২৭ ডিসেম্বর ২০২০

বিকাশ সরকার



খাদ্যশস্যের লোকগান


কুয়াশা সরিয়ে দেখা গেল মুখখানি

চাকু নিয়ে কবে থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছি বোকা বোকা

অবশেষে নরম রুটির টুকরো কাছে এলো আজ

বাইরে দুপুর, নানকিং রেস্তোরাঁর গোর্খা বয়

বিয়ারের বোতল খুলে যেন সূর্যাস্ত ঢেলে দিয়ে গেল

ওই যে রজনীগন্ধাগুচ্ছ, তারাও তো ফেনা ও লজ্জায় মাখামাখি হলো


অপরিমিত রোমান্টিকতা হলো, এবার

এসো খাদ্যশস্যের লোকগানে আগামী জীবন কাটিয়ে দেওয়া যাক

কবি মিশ্র



দোসর


আমরা ছিলাম অতি কাছাকাছি-পাশাপাশি

কেউ কারো খোঁজ রাখি না...

এক ওড়া পতঙ্গ খবর দিলো এপাড়ায়...

কিছু আগন্তুক এসেছে ,করছে আলোচনা..


দেখাটাই সব হোলো, অন্তর ফাঁকা

থামো থামো কেন করো , ধ্বংসের গান...

অসহ্য কুঠারাঘাতে শেষ হল আরো কিছু প্রান...

হা হা কারে ভরে গেল প্রকৃতির কান...


প্রানপনে চিৎকারি, ফিরে আয় ওপাড়ার তুই...

সুখে দুখে মোরা ছিনু ভাই ভাই...

দিন যায়, রাত যায়, বছরের শেষে

সব ঋতু বুঝি বরণ করল এসে...

ছুটে এল ওপাড়ার নীড় ভাঙা পাখি...

আবার এসেছে ফিরে , কলতানে ভরে উঠে আঁখি...


নতুন পাতা , ফুলে,  ফলে উঠল ভরে ও পাড়ার ঘর...

সুখে দুঃখে দুজনেই ..আমরা দোসর...

কাকলী দাস ঘোষ




সাদা ফুল 


তীরভূমি ছুঁয়ে যাওয়া ভেলায় তোমাকে দেখেছি 

জলের আশ্রয়ে ভেসে ওঠা সাদা ফুল আমি 

খানিক জীবন্ত।  

দুরূহ পাঁচিল ভেঙে বারবার ভেসে উঠেছি 

তোমাকে দেখেছি। 

আশার ব্যাপারী আমি 

সাদা পায়রার মত উড়ে যেতে চেয়েছি কোটি কোটিবার 

ভেলা ভেলা ছুঁব ভেলা ছুঁব


সাদা ফুল -সাদা ফুল ছোঁয়াছুঁয়ি  খেলা-খেলা-খেলা চায় 


ভেলা তীর ছুঁই ছুঁই 


জল ভাঙা সাদা ফুল মৃত জলেই॥ 


জারা সোমা




ক্ষত


কিছু সন্ধ্যা ভেসে যায় সুরে সুরে

তানপুরার ধুন নিয়ে যায় সুরালোকে

সেদিনের বাধা তারে ফোটে বোল 

স্বর মেলায় প্রথম  প্রেম- প্রতিশ্রুতি 


 যে মেয়ে গাঢ় কাজল আঁকে চোখে

গভীর মোহ ও লিপ্সায় ঢেকে রাখে বুক

সেও জানে শ্রম ও শ্রমণের মাঝের ফাঁক


রঙ্গনফুলে সাজানো খোঁপা রঙ্গ করে 

পেটের খাঁজ উন্মত্ত স্তনের অহংকার দেখে

আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের স্তুতি করে

সন্ধ্যা গড়িয়ে  রাত নামতেই


মেয়েটা মেহগনি তাক থেকে ধুলো ঝেড়ে 

নামিয়ে আনে অতীত, তখনই 

নলেনগুড়ের পায়েসের গন্ধ ভাসে বাতাসে

টুকরো স্মৃতি, টুকরো সংলাপ 

হঠাৎ করেই নিভে যায় বাতি


মেয়েটি এক লহমায় খসিয়ে  ফেলে বুকের  আঁচল

যেখানে মায়ের প্রেমিক ছেড়ে গেছে

আজীবনের দংশন-ছাপের ক্ষত।

তাহমিনা সিদ্দিকা


বল সাধু তারে


যে তোরে বেশ্যা বলে তারে তুই বল সাধু,

আমি এক পাগলা কানাই পাগল বেশে সত্য জানাই।

তোর রূপ নয়নে দেখরে শয়নে খেলছে কেরে নিয়ে যাদু,ও তোর ত্রিবেনী তিন দরজায় কালো মেঘে বিদ্যুৎ গর্জায়।

কৃষ্ণ বলে বিষ্ণুলোকে চেয়ে দেখ ঐ যাচ্ছে রাধে,যে তোরে বেশ্যা বলে তারে তুই বলরে সাধু!

অর্কদীপ সরকার



আদর  


শীতের আদর, গরম চাদর 

কাঁচা ঘুম, ভাঙা চোখ । 

বুক ছোঁয়ানো, নরম ঠোঁটে 

আদরের জয় হোক ।।


বোতাম ভাঙা, সাদা জামা 

লিপস্টিকে হল লাল । 

ব্যস্ত অফিস, গরম টিফিনে 

আদুরে  সাতসকাল ।।


রোদে পিঠ পাতা, ছুটির দিন 

অগোছালো শাড়ী, সেফটিপিন। 

ঘুরতে যাওয়া, কফির ভাঁড়

আদুরে হাঁটা, রাস্তা পার ।।


মাথায় বালিশ, হাজার নালিশ 

খুনসুটি মাখা, কান ফিসফিস । 

কপালে চুমু, ঘুমে মাখা চোখ 

 আদরের জয় হোক।।

স‌ু‌মি সৈয়দা



ভা‌বের মন্থন


গোটা বি‌কে‌লের সাদা‌টে বাদামী আকাশটা‌কে ব‌সি‌য়ে দিলাম

বিছানার মাথার কাছ‌টি‌তে।

ধানরঙা গা‌লে আমি এঁকে দি‌তে চাইলাম

গঙ্গা ফ‌ড়িঙ‌য়ের টানটান উন্মাদনা।

জীব‌নের কোনায় কোনায় বিছা‌নো যায় 

সর ওঠা দু‌ধের বলকা‌নি আমেজ।

শ্যাওলা দুপু‌রের ঘাট‌টি আমায় নিঃসঙ্গতায় ডুবি‌য়ে ফেল‌লে

পুকু‌রের ছায়া মা‌খি কোন এক আষাঢ়ী বাতা‌সে।

ময়লা পড়া চাঁদের আলোয় হৃদয় খু‌লে গে‌লেই

পাহাড়ী ঝর্ণার কুলকুল হা‌সি বা‌ড়ি খে‌তে খে‌তে পাহা‌ড়ের সবুজ ঘুমটা‌কে চো‌খের কো‌লে এনে

পু‌রো রাত ডু‌বে থা‌কে আধা‌রের ‌প্রে‌মে।

নুরুল হাসান



নতুন পোশাক


নতুন পোশাকে সেজেছ তুমি,

ফেলে আসা পুরানো ছিন্ন পোশাকের

ভেতরের মানুষটা এখনও ধরা পড়ে

যতই লুকানোর চেষ্টা কর তর্জনে গর্জনে;

পুরানো রক্তের দাগ এখনও

          তোমার হাতে খেলা করে।


পুড়ে যাওয়া নগরের ছাই

এখনও উড়ে বেড়ায় তোমার নিঃশ্বাসে;

নতুন পোশাকের ভেতরের মানুষটা

ছটফট করে। ছেদক দাঁত সুড়সুড়ি পায়

রক্তের স্বাদ সে বড় অদ্ভুত!

        ঢাকতে পারে না নবসাজে।


শুকানো কান্নার দাগ এখনও

লেগে আছে তোমার পদতলে

ঘৃণার বিষবাষ্প আবৃত আছে

নতুন পোশাকে, সুযোগের অপেক্ষায়

প্রহর গুনছে উপযুক্ত আলো বায়ু জলে

        বাড়ছে আগাছার বিষবৃক্ষ।


লুটপাট হয়ে গেছে ফুলের সৌন্দর্য

তোমার আঙুলে, শিশ্নে তার সুগন্ধ

এখনও ভাসে, নতুন পোশাক

আটকাতে পারেনি অবাধ্য বাতাস

মুষলধার বৃষ্টিতে আর্দ্র সজ্জায়

       আবরণ হবেই উন্মোচিত।

শান্তা কামালী




একজন স্বাধীনতাকামী বীরের বিপ্লবী গল্প 


স্বাধীনতা, স্বাধীনতা,স্বাধী নতা?

তোমরা কি জানো স্বাধীনতা কাকে বলে?

আমি জানি....

আমি জানি স্বাধীনতার মর্মবেদনা। 


বর্বর পাকিস্তানী সৈন্যরা  যখন ছিনিয়ে নিয়েছিল

আমার প্রাণ প্রিয় প্রেয়সীকে, 

কেড়ে নিয়েছিল আমার কলিজার টুকরো  সন্তান কে,

রেহাই পায় নি আমার বৃদ্ধ পিতামাতা....


তখন এই মাটি ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এই বাংলাকে,

এই বাংলা মা কে স্বাধীন করে তবেই  ঘরে ফিরব।

তারপর কত রাত কত দিন

নরপিশাচদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যুদ্ধ আর যুদ্ধ করেছি....

সে যেন আরেক কারবালা প্রান্তর,

হারিয়েছি বাংলার কত দামাল ছেলেদের! 


এক সাগর রক্তের বিনিময়ে...

৩০ লক্ষ  বীরের আত্নার আত্নত্যাগে...

কত মায়ের সম্ভ্রমের বিনিময়ে... 

বিধবা বালিকা বধুর অশ্রু ধুয়ে ...


আমরা এনেছিলাম স্বাধীনতার এই লাল টুকটুকে সূর্যটাকে,


তোমরা কি পারবে  স্বাধীনতার এই লাল সূর্যটাকে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ধরে রাখতে?


যদি পারো, যদি পারো.... 

তাহলেই বুঝব তোমরা স্বাধীনতা কি বুঝতে পেরেছ।


সেদিন স্বাধীনতা ধরা দেবে তোমাদের।

প্রেমাংশু শ্রাবণ কবির



প্রিয়ন্তী


প্রিয়ন্তী,

তোমাকে দেখার পর মনে হলো

আমি এতো সবুজ ভালোবাসি কেনো---

---কেনো--এরোপ্লেনের চেয়ে ঘাসফড়িং  এতো বেশি প্রিয়।


কতো কিছুই মনে হলো....

অগোছালো এ জীবন কতোটা বেমানান,

মনে হলো গায়ের জামাটা কতো পুরনো,

পায়ের স্যান্ডেলটা রঙ চোটে গেছে....


তোমাকে দেখার পর মনে হলো

ঈশ্বর খুব সুন্দর চোখ বানাতে পারেন

গভীরতা  দিতে পারেন--

ঘুম মেখেও দিতে পারেন।


মানুষের মুখে এঁকে দিতে পারেন দেবীর ছবি

ঈশ্বর খুব সুন্দর মানুষ বানাতে পারেন

মানুষের চোখে এটে দিতে পারেন

হরিণের চোখ।


তোমাকে দেখার পর খুব বেশি.... মনে হলো

কিছুটা মানুষ হওয়া ভালো

ভালো শিল্পের চেয়ে

প্রেমের জীবন।