ধারাবাহিক উপন্যাস
শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৭৮)
শামীমা আহমেদ
রাহাতের অনুমতি নিয়ে শায়লা শিহাবের অফিসের উদ্দেশ্যে বেরুনোর জন্য প্রস্তুতি শেষ করলো। শায়লা আজ বাসন্তী আর মেরুন রঙের একটি শাড়ি পরলো। হাতে শিহাবের দেয়া ব্রেসলেটটি পরে নিলো।
যদিও পার্লারের কথা বলা হয়েছে কিন্তু রুহি খালার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে শায়লা আসলে কার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।তাইতো শায়লা বেরুনোর আগে ছোট্ট করে সাবধান বাণী শায়লার কানে ঢেলে দিল।
যেখানে যাচ্ছ যাও, তবে মনে রেখো তুমি বিবাহিতা, দুইদিন পর তোমার স্বামী নোমান বাবাজি দেশে আসতেছে। তার মান সম্মানটা রেখো।
শায়লা কথা কয়টি শুনে নীরবে বেরিয়ে গেলো। শিহাব অপেক্ষায় আছে, শায়লা দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে মেইন গেট পেরিয়ে একটা রিকশা ডাক দিলো। সাত নম্বর সেক্টর থেকে কুশল সেন্টার খুব একটা দূরে নয়। শায়লা দশ মিনিটেই পৌঁছে গেলো। রিকশা থেকে নেমে শায়লা শিহাবকে কল দিলো।শিহাব জানালো,লিফটের আট প্রেস করে চলে আসো।আমি এখানেই আছি।
অফিস পাড়ায় কোন মহিলার আগমনে লোকজন উৎসুক হয়ে উঠে। চারদিকে সবার নানারকম দৃষ্টি। শায়লা সবকিছু উপেক্ষা করে লিফটে উঠলো। নিজের গা বাঁচিয়ে লিফটে দাঁড়ালো।
আটতলায় আসতেই, এক্সকিউজ মি বলে সে বেরিয়ে এলো। লিফটের বাইরে শিহাব দাঁড়িয়ে ছিল। দুজন দুজনকে দেখতে পেয়ে হাস্য বিনিময়ে কাছে গেলো। শিহাব হুট করেই শায়লার হাত ধরে ফেললো আর বললো, চলো,ঐতো আমার অফিস। শিহাবের অফিসে ঢুকতেই কবিরের সাথে শায়লার পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো,
ওর নাম কবির, আমার অফিস এসিস্ট্যান্ট।
আর, ও শায়লা, আমার খুবই আপন একজন। একথা বলেই শিহাব কবিরকে ফাস্ট ফুড শপ থেকে দুটো কফি আনতে পাঠিয়ে দিলো। অফিস ঘরে তখন শুধু দুজনেই রইল। কিছুটা সময় দুজন দুজনের দিকে দৃষ্টিতে আটকে গেলো। হঠাৎই
শিহাব একঝটকায় শায়লাকে তার বুকে টেনে নিলো আর শায়লাও যেন ভীত পাখির ছানার মত হয়ে শিহাবের বুকে নিজেকে গুজে দিলো। আজ সকালে রিশতিনার সাথের কথাগুলো আর শিহাবের ব্যস্ততায় শায়লা ভীষণ ভীত হয়ে পড়েছিল। শিহাবকে হারানোর আশংকায় ভীষণ মুষড়ে পড়েছিল। সব জল্পনা কল্পনা আর উৎকন্ঠার যেন অবসান হলো।শিহাবকে হারিয়ে ফেলার নিরাপত্তাহীনতা এখন প্রাপ্তির আনন্দে ভরিয়ে দিলো।
শিহাব শায়লাকে বললো, তোমাকে আমি সারাজীবন এভাবেই বুকের মাঝে শক্ত করে বেঁধে রাখবো, কোত্থাও যেতে দেবো না। এমন কথায় শায়লা নিজেকে আরো সমর্পিত করলো। ফিসফিস করে বললো, আমিও তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।
কবির কফি নিয়ে এলো। শায়লা শিহাবের অফিস টেবিলের সামনে, দুজনে মুখোমুখি বসলো, শিহাব বললো, দুঃখিত শায়লা, আজ তোমাকে অফিসে ডেকে আনলাম। আজ খুবই জরুরি কিছু মেইল আসবে।তাই বেরুতে পারলাম না। তবে, ঠিকআছে, বসো, যদি কাজ শেষ করতে পারি দুজনে ঘুরতে যাবো।
শায়লা যদিও জানে কতটুকু সময়ের জন্য সে বেরিয়েছে। বাসায় দ্রুত ফিরতে হবে। তবুও শিহাবের কথায় মনের পরিবর্তন করে ফেললো। শিহাব ল্যাপটপ স্ক্রিনে চোখ রাখল আর শায়লা চোখ রাখলো শিহাবের দিকে। শায়লা মুগ্ধ হয়ে দেখছিল,কালো শার্টে শিহাবকে খুবই সুন্দর লাগছে। দুজনে কফি খেতে খেতে আলাপচারিতায় মেতে উঠলো।
শিহাব যতটা ফুরফুরে মেজাজে আছে কিন্তু শায়লার মনের ভেতর রিশতিনাকে নিয়ে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।শায়লা কিভাবে তা জানতে চাইবে বুঝতে পারছে না।শিহাব নিজে থেকে রিশতিনার কোন প্রসঙ্গ তুলছে না।অথচ রিশতিনা তার বাসায় অবস্থান করছে। দুজনে একই ঘরে রাত কাটাচ্ছে ? তবে কি শিহাব তার সাথে অভিনয় করছে? আজ সকালে শিহাবের মোবাইলে রিশতিনার সাথে কথা হলো।শিহাব কি কল লিস্টে সেটাও দেখেনি ? শিহাবের প্রতি এত জিজ্ঞাস্য তবুও শায়লা তাকে এতটুকু অবিশ্বাস করছে না। কারণ শিহাব রিশতিনার ব্যাপারে সবসময়ই স্বচ্ছ থেকেছে।শায়লার যে কোন কিছু জানতে চাওয়াকে শিহাব সহজভাবেই উত্তর দিয়েছে।
বেশ কিছুক্ষন দুজনে নীরব থেকে শায়লা তার কৌতুহল মেটাতে শিহাবের কাছে জানতে চাইলো, আচ্ছা শিহাব তোমার বাসায় কি কোন অতিথি এসেছে ?
শায়লার প্রশ্নটি শুনে শিহাব ভীষণ চমকে গেলো! ল্যাপটপ স্ক্রিন থেকে মুখ ঘুরিয়ে শায়লার দিকে তাকালো, হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন ?
না এমনিতেই, না মানে আজ সকালে আমি তোমাকে কল দিয়েছিলাম। একজন নারী কন্ঠ কলটা রিসিভ করেছিল।
শিহাব এক ঝটকায় একেবারেই তার চেয়ার ঘুরিয়ে শায়লার মুখোমুখি হয়ে বসলো। শিহাব এখন বুঝে নিলো,কেন শায়লা সকাল থেকে তার সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো। কেন তাকে বারংবার কল দিচ্ছিল। শিহাব শায়লাকে আশ্বস্ত করতে জানালো,
সে কথা খুলে বলার জন্যই আমি তোমাকে ডেকেছি।ভেবেছিলাম বাইরে কোথাও খোলা
জায়গায় দুজনে বসে এ ব্যাপারে কথা বলবো। তা তুমি যখন জানতে চাইছো, তবে তোমায় আর দ্বিধায় না রেখে এখুনি বলছি, হ্যাঁ, গতকাল সকালে আমার অনুপস্থিতিতে
রিশতিনা আমার ফ্ল্যাটে চলে আসে।ঘরে বুয়া কাজ করছিল, সে নক করে পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকে যায়। আর আমি রাতে গাজীপুর থেকে ফিরে ভীষণভাবে অবাক হয়ে যাই। আমি অনেক ক্লান্ত ছিলাম।তোমার সাথে কথা বলার পরপরই আমি ড্রইং রুমের সোফায় ঘুমিয়ে পড়ি। শায়লা শুনছিল বটে তবে তার চোখে মুখে একটাই জিজ্ঞাসা, তবে কি তোমরা এক হতে চাইছো ? শায়লার সে প্রশ্নটা করা হয়না।
শিহাবই একের পর এক সব কিছু বলে চললো,অফিসের জন্য বেরিয়ে আসার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত। শায়লা জানে শিহাব তার থেকে কিছুই লুকাবে না, তবে সে কেন তার ফোন কলের কথা জানলো না ?
শায়লার ফোন কলের ব্যাপারটা শিহাবের খুব অবাক লাগছে। কই,কল লগে তো শায়লার কোন সেন্ডিং কল ছিল না,তবে শায়লা কিভাবে রিশতিনার কথা জানতে পারলো। শিহাব আবার তার মোবাইল খুলে সব চেক করলো। নাহ! শায়লার কোন কল নেই। এ ব্যাপারে শিহাব শায়লার কাছে জানতে চাইল, তোমাদের দুজনের মাঝে কি কথা হয়েছে ?
শায়লা সব কথা শিহাবকে জানালো। এবার শিহাব বুঝে নিলো, কথা বলে,রিশতিনা তা ডিলিট করেছে। তাইতো শিহাবের তা অজানা রয়েছে।শিহাব রিশতিনার প্রতি কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেও পরক্ষনেই সে বুঝে নিলো, তার প্রতি রিশতিনার ভালোবাসা এখনো পর্যন্ত সেই আগের মতই আছে। তাইতো বারবার সে শিহাবের দরজায় কড়া নাড়ছে। বারবার নিজ পরিবারকে উপেক্ষা করে তার কাছে ছুটে আসছে।কিন্তু তার এই ফেরা অনেক দেরি হয়ে গেছে।শিহাব আর পিছনে ফিরতে চায় না। তার সামনে, বর্তমানে মুখোমুখি বসা শায়লা, শায়লাই এখন তার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। শিহাবের কাজে আর মন বসছে না। শায়লাকে অনুরোধ করলো, চলো, এ বেলাটা একটু কোথাও ঘুরে আসি।
শায়লা মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানালো। শিহাব সব কিছু ক্লোজ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। হাতে বাইকের চাবি, সানগ্লাস নিয়ে শায়লার কাছে এসে থামলো। দু'হাতে শায়লাকে জড়িয়ে খুব কাছে টেনে নিয়ে শায়লার চুল সরিয়ে গলায় একটি গাঢ় চুম্বনে শায়লাকে নিমিষেই আবেশিত করে দিলো।
চলবে.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much