২৮ জানুয়ারী ২০২১

তৈমুর খানের তিনটি কবিতা পাঠ



দুর্ভিক্ষের কৃষক 


কবিতারা সব উড়ে যাচ্ছে অদৃশ্য পালকে 


আমি বাড়ি ফিরতে পারছি না 


সূর্য ডুবলে অন্ধকার নেমে এসে বসছে ঘাড়ে 


ফাঁকা মাঠ, কিশোরী সবজি ক্ষেত শহরের ছাদে 


                                                 উঠে শিস দিচ্ছে 


তারও ফুল ফুটছে,


                              চুম্বন পাঠাচ্ছে বাতাসে 




আমার হা-হুতাশ ভরা গোধূলি 


সিঁদুর মুছে বিধবার পোশাকে 


মেঘ জড়িয়ে চলে যাচ্ছে অন্ধকারে 



আমি একা শস্যহীন দুর্ভিক্ষের কৃষক 


খাতা ও কলম ফেলে নৈঃশব্দ্যের কাছে 


                                রেখে যাই শব্দবীজ….. 




 

হারানো কোনও স্বরলিপি 



হাওয়া আনছে চুলের গন্ধ 


এই নিশিপুর নূপুর পরে 


তুলছে আবার নাচের ছন্দ 



মেঘ-বৃষ্টির বার্তা উড়ছে 


অন্ধকারে চুম্বন ছুঁড়ছে 


আলোর কাছে আজকে অন্ধ 



পরশখানি লাগছে এসে 


হারানো কোনও স্বরলিপি 


হৃদয় গলছে অস্থিরতায় 



কী নাম ওর? অনেক নামেই 


ব্ল্যাকবোর্ডে ছবি ফুটছে 


ফুল ফোটাচ্ছে অপরাজিতা 



উড়ছে আঁচল, ঝড়ের পাখি 


ডানা ঝাপটায় সন্ধিক্ষণে 


মুগ্ধ বালক চেয়ে থাকি উদাসীন 



হাওয়ার কাছে কষ্টগুলি বাক্যহীন 



নাটক 



 বৃষ্টির ভেতর কথা বলছে গাছ


 তাদের স্নানের দৃশ্য দেখতে দেখতে 


পৃথিবীতে নেমে আসে নরম প্রভাত।


 আমাদের বেঁচে থাকা টুকু আলোর কোটেশনে রেখে বেড়াতে বেরোই


 অথবা স্থির জানালা থেকে বাড়িয়ে দিই হাত।


 পুরনো  নিভৃত  কিছু নিরুচ্চার ভাষা


 গড়ে ওঠে নিয়তির পরাগমোচনের মতো


 রঙে ও  রেখায় আঁকা রাতের পিপাসা।



 সমস্ত বর্ষাকাল জুড়ে আমরা শুধু মঞ্চ সাজাই


 বেঁচে থাকাটুকু তো আমাদের শিখে নেওয়া অভিনয়।

জয়িতা বর্ধন




এক মুঠো রোদ্দুর

 


দিতে পারো এক মুঠো রোদ্দুর জীবনের উপবনে।

দিতে পারো নিরব আশ্রয় মনের গহনে।

হতে পারো দিনান্তে পরম নিরালায় চখাচখির গভীর প্রেমের রূপ ......

যা বহতি মধুর ।

হতে পারো পৌষালী ধানের

মিষ্টি সুবাস ।

মুছে যাক সকল বেদনা

সকল হা-হুতাশ ।

গড়ে উঠুক একমুঠো রোদ্দুরের মত জীবনের আলপনা।

গোলাম কবির




দোহাই, সুবোধ!


কুয়াশার হিমেল চাদরে ঢাকা 

দূর্বা ঘাসের মখমল বুকে পড়ে থাকা

 সুরভিত শিউলি আর গাছিদের সদ্য কাটা

খেজুরের রসের হাঁড়িতে ঠোঁট ডুবানো 

 নাম না জানা অতিথি পাখিদের দোহাই, 

দোহাই শীতের ভোরে নদীতে স্নান শেষে

 ফিরতে থাকা সিক্তবসনা লজ্জাবনত 

পল্লী বধুর, দোহাই শীত সকালের 

মিষ্টি সোনা রোদে মা'র কোলে শুয়ে থাকা

 অবোধ শিশুর, আর দূরে দূরে 

থেকো না সুবোধ! এই ভীষণ অবেলায়

 তোমাকে আমার খুবই প্রয়োজন। 

দেখছো না ; তুমি নেই বলে কেমন ম্রিয়মাণ

 হয়ে আছে প্রকৃত মানুষের মুখ গুলো,

 জীবনযাপন হয়ে পড়েছে কঠিন ও

 অর্থহীন! তুমি নেই বলে এখন 

মানুষ গুলো আর মানুষই নয়, 

যেনো  এক একটা হিংস্র পশু, 

কখনোবা তার চেয়েও খারাপ কিছু!


" পাহাড়ি নীলকান্ত পাখি "


বেদনার বিধ্বস্ত নীলিমায় উড়ে বেড়ায়

 পলাতক সুখের পাহাড়ি নীলকান্ত পাখি।

 ওর শরীর জুড়ে যে কালচে নীল রঙ , 

তা আমারই বেদনার গাঢ় কষ্ট শুষে হয়েছে।

 ওর ঠোঁটে যে লাল রঙ দেখো , 

তা আমারই রক্তাক্ত হৃদয়ের !

আবার ওকে যখন ডানা মেলে 

আকাশে উড়তে দেখো, 

তখন ওর ডানায় যে সাদা রঙ এর

অংশ ভেসে ওঠে, তা হলো আমারই

 শুদ্ধতম প্রেমের রঙে রাঙানো! 

তাই আমার ভালবাসার আরেক নাম,

 পাহাড়ি নীলকান্ত পাখি।

প্রেমাংশু শ্রাবণ কবির




একজন প্রেমিকের উক্তি


দেখা হবে ফের আগামী সকালে 

অদূর আগামী কালে, 

তোমার তনুতে ছোঁয়াবো আবার অনন্ত এই পাঁচটি আঙ্গুল। 

জন্ম দোলানো পাঁচ জোড়া নখ প্রজাপতি করে,

চিতল চিবুকে অঞ্জলি দেবো নবীন পূজারী, শরীরের সব ধনুক স্বভাব মুছে নেবো কোনো মাধবীলতা মুখ গুজে থাকা ভোরের শিশিরে 

ভুলে যাবো ক্ষোভ, 

ক্ষরণের দাগ! 

অতীতের কোলাহল। 


তোমার শরীরে মাধবীর ঘ্রাণ ফুটলে

কখনো দেখা হবে ফের। 

তোমার দু’চোখে ফসলের বীজ দৃষ্টি জড়ালে 

দেখা হবে ফের। 


তোমার চিবুক আলো করা তিল 

বাংলাদেশের পতাকার মতো সবুজ রক্তের মতো লাল টিপ হয়ে জ্বলবে ভীষণ 

দেখা হবে ফের। 


যুগল তোমার ভ্রু-ভঙ্গিমায় শুক্লাদ্বাদশী আকাশের চাঁদ, 

শোষিতের হৃত বুকের সাহস ফোটাবে যখন আবার হাসিতে, আকাশ উজাড় তারার মতো তোমার শরীরে ফুটলে অশেষ অবিনাশী ফুল 

ইচ্ছা বকুল

দেখা হবে ফের 

দেখা হবে ফের।

রেবেকা সুলতানা রেবা




পানসে জীবন


কখন ও মেঘ কখন ও রোদ্দুর

হাঁসি কান্নার গোলক ধাঁধা 

জন্ম নিয়েই আলো আধাঁরির খেলা।


মানুষের জীনবটাই একটা রহস্যকাব্য

লুকিয়ে আছে কত জানা অজানা খেলা

কেউ কি যানে কখন ফুরায়ে যাবে

এই জীবনের লেনাদেনা?


হারিয়ে ফেলছি অনেক প্রিয়োজন

রেখেছিলো যারা স্বপ্ন আর সাহসে

আমার আমিতে গভীর মমতায়

স্নেহে আদরে ভালোবাসায় উদারতায়

কাছে ডেকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিতো

 আমার অস্তিত্বে যারা লেপ্টে ছিলো

তারা হারিয়ে গেলো আবলিলায়।


আমি বেঁচে আছি এখনো মরিনি

একটু একটু করে মরে যাচ্ছি 

ছুঁয়ে দিতে পারিনি কখনো

ভালোবাসার বিশাল আকাশ

বিষাদ আর ক্লান্তি এসে ভর করে

দেহ আর  মনে আমার আমিতে

ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাই স্বাদ, রস, গন্ধ

কিছুই নেই পানসে এ জীবনে।

এরশাদ


 


উন্মাতাল

                                              


ভুল ছিলাম

ভুল আছি

ভুল থাকবো।

আমি যদি শুদ্ধ হই

কেউ একজন আমাকে বলবে না

একটু ভদ্র হওতো ;

আমার কনুই বেয়ে ঝুলে পড়া আস্তিন 

গুটিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করবে না কেউ একজন।

কেউ একজন মেকি রাগে বলবে না

উফফফ,একটু গোছালো হতে পারো না!

আমি চাই,কেউ একজন রাগ করুক

খুব বিরক্ত হোক।

চারমিনারে আগুন জ্বালিয়ে যখন কুন্ডলী বাতাসে ছেড়ে

একটু উদাস হবো

আমি চাই কেউ একজন এসে বুকে মাথা রেখে

প্রান চঞ্চল চপলতায় বলে উঠুক

যাযাবর,অনেক ভালোবাসি তোমায়।

আমি তোমাকে চাই 

আমার ভুলের মাঝে।

আমার এলোমেলো চুলের মাঝে

পঞ্চাঙ্গুলী বুলিয়ে কেউ একজন বলবে না

ইসসস,দিন দিন খুব বাউন্ডুলে হয়ে যাচ্ছো।

সর্বোপরি, আমি বাউন্ডুলেই হতে চাই

তোমার চৌকাঠে চরন ফেলে

একমুঠো নিজেকে গুছিয়ে নিতে চাই।

অলোক দাস




একটি মেয়ের জীবন


গীতাদি, তুমি এতো ভুল করলে কেন? ভালোই তো ছিলে মেয়ের বিয়ে দিয়ে I স্বামীহারা হয়ে কর্মস্তলে I ওরা তোমায় স্বপ্ন দেখালো, কেড়ে নিলো তোমার ভরা যৌবন I তুমি স্বীকৃতি চেয়েছিলে, দেয় নি তা তোমাকে I আজ তুমি কতো অসহায়, জীবনের হিসাব নিকাশ মেলাতে পারছো না I সবই এখন ধার, মেয়ের ভালোবাসা, তাও আজ নেই I নিঃস্ব, রিক্ত তুমি ! মেয়ে পরের বাড়ির জন্য - শুধু সম্মন্ধ সম্মান I এখন একটাই পথ I স্বামীর ছবি রেখে ফেলো রোজ দু ফোঁটা চোখের জল I যা হোয়ে গেছে ভুলে যাও, আসুক নতুন ভোর I

তাহসান কামরুজ্জামান




অপরিচিতা



অপরিচিতা তোমার কণ্ঠস্বরে অসম্ভব রকমের মায়ার মোহনজালে মুগ্ধ করে তুলে;

ভীষণ ভাবে জমাটবদ্ধ অনুভূতিগুলো কে ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ করে সতেজ প্রাণ ফিরিয়ে দেয় হৃদয়ের মনিকোঠায়। 

বেঁচে থাকার স্বপ্নের চারাগাছ রোপণ করতে শিখাই তোমার মুখের হাসি! 

একসঙ্গে পথচলাতে অনুপ্রেরণা যুগান দেয় নীরব চোখের ভাষা। 


অপরিচিতা,

নিস্তব্ধ হৃদয়ের আঙিনায় ভালোবাসি শব্দের স্বাধীনতার ঘোষণা করতে চাই! 

চোখের চাহনিতে শতাব্দীকাল বেঁচে থাকার অধিকার স্থায়ীভাবে বসবাসের উপযোগী করে নিতে চাই। 


অপরিচিতা,

পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় কবিতার পঙক্তি রচনা করতে চাই! 

এলোকেশী চুলের গন্ধে নিজেকে  নতুনভাবে প্রেমিক বলে স্বীকারোক্তি দিতে অদম্য ইচ্ছে করে। 

অদৃশ্যের বন্ধনে মায়াভরা কথার ফুলঝুরিতে বিলিয়ে দিতে ইচ্ছে জাগে। 


অপরিচিতা,

একটুকরো জায়গায় দিবে;মনের মনিকোঠায়?

ভালোবাসার সমারোহে জড়িয়ে রাখবো! 

রাতের আধারে রাতজাগা পাখির মতো স্মৃতিচারণ করে ডায়েরির পাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখা উপহার দিবো।

জামান আহম্মেদ রাসেল




আমি হতাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমিক


শুরু থেকেই যদি তুমি শুধু আমার হতে

শুরু থেকেই যদি শুধু আমায় চাইতে ,

তবে আজ আর আমি এতটা বেয়ারা হতাম না

প্রহর শেষে ক্লান্ত হয়ে স্বপ্ন হারাতাম না।।


যদি তোমার প্রথম শেখা গানটা আমায় শোনাতে

তোমার প্রথম দেখা স্বপ্নপুরুষ যদি আমিই হতাম ,

প্রথম দেখা তোমার আকাশটা যদি আমায় দিতে

তবে আমি আজ এতটা নিঃস্ব হতাম না।


ধুলোমাখা পথে যদি আমার হাত ধরেই প্রথম হাঁটতে

যদি আমায় ঢেলে দিতে একটু একটু করে জমিয়ে তোলা তোমার প্রথম আবেগ ,

তোমার ছোঁয়া যদি শুধু আমিই পেতাম সেই প্রথম অনুভূতির

তবে আমি আজ আর দুঃস্বপ্নে এতটা বিভোর হতাম না।


তোমার লেখা প্রথম চিঠি যদি আমাকেই লিখতে

তোমার প্রথম কবিতার ছন্দে যদি আমায় মেশাতে ,

দুরু দুরু বুকে ভীরু ঠোঁটে যদি ভালবাসি কথাটা প্রথম আমাকেই বলতে 

তবে আজ আর আমি এতটা বিষাদের কাব্য লিখতাম না।


তোমার প্রথম অপলক চেয়ে থাকা যদি হতো শুধুই আমার পানে,

তোমার প্রথম অভিমানের দাগটা যদি আমার উপরই স্থির হতো।

তোমার প্রথম জোসনা মাখা যদি আমার সাথেই হতো কোন এক রাতে,

তবে আজ আমার বেঁচে থাকাটা হতোনা সমস্ত শূন্যতার সাথে।।


যদি তোমার আঁচলটা আমিই ছুঁতাম তোমার প্রথম শাড়ী পরার

দৃষ্টি জালে যদি আমিই প্রথম বেঁধে নিতাম তোমার লাজেভরা চোখ দুটো ,

যদি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তোমার প্রথম কেশ মেলানো আমিই দেখতাম

তবে সত্যিই আজ আর এতটা বিনাশ হতোনা আমার হৃদয়ের।


যদি সত্যিই আমি হতাম কারো প্রথম প্রেমিক

কারো প্রথম আশার যাদুকর; প্রথম বিরহের জল ,

যদি কেউ প্রথম আমাকেই কাছে টেনে নিতো পরম আবেশে

তবে আমিই হতাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমিক সব ইতিহাস ভেঙ্গে অবশেষে।।

আমির হাসান মিলন




ভণ্ডের আজকাল


আমি অতি মূর্খ না জ্ঞাণী ?   

তা কি আর জানি-মানি ! 

শুধু মনের জোরে , এই ভুবন ঘরে  

স্বার্থের ঘানী টানি । 


সম্মান আবার কাকে দেবো 

কেঁড়ে-কুঁড়ে সবটা নেবো 

আমি সব জান্তা , জানি এই ভানটা 

যুক্তির কাছে কেন যাবো ! 


আমি যে রাজার রাজা 

বাকি সব আমার প্রজা 

যে পড়বে পায়ে , চলবো তাঁকে নিয়ে 

বাকিদের দিই সাজা । 


আমিই আমার সনদ লিখি 

রাত জেগে তা নিজেই দেখি 

আমি অনেক বড় , এবার পায়ে পড়ো 

শেখাবো কেমন করে দিচ্ছি ফাঁকি ।