একান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক। তার নিত্যদিনের আসা যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "।
টানাপোড়েন পর্ব ২৭
সংযোগ
গাড়ি যথাসময়ে কৃষ্ণনগরে এসে পৌঁছালো। কৃষ্ণনগরের নাম শুনেই শিখার যেন কেমন একটা অদ্ভুত ফিলিংস হতে লাগলো।
উত্তেজিত শিখা বলল 'বৌদি ,কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির নাম অনেক শুনেছি ।এখানেই তো সেই রাজবাড়ী ?'
মাধুরী বলল 'হ্যাঁ ,স্টেশন থেকে যেতে হয় ।জোড়াদিঘির কাছে।'
শিখা বলল 'জোড়াদিঘি?'
মাধুরী (শিখার বৌদি)বলল 'শোন, তোকে বললে হবে না শুধু ।দেখাতে হবে। ঠিক আছে। আজকে তো হবে না,অন্যদিন।'
শিখা বললো 'বৌদিভাই, কৃষ্ণনগরে অধর মিষ্টান্ন ভান্ডারের খুব নাম শুনেছি। চলো না প্লিজ ,চলো ।সরপুরিয়া ,সরভাজা খুব বিখ্যাত নাকি?'
বৃষ্টি সঙ্গে তাল মিলিয়ে বললো ' পিমনি আমি খাব।'
তখন ওর বৌদি বলল 'তাহলে তো আর কিছু করার নেই ।দুই বাচ্চাই খেতে চাইছে। চলো ড্রাইভার অধর মিষ্টান্ন ভান্ডারের কাছে।,'
ড্রাইভার বলল 'কোন দিকে যাব?'
বৌদি বলল 'এই তো নেদেরপাড়ার এদিক দিয়ে ।ট্রাফিক পুলিশকে জিজ্ঞেস করো।'
শিখা বলল 'শুনেছি নাকি এখানে উত্তম কুমার এসে মিষ্টি খেয়েছিলেন,কোন একটা সিনেমার শুটিং করতে এসে। এটা মনে করতে পারছি না।'
বৌদি বলল ' উত্তম কুমার খেয়েছেন। এবার তোমরাও খাবে। কষ্ট করে আর নাম মনে করতে হবে না।'
গাড়ি এসে অধর মিষ্টান্ন ভান্ডার এর কাছে দাঁড়ালো। সান ভিউ নার্সিংহোম ইন্ডিকেট করছে,রয়েছে ডক্টর চঞ্চল সরকারের চেম্বার।
শিখার দাদা বৌদি গাড়ি থেকে নেমে মিষ্টান্ন ভান্ডার এর কাছে গিয়ে বলল 'সরভাজা ,সরপুরিয়া দিন তো ৫00 ,৫00,
দোকানের কর্মচারী বলল ' দাদা বৌদি আপনারা লাইনে দাঁড়ান।'
বৌদি বল্লো 'আচ্ছা। সরি।'
দোকানদার বলল' সরপুরিয়া আছে। সরভাজা পাবেন না । বাড়ন্ত।'
বৌদি বললো 'যা আছে তাই দেবেন আর কি করবো?'
বৌদি দাদার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল 'দেখলে কেমন ভিড় ।এ দোকানটা এরকম ই জানো তো? সব সময় টাকা দিলেই সব জিনিস পাওয়া যায় না।চাহিদা এত বেশি?তবে কি অবাক কান্ড দেখো ,লাইনের কিন্তু কেউ বলল না যে দিদি, আপনারা ভেতরে যাচ্ছেন কেন ,লাইনে দাঁড়ান?'
দাদা বলল 'তাই তো?'
মাধুরী বলল 'দেখলে, তাহলে এখানকার লোকজন কতটা সভ্য?'
দাদা বললো 'ও সুযোগ পেলেই আমাকে ঠুকে দাও না?'
ওদিকে শিখা আর বৃষ্টি সমানে বলে যাচ্ছে ' ও বৌদি ও মা,নিয়ে এসো। '
মাধুরী বলল 'দেখছিস না লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।'
শিখা চুপ করে গেল কিন্তু বৃষ্টি ..?'
এরপর তারা যথাসময়ে মিষ্টি নিয়ে গাড়িতে উঠলো ।প্যাকেট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শিখা আর বৃষ্টি খেতে শুরু করল।
বৃষ্টি বলল ' মা কি টেস্টি টেস্টি?'
দাদা বললো 'আমাকেও দে?'
শিখা বলল 'সরি দাদা ,নাও। হাতে করে শিখা তুলে দিল। বৌদি তুমিও নাও।সঙ্গে ড্রাইভার কেও দিল।'
ড্রাইভার বলল 'সত্যি বৌদি ,কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া সরভাজার নাম শুনেছি ।তবে সরভাজা তো খেতে পেলাম না ।সরপুরিয়া খেয়ে মন ভরে গেল।'
বৌদি বল্লো ' কৃষ্ণনগরে আরো অনেক জিনিস আছে,? 'সবাই কৌতুহলী হয়ে রইলো।
শিখা বলল 'কি বল তো?'
বৌদি বলল 'না ।এটা আমি বলবো না। তোমরা বলো?'
শিখা এবং বৃষ্টি মাথা চুলকাতে লাগলো।
বৃষ্টি বলল ' মা আমি পারবো?'
বৌদি তো একেবারে চক্ষু ছানাবড়া। '
বৃষ্টি বলল 'আমি g k তে পড়েছি। ঘূর্ণির মাটির পুতুল।'
বৌদি বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরল আর বলল 'হ্যাঁ, তোর তো মনে আছে বৃষ্টি।'
বৃষ্টি বলল 'পিমনি কিন্তু পারে নি।'
বৌদি বলল 'এখানে তুমি ১০এ ১০ আর পিমনি জিরো।'
বৃষ্টি তো খুব খুশি। বৃষ্টি হাসলে গালে টোল পড়ে ।দেখতে খুব ভালো লাগে । ও বৌদির মত খুব ফরসা ।মুখটা গোল, চোখ দুটো টানা টানা, সত্যিই আমাদের বৃষ্টি খুব সুন্দর ।শিখা মনে মনে ভাবল।
শিখাও বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করলো আর বলল 'বৃষ্টি তুমি আমার কাছে চকলেট পাবে এর জন্য। '
বৃষ্টি বলল ' থ্যাংক ইউ পি মনি।'
গাড়ি কৃষ্ণনগর বাস স্ট্যান্ড থেকে ভীমপুর মাজদিয়া লাইনের দিকে যাচ্ছে।
শিখা বলল 'বৌদি মনে হচ্ছে না গ্রাম ।শহরই তো মনে হচ্ছে।'
বৌদি বলল 'কৃষ্ণনগর তো শহরই।'
এবার গাড়ি কৃষ্ণনগর রাধানগর ছাড়িয়ে গেল চাঁদমারি ,৯ব্যাটালিয়ান ক্যাম্পাস পাশ করে ,সন্ধ্যা মাঠপাড়া ছাড়িয়ে, গাড়ি চলেছে খাঁপুর ,গোবরাপোতা র দিকে।
তখন শিখাকে বলল বৌদি' এখন কি মনে হচ্ছে শিখা ?'
শিখা বলে 'এখন গ্রামই মনে হচ্ছে। তবে গ্রামগুলো অনেক উন্নত। চার পাশে সবুজের সমারোহ কিন্তু মাঝখানে রাস্তাঘাট একদম পাকাপোক্ত। '
খাঁপুরে একটা সবুজ অরণ্য আছে ।সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে শিখা কিছু সেলফি তোলে'।
শিখার বৌদি খুব খুশি হলো যে শিখার মন থেকে দিব্যেন্দু দিব্যেন্দু ভাবটা মনে হচ্ছে যেন কেটেছে ।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল 'এরপর খামারপাড়া ,তারপর কুলগাছি, ঝাউতলা ,তারপর আসাননগর ,ভীমপুর , চৌগাছা।
'চৌগাছার নাম শুনে শিখা বলল " দিগম্বর বিশ্বাস .. তারা নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন না? কি ভালো যে লাগছে ঐতিহাসিক স্থান।'
এইভাবে আস্তে আস্তে গাড়ি শিবনিবাস, তারপর কৃষ্ণগঞ্জ , মাজদিয়া। এবার মাজদিয়া থেকে একটা লাইন গেদের দিকে যাচ্ছে ।আর একটা ভাজন ঘাটে র দিকে।
বৌদি বলল ' জানিস তো শিবনিবাস বড় বড় শিবলিঙ্গ আছে । কতদূর থেকে লোকে শিব মন্দির দর্শন করতে আসেন। এর পেছনেও একটা ইতিহাস আছে। '
শিখা আর বৃষ্টি বলল ' বলো না কি ইতিহাস?'
বৌদি বলল 'আজ বকবক করতে পারব না ।অন্য একদিন শুনে নিও ।'
এরপর গাড়ি পৌঁছালো মাজদিয়া ।মাজদিয়া ঢোকার আগে চারপাশে আমবাগান। সবুজ আর সবুজ দেখে খুব ভালো লাগলো শিখার।বাড়িঘর ও খুব বিশাল বিশাল ।শিখা বলল 'বৌদি ,এখানকার লোকজনের কি প্রচুর টাকা?'
বৌদি শিখার কানে কানে বললো 'এখানকার লোকজন বেশিরভাগ ব্ল্যাকে কাজ করে জানিস তো?'
বৃষ্টি বললো 'মা black কি?'
বৌদি ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিল।
বৌদি আরো বললো তবে ভাবিস না যে এখানকার মানুষেরা কেউ চাকরি বাকরি করে না। এখানে অনেক ব্যক্তিত্ব আছেন,যারা কলেজের প্রফেসর, টিচার,ইঞ্জিনিয়ার,ডাক্তার।আর বড় বড় ব্যবসা তো রয়েছেই।'.
শিখা বলল .'তা অবশ্য ঠিক বাড়িঘর দেখে মনে হচ্ছে।'
এইভাবে গাড়ি গিয়ে শেষ পর্যন্ত পৌঁছালো গেদেতে মাধুরীর বাবার বাড়ির কাছে।
শিখা দেখল 'বৌদি ভাইদের বাড়ির পাশে বারোয়ারীতে পুজো হচ্ছে ।সবাই বৌদিকে দেখে এগিয়ে আসলো ।অনেকে বৌদি ভাইয়ের সমবয়সী তারাও বাবার বাড়িতে এসেছে। জিজ্ঞেস করছে বাবা ,তোকে তো চেনাই যাচ্ছে না? ভালো আছিস?'
মাধুরী হাসি মুখে বলছে 'হ্যাঁ ভালো আছি ।কাউকে কাকিমা ,কাউকে জ্যাঠা,জ্যেঠিমা,কাউকে দাদু সকলকে জিজ্ঞাসা করছে ভালো আছেন? ,প্রণাম করছে ।আর সমবয়সীদের তোরা ভালো আছিস বলে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছে।
শিখা মনে মনে ভাবল গ্রামীণ কালচারে একটা আন্তরিকতা আছে ,হৃদয়ের টান আছে। তাই হয় তো বৌদিভাইয়ের মনটা এত ভালো ।কোনো জটিলতা নেই ।খুব ভাগ্য করে আমরা বৌদি ভাইকে পেয়েছিলাম ।'
বাড়ীর ভেতর থেকে বৌদি ভাইয়ের দাদা -বৌদিরা সব ছুটে আসলো ।সব্বাইকে বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গেল ।ওদের বাড়িটাও বেশ বড়সড়। চারপাশে গাছ গাছালি যৌথ ফ্যামিলি ।একসঙ্গে থাকে সবাই। এবার বাড়ির ভেতরে চলতে লাগলো- বাবা, কতদিন পরে এলি?এতদিন পর মনে পড়লো বুঝি?'
বৌদি বলল 'না গো ,কাজের চাপ। মেয়ের পড়া আছে ,এসবের জন্য আসা হয়ে ওঠে না। তাই ভাবলাম এবার যাই।একটু ঘুরেই আসি ।সবাই বলছে যখন।'
সবাই বলল 'তা খুব ভালো করেছিস ।এটা বুঝি তোর ননদিনী ।'
মাধুরী বলল শিখাকে কাছে টেনে 'ও আমার শুধু ননদিনী নয় ।আমার বড় মেয়ে।'
অনেকে মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগল ।অনেকে আবার চোখের ইশারায় বোঝাতে চাইল অন্য কিছু? শিখা সবকিছুই দেখতে লাগল আর ভাবল গ্রামের মানুষ সরল-সহজ সব ঠিক আছে ।তবে এদের ভেতরেও এমন এমন কিছু ঘরোয়া রাজনীতি করার মানসিকতাটা স্পষ্ট হয়ে ধরা দিল।
বৌদি ভাইয়ের দাদা সবাইকে বলল 'ফ্রেশ হয়ে কিছু খাবার দাবার খেয়ে বিশ্রাম নিতে।'
শিখা ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে আসে ।সেখানে বিভিন্ন ধরনের ম্যাগাজিন আছে ।পাতা ওল্টাচ্ছে। এমন সময় একজন সৌম্যকান্তি যুবক সামনে এসে হাজির এবং আরেকটি ম্যাগাজিন হাত বাড়িয়ে হঠাৎ বলল কিছু মনে করবেন না ।আমি একটা ম্যাগাজিন এখান থেকে নিচ্ছি ।'
শিখা বলল " সিওর ।'
ছেলেটি নিজেই অন্য একটি চেয়ারে বসে ম্যাগাজিন পড়তে লাগল ।
শিখা ভাবলো একটা অচেনা মেয়ে ঘরে আছে আর সেই ব্যক্তি তার পাশে বসেই ম্যাগাজিন পড়ছে ।এ কি রকম শিক্ষা রে বাবা ।
এমন সময় বৌদির দাদা এসে বলল 'কল্যাণ চলো ,নাস্তা করবে? শিখা তুমিও খাবে চলো।'
শিখা বলল 'না ,না ,আমি পরে খাব দাদা।'
শিখাএকটু অবাক হল এই ছেলেটি বেশ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। আর ভদ্র মনে হচ্ছে ।না জেনে শুনে কিছু মন্তব্য করাটা ঠিক হয় নি।
যাক গে শুনতে তো পায় নি।
পাশের ঘরে বৌদিভাইকে নিয়ে বিশাল আলোচনা সভা বসেছে ।হাসি-ঠাট্টা সমানে চলছে। কতদিন পর বৌদি ভাই যেন প্রাণ খুলে গল্প করছে। বাড়িতে তো সব সময় হুটোপুটি লেগেই থাকে। আমরা যা জ্বালাই। থাক বৌদিভাইকে এখন ডাকবো না।'
এমন সময় সেই ভদ্রলোক আবার এই ঘরে আসলো। শিখা একটু হকচকিয়ে গেল। এবার নিজেই নিজের পরিচয় দিল ,।নমস্কার ।আমি কল্যান।অমরদা আমার জামাইবাবু। আমি ওনার শ্যালক হই।'
শিখা উঠে দাঁড়িয়ে বলল 'আমি ও আমার বৌদি ভাইয়ের বাবার বাড়িতে এসেছি।
আমার নাম শিখা।'
কল্যান বলল "দারুন নাম তো। সব সময় শিখা হয়েই থাকুন।'
শিখা বলল 'মানে?'
কল্যান বলল 'সব কথার মানে খুঁজতে নেই।'
এরই মধ্যে বৌদিভাই এসে পড়ল আর বলল ''তাই বলি আমার ননদিনী কোথায় গেল?
ও কল্যাণ ,না? কেমন আছো ভাই?'
কল্যান বললো " ভালো আছি দিদি। আপনারা?'
বৌদি ভাই বলল 'ভালো আছি। আমার ননদের সঙ্গে তোমার আলাপ হয়েছে? খুব ভালো মেয়ে। আমার নিজের ননদ বলে বলছি না। এর কথাই তোমাকে বলেছিলাম।'
শিখা মনে মনে ভাবল বৌদি আমার সম্পর্কে কি বলেছে?
কল্যান বলল 'হ্যাঁ এই তো আলাপচারিতা চলছিল।'
বৌদি হেসে বলল ' আমি কি তাহলে এসে সভা ভুন্ডুল করলাম?'
কল্যান বলল ' আরো ভালো জমবে। আড্ডা দেয়া যেতে পারে।'
বৌদি বলল ' শিখা জানিস কল্যান কিন্তু কলেজের প্রফেসর?'
শিখা অবাক হয়ে গেল। তার সম্পর্কে বাজে কিছু ভেবেছে।
বৌদি বলল 'কল্যান আমার ননদ পিএইচডি করবে ।এখন বিএড এ ভর্তি করে দিচ্ছি। একটু ওকে একটু সাহায্য করো তো?'
কল্যান বলল ' সিওর'।
বৌদি বলল'এরপর তো তোমাকেই দায়িত্ব নিতে হবে ।তা ,তোমরা গল্প কর আমি আসি।'
শিখার বৌদির প্রতি একটু রাগ হলো। কি আবোল তাবোল বকে গেল।কল্যানবাবু শিখার সম্পর্কে কি ভাবছেন?'
'কি এত ভাবছেন আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন? শাস্তি কে দিল আপনাকে ?' কল্যাণের কথায় সম্বিত ফেরে শিখার।
শিখা লজ্জা পেয়ে গেল মাথা নিচু করে বসল।
কল্যান বললো 'আমি বাঘ নয়, ভাল্লুক নয়। আপনাকে খেয়ে ফেলবো না। আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করুন।
কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন? বাংলা?'
আমারও বাংলা। ভালোই হলো সাহিত্যপ্রেমীরা একটু রোমান্টিক হয় জানেন তো?'
কল্যানের কথায় শিখার ভেতরে হঠাৎ একটা দোলা দিয়ে গেলো ।তারপর একটু মৃদু হেসে, তাকাল।
কল্যাণ ও শিখার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বলল ' কি ঠিক বলছি তো?'
শিখা নিরুত্তর রইল।
কল্যান বলল 'ছাত্রী বুঝতে পারল কি না ,তার উত্তর না দিলে, টিচার তাকে পড়াবেন কি করে?'
শিখা বলল 'বোধহয়।'
কল্যান বলল ' বোধহয় কেন বললেন? নিশ্চিত নন।
না, না ঠিক আছে ।আজকে বেশি ক্লাস নেব না । আজকে গ্রামের ঠাকুর দেখতে বেরোবেন তো?'
এরইমধ্যে মামা মামা করতে করতে পিকলু এসে হাজির এবং কল্যানকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বাইরে গিয়ে বাজি পটকা ফাটাবে বলে বায়না ধরল।যাবার সময়ও কল্যান শিখার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল।
শিখার গা টা কেমন রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল । ভাবলো এরকম কেন হচ্ছে। সাদা পাজামা ,সবুজ পাঞ্জাবিতে খুব সুন্দর লাগছিলকল্যানকে। বারোয়ারীর প্যান্ডেলে তখন গান বাজছে ' কি নামে ডাকবো তোমাকে ,কানে কানে বলে তুমি দাও। কোন্ ফুল ভালবাসো তুমি ।নামটা জানিয়ে শুধু যাও।'গানটা শুনতে শুনতে শিখার মনে একটা আলাদা মাদকতা এসে গেল। এ আবার কি ?আজ কেন মনের ভেতর এরকম হচ্ছে ?আজকে দিব্যেন্দুর কথা যেন অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।একই সঙ্গে নতুন সংযোগ ।কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ।সব যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"২৭ক্রমশ