০৩ জানুয়ারী ২০২২

কবি শামরুজ জবা'র কবিতা




অবুঝ কান্না
শামরুজ জবা 

তোমাকে ভালোবেসে
        মেটেনি আশা,মিটলো না সাধ;
জীবনের মাঠ জুড়ে ...
 বুনোলতার মত কাঁটাময় অবসাদ।

কেন গেলে চলে দূরের দূর?
কি এত অভিমান?
         কি বল অনুরাগ?
আমার কি ছিল-- কোন কিছু ভুল?
আজো ভাবি মনে মনে
          জানে- চাঁদ আর ঝরা বকুল।

স্বপ্ন তো ছিল বেশ--
তোমার হাত ধরে অপূর্ব মায়ায়
উচ্ছল খুশিতে 
        দেখে যাব-- নক্ষত্রের আকাশ;
আমার চোখ আজ নদী,
     বুকের গহনে অনাবাদী দীর্ঘশ্বাস!

এখনো বোসে থাকি
তোমার পথ চেয়ে গভীর মায়ায়
                   চুপচাপ একা-- একাকী!
তুমি কি মান ভুলে--
              আসবে ফিরে?
বল না, বল; বল না- 
          তুমি আবার ফিরে আসবে কি!

শান্তা কামালী/৫৬ তম পর্ব




বনফুল
(৫৬ তম পর্ব ) 
শান্তা কামালী

অহনার মা মরিয়ম বেগম ও বেশ কিছু কেনাকাটা করছেন।অহনার সাথে দিয়ে দিতে হবে তো..... 
এক মেয়ে বলে কথা। ওদের তো একটু স্বাদ আহ্লাদ আছে।

 অহনার বাবা-মা দুজনেই একসঙ্গে বেরিয়ে গিয়ে ছেলের জন্য একটা ডায়মন্ড রিং, রাডু ঘড়ি, ব্লেজার স্যুট, সু ইত্যাদি কেনাকাটা করেছেন। রাতে অলিউর রহমান সাহেব সব জিনিস-পত্র, লাগেজ ব্যাগ, সবকিছু নিয়ে স্ত্রী রাহেলা খাতুনের সামনে এনে লাগেজ গুছিয়ে রাখলেন। সকালে উনি নিজেই গিয়ে দিয়ে আসবেন অহনাদের বাসায়। ডিনার শেষে  স্ত্রীকে ঔষধ খাইয়ে শুইয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়লেন.....। 
বেশ সকালেই ঘুম থেকে উঠে বুয়াকে নাস্তা দিতে বললেন অলিউর রহমান সাহেব। ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বললেন, সৈকতকে ডেকে বললেন তোমার আম্মুর নাস্তা ঔষধ খাইয়ে দিও, আমি বেরোচ্ছি। 
অহনাদের বাসায় পৌঁছে মনিরুজ্জামান সাহেবকে বললেন আপনি ও অহনার আম্মু যদি জিনিস গুলো বুঝে নেন তাহলে  খুব ভালো হয়।
সৈকতের বাবা যখন গহনার সেট অহনার বাবা-মার হাতে দিলেন, মনিরুজ্জামান সাহেব,  মরিয়ম বেগম  বক্স খুলে দুজনেই চমকে উঠলেন! 
সৈকতের বাবা জুয়েলারি দিবেন ধারণা ছিল কিন্তু এতো ভারি গহনা দিবেন কল্পনাও করতে পারেননি! 
কাপড়ের বাজার দেখেও আশ্চর্য হলেন।
 অহনার মা নাস্তার আয়োজন করেছেন, অলিউর রহমান সাহেব বললেন ওনার অনেক কাজ বাকি আছে আজকেই কাজগুলো সারতে হবে।তিনি বললেন আমি শুধু এক কাপ চা খেতে পারি।
যথারীতি চা খেয়ে বিদায় নিলেন। 
টুকিটাকি এইটা সেইটা সব কেনাকাটা  সেরে বাসায় পৌঁছেছেন আড়াই টায়, ততক্ষণে সৈকত মা-কে খাইয়ে দিয়েছে.....। 
ওদিকে জুঁই পলাশকে মেসেজ করে জানতে চেয়েছে, অহনা আজই ওকে যেতে বলছে,কি করবে? 
পলাশ রিপ্লাই দিয়েছে আন্টি আঙ্কেল যদি বলে তাহলে যাও আমার কোনো আপত্তি নেই। 
মা-বাবার থেকে অনুমতি নিয়ে জুঁই অহনাদের বাসায় এলো,জুঁইয়ের বাবা ড্রাইভার হলিলকে বলে দিয়েছেন ও যেন  অহনাদের বাসায় থেকে যায়,। জুঁইয়ের গাড়ির প্রয়োজন হতে পারে, জুঁইকে পেয়ে অহনা বেশ খুশি। গায়ে হলুদ,মেহেদি শেষ হওয়ার পর জুঁই অহনাকে বললো আজ তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে সকালে উঠে পার্লারে যেতে হবে।


চলবে...

মমতা রায় চৌধুরী /৮৪




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৮৪
মুশকিল আসান
মমতা রায় চৌধুরী



আজ শুভ বড়দিন সকাল থেকে শিখার মনটা যেন চলে গেছে সমুদ্র সৈকতের সেই ঢেউ এর কাছে, যা বারবার আবার তার কাছেই ফিরে আসে। কেন যে এই দুঃখ ,যন্ত্রণা ,কষ্টগুলো বারবার মনের ভেতরে নাড়া দিয়ে ওঠে? ভুলে তো অনেক কিছুই থাকতে চায় । অতীতকে মনে করতে চায় না। তবুও অতীতের ওপর ভিত্তি করেই বর্তমান ।তাকে অস্বীকার করে কি করে?'আজ সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেছে ।এটাই তো স্বাভাবিক ।আজকের দিনটা তো সেরকমই কিছু ছিল। বিশেষ বিশেষ দিনগুলো বারবার ফিরে ফিরে আসে আর ভেতরের দলা পাকানো স্বপ্নগুলো পোকার মতো নড়েচড়ে ওঠে। এতকাল যা সুখানুভূতি ছিল এখন সেগুলোই কেমন যন্ত্রণাদায়ক। ভুলতে চাইলেও ভোলা যায় না। কি করবে শিখা? দিব্যেন্দুর নামটা স্মরণ করতেই চায় না। ছিঃ যাকে সবথেকে বেশি আপনার মনে করেছিল। হৃদয়ের কাছাকাছি ।এমনটি করতে পারে? এজন্যই পৃথিবীর সব ছেলেগুলোর  ওপর বিশ্বাস চলে গেছে। শিখা ভাবছে কখনও তো আর  জানতে চাও নি ?কিসে আমার সুখ, কিসে আমার যন্ত্রণা। তোমায় ভালোবেসে শুধু পেয়েছি কাঁটার যন্ত্রণা। 
পরক্ষণেই ভাবছে' কেন ওর কথা এতবার ভাবছি?
পাগল পাগল লাগছে। পার্ক স্ট্রিটে কি মজাই না করেছে? শুধু স্মৃতি।'

হঠাৎ শিখার ফোন বেজে উঠলো'
শিখা একটু কৌতুহলী আর ভাবলো 'আমার ফোন আজকের দিনে? কে? কি জন্য? ফোনটা কেটে গেল। 
আবার ফোন বাজতে শুরু করলো।
ফোনের আওয়াজ শুনতে পেয়ে নিচে থেকে মাধুরী  বলছে'শিখা ,শিখা ,শিখ আ.আ.আ তোর ফোন বেজে যাচ্ছে। ফোনটা ধর।'
মাধুরীর গলার আওয়াজ যেতেই 'শিখা ফোনটা ধরল।'
শিখা বলল' হ্যালো'।
ওপর প্রান্ত থেকে গানের আওয়াজ 'মনের দুয়ারে দাঁড়িয়ে থেকো না। ঘরের দুয়ারে এসো।'
শিখা হেসে বললো 'ও কল্যাণ দা।'
কল্যাণ বলল 'মেরি ক্রিসমাস'।
শিখা বলল 'সেম টু ইউ।'
কল্যান বলল 'কী করছো এখন?'
শিখা বললো 'গল্প করছি।'
কল্যান বলল 'তাই?'
শিখা বলল 'তা হঠাৎ এত সকালে মনে পড়ল?'
কল্যান বলল 'কেন অপরাধ করে ফেললাম?'
শিখা বলল 'না ,না ।তা কেনো হবে?'
কল্যান বলল' তাহলে?'
শিখা বলল 'সকালবেলা গান ধরলেন। গান শুনে মন ভালো হয়ে যায়।'
কল্যান হেসে বলল'তোমার মত তো আর গান গাইতে পারি না।'
শিখা বলল 'তাই বুঝি দাম বাড়াচ্ছেন?'
ওদিকে মাধুরী বৌদি বলল' কে ফোন করেছে?'
মেজ পিসি বলছেন' 'তোমার ননদের কি আর ফোন করার লোকের অভাব?'
মাধুরী বলছে ' পিসিমা ঠিকই বলেছেন।বিএড এ ভর্তি হয়েছে ।সময়ে-অসময়ে অনেকেই ফোন করে কাজের কথা হয় ।ফোন করার লোকের অভাব হবে কেন?'
মেজ পিসি বললেন'আচ্ছা মাধু তোমার ননদের তো এখন বিয়ের ব্যবস্থাটা করতে পারো। এই বয়সে তো আমাদের কবে বিয়ে হয়ে গেছে।'
খুব মিষ্টি করে আর নিচু গলায় মাধুরী বলল ' না ,আমরা এখন শিখার বিয়ের কথা ভাবছি না পিসিমা ।'
শিখার কানে সব কথাগুলোই আসছে।
কল্যান বলল 'চুপ করে গেলে কেন? আমি কি কিছু ভুল বললাম?'
শিখা বলল 'না ,না। কল্যানদা ভুল কেন বলবেন?'
পিসিমা বলছেন মাধুকে' 'দেখো মাধুরী তুমি এখন এই সংসারের কর্ত্রী। আমাদের কথাগুলো হয়তো তোমার অতটা ভালো লাগছে না ।কিন্তু দেখো, সুরঞ্জন একা ইনকাম করে ।বৃষ্টিটা বড় হচ্ছে, সেদিকে একটু ভাবো ।নিজের মেয়ের ভবিষ্যতের কথাটাও ভাবো?'
শিখা মনে মনে ভাবছে 'এই যে বিষ ঢালার জন্য সংসারে এসেছেন।'
মাধুরী বলল 'আমার মেয়ে বৃষ্টির ভবিষ্যৎটা দেখব ,শিখার ভবিষ্যৎটা দেখব না?'
পিসিমা বললেন 'তোমার কথায় ঝাঁঝ আছে। পরে তুমি কথাটা নিজের মনে ভেবে দেখো।'
মাধুরী বলল 'আমার শিখা স্বাবলম্বী হয়ে গেলে ,ওই তখন বৃষ্টিকে দেখবে ।আমাদের আর ভাবতে হবে না।'
পিসিমা বললেন 'নিজের মেয়ে নিজের মেয়েই হয় ।ননদ কখনো নিজের মেয়ে হয় না।'
কথাটা শুনে শিখার পা থেকে মাথা পর্যন্ত রাগে রি রি  করে উঠলো।
মাধু বলল' পিসিমা আপনার জলখাবারটা দিয়ে দি।'
পিসিমা বলেন' কি বানিয়েছো?'
মাধুরী বলল 'কেন আপনি যে গতকাল বললেন সকালে দালিয়া খাবেন ।সেটাই বানিয়েছি ।'
পিসিমা বলেন 'ডালিয়া বানিয়েছ?'
মাধুরী বলল 'কেন আপনি অন্য কিছু খাবেন?'
পিসিমা বললেন 'তোমাদের কি বানিয়েছো?'
মাধুরী বলল 'আজকে মুলোর পরোটা ,ক্যাপসিকামের চাটনি ,নতুন আলু মটরশুঁটি দিয়ে ডালনা মতো করেছি।'
পিসিমা বললেন' বলো নি তো আজকে মুলোর পরোটা করবে?'
মাধুরী বলল' কেন আপনি খেতেন? আসলে শীতকাল তো এখন ভ্যারাইটিজ পরোটা করি ওরা খেতে ভালোবাসে।'
পিসিমা বললেন' একটু টেস্ট করে দেখতাম?'
মাধুরী বলল' ঠিক আছে। আপনি খান না। অসুবিধা নেই তো।'
পিসিমা বললেন' তাহলে তোমার দালিয়াটা কি হবে?'
মাধুরী বলল 'ও নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না ।ও ঠিক আমরা খেয়ে নেব।'
শিখা কথাগুলো শুনতে পাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে জ্বালানোর একটা লিমিট আছে।'
পিসিমা বলেন' কিছু মনে করো নি তো মাধু?'
মাধুরী বলল' না ,না মনে করবো কেন?'
 শিখা মনে মনে ভাবছে 'বৌদির জন্যই তো এসব কিছু হচ্ছে। এতটা বাড়াবাড়ি না করলে এরকম হতো না। সেদিন ই বললাম যে ,পিসিকে খবর দিয়ে আনতে হবে না। তা শুনলো আমার কথা।এবার নাও ঠ্যালা সামলাও।'
কল্যান বলল 'কিছু বিড়বিড় করে বললে?'
শিখা বলল 'কই না তো?'
কল্যান বলল' চুপ করে গেলে ,কথা বলছো না?'
শিখা বলল' না ,না ।বলুন না?'
কল্যান বলল 'আজকের দিনে কোথাও বেড়াতে যাও না?'
 শিখা বলল 'আপনি যান না?'
কল্যান বললো 'প্রশ্নটা আমি আগে করলাম?'
শিখা বলল 'বেড়াতে যাওয়া মানে কোথায়? লোকাল ,না দূরে কোথাও?'
কল্যান বলল' না তোমারা কলকাতায় থাকো আজকের দিন তো ওখানে খুব ভালোভাবে সেলিব্রেট হয়।'
শিখা বললো  'হ্যাঁ তা হয়। গেলেই হয়। যাওয়া হয় না ।যাব কার সাথে?'
কল্যান বিড়বিড় করে বলল' বললেই পারতে?'
শিখা বলল 'কিছু বললেন?'
কল্যান বলল ' না তো। কিছু বললাম ?শুনতে পেলে?'
শিখা বলল 'শুনতে পেলে কি আর জিজ্ঞেস করতাম?'
কল্যাণ যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। যা মেয়ে  জেরার পর জেরা করবে। ভাগ্যিস শুনতে পা নি।
শিখা বললো' আপনি কি কিছু বললেন?'
কল্যান বলল 'কই না তো?'
শিখা বলল' তাহলে আপনার একটা বোধহয় রোগ আছে ।মাঝে মাঝে বিড়বিড় করেন ।কি বলেন বলুন তো বিড়বিড় করে?'
কল্যান যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো,বললো 'বিড়বিড় করি? কখন করলাম? তারপর বলল ঠিক আছে ঝগড়া ছাড়ো। গানের রেওয়াজটা করছো তো?'
শিখা বলল 'হচ্ছে রেগুলারলি করা হয় না? '
কল্যাণ বলল 'এটা কিন্তু ঠিক নয়?'
শিখা বলল' জানি ঠিক নয় ।রেগুলারলি করলে খুব ভালো হয় ।কিন্তু..?'
কল্যান বলল' কিন্তু?'
শিখা বললো 'এখন বিএড এর লেসন প্ল্যানগুলো করতে হচ্ছে তো ?খুব চাপ আছে।'
কল্যাণ বললো ' ও আচ্ছা, আচ্ছা।'
এর মধ্যে শিখা শুনতে পেল কল্যাণের ঘরে ফোনে  রিং হচ্ছে,?
কল্যান বলল 'আমার একটা আর্জেন্ট ফোন এসেছে ধরি ।কিছু মনে করছো না তো?'
শিখা বলল' না আপনি ফোন এটেন্ড করুন?'
 কল্যান বলল' ‌'ওকে।'
শিখাও মনে মনে চাইছিল ফোনটাকে ছাড়তে। নিচের পিসির কথাগুলো কানে এখনো বাজছে। ফলে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছিল না।
শিখা ফোনটা রেখে নিচে নেমে গেল।
নিচে গিয়ে ডাকছে 'বৌদিভাই ,বৌদিভাই ,বৌদিভাই।
বাথরুম থেকে আওয়াজ দিচ্ছে মাধুরী' এই আমি বাথরুমে আছি ।কিছু বলবি?'
শিখা বলল' না ,ঠিক আছে ।তুমি বেরোও তারপরে।'
মাধুরী বলল' খিদে পেয়েছে?'
পিসি কথাটা শুনতে পেয়ে বলল' কেন রে তুই নিয়ে খেতে পারিস না ।সবসময় বৌদি কে  দিতে হবে কেন খাবার?'
শিখা বলল 'তুমি খাবার খাচ্ছ খাও না ।আমার ব্যাপারে তুমি এত কথা বলো কেন?'
পিসিমা বললেন 'কি বললি তুই?'
শিখা বলল' শুনতে পেয়েছো ঠিকই।'
পিসিমা বলল 'তুই হতিস আমাদের বাড়ির মেয়ে। তোর এত বেয়াদবি যদি না আমি ভেঙে দিতাম ?'
শিখা বললো 'নিজের ঘরটা আগে ভালো করে সামলাও না পিসি।'
পিসিমা বললেন' তুই এত বড় কথা বললি?'
শিখা বলল 'যেরকম প্রশ্ন ,সেরকম উত্তর পাবে।'
মাধুরী বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখছে শিখা পিসিমার মধ্যে তুমুল ঝগড়া হচ্ছে।
মাধুরী শিখাকে বলল 'চুপ করো। বড়দের সঙ্গে এভাবে কথা বলবে না।'
শিখা চুপ করে গেল আর চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল।
মাধুরী বলল' চলে এসো। খাবে এসো।'
শিখা বলল' আমার খিদে নেই বৌদিভাই।'
মাধুরী বলল' কি তুই কোন সময় খাবার খাস আমি জানি না?'
শিখা কোন কথা বলতে পারল না ।তখনও কেঁদে যাচ্ছে।
পিসিমা বললেন 'এতে কান্নার কি আছে। যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।'
মাধুরী একটি বিরক্তিভরে শিখাকে বলল' যা তু ই ওপরে  যা। আমি খাবার পাঠাচ্ছি।'
শিখা বলল' ' আমার খিদে নেই।'
মাধুরী বলল' ঠিক আছে ।তুই ওপরে যা। যখন খিদে পাবে ।তখন খাবি।'
শিখা গটগট করে উপরে চলে গেল।
সব বুঝতে পারছে শিখার মনের কষ্টটা কিন্তু পিসিকে  তো কিছু বলতে পারছে না ।
মাধুরী মনে মনে ভাবছে' শিখাকে পরে বুঝিয়ে বললেই ও সব বুঝতে পারবে।'
পিসিমা বললেন' মাধুরী আমাকে আরেকটা মুলোর পরোটা দাও তো।'
মাধুরী বলল' এই দিচ্ছি।'
মাধুরী পিসিমাকে মুলোর পরোটা আরেকটু তরকারী দিয়ে শিখার খাবারটা নিয়ে উপরে চলে গেল।
মাধুরী দেখছে 'শিখা জানলার ধরে দাঁড়িয়ে চুপচাপ।'
মাধুরী আরেকটি জানলা খুলে দিল, পর্দাটা সরিয়ে দিল ।তারপর বললো 'এই জানলাটা খুলিস নি কেন?'
শিখা চুপচাপ আছে কোন কথা বলছে না।
মাধুরী বলল 'নে শিখা খেয়ে নে।'
শিখা বলল'' আমার খিদে নেই বৌদিভাই।'
মাধুরী বলল 'খিদে নেই বললেই হলো। মন খারাপ হয়ে গেছে?'
শিখা চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল মেঝেতে ঘষছে।
মাধুরী শিখাকে টেনে খাটেতে  বসালো আর বলল 'পিসির কথা ধরতে যাস কেন? পিসিমার সঙ্গে কথা বলছিলি কেনো?'
শিখা বলল' কি সব কথা বলছিল?'
মাধুরী বলল 'আমি তো সব জানি। তা হলেও আমাদের বাড়িতে এসেছে। তাকে এভাবে বললে হয়?
শিখা রেগে  বলল 'তুমি আর মেজোপিসির  কথা ব'লো না তো বৌদি ভাই।এমনি আমার রাগেতে  মাথা গরম হয়ে আছে।'
 মাধুরী বলল 'তুই আমাদের কাছে কি সেটা তো আমরা জানি ।নে এবার খেয়ে নে লক্ষী মেয়ের মতো।'
শিখা বলল 'আমি খাব না।'
মাধুরী বলল' এবার কিন্তু আমি বকব। খেয়ে নে তাড়াতাড়ি।'
শিখার নড়াচড়ার কোন লক্ষণ দেখতে না পেয়ে মাধু একটু একটু করে মুলোর পরোটা ছিঁড়ছে আর শিখার মুখে পুরে দিতে লাগলো ।
শিখা বললো 'বৌদিভাই পিসি থাকলে আমাদের বাড়িতে একটা অশান্তি লাগিয়ে দেবে।'
মাধুরী নিজেকে দেখিয়ে বলল ' তোর চিন্তা কি আমি আছি তো।'
শিখা গলা জড়িয়ে ধরে বললো' সত্যি বৌদিভাই তুমি কত ভালো।'
মাধুরী বলল' তবে চিন্তা কি?'
শিখা একগাল হেসে বললো 'না, কোনো চিন্তা নেই। 'আমাদের মুশকিল আসান রয়ে গেছ না?'
শিখাকে খাইয়ে মাধুরী খাবার প্লেটটা নিয়ে নিচে চলে গেল আর শিখা বসে বসে তার বৌদি ভাইয়ের চলে যাওয়ার দিকটা অনেকক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিল ।শিখার মনে হতে লাগলো তাঁর বৌদিভাই যেন সেই গ্রামীণ জীবনে চিরকাল নারীর সহনশীল প্রতিমূর্তি। বৌদিভাই আজকে এক পিঠ চুল ছেড়ে যখন নিচে গেল দেখে মনে হচ্ছিল যেন স্বয়ং লক্ষ্মী মা।
সত্যি বৌদিভাই থাকলে সবকিছুই মুশকিল-আসান হয়ে যাবে।

কবি শিবনাথ মণ্ডল এর কবিতা




ধন‍্য নবদ্বীপ ধাম
শিবনাথ মণ্ডল

জগন্নাথ মিশ্রের পুত্র নিমাই
জন্ম নদীয়ায়
নবদ্বীপ ধাম পবিত্র ভূমি
গঙ্গা বয়ে যায়।
ধন‍্য পিতা জগন্নাথ মিশ্র
ধন‍্য শচীমাতা
ধন‍্য নবদ্বীপ ধাম
বিষ্ণুপ্রিয়া যথা।
হরে কৃষ্ণ নাম বিলায়
নদের গৌয়ুর হরি
জগাই মাধাই পাপিছিল
মারে কলসি বাড়ি।
গৌয়ুর তাদের জড়িয়ে ধরে
কানে দিল নাম
জগাই মাধাই উদ্ধার হলো
গেয়ে হরিনাম।
দ্বারে দ্বারে নাম বিলাতে
এলো গৌয়ুর হরি
হরেকৃষ্ণ নাম গেয়ে
দেয় গড়াগড়ি।
হরি নাম মহা নাম
জগৎ জুরে রয়
শেষের দিনে এই নামেতে
সবাই উদ্ধা হয়।
হরি বোল হরিবোল
হরি হরি বোল।।

কবি ফারহানা আহাসান এর কবিতা




মুক্তির পথে কান্ডারীরা জাগো হে জাগো
ফারহানা আহাসান


মুক্তির পথে কান্ডারীরা জাগো হে জাগো,
আজ নতুন সুরে তাল লয়ে ডাকছে তোমাদের "মা" গো।
আবার যুদ্ধে নামো সত্যের পথে,
যুদ্ধে নামো এগিয়ে নিতে,
দেশের সোনার সন্তানেরা, 
তোমরা নামাও বিজয়ের জয়গান।

মুক্তির পথে কান্ডারীরা জাগো হে জাগো
নেই মোরা পিছিয়ে জেনো,
নেই মোরা ভয়ে আর শুনে রেখো
বিশ্বে আছে মোদের লাখ প্রমাণ দেখো,
এবার করবো দেশের উন্নতি  "মা" গো।

মুক্তির পথে কান্ডারীরা জাগো হে জাগো।
মুক্তির পথে কান্ডারীরা জাগো হে জাগো।

হাতে হাত রেখে
দুর্গম দেব পার।
করিনা কোন ভয়
মোরা আজকের সন্তান,
জেগে উঠো এই বিজয়ের স্লোগানে।

শামীমা আহমেদ/পর্ব ৪৭




শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৪৭)
শামীমা আহমেদ 



সারাদিনের ছুটোছুটি আর জীবনের পট পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের দৃঢ়তায় শিহাবের একদিকে  যেমন বিরাট একটা মানসিক চাপ। অপরদিকে প্রচন্ড ক্লান্তির সাথেও ভালোলাগার এক অনাবিল মোহময়তার মিশ্রণ।শিহাব যেন পুরোপুরি শায়লা অনুভবে একেবারে ডুবে আছে। মনে হলো অনেক অনেকদিন পর শিহাবের আকাশের কালো মেঘ কেটে গেছে, হয়েছে অবাক সূর্যোদয়! আর সেই সূর্যের আড়াল থেকে শায়লার হাসিমাখা মুখের তীব্র এক আকর্ষণ, তাকে বারবার টেনে নেয় মেঘের ওপারে।
শায়লাকে নিয়ে এমনি মনের নানান ভাবনার ভেসে চলায় শিহাব কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও বলতে পারবে না।সেই যে সেই ছোটবেলায় ঈদের দিনের মতন  নতুন পোশাক আর নতুন জুতো পরে সারাদিন ঘুরে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়া। আজ যেন তেমনি মনে হলো।শিহাব ঘুম থেকে জেগে নিজেকে একবার ভালো করে দেখে নিলো।সসন্ধ্যায়  শায়লাকে নামিয়ে বাসায় ফেরা, সে ভাবেই, সে পোষাকেই বেশ একঘুম ঘুমিয়ে নেয়া। হাতের মুঠোয় সেভাবেই মোবাইলটা  ধরা। লাস্ট কল শায়লার কাছে,রাত আটটা বিশ মিনিটে। এখন ঘড়ির  কাটা এগারোটা ছুইছুই। বেশ এক ঘুম ঘুমিয়ে নেয়া হয়েছে।
শিহাব বিছানা  ছাড়লো।কাপড় বদলে নিতেই পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভূত হলো।কি করা!ফ্রিজে বেশ ক'দিনের পুরনো খাবার। সেই একই খাবারের পুনরাবৃত্তি! আর ভালো লাগে না।যদিও এতদিন  খাবারের ব্যাপারে এ ধরনের কোন অনিচ্ছা কাজ করেনি।তবে কি অবচেতন মনে শিহাব শায়লার উপস্থিতি কামনা করছে!নিশ্চয়ই শায়লা থাকলে তার এ ব্যাপারগুলো খেয়াল রাখতো।
তক্ষুণি শায়লার মেসেজ! রাতের খাবার খেয়েছো?
শিহাব কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।খেয়েছি বললে মিথ্যা বলা হবে আবার খাইনি বললে শায়লার বকুনি শুনতে হবে।তাইতো বুদ্ধি করে মাঝামাঝি একটা উত্তর জানিয়ে দিলো।এইতো এখুনি খেতে বসবো।
শায়লা ভেবে দেখলো তাদের আজকের এই স্মরণীয় দিনটি শেষ হতে রাতের আর আধা ঘন্টা  সময় বাকী! আজ বিকেল সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো শায়লাকে ভীষণভাবে আবেগী করে তুলছে।শিহাবকে এতটা কাছে পেয়ে  কেমন যেন একটা পূর্ণতা আবার কি যেন পেয়েও হারানোর একটা শূন্যতার হাওয়া বারবার বুকে আঘাত করছে।
কেন যে খাবার খেতে এত রাত করো? শরীর খারাপ করবে তো!  শায়লার খবরদারিটা শিহাব বেশ এনজয় করে।মেয়েরা স্ত্রী হওয়ার লাইসেন্স পেলেই রাতারাতি প্রেমিকা থেকে  ম্যাজিস্ট্রেটের  মত খবরদারি শুরু করে দেয়া আর এক্সাম হলের মত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে।
----শিহাব শীঘ্রই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
কিন্তু শিহাবতো নিজেই জানেনা আজ সে কী খাবে।তাইতো কথা ঘুরিয়ে বললো, ঘুম থেকে এইতো জাগলাম।আজ রাতে আর ঘুম হবে না।খেয়ে একটা ইংলিশ মুভি দেখবো।
শায়লা তুমি মুভি দেখোনা?
নাহ! বুঝিনা বলে অতটা আগ্রহ পাইনা।
আচ্ছা, আমি তোমাকে বুঝিয়ে দিবো।দুজন একসাথে বসে মুভি দেখবো। তুমি আমার খুব কাছে থাকবে তখন।
জানো শায়লা,এখন যেন আরো খুব বেশী করে তোমার কথা মনে পড়ে।
শায়লা নীরব হয়ে আছে।একটু পরেই বলে উঠলো, আচ্ছা তুমি খেয়ে নাও। কথা পরে হবে।
তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো।
আচ্ছা,ঠিক আছে।
যদিও শায়লা ঘুমের সম্মতি দিলো কিন্তু আদৌ আজ তার ঘুম হবে কিনা সন্দেহ!
শিহাব কল এন্ড করে মহা ভাবনায় পড়ে গেলো এখন কি খাওয়া যায়!হঠাৎই তার মাথায় চট করে একটা বুদ্ধি এলো,
 কোল্ড কফি করে নেয়া যায়।সাথে চকলেট কুকিজ। যাক, আর দেরী না। শিহাব
কফি মেকারে ঠান্ডা পানি, মিল্ক ক্রীম আর কফি ডাস্ট, সামান্য সুগার ছেড়ে দিলো।বাটন প্রেস করতেই ফোমি কফি তৈরি। এক মগ ঢেলে নিয়ে কুকিজ বক্স নিয়ে বসে পড়া।শিহাব চ্যানেল ঘুরিয়ে মুভি চ্যানেলে থামল।"মি বিফোর ইউ",মুভিটি চলছে।যদিও বহুবার দেখা এটা, তবুও বহুল দেখা ছবি প্রতিবার দেখায় আবার যেন একটা নতুন উপলব্ধি বা ফিলিংস বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং  কাজ করে!
 শিহাব এই মুভিটাতেই আটকে গেলো।
শিহাবের এই একার জীবনে মুভি আর গান যেন টনিক হয়ে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
মুভি শেষ হতে প্রায় রাত সাড়ে তিনটা বেজে গেলো। হু, এখন একটু ঘুমাতে হবে।চোখ যেন একটু ক্লান্ত হলো! 
ট্রুং করে করে মেসেজ এলো।শায়লার মেসেজ।মুভি শেষ হলো?
হ্যা,এইতো শেষ হলো।কেমন করে বুঝলে?
আমি তোমার  চোখের সবটা যে পড়ে নিয়েছি শিহাব।
তা আমি না হয় মুভি দেখেছি,তুমি ঘুমাওনি কেন? 
তুমিতো আমায় শুভরাত্রি বলোনি।তাই রাতটা শুভ হয়নি।ঘুম আসেনি।
এটা কোন কথা হলো।এই যে এক্ষন বললাম শুভরাত্রি শুভরাত্রি,, শিগগীর ঘুমাও।
কিন্তু শিহাব, আমার কেমন যেন ভয় করছে।
কিসের ভয়?
এই যে আমাদের মনের এত ভাবনা,এত চাওয়া, এত ইচ্ছা এগুলো সত্যি হবেতো?
কেন হবে না,কিসের ভয়? আমি আছি না? রাহাত আছে আমাদের পাশে,তুমি মনে সাহস রাখো শায়লা।এসব ভেবে শরীর খারাপ করোনা।সামনে আমাদের জন্য শুধু সুখ আর সুখ অপেক্ষা করছে।তুমি আমি এতদিনতো কম পরীক্ষা দেইনি।নিজেদের সংযত রেখেছি।আজ আমরা তার পুরষ্কার পেতে যাচ্ছি।তুমি মনে মিছে কোন ভাবনা এনোনা।
শায়লা, আমি আজ তোমার হাত ধরেছি, সারাজীবনে আর ছাড়বো না।তুমি আমার বুকে ভরসা খুঁজেছো,তা চিরকালের ভরসাস্থল হয়েই থাকবে।
শায়লা কেঁদোনা।তোমার কান্নার দিন শেষ আর আমার একলা থাকার দিনের অবসান হতে যাচ্ছে।জানোতো, শেষ আর অবসান ওরা জমজ ভাই।তাই তোমার আমার বিরহকালের  শীঘ্রই  সমাপ্তি,, বাজছে সোনালী দিনের আগমনী।
শায়লা,আজ নীল শাড়িতে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছিল।
তোমাকেও ঘিয়া রংটিতে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না।
জানো শায়লা,কত কতবারই না আমি তোমাকে  ফিরিয়ে দিলাম,ভালবাসতে বারণ করলাম কিন্তু জানো একবারও তা মন থেকে বলিনি।বারবারই ভেবেছি, তুমি যেন আমায় একেবারে ছেড়ে না যাও,তাইতো শুধু বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে তোমাকে আটকে রাখতে চেয়েছি, শুধু একটা সম্পর্কের বাধনে হলেও তোমাকে যেন কাছে পাই সে চেষ্টায় থেকেছি।তাইতো এত নাটকীয়তার আশ্রয় নিয়েছি।শায়লা কিছু বলছো না যে? শায়লা?
আহ! ঘুমিয়ে পড়েছে।
কেমন করে একটা মেয়ে এতটা আকুল হয়ে ভালবাসতে পারে,কিছু কিছু মেয়ে স্বামীর কাছ থেকে শুধু আর্থিক ভোগ বিলাস পেতে চায় কিন্তু শিহাবের জীবনে রিশতিনা, শায়লার মত মেয়েদের আগমন ঘটেছে।রিশতিনার নিঃস্বার্থ ভালবাসায় কেন ঝড় উঠেছিল শিহাব আজো তার উত্তর খুঁজে পায়না।কিন্তু এবার আর শায়লাকে সে হারাতে চায় না। ভাগ্যের সাথে এবার তার বোঝাপড়া হবে।কিছুতেই সে হার মানবে না।যে কোন মূল্যে সে শায়লাকে ধরে রাখবে।শায়লার ও প্রান্ত নীরব।শিহাবও তাই ঘুমের প্রস্তুতি নিলো।

সকালে ঘুম থেকে জেগে,শিহাব অফিসে যাওয়ার আগে শায়লার মোবাইলে শুভ সকাল মেসেজ রাখলো।আর লিখে রাখলো, আমার প্রতি বিশ্বাস রেখো শায়লা।কোনদিন কোনভাবে আমাকে ভুল বুঝোনা।বাই।
শিহাব নাস্তা ছাড়াই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।অফিসে গিয়ে অফিস এসিস্ট্যান্ট কবির  ছেলেটাকে দিয়ে নাস্তা আনিয়ে খেয়ে নিবে। কবে শায়লা তার ঘরে আসবে আর তার কঢতের দিন ফুরাবে! শিহাব অফিসে পৌছে রুমে ঢুকতেই কবির জানালো একটা ছেলে আপনার সাথে দেখা করার জন্য সেই সকাল থেকে বসে আছে।আমি কতবার জানতে চাইলাম আপনি কে, কেন স্যারকে খুজছেন,কে পাঠিয়েছে,একটা প্রশ্নের উত্তর সে দিচ্ছেনা।শুধু বলে, আমি শিহাব স্যারের কাছে সব বলবো। এবার শিহাবের খেয়াল হলো, হ্যা,অফিস রুমে ঢুকার আগে খুবই সাধারন পোষাকের একটা ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে।শিহাবের বেশ কৌতুহল হলো।
শিহাব কবিরকে বললো, ঠিকাছে যাও,ছেলেটিকে ডেকে নিয়ে আসো।আর হ্যাঁ,কবির,তুমি কিন্তু রুমেই থাকবে। অচেনা এমন একটা লোক কেন কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে, সাবধান থাকতে হবে। 
কবির ছেলেটিকে ডাকতে বাইরে বেরিয়ে গেলো। শিহাব গভীর ভাবনায় ডুবে গেলো,কি জানি কোন চাকরী বা টাকার  সাহায্যের জন্যই এসেছে কিনা। শিহাব বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো।টেনশন কমাতে একটা সিগারেট  ধরিয়ে নিলো
কবির ছেলেটিকে নিয়ে রুমে ঢুকলো। শিহাবকে সালাম দিলো।শিহাব উত্তর দিয়ে বসতে বললো।বেশ বিনীতভাবেই জানতে চাইল, আপনিকি বলতে চাইছেন নির্বিঘ্নে বলুন।রাখার মত হলে অবশ্যই রাখবো।কবির রুমে থাকাতে ছেলেটা ইতস্তত করছে।
শিহাব ইশারায় কবিরকে বাইরে যেতে বললো।শিহাবের কৌতুহল বেড়েই চলেছে 
এবার ছেলেটি বললো, আমার নাম মিলন। আমার বাবার নাম জয়নাল দেওয়ান।আমার বাবা ঝিগাতলায় জজবাড়ির দারোয়ান ছিল।
শিহাবের এবার মনে পড়লো।এই জয়নালকেই একদিন শিহাবের মোবাইল নাম্বার নেয়ার জন্য রিশতিনা পাঠিয়েছিল! আজ তার ছেলে মিলন  কি সেই যোগসূত্রেই কোন সাহায্য চাইতে এসেছে।সাহায্য দিতে শিহাবের কোন আপত্তি নেই।কিন্তু মনে হচ্ছে ছেলেটা আরো কিছু বলতে চায়।
এবার বললো, আমাকে রিশতিনা আপু পাঠিয়েছে।আপু আপনার সাথে দেখা করতে চায়। আজ দুপুরে ধানমন্ডির একটা রেস্টুরেন্টে। মিলন একটা কাগজ এগিয়ে দিলো যেখানে রেস্টুরেন্টের নাম আর সময় লেখা। জিনজিয়ান রেস্টুরেন্টে বেলা আড়াইটায়। শিহাব ঘড়ি দেখলো। সকাল সাড়ে দশটা বাজছে।শিহাব ছেলেটিকে কী বলবে বুঝতে পারছে না।তার সামনে শুধু শায়লার অভিমানী মুখটা ভেসে উঠছে আর রিশতিনার মুখটা অস্পষ্ট লাগছে।শিহাব কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।ছেলেটি আবার বললো, আপু অপেক্ষায় থাকবে।আপনাকে যেতেই হবে।আপনার সাথে অনেক কথা আছে। রিশতিনা দেশে কবে এলো?  কেন এলো? আর এলোই যদি তবে আরেকটা দিন আগে কেন এলো না।ল?শিহাবতো তার জন্য অনেক অপেক্ষায় ছিলো। মিলন বিদায় নিলো।শিহাব আনমনা হয়ে রইল।অতীত স্মৃতি সব  শায়লার ভাবনাকে ম্লান করে দিতে চাচ্ছে।উফ! আবার জীবন পরীক্ষা! আর কত?
হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো।শিহাব চমকে উঠলো! তাকিয়ে দেখলো মায়ের কল।শিহাব স্বস্তি পেলো।সন্তানের বিপদে মায়েরা ঠিকই টের পায়।শিহাব কল রিসিভ করলো।মা কেমন আছো?
বাবা আমি আরাফ, তুমি কবে আসবে বাবা? আমার জন্য চক্কেত আনবে।
হ্যাঁ,বাবা আনবো।আরাফ তার জীবনের অনেকখানি।সেতো রিশতিনারও সন্তান।তবে কী রিশতিনা আরাফের ভাগ নিতে এসেছে? 
প্রচন্ড দুশ্চিন্তায় শিহাব  অন্যমনস্ক হয়ে রইল।আঙুলের ফাঁকে আটকে রাখা সিগারেট কাঠিটি একা একাই পুড়ছে।চলবে....

কবি দিলারা রুমা  ( ইংল্যান্ড) এর কবিতা






স্বাগতম তোমায়
দিলারা রুমা 
( ইংল্যান্ড)

বিগত বছরের কালি মুছে
উদয় হলো নতুন সূর্য
সময়ের ঘড়িটা বদলে নিলো
দিন তারিখ বয়স।
ফেলে এসেছি যা 
ঘুমিয়েছে তা।
আবার ফুটুক শতকোটি ফুল
সুগন্ধে ভরে যাক
সময়ের নীড়।
চলো, একসাথে জেগে উঠি
গাই জীবনের গান;
চলো একসাথে চলি
মিতালির বন্ধনে বলি
স্বাগতম তোমায়।
চলো ভুলে যাই 
ভুল ভ্রান্তির একটু আধটু ছায়া,
তোমাতেই আমি আমাতেই তুমি
হোক একই কায়া।
চলো বুনন করি সুন্দরের চারা 
আর গড়ে তুলি স্বপ্নের বসুন্ধরা।