১৯ অক্টোবর ২০২১

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"২৭

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "। 


 

টানাপোড়েন পর্ব ২৭
সংযোগ



গাড়ি যথাসময়ে কৃষ্ণনগরে এসে পৌঁছালো। কৃষ্ণনগরের নাম শুনেই শিখার যেন কেমন একটা অদ্ভুত ফিলিংস হতে লাগলো।
উত্তেজিত শিখা বলল  'বৌদি ,কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির নাম অনেক শুনেছি ।এখানেই তো সেই রাজবাড়ী ?'
মাধুরী বলল  'হ্যাঁ ,স্টেশন থেকে যেতে হয় ।জোড়াদিঘির কাছে।'
শিখা বলল  'জোড়াদিঘি?'
মাধুরী (শিখার বৌদি)বলল  'শোন, তোকে বললে হবে না শুধু ।দেখাতে হবে। ঠিক আছে। আজকে তো হবে না,অন্যদিন।'
শিখা বললো  'বৌদিভাই, কৃষ্ণনগরে অধর মিষ্টান্ন ভান্ডারের খুব নাম শুনেছি। চলো না প্লিজ ,চলো ।সরপুরিয়া ,সরভাজা খুব বিখ্যাত নাকি?'
বৃষ্টি সঙ্গে তাল মিলিয়ে বললো ' পিমনি আমি খাব।'
তখন ওর বৌদি বলল  'তাহলে তো আর কিছু করার নেই ।দুই বাচ্চাই খেতে চাইছে। চলো ড্রাইভার অধর মিষ্টান্ন ভান্ডারের কাছে।,'
 ড্রাইভার বলল  'কোন দিকে যাব?'
বৌদি বলল  'এই তো নেদেরপাড়ার এদিক দিয়ে ।ট্রাফিক পুলিশকে জিজ্ঞেস করো।'
শিখা বলল  'শুনেছি নাকি এখানে উত্তম কুমার এসে  মিষ্টি খেয়েছিলেন,কোন একটা সিনেমার শুটিং করতে এসে। এটা মনে করতে পারছি না।'
বৌদি বলল ' উত্তম কুমার খেয়েছেন। এবার তোমরাও খাবে। কষ্ট করে আর নাম মনে করতে হবে না।'
গাড়ি এসে অধর মিষ্টান্ন ভান্ডার এর কাছে দাঁড়ালো। সান ভিউ নার্সিংহোম ইন্ডিকেট করছে,রয়েছে ডক্টর চঞ্চল সরকারের চেম্বার।
শিখার দাদা বৌদি গাড়ি থেকে নেমে মিষ্টান্ন ভান্ডার এর কাছে গিয়ে বলল  'সরভাজা ,সরপুরিয়া দিন তো ৫00 ,৫00,
দোকানের কর্মচারী বলল ' দাদা বৌদি আপনারা লাইনে দাঁড়ান।'
বৌদি বল্লো  'আচ্ছা। সরি।'
দোকানদার বলল' সরপুরিয়া আছে। সরভাজা পাবেন না । বাড়ন্ত।'
বৌদি বললো  'যা আছে তাই দেবেন আর কি করবো?'
বৌদি দাদার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল 'দেখলে কেমন ভিড় ।এ দোকানটা এরকম ই  জানো তো? সব সময় টাকা দিলেই সব জিনিস পাওয়া যায় না।চাহিদা এত বেশি?তবে কি অবাক কান্ড দেখো ,লাইনের কিন্তু কেউ বলল না যে দিদি, আপনারা ভেতরে যাচ্ছেন কেন ,লাইনে দাঁড়ান?'
দাদা বলল  'তাই তো?'
মাধুরী বলল  'দেখলে, তাহলে এখানকার লোকজন কতটা সভ্য?'
দাদা বললো  'ও সুযোগ পেলেই আমাকে ঠুকে  দাও না?'
ওদিকে শিখা আর বৃষ্টি সমানে বলে যাচ্ছে ' ও বৌদি ও মা,নিয়ে এসো। '
মাধুরী বলল  'দেখছিস না লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।'
শিখা চুপ করে গেল কিন্তু বৃষ্টি ..?'
এরপর  তারা যথাসময়ে মিষ্টি নিয়ে গাড়িতে উঠলো ।প্যাকেট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শিখা আর বৃষ্টি খেতে শুরু করল।
 বৃষ্টি বলল ' মা কি টেস্টি টেস্টি?'
দাদা বললো  'আমাকেও দে?'
শিখা বলল  'সরি দাদা ,নাও। হাতে করে শিখা তুলে দিল। বৌদি তুমিও নাও।সঙ্গে ড্রাইভার কেও দিল।'
ড্রাইভার বলল  'সত্যি বৌদি ,কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া সরভাজার নাম শুনেছি ।তবে সরভাজা তো খেতে পেলাম না ।সরপুরিয়া খেয়ে মন ভরে গেল।'
বৌদি বল্লো ' কৃষ্ণনগরে আরো অনেক জিনিস আছে,? 'সবাই কৌতুহলী হয়ে রইলো।
শিখা বলল 'কি বল তো?'
বৌদি বলল  'না ।এটা আমি বলবো না। তোমরা বলো?'
শিখা এবং বৃষ্টি মাথা চুলকাতে লাগলো।
বৃষ্টি বলল ' মা আমি পারবো?'
বৌদি তো  একেবারে চক্ষু ছানাবড়া। '
বৃষ্টি বলল  'আমি g k তে পড়েছি। ঘূর্ণির মাটির পুতুল।'
বৌদি বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরল আর বলল‌ 'হ্যাঁ, তোর তো মনে আছে বৃষ্টি।'
বৃষ্টি বলল   'পিমনি কিন্তু পারে নি।'
বৌদি বলল 'এখানে তুমি ১০এ ১০ আর পিমনি জিরো।'
বৃষ্টি তো খুব খুশি। বৃষ্টি হাসলে গালে টোল পড়ে ।দেখতে খুব ভালো লাগে । ও বৌদির মত খুব ফরসা ।মুখটা গোল, চোখ দুটো টানা টানা, সত্যিই আমাদের বৃষ্টি খুব সুন্দর ।শিখা মনে মনে ভাবল।
শিখাও বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করলো আর বলল  'বৃষ্টি তুমি আমার কাছে চকলেট পাবে এর জন্য। '
বৃষ্টি বলল ' থ্যাংক ইউ পি মনি।'
গাড়ি কৃষ্ণনগর বাস স্ট্যান্ড থেকে ভীমপুর মাজদিয়া লাইনের দিকে যাচ্ছে।
 শিখা বলল  'বৌদি মনে হচ্ছে না গ্রাম ।শহরই তো মনে হচ্ছে।' 
বৌদি বলল 'কৃষ্ণনগর তো  শহরই।'

এবার গাড়ি কৃষ্ণনগর রাধানগর ছাড়িয়ে গেল চাঁদমারি  ,৯ব্যাটালিয়ান ক্যাম্পাস পাশ করে ,সন্ধ্যা মাঠপাড়া ছাড়িয়ে, গাড়ি চলেছে খাঁপুর ,গোবরাপোতা র দিকে।
তখন শিখাকে বলল বৌদি‌' এখন কি মনে হচ্ছে শিখা ?'
শিখা বলে  'এখন গ্রামই মনে হচ্ছে। তবে গ্রামগুলো অনেক উন্নত। চার পাশে সবুজের সমারোহ কিন্তু মাঝখানে রাস্তাঘাট একদম পাকাপোক্ত। '
খাঁপুরে একটা সবুজ অরণ্য আছে ।সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে শিখা কিছু সেলফি তোলে'।
 শিখার বৌদি খুব খুশি হলো যে শিখার মন থেকে দিব্যেন্দু দিব্যেন্দু ভাবটা মনে হচ্ছে যেন কেটেছে ।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল  'এরপর খামারপাড়া ,তারপর কুলগাছি, ঝাউতলা ,তারপর আসাননগর ,ভীমপুর , চৌগাছা। 
'চৌগাছার নাম শুনে শিখা বলল " দিগম্বর বিশ্বাস .. তারা নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন না? কি ভালো যে লাগছে ঐতিহাসিক স্থান।'
এইভাবে আস্তে আস্তে‌ গাড়ি শিবনিবাস, তারপর কৃষ্ণগঞ্জ , মাজদিয়া। এবার মাজদিয়া থেকে একটা লাইন গেদের দিকে যাচ্ছে ।আর একটা  ভাজন ঘাটে র দিকে। 
বৌদি বলল ' জানিস তো শিবনিবাস  বড় বড় শিবলিঙ্গ আছে । কতদূর থেকে লোকে শিব মন্দির দর্শন করতে আসেন। এর পেছনেও একটা ইতিহাস আছে। '
শিখা আর বৃষ্টি বলল‌ ' বলো না  কি ইতিহাস?'
বৌদি বলল  'আজ বকবক করতে পারব না ।অন্য একদিন শুনে নিও ।'
এরপর গাড়ি পৌঁছালো মাজদিয়া ।মাজদিয়া ঢোকার আগে চারপাশে আমবাগান। সবুজ আর সবুজ দেখে খুব ভালো লাগলো শিখার।বাড়িঘর ও খুব বিশাল বিশাল ।শিখা বলল  'বৌদি ,এখানকার লোকজনের কি প্রচুর টাকা?'
বৌদি শিখার কানে কানে বললো  'এখানকার লোকজন বেশিরভাগ ব্ল্যাকে  কাজ করে জানিস তো?'
বৃষ্টি বললো  'মা black কি?'
 বৌদি ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিল।
বৌদি আরো বললো তবে ভাবিস না যে এখানকার মানুষেরা কেউ চাকরি বাকরি করে না। এখানে অনেক ব্যক্তিত্ব আছেন,যারা কলেজের  প্রফেসর, টিচার,ইঞ্জিনিয়ার,ডাক্তার।আর বড় বড় ব্যবসা তো রয়েছেই।'.
শিখা বলল .'তা অবশ্য ঠিক বাড়িঘর দেখে মনে হচ্ছে।'
এইভাবে গাড়ি গিয়ে শেষ পর্যন্ত পৌঁছালো গেদেতে মাধুরীর বাবার বাড়ির কাছে। 
শিখা দেখল 'বৌদি ভাইদের বাড়ির পাশে বারোয়ারীতে পুজো হচ্ছে ।সবাই বৌদিকে দেখে এগিয়ে আসলো ।অনেকে বৌদি ভাইয়ের সমবয়সী তারাও বাবার বাড়িতে এসেছে। জিজ্ঞেস করছে বাবা ,তোকে তো চেনাই যাচ্ছে না? ভালো আছিস?'
মাধুরী হাসি মুখে বলছে  'হ্যাঁ ভালো আছি ।কাউকে কাকিমা ,কাউকে জ্যাঠা,জ্যেঠিমা,কাউকে দাদু সকলকে জিজ্ঞাসা করছে ভালো আছেন? ,প্রণাম করছে ।আর সমবয়সীদের তোরা ভালো আছিস বলে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছে।
শিখা মনে মনে ভাবল গ্রামীণ কালচারে একটা আন্তরিকতা আছে ,হৃদয়ের টান আছে। তাই হয় তো বৌদিভাইয়ের মনটা এত ভালো ।কোনো জটিলতা নেই ।খুব ভাগ্য করে  আমরা বৌদি ভাইকে পেয়েছিলাম ।'
বাড়ীর ভেতর থেকে বৌদি ভাইয়ের দাদা -বৌদিরা সব ছুটে আসলো ।সব্বাইকে বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গেল ।ওদের বাড়িটাও বেশ বড়সড়। চারপাশে গাছ গাছালি যৌথ ফ্যামিলি ।একসঙ্গে থাকে সবাই। এবার বাড়ির ভেতরে চলতে লাগলো- বাবা, কতদিন পরে এলি?এতদিন পর মনে পড়লো বুঝি?'
বৌদি বলল 'না গো ,কাজের চাপ। মেয়ের পড়া আছে ,এসবের জন্য আসা হয়ে ওঠে না। তাই ভাবলাম এবার যাই।একটু ঘুরেই আসি ।সবাই বলছে  যখন।'
সবাই বলল 'তা খুব ভালো করেছিস ।এটা বুঝি তোর ননদিনী ।'
মাধুরী বলল শিখাকে কাছে টেনে  'ও আমার শুধু ননদিনী নয় ।আমার বড় মেয়ে।'
 অনেকে মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগল ।অনেকে আবার চোখের ইশারায় বোঝাতে চাইল অন্য কিছু? শিখা সবকিছুই দেখতে লাগল আর  ভাবল গ্রামের মানুষ সরল-সহজ সব ঠিক আছে ।তবে এদের ভেতরেও এমন এমন কিছু ঘরোয়া রাজনীতি করার মানসিকতাটা স্পষ্ট হয়ে ধরা দিল। 
বৌদি ভাইয়ের দাদা সবাইকে  বলল  'ফ্রেশ হয়ে কিছু খাবার দাবার খেয়ে বিশ্রাম নিতে।'
শিখা ফ্রেশ হয়ে ড্রইং ‌রুমে আসে ।সেখানে বিভিন্ন ধরনের ম্যাগাজিন আছে ।পাতা ওল্টাচ্ছে। এমন সময় একজন সৌম্যকান্তি যুবক সামনে এসে হাজির এবং আরেকটি ম্যাগাজিন হাত বাড়িয়ে হঠাৎ  বলল কিছু মনে করবেন না ।আমি একটা ম্যাগাজিন এখান থেকে নিচ্ছি ।'
শিখা বলল " সিওর ।'
ছেলেটি নিজেই অন্য একটি চেয়ারে বসে ম্যাগাজিন পড়তে লাগল ।
শিখা ভাবলো একটা অচেনা মেয়ে ঘরে আছে আর সেই ব্যক্তি তার পাশে বসেই ম্যাগাজিন পড়ছে ।এ কি রকম শিক্ষা রে বাবা ।
এমন সময় বৌদির দাদা এসে বলল  'কল্যাণ চলো ,নাস্তা করবে? শিখা তুমিও খাবে চলো।'
শিখা বলল  'না ,না ,আমি পরে খাব দাদা।'
শিখাএকটু অবাক হল এই ছেলেটি বেশ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। আর ভদ্র মনে হচ্ছে ।না জেনে শুনে কিছু মন্তব্য করাটা ঠিক হয় নি।
যাক গে শুনতে তো পায় নি।
পাশের ঘরে বৌদিভাইকে নিয়ে বিশাল আলোচনা সভা বসেছে ।হাসি-ঠাট্টা সমানে চলছে। কতদিন পর বৌদি ভাই যেন প্রাণ খুলে গল্প করছে। বাড়িতে তো সব সময় হুটোপুটি লেগেই থাকে। আমরা যা জ্বালাই। থাক বৌদিভাইকে এখন ডাকবো না।'
এমন সময় সেই ভদ্রলোক আবার এই ঘরে আসলো। শিখা একটু হকচকিয়ে গেল। এবার নিজেই নিজের পরিচয় দিল ,।নমস্কার ।আমি কল্যান।অমরদা আমার জামাইবাবু। আমি ওনার শ্যালক হই।'
শিখা উঠে দাঁড়িয়ে বলল  'আমি ও আমার বৌদি ভাইয়ের বাবার বাড়িতে এসেছি।
আমার নাম শিখা।'
কল্যান বলল "দারুন নাম তো। সব সময় শিখা হয়েই থাকুন।'
শিখা বলল 'মানে?'
কল্যান বলল 'সব কথার মানে খুঁজতে নেই।'
এরই মধ্যে বৌদিভাই এসে পড়ল আর বলল ''তাই বলি আমার ননদিনী কোথায় গেল? 
ও কল্যাণ ,না? কেমন আছো ভাই?'
কল্যান বললো " ভালো আছি দিদি। আপনারা?'
বৌদি ভাই বলল  'ভালো আছি। আমার ননদের সঙ্গে তোমার আলাপ হয়েছে? খুব ভালো মেয়ে। আমার নিজের ননদ বলে বলছি না। এর কথাই তোমাকে বলেছিলাম।'
শিখা মনে মনে ভাবল বৌদি আমার সম্পর্কে কি বলেছে?
কল্যান বলল  'হ্যাঁ এই তো আলাপচারিতা চলছিল।'
বৌদি হেসে বলল  ' আমি কি তাহলে এসে সভা ভুন্ডুল করলাম?'
কল্যান বলল ' আরো ভালো জমবে। আড্ডা দেয়া যেতে পারে।'
বৌদি বলল ' শিখা জানিস কল্যান কিন্তু কলেজের প্রফেসর?'
শিখা অবাক হয়ে গেল। তার সম্পর্কে বাজে কিছু ভেবেছে।
বৌদি বলল  'কল্যান আমার ননদ পিএইচডি করবে ।এখন বিএড এ ভর্তি করে দিচ্ছি। একটু ওকে একটু সাহায্য করো তো?'
কল্যান বলল ' সিওর'।
বৌদি বলল'এরপর তো তোমাকেই দায়িত্ব নিতে হবে ।তা ,তোমরা গল্প কর আমি আসি।'
শিখার বৌদির প্রতি একটু রাগ হলো। কি আবোল তাবোল বকে গেল।কল্যানবাবু শিখার সম্পর্কে কি ভাবছেন?'
'কি এত ভাবছেন আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন? শাস্তি কে দিল আপনাকে ?' কল্যাণের কথায়  সম্বিত ফেরে শিখার।
শিখা লজ্জা পেয়ে গেল মাথা নিচু করে বসল।
কল্যান বললো  'আমি বাঘ নয়, ভাল্লুক নয়। আপনাকে খেয়ে ফেলবো না। আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করুন।
কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন? বাংলা?'
আমারও বাংলা। ভালোই হলো সাহিত্যপ্রেমীরা একটু রোমান্টিক হয় জানেন তো?'
কল্যানের কথায় শিখার ভেতরে হঠাৎ একটা দোলা দিয়ে গেলো ।তারপর একটু মৃদু হেসে, তাকাল।
কল্যাণ ও শিখার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বলল ' কি ঠিক বলছি তো?'
শিখা নিরুত্তর রইল।
কল্যান বলল  'ছাত্রী বুঝতে পারল কি না ,তার উত্তর না দিলে, টিচার তাকে পড়াবেন কি করে?'
শিখা বলল 'বোধহয়।'
কল্যান বলল ' বোধহয় কেন বললেন? নিশ্চিত নন।
না, না ঠিক আছে ।আজকে বেশি ক্লাস নেব না । আজকে গ্রামের ঠাকুর দেখতে বেরোবেন তো?'
এরইমধ্যে মামা মামা করতে করতে পিকলু এসে হাজির এবং কল্যানকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বাইরে গিয়ে বাজি পটকা ফাটাবে বলে বায়না ধরল।যাবার সময়ও কল্যান শিখার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল।
শিখার গা টা কেমন রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল । ভাবলো এরকম কেন হচ্ছে। সাদা পাজামা ,সবুজ পাঞ্জাবিতে খুব সুন্দর লাগছিলকল্যানকে। বারোয়ারীর প্যান্ডেলে তখন গান বাজছে ' কি নামে ডাকবো তোমাকে ,কানে কানে বলে তুমি দাও। কোন্ ফুল ভালবাসো তুমি ।নামটা জানিয়ে শুধু যাও।'গানটা শুনতে শুনতে শিখার মনে একটা আলাদা মাদকতা এসে গেল। এ আবার কি ?আজ কেন মনের ভেতর এরকম হচ্ছে ?আজকে দিব্যেন্দুর কথা যেন অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।একই সঙ্গে নতুন সংযোগ ।কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ।সব যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।



ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"২৭ক্রমশ

দেবব্রত সরকার




আগুন 


কি আর বলি গাঁয়ে আগুন গায়ে আগুন কার  
রক্তে আমার ভাই দাদা মা সন্তান যায় যার
কি আর বলি গাঁয়ে আগুন গায়ে আগুন কার  

খড়ের গায়ে আগুন দিলি আগুন দিলি মনে 
ধর্ম আমার ধর্ম তোমার আপন আপন জনে
খড়ের গায়ে আগুন দিলি আগুন দিলি মনে 

ধর্ম কেবল নাম কে বাস্তা ধর্ম যন্ত্র ভয়
আসলে তা সমাজ গঠন মনুষ্যত্ব নয় 
ধর্ম কেবল নাম কে বাস্তা ধর্ম যন্ত্র ভয়

মনুষ্যত্ব ধর্ম মানে মানব জাতির জয়
খুন খারাপী রক্তে মাখা থাকে না সং-শয় 
মনুষ্যত্ব ধর্ম মানে মানব জাতির জয়

আর বাকিটা ব্যক্তিগত জীবন জীবি-কার
থাক না সুখে দুঃখ কিসে বাঁচান সং-সার 
আর বাকিটা ব্যক্তিগত জীবন জীবি-কার

সানি সরকার



এখন সময়টুকু 
 

ঝড়টা সাময়িক, বরাদ্দ শুধু 
এ দ্বিপ্রহরের জন্যে-ই  

আমরা সকলেই জানি, আগুন যেমন আছে 
তেমনি পাশাপাশি জলও 

আরেকটু পরেই মাটি ঠাণ্ডা হয়ে যাবে 
শালিক ও পায়রাগুলি লাফালাফি করবে পুনরায় 

দীর্ঘ সুন্দরকে ধারণ করার আগে 
একটি ঘুর্ণি সবসময়-ই থাকে 
তারপর খুব আকস্মিক আসে 
ঢেউয়ের ভেতর নিয়ে যায় 
মাত্র কিছুক্ষণের জন্যে কাঠ ও কয়লা করে 
আবার তারপর-ই আরও তীব্র 
সোনালী ও সাদা জ্যোতির কাছে
নিয়ে যাবে স্থায়ীভাবে 

এখন সময়টুকু ঠিক তেমনি

আমিনা তাবাসসুম




মোহময় তুমি



তোমার ওই মোহময় চোখ
লেগে থাকে গভীরে, গভীরে

ঠোঁটে তীব্র কবিতার রেস
বুকে পুষে রাখা কাশফুল
হেঁটে আসে নরম সকালে
        সিঁদুরের মধ্য দিয়ে

এখানে থাক শান্তির বসবাস
যে ভীষণ ভালোবাসা
                   ভীষণ প্রকাশ
নরম হৃদয় থেকে তুমুল সাগরে
প্রতিদিন পার করে নিশ্চিন্ত সংসার
 বিশ্বাস কাঁধে থেকে
     প্রতিদিন বয়োজ্যেষ্ঠ হয়

সেখানে অদ্ভুত আলো ছায়া খেলা
বুকে ঢেউ। শীতের সাইটে
এ কেবল তুমি!
               তুমিময়...

দেবাশিস সাহা




বিজয়ার পরাজয় 


অপুর দিদি দুগগা
গোবর কুড়াতে কুড়াতে জন্ম দেয় ঘুটে।
জন্ম দিতে দিতে সোমত্ত হয়ে ওঠে দুগগা।
পথে দেখা জঙ্গলের সাথে 
সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে
সূর্যাস্তের অস্তরাগ
বিজয়ার পরাজয় হয়
সিঁন্দুর খেলার ঢঙে। 

ওয়াহিদা খাতুন




বিসর্জন



যাচ্ছে উমা শ্বশুর বাড়ি কেঁদে ওঠে মন,
চোখেরজলে ভাসছে সবাই আজকে বিসর্জন ;
ঢাকের কাঠি,বিসর্জনে বিজয়ার-ই সুর,
দশমিতে হলো সবার হৃদয় ব্যথাতুর, 
ধনুচি আর ঢাকের বুলি উঠছে সারাক্ষণ ;
চোখেরজলে ভাসছে সবাই আজকে বিসর্জন।।

শিবের কাছে যাচ্ছে উমা ফিরবে বছর পরে,
কৈলাসেতে উমাপতি একা বসে ঘরে,
অসুর বধে দূর্গা রূপে মর্তে উমা এলো,
দশমিতে কাজটা সেরে স্বামীর ঘরে গেলো,
সকাল থেকে সবার ঘরে তাইতো আয়োজন!
চোখেরজলে ভাসছে সবাই আজকে বিসর্জন।।

শিবনাথ মণ্ডল




পুরোহিতের বায়না

লক্ষীপুজো ঘরে ঘরে
পুরুত ঠাকুর কম
বাজারে লক্ষী প্রতিমা বিক্রি
হচ্ছে হরদম।
পুরুতঠাকুর নিয়ে এখন
হচ্ছে কাড়াকাড়ি 
ঠাকুর মশায় বায়না ধরেছেন
চাই গরদের শাড়ী।
দাদু বলে ঠাকুর মশায়
এখন কেউ পরেনা শাড়ী
বরঙ আপনি বলতে পারেন
নাইটি চুরীদারী।
ফুগলা মুখে ঠাকুরমা
হেসেই লুটোপুটি
নাতি বলে দাদু আমার
বলেছে সত‍্যি খাঁটি।
পাঁচমিনিটে পুজোকরে ঘটে 
জলদিতে যায় ভুলে
গোটাফল ঘিয়ের শিশি
আগে নেয় তুলে।
চোখবুজে মন্ত্র বোলে বাজায়
টিং টিং ঘণ্টা
গৃহ লক্ষী উপোষ করে
শান্তি পায় মনটা।।

মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ এর গল্প





মা-বাবা আল্লাদ


                                    ট নং তিতকুমার আগারপাড়া চৌরাস্তার পাশে একটা মাটির দেওয়াল ও টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি এক দরিদ্র কৃষকের ঘর।ঐ দরিদ্র কৃষকের নাম আরফাত সেখ এবং তানার স্ত্রী নাজিরা সেখ  দুজনে সুখচ্ছান্দে বসবাস করে।এখন তারা ছয় সন্তানের বাবা-মা।তাদের সন্তানেরা খুব অভাব অনাটনের মধ্যে দিয়ে বতর্মানে তারা অনেক বড়ো হয়েছে।তাদের বড়ো ছেলের নাম তাহের এবং ছোটো ছেলের নাম আলংগীর।একে একে তিন ছেলে ও একটি মাত্র কন‍্যাকে বিবাহ দিয়েছে।তানার স্ত্রী প্রতিদিন নামাজ পড়েন।ভোরে নামাজ সেরে সকালবেলায় সংস্বারের যাবতীয় কাজ সেরে দুপুরে রান্না খাওয়ার পরে একটু বিশ্রাম ও নেবার প্রয়োজন মনে করেন না,আবার উঠে দেখি সংস্বারের কাজ করে। কোথায় গরু দেখভাল করা,কোথায় ছাগল দেখভাল করা,কোথায় নাতি-নাতনীদের সাথে গল্পে মেতে ওঠা।কোথায় মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে ঝগড়া বাঁধলে ঝগড়া থামানো -----এভাবেই কেটে চলে তানার প্রতিদিনের দৈনন্দিন জীবন।

        এত পরিশ্রম করার পরও ঐ মানুষটাকে কোনোদিন ক্লান্ত ভাব দেখলাম না এবং জিজ্ঞাসা করলে বলেন উপর আল্লা আমাকে সবসময় সুস্থ রেখেছেন এবং ক্লান্তভাব আমাকে মনে করিয়ে দেননা তাই মনে হয় না।আমি এখন প্রতিদিন রাতে আমার মা-বাবার সাথে এক সঙ্গে বসে ভাত খাই।সকাল-দুপুরে একসঙ্গে বসে খাওয়া খুব একটা হয় না।কারণ আব্বা ব‍্যবসার কাজে সকালে বেরিয়ে যায়।আমি টিউশান যায় ইস্কুলে যায় তাই আর খাওয়া হয়ে ওঠে না।।

                      মা-বাবা যে কেমন হয় তা আমার বাবা-মাকে দেখলে,একটু হলেও অনুভব করতে পারি।আমার কাছে বাবা-মা মানে বটবৃক্ষের ছায়া।আমাদেরকে জন্মের দিন থেকে শুরু করে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে লেখাপড়া শিখিয়ে বড়ো মানুষের মতো মানুষ করেছেন।এই ঋণ সাতবার জন্ম নিলেও শোধ করতে পারবো না।কথায় আছে মায়ের একফোটা দুধের ঋণ শোধ করা যাবে না--এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ সত‍্য কথা।

                       কিন্তু ভাগগের কি পরিহাস,বিধীর কি বিধান সেই মমতাময়ী মা-বাবাকে সবসময় দেখতে পায়  ফুটপাতে,
বৃদ্ধাশ্রমে,সংস্বার সংস্বার করে পাগল হয়ে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে।এই দৃশ্য যখন চোখে দেখি কার কি অনূভুতি হয় জানিনা,তবে আমার চোখ থেকে পানি ঝরে।তাই সবাইকে বলতে চায় মা-বাবাকে অসহায় ভেবে আজ যে রাস্তায় বের করে দিচ্ছো,বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছো কাল তুমিও তো একজন অসহায় হয়ে যাবে,আর তখন যদি তোমার ছেলে বউ এমন নিকৃষ্ট কাজ করে!তখন তোমার মাঝে কতটা যন্ত্রণা-কষ্ট হবে তা একবার হলেও চিন্তা করো।নইলে ঐ দৃশ্য তোমাকে ও দেখতে হবে।আজ যে ব‍্যবহার তোমার মা-বাবার সাথে করছো।সেদিন ঐ চরমপরিস্থিতির জন‍্য দ্বায়ি কে তা নিশ্চিত বুঝতে পারছো।

                     সর্বশেষে আমার বার্তাটা এটাই যে বাবা মার সেবা যত্ন মানে জান্নাত বা স্বর্গকে খুঁজে পাওয়া।কিন্তু কি দূর্ভাগ‍্য আমাদের যেটা করলে আল্লা,ঈশ্বর বা খোদা খুসি হন এবং সেটা না করে অবহেলা  আর অসহায় ভেবে তাদেরকে আমরা পুত্রের স্নেহ থেকে বঞ্চিত করি।শুধু তাই নয় তাদেরকে নির্মম ভাবে দুঃখ -কষ্টের মাঝে ভাসিয়ে দি।যারা সারাজীবন ভেবে এসছে আমার ছেলে মেয়ে বউ হাসি-খুসিতে থাকুক,আর আজ আমরা তাদের সাথে কি ব‍্যবহার করছি তা আমরা নিজেরাই জানি----তাই এই প্রশ্নের উওর তোমাদের কাছ থেকে জানবো।

                  একটা কথা মনে রেখো সময় কোনোদিন কারোর জন‍্য থেমে থাকে না কিন্তু সময় এখনো তোমার শেষ হয়ে যায়নি।সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করো।যেদিন নিজের মধ্যে এই পরিবর্তন আনতে পারবে সেদিন পৃথিবীর সব সুখ আনন্দ অনূভব করতে পারবে।।

গোলাম কবির




হৃদয়ের সাফ কবলা দলিল 
 

 অবশেষে হৃদয়ের সাফ কবলা দলিলে
 সই করে তোমাকে দিয়েই দিলাম আমার 
 যতো প্রেম, এটা এখন শুধুই তোমার। 
 এখন যেদিকে দেখি শুধুই তুমি থাকো
 আমার সকল ভালবাসায়, তুমি ছাড়া 
 আর কাউকে দেখিনা এ চোখে। 
 তুমি আমার জাগরণের সকল সময়ের
 ভাবনায় আছো, ঘুমের মধ্যেও তুমি থাকো
 স্বপ্নের ভিতরে, নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের 
 আসা যাওয়ার ভিতরেও তুমি, 
 সবখানে শুধু তুমিই থাকো, 
 পৃথিবীর আর সবকিছু 
  আমার সামনে তুচ্ছ, 
  তুমি ছাড়া!

অলোক দাস




নীলকন্ঠ 

 বিদায়ের বার্তা এসে গেছে, নীলকন্ঠ পাখি সামনে গাছের ডালে উপস্থিত I চোখের জলে মাকে বিদায় দিতেই হবে I আর দেরি নয়, তালে তালে বাজঝে ডোল I ঠাকুর থাকবে কতক্ষন, ঠাকুর যাবেই বিসর্জন I তারই আয়োজন চোলছে, সব রাজবাড়ী ও পাড়ায় পাড়ায় I সন্ধ্যা আসবে, মা চলে যাবেন শিবালয়ে I মা যেন বোলছে, এবার লব বিদায় এই ধরাধাম হোতে I আসছে বছর আবার এসো মা এমনি কোরে, এমনি ভাবে I নীলকন্ঠ ডাক দিয়েই চলেছে I এতো বেহায়া পাখি নীলকন্ঠ - অন্য ডালে বা অন্য গাছে I