২৭ মার্চ ২০২২

কবি শহিদ মিয়া বাহার এর কবিতা "কবির কারাদন্ড"




কবির কারাদন্ড
শহিদ মিয়া বাহার

আপনি কবি ?
কবিতা লিখেন ? 
তাহলে আপনি কিছুই করেন না
না উৎপাদন, না উন্নয়ন
 রাত্রি খনন করে কেবল কবিতার শৈল-তরঙ্গে ডুবিয়ে রাখেন শব্দকূপের জল , তীব্র বোধের প্রনালীতে
কোন উলম্ব ভুমিকা নেই আপনার জিডিপির ডাটা শিট জুড়ে;
স্বত:সিদ্ধ অথবা প্রামানিক
কোন শহর কিংবা রাষ্ট্রের !
এক শুন‍্য থেকে অন‍্য এক শুন‍্যের গোলকে 
আটকে আছে আপনার নিজস্ব জিডিপি !

স্ফিত লিষ্ট নিয়ে আপনি বাজারে যান
ওখানে আগুনের ভস্ম ওড়ে
ওড়ে পরিশ্রম, বাষ্পীভূত  ঘামের সাথে !
ফিরে আসেন অর্ধভরাট থলের নমিত হাহাকার নিয়ে  
বগলের পেশিতে গোঙ্গানো অবসাদ
আপনার যে যুবক সন্তান একদিন জড়োয়া দু:খগুলো ছুঁড়ে দেয়েছিল কর্ণফুলির ঘাটে  
তার খোঁচা খোঁচা দাড়ির ভাঁজে এখন পুড়ছে
শুকিয়ে যাওয়া দীর্ঘশ্বাসের মাঠ !
কারন আপনি কবি
আপনি কবিতা লেখেন!

কবি-আপনি খুনি
কলমের ট্রিগার টিপে টিপে  রাত ভর খুন করেন স্ত্রীর চন্দ্রতোয়া আফ্রোদিতি আকাশ
দিবালোকে পুরনো আলমিরার জমানো অলংকার,   
কাঁঠালিচাপার ঘ্রাণ
আর লাউডুগির মত বেড়ে ওঠা ফ্রেমবাধা তেল-নুনের পাললিক সংসার !
আপনার কারাদন্ড আপনিই লিখেন কবি
যাবতজ্জ্বীবন কবিতার শেলে শেলে নিমগ্ন কারাগার 
কারন আপনি কবি !

দেয়ালের পলেস্তরায় পারমানেন্ট উপহাস সিলিংফ‍্যানের মত ঝুলে আছে 
এবং ঝুলে আছে আপনার জামার আস্তিনে
তবু আপনি কবিতা লেখেন
কারন আপনি কবি  
কবিদের উপহাস মানতে নেই!

ধূলোর স্তর থেকে নেমে আসে শিশার প্রলেপ 
রাতের নিকোটিনে ঝলসে গ‍্যাছে ফুসফুস,
ধমণীতে রক্তের বাঁধ, হৃদপিন্ডের বিদ্রোহ, আড়শোলা খেয়ে নিচ্ছে থ‍্যালাসেমিয়া শরীর, ধ‍্যানিত মগজ!
কোন এয়ার এম্বুলেন্স নেই অবশিষ্ট  আপনার প্রতীক্ষায় 
সবগুলো রানওয়ে ভিআইপিদের দখলে
কোন হাসপাতাল নেই, ডাক্তার নেই, ব‍্যাস্ত বৈমানিক নেই,কারো দায়ভার নেই আপনাকে সারাবার
কারন আপনি কবি !

কষ্টের পাহাড়ে পাথর চেপে আপনি মরে যাচ্ছেন কবি !
মরে যান---
কবিদের এভাবেই মরে যেতে হয়--
কারন আপনি কবিতা লিখেন 
আর কিছুই করেন না
না উৎপাদন,না উন্নয়ন
 কিছুই না
কিচ্ছু না!

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৪৩




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৪৩
ব্যস্ততা
মমতা রায় চৌধুরী ১৪৩
১৬.৩.২২ রাত্রি ৯.৩৫

মাধুর কাজের চাপে নাজেহাল অবস্থা। ফুল পিসি তো চেঁচিয়ে মাথা খারাপ করে দিল।
'আরে শিখার আইবুড়ো কখন হবে কোথায় হবে আইবুড়োভাত?'
'এজন্যই বলেছিলাম আমাদের বাড়িতে যেতে, সেও গেল না মেয়ে।'
ও মাধু, মাধু উ .উ .উ
মাধু, আজকে খাওয়াবে কে ওকে?'
'ওদিকে সুরঞ্জন ডাকছে, আরে পার্লারের লোক কখন আসতে বলব,ওরা জানতে চাইছে? মাধু , মাধু .উ.উ.উ'
' তুমি আবার চিৎকার করছো কেন?'
ওদিক থেকে বৃষ্টি বলছে
'মাম মাম পিমনি ডাকছে।'
তবু একগাল মিষ্টি হাসি হেসে বলল' হ্যাঁ যাই।'
এ বাড়িতে মাধুরী ছাড়া সবকিছুই অচল।
সুরঞ্জনের কাছে যেতেই ওদিক থেকে আবার শিখা ডাকছে' বৌদিভাই ,বৌদিভাই, বৌদি ভাই।
'হ্যাঁ ,বল শুনছি।'
'দোতালার ব্যালকনি থেকে  শিখা, ভুরু কুঁচকে বলল' তুমি কাছে আসলে তবেই বলবো। জোরে চেঁচিয়ে বলবো না।'
মাধু হেসে বলল' এখনও গোপন কথা আমার সঙ্গে?'
এখন তো বোঝাপড়ার লোক হয়েছে ।'
 পা মেঝেতে ঘষতে ঘষতে শিখা বলল 'বৌদি ভাই তুমি তো জানো আমি কতটা তোমার উপর ডিপেন্ডেন্ট। কিছু জিনিস আছে তোমাকে ছাড়া কাউকে শেয়ার করতে পারব না বৌদি ভাই।'
'তা বেশ আসছি '।
মাধুরী ছুটলো দোতলার দিকে ।তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে ।
অন্যদিকে ফুল পিসিমা বলছে, 'বললি না বউ কটার সময় হচ্ছে আইবুড়ো ভাত কার বাড়িতে খাবে ও,.'।
মাধু আবার নেমে এসে ফুল পিসিমার কাছে এসে বলল
'ওই তো ঠাকুরপুকুর মেজো মাসির বাড়িতে।'
'ও আচ্ছা।'
'এখনো তো মেজদি আসলো না।'
'সবাই আসবে ফুলপিসি। চিন্তা ক'রো না।'
ওদিকে সুরঞ্জন ফোন করল মনোজকে।
ফোন বেজে চলেছে।
তখন রেখার সাথে মনোজের চলছে তর্ক।
উত্তপ্ত পরিবেশ।
রেখা বলছে' আমি কি এমন করলাম যে তুমি সাত সকালে আমার সঙ্গে এরকম কথা বলছ।'

'কি এমন করলে মানে? তুমি নিজে জানো না?'
'না ,সত্যিই আমি জানি না। তাহলে আমাকে তো বুঝিয়ে দিতে হবে আমার ভুলটা কোথায়?'
'ও তাহলে তোমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে তাই তো?'
'আমার ছোটলোকের মতো ঝগড়া করতে ভালো লাগছে না। তোমার যা বলার তুমি বলে 
যাও ।আমি আর কিছু বলতে পারছি না।'
'কি আমার কথাগুলো তোমার ছোটলোকের মতো শোনাচ্ছে?'
রেখা কোন কথা বলে না ।আপন মনে কাজ করে যাচ্ছে। ওদিকে স্কুলে যেতে হবে ।খামোখা ঝগড়া করে সময় নষ্ট করে কোন লাভ নেই।এমনিতেই সময়ের বড্ড অভাব। খুব তাড়াতাড়ি কাজ করতে লাগলো।
ওদিকে রেখার শাশুড়ি মা আর ননদ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দুজনে খুব হাসাহাসি করছে। রেখা, এক পলক তাকিয়ে দেখে ননদ শাশুড়ি মাকে রেখার দিকে হাত তুলে দেখিয়ে বলছে
' ঠিক হয়েছে ,ঠিক হয়েছে ।এতদিনে ভাই মুখের ওপর সঠিক কথা বলেছে। খুব তেজ চাকরি করে বলে।'
রেখা বুঝে পায় না যে কি আর চায় 
ওরা ?আজকে অন্য সংসারে বিয়ে হলে  এই পরিণতি হতো কিনা জানি না ।কপালটা  তো আর ফেলে দেয়া যায় না ।নইলে সারাক্ষণ রেখা চেষ্টা করে সংসারের যতটুকু কাজকর্ম করা যায়,  স্কুল করছে। তারপর আর কি চায়? ভেবেই পায় না এদের সন্তুষ্টি কিসে?

'আজকে মাসি কাজে আসলো না কেন? আজকেও মাসিকে ছুটি দিয়েছো?'
রেখা কোন জবাব দেয় না।।
'মা দিদিকে দেখেছো বলে   ছুটি দিয়েছ?'
মাঝে মাঝে মনোজ এমন খোঁচা দিয়ে কথা বলে না গা টা পুরো রি  রি রি করে জ্বলতে থাকে।
রেখা বলল 'মা দিদিকে দেখেছি মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?'
'যা বলতে চাইছি ,তুমি ঠিক শুনেছো। বলতে চাইছি মা দিদিকে দিয়ে কাজ করাতে চাইছে?'
রেখা মনোজের কথা শুনে অবাক হয়ে যায় এ   কোন মনোজকে দেখছে।
'তুমি ঠিকই যদি বুঝে থাকো । তাহলে কাজগুলো কে করে তুমি দেখতে পাও না?'
'হ্যাঁ ,দেখতে পাই তো।সকালে যেটুকু কাজ করে রেখে   যাও । বাকি সারাদিনের কাজগুলো কে করে?'
'সারাদিনে কি কাজ থাকে আর?'
'স্কুল থেকে এসে আমি বাসন মাজছি, সারাদিনের খাবার বাসরগুলো তো জমিয়ে রেখে দেয়া হয়। আমার জন্য।'
'আর রান্না?'
'আমার যেটুকু সামর্থ্য আমি সেটুকু করে যাচ্ছি তার বাইরে তো আমি আর করতে পারবো 
না ।তাহলে তো আমাকে স্কুল বাদ দিয়ে  ঘরে বসে থাকতে হয়।
আর আমি সেটা কিছুতেই পারব না।'
'মাসির খুব শরীর খারাপ। শরীর খারাপ নিয়ে মাসিকে আমি কাজে আসতে বলবো ?তোমাদের দরকার হয় গিয়ে বলে আসো ,যাও ।আমি পারবো না বলতে।'
মনোজ চুপ করে যায় । মনোজ জানে রেখা তো এরকম করার মেয়ে নয়। শুধু শুধু মা দিদির কথার উস্কানিতে এতগুলো কথা রেখাকে 
বলল ।বলা বোধহয় ঠিক হলো না।।'
রেখা ঝটপট কাজ করে নিয়ে জলখাবার বানিয়ে ফেললো, দুটো তরকারিও করে ফেলল। তারপর মিলি তার বাচ্চাদের খাবার দিয়ে আর বাইরে রাস্তার কালী ও তার (বাচ্চাকুকুরগুলোকে)ও খাবার দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।
মনোজ যেন কথাগুলো বলে কেমন যেন একটা আত্মগ্লানিতে  ভুগতে লাগলো। রেখাকে কথাগুলো বলাটা ঠিক হলো না।।
এরমধ্যে ফোন বেজেই যাচ্ছে, এতক্ষণ দুজনের মধ্যে এত তর্ক হচ্ছিল যে ফোনের প্রতি ধ্যান দিতে পারেনি। এখন ফোনটা রিসিভ করল মনোজ বললো 'হ্যালো।'
'আমি সুরো বলছি হাঁদা।'
"হ্যাঁ বল।'
'বল মানে ?তোরা এখনো বসে আছিস? তোরা আসবি না, নাকি শিখার বিয়েতে?'
"হ্যাঁ যাবো তো।'
মনোজ ভাবছে 'বলে তো ফেললাম সুরোকে কিন্তু
'কি বলবে সুরঞ্জনকে? একটু আগে রেখার সাথে যা উত্তপ্ত কথাবার্তা হলো, তাতে রেখা কি রাজি হবে যাওয়ার জন্য?'
"আর রেখা কোথায় বলতো ?রেখাকে দে না ফোনটা?'
"ওতো বাথরুম আছে।'
মনোজের কথায় কেমন যেন একটা , নিরুৎসাহ ভাব প্রকাশ পেল ।সুরঞ্জন ভাবতে লাগলো "কিছু কি হয়েছে?'
'তা তোরা কখন বের হচ্ছিস?'

"আজকে মনে হয় হবে না ।বিয়ের দিন যাব।'
"মানে কি বলছিস ?বিয়ের দিন আসবি?"
'রাগ করিস না বন্ধু, জানিস তো আমাদের কতগুলো বাচ্চা আছে ওদেরকে খাওয়ানো দাওয়ানো এসব তো করাতে হয় ।দুদিন আগে গিয়ে কোন লাভ নেই ,এতে ওদেরই অসুবিধা হবে।"
সুরঞ্জন বলল' তোরা না আসলে বিয়ে বাড়ির আড্ডাটা কি করে জমবে বলতো?'
"যা ভালো বুঝিস কর আমার আর কিছু বলার নেই।"
এরপর ফোনটা কেটে দিলো।
ফোনটা কাটার পর মাধুরী লক্ষ্য করল সুরঞ্জনকে কেমন নিরুৎসাহ দেখাচ্ছে।
মাধু আর  ঘাঁটালো না সুরঞ্জনকে ।প্রচুর কাজ পড়ে রয়েছে।
ওদিকে ডিজাইনার ব্লাউজ বানাতে 
দিয়েছিল ।শিখার ও আছে। অন্যদিকে মাধুরও আছে, তা দিতে এসেছে। তারা ডাকাডাকি করছে।
ফুল পিসি চিৎকার করছে ও মাধু কে ডাকছে দেখো।
"হ্যাঁ যাই ।যাই পিসিমা।'
ওদিকে ক্যাটারিং এর ছেলেরা ডাকছে, জলখাবার হয়ে গেছে।
মাধু গেটের কাছে যেতে যেতে বলল' ফুল পিসিমা, আপনারা সবাই আসুন জলখাবারটা খেয়ে নিন।'
'রানী বৌদিরা কোথায় গেল ওনাদের কেউ একটু জানিয়ে দিন না পিসিমা।'
গেটের কাছে যেতেই দেখা হয়ে গেল  মেজ পিসিদের সঙ্গে।
"ও মাধু ,বাপরে বাপ কি ট্রেনে ভিড় !কি ট্রেনে ভিড় !তোমায় কি বলি?'
পিসিমা আপনারা যান উপরে ।নিজে নিজে রুমে গিয়ে লাগেজ গুলো রাখুন আমি মনা কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।'
'মনা মনা, মেজ পিসিরা এসেছে ওনাদের লাগেজ গুলো একটু উপরে নিয়ে যাও।'
'হ্যাঁ ,যাই বৌদি।'
'ও বাবা তিনুটা কত বড় হয়েছে  পিসি?'
জবা ভালো আছো তোমরা? জিবেশ কোথায়? ''ওই তো দাদার সঙ্গে কথা বলছে।''
'যাও যাও তোমরা রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নাও তারপর ফ্রেশ হয়ে জলখাবারটা খেয়ে নাও।'
'তোমরা এসেছো কি ভালো যে লাগছে।'
জবা বললো 'তোমার বাবার বাড়ির লোক আসেনি?'
'না ,না । ও জানো না শিখার তো আমার দাদা শালার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে। ওরা তো ওখানে ব্যস্ত।'
'ও তাই বুঝি?'
এতসব লোকজনের মাঝে শিখা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখছে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা ঘেটু ঘেটু করে ওরা শ্লোক আওড়াছে আর পয়সা আদায় করছে।।
শৈশবের স্মৃতিগুলো বড় বেদনাদায়ক সেই শৈশবকে হাজারো বার ফিরে পেতে চাইলেও পাওয়া যায় না। তবুও সেই শৈশবটা বেঁচে থাকে এই ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মধ্যে কিছু পালা পার্বণের মধ্যে।শিখা মনে মনে এটা ভাবল। আর ওরা সেই ঘেটু গান করতে করতে চলে যাচ্ছে। ওটা উপর থেকে দেখতে লাগলো। একবার মনে হলো শিখা ডাকে। গেট পেরিয়ে যখন যাচ্ছে তখন ডেকেই ফেলল 'এই শোন, শোন ,তোরা এদিক আয়।'
বাচ্চারা এদিক ওদিক তাকিয়ে হঠাৎ ওপরের দিকে তাকাল । তখন শিখা ওদেরকে ইশারায় ডাকলো ওরা খুব খুশি হল। 
বলল' আমাদের কিছু দেবে?'
"হ্যাঁ ,দেবো তো  ।আয়।'
আসলে আজকে তোমাদের বাড়ি কি আছে? বিয়ে নাকি গো? তোমার বিয়ে?'
'তোরা আয় না।'
বাচ্চারা খুশি হয়ে এসে উঠোনে দাঁড়ালো। শিখা তর তর করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে ,সেই সময় ফুল পিসিমার চোখে পড়াতে বলল
' আরে তুই কোথায় যাচ্ছিস ?এই অবস্থাতে কোথাও যাবি না একা একা।'
একটু থমকে দাঁড়ালো 
শিখা বললো 'সামনে গেটের কাছে যাচ্ছি।।
কোথাও যাওয়া হবে না ।'
।এ কিরে কি অবাধ্য মেয়ে তুই কথা শুনবি না
এবার কি করে বাচ্চাগুলো গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে, কত আশা করে ডেকেছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।।'
মাধুরী ভাড়ার ঘরের দিকে যাচ্ছিল। তখন বলল 'ও বৌদি ভাই ও বৌদি ভাই শোনো না?'
'এখন না শিখা, একটু পরে আমার অনেক কাজ পড়ে রয়েছে।।
'না তুমি এখনই আসো, খুব দরকার।'
"বায়না করিস না শিখা হেসে বলল।'
'আমি তো যেতে পারছি না তাই তো তোমাকে ডাকছি। ওদিকে থানার বড়বাবু বসে আছে।'(ফুল পিসিমা)।
মাধু বলল' কি যে বলিস না মাঝে মাঝে?
বল কি হয়েছে?
ঘেটু গান করতে করতে যাচ্ছিল ওদেরকে ডেকেছি আমি ওপর থেকে ওদেরকে কিছু টাকা দিতে হবে আমি যাচ্ছিলাম ফুল পিসিমা আমাকে বারণ করল।।
গাল ফুলিয়ে শিখা বলল।
ও আচ্ছা ঠিক আছে আমি দিয়ে দিচ্ছি মাথায় হাত বুলিয়ে দিল মাধুরী শিখার।

মাধুরী গিয়ে ছেলেগুলোকে একশটা টাকা ধরিয়ে দিল।
ছেলেগুলো এত খুশি হল মাধুকে প্রণাম করতে আসলো, বললো না বাবা ,তোমরা ঘেটু নিয়ে আছো, থাক তোমরা এসো।
বাচ্চারা বলল 'তোমরা খুব ভালো, কাকিমা।'
মাধু বাচ্চাগুলোকে কাছে টেনে একটু আদর করে গালটা টিপে দিল।
শিখা সব উপর থেকে দেখতে পেল আর বলল মনে মনে এজন্যই আমার বৌদি ভাই সব থেকে ভালো।'
'তোমাদেরকে খুব মিস করবো 
বৌদি ভাই ।বিশেষত মা মারা যাবার পর থেকে তুমি যেভাবে আমাদেরকে আগলে রেখেছো 
তুমি ।ভালো থেকো বৌদি ভাই সব সময়। আর চোখের কোনে জল এসে জমা হলো।'
বৃষ্টি এসে বলল' পি মনি তুমি কাঁদছো?'
'কাঁদছো কেন পি মনি?'
বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে আরো কেঁদে উঠলো শিখা।
অন্যদিকে মাধু বৌদি সকলকে নির্দেশ দিতে থাকলো ।সব আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ।'যাও ফুল পিসি ,মেজ পিসি বাকি যারা যারা আছেন সকলকে ডেকে নিয়ে আসো নাস্তা করে নিক। তারপর তুমিও খেয়ে নিও কেমন ?তারপর যেমন যেমন বলেছি লাগেজ গুলো সব সাজিয়ে রেখেছো তো মনা সব?
 ঘাড় নেড়ে বলল 'হ্যাঁ সব ঠিকঠাক করে রাখছি'।
মেজ পিসি, ফুল পিসি সকলে গল্প করছে সেই হাসির ছটাও বেরিয়ে আসছে থেকে থেকে ।শুধু শিখাই পারছে না আনন্দ করতে ।কেন ?কি জানি মনটা কিসে ভারাক্রান্ত হয়ে গেছে সে নিজেই বলতে পারবে না।'
বিয়ে বাড়ির এত ব্যস্ততায় তার বৌদি ভাইয়ের যে কতটা কষ্ট হচ্ছে একার উপরে এত চাপ বৌদি ভাই ছাড়া এ সংসারটা সত্যিই অচল।
অন্যদিকে থেকে থেকে সানাইয়ের শব্দ কানে ভেসে আসছে।

কবি তাহের মাহমুদ এর কবিতা "আহা !সমাজ"




আহা! সমাজ 
তাহের মাহমুদ

সমাজ বড় কঠিন জায়গা
নষ্টরাই দামী
মারহাবা মারহাবা বলে
ডাকে বেনামী 

অপসংস্কৃতির অপকর্মে
সমাজ রসাতলে
সংস্কৃতির চর্চা চলে
অর্থ-পেশীর বলে

মানের জায়গা ধনে খাইলো
সমাজপতির ঠাটে
পুথিবিদ্যার মানুষগুলো
মূর্খের পা চাটে

জ্ঞানী বিকায় অল্প টাকায়
গুণের কদর নাই
মানের বিচার অর্থের কাছে
মনের নাই যাচাই

চড়া সুদের অর্থে মরে
গরীব অসহায়
বিনা সুদে ঠক কারবারি
ধনী বনে যায়

মানবতায় মান নাই আর
ধনের হুকুমবাজি
নষ্টামিতে ভ্রষ্টাচারী
লেবাসধারী কাজী 

মানুষ মরে মানুষ মারে
খুনে খুনে ক্ষয়
চারিদিকে লাশের মিছিল
বোধের অবক্ষয় 

নেতার ভিড়ে সমাজ ঘিরে
দলকানাদের দল
পাড়ায় পাড়ায় পাতি নেতায়
হট্ট কোলাহল

কলি যুগের নষ্ট সমাজ
পথভ্রষ্ট পথিক
ভুলের মাশুল গুনতে গিয়ে
কষ্ট বাড়ে অধিক!

শামীমা আহমেদ  এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৭৮




ধারাবাহিক উপন্যাস 
শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৭৮)
শামীমা আহমেদ 

রাহাতের অনুমতি নিয়ে শায়লা শিহাবের অফিসের উদ্দেশ্যে বেরুনোর জন্য প্রস্তুতি শেষ করলো। শায়লা আজ বাসন্তী আর মেরুন রঙের একটি শাড়ি  পরলো। হাতে শিহাবের দেয়া ব্রেসলেটটি পরে নিলো। 
যদিও পার্লারের কথা বলা হয়েছে কিন্তু রুহি খালার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে শায়লা আসলে কার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।তাইতো শায়লা বেরুনোর আগে ছোট্ট করে সাবধান বাণী শায়লার কানে ঢেলে দিল।
যেখানে যাচ্ছ যাও, তবে মনে রেখো তুমি বিবাহিতা, দুইদিন পর তোমার স্বামী নোমান বাবাজি দেশে আসতেছে। তার মান সম্মানটা রেখো। 

শায়লা কথা কয়টি শুনে নীরবে বেরিয়ে গেলো। শিহাব অপেক্ষায় আছে, শায়লা দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে মেইন গেট পেরিয়ে  একটা রিকশা ডাক দিলো। সাত নম্বর সেক্টর থেকে কুশল সেন্টার খুব একটা দূরে নয়। শায়লা দশ মিনিটেই পৌঁছে গেলো। রিকশা থেকে নেমে শায়লা শিহাবকে কল দিলো।শিহাব জানালো,লিফটের আট প্রেস করে চলে আসো।আমি এখানেই আছি। 
অফিস পাড়ায় কোন মহিলার আগমনে লোকজন উৎসুক হয়ে উঠে। চারদিকে সবার নানারকম দৃষ্টি। শায়লা সবকিছু উপেক্ষা করে লিফটে উঠলো। নিজের গা বাঁচিয়ে লিফটে দাঁড়ালো। 
আটতলায় আসতেই, এক্সকিউজ মি বলে সে বেরিয়ে এলো। লিফটের বাইরে শিহাব দাঁড়িয়ে ছিল। দুজন দুজনকে দেখতে পেয়ে হাস্য বিনিময়ে কাছে গেলো। শিহাব হুট করেই শায়লার হাত ধরে ফেললো আর বললো, চলো,ঐতো আমার অফিস। শিহাবের অফিসে ঢুকতেই কবিরের সাথে শায়লার পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো,
ওর নাম কবির, আমার অফিস এসিস্ট্যান্ট। 
আর, ও শায়লা, আমার খুবই আপন একজন। একথা বলেই শিহাব কবিরকে ফাস্ট ফুড শপ থেকে দুটো কফি আনতে পাঠিয়ে দিলো। অফিস ঘরে তখন শুধু দুজনেই রইল। কিছুটা সময় দুজন দুজনের দিকে দৃষ্টিতে আটকে গেলো। হঠাৎই 
শিহাব একঝটকায় শায়লাকে তার বুকে টেনে নিলো আর শায়লাও যেন ভীত পাখির ছানার মত হয়ে শিহাবের বুকে নিজেকে গুজে দিলো। আজ সকালে রিশতিনার সাথের কথাগুলো  আর শিহাবের ব্যস্ততায় শায়লা ভীষণ ভীত হয়ে পড়েছিল। শিহাবকে হারানোর আশংকায় ভীষণ মুষড়ে পড়েছিল। সব জল্পনা কল্পনা আর উৎকন্ঠার যেন অবসান হলো।শিহাবকে হারিয়ে ফেলার নিরাপত্তাহীনতা এখন প্রাপ্তির আনন্দে ভরিয়ে দিলো। 
শিহাব শায়লাকে বললো, তোমাকে আমি সারাজীবন এভাবেই বুকের মাঝে শক্ত করে বেঁধে রাখবো, কোত্থাও যেতে দেবো না। এমন কথায় শায়লা নিজেকে আরো সমর্পিত করলো। ফিসফিস করে বললো, আমিও তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।
কবির কফি নিয়ে এলো। শায়লা শিহাবের অফিস টেবিলের সামনে, দুজনে মুখোমুখি বসলো, শিহাব বললো, দুঃখিত শায়লা, আজ তোমাকে অফিসে  ডেকে আনলাম। আজ খুবই জরুরি কিছু মেইল আসবে।তাই বেরুতে পারলাম না। তবে, ঠিকআছে, বসো, যদি কাজ শেষ করতে পারি দুজনে ঘুরতে যাবো।
শায়লা যদিও জানে কতটুকু সময়ের জন্য সে বেরিয়েছে। বাসায় দ্রুত ফিরতে হবে। তবুও শিহাবের কথায় মনের পরিবর্তন করে ফেললো। শিহাব ল্যাপটপ স্ক্রিনে চোখ রাখল আর শায়লা চোখ রাখলো শিহাবের দিকে। শায়লা মুগ্ধ হয়ে দেখছিল,কালো শার্টে শিহাবকে খুবই সুন্দর লাগছে। দুজনে কফি খেতে খেতে আলাপচারিতায় মেতে উঠলো। 
শিহাব যতটা ফুরফুরে মেজাজে আছে কিন্তু শায়লার মনের ভেতর রিশতিনাকে নিয়ে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।শায়লা  কিভাবে তা জানতে চাইবে বুঝতে পারছে না।শিহাব নিজে থেকে রিশতিনার কোন প্রসঙ্গ তুলছে না।অথচ রিশতিনা তার বাসায় অবস্থান করছে। দুজনে একই ঘরে রাত কাটাচ্ছে ? তবে কি শিহাব তার সাথে অভিনয় করছে? আজ সকালে শিহাবের মোবাইলে রিশতিনার সাথে কথা হলো।শিহাব কি  কল লিস্টে সেটাও দেখেনি ? শিহাবের প্রতি এত জিজ্ঞাস্য তবুও শায়লা তাকে এতটুকু অবিশ্বাস করছে না। কারণ শিহাব রিশতিনার ব্যাপারে সবসময়ই স্বচ্ছ থেকেছে।শায়লার যে কোন কিছু জানতে চাওয়াকে শিহাব সহজভাবেই উত্তর দিয়েছে।

বেশ কিছুক্ষন দুজনে নীরব থেকে শায়লা তার কৌতুহল মেটাতে শিহাবের কাছে জানতে চাইলো, আচ্ছা শিহাব তোমার বাসায় কি কোন অতিথি এসেছে ?
শায়লার প্রশ্নটি শুনে শিহাব ভীষণ চমকে গেলো! ল্যাপটপ স্ক্রিন থেকে মুখ ঘুরিয়ে শায়লার দিকে তাকালো, হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন ? 
না এমনিতেই, না মানে আজ সকালে আমি তোমাকে কল দিয়েছিলাম। একজন নারী কন্ঠ কলটা রিসিভ করেছিল।
শিহাব এক ঝটকায় একেবারেই তার চেয়ার ঘুরিয়ে শায়লার মুখোমুখি হয়ে বসলো। শিহাব  এখন বুঝে নিলো,কেন শায়লা  সকাল থেকে তার সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো। কেন তাকে বারংবার কল দিচ্ছিল। শিহাব শায়লাকে আশ্বস্ত করতে জানালো,
সে কথা খুলে বলার জন্যই আমি তোমাকে  ডেকেছি।ভেবেছিলাম বাইরে কোথাও খোলা 
জায়গায়  দুজনে বসে এ ব্যাপারে কথা বলবো। তা তুমি যখন জানতে চাইছো, তবে তোমায় আর দ্বিধায় না রেখে এখুনি বলছি, হ্যাঁ, গতকাল সকালে আমার অনুপস্থিতিতে 
রিশতিনা আমার ফ্ল্যাটে চলে আসে।ঘরে বুয়া কাজ করছিল, সে নক করে পরিচয়  দিয়ে ফ্ল্যাটে  ঢুকে যায়। আর আমি রাতে গাজীপুর থেকে ফিরে ভীষণভাবে অবাক হয়ে যাই। আমি অনেক ক্লান্ত ছিলাম।তোমার সাথে কথা বলার পরপরই আমি ড্রইং রুমের সোফায় ঘুমিয়ে পড়ি। শায়লা শুনছিল বটে তবে তার চোখে মুখে একটাই জিজ্ঞাসা, তবে কি তোমরা এক হতে চাইছো ? শায়লার সে প্রশ্নটা করা হয়না।
শিহাবই একের পর এক সব কিছু বলে চললো,অফিসের জন্য বেরিয়ে আসার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত। শায়লা জানে শিহাব তার থেকে কিছুই লুকাবে না, তবে সে কেন তার ফোন কলের কথা জানলো না ? 
শায়লার ফোন কলের ব্যাপারটা শিহাবের খুব অবাক লাগছে। কই,কল লগে তো শায়লার কোন সেন্ডিং কল ছিল না,তবে শায়লা কিভাবে রিশতিনার কথা জানতে পারলো। শিহাব আবার তার মোবাইল খুলে সব চেক করলো। নাহ! শায়লার কোন কল নেই। এ ব্যাপারে শিহাব শায়লার কাছে জানতে চাইল, তোমাদের দুজনের মাঝে কি কথা হয়েছে ? 
শায়লা সব কথা শিহাবকে জানালো। এবার শিহাব বুঝে নিলো, কথা বলে,রিশতিনা তা ডিলিট করেছে। তাইতো শিহাবের  তা অজানা  রয়েছে।শিহাব রিশতিনার প্রতি কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেও পরক্ষনেই সে বুঝে নিলো, তার প্রতি রিশতিনার ভালোবাসা এখনো পর্যন্ত সেই আগের মতই আছে। তাইতো বারবার সে শিহাবের দরজায় কড়া নাড়ছে। বারবার নিজ  পরিবারকে উপেক্ষা করে তার কাছে ছুটে  আসছে।কিন্তু তার এই ফেরা অনেক দেরি হয়ে গেছে।শিহাব  আর পিছনে ফিরতে চায় না। তার সামনে, বর্তমানে মুখোমুখি বসা শায়লা, শায়লাই এখন তার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। শিহাবের কাজে আর মন বসছে না। শায়লাকে অনুরোধ করলো, চলো, এ বেলাটা একটু কোথাও ঘুরে আসি।
শায়লা মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানালো। শিহাব সব কিছু ক্লোজ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।  হাতে বাইকের চাবি, সানগ্লাস নিয়ে শায়লার কাছে এসে থামলো। দু'হাতে শায়লাকে জড়িয়ে খুব কাছে টেনে নিয়ে শায়লার চুল সরিয়ে গলায় একটি গাঢ় চুম্বনে শায়লাকে নিমিষেই আবেশিত করে দিলো।

চলবে.....

Hvk

LOVE

Hgj

LOVE

Nnn

LOVE