ভালবাসলে সব নারীই খরস্রোতা কোনো
  প্রবহমান নদীর মতো হয়ে যায়!
  আমি চাই ভালবেসে আমরা দুজনে মিলে
  এই সুন্দর পৃথিবীর বুকে পাহাড়, আকাশ
  আর নদী হয়ে যাবো! 
  চলো না, ভালবাসি! একসাথে মিলেমিশে
  গড়ে তুলি আমাদের এই সুন্দর 
  সাধের পৃথিবী আবার নতুন করে।

সুমী শারমীন





বিপ্রতীপ বাসনা


জীবনের বিপরীত স্রোতে
বহতা নদীর মুখোমুখি 
তুমি আমি দাঁড়িয়ে।

বিশালাক্ষীর বিশালতায়
কতবার চেয়েছি,
অযাচিতভাবে  হলেও,  
কোন এক মধ্যদুপুরের কোলাহলে 
তোমাকে খুঁজে পাবো জনারণ্যে।

পথের ঠিকানা খুঁজবো বলে
কতো বিনিদ্র রাত আমি
জেগে ছিলাম 
অমাবস্যার দিকে চেয়ে। 
দুচোখ বুঁজে স্বপ্নের পথ ধরে হেঁটে
গেছি আমি দূর বহুদূরে। 

মোহনায় মিশে যাওয়া 
নদীর টলটলে জলের প্রতিবিম্বে 
আমি খুঁজে পেতে চেয়েছি,তোমার মুখ। 
চাঁদনী রাতের রূপোলী আলোর ঝলকে
আমি হারিয়ে ফেলেছি, স্বপ্ন দেখার চোখ। 
ভুলেই গিয়েছিলেম,স্রোতের বিপ্রতীপে 
আমাদের নিয়তি, প্রত্যক্ষ প্রত্যয়ে দাঁড়িয়ে। 

এতটুকু জীবনে, এতো বড় দিনগুলোকে
রূপান্তর করে আমি বেঁচে আছি,
জলের নীচে পাথরচাপা শ্যাওলা হয়ে।

হায়-তৃষিত হৃদয় 
কথোপকথন হয় কি,পাথর চাপা জীবনে !