১২ জুলাই ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন 183





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৮৩
শরীর নিয়ে টানাপোড়েন
মমতা রায় চৌধুরী


আজকাল ভীষণ ক্লান্তি লাগে সারাক্ষণ মনে হয় শুয়ে থাকতে পারলে খুব ভালো হয় কিন্তু কাজের জন্য নিজের দিকে তাকানোর অবকাশ কোথায়। রেখা যখন একটু নিজেকে নিয়ে ভাবতে যায় ঠিক তখনই দুচোখ জুড়ে ঘুম যেন আলিঙ্গন করতে থাকে। এমন পরম স্নেহে, ভালোবাসায় আঁকড়ে ধরে ঘুম ,রেখা তার হাত থেকে রেহাই পায় না। আর পাবি বা কেন এত ভালোবাসা জড়ানো হাত তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে সাড়া না দিয়ে কি করা যায়? কিন্তু ঘুমের ভেতরে রয়েছে হাজারো ভাবনা চিন্তা সেগুলোই স্বপ্নে তাড়া করে বেড়ায়।ইদানিং খাতার চাপে ঘুমের ঘাটতি হয়েছে। তারপর পাশাপাশি চলেছে লেখালিখি ,বাচ্চাদের খাবার দেয়া, স্কুল এর মাঝে একদিন রিম্পাদি ফোন করে বলল "হ্যাঁ রে রেখা তোর শরীরটা যে খারাপ যাচ্ছে বেশ কিছুদিন থেকেই বলছিলি ,ক্লান্তি তোর সারা শরীরে ।আবার তোর তলপেটে মাঝে মাঝে ব্যথা হচ্ছে ডাক্তার দেখিয়েছি স?"
রেখা বলেছিল" ও ঠিক সেরে যাবে কাজের চাপটা বেড়েছে, জল ঠিক করে খাওয়া হচ্ছে না নিজের দোষেই, সেই জন্য বোধহয়।"
সেদিন রাত্রে বেশ খানিকটা বাড়াবাড়ি হয়েছিল। তাই মনোজ  রেখাকেn ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিল।
ডাক্তার কয়েকটি পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন।
বলেছিলেন 'সার্কেল শুরু হলে তার দুই থেকে চার দিনের মধ্যে ফোন হোল এবডোমেন ইউএসজি করতে হবে।'
আরো জিজ্ঞেস করেছিলেন' আপনার ওই সময় গুলোতে ব্লিডিং কেমন হয়?'
রেখা বলেছিল"দুই থেকে তিন দিন হেভি  পরিমাণ হয় ব্লিডিং ।'
"সেই সময়গুলোতে কেমন অনুভব করেন?"
রেখা বলেছিল' প্রচন্ড ক্লান্তি মনে হয় সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকি আর যন্ত্রণা।"
ডাক্তারবাবু বলেছিলেন "ঠিক আছে আগে রিপোর্টগুলো করিয়ে নিন ,তারপরে কথা হবে।
গতকাল খাতা জমা দিয়ে আসার পর থেকেই ব্লিডিং শুরু হয়েছে।'
এতটা ক্লান্তি সারা শরীর বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না ।শুধুমাত্র রেখা কাজগুলো করে মনের জোরে ।সে বুঝতে পারছে ভিতরে ভিতরে তার শরীরে দ্রুত ক্ষয় শুরু হয়েছে।
মনোজ এসে রেখাকে শুয়ে থাকতে দেখে বলল "শরীর খারাপ?
তুতুরা খেতে চাইছে? আমি দিয়ে দেবো?"
"না চলো আমি দিয়ে দিচ্ছি। তাছাড়া তুমিও তো খাবে,?"
রেখা উঠে দরজার দিকে এগুতেই মনোজ বলল "তোমার হাউসকোটের  পুরো পেছনটায় ব্লাড লেগে গেছে।"
রেখা বলল," এ বাবা একটু ওয়েট করো
ওয়াশরুম থেকে আসছি।"
রেখা পুরো চেঞ্জ করে আসলো।
মনোজ বলল" কালকে তোমাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।"
রেখা বললো" এখন ডাক্তারের কাছে গিয়ে কি করবো?'গেলেই তো এক্সাম রিপোর্ট চাইবে?
"ও হ্যাঁ ঠিকই তো।"
মনোজ বলল "ঠিক আছে । নো প্রবলেম আমি
লাইফ কেয়ারে ফোন করে দিচ্ছি ঘোষদাকে।"
সঙ্গে সঙ্গে মনোজ নম্বর খুঁজে ডায়াল  করল।
রিং হতেই অপরপ্রান্ত থেকে বেশ গম্ভীর গলায় বললেন"হ্যালো'।
"ঘোষ দা আমি মনোজ বলছি।"
"হ্যাঁ বল,।"
"বলছি তোমাকে আগে বলেছিলাম না একটা হোল এবডোমেন ইউএসজি করাতে হবে ।কালকে সেই সার্কেলের দুদিন পড়ছে । আগামীকালকে কি তোমাদের "ডাক্তার থাকবেন?"
"তুই বৌমাকে দেখাতে চাইছিস তো?"
মনোজ বলল' হ্যাঁ'
"হ্যাঁ,থাকবেন ।তুই বৌমাকে দশটার পর নিয়ে আয়।"
মনোজ বললো "ওকে।"
তারপর বলল "শোন ,আমার একটা কথা আছে কালকে তাহলে কিছু খেতে পারবে না তো?"
"না র চা খাওয়াতে পারিস। জল খাবে প্রচুর পরিমাণে আর শোন এখানে যখন আসবে তখন যেন প্রেশারটা থাকে। ব্লাডার পরিপূর্ণ না থাকলে কিন্তু ইউ এস জি হবে না ।তাই বেশি করে জল খেতে বলবি বৌমাকে।"
মনোজ বলল "ওকে ,ওকে।"
"ভালো আছো তো তুমি?"
"চলছে একরকম।"
ঘুষ দারুণ এক কথা ভান্ডার পরিপূর্ণ করে দিলেও চলছে একরকম এ বলবেন।
কেন তোমার তো লক্ষীর ভান্ডার পরিপূর্ণ ই আছে ফাঁকা তো যাচ্ছে না দাদা।
ঘোষ দা একগাল হেসে বললেন
"ঠিক আছে কালকে আয় ।দেখা হবে ,কথা হবে।"
ইতিমধ্যে তুতু এসে কিউ কিউ কিউ কিউ করছে।
মনোজ বলল ", ওই দেখ।"
রেখা বলল "কি হয়েছে তুতুরানি?"
"খিদে পেয়েছে?"
রেখা তুতুকে একটু আদর করে নিয়ে বললো 'চলো খেতে দেবো।'রেখা রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে মনোজকে বললো একটু দরজা টা খুলে দাও তো যদি ওরে হিসু পায় তাহলে চলে যাবে নিজে থেকেই।'
মনোজ দরজা খুলে দিল ।ঠিক তাই, তুতু ছুটে গেল।
মনোজ রেখাকে বলল বেশ খানিকটা দূরে গিয়েই তো হিসু করল। তুমি বেশ ভালো বোঝো তো?"
তা বুঝবো না? ছোট থেকে  আমি কোলে পিঠে করে  ওদের মানুষ করছি ।"
রেখা ভাত মেখে নিয়ে ওদের খেতে দিতে যেতে যেতে  বললো" বললাম না ,আমাদের তুতু ও রকম নয় গো ।খিদে পেলে তাকিয়ে থাকবে মুখের দিকে আবার আমাকে দেখে নিয়ে আবার শুয়ে 
পড়বে ।তারপর আমি যখন উঠব , ওকে ডাকবো আয় রে খেতে দেবো। তখন ও চুপ্টি করে উঠে আমার কাছটাতে বসে থাকবো ।আমার ভাত মাখা হবে, ভাত নিয়ে বেরোবো ।তখন ও আমার সাথে বেরোবে।"
মনোজ বলল-আচ্ছা ট্রেনিং দিয়েছে বাবা।"
খাবার-দাবার খাওয়ানোর শেষ হলে রেখা মনোজকে জিজ্ঞেস করে "কি খাবে?"
মনোজ বলল "আজকে রুটি করতে হবে না । বরং একটু তুমি  ছানা করে দাও।,"
রেখা বললো "ঠিক আছে তুমি দরজা বন্ধ করে এসো।"
ওই দেখো হঠাৎ করে যেন ঝড় উঠলো জানালা গুলো খোলা দড়াম দড়াম করে আওয়াজ হচ্ছে।
রেখা বলল" তুমি দরজাটা লাগিয়ে তাড়াতাড়ি এসো জানলাগুলো লাগিয়ে দাও ।আরেকটু উপরে যাবে। ঠাকুর ঘরের জানালাটা খোলা আছে।"
মনোজ দরজা বন্ধ করতে যাবে তার আগেই তুতু এসে হাজির।
মনোজ কিছু না বলে তাড়াতাড়ি করে ছুটল ঠাকুর ঘরের জানালা গুলো বন্ধ করতে।
রেখা রান্নাঘরে দুধ জ্বালাচ্ছে ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে তুতু কিউকিউ আওয়াজ করছে।
রেখা পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে তুতু।
রেখা বললো 'তুতু তুই কি আজকে ভেতরেই থাকবি?
যা ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়। ওমা সত্যি সত্যি ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।"
 মনোজ এটা দেখে রেখাকে বলল "আচ্ছা ট্রেনিং দিয়েছ বাবা। যেকোনো পেশাদার ট্রেন আর কেউ হার মানাবে।"
তারপর ছানা করে এনে মনোজকে ছানার বাটিটা ধরিয়ে দিল।
মনোজ বলল" এতটা ছানা দিয়েছো?”
রেখা বললো" কই অল্পই
 তো  ।খাও না?"
"না আমি এতটা খাব না। প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত যা কিছুই খাবো সেটাই বিষ বুঝলে?"
', হ্যাঁ, বুঝলাম।'
"তাহলে বুঝেছো যখন একটু হা  করো।'
মনোজ ছানার বাটিটা রেখার সামনে নিয়ে গিয়ে চামচে করে ছানাটা তুলে রেখার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল নাও 'হাঁ করো।'
রেখা হা  করলো মনোজ ছানা খাইয়ে দিল।
মনোজ আরেকটু ছানা নিয়ে রেখাকে খাওয়াতে গেল রেখা বলল না "আমি আর খাব
 না । ওটুকু তুমি খাও।"
রেখা বললো "সব যদি আমাকে দেবে তাহলে তুমি কি খাবে বলো?"
"আমি খাচ্ছি তো।"
"বাইরে কিসের আওয়াজ হলো?. একটা পড়ে ভাঙলো বোধহয়.।"
রেখা জানলা খুলে দেখতে যাচ্ছে মনোজ বলল থাক আর জানলা খুলে দেখতে হবে না ।ঝড় হচ্ছে তো ছেড়ে দাও। যা হচ্ছে হোক।"
"তুতু কি আজকে এখানেই থাকবে নাকি গো?"
"থাকে থাকুক। ও কিউ কিউ আওয়াজ করলে সেটা কিন্তু মাথায় রেখ, ওকে বাইরে বের করতে হবে।"
রেখা বলল শুধু আমার মাথায় রাখলে হবে না. আমি যদি ঘুমিয়ে যাই ,তোমাকেও মাথায় রাখতে হবে।"
মনোজ বলল "হ্যাঁ , তাই তো ঠিকই।'
রেখা বলল" হ্যাঁ গো ,পাইলট মিলি ওরা আবার ভিজে যাচ্ছে না তো?"
"না না ভিজবে কি করে ?আমি তো শাটারটা খুলে দিয়ে এসেছি।"
"ও আচ্ছা ,তাহলে ঠিক আছে।"
মনোজ বলো "তোমার তুতুটা এখন তোমার এতটাই ন্যাওটা হয়ে গেছে ,এখন আর ওখানে থাকতে চাইছে না।"
"হ্যাঁ গো কোথাও গিয়ে যখন ফিরে আসি । আমার কথা শুনতে পেলেই, মুখিয়ে থাকে কখন দরজা টা খুলবো তখনই  আসবে।"
রেখা বললো "আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।"
"আচ্ছা তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। "
"আর তুমি কি করবে?"
এই মায়াবী চাঁদের রাতে…
মনোজের গানটা শেষ করতে না দিয়ে রেখা বলল "এটা মায়াবী চাঁদের রাত নয়, বর্ষার 
রাত ।কাজে কাজেই ঘুমিয়ে পড়ো। এত রাত্রে আর কাব্য করতে হবে না।'

কবি আশ্রাফ বাবু এর কবিতা "দৃষ্টিপাত"





দৃষ্টিপাত

আশ্রাফ বাবু

চোখ তাকে ঘিরে আছে অত্যন্ত উত্তপ্ত 
দেখায় প্রাণবন্ত ও উৎসুক বহির্ভাগের শিখা-চক্র,
যে ভোরে আমি যাত্রা করবো
ভাবছি অতিক্রম করে যাবে আমার দৃষ্টিপাত।

সময়ের ব্যবধানে কাঁটায় পুরো বারো মাস। 
ঋতুও পিছিয়ে আছে এই নগরীতে এখন
রাত্রিকে অতিক্রম করার জন্য, 
আমি অপেক্ষা করি নীরবে। 

অভ্যন্তরে প্রতীক্ষা করছে যা ভাবনার অতীত
তোমার মুখছবিতে হয় না ভাংচুর
নড়েচড়ে আমার স্পর্শ করি বাজে না কোনো সুর
চোখের পুতলি নাড়াতে পারে না পাতা।

কীভাবে বন্ধ করবো অভ্যন্তরে প্রতীক্ষা 
তাবৎ হয়েছে উৎসুক;
ভেতরে আমি এড়াতে পারি না
নির্নিমেষ দৃষ্টিপাত-চাও না ছুঁতে তোমার দুহাত।

কবি আতিয়ার রহমান এর কবিতা মিলনের হাসি





মিলনের হাসি

আতিয়ার রহমান 


পদ্মা করাল স্রোতে বয়ে চলা নদী 
নির্মম ক্রোধে মন ভেঙে নিরবধি
সুশোভিত বনভূমি ফসলের মাঠ
স্বপ্নের গৃহে আনে যাযাবর পাঠ।

শাসন না মানা সেই জলধুমকেতু
নতশিরে মেনে নিলো বুকফোড়া সেতু
কোমল তটিনী বাঁধা কঠিনের জালে
বৃথা আক্রোশে ঢেউ ফেরে পালেপালে। 

যেমন ফিরেছে শঠ ঢেলে বিষজ্বালা
বিনিময়ে গলে পরে করুনার মালা।
গর্বিত বুকে আজ দৃঢ় ব্রতচারি 
অবাক বিশ্ব দেখে 'আমরাও' পারি। 

গৌরব পেলো জাতি, ঘরহারা ঘর
যুগযুগ ধরে যারা ছিলো যাযাবর
চর থেকে চরে ঘুরে শত উৎরাই 
জীবনের সন্ধান, পেলো ওরা ঠাঁই। 

ভাঙনের ব্যথা ভুলে দুই তীরবাসি 
সাজসাজ রবে হাসে মিলনের হাসি
সময়ের পিছে যারা দূরবাসিগণ
তারা পেলো দ্রুততার সেতুবন্ধন।

জাতিগত অপমান একা গায় মেখে
চেতনার মহাবীর ইতিহাস লেখে
হে বীর! সালাম লও দৃঢ়তার ভূমি
অনন্য দেশ প্রেমে সাহসীকা তুমি। 

কবি জসীম মাহমুদ এর কবিতা "মুনাফা"




মুনাফা 

জসীম মাহমুদ


পুষ্টিসম্ভারে আম
লুকিয়ে ছিল পাতার আড়ালে
লতানো বৃক্ষের ডালের সাম্রাজ্য

দিয়েছিল নিরাপত্তা তাকে।

মৃত্তিকার সবুজ বল্কল
অঙ্গে পরিধান ক'রে
সে-ও রোদের মায়াবী ওমে

পাল্টায় বসন। 

শর্করাগুণে সমৃদ্ধ হ'লে
মুনাফার দৃষ্টির তীর
বিদ্ধ করে বাজার

সাম্যবাদী শরীরের সীমান্ত ছুঁয়ে।

কবি এ এস এম হোসেন এর কবিতা "কালপুরুষ"





কালপুরুষ 


এ এস এম হোসেন 


আমি সজল আঁখি তে জল সঞ্চারি 
দুঃখ পুষি বলে,
আমি অন্ত্য যাত্রী শেষ প্রহরে 
স্বপন বোনা ছলে। 
আমি হাসির মাঝে লুকাই প্রাণে 
কান্নার উতরোল, 
আমি স্বর্গ বেঁচি নরক কিনি 
বিষাদ বিহ্বল দোল।
আমি ঘুমের ভানে বেঘুম চাতক 
জাগ্রত মহাকাল, 
আমি সাগর জলে জাহাজ ডুবাই 
শূন্যে উড়াই পাল।
আমি ফুলসজ্জায় রক্তে রাঙাই 
কুমারী বধুর হাত,
আমি ঠাকুর ঘরে সিঁদকাটা চোর 
দুর্দম উৎপাত।
আমি ফুলের মাঝে হুলের আঘাত 
ভুলের নটরাজ, 
আমি শান্ত শুভ্র শরৎ মেঘে 
আকাশ ফাটা বাজ।
আমি ছদ্মবেশী পদ্মগোখরো 
এক ছোবলে ছবি,
আমি মরণ পাড়ে স্মরণ ভোলা 
চরণ তোলা কবি।
আমি মিত্রের সাথে প্রতিচিত্র গড়ি 
শত্রুকে বধি ঘাতকে,
আমি আমার আমিতে সুর সন্ন্যাসী 
সুষুপ্ত জাত-জাতকে।
আমি আশের মাঝে নাশের নাগর 
স্বর্গ খেকো ভুক,
আমি ধ্বংস লীলার বংশ ক্রমিক 
ইসরাফিলের মুখ।
আমি আমার আমিতে ক্ষত-বিক্ষত 
বক্ষে গাঁথা ত্রিশূল,
আমি মহাবিশ্বের মহা প্রয়োজন 
তৃণমূল আমি উন্মূল।
আমি বিশ্বাসে রচি বিস্ময় ঘেরা 
বিসৃত এই জনপদ,
আমি দুর্জয় চির দুর্নয় আমি 
জগজ্জয়ী আমি হিম্মৎ। 
আমি আকাশের গায়ে স্বাধীনতা লিখি 
তড়িৎ আলোকে ঝলকে, 
আমি জন্মশোধের মৃত্যুকামী 
যমদূত প্রাণ অলখে।
আমি নীরবে নিভৃতে নিত্যানন্দ 
চিত্তের মাঝে হাহাকার, 
আমি আপনার সুখে অসুখ তুলিয়া 
সুখেরে করি ছারখার। 
আমি হাসি মুখে ধরি হননের গীতি 
আপনার খুশি খেয়ালে,
আমি দিগ্বিজয়ের সৃষ্টি সুখে 
মানচিত্র আঁকি দেয়ালে। 
আমি চলে যেতে-যেতে বলে যাই সব 
অনাগত ভূতভবিষ্যৎ, 
আমি সময়ের চোখে দেখিয়াছি ভেজা 
রক্তে রাঙানো রাজপথ। 
আমি কালের ঘড়িতে শুনিয়াছি ঐ 
ক্ষুধিতের দুঃখ  বিলাপে,
আমি দেখিয়াছি কাবা তওয়াফের ভীড়ে 
পুঁজিবাদে ঘেরা গিলাফে।
আমি দেখিয়াছি জল সকরুণ চোখ 
অসহায় ডাকে স্রষ্টায়,
আমি পথশিশুদের বেওয়ারিশ লাশ 
রুটি চুরি যাওয়া দোষটায়।
আমি দুঃশাসনের দুর্বিপাকে 
দন্ডিত রাজ ফেরারি, 
আমি অপশক্তির অবগুণ্ঠনে 
পথের দিশা-দিয়ারি।
আমি ধুলোবালি জমা সংবিধানে 
বিবেক নামের ছেলেটি, 
আমি আদর্শচ্যুত স্বাধীন দেশের 
শহীদের মমি করোটি। 
আমি অরুণ লোকের মহা তরুণে
ছুটে চলি দিগ্ দিগন্তে, 
আমি আপনার মাঝে আপনি নিখোঁজ 
সকলের মাঝে অনন্তে।
আমি সকল ধর্মের ধর্ম গুরু  
মানুষ ধর্মের জ্ঞাতি, 
আমি বিশ্বমাতার লালিত শিশু 
সকলের ভাই-ভ্রাতী।