০৬ জানুয়ারী ২০২২

কবি শাহিদা ফেন্সী'র কবিতা




প্রণয় বিভোর
শাহিদা ফেন্সী

তোমার ঐ অধর মানে
গোলাপ কুঁড়িতে কামড়

তোমার জন্য অধীরতা মানেই
যেন রাগ ইমনের বিভোরতা।

তোমার ওই গ্রীবার মানে
আমার প্রেমের ঔদ্ধত্যতা

বুকের বাঁ পাশে যে হৃদপিণ্ড
সে তো আমার বিশ্বাসের কুঁড়েঘর।

তোমার বাহুবন্ধন জুলিয়াস সিজার
আমি ক্লিওপেট্রা হয়ে কাঁপি থরথর।

কবি শহিদ মিয়া বাহার এর কবিতা




জোৎস্নার স্বরলিপি
শহিদ মিয়া বাহার

একশত বছর জ্বলেছে পূর্বপুরুষের চোখের ঘর-বসতি, বর্ষার নদী এবং তারও আগে আমাদের প্রপিতামহ কেঁদেছেন,স্বপ্নের উৎসারিত ভাঙ্গন দেখেদেখে--
যেমন কেঁদেছেন সর্বশেষ নবাব,
বিষাদমুখো কৈলাস পাতার মেরুন দৃষ্টিতে, শৃঙ্খলিত লোহার কপাটে! 

মানুষ আর নেকড়ের সমান্তরাল ঘুর্ণন দেখে দেখে, অত:পর পিতামহ কেঁদেছেন বহুযুগ!

কৈবর্ত চোখে কেঁদেছেন, আমাদের জন্মদাতা পিতা-
অস্তগামী সূর্যের লাল শেষকৃত‍্য দেখে দেখে!

আমরাও কেঁদেছি বহুবছর---
স্বৈরাচারী পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে, প্রপাতের কান্নার মত
ঝর্ণার প্রবঞ্চক জলের প্রেম খুঁজে খুঁজে!

প্রান্তরের পাথর চাপায় দীর্ঘসময়, কারা যেন লুকিয়ে রেখেছে স্বর্ণভেজা রোদ!
আমরা সবাই এখন রক্তহীন বিবর্ণ ঘাস হয়ে গ‍্যাছি, পরিত‍্যাক্ত সাদা কাফনের মত!

এখন আমরা কেউ আর কাঁদতে পারি না!

রাতের দুর্গম আরণ‍্যক আঁধারে, চাঁদ-সলতের অক্ষরে লিখা, আমাদের স্বপ্নগুলো 
এখনো জোৎস্নার স্বরলিপি হয়ে উঠেনি।

শামীমা আহমেদ /পর্ব ৪৯




শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত
( পর্ব ৪৯ )
শামীমা আহমেদ 

" ছার,লাঞ্চ করবেন না? অনেক  তো বেলা হইছে। "
কবিরের কথায় শিহাব ল্যাপটপ স্ক্রীন থেকে মুখ সরালো। ছার, কিছু কি আনমু? সক্কাল থেইকা সে যে কাজে ডুবলেন আর তো একটু পানিও খাইলেন না। 
শিহাব জানতে চাইলো, কয়টা বাজছে কবির?
ছার,সোয়া দুইটা বাজে।
আচ্ছা ঐ ছেলেটা  কী চলে গেছে?
জ্বি ছার,কার সাথে যেন ফোনে কথা কইল আর দুইটার দিকে চইলা গেলো।
শিহাব একটুক্ষণ কি যেন ভেবে নিয়ে মনে মনে এই সিদ্ধান্তে এলো,নাহ! শায়লার কাছে তার সততা পাহাড়সম উচ্চতায়। সে কখনোই তার এই বিশ্বাসের অমর্যাদা করবে না। তক্ষুনি শায়লার মেসেজ এলো,লাঞ্চ করেছো? 
এইতো করবো।
খেয়ে নাও অনেক বেলা হলো।
---আচ্ছা,লিখেই শিহাব মোবাইল থেকে মুখ তুলতেই দেখলো,  কবির তার আদেশের অপেক্ষায় মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

কি আনমু বলেন ছার।
চাইনিজ না দেশী খাবার?
যদিও দেশী খাবারেই শিহাবের আগ্রহ বেশি তবে সেটা,ঘরে মা ভাবীর হাতের রান্না।
শিহাব কেমন যেন আনমনা হয়ে কবিরের কথাগুলোর উত্তর দিচ্ছিল।তার ভেতরে ভাবনায় অন্য কিছুর ঘুরপাক চলছে।কিছু খাওয়ার ইচ্ছেটা একেবারেই নেই।
তুমি লাঞ্চ করেছো কবির? 
না ছার,আপনি না খাইলে আমি ক্যামনে খাই? 
সেকি, এত বেলা হয়ে গেছে তুমি না খেয়ে আছো,শিগগির খেয়ে নাও।আর 
আমি আমার খাবারের অর্ডার দিচ্ছি ওরা  খাবার পৌছে দিবে।কবির মাথা ঝুকিয়ে সম্মতি জানিয়ে রুমের পাশেই ছোট্ট ঘরের মত জায়গাটায় তার বাসা থেকে আনা টিফিন ক্যারিয়ারটা খুলে খেতে বসলো।কবিরের বউ খুব যত্ন করে রান্না করে খাবার সাজিয়ে দেয়। কবিরও তার বউটাকে খুবই ভালোবাসে।
শিহাব ভাবলো,পৃথিবীতে ধনী গরিব  মধ্যবিত্ত দিনমজুর কিংবা রিকশাচালক সবার জীবনেই এ যেন এক অনন্য সুখ! স্ত্রীর হাতের রান্না স্বামী পরম তৃপ্তি নিয়ে খায়।আর স্বামী  অন্তঃপ্রান স্ত্রীরা জীবনের শত কষ্টের বিনিময়ে স্বামীকে স্বযত্নে খাওয়াতে ভালবাসে।
শিহাব  কাছেই একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ওদের সেট মেনু অর্ডার করলো। বিশ মিনিটের মধ্যেই ওরা খাবার পৌছে দিলো।এর মধ্যেই কবির খাওয়া শেষ করে নিলো।
শিহাবের অফিস রুমের এক কর্ণারে লাঞ্চের জন্য টেবিল চেয়ার সেট করা আছে।শিহাব সেখানে বসেই লাঞ্চ সেরে নিলো।খাবার শেষে একটু আয়েশি ভঙ্গিতে শিহাব একটা বেনসন ধরিয়ে গভীর চিন্তামগ্ন হলো।ঘড়ির কাটায় তিনটা তিরিশ।নিশ্চয়ই রিশতিনা তার জন্য অপেক্ষা করে ফিরে গেছে কিংবা শিহাব যাবে না  জানতে পেরে হয়তো সেখানে আর যায়নি।
নাহ! এ হয় না।আমার অতীতকে ভুলতে হবে নয়তো সামনে এগুনো যাবে না।এবার নিজেই নিজের ভাগ্য গড়ে নিবো।শায়লাকে নিয়ে যে স্বপ্ন সে দেখেছে সেটাই হবে তার একমাত্র ধ্যান জ্ঞান।কিন্তু রিশতিনার সাথে দেখা করতে না যাওয়াটাও  শিহাব বারবার নিজের বিবেকের কাছে  হেরে যাচ্ছে।
শিহাব চোখ বন্ধ করে সেই দিনগুলির কথা ভাবছিল। যখন শত বিত্ত বৈভব পিছে ফেলে রিশতিনা তার কাছে ছুটে এসেছিলো।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।কত প্রাচুর্যেই না বড় হয়েছিল। শিহাব নিজেকে বুঝে উঠতে পারছে না। কি করবে।কারো কাছে এ বিষয়ে  পরামর্শ নেয়ার মত এমন নিরপেক্ষ কাউকে তো দেখছে না।
ব্যবসায়িক কত কিছুরইতো শিহাব ডিল করে, কত কন্ট্র‍্যাক্ট,কত ডিসিশন,কত স্টেপ, কত ফিউচার প্ল্যান,কত একশানতো তাকেই নিতে হয়।ব্যবসায়িক বন্ধুরা  তার দিকে তাকিয়ে তাকে।এ ব্যাপারে তার প্রজ্ঞা আর দূরদর্শী বন্ধুদের বিস্মিত করে।তাইতো তারা বলে,, এইসব ব্যাপারে শিহাব নাকি যথেষ্ট দক্ষ।বন্ধুরা তাই তার সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করে।কখনো কোন ডিসিশন তার ভুল হয়নি।কোন ব্যবসায়িক ক্ষতির সন্মুখীন তারা  হয়নি।কিন্তু নিজের জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিতে তার এত চড়াই উৎরাই পেরুতে হচ্ছে। সহজ পথে কিছুই এগুচ্ছে না।

শিহাবের মোবাইল বেজে উঠলো।টেবিলের উপর ফোনটি ছিল।কবির আসতে আসতে রিং শেষ হয়ে গেলো।আবার কল এলো।কবির মোবাইলটা এগিয়ে দিলো।শিহাব দৃষ্টি ফেলে দেখলো বন্ধু রোমেলের কল।শিহাব কল রিসিভ করলো।ওপ্রান্ত থেকে টগবগে কন্ঠ!
দোস্ত কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।
তুই কেমন আছিস?
ভালো,দোস্ত,তবে তুমি কেমন যেন কিছুদিন যাবৎ ঝিম মাইরা আছো।কি হইছে তোমার?
কতদিন আড্ডা নাই,ঘুরাঘুরি নাই। খাল্লি কাজ আর কাজ।বন্ধুর মিষ্টি অনুযোগ। 
 উত্তরায় ব্যবসায়িক কাজের সুবাদে রোমালের সাথে পরিচয়।খুবই খোলা মনের একজন সৎ ব্যবসায়ী। উত্তরাতেই স্থায়ী বসবাস। ধীরে ধীরে বন্ধুত্বের কারণে আজ ব্যবসায়িক পার্টনার হয়ে যাওয়া।ওর অফিস সেক্টর নয় এ।নিজে বাড়ির নিচ তলায়।
শিহাবের নীরবতায় রোমেলের ঝংকার,
দোস্ত, তোমার কি হইছে,বলা যায়? 
কই কিছু না তো?
ঠিক আছে কিছু না হইলে আজ সন্ধ্যায় দিয়াবাড়িতে চা পানের আড্ডায় চইলা আসবা।আসবা মানে আমরা একসাথে রেরুমু।
যদিও শিহাবের আজ হৈ হুল্লোড় করার মত মনের অবস্থা নেই।তবুও।বন্ধুত্বের খাতিরে তা করতে হবে।তাছাড়া ওরা খুব ভালো বন্ধু।বিশেষ করে রোমেলের মধ্যে একটা ভালো মানুষের সব গুনাগুনই আছে।
সন্ধ্যার পর দিয়াবাড়ির সেই চায়ের আড্ডায় বন্ধুরা হৈ চৈ করে একজন আরেকজনকে
নানানভাবে খোঁচাচ্ছে।বিবাহিত বন্ধুদের সবার কার সাথে কার পরকীয়া চলছে।কে কোথায় কতবার ডেটিং এ যাচ্ছে।কোন ভাবির স্বামী দেশের বাইরে আছে তার ফোন নাম্বার লেনদেন চলছে।বউকে কে কিভাবে ফাঁকি দিচ্ছে এসব যেন আজ এক সামাজিক ব্যাধিতে দাঁড়িয়েছে।তারা বুঝতে পারছে না,যখন তাদের স্ত্রীদের তারা ফাঁকি দিচ্ছে তাদের স্ত্রীরাও তখন অন্যের বগলদাবা হয়ে 
চাওয়া পাওয়া মিটিয়ে নিচ্ছে।একটা অসুস্থ পারিবারিক পরিবেশে সন্তানরা বড় হচ্ছে।তাইতো তারাও বিপথে যাচ্ছে। নেশা আর সেক্স, আর সহজলভ্য পর্ণোগ্রাফিতে ঝুঁকছে।
শিহাব  গুটিশুটি মেরে আলো আঁধারিতে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।হাতে সিগারেট নিয়ে উদাস দৃষ্টিতে আকাশের তারা দেখছে।  চায়ের অর্ডার দেয়া হয়েছে।শিহাবের আজকাল সিগারেট একটু বেশিই লাগছে।কি আর করা! এতসব টেনশনে সিগারেটের সাথেই যেন সব কথা বলে চলা।
শিহাবের শায়লাকে খুব মনে পড়লো।আজ তার দিক থেকে কোন কল যায়নি শায়লার কাছে।নিশ্চয়ই শায়লা অপেক্ষায় ছিল। শিহাব শায়লার নাম্বারে কল দিলো।ফোনটা বেজেই চললো।একসময় থেমেও গেলো।পরক্ষণেই শায়লার কল ব্যাক।
শিহাব!
কেমন আছো শায়লা?
ভালো।তুমি?
ভালো। 
না,তোমার কন্ঠ কেমন যেন শোনাচ্ছে আর আশেপাশে এত হৈচৈ এর শব্দ।তুমি কি বাইরে?
হ্যাঁ শায়লা, বন্ধুদের সাথে দিয়াবাড়ি চা খেতে এসেছি।তোমার কথা খুব মনে পড়ছে।একদিন তুমি আর আমি এখানে এসে চা খাবো।
ঠিক আছে। বেশি রাত করোনা।
আচ্ছা,কি করছিলে?
এইতো,তোমার দেয়া ব্রেসলেটটা দেখছিলাম।জানো শিহাব,আমি আজ অনেকবার ব্রেসলেটটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছি।আর প্রতিবারই ওটা কথা বলে উঠেছে!একদম তোমার কন্ঠস্বরে!
শিহাবের ভেতরটা একবারে মোচড় দিয়ে উঠলো!কী ভীষণ গভীরতায় শায়লা যে তাকে অনুভব করে।
তা ব্রেসলেটটি কি বলে?
চুপ কেন? বলো।ব্রেসলেটটি কি বলে?
বলে, শায়লা আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।
হু, ঠিকই তো বলে।আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি শায়লা।
রোমেল দুই কাপ চা নিয়ে শিহাবের দিকে এগিয়ে আসছে। শিহাব কথা সংক্ষিপ্ত করলো।ঠিক আছে শায়লা রাতে কথা হবে।রাখছি।
শিহাব হাত এগিয়ে  চায়ের কাপ নিয়ে, দুই বন্ধু চায়ে চুমুক দিলো।রোমেল যেন শিহাবের চোখের ভাষা পড়তে চাইছে।শিহাব তার চোখ আড়াল করতে চাইছে।রোমেলের আক্রমন ছুটে এলো---
কি দোস্ত,প্রেমে ট্রেমে পড়ছো নাকি?কেরম যেন আউলাভাবে থাকো আজকাল।আমাদের কোন ফোন নাই যোগাযোগ নাই।
খুবই হালকা করে শিহাব বললো,কি যে বলোনা দোস্ত। শিহাবের কথাতেই বুঝা গেলো কথার মাঝে কিছু ফাঁক আছে।
আরে দোস্ত, পুরুষ মানুষের এত্ত আবেগী হইলে চলে না।অতীত নিয়া পইরা থাকলে কি চলবো?জীবনটারে আবার নতুন কইরা সাজাও। সময়তো খুবই কম।বলাতো যায় না,
কার কখন ডাক আসে।
বন্ধুদের আড্ডায় নিজেকে খুবই প্রাণহীন করে রাখলো শিহাব।অন্যরাতো গল্পতে মেতে উঠেছে। রিশতিনার ডাকে না গিয়ে কেমন যেন একটা অপরাধ বোধের কাঁটা খচখচ করে বিঁধছে।
ঘড়িতে রাত নয়টা বেজে গেলো।শিহাব বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিলো।রোমেল তার কাঁধে হাত রেখে বললো,বন্ধু কোন পরামর্শ বা  আলোচনার দরকার হইলে এই দোস্তটারে স্মরণে আইনো।আমি আছি তোমার পাশে।
শিহাবের ভেতরে অনেক কথার আকুলিবিকুলি থাকলেও বুকের ভেতরেই তা চাপা রইল।কন্ঠনালী পর্যন্ত তার অনুমতি মিললো না।শুধু চোখ দুটোতে নির্বাক দৃষ্টি আর  তার সাথে দেখা না হওয়ায় রিশতিনার অভিমানী মুখটা বারবার ভেসে উঠছে। তার মনের ভেতরও রিশতিনার প্রতি রাজ্যের প্রশ্ন জমা হয়ে আছে।


চলবে.....

কবি মনিরুল হক মৃধা এর কবিতা




কবি ভালোবাসে
মনিরুল হক মৃধা


এতো ভালো লেখা কবি দেই সাদুবাদ 
এভাবেই করে যেয়ো কবিতা আবাদ, 
পাঠক হয়েই আমি যেন হই ধন্য
কবিতা বাসেনা যারা তারাই ত বন্য!

শিখে নেই যেথা পাই জ্ঞানী গুণী, লেখা 
জানি সে একদিন পাবো কবিতার দেখা, 
শোধাবো তারেই কবি কবিতাকে বাসি 
উত্তর সে দেবে সেথা মুখে নিয়ে হাসি।

কবিতার কলি পড়ে হৃদে ঝড় উঠে 
তার তরে মন হরে ব্যথা হৃদ পুটে, 
কবিতা বলবে যখন কবি ভালোবাসি! 
এই হৃদে ফুটবে ফুল শত রাশিরাশি।

কবিতারা অভিমানী বড্ড মন চোরা 
তার বাসা পায়না যারা সে কপাল পুড়া, 
বসে রই বটতলে কবিতার পথে 
ভালোবাসে কবিতায় তা-ও একটা শতে।

তাইতো আমি সে বারবার কবিতা ই লিখি 
আমার প্রেয়সী তারে মন লয় দেখি, 
এ দেখার শেষ নেই বসে থাকি আশে
বলে দিও দেখা হলে কবি ভালোবাসে ।

সাইন্স ফিকশন গল্প লিখছেন হালিমা মুক্তা

শুরু হলো হালিমা মুক্তারের সাইন্স ফিকশন গল্প টাইম যান


টাইম যান
(সাইন্স ফিকশন গল্প)
হালিমা মুক্তা

ফজরের ওয়াক্ত নিপু কলপাড়ে ওজু করছে। হঠাৎ এমন সময় নিপুর চোখ যায় কলপাড় থেকে একটু দূরে বড় সাইজের হাসনাহেনা ফুলের গাছের তলায়।
আরে তানজিম এর খেলনা হেলিকপ্টার টা এত বড় হয়ে গেল কেমন করে! এটাতো অনেক বড় দেখাচ্ছে! নিপু কিছু বুঝে ওঠার আগেই হেলিকপ্টার জান টা একটু মৃদু মন্দ আওয়াজ করে উপরের দিকে উড়াল। নিপুর চোখ তো ছানাবড়া। মাথা ঘুরাচ্ছে এটা কি দেখলো ও। ওটা কি ছিল। ভয়ে গা শিহরিত হচ্ছে। এটা তো তানজিম এর খেলনা হেলিকপ্টার না তাহলে! ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসছে নিপুর। কিন্তু নিপু ভাবলো মাকে বলা যাবে না, শুধু টেনশন করবেন।তার থেকে আগামী কালকে দেখবে সে আসলে ওটা কি ছিল। হঠাৎ মায়ের এ রুমে আগমন নিপু এখনো নামাজে দাড়াওনি! সূর্য উঠার সময় হয়ে এলো কিন্তু। কি এত চিন্তা করছ কি হয়েছে তোমার? মায়ের চোখ বলে কথা। তোমাকে পেরেশান দেখাচ্ছে কেন? আম্মা তানজিমের হেলিকপ্টার কি উড়তে পারে? কি বলো ঘুম থেকে উঠে কি বলছ তানজিমের হেলিকপ্টার উড়তে পারে মানে! নিপু মা'কে বলে সে যা দেখতে পেয়েছে।নিপুর মা হেসে কথাগুলি উড়িয়ে দেই বলে কী উদ্ভট কথা বলছো তুমি , ঘুম থেকে উঠে গিয়ে দেখেছো হয়তোবা তুমি ঘুমের ঘরে দেখেছো। তাই এখন মাথায় কাজ করছে। যাও নামাজে দাঁড়াও। স্কুল আছে নামাজ পড়ে হোম ওয়ার্ক গুলো ঠিকঠাক মত দেখে নাও।নিপুর মা রুম থেকে চলে যায়। নিপু খাটের কোনা থেকে উঠে নামাজে দাঁড়ায়।

 তানজিম এর খেলনা গোছাচ্ছে। স্কুল থেকে ফিরে সব এলোমেলো দেখে নিপু তানজিম এর উপর রেগে যায়। আম্মা আম্মা তোমার ছেলে সব এলোমেলো করে রেখেছে সব খেলনা গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে এ কি করেছে ঘরের অবস্থা দেখে যাও। ডাকাডাকি করছিস কেন পারলে গোছা। নিপুর মায়ের রান্নাঘর থেকে উত্তর। এই তানজিম টা না!নিপু একাই বকবক করছে। আর ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা খেলনা গোছাচ্ছে। হঠাৎ নিপুর ভোর বেলার কথা মনে পড়ে যায় সেই হেলিকপ্টার জান এর কথা। নিপু আবারো একটু শিহরিত হয়। কেমন যেন গা ছমছম করে ওঠে। রান্নাঘর থেকে আওয়াজ আসে নিপু তুমি গোসল করে ফ্রেশ হও নামাজের বেলা কিন্তু যায়। নামাজ ,খাওয়া স্যারের পড়া ওহ একটুও শান্তি নেই মায়ের কথা শুনে বিরক্ত মুখ নিয়ে নিপু কল পাড়ের দিকে হাঁটা দেয়। 

চলবে...

মমতা রায়চৌধুরী /৮৬





উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৮৬
স্নেহ-মায়া-মমতা 
মমতা রায়চৌধুরী


অনিন্দিতার বিয়েতে যাবার আগে যে উত্তেজনা মন প্রাণকে ছুঁয়ে গেছিল। তা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে গেল ঠিক যেন 'গঙ্গাসাগরে মৃতপ্রায় মনুয়া পাখির মতো।' অনিন্দিতা কেন যে রেখার সাথে এরকম ব্যবহার করল ?
সবাইকে জিজ্ঞেস করল একবারও রেখা কে জিজ্ঞেস করল না।
গাড়িটা আসতে  আসতেএসবই ভাবছিল হঠাৎ রেখার মনে পড়ল 'এই যা মনোজ তো ফোন করেছিল ,তখন তো ধরতে পারে নি। 'হোয়াটসঅ্যাপটা খুলল দেখল 'কিছু ম্যাসেজ আছে কিনা?'
দেখল 'হ্যাঁ ,মেসেজ ঢুকেছে। মনোজ লিখেছে 'কত দূরে আছো?'
রেখা ভাবল' ফোনটা করবে? না থাক। তার থেকে মেসেজ পাঠিয়ে দি।'
রেখা টেক্সট করলো'এই তো চাকদহ পালপাড়া ক্রস করছি। তুমি খেয়েছো তো?'
রিম্পাদি বলল-'এই রেখা ,রেখা । কি রে কোনো কথা বলছিস না। মুড অফ?'
রেখা তখনো  ফোনটা ঘেটে যাচ্ছে। অনুরাধাদি রিম্পাদিকে বলল'মটন কষাটা তোমাদের কেমন লেগেছে?'
রিম্পাদি বলল 'কেন বলুন তো?'
অনুরাধাদি বললেন 'এমনি  জিজ্ঞেস করছি?'
রিম্পাদি আবার ঠোঁটকাটা তো বলে ফেলল' না আপনি তো এমনিতে কিছু বলেন না দিদি।নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে বা কিছু মনে জেগেছে?'
আনুরাধাদি একটু হাসলেন।
 রিম্পাদি হেসে এবার একটু কায়দা করে বললো 'আমার তো ভালোই লেগেছে।' 
অনুরাধাদি শুধু বললেন" অ অ।'
রিম্পাদি কায়দা করে কথাটা বের করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারল না। রিম্পাদি জানে। মটন কষাটার মটন ভাল ছিল না।'
এরমধ্যে রিম্পাদি আবার রেখাকে ধাক্কা দিয়ে বলল 'কিরে কিছু বলছিস না যে?'
রেখা বলল '' কি বলব?'
রিম্পাদি বলল 'না কিছু লিখছিলি তো ? মনোজ ফোন করেছিল?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ ,সে তো যাবার সময় ফোন করেছিল। আবার ফিরছি  ,দেখছি মেসেজ পাঠিয়েছে।'
রিম্পাদি বলল' ও ।তা এমনি সব ঠিক আছে তো?'
রেখা বলল মনে হয় 'সব ঠিক আছে। লিখেছে যে কত দূর?'
রিম্পাদি বলল'তুই কোন উত্তর দিয়েছিস?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ ,আমি লিখলাম তখন পালপাড়ায় ছিলাম সেই কথাটাই ।'
এরমধ্যে অনুরাধাদি দেখি পা নিয়ে খুব কষ্ট পাচ্ছেন ।একটানা পা ঝুলিয়ে বসে থাকা তো?'
রেখা বলল' দিদি ,আপনি পা টা ছড়িয়ে
 বসুন ।আমরা একটু এদিকে চেপে বসছি।'
রিম্পাদি ও  বলল ', হ্যাঁ, দিদি। পা টা ছড়িয়ে দিন। অ্যা  অ্যা অ্যা রেখা একটু সর সর সর আর একটু। ব্যস ব্যস, ঠিক আছে।'
রেখা বললো' ঠিক আছে অনুরাধাদি।"
অনুরাধাদি বললেন ' হ্যাঁ গো। উফ: কি কষ্ট পাচ্ছিলাম। কিন্তু তোমাদের তো কষ্ট হবে?'
রিম্পাদি ও রেখা বলল 'আরে না ,না ।আপনি বসুন তো ঠিক করে।'
এরমধ্যে গান বাজছে'তোমারেই করেছি জীবনের ধ্রুবতারা ...।'
সবাই কিছুক্ষনের জন্যে চুপ করে গেল আর মনোযোগের সঙ্গে গানটা শুনতে লাগল।
গাড়ি ইতিমধ্যে মদনপুরের ঢুকে পড়ল।
এরমধ্যে রেখার ফোনে একটা ম্যাসেজ ঢুকলো ', খেয়ে নিয়েছি।'
রেখা মেসেজ করল' বাচ্চারা সব খেয়েছে তো?'
মনোজ লিখলো "হ্যাঁ ,সবাই খেয়েছে।'
কিন্তু রেখা জানতেও পারল না তার বাড়িতে কি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
গাড়ি যখন কল্যাণী স্টেশন হয়ে রেখার বাড়ির গেটের কাছে। গাড়ি থেকে নামল এবং রিম্পা দি অনুরাধাদিকে অনুরোধ করলো 'ভেতরে ,ভেতরে চলো সবাই।'কিন্তু রিম্পাদি অনুরাধাদি দুজনেই বললেন 'না গো অন্য দিন একদিন 
আসবো ।আজ আর নয়।'
রিম্পাদি বলল 'না রে আজকে এমনি দেরি হয়ে গেছে। আমাদেরও তো ফিরতে হবে বল?'
রেখা কোন জোরজবস্তি করল না। সত্যিই তো এখনও অনেকটা পথ যাবার রয়েছে। দুজন মেয়ে মানুষ যাবেন।'
রেখা হেসে বলল 'ঠিক আছে দিদি ।তাহলে কিন্তু তোমাদের পাওনা থাকল।'
রিম্পাদি অনুরাধাদি দুজনেই হাসলেন এবং বললেন,' ঠিক আছে ।অন্য একদিন আসবো।'
রেখা বলল 'আপনারা পৌঁছে কিন্তু আমাকে একটু জানাবেন ।ফোন করতে না পারেন , অন্তত আমাদের গ্রুপে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দেবেন। চিন্তায় থাকব।'
রিম্পাদি ,অনুরাধাদি '  দুজনাই বলেন ঠিক আছে।'
ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিল। রিম্পাদি অনুরাধাদি গাড়ি থেকে হাত নাড়তে লাগলো ।রেখা ও এই দিক থেকে হাত নাড়তে লাগলো।
রেখা বাড়িতে ঢুকে কলিং বেল বাজাল ।কলিং বেলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে' জয় গনেশ ,জয় গনেশ, জয় গনেশ দেবা।'
মনোজ এসে দরজা খুলল ।মনোজের মুখটা থমথমে। রেখা ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ভালো করে ধুয়ে রুমে ঢুকলো। টাওয়াল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার সময় মনোজ বললো 'লিলি আর নেই।'
রেখা কথাটা শুনে ধপ করে খাটের উপর বসে পড়ল। চোখে তাকিয়ে শুধু  প্রশ্ন' নেই মানে?'
তখনো রেখা কল্পনা করতে পারেনি গিলি যে তাদের ছেড়ে অনেক অনেক দূর চলে গেছে যার নাগাল কোনদিনও পাবে না। কখনো ওকে ছুঁইয়ে আদর করতে পারবে না।তিন মাসও কমপ্লিট হয় নি ।এই তিন মাসের মধ্যেই কতটা রেখাকে জড়িয়ে নিয়েছিল ।ভগবান কেন এরকম করলো কে জানে?
মনোজ শুধু বলল 'কিছু করার ছিল না এক্সিডেন্ট?'
রেখা খুব উত্তেজিত ভাবে আর ভীষণ জোরে কেঁদে বলল"অ্যাক্সিডেন্ট মানে? কি করে এক্সিডেন্ট হয়?'
আর হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে " লিলি, লিলি বলে।"
মনোজ বলল'' শান্ত হও।'
রেখা বলল ' তুমি কি করছিলে?'
মনোজ বলল'আরে মিলি তো কিছু খাবার খেয়ে এসে বাচ্চাদের খাওয়াবে বলে চেঁচাতে 
থাকে ।প্রতিদিনই তো গেট খুলে দেয়া হয়। ঠিক সেভাবেই খুলে দেয়া হয়েছে'।
রেখা বলে তাহলে 'এক্সিডেন্ট হয় কি করে?।
মনোজ বলল 'ওরা ঠিক মায়ের কাছে গিয়ে খাবারটা খাচ্ছিল ।ঠিক সে সময় একটা টোটো আসে আর হঠাৎই লিলি দৌড়ে রাস্তায় আসে এবং টোটোর সামনে পড়ে।'
রেখা বলল' টোটোওয়ালাকে ধরে কিছু দাওয়াই দিতে পারো নি। নিরীহ জীবগুলোকে ওরা এভাবে চাপা দেয়।'
মনোজ বলল 'টোওয়ালার এখানে কোন দোষ ছিল না ও আস্তে আস্তেই আসছিল।'
রেখা বলল 'তুমি আর টোটোওয়ালার হয়ে গুন গান গেয়ো না। আমার কিন্তু প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।'
মনোজ বলল 'টোটোর গতি বেগ কম ছিল হঠাৎ ই লিলি ছুটে এসে সামনে পড়ে।'
রেখা বললো'-তারপর?'
মনোজ বলল 'ওর গায়ে চোট-আঘাতের চিহ্ন দেখা গেল না ।তারপরেই টোটো টা সরিয়ে নিতে লিলিটা আবার ছুটে ওর মায়ের কাছে আসে।কিছুটা খাবার খায় ।তারপর ছুটে ও নিজের ঘরে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ওর রক্ত বেরোচ্ছে।
আমি তখন ওর কাছে উপস্থিত ছিলাম ।আমি আমি দেখতে পাচ্ছি একটা তরতাজা প্রাণ কি করে সবাইকে ছেড়ে চলে যায়।"
রেখা বলল-"আমার লিলি ,আমার লিলি বলে রেখা চিৎকার করে ওঠে।'
মনোজ বলল'আমি ওর মুখে জল দিলাম ।জলটা খেলো তারপর আমার দিকে তাকিয়েই মারা গেল।'
রেখা তো ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। আর বলে জানো' আজ সকাল বেলায় যখন ওদের দুধ-রুটি খাওয়াতে গেছি, ওরা তো প্রতিদিনই সকলে ছুটে গেটের কাছে আসে আওয়াজ পেলে। কিন্তু খাবার থালা দেখলেই ওরা আবার এক এক করে নিজের শোবার জায়গাটায় চলে যায়।'
রেখা আরো জোরে কেঁদে ওঠে' আমার লিলি ,লিলি, লিলি বলে।'
মনোজ বলল 'কিছু করার ছিল না। নইলে কি চেষ্টা করতাম না বল?'
রেখা বলল' জানো?'আজকে লিলিকে যখন আমি ঘরে থেকে বের করতে গিয়ে বলছি সোনা বেবি তুমি ভেতরে ঢুকে কেনো? তখন কী করলো জানো?'
মনোজ উদাসী দৃষ্টিতে তখন রেখার দিকে তাকিয়ে।
রেখা বলল 'ও সুন্দর ছোট্ট বাচ্চাদের মত আদর করে শুয়ে পড়ল । যেমন ছোট বেবিরা বিছানা ছাড়তে না চাইলে ,যেরকম করে ঠিক সে রকম।'
মনোজ উৎসুক দৃষ্টিতে রেখার দিকে তাকিয়ে।
রেখা বলল' তখন আমি ওকে মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে টেনে বের করে কোলে তুলে নিলাম ।ওর মুখে বার বার চুমু খেতে লাগলাম ।আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে লাগলাম। ও মুখের দিকে চুপ্টি করে তাকিয়ে থাকলো।'
মনোজ এবার উঠে বসলো আগ্রহভাবে রেখার দিকে তাকিয়ে। চোখে তখন জল ছলছল।
রেখার কন্ঠ তখন বাকরুদ্ধ তবুও বলল 'তারপর ওকে বললাম তুমি খেয়ে নাও ।তবুও সে খাবে না তখন হাতে করে করে ধরলাম ওদের মুখের কাছে তখন ওরা খেলো।'
রেখা এসব কথা বলছে আর কাঁদছে ।রেখার বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছে যন্ত্রণায় ।ভুলতে পারছে না ছোট ছোট কার্যকলাপকে।
রেখা আর ও বললো' যখন ওদের খাওয়ানো কমপ্লিট হলো ।তারপর জল দিয়ে দেয়া হলো ।জলের বাটিটা থেকে ওরা জল খেতে লাগলো।' আজকে একটা অভিনব কান্ড করেছে লিলি।এখন সব মনে পড়ছে।'
মনোজ এবার শুধু আস্তে করে বললো 'কি?'
রেখা বলল 'গেটে তালা চাবি দিয়ে বেরিয়ে আসতে যাবো, ঠিক তখনই লিলি এসে আমার দোপাট্টা টেনে ধরল ।এবার তাকাতেই ও যেন ওর ভাষায় কিছু বোঝাতে চাইল। ওকে কোলে নেওয়া হলো। তখনো কি জানতাম লিলি এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে? সব থেকে বড় কথা কোথাও যাবার আগে সবসময় ওদেরকে একবার দেখে যাই আজকে এতটা লেট হয়ে গেছে গাড়ি এসে গেছে আর ওদেরকে দেখার টাইম হয় নি আমার।'

রেখা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল তারপরদেখল ওদের খাবার টাইম হয়ে গেছে দেখে কাঁদতে কাঁদতেই গিয়ে আবার খাবার গরম করলো। তারপর খাবার নিয়ে সরাসরি চলে গেল ওদেরকে খাওয়াতে। খাবার দিতে গিয়ে ওদের সামনে রেখা আরো জোরে জোরে কেঁদে উঠলো।
আর রেখার কান্না দেখে তুলি , পাইলট চিৎকার করতে লাগল এবং রেখাকে নানাভাবে নানা দিক থেকে আদর করতে লাগল ।কখনো গালে, কখনো হাতে, কখনো মাথায়। আর গা বেয়ে বেয়ে উঠতে শুরু করল। ওরা ওদের নিজের ভাষায় 'ঘেউ ঘেউ' আওয়াজও করলো।'
রেখা তখন ওদের জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগল।দু চোখে তখন  জল ।'
খাবার দিয়ে এসে ঘরে প্রবেশ করতেই রেখা জিজ্ঞেস করল "তুমি খেয়েছ?'
মনোজ বলল 'আমার ওই অবস্থাতে কিছু খেতে ইচ্ছে করে নি।'
রেখা বলল' তোমারও তো শরীরটা খারাপ .খাবর খাওয়া উচিত ছিল? তাহলে কি ভাত করে দেব?'
মনোজ বলল 'আমার খাবার করতে হবে না।'
রেখা বলল 'তাহলে কি খাবে?'
মনোজ বলল 'ভাইপোকে বলেছি চারটে ডালপুরি এনে দিতে।'
রেখা বলল 'সারাদিন কিছু খেলে না। এখন ডাল পুরি খাবে?'
মনোজ বলল'আমার খাবার নিয়ে আমাকে ভাবতে দাও।'
রেখা বলল'ok
কিন্তু রেখার চোখের জল তখনও কমে নি। বারবার লিলির কথা বলছে আর কাঁদছে।
আর তখনই পুরশ্রী ভবনে গান বাজছে'যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে। আমি বাইব না ,আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...।'
গানটা যেন রেখার অন্তরাত্মায় একাত্ম হয়ে 
গেছে। রেখা বারবার লিলির কথা ভেবে ভেবে অস্থির হয়েছে, ডুকরে ডুকরে কেঁদে
 উঠেছে ।উৎসবমুখর বিয়ে বাড়ির আনন্দ আর,আনন্দের মধ্যে যে তার লিলি না থাকার বেদনা তার ভেতরে একটা শূন্যতা সৃষ্টি করে দেবে সেটা কল্পনার বাইরে ছিল । রেখা শুধু শূন্য দৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকে।