০৬ ডিসেম্বর ২০২১

রাবেয়া পারভীন ৬ষ্ঠ





স্মৃতির জানালায়  
(৬ষ্ঠ পর্ব)
রাবেয়া পারভীন



                                                     আস্তে আস্তে  শবনমের অনেক  গুনের পরিচয় পেয়েছিলো  মাহতাব। শবনম শুধু দেখতেই সুন্দরী ছিলো তাই নয়,  তার আচার ব্যবহার সুন্দর, কথাবার্তা  সুন্দর এবং সে ছিলো  একজন ভালো কবি। তখনকার বিভিন্ন  খবরের কাগজে তার লেখা কবিতা  ছাপা হতো। মাহতাবের পড়ালেখা   চলাফেরা  সবকিছুর প্রতি শবনমের ছিল তিক্ষদৃষ্টি।  মাহতাবের  জীবন গড়ার পিছনে শবনমের  প্রেরণা  ছিল  সন্জীবনী  সুরার মত। এমন অসাধারণ  এক মেয়ের  কাছে  নিজেকে সবসময় ছোট মনে হতো তার। নিজের বুকের ভিতরের  ভালো লাগার কথাটুকু  বলতে কখনোই সাহস পায়নি। শুধু একদিন  বলেছিল 
- জানো শবনম   তোমার মতন  মেয়ে  আমাদের  গ্রামের  কখনো চোখে দেখেনি  শুধু রূপকথার  গল্পে শুনেছে।, আমার খুব ইচ্ছে করে তোমাকে  আমাদের  দেশে নিয়ে গিয়ে  সবাইকে দেখাই,  যাবে  আমাদের  গ্রামে ?
হেসে  শবনম  বলেছিলো
- কেন যাবোনা ?  একদিন না একদিন  তো যাবই ।
শবনমের  সেই কথাতেই  মাহতাবের  কান লাল হয়ে গিয়েছিলো। মুহূর্তেই  কল্পনায় না না স্বপ্নের জাল বুনে ফেলেছিলো  সে। শবনম  বলেছে যাবে তাহলে  সত্যিই যাবে। মাহতাব লেখাপড়ায় ভালো ছিলো বলে  স্যার তাকে খুব ভালোবাসতেন। সেই সাথে স্যারের স্ত্রী  মানে শবনমের মা ও তাঁকে খুব স্নেহ করতেন। বাসায় ভালো কিছু রান্না হলেই  মাহতাবের ডাক পড়ত। শবনমের মা  নিজের ছেলেদের সংগে  একসাথে বসিয়ে  নিজে তদারকি করে মাহতাব কে খাওয়াতেন। ক্রমে মাহতাব  রহমান সাহেবের পরিবারের  একজন সদস্য  হয়ে উঠল। এম এ পাশ করার পর একটা খবরের  কাগজে  চাকরি হলো  মাহতাবের। শবনম  বি,এ, পাশ করে  এম এ  ভর্তি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।  ততদিনে কবিতা  লিখে  অনেক নাম হয়েছিলো শবনমের। কাজের ঝামেলায়  আগের মত ঘনঘন শবনমদের  বাসায়  যাওয়া হতোনা।  অনেক সময়  পনেরো দিন পেরিয়ে  যেত। পনেরো দিন পরে  গেলে  কৃত্রিম  অভিমানের  সুরে  শবনম  বলত
-এতো দিনে বুঝি তোমার সময় হয়েছে ?  কতগুলি কবিতা লিখেছি ,কিন্তু  তুমি পড়নি  বলে ছাপতে দেইনি। চলো  আজকে  সব গুলি শুনবে তারপর যেটা  তুমি পছন্দ করবে সেটাই  ছাপতে  দেব
 স্বরচিত  কবিতা পাঠ  করত  শবনম  আর মাহতাব মুগ্ধ  বিস্ময়ে শবনম কে দেখত  আর কবিতা  পড়া শুনত। মনে মনে  ভাবত  শবনমের মত আর কোন মেয়ে কি কোথাও  আছে ? শবনম  শবনমই  তার কোন তুলনা  হয়না । এই তুলনাহীনা  মেয়েটি তার মত এক সাধারণ  মাহতাব কে সংগ দিয়ে  ধন্য করেছে। কবিতা প্রসংগ শেষ হলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে  মাহতাবের সব খবর নিত । বিগত পনেরো দিন মাহতাব কি খেয়েছে,  কি করেছে , কোথায় কোথায় গেছে, অফিসের কাজ কেমন চলছে,  বাড়ীতে বাবা বোনেরা কেমন আছে!  ঠিকমত চিঠি  লিখেছে কিনা?   এক এক করে শবনম  প্রশ্ন করতো মাহতাব ধীরে ধীরে উত্তর  দিত।  তখন  শবনম একাই যেন  এক মমতাময়ী মা, স্নেহময়ী বোন, প্রিয়ভাষিনী  এক বান্ধবী হয়ে ভরিয়ে দিত মাহতাবকে।
 

চলবে......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much