০৭ মার্চ ২০২১

লীনা দাস



মম তাজমহল


আমার বাঁচতে ইচ্ছা করেনা!মরে যেতে পারলে...

আমার উপর রাগ করলে?

কি করব বল! ভালবাসাটা উথলে উঠল নতুন করে।তোমার রাগ হয় জানি আমার ছেলে মানুষীতে।

তবে সবটাই আমার আন্তরিক তোমার প্রতি।

লজ্জা পাচ্ছ?নির্লজ্জতা দেখে আমার?তোমার সাথেই তো বলছি।

তোমার বুকে একটু মাথা রাখব?

যদি হ্যাঁ বল আমার মত খুশি না সুখী কেউ হবেনা।

একবার হ্যাঁ বলে দাও।

ভাবব কেউ একজন নিঃস্বার্থ ভাবে আমাকে ভালবাসে।

আমি ভরপুর হয়ে যাব।আমার ভালবাসাকে ছুঁয়ে ফেলব!

আমার ভালবাসা তোমায় ধন্যবাদ! তোমার বুকে মাথা রাখতে দেওয়ার জন্য!

আর তোমাকে দিলাম তোমার কাছে মূল্যহীন আমার অভিমানে ভরা চোখের জল!

আইরিন মনীষা




অশান্ত পৃথিবী


হিংসা হানাহানি হাহাকার

সব দেখে আমি আজ নির্বিকার 

অশান্ত অস্থির অসহায় অপরিষ্কার

এই ধরণীর ধরিত্রীর সত্যের প্রবেশিধিকার


স্বার্থের দ্বন্দে আপন আজ পর

নাঁড়ির বন্ধন কেটে গিয়ে ছেড়ে দেয় ঘর,

অবেলায় এসে ভাবি কেন এলো এতো ঝড়

তবু ও মানুষ বাঁচতে চায় ধরে নিয়ে সামান্য খড়


বুভুক্ষু মানুষের কত যে ব্যথা

সময় নেই কারো শুনে সে কথা,

বলা যদি শুরু করি হবে বড় এক লতা

এই কি তবে আজ এই পৃথিবীর নিত্য প্রথা? 


কত দিন কত রাত গেছে কেটে

সুখ দুঃখ আর হাসি কান্নার পাঠ ঘেটে,

চারিদিকে কতো লোক  লম্বা আর বেঁটে

নিত্য যুদ্ধে লিপ্ত অশান্ত পৃথিবীতে শুধু খেটে ।

মমতা রায় চৌধুরী একগুচ্ছ কবিতা-




বিশ্ব নারী দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে আমার 

নারী


আমি  নারী

যুগে যুগে হয়ে চলেছি

লাঞ্ছিত ,বঞ্চিত, অনাদৃত।

আমি সেই নারী,

 সৃষ্টি বাঁচিয়ে রাখতে

সন্তান জন্মদাত্রী।

আবার,

পুরুষশাসিত সমাজে

লালসা চরিতার্থে বারবার

শিকার হই ,আমি নারী।

আমি নারী তবু ভুলে যাই,

যন্ত্রণার কথা।

 তাই,

বারবার পুরুষেরই প্রেমে পড়ি।

আমি নারী

আমার জীবনীশক্তি এতটাই

যে বারবার বেঁচে উঠি।


(২)

আমি নারী

তাই চিৎকার করে বলতে পারি না,

আমি মায়ের নাড়ি ছেড়া ধন।

আমি নারী-

তাই,

আমার থাকতে নেই কোন

কামনা -বাসনা ,আশা-আকাঙ্ক্ষা।

আমি যে নারী-

তাই আমি বলতে পারি না,

এ পৃথিবীর রূপ রস গন্ধ

সব পুরুষের মত আমার

সমঅধিকার।

আমি বলতে পারি না

আমার জন্মদাত্রীকেও,

যৌথ পরিবারে দাদা ভাইদের মতো

 এক গ্লাস দুধ বা হরলিক্স আমারও চাই।

আমি যে নারী-

তাই পুরুষের যাতে অধিকার আছে,

আমার থাকতে নেই।

অথচ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে

সমান যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে।

প্রশ্ন করলে মা নিরুত্তর?

আসলে মায়েরাও

পুরুষ শাসিত সমাজের  শিকার।

তার প্রাপ্য অধিকার বুঝতে অপারগ।

তাই মায়ের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়-

পুরুষের যাতে অধিকার,

তোমার তাতে নেই।

শুধু নেই নেই নেই...?

অথচ আমরা নারীরা না থাকলে

এই পৃথিবীর অস্তিত্বই নেই।

মা তুমিও যে নারী

এই পৃথিবীর মূল্যবান শক্তি।


(৩)

আমি নারী

বর্ণপরিচয়ে আত্মশুদ্ধি ঘটিয়ে

আজ আমি বুঝতে শিখেছি,

যা পুরুষ পারে তা আমিও পারি।

আজ আমি সব পারি।

সন্তান জন্ম দিতে যেমন পারি।

শিক্ষিকা হয়ে মানুষ গড়তে পারি,

নার্স ডাক্তার হয়ে জীবন ও বাঁচাতে পারি।

আমি নারী , সব পারি।

আজ বিমান চালাতে পারি,

বিজ্ঞানী হয়ে নানা আবিষ্কারে

পৃথিবীকে সুসজ্জিত করতে পারি।

আমি নারী শুধু পরিবার নয়,

গোটা দেশ চালাতে পারি।

আমি আরো অনেক কিছু পারি

তাই আজ পুরুষের নেই রাজ্যের  

বাসিন্দা না হয়ে ,দেখিয়ে দিতে চাই-

আর অবহেলা নয় ,অত্যাচার নয়,

শুধুই প্রতিবাদ , আর প্রতিবাদ।

এই পৃথিবীর সবকিছুতেই

নারীর ও সমঅধিকার।

নতুন শতাব্দীতে দৃঢ়

প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে উঠুক নারী।

প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে

জেগে উঠুক, প্রতিবাদী হয়ে

 উঠুক আগামীর নারী।


(৪)

নারী তুমি সর্বজয়ী,

নারী তুমি অনন্য।

তবে তুমি কেন হও

এখনো এত হেয়?

নারী তুমি কন্যা, জায়া,

ভগিনী, সর্বংসহা মাতা,

একথা জানে সর্বজনা।

তুমিই সৃষ্টি , প্রকৃতি,

তবু কেন তোমায় নিয়ে

এত কাটাকুটি?

এতদিন তোমায় অবলা করে

রেখেছিল পুরুষতান্ত্রিক সমাজ।

এখন প্রমাণ করেছ তুমি

ঘর-বাহিরে সম পারদর্শী।

তবে কেন আর মুখ বুজে করবে

সহ্য পুরুষের চোখরাঙানি?

কেন নারী পারবে না হতে শক্তিশালী?

একবিংশ শতাব্দীতে নারীর

আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবার দিন। 

লাঞ্ছনা -গঞ্জনার অবসানে,

শিক্ষাকে হাতিয়ার করে,

নারী যোগ্য জবাব দিক।

আর সোনালী সূর্যমুখী ভোর

উঁকি দিক প্রতি ডোর।

মোঃ হাবিবুর রহমান




 জীবন-সংসার



সংসার জীব‌নের এ‌কেবা‌রেই প্রথম দি‌কে দু‌টি মন প্র‌তি‌দিনই একটু টানা‌পোড়‌নের ভিতর দিয়েই যায়। দু‌টি মানু‌ষের দু‌টি ম‌নের বোঝাপড়ায় দোদুল্যমান মান‌সিকতা একই সমত‌লে আস‌তে কিছুটা সময় লে‌গে যায়। 


যখন বুঝাপড়া, সম‌ঝোতা হ‌'য়ে যায় তখন দু‌'টি মন যেন একতার হ‌'য়ে যায়। দু‌'টি ম‌নে যেন একই কথা ব‌লে, একই চিন্তা ক‌রে। 


এটাই বু‌ঝি সংসার জীবন শুরুর প্রথম ধাপ। এরই ভিতর সন্তা‌নের বাবা-মা যখন হওয়া গে‌লো আর সন্তা‌নের মাধ্য‌মে যখন সেতুবন্ধন পোক্ত হ‌লো তখনই বু‌ঝি রা‌জ্যের কাজ আর ব্যস্ততা শুরু হ‌'য়ে গে‌লো। 


ব্যস্ততার সময়টা ‌যে এত দ্রুততার সা‌থে পার হ‌'য়ে গে‌লো সেটা ‌মো‌টেই যেন টের পাওয়া গে‌লো না। এটা অ‌নেকটা এরকম যে এর গ‌তি বু‌ঝি শ‌ব্দের চলার গ‌তির চে‌য়ে অ‌নেক গুণে বেশী। 


জীবন চলমান তাই এরই ভিত‌রে জীব‌নের শেষ ষ্টেশ‌নের আ‌গের ষ্টেশ‌নে দু্'জ‌নেই অকস্মাৎ হা‌জির। দু‌'টি মানুষ আর দু‌'টি মন যেন তখন একাকার হ‌'য়ে গে‌ছে; যেন দু'জ‌নে দুজ'নার। 


এমনই এক মুহু‌র্তে বু‌ঝি একজ‌নের সামান্যতম অনুপ‌স্থি‌তি অন্যজ‌নের জন্য অজস্র যন্ত্রণার কারণ হ‌'য়ে দাঁড়ায়। তখন প্রথম জীব‌নের প্রেম-ভালবাসা যেন নতুন ক‌'রে আবারও উৎসা‌রিত হয় ও নতুন প্রাণ সঞ্চার হয় দু‌'টি ম‌নে, দু‌'টি প্রা‌ণে। 


ই‌তোম‌ধ্যে জীব‌নের ভ্রমণ পথ তখন বু‌ঝি খুবই শে‌ষের দি‌কে চ‌'লে আ‌সে। দু'জনের দু‌'টি মনই বু‌ঝি তখন সংসার-সমু‌দ্র দিকভা‌লের পাশাপা‌শি ওপা‌রের প‌থের দি‌কে বেশী নি‌বিষ্ট হয়। দু‌'টি মানুষ তখন বু‌ঝি জীব‌নের নতুন সংজ্ঞা খুঁ‌জে ফি‌রে। 


কি পেলাম আর কি খেলাম এগু‌লো তখন যেন খুবই গৌণ বিষয় হ‌'য়ে যায়। 


দেহ না‌মের মে‌শিন‌টির দি‌কে তখন মন আর মানুষ দু‌'টির বেশী দৃ‌ষ্টি নিবদ্ধ হয়। দু‌নিয়ার অর্থ আর টাকাক‌ড়ি আ‌স্তে আ‌স্তে একসময় সবই অর্থহীন ম‌নে হ‌য়।


ধ্যান ধারণাই বু‌ঝি হ‌'য়ে যায় পর‌লৌ‌কিক জগ‌তের জন্য সওগা ক‌'রে‌ নি‌য়ে অনন্ত জীব‌নে আজীবন সু‌খে-শা‌ন্তি‌তে থাকার একমাত্র লক্ষ্যে।

অলোক দাস



  

কবিতা 


 "দর্শন " সব তারাকে চিনি নে I চিনি শুধু অরুন্ধুতি, স্বাতী বা সপ্তর্ষিমঙ্গল কে I হয়তো এরই নাম "দর্শন "I লালমাটির লোক আর আমাকে ডাকে না I তারা জোর গলায় ডাকে "কবি মশাই I"এখানে মহুযার ছাড়াছুড়ি ! চলে আসুন, কোনো অসুবিধা নেই I দিনে কতো কাঠ বেড়ালি, চড়ুই, সাদা পায়রা ওড়ে নীল আকাশের নীচে I কাঠবেড়ালি দেয় উঁকি, দেয় সেলাম বারবার I রাজনীতি বুঝিনে, কিন্তু শিয়ালের ডাক আজও শুনি I

সমিত মণ্ডল




ক্লাস নাইনের মেয়ে


বিকেলবেলা ভোকাট্ট ঘুড়ি

এক দৌড়

এক দুই তিন চার

মোহন মোড়,ব্যারাক স্কোয়ার 

কতরঙ্গ 

পিংপং টুর্নামেন্ট,ফুচকা-ঝালমুড়ি

বন্ধুরা মিলে এক্কেবারে হুড়োহুড়ি।


একটু পরেই সূর্য পাটে

ডাকছে পড়ার ঘর

বইয়ের ভেতর ময়ূরপুচ্ছ 

এই মন

পড়ার ভানে কাকে খুঁজছো?


বাবার ফিরে আসা 

মায়ের রান্নাঘর

ঠাম্মা বলে

ভালো করে পড়,ভালো করে পড়

মিলবে চাকুরে বর।


ক্লাস নাইনের মেয়ে 

স্বপ্ন দেখে

জলকে চল,জলকে চল

মনমাঝি তুই

খেয়াপারের গল্প বল

পাড়া ঘুমোলো,ঘুমোতে চল।


নীরব পড়ার ঘর

কী হবে চাকুরে বর!

হাকিকুর রহমান




কেন জানি



জ্যোৎস্না উধাও হলো,
সাথে করে নিয়ে গেলো তমসাকে-
বালি ঝুমকোটা কে জানি কানে চড়ালো,
শূন্য হাসি হেসে,
ভীরুপায়ে কে এসে দাঁড়ালো চৌকাঠের কোণে।

রূপালী চাঁদ,
সেতো চিত্রকরের ক্যানভাসেই শোভা পায়।
ন্যাড়া বেলতলায়, কিম্বা দারুচিনি বনের ধাঁরে,
কেউ কি কারো জন্যে অপেক্ষায় থাকে?
ঠুনকো যুক্তি দিয়ে,
কিসের স্মৃতিকে ধরে রাখা!

ওদিকে শানকিতে, জল ঢালা ভাতগুলো
লেজকাটা কুকুরটা লোপাট করে দিলো,
আর আমি তমসার নীচে দাঁড়িয়ে,
সেক্সপিয়ারের গীতিকাব্য আউড়িয়ে ফিরি।

তবুও কেন জানি, শুনতে পাই
উপবাসী পথশিশুটা বলেই চলেছে,
“এক মুঠো অন্ন দেবে!”
আমার কাব্য লেখা হয়নাকো আর।