১০ ডিসেম্বর ২০২১

রাবেয়া পারভীন ৯ম পর্ব




স্মৃতির জানালায়  
(৯ম পর্ব)  
রাবেয়া পারভীন



                                    তাঁকে দেখেই স্যার স্বস্নেহে  কাছে ডাকলেন। মাহতাব এগিয়ে গিয়ে স্যারের কাছে বসল। রহমান সাহেব মেহমানদের সাথে তাঁকে  পরিচয় করিয়ে দিলেন। বললেন।
- এই হলো মাহতাব। আমার ছাত্র ছিলো খুবই  ভাল ছাত্র। এখন  সাংবাদিকতা  করছে। এখন আর ছাত্র নয় , এখন ও আমার বড়ো ছেলে।
স্যারের কথায়  ওর মনটা হালকা হয়ে গেল। খুব ভালো লাগলো তার।এবার নীচুস্বরে স্যারকে বলল
- স্যার খালাম্মা জিজ্ঞেস করতে বলেছেন, মেহমানদের খাবার আগে দেয়া হবে নাকি আগে মেয়ে দেখা হবে!  
স্যার বললেন
-আগে খাবারের  ব্যবস্থা কর , মেয়ে না হয় পরে দেখানো হবে।
-আচ্ছা  ঠিক আছে , আমি তাহলে উপরে  গিয়ে খবরটা বলে আসি।
মেহমানদের খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে এবার এলো মেয়ে দেখার পালা। যার সংগে শবনমের বিয়ের কথা হচ্ছে  সে ভদ্রলোককে  বারবার আড়চোখে দেখতে  লাগলো  মাহতাব । ভদ্রলোক  দেখতে সুদর্শন , পেশায় ইন্জিনিয়ার।  খুব নমনীয় ভংগীতে  বসে আছেন সোফার এক কোনায়। পরনে ছাই রংগের স্যুট। ঐ ভদ্রলোকের কাছে  নিজেকে খুবই ছোোট  মনে  হলো তার। মনেমনে ভদ্রলোকটির সংগে  শবনমকে  মিলিয়ে দেখল,  সত্যিই বিয়ে হলে  খুব  মানাবে  দুজন কে।  আবার চিন্তার ছেদ পড়ল তার। চেয়ে দেখল  শবনমের মামী আর চাচাত বোন  কনক দুজনে ই শবনমকে  নিয়ে বসার ঘরে প্রবেশ করল।  শক্ত পাথরের মত ঘরের এক কোনে দাঁরিয়ে রইল  মাহতাব। যন্ত্রচালিতের  মত শবনমের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। অবনত  মস্তকে বসে আছে শবনম এবং মৃদুস্বরে  মেহমানদের প্রস্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্নের পালা শেষ হলে  পাত্রের বাবা  একটা আংটি  পরিয়ে দিলেন শবনমের আংগুলে। হাসিমুখে স্যারকে বললেন
-ভাই সাহেব,  মাসাআল্লাহ  মেয়ে আমাদের খুবি পছন্দ হয়েছ।
ছেলের বাবার কথা শেষ হতেই  আরেকবার সবার উদ্দেশে  ছালাম জানিয়ে  ঘর থেকে বেরিয়ে গেল শবনম পিছন পিছন কনকও। পাত্রপক্ষের  মেহমানদের বিদেয়  হওয়া  পর্যন্ত স্যারের সাথে সাথে রইল মাহতাব। একে একে সব মেহমান বিদায় হয়ে গেল। মাহতাবও বিদায় নিতে গেল স্যারের কাছে। শবনমকে একবার দেখে যাবার ইচ্ছে হচ্ছিলো  কিন্তু কেন যেন সাহস হচ্ছিল না। যাকগে  কালকে এসে না হয় দেখা করে যাবে। মনে মনে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে স্যারকে বলল
- স্যার আমি আজকে তাহলে যাই!  
স্যার  ব্যাস্ত হয়ে  হাতঘড়ির দিকে তাকালেন। বললেন
-আরে না না  রাত বাজে সাড়ে এগারোটা। এতরাত্রে আর যেতে হবেনা। আজকে এখানেই থাকো সকালে চলে যেও।
স্যারের মুখের উপর না করতে পারলোনা সে। ঘাড় দুলিয়ে বলল
- আচ্ছা  ঠিক আছে।
উপরতলা  থেকে শিপলু চেঁচিয়ে ডাকল
- মাহতাব ভাই আম্মা ডাকছেন আপনাকে,  খেতে আসুন।
দোতলায়। খাবার ঘরে  এসে দেখল টেবিলে  পরিবারের সবাই খেতে বসেছে। একপাশের চেয়ারে চুপ করে বসে আছে  শবনম। তার দৃষ্টি  খাবারের থালার দিকে নিবদ্ধ। শবনমের  ঠিক উল্টোদিকের চেয়ারে বসল মাহতাব। অন্যমনস্ক ভাবে খাবার  নাড়াচাড়া করছিলো শবনম। ডান হাতের আংগুলে চকচক করছে কতক্ষন আগে পড়িয়ে  দেয়া  পাত্রপক্ষের  আংটি। মাহতাবের বুকের  ভিতরটা  মুচড়ে  উঠল।



 চলবে....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much