২৮ জুলাই ২০২২

কবি বানীব্রত এর কবিতা "ভরা থাক স্মৃতি শুধায় "





ভরা থাক স্মৃতি শুধায় 
বানীব্রত 

সেদিন সূর্য ঢলে পড়েছিল পশ্চিমাকাশে
গোধুলির আলো পড়েছে মোহরকুঞ্জে
নিয়নের আলো জ্বলেছে নন্দন চত্বরে 
সেই আলো বিদির্ন করে তোমার আগমন। 

সামনে ঘোষকের সুরেলা কন্ঠ
সুবোধ বাবুর মঞ্চে আনাগোনা
সাহিত্যের ভাষনে হাততালির কলতান
সেল্ফির বহর চলে চার দিকে।

শুধু দৃষ্টি বিনিময় ঠোঁটের কোনে হাসি
সময় বয়ে চলে রাত গাঢ় হতে থাকে
ঘরের ফেরার পালা সবার,
তারই মাঝে বিদায়ী করমর্দন। 

এরপর কফি হাউসের নিরালা বিকেলে
কল কোলাহলের মাঝে ছুঁয়ে দেখা
কফি কাপ হাতে  ঘন্টার পর ঘন্টা
শুধু দুজনে কুজনে সুজনে। 

কোনো এক তাপিত দুপুরের হাতছানিতে
দুটি মনের আকুল আর্তি
নিরালায় কাছে পাওয়া 
সুখের চাদরে মুহূর্তে ডুবে যাওয়া।

ভালোবাসার ছোঁয়ার স্পর্শ 
ওষ্ঠের উষ্ণ অভ্যর্থনা 
কতো ভালো লাগা
নিবিড়  বাধনে বাঁধা।

তবুও হয়ে গেল ভুল
মনের দ্বিচারিতায় অনিচ্ছাকৃত
পেলে কষ্ট  ভাষা হারালো 
ভালোবাসার কাছে। 

আজও আছে মনের অতলে
কষ্টের চাদরের নিচে,
অনুতাপের অনলে 
ক্ষমা করো তারে অন্তর হতে।।।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯৯




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৯৯

বোবা কান্না

মমতা রায়চৌধুরী


রেখা তৈরি হচ্ছিল প্রোগ্রামে যাবার জন্য ভেতরে ভেতরে যে টানটান উত্তেজনা আর আনন্দের উচ্ছ্বাস বয়ে যাচ্ছিল মনের চোরাস্রোতে সেটা অনেকটাই থমকে যায় মাসির কাছে সুমিতার কথা শুনে ।তবুও রেডি হয়ে বেরুতে যাবে ঠিক তখনই তুতু দেখছে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ।আসলে রেখা যখনি কোথাও বের হয় বা পোশাক-আশাক পরতে দেখলেই তুতু বুঝতে পারে যে কোথাও বেরোচ্ছে  রেখা তুতুকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করল বলল 
"আমি তো বেরোচ্ছি এক জায়গায় ,তুমি লক্ষী সোনা হয়ে থাকবে কেমন। দুষ্টু দুষ্টু করবে না যেন।"
তারপর রেখা ঘড়ির দিকে তাকালো ঘড়িতে ঢং ঢং করে ছটা বাজলো।   মাসি অলরেডি কাজ করে চলে গেছে।
এখন ছটা বাজে সাড়ে ছয়টা থেকে প্রোগ্রাম শুরু এখনই বেরোতে হবে ।তার আগে ভাবলো একবা র পার্থকে ফোন করে ব্যাপারটা জানিয়ে রাখবে ।যদি আসতে দেরি হয় তাহলে পার্থ তো ওদের খাবারগুলো দিয়ে দিতে পারবে। সেন্টুদা
 কে তো আর রাত্রিবেলায় পাওয়া যাবে না। পার্থকে ফোন লাগাল পার্থর ফোন রিং হয়ে গেল ধরল না।"
মনোজকেই ফোনটা করলো ও ভেবেছিল মনোজ অফিসে আছে ওকে বিরক্ত করবে না কিন্তু উপায় নেই কি আশ্চর্য একবার রিং হতেই মনোজ ফোনটা তুলে বলে' হ্যালো'
রেখা বলল "তুমি কখন ফিরবে?'
"আর বোলো না আজ একটু দেরি হবে গো ,তুমি বের হচ্ছ?"
"হ্যাঁ।"
"তোমার প্রোগ্রাম শেষ হবে ক'টাতে?"
"সাড়ে নটা টা থেকে দশটা।"
"আমারও মনে হচ্ছে আজকে নটা দশটা বেজে যাবে।
যদি আমি আগে পৌঁছে যাই তাহলে তো আমি ব্যবস্থা করে দেব।"
"রাখছি সাবধানে এসো।"
রেখা ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়ে কতগুলো বিস্কিট নিয়ে  বাইরে বেরোলো "তুতু  এসো, এসো ,বাইরে এসো "।
কলাপসিবল গেট লাগাতেই পাইলট এসে দাঁড়াল রেখার কাছে ।রেখা বিস্কিট হাতে ধরে ওদের দেখাতেই পাইলট ঈগলের মত ধা করে নিয়ে চলে গেল ।
তারপর রেখা টোটো ধরে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পৌঁছালো কনফারেন্স হল টা খুঁজে বের করল ,সেখানে গিয়ে পৌঁছাতেই দেখা গেল অতিথিদের আসন আলাদা করে রাখা আছে। রেখা অতিথির আসন অলংকৃত করল ।অতিথিদের পরিচয় সঙ্গীতশিল্পীদের পরিচয় করানো হলো পরিচয় পর্ব শেষে অনুষ্ঠান শুরু হলো। প্রথমে লোকাল কিছু শিল্পীর অনুষ্ঠান দিয়ে শুভ সূচনা হলো ।তারপরেই চমক থাকলো নৃত্যমোদি দর্শকদের জন্য।
"ভারতনাট্যম" এর বিখ্যাত শিল্পীUttiya Barua এবং তার স্টুডেন্টদের শুরু হল চমকপ্রদ নৃত্য প্রদর্শনী। সরস্বতী বন্দনা শৈব বন্দনা এবং শেষে শ্রীকৃষ্ণের ছোটবেলার দুষ্টুমি চিত্র অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুললেন  তাদের অনবদ্য নৃত্যশৈলীর মধ্য দিয়ে  কি অসাধারন অভিব্যক্তি তা ভোলার নয়।
এর পরবর্তীতে ছিল" কুচিপুডি "এর বিখ্যাত নৃত্যশিল্পীBiraj Roy এবং সন্দীপ Kundu নৃত্য প্রদর্শন। এখানেও তাদের স্টুডেন্টরা ছিল যারা অনেকে কুচবিহার থেকে এসেছিল, এসেছিল ভুবনেশ্বর থেকে।
এদের নৃত্য শৈলী ও  ছিল অতুলনীয়। অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে নৃত্য প্রদর্শন চোখ জুড়িয়ে গেল।
এছাড়া ঢাকা থেকে এসেছিলেন  ওডিসি নৃত্য শিল্পী ।পরবর্তীতে শেষ লগ্নে গিয়ে তাদের নিবেদন ছিল ওডিসির বিখ্যাত নৃত্যশিল্পীReebdhita Barua অসাধারণ নৃত্যকলা  প্রদর্শন ।পৌরাণিক কাহিনী রামায়ণের উপর ভিত্তি করে তৈরি ছিল তাঁর নৃত্য প্রদর্শন ।তাতে কি ছিল না ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকেও কিভাবে ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হতে হয়েছে। একদিকে ষড়যন্ত্র ,অন্যদিকে বিশ্বাস ভালোবাসা ,ভাতৃত্ববোধ , প্রজা বাৎসল্য, বনবাস যাত্রা ইত্যাদি ইত্যাদি। সর্বোপরি একটা টান টান উত্তেজনা তাঁর নৃত্য প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছিল। কি অসাধারন অভিব্যক্তি ভুলবার নয়। রেখা আপ্লুত হয়ে গেছে।তার জীবন ধন্য।
সব শেষে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে এবং অতিথিদের ভাষণ ।রেখাকে যখন অনুষ্ঠান সম্পর্কে কিছু বলতে বলা হলো ।তখন রেখা শুধু একটা কথাই বলেছিল যে এত সুন্দর ধ্রুপদী নৃত্য শৈলী শহরের মানুষের মনটাকে নাড়া দিতে পারে নি ,তাই যদি হতো তাহলে সমস্ত কনফারেন্স হলটাই পরিপূর্ণ হয়ে যেত ।অন্যদিকে রেখা একথাও বলেছে তবে এটাই বাস্তব সবাইতো এই রস সাগরে ভেসে যেতে পারে না, হয়তো সব জায়গার অবস্থা এক ই রকম ।তবুও আশা রাখি ভবিষ্যতে এই সমস্ত ধ্রুপদী নৃত্য অনুষ্ঠান এবং শিল্পীরা তাদের সমাগমে এই শহর ধন্য হোক আগাম শুভেচ্ছা শুভকামনা জানাল আর রইল তাদের চলার পথে  সমৃদ্ধি কামনা।
সমস্ত রাস্তা টোটো তে আসার সময় রেখা বেশ উপলব্ধি করতে পারছে  রেখার হৃদয়তন্ত্রীতে বেজে চলেছে অসাধারণ নৃত্য শৈলীর সুর মূর্ছনা। রেখা বাড়ি ফিরে এসে  দেখে মনোজ তার আগেই পৌঁছে গেছে। তুতু ,মিলি ,পাইলটদের খাবার দেয়া হয়ে গেছে মনোজ ড্রইংরুমে বসিয়ে নিউজ চ্যানেল চালিয়ে নিউ শুনছে রেখা এসে দাঁড়ালে রেখার দিকে একটু তাকালো আর হাসলো ।
রেখা বললো "কখন আসলে?"
"এইতো তুমি আসার মিনিট কুড়ি আগে।"
"তোমাদের অনুষ্ঠান কেমন হলো?"
*এক অনবদ্য নৃতশৈলী অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে সত্যিই আমি ধন্য।"
"যাক তুমি তো এসব ভালোই বাসো ,তোমার মনটাও তাহলে ভাল হয়ে গেছে কি বলো?
সে আর বলতে। তবে ভেতরে ভেতরে সংগীতার জন্য চিন্তা হচ্ছিল কিন্তু মানুষকে সেটা বুঝতে দিল না।
ফ্রেশ হয়ে আসি।"
রেখা ফ্রেস হতে চলে গেল ওয়াশরুমে ।এই সময় হঠাৎই মনোজ রেখা রেখা রেখা আ. আ. আ বলে চিৎকার শুরু করল রেখা দরজাটা খুলে গলা বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো কি কারনে এত গলাবাজি করছ। আরে সুমিতাকে খবরে দেখাচ্ছে?
*"কি দেখাচ্ছে?"
"জানিনা তবে সাংঘাতিক কিছু করেছে।"
রেখা দরজাটা বন্ধ করে সাওয়ারের কল টা খুলে দিয়ে আচ্ছা করে গা ঠান্ডা করছে।
রেখা মনে মনে ভাবচ্ছে আসলে মনোজের সবকিছু অজানা   তো 
তাই অবাক হয়ে যাচ্ছে। রেখা বাথরুম থেকে বেরোনোর সময়  টাওয়ালটা জড়িয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেল সেখানে গিয়ে হাউসকোট পরে নিল।
রেখা বলল "তোমাকে খাবার দিয়ে দিই?"
"কি আছে আজকে?"
"ঐতো চিকেন রেজালা আর রুটি।"
"বেশ তাহলে দাও তাড়াতাড়ি ।"
"রেখা মনোজকে চারটে রুটি আর চিকেন রেজালা দিল।"
" নিজেও নিয়ে নিল।"
"খাওয়া-দাওয়া মিটতে মিটতেই 12:30।"
মনোজ একবার জিজ্ঞেস করল" কি হয়েছে ?কে বলেছে তোমাকে?"
"ঐতো সকালে যখন মাসি কাজে এসেছিল তখনই তো মাসির মুখেই শুনলাম।'
*তাহলে একটু বলো'",.
রেখা বলল "আজ আর নয় এমনি ক্লান্ত লাগছে শরীর।"
মনোজ বলল "ওকে।"
মনোজ উঠে চলে গেল।

রেখা যখন সব কমপ্লিট করে উঠলো তারপর নিজের রুমে গিয়ে দেখলো মনোজ ঘুমোচ্ছে নাক ডেকে।
রেখা মনে মনে ভাবল আজ বিছানায় যেতে না যেতেই ঘুমে ঢলে পড়বে।কিন্তু
একি কাণ্ড। রেখার ঘুম আসছে না বারবার শুধু এপাশ ওপাশ করছে। আসলে রেখার মনের চোরাবালিতে বারবার উঁকি দিচ্ছে সুমিতার ভবিতব্যের কথা ভেবে।
ঘুম আসছে না ভেবে রেখা জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। ঢং ঢং করে ঘড়িতে দুটো বাজলো । রেখার উপলব্ধি করলো শেষ রাতের স্তব্ধতা ।সারা শহর যেন ঘুমের দেশে চলে গেছে ।শুধু জেগে আছে যেন তার পোষ্য পালিত কন্যা ও তার ছেলে মেয়েরা। শুধু তাই নয় জানলার কাছে দাঁড়িয়ে দেখতে পেল সেই গুলুমলু কান ঝোলা কুকুরটা।শেষ রাতের ভৌতিক মুহূর্ত যেন মনে হলো এই পাথর আর কংক্রিটের তৈরি শহরটাকে দেখল। তার সঙ্গে এও দেখতে পেলো একটা কুকুর অন্ধকারে ঘাপটি মেরে বসে আছে।
রেখা ভাবতে লাগলো নিস্তরঙ্গ মহা সমুদ্রের মতো পৃথিবীটাকে যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন শান্ত হয়ে আছে। অথচ এই পৃথিবীর দিবালোকে কত কোলাহল .প্রবঞ্চনা দুঃখ-বেদনার ইতিহাস লুকিয়ে আছে
সুমিতা এখন খুনি। তার পেটের জ্বালা মনের জ্বালা, সমস্ত জ্বালার মধ্যে দিয়েই তার ভেতরে যেন একটা হিংস্র ঝড় উঠেছিল ,নইলে এরকম একটা কাজ কি কেউ করে?"
 সুমিতার ভিতর যেন একটা বোবা কান্না নিংড়ে নিংড়ে বেরোচ্ছে। অথচ ওকে সান্ত্বনা দেবার কেউ নেই।যে সুমিতা নতুন জীবন পেতে সংসার পেতে ছিল ,সেই সংসারও তার টিকলো না। উপরন্তু খুনের দায়ে তাকে জীবনের শেষ পরিনতি কাঁধে তুলে নিতে হলো।