২৯ ডিসেম্বর ২০২১

শামীমা আহমেদ /পর্ব৪৩




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব৪৩)
শামীমা আহমেদ 



সকালে খুব নীরবেই ভাইবোনের নাস্তা পর্ব শেষ  হলো।তবে রাহাত বেশ বুঝতে পারছে শায়লা তাকে যেন কিছু  বলতে উসখুস করছে। টেবিলে মা আছে তাই শায়লার কথাটা বলা হচ্ছে না। বুঝতে পেরে রাহাত চায়ের মগ হাতে ড্রয়িং রুমে চলে এসে বেশ লাউডে টিভি অন করলো।আর শায়লাকে মোবাইলটা টেবিল থেকে দিয়ে যেতে অনুরোধ করলো।শায়লা নিজের চায়ের মগ ও রাহাতের মোবাইল নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে এলো। সোফায় পাশাপাশি ভাইবোন বসলো।
রাহাতই নীরবতা ভাঙল।
আপু কি কিছু বলতে চাচ্ছো?বলো,কী বলতে চাও?
না মানে 
কী? শিহাব ভাইয়ার কথা কিছু বলবে?
হ্যাঁ,শিহাব বলেছে তোমার আর মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে রাখতে কিন্তু মাকে কিভাবে বলি?
কোন ব্যাপারে আপু।আমাকে আগে বলো শুনি।
না মানে, শিহাব বলছিল ও ওর পারিবারিক ব্যাপারে আমার সাথে কিছু কথা বলতে চায়, তাই আজ বিকেলে আমাকে একটু  বাইরে কোথায় বেড়াতে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।তা,আমি কি যাবো?
হ্যাঁ আপু, অবশ্যই যাবে।তোমাদের এখন বেশি বেশি কথা বলা দেখা করা উচিত।সব ব্যাপারে খোলামেলা কথা বলো।কোন কিছু আড়ালে না রেখে সামনের দিনগুলো কিভাবে সুন্দর হয় সেভাবে আলোচনা করো।
কিন্তু মাকে কিভাবে বলবো?
কোন অসুবিধা নেই আপু।আমারতো জানা থাকলো।আর তাছাড়া আজ বিকেলেতো মা থাকছে না।আমি আর মাতো নায়লার বাসায় যাচ্ছি। মা জানতে পারবে না। তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।
আপু,শোন,
কি বলবে?
আজ আমার দেয়া নতুন শাড়িটা পরে যেও।
খুবই বাধ্য মেয়েটি হয়ে শায়লা মাথা ঝুকিয়ে বললো,ঠিক আছে।
রাহাত খুব সহজেই শায়লাকে শিহাবের সাথে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলো।শায়লা অবাক হলেও রাহাত নির্বিকার রইল। রাহাত ইতিমধ্যে শিহাব সম্পর্কে  সব ধরনের খোঁজ খবর নিয়েছে।আর তা জানতে চারিদিকে লোক পাঠিয়ে ছিল।শিহাবের বর্তমানের উত্তরার বাসা,উত্তরার অফিস, গাজীপুরের ফ্যাক্টরি, 
জিগাতলার বাসা,বাসায় কে কে থাকে, শিহাব এলাকার কোন বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করেছিল, বিয়ে ও তার পরবর্তী জটিলতা,এখন কে কোথায় থাকে,শিহাবদের গ্রামের বাড়ি, শিহাবের চালচলন, বন্ধুবান্ধব কারা,কাদের সাথে চলাফেরা, যাবতীয় সবকিছুর খোঁজ রাহাত নিয়েছে। এটা বোধহয় ভাইদের বিরাট একটা দ্বায়িত্ব থাকে বোন বিয়ে দিতে গেলে।
নায়লার বাসায় নেবার সবকিছু শায়লা গুছিয়ে দিলো। মাকেও তৈরি করে দিলো। দুপুরের পরপরই রাহাত আর মা  সব প্রস্তুতি শেষ করলে রাহাত একটা উবার কল দিলো এবং খুব দ্রুতই তা চলে এলো।
মাকে নিয়ে রাহাত নায়লার বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
শায়লা শিহাবের ফোনের অপেক্ষায় রইল।মোবাইল  হাতে নিয়ে খালি বাসায় এ ঘর ওঘর পায়চারী চলছিল। দুপুর তিনটায়  শিহাবের কল এলো। তক্ষুনি শায়লার মনের ভেতর কী এক ফল্গুধারা বয়ে গেলো! এক নিবিড় অনুভবে মোবাইলটিকে আলতো করে গালে ছুঁয়ে নিলো যেন শিহাবের কন্ঠস্বরের সাথে তার স্পর্শও অনুভব করলো!
শায়লা কি করছো?
এইতো মা আর রাহাত একটু আগে নায়লার বাসায় গেলো। আমি একা। 
উহু, তুমি একা নও। এইতো আমি আছি!
---কই দেখতে পাচ্ছি নাতো!
একটু চোখ বন্ধ করে আমাকে ভেবে নাও।
শায়লা চোখ বন্ধ করতেই সেই যে দুজনে শপিংএ যাওয়ায় শিহাব কালো শার্ট পরা চোখে সানগ্লাস সাঁটা ছিল সেদিনের সেই মুখটি ভেসে উঠলো! মূহুর্তেই শায়লা  অন্য এক ভুবনে হারিয়ে গেলো!
ওপ্রান্তে শিহাব বলেই চলেছে,
জানো শায়লা, আজ নিজেকে অনেক ফ্রেশ করে নিলাম।বাইক চালাতে চালাতে বহুদিন  নিজের দিকে আর খেয়াল দেয়া হয়নি ।একটা নতুন শার্ট কিনলাম।আমার আবার কেনাকাটার বাতিক আছে, বুঝেছো।পরে আবার বিরক্ত হইয়ো না যেনো।
শায়লা হেসে ফেললো!
আজ তোমার সাথে দেখা হবে তাই নিজেকে তোমার মত করে তৈরি করে নিলাম।
---আমি কি কখনো বলেছি তুমি আমার মত হয়ে এসো, তুমিতো সবসময়ই সুন্দর, তোমার পাশেই বরং আমি বেমানান। 
এবার শিহাব বেশ রাগতঃ,কন্ঠে বলে উঠলো, আর কোনদিন এ ধরনের কথা বলবে না।শায়লা তোমার সাথে পরিচয় না হলে জীবনটা আমার আর স্বপ্ন দেখতো না।তোমার সরলতা আমাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছে।আমার অতীতের কষ্ট মুছে দিয়েছে। জীবনকে উপভোগ করার চেয়ে উপলব্ধিটাই যে বেশি আনন্দের তুমিই সেটা বুঝিয়েছো।
শায়লা নীরবতায় শিহাবকে অনুভব করছে।
শায়লা কিছু বলো!
সারাজীবন  অপ্রাপ্তির শায়লার জীবনে যে এতটা সুখ পাওনা হয়ে ছিল তা শায়লার  নিজেরও জানত না।কোন স্বপ্নের ওপার থেকে শিহাব উড়ে এসে এমন করে তার মনের খাঁচায় বন্দী হবে তা জানা ছিল না।
শায়লা শুধু বললো, শিহাব আমি হয়তো তোমাকেই এতদিন খুঁজেছি। তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম।
শিহাব ছোট্ট করে শুধু বললো,হু,আমি আছি, থাকবো তোমার হয়ে।ঠিক আছে আজ দেখা হচ্ছে।অনেক কথা হবে। তোমার আমার যত না বলা কথা আজ দুজন দুজনেরটা শুনবো।
এখন আমি শাওয়ার নিবো। সামান্য লাঞ্চ করবো। ঠিক সাড়ে চারটায় আমি উত্তরা পার্কের কাছে থাকবো।আর হ্যাঁ,আমি সেখানে পৌঁছে তোমাকে কল দিলে তুমি বাসা থেকে বেরুবে।আমি চাইনা ওখানে তুমি একা একা দাঁড়িয়ে থাকো।
শায়লা আচ্ছা বলতেই শিহাব বলে উঠলো,সবসময় তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করেছো আজ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।অপেক্ষা করার মাঝে প্রাপ্তির আনন্দটা লুকিয়ে থাকে।আমি আজ অনেকদিন পর সেই আনন্দটা পেতে চাই শায়লা।
শায়লা ওপ্রান্তে সাড়াহীন। শুধু চোখভেজা কান্নার একটা চাপা শব্দে মোবাইল যন্ত্রটি ভারী হয়ে উঠলো।


চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much