ইউএন মিশনে হাইতিতে গমণ
( ৪র্থ পর্ব )
মোঃ হাবিবুর রহমান
যাই হোক, এভাবেই আমরা হাওয়াইয়ের রাজধানী হনুলুলুর দিকে চলছি আর চলছি, পথ যেন আর শেষ হয়না। একসময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ভ্রমণ করার জন্য যেমনটি লালায়িত ছিলাম ঠিক আজ এর উল্টোটিই যেন অনুভব ক'রছি। প্রায় ১৬ ঘণ্টা উড়ে ফেলেছি কিন্তু কেউ কিছুইতো ব'লছে না।
পুরা ভ্রমণটাই পার ক'রলাম প্রশান্তের নীল পানি আর সামুদ্রিক জাহাজের বহর দেখতে দেখতে তাও আবার ক্ষুদে আকৃতির সেই যেন ছিপ খান তিন দাঁড় গোছের সমুদ্র জাহাজ। যাহোক, আমাদের ফ্লাইটের সর্বজ্যেষ্ঠ অফিসার সবাইকে এরই মধ্যে এলান ক'রে দিয়ে বললেন "Gentleman, we are very soon going to land at Honululu International Airport".
মনে মনে ভাবলাম, যাক, বাঁচা গেলো বুঝি তাহ'লে বাবা, বিশাল একটা ধক্কল গেছে ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে ষোল ঘণ্টা পার করেছি এই ঢাউসাকৃতির বিশাল আকাশযানে কিন্তু আর কত? মনে হ'চ্ছিল আকাশের বুঝি স্হায়ী বাসিন্দাই হ'য়ে যাবো, দীর্ঘ সময় থাকতে থাকতে পুরা প্লেনটাই বুঝি একদম নিজের বাড়িতে পরিণত ক'রে ফেলেছিলাম।
একটু পরেই সম্পূর্ণ হাওয়াই দ্বীপটাই দৃশ্যমান হলো, ইতোমধ্যে আমাদের হাওয়াই জাহাজেরও গতি অনেক কমে এসেছে, পাইলট অল্টিচ্যুড কমিয়ে সঠিকভাবে অতি সন্দর্পনে ল্যান্ড করার কাজে ব্যস্ত। মনের গভীরে সেই পার্ল হারবার নামক জায়গাটি যেখানে জাপান আমেরিকানদের তুমুলছে একটা মার দিয়েছিলো সেই জায়গাটি বার বার খোঁজার অভিপ্রায়ে অনুসন্ধিচ্ছু মনটা আমার কাজ ক'রছিলো।
এরই ভিতর কে যেন আমাদের পাসপোর্টগুলো নিয়ে গেলো ইমিগ্রেশন করার নিয়তে। ভাবছিলাম, এ ভ্রমনের মজাটাই বুঝি এই ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট করাটা যা একেবারে টেরই পাইনি কে কিভাবে কখন সম্পন্ন ক'রে ফেলেছে।
যাহোক, এরই মধ্যে আমাদের গগণতরী বামে কাত হ'য়েছে, একবারে ৭০০-৮০০ ফুট উচ্চতায় বুঝি নেমে এসেছে, বিশালাকার এক হাওয়াই দ্বীপের জল-জ্বলন্ত জীবন্ত ম্যাপটি অক্ষির সম্মুখে এখন পূরোদস্তুর যেন ছবির মত দৃশ্যমান। সে এক অভাবনীয় মুহূর্ত। কারণ, এটাই আমার জীবনে প্রথম কোন বিদেশের মাটিতে পা ফেলা। ধীরে ধীরে প্লেনটা একবারেই ভূ-পৃষ্ঠের খুবই কাছাকাছি চ'লে এসেছে-এই বুঝি তার প্রথম চাকাটা ফেলবে রানওয়েতে।
রাজধানী হনুলুলুর ঠিক মাথার উপর দিয়ে অতি নীচু দিয়ে রানেয়েতে তার পা ছোঁয়ার অভিপ্রায়ে প্লেনটি একেবারে নীচে নেমে এসেছে, ভয় হ'চ্ছিল এই বুঝি কোন এক উঁচু বিল্ডিংয়ের সাথে বাড়ি খেয়ে এখনই আছড়ে প'ড়বে!
অতি দক্ষভাবেই দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে দক্ষ পাইলটটি অতঃপর ০৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ সাল আনুমানিক বেলা ১০ ঘটিকার সময় হনুলুলুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেশ নীরবে-নিঃশব্দে কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই ল্যান্ড ক'রলো, আলহামদুলিল্লাহ্।
১৭ ঘণ্টা একটানা আকাশে উড়লাম অথচ সময়ের একটুও পরিবর্তন ঘ'টলো না, এটা যেন একটা অবিশ্বাস্য আর কিছুটা ভুঁতুড়ে ব্যাপার-স্যাপারের মত ব'ইকি?
যাহোক, পাইলটের এই ঝামেলাবিহীন ল্যান্ডিংয়ের ব্যাপারে মুহূর্তের মধ্যে এটা একটা যেন আলোচনার বিষয়ে রূপ নিলো। এটা কিভাবে সম্ভব হলো? প্রথমতঃ আকাশ পথে অতি দক্ষতার সাথে জ্বালানী সরবরাহ অর্থাৎ (Air to air refuelling) এর সময় দ্বিতীয়তঃ ল্যান্ডিংয়ের সময় যাত্রীদের টের না পাওয়া, এগুলো কিভাবে সম্ভব হলো ইত্যাদি?
কেউ বলতে লাগলো "প্লেন যত বড় হবে ল্যান্ডিংটা ততটাই আরামদায়ক হবে", মনে হ'চ্ছিল সবাই মুহূর্তের মধ্যেই যেন এক একজন বিমান বিশেষজ্ঞ বনে গেছে। আবার অনেকে বলতে লাগলো যে, দেখোনা মোটা মানুষদের রাগ কম থাকে তারা সহজে রাগেনা। তাই বুঝি বড় আকৃতির এই প্লেনটি রাগ ক'রে আমাদের সবাইকে আছড়ে ফেলেনি এমন আরকি। এখানে বেচারা দক্ষ পাইলটটির যেন কোন ভূমিকা কিংবা কোন অবদানই নেই।
বেশ সাজানো-গোছানো এয়ারপোর্ট। নামার আদেশ আসার সাথে-সাথেই ভোঁ করে একটা ফার্ষ্টক্লাস মানের মিনিবাস আমাদের মার্কিন নেভাল বেইজের প্রাসাদসম একটা বিল্ডিংয়ের কাছে নামিয়ে দিলো। থাক আজ সে বর্ণনায় এখন আর না যাই।
খানিকক্ষণের মধ্যে একজন দৈত্যসম নেভাল সার্জেন্ট এসে হাজির হ'য়ে বললো " Sir, are you ready? You have 09 hours break here. I will first take you to our Neval Officers' Mess; you will take your bath there and then I will move around along with you guyes and show the important places of our base, OK Sir"?
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম " পার্ল হারবারটা ঠিক কোনদিকে? সার্জেন্ট কোন উত্তর না দিয়ে একটু মুচকি হাসলো। যাহোক, তার মুচকি হাসার বিষয়টি ১০ মিনিট পরেই আমার সম্পূর্ণ পরিস্কার হ'য়ে গিয়েছিলো, সেটা পরে আপনাদেরকে বলবো।
মনে মনে বললাম, ভীমাকৃতির বিশালাকার ছয় ফুট দুই ইঞ্চি লম্বাসম মানুষটির কাছে আমি বড্ডই বেমানান এ যেন বাংলা সিনেমার দৈত্য, "আদেশ করেন মহাশয়" টাইপের কিছু একটা হবে বোধ করি। যাহোক, সবাই মিনিবাসে দেয় সময়ের মধ্যে আসীন হ'লাম। আমাদের গাড়ি চলেছে মার্কিন নেভাল বেইজের অফিসার মেসের দিকে।
রাস্তার দু' পাশ দেখে মনে হ'চ্ছিল এ যেন সবুজ কোন ঘাসনা? চারিদিকে বোধ ক'রি মার্কিনীরা সবুজ কার্পেট বিছিয়ে রেখেছে। আমাদের মিনিবাস নেভাল অফিসার মেসের খুব কাছাকাছি এসে প'ড়েছে বলেই হঠাৎ ক'রে সার্জেন্ট বললো "Sir, let's get down".
চলবে.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much