১০ ডিসেম্বর ২০২১

শান্তা কামালী ৩৬ পর্ব 





বনফুল
( ৩৬ পর্ব ) 
শান্তা কামালী

ব্যথার যন্ত্রণায় জুঁই কাতরাচ্ছে দেখে পলাশের নিজের অজান্তেই চোখে পানি জলে এলো....... 
জুঁই তা দেখতে পেয়ে  বললো তুমি কাঁদছো কেন?  আমার তেমন কোনো কষ্ট হচ্ছে না।পলাশ বুঝতে পারছে শুধুমাত্র শান্তনা দেওয়ার জন্য জুঁই তা বলছে।  এমন অবস্থায় কারো কষ্ট হয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।  পলাশ জুঁইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, আর বলছে জুঁই তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো... 
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ময়না জুঁই আর পলাশের নাস্তা নিয়ে রুমে এলো। ময়না টেবিল এগিয়ে দিয়ে নাস্তা, পানি সব গুছিয়ে দিয়ে নিচে নেমে গেল।
 পলাশ উঠে বেসিনে হাত ধুয়ে এসে, দুটো বালিশে জুঁইকে উঠিয়ে হেলান দিয়ে বসিয়ে নাস্তা খাওয়াচ্ছে। জুঁই বারবার বলছে তুমিও এক সাথে খাও, পলাশ বললো আগে তোমাকে খাইয়ে নিই তারপরে আমি খাবো। জুঁইয়ের নাস্তা খাওয়ানো শেষ  করে পলাশ উঠে গিয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে এসে জুঁইয়ের মুখ ধুয়ে দিয়ে টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে দিলো, তারপর নিজেও নাস্তা খেয়ে নিলো। 
ততক্ষণে ড্রাইভার গিয়ে ঔষধ নিয়ে এলো, পলাশ জুঁইকে ঔষধ খাইয়ে শুইয়ে দিলো। পলাশ  বললো, জুঁই তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো, আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। এরইমধ্যে জুঁই ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে পলাশ নিচে নেমে এসে দেখছে জুঁইয়ের বাবা-মা র মাথায় চিন্তায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। 
পলাশকে দেখে জুঁইয়ের মা হাউমাউ করে কান্না করতে শুরু করলেন।পলাশ বললো আন্টি আপনি কাঁদবেন না, আমরা সবাই আছি জুঁইকে ঠিক সুস্থ করে তুলবো। পলাশের মুখে এই কথা শুনে মনোয়ারা বেগম একটু স্বস্তি পেলেন, ঘড়িতে দশটা বাজতেই অর্থপেডিক টেকনিশিয়ান চলে এলেন। পলাশ ওকে নিয়ে জুঁইয়ের রুমে গেলো, সাথে জুঁইয়ের বাবা-মা ও গেলেন।



চলবে....

সুচিতা সরকার এর কবিতাগুচ্ছ


সুচিতা সরকার এর কবিতাগুচ্ছ



কবিতা সংলাপ 



এক

ঘুমের পাতলা আস্তরণের নীচে,
একটা খরস্রোতা নদী অবিরাম বয়ে চলেছে।
পাহাড়, জঙ্গল, গ্রাম, গঞ্জ পেরিয়ে,
ছুটে চলেছে সে, নীল সাগরের পানে।
একটা মোহনার খোঁজে, 
প্রতি রাতে সে বার বার ফিরে আসে।
প্রতিটা জন্ম যন্ত্রণা তাকে আরও গভীর করে।
কখনও কালো কখনও সাদা চাঁদের আলোয়,
নীলাভ দিগন্ত তাকে হাতছানি দেয়। 

একটা সম্পূর্ণ জীবন যদি,
একটা রাতের সময় পেতো,
হয়তো খুব ভালো হতো। 




দুই



হয়তো কোনোদিন সে চাইবে ফিরে,
ছুঁতে চাইবে ফেরার পথ,
হয়তো সেদিন বৃষ্টি ভেজাবে,
রাঙামাটির মেঠো পথ।
অস্তামিত সূর্যের গায়ে, হয়তো লাগবে,
আগামী ভোরের আলো,
সব ব্যাথা কি মন ভুলে যাবে সেদিন?
না কি বলবে, ধূলাই ভালো। 




তিন



শীতের আস্তরণে ধীরে ধীরে ডুবছে শহর।
আমায় হাতছানি দেয়, 
তোর বুকের উষ্ণতার লহর।
চুপি চুপি ঠান্ডা জমছে মেঘের ঘরে।
ভোরের কাছে এখন শুধুই ওসের খবর।
বৃষ্টির উঠোনে আজ, শুকনো পাতার ঝড়।
ঘরের দোরে ঠায় বসে আমি
দেখছি শুধু  রাত-দিনের  অন্তর।
দূরে কোথাও ভিজে যায় আঁচল,
নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে হলুদ বালুচর।
আমাদের পায়ের চিহ্নগুলি এঁকে যায়, 
নীল জলের গভীর তোড়। 




চার



অখিলে আজ শরতের মেঘ, 
ঢাকের বুকে আবার পড়েছে কাঠি।
মনে পড়ে যায় সেই বাসস্টপ-
তোর সাথে দাঁড়িয়ে দেখা, শেষ রঙিন বাতি।
প্রতি বছর ফেরে পুজো, ধরে শরতের হাত,
আমার আকাশ আর মাখে না নীল রঙ, 
ফোটে না ওতে কাশ। 
একদল ধূসর মেঘ, জমাট বাধে উঠোন কোণে।
ধুয়ে দিয়ে যায় আমার পুজোর সাজ,
প্রতিবার আনমনে।
এবারেও একটা ধূপ জ্বালিয়েছি, মায়ের ঘরে।
গন্ধ পাবি নিশ্চয়ই! আমার মন বলে।

বিশ্বজিৎ মণ্ডল





অভিমান


অভিমানেরও নিজস্ব বারান্দা আছে.....

অনুভব ক্রুদ্ধ হলে,মাশরুমের মত মেলে ধরি
অবুঝ ডানা
ঠিক তখন মানস উপবন বেয়ে একদল দুর্বৃত্ত
ছুটিয়ে যায়___হোর্ডিঙে আঁকা নীল ঘোড়া
 তারপর শহরটা নিকটস্থ হলে
ডাইরি থেকে তুলে আনি,ঈশ্বরকে লেখা
                                       যাবতীয় শব্দাবলি


শামীমা আহমেদ 






শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত (পর্ব ২৭)
শামীমা আহমেদ 



                                             জ ক'দিন যাবৎ শায়লার খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে। একটা সুখবরে তাদের পরিবারে আনন্দের ঢেউ বইছে! অনেকদিন পর শায়লা তার মাকে যেন সেই আগের রূপে দেখতে পাচ্ছে। সেই যে স্কুলে যাবার দিনগুলোতে যেমন করে মা হাসত, মায়ের চোখটা সুন্দর আগামীর স্বপ্ন বুনতো, তেমনি করে মা যেন হাসছে, তার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে। প্রতিদিনই নানান আবদার বায়না আর দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে শায়লার কাছে নানান কিছুর চাহিদা বেড়েই চলেছে। শায়লা খুশি মনেই তা গ্রহন করছে।
গত সোমবার রাতে শায়লার ছোট বোন নায়লা সেই সুখবরটি শুনিয়েছে। মাত্রই তখন নায়লা আর মোর্শেদ  ডাক্তারের কাছে থেকে বাসায় ফিরেছে। খবরটি অবশ্য নায়লার শ্বাশুড়ি, শায়লার মা অর্থাৎ বিয়াইনকে জানিয়েছে।
সুখবর বিয়াইন,আপনি নানী আর আমি দাদী হতে যাচ্ছি!! দুজনের সেকি আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের কথোপকথন!!অনেকদিন পর যেন  মায়ের মাঝে প্রাণ ফিরে এলো।

এরপর থেকেই চলছে তার নানান প্রস্তুতি।
শায়লা কাগজে লিস্টিতে একে একে সব লিখে রাখছে। ইতিমধ্যেই দুই পাতার লিস্টি হয়ে গেছে। শায়লা লিখছে আর সাথে নিজের মাতৃত্বের আবেশ আবেগ অনুভব করছে।এ এক অপার আনন্দ,দূর্লভ প্রাপ্তি!

এমন আনন্দের ঢেউয়ের ব্যস্ততায় বেশ ক'দিন হলো শিহাবের কোন খোঁজ  নেয়া হচ্ছে না।শিহাবের দিক থেকেও কোন সাড়া মিলছে না। শায়লা রাতের খাবারের পর সব গুছিয়ে প্রায় রাত এগারোটায় ঘরে এলো। 
ভীষণ ক্লান্তিতে শায়লা ঘুমের কোলে  ঢলে পড়লো। 

উত্তাল সাগরে প্রচন্ড ঢেউয়ের দাপটের মাঝে সাদা ধবধবে একটা বিশাল জাহাজ এগিয়ে চলছে।রাতের আলো আঁধারিতে ঢেউয়ের সাদা ফেনাগুলো যেন ফুঁসে উঠছে! শায়লা জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে। তাকে ঘেষে খুব কাছে শিহাব দাঁড়িয়ে। বাতাসে এলোমেলো চুলে বারবার শায়লার মুখটি ঢেকে যাচ্ছিল।জাহাজের দুলুনিতে শায়লা ভীষণ ভয় পাচ্ছিল! ক্রমশই জাহাজটি প্রচন্ড বেগে চলতে থাকে।শায়লা শিহাবকে খাঁমচে ধরে আছে।কিন্তু শিহাব শায়লার দিকে একেবারেই তাকাচ্ছে না। 
এমন একটি ভয়ার্ত স্বপ্ন দেখে শায়লার ঘুম ভেঙে গেলো!জেগে দেখলো সে ঘেমে নেয়ে একাকার।আজ ফ্যান না চালিয়েই  ঘুমিয়ে পড়েছিল।শায়লা বালিশের পাশে রাখা  মোবাইলটি তুলে নিলো।রাত একটা বাজছে। শায়লা শিহাবকে মেসেজ পাঠালো?
কেমন আছেন? আমি খোঁজ নেইনি বলে কী আমার একটা খোঁজ নেয়া যায় না? 

পাঁচ মিনিট  দশ মিনিট চলে গেলো, শায়লা বারবার মোবাইল স্ক্রিনে তাকাচ্ছে। কোন সাড়া নেই। এভাবে প্রায় তিরিশ মিনিট চলে গেলো। শায়লা বুঝতে পারছে না শিহাব কি কোন কাজে ব্যস্ত নাকি খাবার খাচ্ছে, নাকি ঘুমিয়ে গেছে।যে ক্লান্ত থাকে! একা একা খাবার নিয়ে খেতেও চায়না মাঝে মাঝে ।শায়লার মন মানছে না। এতদিন এভাবে কোন কথা বলা ছাড়া থাকা হয়নি।এবার শায়লা কল  দিল। শিহাব কল রিসিভ করলো।
কিন্তু কন্ঠটা কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। 
শায়লার উৎকন্ঠিত জিজ্ঞাসায় উত্তর এলো, আমি খুব অসুস্থ।আজ দুপুর থেকে বেশ জ্বর। গত দুদিন অল্প অল্প ছিল কিন্তু আজ জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।ঘরে শুধু আমি একা শুয়ে আছি।কিছুই ভালো লাগছে না। আমি সারাক্ষন আপনার একটা কলের অপেক্ষায় ছিলাম।
শায়লার ভেতরে অস্থিরতা খেলে গেলো!  আর বাইরে কপট রাগতঃ স্বরে শিহাবকে শাসনের সুরে বলে চললো, এভাবে ভাবলে কি চলবে? অসুস্থ হলে একটুতো জানাতে হবে,,আমি কি  দৈবক্রমে,টেলিপ্যাথিতে তা জেনে যাবো? শায়লা অভিমানের সুরে বললো, তাছাড়া আমি আপনার কে এমন, যে এতোখানি ভাববো?
শায়লার চোখ দুটো জলে ভরে উঠলো শুধু গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায়।

শিহাবের কন্ঠে যত অনুযোগের সুর ঝরে পড়লো।
কেন শায়লা, আপনি মনের ভেতরে টের পাননি যে আমি অসুস্থ? আপনার অনুভুতিতে কেউ বলেনি,প্রচন্ড তাপমাত্রা আমায় পুড়িয়ে দিচ্ছে,আর ভেতরে ভেতরে আপনার জন্য আমার দহন কয়লার আগুনের মত  জ্বলছে।যার জন্য আপনি এত আকুল হয়ে থাকেন, যাকে দেখার জন্য লোকচক্ষু উপেক্ষা করে ঘন্টার পর ঘন্টা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকেন, যাকে এক নজর দেখার জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন,যে মাইলের পর মাইল  পথ পাড়ি দিয়ে শত ক্লান্তিতেও আপনাকে দেখার জন্য ছুটে আসে। যে আপনাকে বারান্দায় গ্রীলের ফাঁক দিয়ে শুধু একটু দেখার জন্য নানান বাহানায় সেই চেনা পথটা পেরিয়ে যায়,যে খাবার সামনে রেখে  আপনার উপস্থিতি দেখতে পায়, আপন মনে একা ঘরে অদৃশ্য আপনার সাথে কথা বলে চলে, চোখ বুঁজে কল্পনায় গানের সুরে যে আপনাকে ভেবে চলে,আপনাকে না ছুঁয়েও যে ছুঁয়ে যাওয়ার স্পর্শ টের পায়, যার শূন্য জায়গাটা আপনি পূর্ন করতে চেয়েছিলেন,সেই আপনিই তো বলেছিলেন আমাকে আপনি সম্পূর্ণ বুঝতে পারেন।তাহলে কেন বুঝলেন না আমি একা কেমন আছি।কেন এতদিন নীরব রইলেন।কেন খোঁজ নিলেন না বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি?শায়লা কেন এমন নীরব রইলেন?
শায়লা,,,আমি সারাক্ষন ভেবেছি আমার দরজায় তুমি এসেছো।  বিছানার পাশে বসে আমার কপালে তোমার হাত রাখছো।শায়লা আমি তোমাকে কাল রাতে স্বপ্নে দেখেছি। আমার মাথায় তুমি জল ঢালছো আর আমি একদৃষ্টে তোমার মায়াভরা মুখটায় তাকিয়ে আছি।
জানো শায়লা, অনেকদিন হলো কেউ আমায় খুব যত্ন করে মুখে খাবার তুলে খাওয়ায় না,কেউ আমার গোসলের পর টাওয়েল এগিয়ে দেয় না,মাথার ভেজা চুল মুছিয়ে দেয় না, খুব আবেগে কাছে টেনে নেয় না,কিছু চাওয়া পাওয়ার আবদারে অস্ফুট স্বরে অভিমান গলে পড়ে না,কেউ আমার জন্য না খেয়ে দরজার কলিংবেলের  অপেক্ষায় থাকে না,কেউ আমাকে শার্টের সাথে প্যান্টের কালার ম্যাচ করিয়ে দেয় না,কেউ বলেনা আজ তোমার প্রিয় প্রিয় খাবারগুলো রেঁধেছি, তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে আসো,কেউ আমাকে গরম স্যুপ ফুঁ দিয়ে খাইয়ে দেয়না, টিসু দিয়ে মুখ মুছিয়ে দেয়না।কেউ বলেনা আজ তুমি আমার কাছে থাকবে অফিসে যাবে না,কেউ বলে না তোমাকে ছেড়ে একা থাকতে আমার একটুও ভালো লাগেনা, কেউ বলেনা শুধু তোমাকে পেলেই আমার সব পাওয়া হয়,,শায়লা,
তুমিও আমাকে বুঝলে না।তুমিও আমাকে খুঁজলে না।তোমার মনে সাড়া এলোনা, আমার কষ্ট তুমি টের পেলে না?তবে কি আমার আপন বলে কেউ নেই? তবে কি ভেবে নিবো যার সাথেই হৃদয়ের টান থাকে সেই একসময় স্বার্থপর হয়ে যায়।আমায় ফেলে চলে যায়। কথাগুলো বলতে বলতে শিহাব একেবারে হাঁপিয়ে উঠলো। কিছুতেই থামছিল না।
শায়লা নিজেকে ভীষণ অপরাধী ভাবছে।জ্বরের ঘোরে শিহাব এলোমেলো বলছে।
বিরাট একটা ভুল হয়ে গেলো। শায়লা নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে। আসলেই সে স্বার্থপর হয়ে গেছে।শুধু নিযের উৎকন্ঠার দিনে শিহাবকে দেখতে চাওয়া। শিহাবের কলের জন্য অপেক্ষায় থাকা।শিহাবের কন্ঠ শুনে শিহরিত হওয়া।কখনো তার মনের দিকটা সে  ভেবে দেখেনি।শায়লা বুঝতেও পারছেনা,কবে থেকে শিহাব শায়লার জন্য এতটা আকুল হয়ে উঠলো।সেতো সবসময় নিজের আবেগকে আড়াল করে রাখে।
আজ শিহাব বুঝবে কাউকে আপন করে পেতে চাইলে সেটা তাকে বুঝতে দিতে হয় নয়তো অপর প্রান্তে, না বুঝা মনে কেবল দূরত্বই বাড়তে থাকে। শায়লা খুবই অনুশোচনায় পড়ে গেলো।একদিন অবসরে খোঁজ নেয়া উচিত ছিল।শায়লা দেখেছে  যখনই সে একটু অনত্র ব্যস্ত হয়েছে তখনি শিহাবের একটা ঝামেলা হয়েছে।শায়লার ইচ্ছে হচ্ছে এখুনি  ছুটে শিহাবের বাসায়  যেতে।  ওর পাশে বসে কপালের জলপট্টি বদলে দিয়ে  জ্বরকে বুঝিয়ে দিতে তুমি যতই আবাস নিতে চাও না কেন আমার জাগয়াটা কখনোই ছাড়বো না। পৃথিবীতে পুরুষরা শুধু বদনামেরই ভাগীদার হয়। নারীরা পুরুষের  সহিংসতার শিকার হয়।কিন্তু কত কতজন যে সমাজ সংসারে সম্মান রক্ষার্থে নিজেকে নীরবে নিভৃতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে তিলে তিলে  শেষ করে দেয়,তাবৎ পুরুষকুলেরই তা অজানা রয়ে যায়। আবার নিন্দার কালিমা নিয়েও কত জন  উদ্ধত আচরণে নির্লজ্জের মত চলে। কিন্তু শিহাবের ভেতরে যেন একটা নিষ্পাপ শিশুর বাস। শায়লা টের পেলো শিহাব খুব শক্ত করে শায়লার হাতটি ধরে আছে। যেন বলতে চাইছে তোমাকে আমি  কোনভাবেই আর যেতে দিবো না। শায়লার  চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়ছে।জ্বরের ঘোরে, গভীর ঘুমের শিহাবের দিকে তাকিয়ে শায়লার খুব মায়া হতে লাগল।ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠলো, শিহাব, তোমাকে ছেড়ে আমি কোনদিনই যাবো না। আজীবন আমি তোমার হয়েই থাকবো।খুব আলতো করে শায়লা ঘুমন্ত শিহাবের বুকে মাথা রাখল।পরক্ষণেই আচমকা শিহাব দুহাতে শক্ত করে শায়লাকে তার বুকের সাথে বেঁধে রাখল।



চলবে...

জাফর রেজা'র অণুগল্প

 



মায়ের চিঠি 


খোকা, বাড়ির সাবার সাথে কেমন আছিস, আমারও বেশ কাটছে দিন  বৃদ্বাশ্রমে। প্রতিমাসে একবারও কি আসা যায়না খোকা, আমাকে একটু খানি দেখতে কি ইচ্ছা করেনা ?  তুই কি বুঝিছনা তুই চোখের সামনে না থাকলে আমি কতটা অস্হির হতাম, পৃথিবী অন্ধকার  হয়ে যেতো, আজও হয় মায়ের মনতো বাধঁন ছিঁড়তে পারিনা, আজও এখানে তোর পথ চেয়ে থাকি, সন্ধা গুলো কাটতে চায়না, দাদু ভাইকে নিয়ে সময় কাটানোর সেই সময় গুলো খুব মনে পরে। 
যাক বউমা কেমন আছে ?  আমার রুমে তো বউমার বোনের পড়াশোনার জন্য জায়গা করে দিলি, আমার জায়গা হলো বৃদ্বাশ্রমে। নিশ্চয় ওর পরিক্ষা ভালো হয়েছে।
সত্যি কথা বলতে কি খোকা জানিস সংসারে  যখন কেউ যখন বোঝা হয়ে তখন হয়তো  নিজেকেই নিজের মাঝে মাঝে বোঝা মনে হয়।
ভালো থাকিস সুখে থাকিস দোয়া রইলো খোকা।

মোঃ হা‌বিবুর সাহেব  ৪র্থ পর্ব






ইউএন মিশ‌নে হাই‌তিতে গমণ
( ৪র্থ পর্ব ) 
মোঃ হা‌বিবুর রহমান

যাই হোক, এভা‌বেই আমরা হাওয়াই‌য়ের রাজধানী হনুলুলুর দি‌কে চল‌ছি আর চল‌ছি, পথ যেন আর শেষ হয়না। একসময় আন্তর্জা‌তিক ফ্লাই‌টে ভ্রমণ করার জন্য যেমন‌টি লালা‌য়িত ছিলাম ঠিক আজ এর উ‌ল্টোটিই যেন অনুভব ক'র‌ছি। প্রায় ১৬ ঘণ্টা উ‌ড়ে ফে‌লে‌ছি কিন্ত‌ু কেউ কিছু‌ইতো ব‌'লছে না। 

পুরা ভ্রমণটাই পার ক'রলাম প্রশা‌ন্তের নীল পা‌নি আর সামু‌দ্রিক জাহা‌জের বহর দেখ‌তে‌ দেখ‌তে তাও আবার ক্ষু‌দে আকৃ‌তির সেই যেন ছিপ খান তিন দাঁড় ‌গো‌ছের সমুদ্র জাহাজ। যা‌হোক, আমা‌দের ফ্লাই‌টের সর্ব‌জ্যেষ্ঠ অফিসার সবাই‌কে এরই ম‌ধ্যে এলান ক‌'রে দি‌য়ে বল‌লেন "Gentleman, we are very soon going to land at Honululu International Airport". 

মনে ম‌নে ভাবলাম, যাক, বাঁচা গে‌লো বু‌ঝি তাহ‌'লে বাবা, বিশাল একটা ধক্কল গে‌ছে ই‌তিম‌ধ্যে প্রায় সা‌ড়ে ষোল ঘণ্টা পার ক‌রে‌ছি এই ঢাউসাকৃ‌তির বিশাল আকাশযা‌নে কিন্তু আর কত? ম‌নে হ‌'চ্ছিল আকা‌শের বু‌ঝি স্হায়ী বা‌সিন্দাই হ‌'য়ে যা‌বো, দীর্ঘ সময় থাক‌তে থাক‌তে পুরা প্লেনটাই বু‌ঝি একদম নি‌জের বা‌ড়ি‌তে প‌রিণত ক‌'রে ফে‌লে‌ছিলাম। 

একটু পরেই সম্পূর্ণ হাওয়াই দ্বীপটাই দৃশ্যমান হ‌লো, ই‌তোমধ্যে আমা‌দের হাওয়াই জাহা‌জেরও গ‌তি অ‌নেক ক‌মে এ‌সে‌ছে, পাইলট অ‌ল্টিচ্যুড ক‌মি‌য়ে সঠিকভা‌বে অ‌তি সন্দর্প‌নে ল্যান্ড করার কা‌জে ব্যস্ত। ম‌নের গভী‌রে সেই পার্ল হারবার নামক জায়গা‌টি যেখা‌নে জাপান আ‌মে‌রিকান‌দের তুমুল‌ছে একটা মার দি‌য়ে‌ছিলো সেই জায়গা‌টি বার বার খোঁজার অ‌ভিপ্রা‌য়ে অনুস‌ন্ধিচ্ছু মনটা আমার কাজ ক'র‌ছি‌লো। 

এরই ভিতর কে যেন আমা‌দের পাসপোর্টগু‌লো নি‌য়ে গে‌লো ই‌মি‌গ্রেশন করার নিয়‌তে। ভাব‌ছিলাম, এ ভ্রম‌নের মজাটাই বু‌ঝি এই ইমি‌গ্রেশন এবং পাসপোর্ট করাটা যা এ‌কেবা‌রে টেরই পাই‌নি কে কিভা‌বে কখন সম্পন্ন ক‌'রে ফে‌লে‌ছে।

যা‌হোক, এরই ম‌ধ্যে আমা‌দের গগণতরী বা‌মে কাত হ‌'য়েছে, একবা‌রে ৭০০-৮০০ ফুট উচ্চতায় বু‌ঝি নে‌মে এ‌সে‌ছে, বিশালাকার এক হাওয়াই দ্বী‌পের জল-জ্বলন্ত জীবন্ত ম্যাপটি অক্ষির সম্মু‌খে এখন পূ‌রোদস্তুর যেন ছ‌বির মত দৃশ্যমান। সে এক অভাবনীয় মুহূর্ত। কারণ, এটাই আমার জীব‌নে প্রথম কোন বি‌দে‌শের মা‌টি‌তে পা ফেলা। ধী‌রে ধী‌রে প্লেনটা একবা‌রেই ভূ-পৃ‌ষ্ঠের খুবই কাছাকা‌ছি চ‌'লে এ‌সে‌ছে-এই বু‌ঝি তার প্রথম চাকাটা ফেল‌বে রানও‌য়েতে।

রাজধানী হনুলুলুর ঠিক মাথার উপর দি‌য়ে অ‌তি নীচু দি‌য়ে রান‌ে‌য়েতে তার পা‌ ছোঁয়ার অ‌ভিপ্রা‌য়ে প্লেন‌টি এ‌কেবা‌রে নী‌চে নে‌মে এ‌সে‌ছে, ভয় হ‌'চ্ছিল এই বু‌ঝি কোন এক উঁচু বি‌ল্ডিং‌য়ের সা‌থে বা‌ড়ি খে‌য়ে এখনই আছ‌ড়ে প'ড়‌বে! 

অতি দক্ষভা‌বেই দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে দক্ষ পাইলট‌টি অতঃপর ০৬ সে‌প্টেম্বর ১৯৯৪ সাল আনুমা‌নিক বেলা ১০ ঘ‌টিকার সময় হনুলুলুর আন্তর্জা‌তিক ‌বিমানবন্দ‌রে ‌বেশ নীর‌বে-‌নিঃশ‌ব্দে কোনরকম ঝা‌মেলা ছাড়াই ল্য‌ান্ড ক'র‌লো, আলহামদু‌লিল্লাহ্। 

১৭ ঘণ্টা একটানা আকা‌শে উড়লাম অথচ সম‌য়ের একটুও প‌রিবর্তন ঘ'ট‌লো না, এটা যেন একটা অ‌বিশ্বাস্য আর কিছ‌ুটা ভুঁতু‌ড়ে ব্যাপার-স্যাপা‌রের মত ব'ই‌কি?

যা‌হোক, পাইল‌টের এই ঝা‌মেলা‌বিহীন ল্যা‌ন্ডিং‌য়ের ব্যাপা‌রে মুহূ‌র্তের ম‌ধ্যে এটা একটা যেন আ‌লোচনার বিষ‌য়ে রূপ নি‌লো। এটা কিভা‌বে সম্ভব হ‌লো? প্রথমতঃ আকাশ প‌থে অ‌তি দক্ষতার সা‌থে জ্বালানী সরবরাহ অর্থাৎ (Air to air refuelling) এর সময় দ্বিতীয়তঃ ল্যান্ডিং‌য়ের সময় যাত্রী‌দের টের না পাওয়া, এগু‌লো কিভা‌বে সম্ভব হ‌লো ইত্যা‌দি? 

কেউ বল‌তে লাগ‌লো "প্লেন যত বড় হবে ল্যা‌ন্ডিংটা ততটাই আরামদায়ক হ‌বে", ম‌নে হ‌'চ্ছিল সবাই মুহূর্তের ম‌ধ্যেই যেন এক একজন বিমান বি‌শেষজ্ঞ ব‌নে গে‌ছে। আবার অ‌নে‌কে বল‌তে লাগলো যে, দেখোনা মোটা মান‌ু‌ষদের রাগ কম থা‌কে তারা সহ‌জে রা‌গেনা। তাই বু‌ঝি বড় আকৃ‌তির এই প্লেনটি রাগ ক‌'রে আমা‌দের সবাই‌কে আছ‌ড়ে ফে‌লেনি এমন আর‌কি। এখা‌নে বেচারা দক্ষ পাইল‌টটির যেন কে‌ান ভূ‌মিকা কিংবা কে‌ান অবদানই নেই।

‌বেশ সাজা‌নো-গোছা‌নো এয়ার‌পোর্ট। নামার আ‌দেশ আসার সা‌থে-সা‌থেই ভোঁ ক‌রে একটা ফার্ষ্টক্লাস মা‌নের মি‌নিবাস আমাদের মা‌র্কিন নেভাল বেই‌জের প্রাসাদসম একটা বি‌ল্ডিং‌য়ের কা‌ছে না‌মি‌য়ে ‌দিলো। থাক আজ সে বর্ণনায় এখন আর না যাই। 

খানিকক্ষ‌ণের ম‌ধ্যে একজন দৈত্যসম নেভাল সার্জেন্ট এ‌সে হা‌জির হ‌'য়ে বল‌লো " Sir, are you ready? You have 09 hours break here. I will first take you to our Neval Officers' Mess; you will take your bath there and then I will move around along with you guyes and show the important places of our base, OK Sir"?

আ‌মি তা‌কে জিজ্ঞাসা করলাম " পার্ল হারবারটা ঠিক কোন‌দি‌কে? সা‌র্জেন্ট কোন উত্তর না দি‌য়ে একটু মুচকি হাস‌লো। যা‌হোক, তার মুচ‌কি হাসার বিষয়টি ১০ মি‌নিট প‌রেই আমার সম্পূর্ণ প‌রিস্কার হ‌'য়ে গিয়ে‌ছি‌লো, সেটা প‌রে আপনা‌দের‌কে বল‌বো।

ম‌নে ম‌নে বললাম, ভীমাকৃ‌তির বিশালাকার ছয় ফুট দুই ই‌ঞ্চি লম্বাসম মানুষ‌টির কা‌ছে আ‌মি বড্ডই বেমানান এ‌ যেন বাংল‌া সি‌নেমার দৈত্য, "আ‌দেশ ক‌রেন মহাশয়" টাই‌পের কিছু একটা হ‌বে বোধ করি। য‌া‌হোক, সবাই ‌মি‌নিবা‌সে দেয় সময়ের ম‌ধ্যে আসীন হ'লাম। আমা‌দের গা‌ড়ি চ‌লে‌ছে মা‌‌র্কিন নেভাল বেই‌জের অ‌ফিসার মে‌সের দি‌কে। 

রাস্তার দু' পাশ দে‌খে মনে হ‌'চ্ছিল এ‌ যেন সবুজ কোন ঘাসনা? চা‌রি‌দি‌কে বোধ ক‌'রি মা‌র্কিনীরা সবুজ কা‌র্পেট বি‌ছি‌য়ে রে‌খে‌ছে। আমা‌দের মিনিবাস নেভাল অ‌ফিসা‌র মে‌সের খুব কাছাকা‌ছি এ‌সে প‌'ড়ে‌ছে ব‌লেই হঠাৎ ক‌'রে সার্জেন্ট বল‌লো "Sir, let's get down".

চল‌বে.....

রাবেয়া পারভীন ৯ম পর্ব




স্মৃতির জানালায়  
(৯ম পর্ব)  
রাবেয়া পারভীন



                                    তাঁকে দেখেই স্যার স্বস্নেহে  কাছে ডাকলেন। মাহতাব এগিয়ে গিয়ে স্যারের কাছে বসল। রহমান সাহেব মেহমানদের সাথে তাঁকে  পরিচয় করিয়ে দিলেন। বললেন।
- এই হলো মাহতাব। আমার ছাত্র ছিলো খুবই  ভাল ছাত্র। এখন  সাংবাদিকতা  করছে। এখন আর ছাত্র নয় , এখন ও আমার বড়ো ছেলে।
স্যারের কথায়  ওর মনটা হালকা হয়ে গেল। খুব ভালো লাগলো তার।এবার নীচুস্বরে স্যারকে বলল
- স্যার খালাম্মা জিজ্ঞেস করতে বলেছেন, মেহমানদের খাবার আগে দেয়া হবে নাকি আগে মেয়ে দেখা হবে!  
স্যার বললেন
-আগে খাবারের  ব্যবস্থা কর , মেয়ে না হয় পরে দেখানো হবে।
-আচ্ছা  ঠিক আছে , আমি তাহলে উপরে  গিয়ে খবরটা বলে আসি।
মেহমানদের খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে এবার এলো মেয়ে দেখার পালা। যার সংগে শবনমের বিয়ের কথা হচ্ছে  সে ভদ্রলোককে  বারবার আড়চোখে দেখতে  লাগলো  মাহতাব । ভদ্রলোক  দেখতে সুদর্শন , পেশায় ইন্জিনিয়ার।  খুব নমনীয় ভংগীতে  বসে আছেন সোফার এক কোনায়। পরনে ছাই রংগের স্যুট। ঐ ভদ্রলোকের কাছে  নিজেকে খুবই ছোোট  মনে  হলো তার। মনেমনে ভদ্রলোকটির সংগে  শবনমকে  মিলিয়ে দেখল,  সত্যিই বিয়ে হলে  খুব  মানাবে  দুজন কে।  আবার চিন্তার ছেদ পড়ল তার। চেয়ে দেখল  শবনমের মামী আর চাচাত বোন  কনক দুজনে ই শবনমকে  নিয়ে বসার ঘরে প্রবেশ করল।  শক্ত পাথরের মত ঘরের এক কোনে দাঁরিয়ে রইল  মাহতাব। যন্ত্রচালিতের  মত শবনমের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। অবনত  মস্তকে বসে আছে শবনম এবং মৃদুস্বরে  মেহমানদের প্রস্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্নের পালা শেষ হলে  পাত্রের বাবা  একটা আংটি  পরিয়ে দিলেন শবনমের আংগুলে। হাসিমুখে স্যারকে বললেন
-ভাই সাহেব,  মাসাআল্লাহ  মেয়ে আমাদের খুবি পছন্দ হয়েছ।
ছেলের বাবার কথা শেষ হতেই  আরেকবার সবার উদ্দেশে  ছালাম জানিয়ে  ঘর থেকে বেরিয়ে গেল শবনম পিছন পিছন কনকও। পাত্রপক্ষের  মেহমানদের বিদেয়  হওয়া  পর্যন্ত স্যারের সাথে সাথে রইল মাহতাব। একে একে সব মেহমান বিদায় হয়ে গেল। মাহতাবও বিদায় নিতে গেল স্যারের কাছে। শবনমকে একবার দেখে যাবার ইচ্ছে হচ্ছিলো  কিন্তু কেন যেন সাহস হচ্ছিল না। যাকগে  কালকে এসে না হয় দেখা করে যাবে। মনে মনে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে স্যারকে বলল
- স্যার আমি আজকে তাহলে যাই!  
স্যার  ব্যাস্ত হয়ে  হাতঘড়ির দিকে তাকালেন। বললেন
-আরে না না  রাত বাজে সাড়ে এগারোটা। এতরাত্রে আর যেতে হবেনা। আজকে এখানেই থাকো সকালে চলে যেও।
স্যারের মুখের উপর না করতে পারলোনা সে। ঘাড় দুলিয়ে বলল
- আচ্ছা  ঠিক আছে।
উপরতলা  থেকে শিপলু চেঁচিয়ে ডাকল
- মাহতাব ভাই আম্মা ডাকছেন আপনাকে,  খেতে আসুন।
দোতলায়। খাবার ঘরে  এসে দেখল টেবিলে  পরিবারের সবাই খেতে বসেছে। একপাশের চেয়ারে চুপ করে বসে আছে  শবনম। তার দৃষ্টি  খাবারের থালার দিকে নিবদ্ধ। শবনমের  ঠিক উল্টোদিকের চেয়ারে বসল মাহতাব। অন্যমনস্ক ভাবে খাবার  নাড়াচাড়া করছিলো শবনম। ডান হাতের আংগুলে চকচক করছে কতক্ষন আগে পড়িয়ে  দেয়া  পাত্রপক্ষের  আংটি। মাহতাবের বুকের  ভিতরটা  মুচড়ে  উঠল।



 চলবে....

সোমা চক্রবর্তী





যেখানে রূপকথারা সত্যি ছিল


তারপর অনেক দিন কেটে গিয়েছে।
এখন তো আমি আকাশ দেখে আর মুগ্ধ হই না।
দিগন্তের দিকে মুখ করে দাঁড়ালে
দিকচক্রবালে হারিয়ে যায় না উদাস দৃষ্টি।
অগনিত তারার মধ্যে অকারণে খুঁজে বেড়াই না
আগের রাতের দেখা একটা তারা!
এখন তো উন্মাদ মনটাকে বহু ঝটাপটি করে 
বন্ধ করে ফেলেছি খাঁচায়।
খাঁচার পরিধি এমনই হয় যে তার মধ্যে
পাখি মেলতে পারে না তার ডানাদুটি।
মুক্তি? ওটাকে এখন 'মেকী' বলতে শিখেছি।
চেতনার রঙে পান্না সবুজ হয়- 
একথা জোর দিয়ে আর মানতে পারি কই ?

সবুজ রং আর নেই!
এখন সবই ধূসর, পান্ডুর!
তাই নিয়েই খুশী থাকতেও শিখেছি সম্প্রতি!
আগে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনকে প্রশ্ন করতাম,
- "কি চাও?" 
মন সলজ্জ হাসি হেসে বলত, 
- "জানো না?"
জানতাম। আগে সবই জানতাম।
মনের কথা, আকাশের কথা,
তারা আর ঘাসফুলের হাসি,
শিশির বিন্দুর শীতলতা,
প্রকৃতির যত অমূল্য ভাষা- 
সব আমার জানা ছিল।

এখন তো কংক্রিটের পথে হেঁটে যাই।
জুতোর খাঁচায় বন্দী দুটো পা।
কাজের খাঁচায় বন্দী আমার মন।
হোঁচট খেলে সামলে ওঠা শিখেছি।
চোখে জল আসলে পলকেই হেসে উঠতে পারি।
নদীর কাছে কোনো দিন ঢেউ চেয়েছিলাম- 
একথা এখন মনে পড়ে না!
বাতাসে কোনো দিন উড়তে চেয়েছিলাম- 
ভুলতে বসেছি তাও!
ফুলের কাছে তার গন্ধ চেয়েছিলাম-  
মনে করতে লজ্জাই পাই!
একদিন আকাশ আমার বন্ধু ছিল- 
স্বীকার করি না কোনো মতেও!

নিজেকে পোষাকী করে,
স্বকীয়তা আর সজীবতা কে তাড়িয়ে,
যে আমিটা সত্যিকারের, তাকে মেরে- 
বেশ চলছিলাম।
হঠাৎ চলার পথে নির্জন এক বাঁকে
ছোট্টবেলার সঙ্গী আকাশের সাথে দেখা।
আশমানী শাড়ি তার গায়ে,
দুচোখে ঘন নীল কাজল;
কালো মেঘের চুল পিঠে ছড়িয়ে
নীলাম্বরী আকাশ আমায় জিজ্ঞেস করল,
- "চিনতে পারছো?"
চিনতে পারলাম।
মোসায়েবী জীবনে অভ্যস্ত মনটা
ছুটে পালাতে চাইল লজ্জায়।
পারলাম না।
নিয়মের ভারে আমি বন্দী।
আমার ছোট্টবেলার সঙ্গী আকাশ
আজও মুক্ত, স্বাধীন।

বহুদিন পর চোখে জল এলো।
ঘাসের উপর পা রাখব বলে
খুলে ফেললাম শক্ত জুতো।
আকাশ নীল আঁচল মুখের উপর বুলিয়ে বলল,
-"এসো!"
- "কোথায় যাবো?"
- "ঝর্ণা তলায়, ফলসা গাছের ছায়ায়
আমাদের সেই ছোট্ট খেলাঘরে!"


আমের বোলের গন্ধ;

জামরুল গাছে সবে ফুল এসেছে;

দাঁতন ঝোপ ভরে আছে পাকা ফলে;

মা পৌষ-পার্বণে পিঠে ভাজছে;

আমার ছোট্ট ছোট্ট লুচি চাই;

আজ আমার পুতুল মেয়ের বিয়ে!

মমতা রায় চৌধুরী ৬৫





 টানাপোড়েন ৬৫
অর্থহীন জীবন


প্রথম শীতের হিমেল হাওয়া ,ভোরের শিশির সিক্ত রূপ
শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে পা দিয়ে অপূর্ব লেগেছিল রেখার। মনোজ আগের থেকে অনেক বেশি সুস্থ হয়ে গেছে। মনের কোণে যে অন্ধকার ঘনীভূত হয়ে এসেছিল তা আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে। আজকে মনোজের টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। মনোজ ও ভীষণ খুশি হয়েছে। আজ অনেকদিন পর রেখা মনোজকে হাসতে দেখল  ‌ রিপোর্টটি হাতে পাবার পর। এখন ডাক্তারবাবু ঠিকঠাক খাওয়া-দাওয়া এগুলো মেন্টেন করতে বলেছেন ।লিভারটা যাতে ড্যামেজ না হয়, সেটা দেখার জন্য, আলাদা টেস্ট দিয়েছেন। আজ রেখা তাই প্রথম শীতের হিমেল হাওয়া গায়ে মেখে নিয়েছে কিন্তু সবুজ ঘাসে পা রাখতে পারে নি। শহরের সবুজ প্রাণ কোথায়?মনেপ্রাণে যে সবুজের সুঘ্রান নিয়ে এসেছিল তার নিজের বাড়ি থেকে, মনের অগোচরে তাই নেড়েচেড়ে আরো বেশি চনমনে হবার চেষ্টা করছিল। 
এমন সময় পাশের বাড়ি চৈতির মার গলা শোনা গেল ।ডাকছে জানলা দিয়ে'ও দিদি ও দিদি'।
একবার ডাকার পর দ্বিতীয়বারে রেখার মনে হলো' হ্যাঁ চৈতির মা রেখাকে ডাকছে।'
রেখা জানলার পর্দা দুটো সরালো,  উঁকি মারলো আর দেখার চেষ্টা করল কে, কোথা থেকে ডাকছিল?
এমন সময় চৈতির মা চৈতিদের বাড়ির জানালার পাশ থেকে বলল'ও  দিদি এই দেখুন ,( আটা মাখা হাত নেড়ে)আমি রান্না ঘর থেকে বলছি।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ, বলো?'
চৈতির মা বলল 'দাদা ,এখন কেমন আছেন?'
রেখা বললো 'ভালো'।
চৈতির মা বললো 'দাদাকে দেখতে যাব কিন্তু..?
রেখা বলল' না, না ,ঠিক আছে ।ওই পরিস্থিতিতে কারোর আসাটাও ঠিক নয়।'
চৈতির মা বলল 'কিছু মনে করেন নি তো?'
রেখা বলল 'না ,দিদি মনে করব কেন?'
চৈতির মা বলল'ও দিদি' জানো আজকে না একটা ঘটনা ঘটেছে।'
রেখা মনে মনে ভাবল চৈতির মা ও যেন মনে হচ্ছে স্টার আনন্দ।সব খবর ওর কাছে পাওয়া যাবে।'
রেখা বললো 'কি হয়েছে? , কি ঘটনা?'
চৈতির মা বলল 'আরে পাশের বাড়ি( ফিসফিসিয়ে বলল) গোবিন্দ আছে না?'
রেখা বলল  কি?( কানটা একটু খাড়া করে শোনার চেষ্টা করলো)।
চৈতির মা বলল' বলছি ওই যে নেন্দু,ভেন্দু(আঙ্গুল দিয়ে বাড়ির দিকটা নির্দেশ করল)।'
রেখা বলল'-হ্যাঁ ভেন্দুদের বাড়ি কি হয়েছে?'
চৈতির মা বলল 'ভেন্দুর বৌ সুসাইড করেছে?'
রেখা বলল-'কি বলছ?'
চৈতির মা বলল 'তবে আর  বলছি কি?'
রেখা বলল 'কেন গো?'
চৈতির মা বলল' কে জানে? ওর মা তো সুচারু নয়?'
রেখা বলল'এ বউটা তো শুনেছি বিএ পাস।
ছেলেটা তো মাধ্যমিক ও  পাস করতে পারে নি?'
চৈতির মা বলল' হ্যাঁ ,আগের বউটাও তো চলে গেল।'
রেখা বলল 'বাপের বাড়ির লোকজন এসেছে?'
চৈতির মা এবার রেখাদের বাড়ির জানালার মুখোমুখি এসে বলল 'আমি না সকালবেলায় ওই ঘটনাটা শোনার পর একবার গিয়েছিলাম।'
রেখা বলল 'তা ,যাওয়াটা কি ঠিক হয়েছে ?পুলিশ এসেছিলো?'
চৈতির মা বলল' 'তখনো পুলিশ আসে নি।'
রেখা বলল 'কি অবস্থা আমাদের দেশের মেয়েদের?'
বিএ পাস মে কোথায় স্বনির্ভরশীল হবে তা নয় সুইসাইড? জীবনটা কি এতটাই সস্তা?'
চৈতির মা বলল "ঠিক বলেছেন দিদি ।ভাল লাগছিল না ,চলে যা ।যেমন আগের বৌটা চলে গেছিল।'
চৈতির মা বললো'  উত্তর বঙ্গের মেয়ে।'
রেখা বললো 'আগের মেয়েটাও তো  বলেছিলে উত্তরবঙ্গের?'
চৈতির মা বললো' হ্যাঁ, ঠিকই তো বলেছি।'
রেখা বলল' আগের বৌটা চলে গেছিল কেন?'
চৈতির মা বলল 'আগের বউটার তো শুনেছি, ওদের ওখানে নাকি একটা ছেলের সাথে ওর সম্পর্ক ছিল ।সেখানে চলে গেছে।'
রেখা বললো 'ছেলেটার কি অবস্থা বল তো দু-দুবার এরকম হলো, মন ভেঙে যাবে না?'
চৈতির মা বলল' আর ছেলেটার গুন গাইবেন না তো দিদি? ওরা মোটেই ভালো লোক নয়।'
রেখা বলল' কিন্তু ছেলেটা তো শান্তশিষ্ট, কাজেকর্মেও ভালো।'
চৈতির মা বললো 'কি জানি ছেলেটা হয় তো ভালো জানি না ।তবে মা তো সারা পাড়া ঘুরে বেড়ায় আর এর ওর নামে শুধু সমালোচনা করে।'
রেখা বললো' ওমা তাই নাকি?'
চৈতির মা বললো'  হ্যাঁ গো। আপনি তো বাড়ি থাকেন না। আপনার বাড়িতে ঢোকার সাহস পায় না।'
রেখা বলল 'না বাবা আমরা ঠিক আছি। এ তো গ্রামের মতো অবস্থা দেখছি। শহরে হয় নাকি?'
চৈতির মা বলল 'এটা শহর বটে কিন্তু এখানে দেখবেন,প্রত্যেকে প্রত্যেকের বাড়ি কিন্তু যায়।'
এর মধ্যেই মনোজ ডাকল 'রেখা রেখা ..তারমধ্যে আওয়াজ পাওয়া  গেল একটা ঝনাৎ করে  কিছু ভেঙে যাওয়ার শব্দ ।
রেখা বলল 'হ্যাঁ, যাই। কি হলো? কি হয়েছে?' 
রেখা চৈতির মায়ের দিকে হাতের ইশারা দিয়ে বলল পরে কথা হবে ।
চৈতির মাও মাথা নেড়ে বলল 'ঠিক আছে, দিদি ।পরে কথা হবে।'
রেখা এসে দেখে মনোজ পড়ে গেছে সামনে যে কাঁচের গ্লাসটা ছিল সেটা ভেঙে গেছে।
রেখা বলল 'তুমি পড়লে কি করে গো?'
মনোজ বলল' কি জানি ,হঠাৎ খাট থেকে নামতে গেলাম গ্লাসটা থেকে জলটা খাব আর কিরকম যেন হলো ।বুঝতে পারলাম না।'
রেখা মনোজকে ধরে ভালো করে বসালো, আর বলল 'তুমি তো এখনো উইক আছ।কতবার বলেছি না, কিছু প্রয়োজন হলে ,তুমি আমাকে ডাকবে।'
মনোজ বলল 'সারাক্ষণ তো তুমি আমার সেবা করেই যাচ্ছ। ভাবলাম তুমি একটু ঐ পাশে গেলে... তুমি কি চৈতির মার সাথে কথা বলছিলে?'
রেখা বলল' হ্যাঁ ,গো। একটা ঘটনা ঘটেছে।'
মনোজ বলল 'ঠিক আছে।  আমি ঠিক আছি ।তুমি এত ব্যস্ত হ'য়ো না।
রেখা দেখল মনোজ একটু যেন কুঁকড়ে আছে ঠান্ডাতে।
রেখা বললো 'কেন বল তো তুমি দেখছ তো শীতের হিমেল হাওয়া বইছে ,কিছু গায়ে দিচ্ছ না কেন?'
মনোজ হাসলো। তার‌পর  বলল' ঠিক আছে দাও ।আমার চাদরটা দাও।'
রেখা চাদরটা এগিয়ে দিল এবং  জড়িয়ে দিল।
মনোজ বলল' কি হয়েছে?'
রেখা বলল 'আরে  ভেন্দুর বউ মারা গেছে।'
মনোজ বলল' কিভাবে?'
রেখা বলল 'সুইসাইড করেছে?'
মনোজ অবাক হয়ে বলল' কি বলছ?'
রেখা বলল' হ্যাঁ গো।'
মনোজ বললো' কে বললো তোমায়?'
রেখা বলল 'কে আবার ?আমাদের স্টার আনন্দ।'
মনোজ হেসে লুটোপুটি খেলো।
 মনোজকে আজকে অনেকদিন পর হাসতে দেখে রেখা একদৃষ্টে মনোজের দিকে তাকিয়ে রইল। আর মনে মনে ভাবল মানুষটা উপর থেকে যতই নিজেকে শক্ত ভাবুক না কেন ?ভেতরে ভেতরে আসলে সে এতটাই দুর্বল আর শিশুসুলভ যে ,ওর পাশে কেউ না থাকলে ও যেন থৈ খুঁজে পায় না ।যেন অথৈ সাগরে পড়ে যায়।'
মনোজ হাত দিয়ে ঈশারা করে দেখাচ্ছে' কি হলো?'
রেখা হেসে ফেলল মাথা নেড়ে বলল 'কিচ্ছু না।'
মনোজ বলল-'অ্যাই রেখা ,বল না কি জন্য তুমি হাসছো?'
রেখা  বলল ' বারে একটু হাসতেও পারবো না।'
রেখা বলল 'কিন্তু বাপের বাড়ির লোকজন আসবে তো ?পুলিশ কেস একটা হবে কি বলো?'
মনোজ বলল 'হ্যাঁ ,সে তো অবশ্যই। বাপের বাড়ি যদি চায় তো ওদের জেলহাজতে হয়ে যেতে পারে।' 
রেখা বলল' জানো মেয়েটা নাকি বিএ পাস?'
মনোজ সন্দেহের সঙ্গে বলল' বিএ পাস মেয়ে দিয়েছে ভেন্দুর সঙ্গে ?ও তো মাধ্যমিক ও  পাস করে নি?'
রেখা বলল 'বিয়ে তো বেশিদিন হয় নি ।এই‌ ছয়-সাত মাস হবে?'
মনোজ বললো 'কি ব্যাপার বলো তো ,?একটা রহস্য রহস্য মনে হচ্ছে না ?আগের বউটাও চলে গেল।'
রেখা বলল'আগের বউটার নাকি ওদের ওখানে একটি ছেলের সাথে সম্পর্ক...।'
মনোজ বলল 'তা এই বউটা চলে গেলো কেন?'
রেখা বলল 'সেটাই তো রহস্য?'
রেখা বলল 'শোনো, তোমার ডিম কলা আর লেমন জুস দিয়ে যাচ্ছি। এবার খেয়ে নেবে কিন্তু ।একদম না করতে পারবে না।'
মনোজ বলল 'রেখা এত কিছু  একসাথে খেতে পারি নাকি?'
রেখা বলল 'ঠিক আছে ।জুসটা তুমি পরে খাবে ।আধঘন্টা পর। 'এর মধ্যেই লিলি ,তুলি ওদের সবার আওয়াজ শোনা গেল।
মনোজ ঈশারায় দেখিয়ে বলল' ওই দেখো ওদেরও খিদে পেয়ে গেছে।'
রেখা বলল 'দেখেছ চৈতির মার সঙ্গে গল্প করতে করতে তো ,আমি ওদের খাবার দিতে ভুলে গেছি। এ বাবা কি হবে?'
রেখা বারান্দা থেকে বলতে লাগল 'দাঁড়া ,দাঁড়া ।যাচ্ছি যাচ্ছি।'
মনোজ হাসতে শুরু করল।
রেখা দুধ রুটি নিয়ে লিলি তুলিদের খাওয়াতে গেল।
রেখা মিলিকে বলল' তুই তো দুধ রুটি খাবি না ।তুই বাচ্চাদের সঙ্গে চেঁচাচ্ছিস কেন ?তোর তো এখন খাবার টাইম নয়। এই নে তুই বরং কটা বিস্কিট খা।'
মনোজ আবার ডাকতে লাগল' রেখা রেখা..আ.আ।'
রেখা ছুটে ছুটে আসলো বলল' কেন ,কী হয়েছে?'
মনোজ বলল' তোমার ফোন?'
রেখা বলল' আমার ফোন?কে করেছে?'
মনোজ বলল 'তোমার ও বাড়ি থেকে ফোন এসেছে।'
রেখা বলল 'ও ,‌কাকিমা?'
মনোজ বললো 'ও সোনা ,ফোনটা ধরো এসে।'
রেখা এঁটো হাতটা কোনরকম সামলে নিয়ে ,বাঁ হাত দিয়ে ফোনটা ধরল । বলল  'হ্যাঁ কে?'
ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে বললেন 'আমি বলছি রে মা ,আমি।'
রেখা বলল'ও কাকিমা?'
কাকিমা বললেন'হ্যাঁ রে কেমন আছিস তোরা?
জামাই ঠিক আছে?'
রেখাএকটু খুশি মনে বলল' হ্যাঁ, কাকিমা ঠিক আছে এখন।'
কাকিমা বললেন 'আবার টেস্ট করিয়েছিস?'
রেখা বলল  'হ্যাঁ করিয়েছি।'
কাকিমা বললেন' ভয়ের কিছু নেই তো?'
রেখা বলল 'না ,কাকিমা এবারকার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।'
কাকিমা বললেন 'যাক খুব ভালো কথা।'
 এর মধ্যেই রেখার কাকা ফোনের কথাটা শুনতে পেয়ে বলল' কি হয়েছে ?কি হয়েছে ?আমাকে দাও ফোনটা।'
রেখার কাকিমা বললেন 'ওই দেখ তোর কাকু , তোর সঙ্গে কথা বলবেন।'
রেখা বলল' হ্যাঁ ,দাও ,দাও কাকুকে। ফোনটা দাও।'
রেখার কাকিমা ফোনটা রেখার কাকুর কাছে দিল।
কাকু বললেন'-কেমন আছিস রে ননী মা?'
রেখা বললো 'ভালো আছি কাকু। তুমি  ঠিক করে তোমার ফিজিওথেরাপি করাচ্ছো?'
কাকু বললেন 'হ্যাঁ ,রে মা, করাচ্ছি ।আর তোর সেই চা ।ওটাও খাচ্ছি।'
রেখা হাসতে লাগল ।বলল 'যাক খুব ভালো কথা ।তাহলে তুমি গুড বয় হয়ে গেছো।'
কাকিমা বললেন 'গুড বয় না ,ছাই। শুধু বায়নাক্কা। তুই যাবার পর থেকে সমানে শুধু ননী ননী ননী। আবার কবে আসবে ননী ?এটা করত, সেটা করত, হাজারো কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে জানিস? আর খাবার ঝামেলা তো রয়েছেই।'
রেখা বলল'না ,না, না কাকু। কাকিমা যেভাবে বলছেন খেতে ,তুমি সেই ভাবেই খাও। তাড়াতাড়ি তোমাকে সুস্থ হতে হবে।'
কাকু বললেন 'আমি তো সেই ভাবেই খাই রে ।আরে না ,আমি চা টা একটু বেশি খেতে চাইছি তো, তাই তোর কাকিমা...
কথা শেষ না করতে দিয়েই রেখার কাকিমা বললেন 'ওই ওমনি নালিশ শুরু হয়ে গেল।'
রেখা বলল'ঠিক আছে ,ঠিক আছে ।তোমরা দুজনেই থামো ।তোমরা দুজনেই খুব ভালো । দুজনেই কথা শুনে চলবে, ঠিক আছে।'
কাকু বললেন 'ঠিক আছে রে, মা ।তোরা ভালো থাকিস আর জামাই পুরো সুস্থ হয়ে গেলে আবার বেড়াতে আসিস কেমন? ছিলিস মনটা আমাদের কত ভালো হয়ে গেছিল সবদিক থেকে।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ সেতো যাবোই ?'
কাকিমা বললেন' মাঝে মাঝে ফোন করিস রে মা?:
রেখা বলল 'হ্যাঁ ,করব। আসলে  এত ব্যস্ত ছিলাম সবসময় ফোন করে উঠতে পারি নি, জানো তো কাকিমা?'
কাকিমা বলেলেন 'আমি বুঝি রে।ঠিক আছে এখন ফোন রাখছি কেমন ?তুমি জামাইয়ের প্রতি ধ্যান দাও।'
মনোজ  কথাটা শুনতে পেয়ে হাসছে রেখার দিকে তাকিয়ে।রেখা ছাড়া মনোজের জীবনটাই অর্থহীন।

কাসেম আলী রানা





মা


মায়ের বক্ষ দুধের মূল্য
কেমনে কে দিবে পৃখিবীতে নেই তার তূল্য।

মায়ের এক ফোঁটা রক্তের দাম,
মিটবে না দিলেও গোটা পৃথিবীর গায়ের ছাম।

মায়ের এক ডেল প্রসব বেদনার কষ্ট,
শোধ দিতে পারবে না কোনদিন; করলেও মাটির স্বর্গ সৃষ্ট।

মায়ের এক চুমুক আদর- সোহাগের যত্ন,
দাম শোধ দিতে পারে; মর্ত্যে নেই এমন কোন রত্ন!

সারা জীবন সন্তানের জন্য মায়ের বুকের হাহাকার,
এরকম ভালোবাসা একজীবনে দিতে পারে এমন কে আছে আর?

মা আমার মা, ওগো মা,ও জননী জন্মান্তর,
এখন আমি ছোট্ট  নই,বড় হয়েছি,থাকো এই
বুকেরই উপর।