২৫ ডিসেম্বর ২০২১

মমতা রায় চৌধুরী/৭৬




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৭৬
পেটের শত্তুর
মমতা রায় চৌধুরী



সকালবেলা মরার সময় নেই, নিঃশ্বাস না নিতে পারলে ভালো হয়, এত কাজ, এত কাজ, উফ্ আর পারছি না।
আজ থেকে সুমিতার আসার কথা ছিল, আসলো না। এবার ওকে কাছ থেকে অব্যাহতি দিতেই হবে আর পারা যাচ্ছে না। হাতের কাজগুলো করতে করতে এসব ই  ভাবছে ।হঠাৎ ফোন 'আমি কার, কে আমার , কী যে তার আমি হই...।'রেখা মনে মনে বলল'এ  সময় আমি ফোন ধরতে পারছি না। আবার ফোন  ''আমি কার,কে আমার ,কি যে তার আমি হই..।'
রেখা এক হাতে ঝাঁটা আর একহাতে ফোন ।'ফোনটা রিসিভ করে বলল 'হ্যালো'।
অন্য প্রান্ত থেকে একটা সুরেলা কণ্ঠ ভেসে আসলো বললাম আমি 12 ক্লাসের ছাত্রী রিয়া বলছি 
রেখা বলল' বলো?'
রিয়া বলল'আমি এ সপ্তাহে প্রজেক্ট দিতে পারব না ম্যাম ।প্লিজ পরের সপ্তাহে নিন।'
রেখার চরাম করে মাথাটা গরম হয়ে গেল ।মাথা ঠান্ডা রেখে বলল 'কেন দিতে পারবে না কেন?'
রিয়া বললো 'আমার দাদু মারা গেছে।'
রেখা বললো 'খুবই দুঃখের খবর কিন্তু প্রজেক্ট তো তোমাদের অনেক আগে দেয়া ছিল?''
রিয়া বলল' হ্যাঁ ম্যাম ।কিন্তু আমি তো গ্রুপে এড ছিলাম না ।আমি সব তথ্য জানতে পারি নি।'
রেখা বলল 'ঠিক আছে কিন্তু বড়দি যদি এই সপ্তাহে নম্বর চেয়ে পাঠায় ,তাহলে তো আমার অসুবিধা হবে ।তুমি খাতাটা ঠিক দেবে তো?'
রিয়া বললো' হ্যাঁ ম্যাম ।আমি দিয়ে দেবো।'
রেখা বলল 'ok
রেখা ফোনটা কেটে মনে মনে ভাবল নম্বরটা তো বসিয়ে দিতে পারবে কিন্তু যদি খাতা না দেয় তাহলে তো অসুবিধা হবে ।এই মুহুর্তে বিশ্বাস করা ছাড়াও তো কোন উপায় নেই দেখাই যাক।'
এর জোমধ্যে আবার কলিংবেলের আওয়াজ ' জয় গনেশ, ‌জয় গনেশ জয় গনেশ দেবা...।
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে রেখা দরজা খুলতে গেল
অন্য প্রান্ত থেকে গলা ভেসে এলো'বৌদি ,আমি ‌ পার্থ।
রেখা বললো "এসো ভেতরে এসো পার্থ।'
পার্থ বলল বৌদি আমি একটা দরকারে  এসেছি।'
 রেখা বলল' হ্যাঁ হ্যাঁ পার্থ বলো?'
পার্থ বলল 'বৌদি আজকে একটু আপনার সময় হবে?
রেখা বলল' কেন বলো তো ভাই?'
পার্থ বলল'আসলে আমি বাড়ী থাকবো না তো ওই জন্য একটু  মায়ের কাছে থাকা।"
রেখা বললো 'এখনো তো বুঝতে পারছি না ভাই ।স্কুল থেকে যদি বড়দি ফোন করেন তাহলে তো আমাকে স্কুলে যেতে হবে ,না হলে আমি থাকবো।
পার্থ বলল' ও তাই?'
রেখা বলল 'কেন তুমি কি খুব দূরে যাচ্ছ?'
পার্থ বলল "আমার ফিরতে  ঘন্টা দেড়েক লাগবে বৌদি।'রেখা বলল' তুমি কখন বেরোবে?'
পার্থ বলল'আমি হবিস্যিটা  করে বেরোবো ভেবেছিলাম।'
রেখা বলল 'আজকে তো তোমার লাস্ট হবিস্যি না?'
পার্থ বললো 'হ্যাঁ ,বৌদি।'
রেখা বলল'ঠিক আছে এখনো দিতে বড়দি ফোন করেন নি ।হয়তো বেরোবো না।'
পার্থ বলল 'আপনি থাকলে আমি একটু নিশ্চিন্ত থাকতে পারি। আপনি যেভাবে মাকে বোঝান, আর মা আপনার কথাটা ভাল শোনে।'
রেখা বলল 'রাখি দি আসেন নি?'
পার্থ বলল' কয়েকবার ফোন করেছিলাম কিন্তু কোন রেসপন্স নেই।'
রেখা বলল "রাখিদির এত রাগ কিসের তোমাদের প্রতি?'
পার্থ বলল' কি বলবো পরিবারের কথা বলুন বৌদি?'
রেখা বলল ' না' না ।আমার এই ধরনের প্রশ্ন করাটা ও ঠিক নয় ,কারণ এটা নিতান্তই তোমাদের একেবারে পারিবারিক বিষয়।'
পার্থ বলল 'এ মা না ।ছিঃ ছিঃ ছিঃ বৌদি, আপনি তো আমাদের  পরিবারের ই  একজন।'
রেখা বলল 'তা হলেও?'
পার্থ বলল 'না বৌদি, এমন কোনো ব্যাপার নেই।
আসলে দিদি চাইছিল সম্পত্তি আর মায়ের কিছু পারিবারিক গয়না আছে ,সে গয়নাগুলো তাকে দিতে হবে সব।'
রেখা বলল 'ও বাবা তাই নাকি?'
পার্থ বলল "হ্যাঁ বৌদি।'
রেখা বললো কিন্তু আমি তো শুনেছি তোমার দিদির অবস্থাপন্ন পরিবারে বিয়ে হয়েছে ওরাতো কলকাতার ফ্ল্যাট থেকে ভাড়াই পায় অনেক।
পার্থ বলল 'হ্যাঁ বৌদি ,একদম ঠিক। তাছাড়া জামাইবাবুর নিজস্ব বিজনেস রয়েছে।'
রেখা বললো' মাসিমার কি অভিমত?
মা শুধু বলেছে 'ঠিক আছে, দেয়া হবে। আগে তোর ভাইদের সবার বিয়ে হোক।'
রেখা বলল' তাহলেও ভাইকে একবার দেখতে আসা উচিত ছিল।'
পার্থ বলল' কি বলব, বলুন?'
রেখা বললো 'ঠিক আছে পার্থ ,তুমি বাড়ি যাও কোথাও বেরোবে বলছিলে।'
পার্থ বলল 'হ্যাঁ বৌদি কথায় কথায় দেরি হয়ে গেল। আমি আসছি।"
রেখা বলল' 'তুমি নিশ্চিন্তে যাও ।এদিকে টেনশন করতে হবে না।'
'পার্থ বলল ''হ্যাঁ, বৌদি।'তা আমি জানি।'
রেখা বলল "হ্যাঁ ,ভাই এসো ।তবে মাসিমা একটা টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়েই যাবে তোমাদের এই পারিবারিক গন্ডগোলটা নিয়ে।
সবেমাত্র দরজাটা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় আবার ফোন বেজে উঠলো"আমি কার ,কে আমার, কি যে তার আমি হই।''
রেখা ফোনটা রিসিভ করে বলল 'হ্যালো'।
অপরপ্রান্ত থেকে বললেন 'ননী ,আমি কাকিমা বলছি।'
রেখা বলল'বলো? তোমার গলাটা এমন শোনাচ্ছে কেন?'
কাকিমা বললেন'আমাদের কেউ শান্তিতে থাকতে দেবে না রে।'
রেখা বলল 'কেন কি হয়েছে?'
কাকিমা বললেন" সমু এসেছিল?'
রেখা বলল" হ্যাঁ ,তাতে কি হয়েছে?'
কাকিমা বললেন'সম্পত্তি ওকে লিখে দিতে হবে।"
রেখা বলল 'কেন এসব করছে।'
কাকিমা বললেন 'পেটের শত্তুর,শত্তুর।'
রেখা বলল 'ওকে  কে বোঝাবে বলো তো?'
কাকিমা বললেন 'ওর সাথে বাদ বিতন্ডা হলো।''
রেখা বলল"?' কাকু কি বলল?'
কাকিমা বললেন' তোর কাকু তো যাচ্ছে তাই বলল ।আর বলল বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে।'
রেখা বলল' কাকুর শরীরটা এমনি খারাপ।'
কাকিমা বললেন 'পেটের মেয়ে হয়ে বুঝলো না রে ননী ?তুই বুঝলি।'
রেখা বলল 'ও কাকিমা তোমরা মানি অর্ডার টা পেয়েছ?'
কাকিমা বললেন 'এখনো তো হাতে পা ই নি।'
রেখা বলল 'এর মধ্যেই পেয়ে যাবে দেখো।'
কাকিমা বললেন' তোকে তো আমি বারণ করেছিলাম পাঠাতে।'
রেখা বলল' এব্যাপারে একটা কথা বলবে না।'
কাকিমা বললেন 'কি বলব আর বল, যা ভালো বুঝিস কর।'
রেখা বলল 'এই তো লক্ষী মেয়ের মত কথা বলেছ।'
কাকিমা বললেন কিন্তু রোজ রোজ এই সম্পত্তি মেয়ে আর অশান্তি ভালো লাগে না মা। ভেতরে ভেতরে একটা টানাপোড়েন থেকেই যায়।
রেখা বলল ' কি আর করবে বলো?'
কাকিমা বললেন 'ঠিকই বলেছিস। পেটের শত্তূর তো
কত জ্বালা যে আছে কে জানে?'
রেখা  বলল 'ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে কাকিমা ।চিন্তা করো না।'
কাকিমা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন 'ফোন রাখছি রে  ভালো থাকিস?'
এরপর ফোন কেটে গেল রেখা ভাবতে লাগল বাপরে বাপ একের পর এক ফোন।'এরপর আবার পার্থ
দের বাড়িতে যেতে হবে।' 
তবে কাকিমার কথার মধ্যে দিয়ে আজ জীবন সম্পর্কে একটা নতুন দিক উন্মোচিত হলো। সন্তান ভবিষ্যৎ জীবনের পিতা-মাতার একমাত্র অবলম্বন সেই সন্তান যখন পিতামাতাকে কুঠারাঘাত করে তখন তাদের হৃদয হয় ক্ষতবিক্ষত। সন্তানকে ঘিরে যে সোনালী স্বপ্ন লালিত হয় পিতা-মাতার মনে ।সে স্বপ্ন ধূসরতা আর যন্ত্রণায় ভরিয়ে দেয়। রেখা তাই মনে মনে ভাবে তার সন্তান হয় নি সে এক যন্ত্রনা আবার হলেও যন্ত্রনা। তবুও পিতা মাতা আশায় বুক বাঁধে সন্তানের জন্য।

কবি ইকবাল বাহার সুহেল ( ইংল্যান্ড ) এর কবিতা




ক্লেদাক্ত হৃদয়ের বিষাদভরা চিত্র

ঝরনার সমতলে নেমে আসা পায়ের নূপুর 
হঠাৎ থমকে গিয়ে নুড়িপাথরের সঙ্গে কাদাপানি মিশে যাওয়ার দৃশ্য ! যেন কোনো চলচ্চিত্রের দৃশ্যায়ন

ওর কি প্রাণ আছিল ? বুক ধুকপুক করছিল ? চোখ ফুটছিল কি বিরতি নেওয়ার ক্ষণে 

পাপ, পাপ। কী অলঙ্ঘনীয় পাপের বোঝা পায়েলের আত্মাজুড়ে
দুই হাত ভরা রক্তের দাগ ! নিষ্পাপ নিষ্কলঙ্ক ভালোবাসার রক্ত !সে কখনো জানবে না কেন কখন হত্যা করা হয়েছে 
‘প্রেমের ক্ষত’ , স্বর্গের বারান্দায় চতুর্দিকে যখন ঘিরে ধরবে? ঘৃণা করবে? তখনও কি মনে পড়বে বলবে ওহ্​, ঈশ্বর কি আমায় ক্ষমা করবেন ? হায় ঈশ্বর।

মোঃ হা‌বিবুর রহমান/১৩তম পর্ব




ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন 
১৩তম পর্ব
মোঃ হা‌বিবুর রহমান

অতঃপর পদব্র‌জে অ‌নেকখা‌নি পথ চলার পর হয়রা‌নির এক পর্যা‌য়ে গি‌য়ে দূ‌রে এক জায়গায় একজন আ‌শি ঊর্ধ ফ‌কির জাতীয় একজন বৃদ্ধা‌কে দে‌খে আমা‌দের পা‌য়ে হাঁটা কা‌ফেলার সবাই আশায় বুক বেঁ‌ধে অ‌তি সন্দর্প‌নে তৎক্ষণাৎ তার নিকট হা‌জির হ‌'বার পর অ‌নেকটা হতাশই হ‌'য়ে‌ছিলাম। আস‌লে বৃদ্ধাটি বোধ হয় একজন জাত ফ‌কির ছি‌লেন না। শানশওকাতেই সুন্দর একটা কম্বল পে‌তে ব‌'সেছিলেন এই বটবৃক্ষসম শ্র‌দ্ধেয় বৃদ্ধা নান‌টি। 

যতদূর ম‌নে প‌ড়ে তার কম্ব‌লের উপর কিছু ডলার প‌ড়ে থাক‌তে দে‌খে অ‌তি সন্ত‌ুষ্টিচি‌ত্তে প্র‌ত্যে‌কে কম্ব‌লের উপর আমরা কা‌ফেলার প্র‌ত্যে‌কেই এক ডলার ক‌'রে নি‌ক্ষেপ ক‌'রে‌ছিলাম। যতদূর এই মূহু‌র্তে ম‌নে প‌ড়ছে, এ স‌বের মুল প‌রিকল্পনাকারী ছি‌লো আমার বন্ধু মেজর সা‌লেহ্। 

আজ অত্যন্ত ভারক্রান্ত হৃদ‌য়ে আপনা‌দের‌কে জানা‌চ্ছি যে, আমার সেই অত্যন্ত ভাল ম‌নের বন্ধুটি, মেজর সা‌লেহ্ আজ আর আমা‌দের মা‌ঝে বেঁ‌চে নেই। তি‌নি বি‌ডিআর বি‌দ্রো‌হে শহীদ হ‌'য়ে পরলোকগমন ক‌'রে‌ছেন। এ মূহু‌র্তে তার রূ‌হের মাগ‌ফেরাত কামনা ক'র‌ছি। পরম করূণাময় তাকে জান্নাতুল ফের‌দৌস দান ক'রুন।

এ‌দের খাওয়া-দাওয়া, কৃ‌ষ্টি, সভ্যতা, ব্যবসা-বা‌ণিজ্য, ধর্ম-কর্ম আচার-আচরণ ও রীতিনী‌তি সম্ব‌ন্ধে ব'ল‌তে গে‌লে তা এত স্বল্প প‌রিস‌রে বলা ‌মো‌টেই সম্ভব হ‌বে না। কোন‌দিন সু‌যোগ পে‌লে খন্ডাকা‌রে লিখ‌বো ইনশাল্লাহ্। এ‌দের শ‌পিং মলগু‌লোর বর্ণনা কিছুটা না দি‌লে আজ আমা‌দের নিজ দে‌শের অবস্হান ঠিক কোন জায়গায় তা হয়তবা বুঝা যা‌বেনা। 

আজ আমা‌দের দে‌শেও বসুন্ধরা সি‌টি, যমুনা ফিউচার পার্ক, আ‌গোরা কিংবা অন্যান্য বড় বড় শ‌পিং সেন্টারের উদ্ভব হ‌'য়ে‌ছে। কিন্তু সে‌দিন সিয়ারস্ এর মত সেই মেগা বা বড় শ‌পিং সেন্টারগুলো ‌নিজ চাক্ষুষ দর্শনের অব্যব‌হিত প‌রে যেন আমরা এ‌কেবা‌রে বড্ড তাজ্জ্ববই ব‌নে গিয়ে‌ছিলাম আর‌ কি! 

হয়তবা এই সময় গেলে তাজ্জ্বব বনার কিছুই থাক‌তো না, বরং এখন গে‌লে বলতাম, তোমরা এসো আমা‌দের বাংলা‌দে‌শে, তোমা‌দের এ‌কেবা‌রে চো‌খে আঙ্গুল দি‌য়েই দেখি‌য়ে বল‌বো "আ‌রে ভাই এখন এ জি‌নিস আমা‌দের দেশেও আ‌ছে; সুতরাং, এ নি‌য়ে তোমা‌দের মাতামা‌তির দরকার নেই, তোমরা আমা‌দের দে‌শের রাজধানীর সেই বঙ্গবাজা‌রে গে‌লেই ‌কিছু সস্তা দা‌মে বস্তা বস্তা কাপড়-‌চোপড় কেনার কিন্তু নেশায় প‌ড়ে যা‌বে"।

যা‌হোক, ‌বিড়ম্বনার বিষয়‌টি ছি‌লো খাওয়ার ব্যাপার‌টি। প‌নের‌টি দি‌নের কোন‌দিনই আমরা ভা‌তের মুখ দে‌খি‌নি। ত‌বে ক্যা‌ন্টি‌নে মা‌ঝে মা‌ঝে অর্ডার দি‌য়ে নি‌জের প্রচুর ডলার খরচা ক‌'রে ভা‌তের চেহারাটা দেখা সম্ভব হ‌'তো।

জামান আহম্মেদ রাসেল




দেখা দাও হে প্রিয়


আমি কল্পনায় তোমাকে খুজি
যদি করো তুমি প্রকাশ
তবেই তো ছুঁতে পারবো তোমার আকাশ
দেখিনি তবে-সরাসরি এ ভবে
দেখা দাও হে প্রিয় এই আমাকে 
রাখিবো তোমাকে হৃদয়ে এঁকে 
তুমি হয়ে থেকো আমার পাখি
আমি তোমায় খাঁচায় বন্দী করে রাখি
যখনই করিবে তুমি প্রকাশ
পূর্ণতা পাবে আমার আকাশ
হাহাকারের জৎগ বরই বেদনাময়
তুমি আমার শূন্য খাঁচায় বন্দী হয়ে
খাচাটাকে করে দাও পরিপূর্ণ
তোমার কল্পনায় কাটে আমার দিবানিশি বেলা
তুমি যে নারী ভালোবাসার খেলা
তোমার তরে উজার করে দিব আমার সব
তোমার উপস্থিতি আমার ভিতর মুক্তির কামিনী
যখন আমি তোমাকে নিয়ে ভাবি
আমার ভিতরে তখন অনেক কিছু আঁকি
যদি না রাখো তুমি ভিতরে শরম
আমি পরিপূর্ণ ভক্তি দিয়ে তোমাকে করিব বরণ
দুজনার দুটি মন গড়ে নিব এক 
জৎগ এর মানুষ দেখরে এবার দেখ ।

শামীমা আহমেদ /পর্ব ৩৯




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত আরোপ
পর্ব ৩৯
শামীমা আহমেদ 

এক মগ কফি হাতে  রাহাত বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। শিহাব সাহেবের সাথে কিভাবে কথা শুরু করবে সে বিষয়টি নিয়ে রাহাত গভীরভাবে ভাবছে। যেখানে শায়লা আপুর অনেকখানি আবেগ জড়িত। আপুর ভাললাগার এই অনুভব মনের ভেতর চেপে রেখে আজ তা শরীরেও বাসা বেঁধেছে। বেঁচে থাকাটাই হুমকির মুখে পড়ে গেছে।সেদিনের ঘটনাটা ভাবলে রাহাত আজও শিউরে ওঠে! কিন্তু তাই বলে, সেজন্যতো একেবারে  কাঙাল হয়ে শিহাবের দিকে হাত বাড়ানো যাবে না। রাহার ঘরে চলে এলো।রাত প্রায় এগারোটা বাজতে চলেছে। রাহাত ঘরে এসে রুমের সোফায় বসে হাতে মোবাইলটা নিলো।
কন্ট্যাক্ট লিস্টে ক্রল করে শিহাব নামে থামল।
নাম্বারে টাচ করে শিহাবকে কল দিল।

এদিকে রাত প্রায় পৌনে দশটার দিকে শিহাব গাজীপুর থেকে বাসায় ফিরলো। সারাদিন ম্যানেজার ফারুখ সাহেবের সাথে ফ্যাক্টরির যাবতীয় হিসেব নিকেশ নিয়ে বসেছিল।আগামীতে শ্রমিকদের দুইটা ঈদ বোনাস দিতে হবে। সে ব্যাপারে আলোচনা করে আর্থিক দিকটা গুছিয়ে রাখতে হলো।এই সকল ব্যাপার মালিক পক্ষের খুব শক্ত হাতেই হ্যান্ডেল করতে নয়।নয়তো শ্রমিকেরা ঈদ বোনাসের দাবীতে কাজ বন্ধ রেখে  বিক্ষোভ ভাংচুর করে, রাস্তাঘাট অবরোধ করে আন্দোলনে নেমে পড়ে। আর সাথে সাথেই তা সংবাদিকদের একটা সংবাদের ইসু হয়ে যায়। তাই আগেভাগেই সব ভেবে রাখতে হচ্ছে।দুপুরে ম্যানেজার ফারুখের বাসায় খাওয়া দাওয়া হলো।শিহাব এ ব্যাপারটিতে কোন আপত্তি করে না।এতে ফারুখ সাহেব ও তার পরিবার তৃপ্ত হয়। শিহাব এ দিকটি খুবই সম্মানের সাথে দেখে। সবকিছু গুছিয়ে বেরিয়ে আসতে রাত হয়ে গেলো। গাজীপুর থেকে রওনা দিয়ে উত্তরায় ঢোকার মুখে একটা চায়ের আড্ডায় বন্ধুদের সময় দিয়ে বাসায় পৌছুতে রাত দশটা হয়ে গেলো। ফিরে দ্রুতই ফ্রেশ হয়ে ফ্রিজ থেকে খাবার নামিয়ে আভেনে গরম করে খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে সবকিছু গুছিয়ে রেখে  একটু আয়েশী ভঙ্গিতে একটা সিগারেট ধরিয়ে যেই বিছানায় বসেছে অম্নি একটি নাম্বার থেকে ফোন কল।শিহাব তাকিয়ে দেখলো। সেই দুপুরের নম্বরটি।বুঝলো এটা শায়লার ভাই রাহাতের নাম্বার।
শিহাব কল রিসিভ করলো। দুজনায় কুশালাদি বিনিময় করে  শিহাব  খুব স্পষ্টভাবেই শায়লার কথা জানতে চাইল। রাহাত জানালো আপু এখন একটু ভালো তবে আপুর মনে আপনার জন্য  বিশাল এক আকাশ ধরে রেখেছে।পালাবদলে তা রোদ বৃষ্টি ঝড় আর এক সুগভীর মহাশূন্য ধরে আছে। আপু আনমনে, জাগরণে আপনাকেই ভেবে চলেছে।
শিহাবের এসব বুঝতে এতটুকু কষ্ট হলোনা। এই কয় মাসে শায়লাকে খুব ভালো করেই বুঝেছে সে। শায়লার ভেতরে শিহাবের জন্য জমিয়েছে এক সমুদ্র ভালবাসা। একটু উত্তাল ঢেউ  এলেই তা চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে। শিহাবকে  এক নজর দেখার জন্য যেভাবে সে আকুল হয়ে উঠে  তা  ঠিকই টের পায় শিহাব।
রাহাতকে উত্তরের অপেক্ষায় রেখে শিহাব  শায়লাকে নিয়ে ভাবনার অতলান্তে হারিয়ে গেছে।
রাহাতের সাড়ায় শিহাবের ঘোর কাটল।
আচ্ছা, আপনাকে আমি ভাইয়া বলে ডাকতে চাই,যদি অনুমতি মিলে
অফ কোর্স, নো প্রবলেমএট অল। 
আচ্ছা ভাইয়া আপনার নিজেকে নিয়ে এখন আপনার ভাবনা কী?
শিহাব বুঝতে পারলো রাহাত কী জানতে চাইছে।শিহাব এমনিতেই ভীষণ শার্প ব্রেইনের 
শুধু নিজের অজান্তেই জীবনটা এলোমেলো হয়েছে।আমার নিজেকে নিয়ে ভাবনা মানেই তো শায়লাকে নিয়ে আমার ভাবনা।আর ব্যাপারটা যখন শায়লার পরিবারে প্রকাশ পেয়েছে তো তাদের তো এই জিজ্ঞাস্য থাকতেই পারে। যদিও পরিচয়ের শুরুতে অনেক শর্ত আরোপ করে শিহাব শায়লাকে দেখা দিয়েছিল।কথা ছিল শুধু বন্ধুত্বের সম্পর্কে বাঁধা থাকবে দুজন।কিন্তু শিহাবের দীর্ঘ একার জীবনে শায়লার সাথে পরিচয় পথচলা শিহাবকে নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখিয়েছে,কল্পনায় শায়লাকে দৃষ্টি সীমায় নিয়ে কতইনা না বলা অনুভুতির ইচ্ছা ধরে রেখেছে।প্রতিনিয়ত শায়লার অমন মায়াভরা মুখচ্ছবিটা মনের পর্দায় ভেসেছে। শায়লা যেন আঁধার ঘন রাতের একাকীত্বের পর হঠাৎ ঝলকে উঠা এক গনগনে সূর্য।  শিহাব নিজের এই সত্যগুলোকে যদি অস্বীকার করে তবে তার নিজের সাথে নিজেরই প্রতারণা করা হবে।হ্যাঁ, শায়লার অমনভাবে অসুস্থ হয়ে যাওয়া শিহাবকেও আতংকিত করেছে! শায়লা তাকে এতটাই ভালবেসেছে! শিহাবকে একেবারে চমকে গিয়েছে!আসলে মেয়েদের এই বন্ধনেবাঁধার শক্তিটা ভীষণ মজবুত। শায়লা তার বিবাহিত জীবনটা নিয়ে সুখী নয়, শিহাবেরও সংসারটা শুরু হতে না হতেই তা ভেঙে গিয়েছে।আর এই অপ্রাপ্তির কারনেই  আজ একটা সত্যের কিনারায় সে এসে দাঁড়িয়েছে। যতই শায়লাকে বন্ধুত্বের সম্পর্কে রাখতে চাইছে কিন্তু
ভাললাগা ভালবাসার অপ্রতিরোধ্য স্রোত  যেন দুজনকে ভাসিয়ে নিচ্ছে দূর দূরান্তে।
রাহাত বলে উঠল, ভাইয়া কি কিছু ভাবছেন ?
শিহাব বেশ স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে জানালো হ্যাঁ শায়লা আর আমার কথা ভাবছি। রাহাত তুমি নিশ্চয়ই আমার অতীতটা জেনেছো।আর তা নিয়ে বহুদিন একটা সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। জীবনে আর কাউকে আপন করবো না ভেবেরেখেছিলাম। কিন্তু শায়লা আমায় একেবারে বদলে দিল।
রাহাত কথা প্রসঙ্গে বললো,আপুর কানাডার যাওয়ার ব্যাপারে তবে কি আমরা আর আগাবো নাকি অন্যকিছু ভাববো?
সে সিদ্ধান্ত শায়লার।
তবে আমি স্পষ্টই জানিয়ে দিচ্ছি  শায়লা আমায় আপন করলে আমার দিক থেকে সম্পূর্ণ সম্মতি থাকবে।চাইলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আমি শায়লাকে বিয়ে করতে কোন আপত্তি থাকবে না।
রাহাত এত কথার পরেও কেমন যেনো আশ্বস্ত হতে পারছে না। যদি পরে শিহাব মত পাল্টে ফেলে তবে তো আপুর দুই দিকই হারিয়ে যাবে !
নাহ,রাহাত আর কিছু ভাবতে পারছে না। যেখানে আপু একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির স্ত্রী তার কাছে থেকে ছাড়া পাওয়া কি এতই সহজ হবে ? তবুও রাহাত আপুকে সুখী দেখতে চায়। তবে কি কানাডায় নোমান সাহেবকে আপুর ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো ? কেমন করে বা কোন যুক্তিতে সে ডিভোর্স দিবে? তবুও রাহাতের এই ভেবেই ভালো লাগছে যে,শিহাব ভাইয়া কোন ভনিতা না করে স্পষ্ট করেই বলেছে,,যেখানে দুজনার মাঝে এতটাই  বোঝাপড়া সেখানে আপুর চেয়ে প্রায় পনের বছরের বড়  দুই সন্তানের পিতাকে কী গ্রহন করা যায়? একবার যে ভুল হয়েছে তা আর এগুতে দিবে না রাহাত। তাইতো সিদ্ধান্ত হলো শায়লা নোমান সাহেবকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবে। আবার পরক্ষণেই রাহাত উৎকন্ঠিত হয়ে উঠলো,, একজনের মুখের কথায় এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেয়া কী ঠিক হবে? রাহাত দ্বিধা দ্বন্দের মাঝে ফোন থেকে বিদায় চেয়ে নিলো।অপরপ্রান্তে মনের সব কথা খুলে বলতে পারাতে শিহাবের নিজেকেও বেশ হালকা লাগছে।


চলবে...

শান্তা কামালী/৪৮ তম পর্ব




বনফুল
(৪৮ তম পর্ব ) 
শান্তা কামালী

পলাশের ফোন পেয়ে বাবা-মা দুজনেই অনেকটা স্বস্তি পেলেন।  মনে মনে ওয়াজেদ সাহেবর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। ওনার সহযোগিতা না থাকলে পলাশ কখনোই বিদেশ থেকে 
এম বি এ করতে পরতো কি না সন্দেহ ছিলো? 
ওদিকে অহনা অস্থির হয়ে আছে, সৈকত ঠিক ভাবে বাড়িতে  গিয়ে পৌঁছোল কিনা। ঘড়িতে তখন  চারটা বাজে অপেক্ষা করেছিলো অহনা। ফোনটা বেজে উঠল, অহনা ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সৈকত বললো জানি তুমি চিন্তা করছো।অহনা জিজ্ঞেস করল তুমি খেয়েছে?  
সৈকত বললো বাসায় পৌঁছে শাওয়ার সেরে ডিনার  করে তবেই তোমাকে ফোন দিয়েছি। অহনা বললো তুমি চলে যাওয়ায় খুব খারাপ লাগছে.... ডিয়ার। 
সৈকত বললো তুমি এই কথা বলছো,আমি তো এক সপ্তাহ পারেই আসছি।  একবার জুঁইয়ের কথা চিন্তা করে দেখতো বেচারি জুঁইয়ের মনের কি অবস্থা......?
সাথে সাথে অহনা বললো স্যরি আমি ওভাবে চিন্তা করিনি! অহনা বললো আমি এখন রাখছি তোমার সাথে পারে কথা হবে, এখন জুঁইকে ফোন  দেব।
সৈকত বললো তাই করো। অহনা জুঁইকে ফোন দিয়ে বলছে কেমন আছিস জুঁই ?  উত্তরে জুঁই বললো সব ঠিক আছে, শরীরটা বেশ দুর্বল লাগে।
অহনা বললো লাগবেই তো তোর উপর দিয়ে কতো ঝড় বয়ে গেল। যা-ই হোক সাবধানে থাকিস, মানসিক চাপও তো একটা বিষয়, আমি সময় করে দু-এক দিনের মধ্যে তোর বাড়িতে আসব,রাখছি ভালো থাকিস।

 হঠাৎ করে অন্য দেশে গিয়ে পলাশের মনটাও খুব একটা ভালো নেই, কিছু দিন সময় লাগবে এডজাস্ট করতে...। 
জুঁইয়ের শরীর পুরোপুরি সুস্থ না। তখন জুঁইয়ের ঘড়িতে এগারোটা বেজে গেল, ডিনার শেষ করে মাত্র নিজের এসেছে, তখনই পলাশের ফোন কল এলো।রিসিভ করতে ওপাশ থেকে পলাশের কণ্ঠস্বর শুনে জুঁই অনেকটাই সতেজ হয়ে উঠলো.....  পলাশ বললো জুঁই তুমি কেমন আছো?  
তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া তোমার জুঁই কেমন থাকবে?  পলাশ বললো জুঁই সব জানি কিন্তু আমি তো তখনই বলেছিলাম দেশেই কোনো ভর্সিটি থেকে এম বি এ করে নেবো,তখন তুমিই তো জোর করলে! এখন তোমার যদি এতো মন খারাপ হয় আমি কি করে থাকব, তুমিই বলো?  জুঁই প্রসঙ্গ বদলে বলল তুমি কিছু খেয়েছো? 
পলাশ হুম খেয়েছি, জুঁই তুমি খেয়েছো এইমাত্র খেয়ে রুমে ঢুকেছি তোমার ফোন এলো। পলাশ বললো জুঁই এখন তোমার শরীর কেমন আছে? ঠিক আছে তবে একটু দুর্বল লাগে। 
লক্ষীটি এখন শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করো, আমি যখনি সময় পাবো তোমাকে ফোন করবো সুইট হার্ট।গুডনাইট বলে ফোন কেটে দিলো পলাশ।


চলবে...

সেলিম সেখ





বড়দিন




বছর শেষে আসলো রে ভাই
খুশির এই বড়দিন,
তাইতো সবাই নেচে গেয়ে
করছি তা ধিন ধিন।

রাস্তার ধারে দেখি আজ
বসেছে কত দোকান,
সারি সারি রেখেছে কেক
বাজছে খুশির গান।

আমার শহর সেজেছে আজ
বড়দিন বলে তাই,
তাই তো মোদের মন যে আজ
খুশির গীত গাই।

বড়দিনে বন্ধুরা সকলে
দিচ্ছে সুদূর পাড়ি,
নদীর ধারে করবে রান্না
নিয়েছে সঙ্গে তাই হাঁড়ি।

খুশির এই বড়দিন
কাটুক সবার ভালো,
সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে
খুশির প্রদীপ জ্বালো।