উপন্যাস
টানাপোড়েন ১৮৩
শরীর নিয়ে টানাপোড়েন
মমতা রায় চৌধুরী
আজকাল ভীষণ ক্লান্তি লাগে সারাক্ষণ মনে হয় শুয়ে থাকতে পারলে খুব ভালো হয় কিন্তু কাজের জন্য নিজের দিকে তাকানোর অবকাশ কোথায়। রেখা যখন একটু নিজেকে নিয়ে ভাবতে যায় ঠিক তখনই দুচোখ জুড়ে ঘুম যেন আলিঙ্গন করতে থাকে। এমন পরম স্নেহে, ভালোবাসায় আঁকড়ে ধরে ঘুম ,রেখা তার হাত থেকে রেহাই পায় না। আর পাবি বা কেন এত ভালোবাসা জড়ানো হাত তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে সাড়া না দিয়ে কি করা যায়? কিন্তু ঘুমের ভেতরে রয়েছে হাজারো ভাবনা চিন্তা সেগুলোই স্বপ্নে তাড়া করে বেড়ায়।ইদানিং খাতার চাপে ঘুমের ঘাটতি হয়েছে। তারপর পাশাপাশি চলেছে লেখালিখি ,বাচ্চাদের খাবার দেয়া, স্কুল এর মাঝে একদিন রিম্পাদি ফোন করে বলল "হ্যাঁ রে রেখা তোর শরীরটা যে খারাপ যাচ্ছে বেশ কিছুদিন থেকেই বলছিলি ,ক্লান্তি তোর সারা শরীরে ।আবার তোর তলপেটে মাঝে মাঝে ব্যথা হচ্ছে ডাক্তার দেখিয়েছি স?"
রেখা বলেছিল" ও ঠিক সেরে যাবে কাজের চাপটা বেড়েছে, জল ঠিক করে খাওয়া হচ্ছে না নিজের দোষেই, সেই জন্য বোধহয়।"
সেদিন রাত্রে বেশ খানিকটা বাড়াবাড়ি হয়েছিল। তাই মনোজ রেখাকেn ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিল।
ডাক্তার কয়েকটি পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন।
বলেছিলেন 'সার্কেল শুরু হলে তার দুই থেকে চার দিনের মধ্যে ফোন হোল এবডোমেন ইউএসজি করতে হবে।'
আরো জিজ্ঞেস করেছিলেন' আপনার ওই সময় গুলোতে ব্লিডিং কেমন হয়?'
রেখা বলেছিল"দুই থেকে তিন দিন হেভি পরিমাণ হয় ব্লিডিং ।'
"সেই সময়গুলোতে কেমন অনুভব করেন?"
রেখা বলেছিল' প্রচন্ড ক্লান্তি মনে হয় সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকি আর যন্ত্রণা।"
ডাক্তারবাবু বলেছিলেন "ঠিক আছে আগে রিপোর্টগুলো করিয়ে নিন ,তারপরে কথা হবে।
গতকাল খাতা জমা দিয়ে আসার পর থেকেই ব্লিডিং শুরু হয়েছে।'
এতটা ক্লান্তি সারা শরীর বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না ।শুধুমাত্র রেখা কাজগুলো করে মনের জোরে ।সে বুঝতে পারছে ভিতরে ভিতরে তার শরীরে দ্রুত ক্ষয় শুরু হয়েছে।
মনোজ এসে রেখাকে শুয়ে থাকতে দেখে বলল "শরীর খারাপ?
তুতুরা খেতে চাইছে? আমি দিয়ে দেবো?"
"না চলো আমি দিয়ে দিচ্ছি। তাছাড়া তুমিও তো খাবে,?"
রেখা উঠে দরজার দিকে এগুতেই মনোজ বলল "তোমার হাউসকোটের পুরো পেছনটায় ব্লাড লেগে গেছে।"
রেখা বলল," এ বাবা একটু ওয়েট করো
ওয়াশরুম থেকে আসছি।"
রেখা পুরো চেঞ্জ করে আসলো।
মনোজ বলল" কালকে তোমাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।"
রেখা বললো" এখন ডাক্তারের কাছে গিয়ে কি করবো?'গেলেই তো এক্সাম রিপোর্ট চাইবে?
"ও হ্যাঁ ঠিকই তো।"
মনোজ বলল "ঠিক আছে । নো প্রবলেম আমি
লাইফ কেয়ারে ফোন করে দিচ্ছি ঘোষদাকে।"
সঙ্গে সঙ্গে মনোজ নম্বর খুঁজে ডায়াল করল।
রিং হতেই অপরপ্রান্ত থেকে বেশ গম্ভীর গলায় বললেন"হ্যালো'।
"ঘোষ দা আমি মনোজ বলছি।"
"হ্যাঁ বল,।"
"বলছি তোমাকে আগে বলেছিলাম না একটা হোল এবডোমেন ইউএসজি করাতে হবে ।কালকে সেই সার্কেলের দুদিন পড়ছে । আগামীকালকে কি তোমাদের "ডাক্তার থাকবেন?"
"তুই বৌমাকে দেখাতে চাইছিস তো?"
মনোজ বলল' হ্যাঁ'
"হ্যাঁ,থাকবেন ।তুই বৌমাকে দশটার পর নিয়ে আয়।"
মনোজ বললো "ওকে।"
তারপর বলল "শোন ,আমার একটা কথা আছে কালকে তাহলে কিছু খেতে পারবে না তো?"
"না র চা খাওয়াতে পারিস। জল খাবে প্রচুর পরিমাণে আর শোন এখানে যখন আসবে তখন যেন প্রেশারটা থাকে। ব্লাডার পরিপূর্ণ না থাকলে কিন্তু ইউ এস জি হবে না ।তাই বেশি করে জল খেতে বলবি বৌমাকে।"
মনোজ বলল "ওকে ,ওকে।"
"ভালো আছো তো তুমি?"
"চলছে একরকম।"
ঘুষ দারুণ এক কথা ভান্ডার পরিপূর্ণ করে দিলেও চলছে একরকম এ বলবেন।
কেন তোমার তো লক্ষীর ভান্ডার পরিপূর্ণ ই আছে ফাঁকা তো যাচ্ছে না দাদা।
ঘোষ দা একগাল হেসে বললেন
"ঠিক আছে কালকে আয় ।দেখা হবে ,কথা হবে।"
ইতিমধ্যে তুতু এসে কিউ কিউ কিউ কিউ করছে।
মনোজ বলল ", ওই দেখ।"
রেখা বলল "কি হয়েছে তুতুরানি?"
"খিদে পেয়েছে?"
রেখা তুতুকে একটু আদর করে নিয়ে বললো 'চলো খেতে দেবো।'রেখা রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে মনোজকে বললো একটু দরজা টা খুলে দাও তো যদি ওরে হিসু পায় তাহলে চলে যাবে নিজে থেকেই।'
মনোজ দরজা খুলে দিল ।ঠিক তাই, তুতু ছুটে গেল।
মনোজ রেখাকে বলল বেশ খানিকটা দূরে গিয়েই তো হিসু করল। তুমি বেশ ভালো বোঝো তো?"
তা বুঝবো না? ছোট থেকে আমি কোলে পিঠে করে ওদের মানুষ করছি ।"
রেখা ভাত মেখে নিয়ে ওদের খেতে দিতে যেতে যেতে বললো" বললাম না ,আমাদের তুতু ও রকম নয় গো ।খিদে পেলে তাকিয়ে থাকবে মুখের দিকে আবার আমাকে দেখে নিয়ে আবার শুয়ে
পড়বে ।তারপর আমি যখন উঠব , ওকে ডাকবো আয় রে খেতে দেবো। তখন ও চুপ্টি করে উঠে আমার কাছটাতে বসে থাকবো ।আমার ভাত মাখা হবে, ভাত নিয়ে বেরোবো ।তখন ও আমার সাথে বেরোবে।"
মনোজ বলল-আচ্ছা ট্রেনিং দিয়েছে বাবা।"
খাবার-দাবার খাওয়ানোর শেষ হলে রেখা মনোজকে জিজ্ঞেস করে "কি খাবে?"
মনোজ বলল "আজকে রুটি করতে হবে না । বরং একটু তুমি ছানা করে দাও।,"
রেখা বললো "ঠিক আছে তুমি দরজা বন্ধ করে এসো।"
ওই দেখো হঠাৎ করে যেন ঝড় উঠলো জানালা গুলো খোলা দড়াম দড়াম করে আওয়াজ হচ্ছে।
রেখা বলল" তুমি দরজাটা লাগিয়ে তাড়াতাড়ি এসো জানলাগুলো লাগিয়ে দাও ।আরেকটু উপরে যাবে। ঠাকুর ঘরের জানালাটা খোলা আছে।"
মনোজ দরজা বন্ধ করতে যাবে তার আগেই তুতু এসে হাজির।
মনোজ কিছু না বলে তাড়াতাড়ি করে ছুটল ঠাকুর ঘরের জানালা গুলো বন্ধ করতে।
রেখা রান্নাঘরে দুধ জ্বালাচ্ছে ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে তুতু কিউকিউ আওয়াজ করছে।
রেখা পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে তুতু।
রেখা বললো 'তুতু তুই কি আজকে ভেতরেই থাকবি?
যা ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়। ওমা সত্যি সত্যি ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।"
মনোজ এটা দেখে রেখাকে বলল "আচ্ছা ট্রেনিং দিয়েছ বাবা। যেকোনো পেশাদার ট্রেন আর কেউ হার মানাবে।"
তারপর ছানা করে এনে মনোজকে ছানার বাটিটা ধরিয়ে দিল।
মনোজ বলল" এতটা ছানা দিয়েছো?”
রেখা বললো" কই অল্পই
তো ।খাও না?"
"না আমি এতটা খাব না। প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত যা কিছুই খাবো সেটাই বিষ বুঝলে?"
', হ্যাঁ, বুঝলাম।'
"তাহলে বুঝেছো যখন একটু হা করো।'
মনোজ ছানার বাটিটা রেখার সামনে নিয়ে গিয়ে চামচে করে ছানাটা তুলে রেখার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল নাও 'হাঁ করো।'
রেখা হা করলো মনোজ ছানা খাইয়ে দিল।
মনোজ আরেকটু ছানা নিয়ে রেখাকে খাওয়াতে গেল রেখা বলল না "আমি আর খাব
না । ওটুকু তুমি খাও।"
রেখা বললো "সব যদি আমাকে দেবে তাহলে তুমি কি খাবে বলো?"
"আমি খাচ্ছি তো।"
"বাইরে কিসের আওয়াজ হলো?. একটা পড়ে ভাঙলো বোধহয়.।"
রেখা জানলা খুলে দেখতে যাচ্ছে মনোজ বলল থাক আর জানলা খুলে দেখতে হবে না ।ঝড় হচ্ছে তো ছেড়ে দাও। যা হচ্ছে হোক।"
"তুতু কি আজকে এখানেই থাকবে নাকি গো?"
"থাকে থাকুক। ও কিউ কিউ আওয়াজ করলে সেটা কিন্তু মাথায় রেখ, ওকে বাইরে বের করতে হবে।"
রেখা বলল শুধু আমার মাথায় রাখলে হবে না. আমি যদি ঘুমিয়ে যাই ,তোমাকেও মাথায় রাখতে হবে।"
মনোজ বলল "হ্যাঁ , তাই তো ঠিকই।'
রেখা বলল" হ্যাঁ গো ,পাইলট মিলি ওরা আবার ভিজে যাচ্ছে না তো?"
"না না ভিজবে কি করে ?আমি তো শাটারটা খুলে দিয়ে এসেছি।"
"ও আচ্ছা ,তাহলে ঠিক আছে।"
মনোজ বলো "তোমার তুতুটা এখন তোমার এতটাই ন্যাওটা হয়ে গেছে ,এখন আর ওখানে থাকতে চাইছে না।"
"হ্যাঁ গো কোথাও গিয়ে যখন ফিরে আসি । আমার কথা শুনতে পেলেই, মুখিয়ে থাকে কখন দরজা টা খুলবো তখনই আসবে।"
রেখা বললো "আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।"
"আচ্ছা তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। "
"আর তুমি কি করবে?"
এই মায়াবী চাঁদের রাতে…
মনোজের গানটা শেষ করতে না দিয়ে রেখা বলল "এটা মায়াবী চাঁদের রাত নয়, বর্ষার
রাত ।কাজে কাজেই ঘুমিয়ে পড়ো। এত রাত্রে আর কাব্য করতে হবে না।'