২৯ ডিসেম্বর ২০২১

রুকসানা রহমান





গেঁথেছো সকল মগ্নতা


ভেঁজা রোদের ছায়া ধরে ফিরে যাওয়া ক্লান্ত দুপুরের
রাত্তি কি জানে, মমতা স্পর্শ পাগল খেলার ছায়ার
হৃদয়ে তুমি-আমি মেপে -মেপে পথ চলার ছন্দে
চোখস্মৃতি ভালোবাসার আনাগোনা।

তবে কি আজও সময়ের হাতে হয়তো রাখা হয়নি হাত
শরীরের ভাঁজে আটকে থাকা নীল খাম
জীবন মেপে দেয় অপেক্ষা...

অন্ধকারে শুনি ওষ্ঠের নিপুণ কথার উপচে পড়া ঢেউ
স্নানের বাথটবে বিষাদ নগ্নতায় বকুল ভাসে মোহরাত  জীবনের বুকে অনুভব রাতজাগা স্বপ্নের ঘর।

এভাবেই মাখামাখি হোক হাওয়ার স্পর্শে
নির্ভুল সংলাপে সত্যি - মিথ্যের মিলনের রথে
ফসলের মাঠ ইচ্ছার ব্রতের সাঁকো পেরিয়ে
উল্লাসে মাখামাখি লাঙ্গলের ফলায়
গেঁথেছো সকল মগ্নতা...

রাবেয়া পারভীন/৩য় পর্ব




দুরের বাঁশি 
রাবেয়া পারভীন
(৩য় পর্ব)


সৌন্দর্য  এবং ব্যাক্তিত্ব এই দুয়ের সংমিশ্রণ শুভকে  ভিষন আকর্ষনীয়  করে তুলেছিল  লাবন্যর কাছে । প্রতিটিক্ষন  মনের চোখ দিয়ে খুঁটিয়ে খু্টিয়ে  দেখত  আর মুগ্ধ  হতো। শুভ কথাবার্তায় বেশ সাবলীল। যা বলে খুবি সহজ ভঙ্গিতে। তাই খুব সহজেই  সে বলল কথাটা।  
- লাবন্য  আপনাকে  মিস করছি 
একটু পরেই আবার বলল
- আচ্ছা  আমরা একে অপরকে  তুমি করে বলতে পারিনা ?  
ভেতরে ভেতরে ভিষন  চমকালো  লাবন্য । শুভ কি  তাহলে লাবন্যর  দূর্বলতাটা  টের পেয়ে গেছে ?   নাকি নিজের ভালোলাগার কথা বলছে ?
তবুও   নিজেকে সামলে নিয়ে  লাবন্য  বলে
- কেন  আপনি তে কি সমস্যা ?
- সমস্যা  আছে তো  কেমন জানি দুর দুর মনে হয়। 
এটাই চাইছিল সে  কিন্তু বলতে পারছিলনা । হেসে বলল -ঠিক আছে  তাহলে তুমি হলে   তুমি । লাবন্যর বলার ভঙ্গিতে এবার শুভও হেসে ফেলে। বলে
- একদম। এই কথাটাই বলতে চাইছিলাম ।
তারপর  দুজনেই হাসে।  হঠাৎ  কোথা থেকে যেন একটা সুখের দমকা বাতাস এসে  মাতাল করে দেয় লাবন্যকে। আপন মনে বার বার বলে  
- আমার স্বপ্নের রাজকুমার। আমি তোমাকে পেয়েছি । তোমাকে ভেবে কতরাত  নির্ঘুম কেটেছে আমার। সেই তুমি আজ এলে। লাবন্যর। একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় চেপে ধরে চুমু খায় শুভ। লাবন্যকে  বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলে
- এখন থেকে আর কোন রাত তোমাকে একা থাকতে দেবনা আমি। সারাক্ষন ছায়ার মত  তোমার পাশেই থাকবো আর তোমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেব।


চলবে...

খাদিজা





প্রেম আমার
 

মহাসাগরের গভীরতার মতো তোমার প্রেমে আমি ডুবতে থাকি-
নিজেকে হারিয়ে ফেলি, 
বসরাই গোলাপের সুগন্ধি আমায় টানে না, 
না গালিবের গজল-
আমি ডুবতে থাকি। 

তোমাকে হারাবার বেদনা যখন অসহনীয় বিষাদের গর্ত, 
যুদ্ধক্ষেত্রে কেটে যাওয়া হাতের মতো।
আকাশের নীলে আমি ভেসে যাই-
ভাসতে থাকি কোন অজানার পানে ;
পরিযায়ী পাখিদের মতো -
নিজেকে হারাই। 

উজল রবির প্রভায় আমি দগ্ধ হই না-
ফসল তোলার পরে খড়কুটো পুড়িয়ে দেবার মতো, 
হৃদয়ের গহীনে থাকা সূর্যটা আমায় পোড়ায় অনুক্ষণ-
আমি মরতে থাকি। 

অতঃপর এক মধুর লগনে তুমি আমার হলে-
সাগরের গভীর হতে তুলে নিলে,
আকাশের নিলীমা হতে খুঁজে নিলে, 
ঠাঁই দিলে প্রেমের দেউলে,
বুকে চেপে ধরে বেলোয়ারি রাগে ভাসালে, 
ওষ্ঠাধর ছুঁয়ে দিলে ভীরু কপোতীর গালে-
বাঁচালে আমায় !

শান্তা কামালী/৫২ পর্ব




বনফুল
(৫২ পর্ব ) 
শান্তা কামালী

মনিরুজ্জামান কিছু দাবিদাওয়া করেননি বলে অলিউর রহমান কিছু দিবেন না তা আবার হয় নাকি!  ওনার একমাত্র ছেলে বলে কথা.... 
অহনাদের বাসায় আসার সময় গাড়িতে আধমন মিষ্টি নিয়ে এসেছেন। অহনাদের বাসায় সামান্য চা নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে ড্রাইভারকে বললেন  নিউমার্কেটে যাওয়ার জন্য। মনিরুজ্জামান যতই বলুক কোনো দাবিদাওয়া নেই। সৈকত যে ওনার একমাত্র ছেলে....। অলিউর রহমান বেশ ক'টা দোকান ঘুরে একটা স্বর্ণের সেট পছন্দ করলেন বার বড়ি সামথিং  কার্ড দিলেন... । 
পেমেন্ট বুঝে নিয়ে স্বর্ণ প্যাকেট করে দিলেন দোকানদার। 
অলিউর রহমান সোজা বাসায় চলে আসলেন। সরাসরি স্ত্রী রাহেলা খাতুনের ঘরে ঢুকে প্যাকেট খুলে জিনিস দেখাতেই রাহেলা খাতুন স্বামীর প্রতি খুব খুশি হলেন।কিন্তু দুজনের কেউই এই বিষয় টা কাউকে বললেন না। 
 সৈকত রাতে মাকে খাবার এবং ঔষধ খাইয়ে,বাবাকে নিয়ে  বসে রাতের খাওয়া শেষ করলো।
তারপর  নিজের রুমে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো অহনা ওকে  তেরো বার ফোন করেছে। সৈকত ফোন ব্যাক করে বললো অহনা তুমি ফোন দিয়েছিলে, কিন্তু আমি..... 
অহনা বললো হুমম আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি রুমে ছিলেনা....। 
সৈকত তুমি কি জান আঙ্কেল আজ আমাদের বাসায় এসে আগামী  বৃহস্পতিবার আমাদের বিয়ে ঠিক করে গেছেন?
অহনার মুখে সব শুনে সৈকত আশ্চর্য যায়।বাবা তাকে কিচ্ছু বললেন নি!
সৈকত বললো অহনা এখন ফোন রেখে ঘুমাবো  সকালে উঠে আম্মুকে খাওয়ার আগে পরের ঔষধ গুলো দিতে হয়। তাড়াতাড়ি না ঘুমালে সকালে উঠতে পারি না....
 অহনা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে শুধু গুডনাইট বলে ফোন কেটে দিলো।



চলবে...

শামীমা আহমেদ /পর্ব৪৩




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব৪৩)
শামীমা আহমেদ 



সকালে খুব নীরবেই ভাইবোনের নাস্তা পর্ব শেষ  হলো।তবে রাহাত বেশ বুঝতে পারছে শায়লা তাকে যেন কিছু  বলতে উসখুস করছে। টেবিলে মা আছে তাই শায়লার কথাটা বলা হচ্ছে না। বুঝতে পেরে রাহাত চায়ের মগ হাতে ড্রয়িং রুমে চলে এসে বেশ লাউডে টিভি অন করলো।আর শায়লাকে মোবাইলটা টেবিল থেকে দিয়ে যেতে অনুরোধ করলো।শায়লা নিজের চায়ের মগ ও রাহাতের মোবাইল নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে এলো। সোফায় পাশাপাশি ভাইবোন বসলো।
রাহাতই নীরবতা ভাঙল।
আপু কি কিছু বলতে চাচ্ছো?বলো,কী বলতে চাও?
না মানে 
কী? শিহাব ভাইয়ার কথা কিছু বলবে?
হ্যাঁ,শিহাব বলেছে তোমার আর মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে রাখতে কিন্তু মাকে কিভাবে বলি?
কোন ব্যাপারে আপু।আমাকে আগে বলো শুনি।
না মানে, শিহাব বলছিল ও ওর পারিবারিক ব্যাপারে আমার সাথে কিছু কথা বলতে চায়, তাই আজ বিকেলে আমাকে একটু  বাইরে কোথায় বেড়াতে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।তা,আমি কি যাবো?
হ্যাঁ আপু, অবশ্যই যাবে।তোমাদের এখন বেশি বেশি কথা বলা দেখা করা উচিত।সব ব্যাপারে খোলামেলা কথা বলো।কোন কিছু আড়ালে না রেখে সামনের দিনগুলো কিভাবে সুন্দর হয় সেভাবে আলোচনা করো।
কিন্তু মাকে কিভাবে বলবো?
কোন অসুবিধা নেই আপু।আমারতো জানা থাকলো।আর তাছাড়া আজ বিকেলেতো মা থাকছে না।আমি আর মাতো নায়লার বাসায় যাচ্ছি। মা জানতে পারবে না। তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।
আপু,শোন,
কি বলবে?
আজ আমার দেয়া নতুন শাড়িটা পরে যেও।
খুবই বাধ্য মেয়েটি হয়ে শায়লা মাথা ঝুকিয়ে বললো,ঠিক আছে।
রাহাত খুব সহজেই শায়লাকে শিহাবের সাথে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলো।শায়লা অবাক হলেও রাহাত নির্বিকার রইল। রাহাত ইতিমধ্যে শিহাব সম্পর্কে  সব ধরনের খোঁজ খবর নিয়েছে।আর তা জানতে চারিদিকে লোক পাঠিয়ে ছিল।শিহাবের বর্তমানের উত্তরার বাসা,উত্তরার অফিস, গাজীপুরের ফ্যাক্টরি, 
জিগাতলার বাসা,বাসায় কে কে থাকে, শিহাব এলাকার কোন বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করেছিল, বিয়ে ও তার পরবর্তী জটিলতা,এখন কে কোথায় থাকে,শিহাবদের গ্রামের বাড়ি, শিহাবের চালচলন, বন্ধুবান্ধব কারা,কাদের সাথে চলাফেরা, যাবতীয় সবকিছুর খোঁজ রাহাত নিয়েছে। এটা বোধহয় ভাইদের বিরাট একটা দ্বায়িত্ব থাকে বোন বিয়ে দিতে গেলে।
নায়লার বাসায় নেবার সবকিছু শায়লা গুছিয়ে দিলো। মাকেও তৈরি করে দিলো। দুপুরের পরপরই রাহাত আর মা  সব প্রস্তুতি শেষ করলে রাহাত একটা উবার কল দিলো এবং খুব দ্রুতই তা চলে এলো।
মাকে নিয়ে রাহাত নায়লার বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
শায়লা শিহাবের ফোনের অপেক্ষায় রইল।মোবাইল  হাতে নিয়ে খালি বাসায় এ ঘর ওঘর পায়চারী চলছিল। দুপুর তিনটায়  শিহাবের কল এলো। তক্ষুনি শায়লার মনের ভেতর কী এক ফল্গুধারা বয়ে গেলো! এক নিবিড় অনুভবে মোবাইলটিকে আলতো করে গালে ছুঁয়ে নিলো যেন শিহাবের কন্ঠস্বরের সাথে তার স্পর্শও অনুভব করলো!
শায়লা কি করছো?
এইতো মা আর রাহাত একটু আগে নায়লার বাসায় গেলো। আমি একা। 
উহু, তুমি একা নও। এইতো আমি আছি!
---কই দেখতে পাচ্ছি নাতো!
একটু চোখ বন্ধ করে আমাকে ভেবে নাও।
শায়লা চোখ বন্ধ করতেই সেই যে দুজনে শপিংএ যাওয়ায় শিহাব কালো শার্ট পরা চোখে সানগ্লাস সাঁটা ছিল সেদিনের সেই মুখটি ভেসে উঠলো! মূহুর্তেই শায়লা  অন্য এক ভুবনে হারিয়ে গেলো!
ওপ্রান্তে শিহাব বলেই চলেছে,
জানো শায়লা, আজ নিজেকে অনেক ফ্রেশ করে নিলাম।বাইক চালাতে চালাতে বহুদিন  নিজের দিকে আর খেয়াল দেয়া হয়নি ।একটা নতুন শার্ট কিনলাম।আমার আবার কেনাকাটার বাতিক আছে, বুঝেছো।পরে আবার বিরক্ত হইয়ো না যেনো।
শায়লা হেসে ফেললো!
আজ তোমার সাথে দেখা হবে তাই নিজেকে তোমার মত করে তৈরি করে নিলাম।
---আমি কি কখনো বলেছি তুমি আমার মত হয়ে এসো, তুমিতো সবসময়ই সুন্দর, তোমার পাশেই বরং আমি বেমানান। 
এবার শিহাব বেশ রাগতঃ,কন্ঠে বলে উঠলো, আর কোনদিন এ ধরনের কথা বলবে না।শায়লা তোমার সাথে পরিচয় না হলে জীবনটা আমার আর স্বপ্ন দেখতো না।তোমার সরলতা আমাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছে।আমার অতীতের কষ্ট মুছে দিয়েছে। জীবনকে উপভোগ করার চেয়ে উপলব্ধিটাই যে বেশি আনন্দের তুমিই সেটা বুঝিয়েছো।
শায়লা নীরবতায় শিহাবকে অনুভব করছে।
শায়লা কিছু বলো!
সারাজীবন  অপ্রাপ্তির শায়লার জীবনে যে এতটা সুখ পাওনা হয়ে ছিল তা শায়লার  নিজেরও জানত না।কোন স্বপ্নের ওপার থেকে শিহাব উড়ে এসে এমন করে তার মনের খাঁচায় বন্দী হবে তা জানা ছিল না।
শায়লা শুধু বললো, শিহাব আমি হয়তো তোমাকেই এতদিন খুঁজেছি। তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম।
শিহাব ছোট্ট করে শুধু বললো,হু,আমি আছি, থাকবো তোমার হয়ে।ঠিক আছে আজ দেখা হচ্ছে।অনেক কথা হবে। তোমার আমার যত না বলা কথা আজ দুজন দুজনেরটা শুনবো।
এখন আমি শাওয়ার নিবো। সামান্য লাঞ্চ করবো। ঠিক সাড়ে চারটায় আমি উত্তরা পার্কের কাছে থাকবো।আর হ্যাঁ,আমি সেখানে পৌঁছে তোমাকে কল দিলে তুমি বাসা থেকে বেরুবে।আমি চাইনা ওখানে তুমি একা একা দাঁড়িয়ে থাকো।
শায়লা আচ্ছা বলতেই শিহাব বলে উঠলো,সবসময় তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করেছো আজ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।অপেক্ষা করার মাঝে প্রাপ্তির আনন্দটা লুকিয়ে থাকে।আমি আজ অনেকদিন পর সেই আনন্দটা পেতে চাই শায়লা।
শায়লা ওপ্রান্তে সাড়াহীন। শুধু চোখভেজা কান্নার একটা চাপা শব্দে মোবাইল যন্ত্রটি ভারী হয়ে উঠলো।


চলবে...



উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৮০

হৃদয়াকাশ

মমতা রায় চৌধুরী


রেখার চোখে শুধু জল আর জল। এ কোন নজর লাগল তার সন্তানদের প্রতি। অবজ্ঞা, অবহেলা উপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই জোটে না ওদের ।তাই রেখা ও মনোজ 'ওদেরকে একটা আলাদা জীবন দিতে তার পরিবারের সাথে লড়াই করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একটা উটকো ঝামেলা হয়ে গেল কোথা থেকে একটা কুকুর এসে  কামড়ে দিয়ে গেল।
একটু আগে মন্টু ডাক্তার এসেছিল ভ্যাকসিন দিয়ে গেলো ।তবে হ্যাঁ ডাক্তারবাবু খুব ভালো। কি জানি কেন উনি ভ্যাকসিনের কোন টাকাই নিলেন না।
মনোজ যখন বলল 'ডাক্তার বাবু আপনাকে কত দিতে হবে?'
মন্টু ডাক্তার বললেন ' কিছু না।'
মনোজ অবাক হয়ে বলল 'সে কি ডাক্তারবাবু আপনার ভিজিট , ভ্যাকসিনের দাম নেবেন না?'
ডাক্তারবাবু বললেন 'না, না ।আপনারা যে রাস্তার কুকুরগুলোকে এত ভালবাসেন ,রোজ ওদেরকে খেতে দেন ।ওরা তো অনাদরে-অবহেলায় বড় হয়। কে এত ভালবাসে বলুন তো?
মনোজ বলল'ডাক্তারবাবু এদেরকে নিয়ে রোজ আমার পরিবারের ভেতরে অশান্তি, বাইরে রাস্তায় খেতে দিলে অশান্তি ।তবুও আমার স্ত্রী কিন্তু এগুলোকে একদমই গায়ে মাখে না।'
ডাক্তারবাবু বললেন 'ওদেরকে ভালবাসুন ।ওরা আপনাদের জন্য জীবন দিয়ে দেবে। মানুষ বেইমান। এরা নয়।'
মনোজ বলল'তবে আপনি যে কাজটা করলেন ডাক্তারবাবু এটা তো আপনার মহানুভবতার প্রকাশ।'
ডাক্তারবাবু বললেন 'দেখুন ,আমাদের পেশাটাই হচ্ছে সেবার কাজ। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের কেউ মূল্য নিতে হয়। কিন্তু আপনারা আমার চোখ খুলে দিয়েছেন।'
মনোজ বলল 'কিভাবে ডাক্তার বাবু?'
ডাক্তারবাবু বললেন 'এই যে আপনারা যদি ওদের জন্য এত কিছু করতে পারেন? তাহলে আমি সামান্য একটু ওদের জন্য সেবা করতে পারি না?'
মনোজ বলল' সবাই যদি এরকম হত পৃথিবীটা কত সুন্দর হতো।'
ডাক্তারবাবু বললেন' পৃথিবীতে তো সবাই একরকম হবে না ,এরকম দু-চারজন মানুষই তো থাকবেন তাই না?'
মনোজ বলল' হ্যাঁ ,তা অবশ্য ঠিকই বলেছেন আপনি।'
ডাক্তারবাবু বললেন 'আসুন না আমরা যে কজন ই পারি আমরা ওদের জন্য কিছু করি।'
মনোজ বলল 'একদম ডাক্তারবাবু।'
রেখা অবাক হয়ে বলল' ডাক্তারবাবু এরকম বললেন।'
অথচ এই ডাক্তারবাবুর নামে কতজন কত বাজে কথা বলেছেন। ডাক্তারবাবু হচ্ছেন চামার ,চশমখোর । ছিঃ ছিঃ। ভাবতেই কেমন কষ্ট হচ্ছে।
মনোজ বলল 'মানুষকে না সবসময় বাইরে থেকে দেখে বিচার করা যায় না। দেখ না যাকে চশমখোর ,চামার ইত্যাদি বলে অভিহিত করেছেন লোকে ।আজ তার ভেতরটা দেখো  এক মহানুভবতা ।
রেখা বললো' ঠিকই বলেছ।'
মনোজ বললো 'মিলি  এখন কি করছে? ঘুমাচ্ছে?
রেখা বলল 'হ্যাঁ দেখলাম যে ঠাণ্ডায় কাঁপছে। আমি আবার কিছু ওর গায়ে চাপা দিয়ে আসলাম।'
মনোজ  বললো 'দেখো জ্বর-টর যদি আসে তাহলে ওকে আবার একটু ওষুধ খাওয়াতে হবে।'
রেখা বলল "আমাদের মিলিটা দেখো কত বোঝে আমিও ওর কাছে গিয়ে বললাম 'মা তোমার শীত করছে? চোখটা মেলে তাকালো , যেই বললাম শুয়ে পড়ো ,মাথাটা একদম কাত করে দিয়ে শুয়ে পড়ল।'
মনোজ বলল 'জানো আজকে কি কান্ড করেছে?
রেখা বললো ' কি?'
মনোজ বলল  'বাচ্চারা মিলিটাকে যেই দেখতে পেয়েছে ,ওদের তো আটকে রাখা হয়েছে। লিলিটা একবার দেখি এমন চিৎকার শুরু করলো সঙ্গে পাইলট, তুলি ,ওরাও।'
রেখা বলল' লিলি যখন চেঁচায় না, একবার দেখবে  গ্রীলটা ধরে  চিৎকার করবে আবার একবার ভেতরে গিয়ে চিৎকার করবে।'
মনোজ বলল' এবার তুমি চিন্তা মুক্ত হয়েছ রেখা?'
রেখা বলল' হ্যাঁ । ভ্যাকসিন না হলে আমি চিন্তা মুক্ত করতে পারছিলাম না। থ্যাংকস গড।'
মনোজ বলল 'এবার কি এক কাপ ব্ল্যাক কফি পাব ম্যাডাম?
রেখা হেসে বলল 'একশোবার পাবে।'
রেখা রান্নাঘরের দিকে গেল কফি বানাতে এমন সময় ফোন আসলো। রিং হল'আমি তো সুখেই আছি..।'
রেখা রান্নাঘর থেকে কফিটা কাপে ঢালতে ঢালতে বললো 'কি ব্যাপার আজকাল তুমিও রিংটোন চেঞ্জ করছো?'
মনোজ বলল 'বাহ, তুমি করতে পারো ,আমি করতে পারি না?'
রেখা বলল 'অফকোর্স পারো।'
রেখে  হাসতে হাসতে বলল' তো ফোনটা ধরো?'
এর মধ্যে ফোন কেটে গেল।
রেখা রান্নাঘর থেকে দুকাপ কফি নিয়ে এসে ডাইনিং এ টেবিলের ওপরে রাখল মনোজ পাশে সোফাতে বসেছিল। বলল 'এসো এখানে খাবে ?না তোমার কাছে গিয়ে দেবো?'
মনোজ বলল' এখানে এসো।'
রেখা বলল' ইস সসস'।
মনোজ বলল 'একি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে বন্ধু। কাছে থেকো, কাছে থেকো।'
রেখা বলল' কি ব্যাপার এত রোমান্টিক?'
সত্যিই মনোজের হৃদয়াকাশ আজ প্রেমেতে ভরপুর।
মনোজ বলল 'সেই কবে থেকে আমি হেঁটে চলেছি পৃথিবীতে। অপেক্ষায় অধীর দু'চোখ কেউ রবে এ পথে ।ভাবি নি কখনো আমি ।তুমি আমার সেই তুমি। 'তোমায় দেখে চোখের পাতায় বড় সুখে সে চোখে জল ভেসে যায়। জলে ভালোবাসি আমি তোমাকে।'
রেখা বলল' ভালো গান গাইছো?
মনোজ বলল 'কেন গানটা ভালো না?'
রেখা বলল 'অফকোর্স ভালো।'
রোমান্টিকতায় যেন রসভঙ্গ হলো।
এরমধ্যে আবার ফোন বেজে উঠলো আমি তো সুখেই আছি।'
রেখা বললে 'এবার ফোনটা ধরো।'
মনোজ ফোনটা রিসিভ করে বলল ' হ্যালো।'
কিরে কি করছিস?
মনোজ বলল 'এই তো ভাই চলে যাচ্ছে।'
সুরঞ্জন বলল ' শরীর ঠিক আছে?'
মনোজ  বলল' হ্যাঁ ,আগের থেকে অনেক বেটার।'
সুরঞ্জন বলল'হ্যাঁ রে, রেখা লিখছে তো নিয়মিত? অসাধারণ লেখে।'
মনোজ বললো' ও  যা চাপের ভেতরে আছে, কি করছে, কে জানে?'
সুরঞ্জন বলল'-শিখা তো ওর  বহুৎ বড় ফ্যান।'
মনোজ বলল' রেখাকে জানিয়ে দেবো।'
ওদিক থেকে মাধু বলল বৃষ্টিকে নিয়ে আসতে হবে ওর ছুটি হয়ে গেছে।
সুরঞ্জন মনোজ এর সাথে ফোন করে কথা বলতে বলতেই বলল হ্যাঁ এই তো যাচ্ছি। আচ্ছা, রাখি রে মনোজ। ভালো থাকিস।'
মনোজ বলল' তুইও ভালো থাকিস আর ফোন করিস মাঝে মাঝে।
 সুরঞ্জন বলল ' ঠিক আছে। তুই ও মাঝে মাঝে ফোন করিস।'
এরমধ্যে রেখার ফোন বেজে উঠলো। মনোজ নিজের ফোন কলটা কেটে ,দেখছে রেখার ফোন বেজে যাচ্ছে ।রেখা ধারেপাশে কোথাও নেই। রিংটোনে গান বাজছে
'তুমি কি এমনি করে থাকবে দূরে ,আমার এ মন মানে না..।'
মনোজ বলল' রেখা ,রেখা ,তোমার ফোন বেজে যাচ্ছে।'
রেখা ছাদের থেকে শুনতে পেয়ে বলল ফোনটা ধরো আমি কম্বলটা রোদে দিতে এসেছি ।ঘরে তো একটু ও রোদ ঢোকে না।'
মনোজ ফোনটা ধরতে গিয়ে ফোনটা কেটে গেল।
আমাদের এখান থেকে নেমে এসে বলল কে ফোন করেছিল?
মনোজ বলল' খেয়াল করি নি।'
রেখা বলল' মিস কল টা দেখো না?'
মনোজ বলল' হ্যাঁ ,দেখছি।'
রেখা বলল 'পেলে ?কে করেছে?'
মনোজ বলল' তোমার কাকিমার ফোন?'
রেখা চিন্তিত ভাবে বলল' কাকিমার?'
মনোজ বললো 'ফোনটা ধরাব?'
রেখা বলল-'হ্যাঁ, ধরাও তো?'
মনোজ নম্বরটা ডায়াল করল।'রিং হয়ে গেল ' কি দিয়ে পূজিব ভগবান তোমায়...।'
মনোজ বলল 'এই নাও ফোন ধরো, রিং হচ্ছে।'
রেখা রিসিভ করে বলল 'হ্যালো'।
কাকিমা বললেন' ভালো আছিস সবাই।'
রেখা বলল'এই আছি।'
রেখার কাকিমা বললেন'ননী, একটা খারাপ খবর আছে রে?'
রেখা বলল'কি খবর?'
কাকিমা বললেন'বিপাসার জামাইবাবু মারা গেলেন।'
রেখা অবাক হয়ে ব্যাঘ্রভাবে বলল 'কিভাবে ?কবে?'
কাকিমা বললেন ' গতকাল। স্ট্রোক।'
রেখা বললো 'কি অবস্থা ভাবো ?এদিকে বিপাশার বর জেলে আছে। ভাবা যাচ্ছে না।'
কাকিমা বললেন' সত্যিই ওদের দুই বোনের কপালটা এতটাই খারাপ যে ,কি হবে? কে জানে?'
রেখা বলল' তোমরা সবাই ভালো আছে তো?'
কাকিমা বললেন 'ওই আছি ।'
রেখা বললো'মানি অর্ডার টা পেয়েছ?'
কাকিমা বললেন 'হ্যাঁ পেয়েছি।'
রেখা বলল'কাকুর ট্রিটমেন্ট করে করাও।'
কাকিমা বললেন 'তুই আমার পেটের মেয়ে নয় তবুও যা..।'
রেখা বলল' ও, তাহলে তুমি আমাকে মেয়ে বলে ভাবো না তাই তো।
কাকিমা বললেন ' না মা এসব বলতে নেই আর ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন।'
ওদিকে মনোজ বলতে লাগলো মিলি একটু খেতে দাও।
রেখা বলল ' হ্যাঁ দিচ্ছি ।'
কাকিমা বললেন   আমি ফোনটা রাখছি পরে কথা হবে ননী। ভালো থাকিস।'
ফোনটা কাটার পর কাকিমা ভাবতে লাগলেন হৃদয়ের টান। রেখা তার নিজের মেয়ে নয় তবুও আজ তার হৃদয়ের অনেকটা জায়গা জুড়ে। তার নিজের মেয়েকে নিয়ে সবসময় টানাপোড়েন।
এদিকে রেখা ভাবতে লাগলো মিলি র যদি কিছু হয়ে যেত, তাহলে রেখার হৃদয়াকাশ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেত।