০৫ মার্চ ২০২২

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১২৩




উপন্যাস 

টানাপোড়েন১২৩
অন্য খামের চিঠি
মমতা রায় চৌধুরী



সারাটা দিন পানকৌড়ির মত টুক করে ডুব দিয়েছিল স্বপ্নীলের মনে। বাড়িতে এসেই সেই ঘোর কাটল।অটো করে  নামতেই বাড়ির সামনে 
টাটা সুমো গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু অবাক হল ' কে এসেছেন বাড়িতে?
সেরকম কেউ হলে তো মনোজ  তাকে ফোন করে জানাত অন্তত।'
বাড়ির সামনে  গেটের কাছে একটু দাঁড়াল কলিংবেলটা বাজাবে ।ভাবতে ভাবতে আর একবার চিন্তা করে নিল' মনোজ কি জানতো?'
'কাকে জিজ্ঞেস করবে?'
'না না কাউকে জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হবে না তাহলে ভাববে বাড়ির খবর জানে না  এ নিয়ে অনেকে নিজেরা হাসাহাসি করবে।'৯
তার থেকে নিজের থেকেই ঘরের ভেতরে ঢুকে দেখাই ভাল। সেরকম কেউ হলে তো মনোজ অন্তত জানাতো। মনের দোলাচলতা নিয়ে রেখা গিয়ে কলিং বেল বাজাল। বেশ কয়েকবার বেজে গেলেও কেউ দরজা খুললো না।
রেখা ভাবছে 'সবাই কি এতই ব্যস্ত? নাকি বাড়িতে কিছু হয়েছে?'
তখন আপন মনেই কলাপসিবল গেট টা গিয়ে দেখল না গেটে তালা লাগানো নেই ।নিজে গিয়ে দুই হাত দিয়ে টান দিল। ভেতরের দরজা  ছিল দরজাটায় গিয়ে নক করল। দরজা খুলে গেল 'ব্যাপারটা কি?'
 আশ্চর্য হয়ে  রে খা  ঘরে ঢুকে দেখল  আলো জ্বলছে ,কথার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ।কারা এসেছে? সন্ধিগ্ধ চিত্তে কাকিমা কাকুরা এসেছে?' 
মনের ভেতরে একটা আলাদা উৎসাহ, উদ্দীপনা যেন কাজ করছে। যাক তাহলে তো ভালোই
 হলো ।হয়তো আমাকে সারপ্রাইজ দেবে ,সে জন্য ভাবতে ভাবতে নিজের ঘরের দিকে গেল।
ও বাবা ঘরে গিয়ে উঁকি মারতেই যেন ভূত দেখার মত দেখল । তাছাড়া কারেন্ট লাগলে যেমন শক খেয়ে যায় ,ঠিক এক ঝটকায় নিজেকে যেন সামলানোর চেষ্টা করল।বুকের ভেতরে যেন হঠাৎ করেই একটা ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল।' কাকে দেখছে?'ও বাবা ননদও  আছে?
শাশুড়ি মা ,ননদ ফুল ফ্যামিলি নিয়ে এসে উপস্থিত।'
রেখা এ কতগুলো মনের ভেতরে রাখল প্রকাশ করলে কি আর রক্ষে আছে?
রেখা তখন ব্যাগটা নামিয়ে শাশুড়ি মাকে প্রণাম করতে গেল।
শাশুড়ি মা দূর থেকেই বললেন 'থাক বাবা আর প্রণাম করতে হবে না। এমনিতে তো একটা খোঁজখবরও নাও না। এখন আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না।'
রেখা কোন কথা বলল না। চুপচাপ থাকলো তারপর ননদকে প্রণাম করতে গেল ননদ পা  সরিয়ে নিল ।প্র নাম নেব তুমি ভাবলে কি
 করে ?তোমার জন্যই আজকে এই অবস্থা।
আমার মাকে অন্য জায়গায় থাকতে হয় ।তোমার লজ্জা করে না।."
রেখা খুব মনের ভেতর কষ্ট পেল কিন্তু কিছু বললো না ।তখন রেখা বেরিয়ে আসছে। মা কিন্তু এই ঘরেই থাকবে ,কথাটা মাথায় রেখো।
রেখা কিছু বললো না। সোজা চলে আসলো আর মনে মনে ভাবল যে ঘরে মনের মত করে সাজিয়েছে সেই ঘরে আজ তার অস্তিত্ব নেই আর যে কি দেখতে হবে কে জানে থাক যদি ওই ঘরেই তিনি ভাল থাকেন তাই থাকুন।
রেখা কোন কথা না বলে মনের কষ্টটাকে চেপে রেখে মিলিদllll ওদেরকে আদর করে কয়েকটা বিস্কিট রেখা এবার গেল ওয়াশরুমে ফ্রেস হতে।
বাথরুমের জলের কল চালিয়ে দিয়ে রেখা অনেকক্ষণ ধরে স্নান করল মাথাটা যেন কেমন অদ্ভুত ভাবে গরম হয়ে গেছে। কেন গরম হলো প্রেসার বাড়ে নি তো ? এসব কথা মনের ভেতরে তোলপাড় করছে। সেজন্য ভাবতে-ভাবতে রেখা ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে এলো কিন্তু তার তো সমস্ত জামাকাপড় তার ওয়ারড্রব এর মধ্যে
 রয়েছে । বাইরে কিছুটা আছে । তার থেকে একটা পড়ে নেবে মনে মনে ভাবল।
রেখা বসার ঘরে এসে  ড্রেস চেঞ্জ করে ঠাকুর ঘরের দিকে গেল। ঠাকুর ঘরের দিকে যাবার সময় শাশুড়ি মা বললেন'
' আর তোমাকে ঠাকুর ঘরে ঢুকতে হবে
 না ।আজকের দিনটা করে নাও। কাল থেকে আমি ঠাকুরঘরের দায়িত্ব নেব।'
রেখা এখনো কিছু বলল না। শুধু ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছে ।ধৈর্য কতটা থাকবে। ধৈর্যের বাঁধ একদিন ভাঙবে। চলন্ত নদীর স্রোতকে যদি বাঁধ দিয়ে তার গতিবেগকে রুদ্ধ করা হয় , বাঁধকে ইট-সিমেন্টের সুরকি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়, তার স্বাভাবিক গতিতে রুদ্ধ করলে সে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা কেউ চিন্তাও করতে পারে না। 
রেখা মনে মনে ভাবছে তার ধৈর্যের বাঁধ ও কি এভাবেই ভেঙ্গে গিয়ে একদিন সে তছনছ করে দেবে 
ভাবতে ভাবতে ঠাকুর ঘরের দিকে এগোয়। রাধা মাধব কে খুব সুন্দর করে সাজায়, আরতি করে 
ভোগ নিবেদন করে ।আর মনে মনে শুধু বলে 'ঠাকুর ধৈর্য শক্তি দাও , সহনশীলতা দাও। সকল প্রতিবন্ধকতাকে যেন জয় করতে পারি।'
শাঁখ বাজিয়ে পূজা সমাপ্ত করে ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।
এবার রেখা রান্নাঘরের দিকে যায় চা বানাতে। চা বানিয়ে কিছু ফুলকপির পাকোড়া বানাল। তারপর প্লেটে করে সাজিয়ে শাশুড়ি মার ঘরে যায় দিতে।
শাশুড়ি মা বললেন 'এগুলো বানিয়েছে? তা বেশ করেছো ।এসে তো কিছু সেরকম খাওয়া হয়নি।
ননদ বলল ফুলকপির পাকোড়া বানালে? অন্য কিছু বানালে হ'তো এত গ্যাস ফর্ম করে যাবে।'
রেখা বললো 'আসলে ঘরে তো সেরকম কিছু ছিল না আপনারা আসবেন সেটা তো জানা ছিল না।'
সে কি আমরা আসলে বাজার হবে আমরা না আসলে বাজার হবে না তোমরা কি উপোস করবে নাকি?
রেখা বলল " না ,আমি ঠিক সেইভাবে বলিনি।'
কথা বলতে বলতে ইতিমধ্যে শাশুড়ি মার পকরা খাওয়া হয়ে গেছে।
তিনি বললেন আরেকখানা দেখ ভালো হয়েছে কিচ্ছু হবে না।
রেখা অত্যন্ত আশান্বিত হয়ে সেই কথার পরিপ্রেক্ষিতে ঘাড় নাড়ল। '
তুমি এসব খাচ্ছ মা?
হ্যাঁরে তুইও খা দেখ ভালো হয়েছে।
রেখা কোন কথা না বাড়িয়ে চলে আসে তারপর মনোজের ঘরে দিতে যায়।
মনোজ বলল বাবা আজকে চায়ের সাথে টা টা তো বেশ ভালো বানিয়েছো।
রহস্যটা কি?
রেখার কোন কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে করছিল না।
কি হল কথা বলছো না?
কি বলবো?
সে কি কোন কথা নেই?'
কথা হারিয়ে যাচ্ছে।
ও তাই বুঝি?
মা আসবে তো আগে বললে না?
ও বুঝেছি যেন তোমার কথা হারিয়ে গেছে।
মা আসবে কিনা সেতু কত আগে বলেছিল আসবে কবে আসবে সেটা আমাকেও জানায় নি হঠাৎ করেই তো চলে এসেছে।
রেখার মনের ভেতরে যে পাথরটা চাপানো ছিল অভিমান ক্ষোভ সেটা যেন দ্রুত হালকা হতে শুরু করল।
কামনারা কি আমাদের ঘরেই থাকবেন?
হ্যাঁ সেরকমই তো মা বলল কন বাথরুমটা একটু কাছে হবে।
রেখা জানে যে ঘরের এখানে থাকবে সে ঘর থেকেও বাথরুমের দূরত্ব বেশি নয়।
তাহলেও সে মুখে কিছু বলল না কারণ এটা একটা সেনসেটিভ এস এটা নিয়ে কিছু বলতে গেলে উল্টে রেখা কি সবাই দোষারোপ করবে।
তাই এড়িয়ে গেলে।
রাত্রে কি রান্না করবো?
মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো না?
মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে আমি রান্না করলে খাবেন তো?
না খেতে ইচ্ছে করলে  কিছু করার নেই।
আমার হয়েছে জ্বালা এই বলেই পেতে পারে দিকে মনোনিবেশ করল।
রেখা কি বলবে।
 রেখা সরাসরি শাশুড়ি মার ঘরে গিয়ে বলল কি রান্না করবো বলুন তো?
ওমা তুমি কি রান্না করবে তা আমি কি করে বলবো?
না আসলে শুনে নিলে ভালো হতো।
আসলে ঘরেবাজার তো সেরকম নেই আপনারা আসবেন আজকে সেটাও জানা ছিল না।
ডাল ঘরে আছে তো?
রেখা ঘাড় নাড়লো।
তাহলে মিক্সড সবজি ডাল করো।
আর কি বাজার আছে একটু বল?
আলু বেগুন ব্রকলি।
ঠিক আছে এক কাজ করো ব্রকলি আর আলুভাজা করো। বেগুন পোড়া করো।
রেখা ঘাড় নেড়ে চলে গেল।
রেখার মনটা আনন্দে নেচে উঠল ।কিছুক্ষণ আগেও মনটায় যে আঁধার ঘনিয়ে এসেছিল ভেবেছিল কখনো কি সেই আঁধার কাটবে?বিষন্নতায় ভরা ছিল তার মনের ভেতরটা। রেখা সব সময় একটা বিয়ের আগে কল্পনা করত শ্বশুর -শাশুড়ি মাকে নিয়ে সুখের সংসার করবে। কিন্তু সে আশা তার পূর্ণ হয়নি শ্বশুর মশাই তার বিয়ে হওয়ার আগেই পরলোকগমন 
করেছেন ।আর শাশুড়ি মা ... না থাক, আজকে আর সেসব কথা সে ভাবতে চায় না ।যদি তার মনটা বদলে গিয়ে থাকে। তাহলে তো সোনায় সোহাগা ।সে রান্না ঘরের দিকে এগোয়  রান্নার জোগাড় করবে বলে। যে ক্লান্তি গ্রাস তাকে গ্রাস করেছিল সেটা অনেকটা কেটে গেছে।  দুচোখে শীতের বাহারি ডাকটিকিট তার কল্পনার রং হৃদয় ছুঁয়ে গেছিল। আলসে রোদের পিয়ন এসেযে খাম  ধরিয়ে দিয়েছিল ,রেখা তা মনের কোণে সযত্নে সেগুলোকে রেখে দিয়ে ।এবার অন্য খামের চিঠি পড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১২২




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১২২
তোর উঠোনের  বিশাল অংক, কষতে বারণ

মমতা রায় চৌধুরী




সেদিন ছিল নীল আকাশের গায় কোদালিয়া মেঘ। পড়ন্ত বিকেলের সূর্য যেন তার চলে চাইছে অন্য দেশে। যাবার তাড়া অন্য দেশে মুখ দেখাতে ।তার দেরি হয়ে যাবে যেন মনে হচ্ছিল। তার যাওয়ার তাড়া আছে। এদেশে তখন নামবে আঁধার । আজ রেখার মনেও যে একটু অন্ধকারের ছোঁয়া। বিসর্জনের শেষে মাকে বিদায় জানিয়ে
 ক্লান্ত ,অবসন্ন মন খুঁজে চলেএকটু ভালোবাসা একটু বিশ্বাস ,একটু ভরসার হাত,আশ্রয়। ভাঙ্গা মন নিয়ে ট্রেনে চেপে বসে। কয়েক বছর আগের দিনটা কত ভালো কেটেছে, বার বার মনে পড়ছে, স্বপ্নীল এর সঙ্গে কাটানো স্বর্ণালী মুহূর্ত। তাদের সম্পর্ক কখনো ক্লেদাক্ত তা ছিল না, ছিলনা কোন চাওয়া পাওয়া। জানতো যে চাওয়া পাওয়ার মধ্যে দিয়ে পরিপূর্ণতা দুটি নর-নারীর। সেই চাওয়া-পাওয়া কখনোই তারা পূর্ণতা দিতে পারবে না ।তবুও কেমন একটা আকর্ষণ চুম্বকের মত যেন তাদের আটকে রেখেছিল। সেদিনের সেই বিকেলে বাইকে চেপে কখনো বা তার কবিতা শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল রেখা ।কখনো বা বাইক থামিয়ে বিস্তীর্ণ সবুজ ধানের ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে ভুলে গেছে সময় এর হিসেব। স্বপ্নীল
রেখাকে শুধুমাত্র একবার হাত ছুঁয়ে দেখেছিল রেখা চমকে উঠেছিল। রেখার ভেতরে রক্ত ছলকে উঠতে চাইছিল। স্বপ্নীলের ও হয়তো বা তাই ।কিন্তু তার মাত্রা ছাড়িয়ে যায় নি ।পারদ একটা নির্দিষ্ট হারে উচ্চতা বাড়ালেও থেমে গেছে দুজনে। শুধু হাতে হাত রেখে গেছে তারা ।আর অনবরত তাদের প্রতিটি শ্বাস-পরছিল ঘনঘন। 
স্বপ্নীল আবেগঘন ভাষায় বলেছিল 
' কোনদিনও কি তাকে পরিপূর্ণ ভাবে ছুঁতে পারবে না ।'
রেখা শুধু তাকিয়ে ছিল স্বপ্নীলের দিকে। সেই তাকানোতে ছিল পরম চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, আর না পাওয়ার একটা কি বেদনা ।
সেটা সে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না ।রেখার চোখে জল ।স্বপ্নীল তার হাত পেতে তার চোখের জলটা তুলে ধরেছিল আর বলেছিল 
'এটা মূল্যবান এভাবে নষ্ট ক'রো না। '
কথা বলতে বলতে স্বপ্নীলের চোখ জলে ভিজে উঠেছিল ।
'একটা নারীর মন তাকে এতোটা আকর্ষণ করেছে কিন্তু সেই নারীর হৃদয়ের স্রোতে ভেসে যেতে পারছে না। তাকে ছুঁতে পারছে না।'
 দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছিল স্বপ্নীল ।
'পুনর্জন্মে বিশ্বাস করো তুমি?'
রেখা একটু মলিন হেসে বলেছিল
' যদি সত্যিই পুনর্জন্ম থাকে…।'
কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে স্বপ্নিল বলেছিল 'তাহলে সেই জন্মে সব আশা পূর্ণ হবে।
আমি না হয় এই জীবনে থেকে গেলাম তোমার কাব্যের বিরহের নায়ক হয়েই।'
'কেন এভাবে বলছ ?তোমার জীবনেও কোন নারী আসবে যে তোমাকে ভরিয়ে দেবে অন্য সুখ, অন্য স্বাচ্ছন্দে ,অন্য ভালোবাসায় ।তখন কি তুমি আর রেখাকে মনে করতে পারবে?'
স্বপ্নীল হেসে রেখার হাত দুটোকে ধরে বলেছিলো 'তোমার কি মনে হয় আমি পারবো?'
রেখা বলেছিল' জীবনে অবশ্যই দরকার আছে সবকিছু র।'
স্বপ্নীল বলেছিল 'আমি জানি প্রতিটা দেহের ভেতরে একটা খিদে থাকে। সেই শারীরিক চাহিদা মেটানোর দরকার। সবকিছুরই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকে।'
রেখা বলছে 'সে জন্যই তো বলছি।'
'কিন্তু আমার মনে হয় আমি পারবো না।
নারী মানে কি বলতো তার তো সবকিছুই আমার জানা। হ্যাঁ ,যে টুকু অজানা ।শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা টুকুনি বৃদ্ধির জন্য কি পেতে হবে?'
আজ তুমি যা বলছ দেখবে যখন তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাবে তখন কিন্তু এটা মনে হবে না।'
স্বপ্নীল আবেগ কম্পিত কন্ঠে বলে যাচ্ছে
'জানো মাঝে মাঝে কি মনে হয় যখন তোমার গলাটা শুনতে পাই না ।তখন মনে হয় আমি তোমার থেকে শত শত আলোকবর্ষ দূরে। শুধুমাত্র একটা ফোন কলের জন্য আমি ওয়েট 
করি ।শুধুমাত্র একটু কথা ,তোমার আওয়াজ শোনার জন্য ...তুমি কি উপলব্ধি করতে পারো?'
রেখা হেসে বলে 'জানো তো স্বপ্নীল একেতে তুমি আমার থেকে বয়সে ছোট। তোমার থেকে আমি অনেকটাই বড়। তুমি কোন মোহতে  পড়ে নেই
 তো ?মাঝে মাঝে. আমার বড্ড ভয় হয়।'
স্বপ্নীল বলেছিল' আমার কাব্যের মূল প্রেরণা তুমি
তোমাকে দেখেই আমার না ভেতরে একটা অনুপ্রেরণা পায় ।লেখার রসদ খুঁজে পাই। তুমি আমার কাব্যের মানসপ্রতিমা ।তোমাকে ঘিরেই আমি অবয়ব দি ই।
কিন্তু আমার আগে কি তোমার কোন মেয়েকে ভালো লাগে নি?'
স্বপ্নীল একটু হেসে বলেছিল' হ্যাঁ । মা কে।'
রেখা একটু অবাক হয়ে গেছিল।
কিন্তু জানিনা সেই বসন্তের দিনে তোমার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ ।সেদিনের তোমাকে যে দেখেছিলাম ,সেদিনই তোমাকে প্রথম বসন্তের রঙে রাঙিয়ে দিলাম তোমার হৃদয় ।তখন আমি ছুঁতে পারিনি কিন্তু তুমি আমার হৃদয় কে স্পর্শ করে গেছিলে।

স্বপ্নীল গুন গুন করে গান গাইতে থাকলো 'কতবার তোর বাড়ি গিয়ে ফিরে ফিরে এলাম আমার মতে তোর মতোন কেউ নেই 
কতবার তোর জানলা দিয়ে গলে হলুদ খাম
আমার মতে তোর মতন কেউ নেই।
তোর বাড়ির পথে যুক্তির সৈন্য
যতটা লুকিয়েছিল কবিতায়
তারও বেশি ধরা পড়ে যায়।
তোর উঠান জুড়ে বিশাল অংক
কষতে বারণ ছিল তাই
কিছুই বোঝা গেল না প্রায়।
কখনো চটি জামা ছেড়ে এসে রাস্তায় দাড়ায়।
... আমার মতে তোর মতন কেউ নেই।"
কি অসাধারণ গাইল রেখা মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়েছিল স্বপ্নীলের দিকে। ক্ষণে ক্ষণে শুধু বিদ্যুত খেলে যাচ্ছিলো শরীরের প্রতিটা রন্ধ্রে। মনে হয়েছিল সত্যি স্বপ্নীল কে  যদি ছুঁয়ে দেখত এত কাছে থেকেও কোথায় যেন একটা কাঁটাতারের বাধা নিজেকে সংযত করে রেখেছে, রাখতে হয়েছে।
চায়নি সে কাঁটাতারের বাধাটাকে পেরিয়ে আসতে মনের ভেতরেই রেখে দিয়েছে ।তার আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো কখনো চেয়েছিল মনে মনে হয় তো একবার সবুজ ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে দুজনে পাশাপাশি চোখে চোখ হাতে হাত শুধু এইটুকু আশ।
স্বপ্নীল গান থামিয়ে রেখার চোখের সামনে হাত নেড়ে জানতে চেয়েছে কি হয়েছে কি দেখছ তুমি?
রেখা রেখা ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেছিল মাথা নিচু করে নিয়েছিল স্বপ্নীল একটু হেসে ছিল আর বলেছিল আমি জানি তুমি দোলাচলতায়, টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছ।
তোমার ভিতরেও পানকৌড়ির মত করে মাথা তুলে স্বপ্নগুলো ভালোবাসার ঘ্রাণ গুলো পেতে চায় হৃদয়ের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাকে অনুভব করতে। 
রেখা বলে কেন তুমি কি আমাকে রেখে তাই বুঝছো?
স্বপ্নীল গভীর মনোযোগের সঙ্গে রেখার দিকে তাকিয়ে বলে তোমার মনের আর মুখের ভেতরের অভিব্যক্তিগুলো জমিন পড়তে পেরে গেছি আঙ্গুল দিয়ে রেখার দিকে তাকিয়ে তার হৃদয়ের দিকে আঙুলটা তাক করে রেখে বলেছিল ওখানে তোমাকে আমি ছুঁয়ে ফেলেছি তুমি যতই অস্বীকার করো না কেন ?একদিন তুমি বুঝতে পারবে আজ তুমি আমার ডাকে সাড়া দিলে না বেশ 
ভালো ।তোমার যতটুকু সঙ্গ ,যতটুকু কথা ,হৃদয় স্পর্শ করেছে এইটুকুনি আমি বেঁচে 
থাকব ।জানিনা কোনদিন তুমি আমার থেকে হারিয়ে যাবে কিনা কিন্তু আমি তোমাকে সারা পৃথিবী জুড়ে খুঁজে বের করবই।
এর মধ্যে কয়েকজন প্যাসেঞ্জার উঠে দাঁড়াতেও দিদি আমার ব্যাগটা দিন আমার ব্যাগটা দিন না।স্টেশন এসে গেছে কল্যাণী স্টেশন ,কল্যাণী স্টেশন এই ছোট বাচ্চাটাকে টেনে তুলল ঘুমিয়ে পড়েছে ।এর ভেতরে নিয়ে আর পারা যায় না এমন সময় হঠাৎই তার ভাবনায় ছন্দপতন ঘটে সে চলে গেছিল ।নস্টালজিক হয়ে গেছিল সে যেন সোদা মাটির গন্ধ পেয়েছে সেই গন্ধটুকু মনেপ্রাণে নিয়ে ধীরে ধীরে সে এগিয়ে আসে ট্রেন থেকে নেমে পড়েন যখন সে হাঁটছে তখনো যেন সে একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আজ দুটো কথা বলার জন্য একটা ভালো মনের সঙ্গী পাবার জন্য মনের ভেতরে কতইনা আকুলি-বিকুলি।
স্বপ্নীল যখন কার চোখের তারা বিন্দুতে চোখ রেখে বলেছিল কিছু বলবে বলো না ,চল না মনের ভেলায় দুজনা ডানা মেলে উড়ে যাই নীল আকাশ,
 নীল আকাশ।
রেখার দু'চোখ জলে ভিজে ওঠে। অটোআলা সামনে এসে দাঁড়ায় 'দিদি ,কোথায় যাচ্ছেন হনহন করে হেঁটে এইতো এখানে দাঁড়িয়ে আসুন বসুন।
রেখা একটু মুলান হেসে বলেছিল 'হ্যাঁ ভাই চলো।'

শামীমা আহমেদ  এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৬৬




ধারাবাহিক উপন্যাস 

শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৬৬)
শামীমা আহমেদ 

রাহাত বললো,খালা বিয়ের সময় নোমান সাহেবের যে ছবি দেখিয়েছেন  সেটি তার ইয়াং কালের।যেটা দেখে আমরা রাজী হয়েছি। এটাতো ঠিক হয়নি। খালার কাছে যেন রাহাতের কোন অভিযোগই টিকছে না।খালার তৎক্ষণাৎ উত্তর,
বয়স হইছে তো কি হইছে?  তার কি হাতে পায়ে কোন ডিফেক্ট আছে? পুরুষ মানুষের আবার বয়স কি? সোনার আংটি বাকাও দামী।  সত্তর বছর বয়সেও পুরুষ মানুষ বিয়া করে।তার বেশুমার টাকা।পরে সবইতো শায়লার হইবো। শুধু তার সন্তান দুইটার জন্য তোমাদের কাছে নিচু হইয়া আছে। শায়লার কাছে বাচ্চা দুইটা মা করে নিতে চাইতেছে।মেয়েরা মায়ের জাত।সব সন্তানরেই তারা  আপন করতে পারবো। এবার রাহাত দৃঢ় গলায় বলো,খালা আমরা আইনি সিদ্ধান্তে যাবো। আপা ডিভোর্স নিবে। আমরা শীঘ্রই ডিভোর্স লেটার পাঠাবো।
এই কথা শুনে খালা যেন আৎকে উঠলেন! কি কইলা,আইন আদালত করবা? তোমরা জানো নোমান বাবাজি কত টাকার মালিক? তার সাথে কোট কাচারি লড়ার মত তোমগো কি টাকা আছে? তাছাড়া বাবাজি মাথা ঠান্ডা কইরা শুনো, এইসব করলে মানুষ তোমাদেরই মন্দ কইবো।তাছাড়া  তুমি এখন বড় হইছো ভালো চাকরি বাকরি করো।দুইদিন পর বিয়া শাদি  করবা, নিযের সংসার করবা না বইনের মামলা মোকদ্দমা করবা? নায়লার শ্বশুর বাড়ি , তোমার নতুন  শ্বশুর বাড়িতে কি সম্মান থাকবো? তাছাড়া শায়লার বয়স হইয়া যাইতাছে এইটা কি বুঝ? ছোট বইনের বাচ্চা হইয়া যাইতাছে? মানি,তোমগো পড়াশুনা করাইতে  গিয়া আজ তার এত বয়স হইয়া গেছে আর এই লাইগাইতো টাকা পয়সা আলা ছেলে দেইখা বিয়া দিয়ে দিলাম।বিদেশে থাকবো।কত বড় ভাগ্য!" খালার চোখ দুটো কপালে উঠে গেলো! সব কথাই  ঠিকই বলছেন খালা।
একে একে খালার সব কথাই রাহাত শুনলো। খালাতো কিছু ভুল বলেন নি।শিহাব ভাইয়ার সাথে সম্পর্কটা যদি আর কিছুদিন আগে হতো তবে হয়তো এই বিয়েটা  হতোনা।রাহাত বুঝতে পারছে না।বরাবরই খালা তাদের ভালো চেয়েছেন।সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।তার কথাগলো তো ফেলনা নয়?
একটু বিরতি নিয়ে খালা আবার বলা শুরু করলেন,এবার যেন সব আক্রোশ শিহাবের উপর গিয়ে পড়লো।
দেখো রাহাত বাবাজি,আর ঐ ছেলেটাইবা কেমন? বিয়া হওয়া একটা মাইয়ারে নিয়া এত সব করতাছে।আমরা তো একটা সমাজে থাকি নাকি? ভাল কইরা তার খোঁজ খবর করো।তার নিশ্চয়ই কোন সমস্যা  আছে নয়তো সবকিছু জাইনাও কেমনে সে শায়লার পিছে ঘুরে।এই সব ছেলেরা দুই নম্বর,দেখো গা আরেক জাগায় আরেকটা বউ আছে।এত বয়স হইছে বিয়া কি আর না করছে? তোমরা তার থিকা ফিরা আসো।হয়তো দেখবা এই রকম চরিত্রের জন্যউ আগের বউ ছাইড়া গেছে।এখন তোমগো বদনাম করতে আসছে।পুরুষ মাইনেস কি কিছু হইবো? কলংক হইবো তোমার বইনের। আর এইখান দিয়ে ঘুরঘুর করলে পাড়ার পুলাপান কিন্তু টের পাইলে হাড্ডি মাংস এক করবো।এলাকায় আমগো একটা মান সম্মান আছে।ভালো কইরা আমার কথাগিলান ভাই বইনে ভাবো।তোমার মা বাসায় নাই,তাই সব খোলামেলা বইলা গেলাম।রাহাত একেবারে চুপ হয়ে রইল। খালার যেন শিহাবকে নিয়ে আরো অনেক বলার আছে, বলে চললো,আরে এইসব পোলারা যায়গায় যায়গায় গিয়া ফস্টিন্সটি কইরা বেড়ায়। দেখো গিয়া নিজের হয়তো সন্তানও আছে। অন্য এলাকার আইসা  ভালো পরিবারের সম্মান হানি করে?দেখো গা এক লগে কয়জন মাইয়ারে ঘুরায়। এরা আজকাল রাত জাইগা জাইগা ঘরের বউঝিগো ডিস্টার্ব করে।  তোমার খালু দুইদিনে এর খোজ খবর সব আইনা দিতে পারে।কিন্তু তোমরা মাইন্ড করবা তাই আমরা চুপচাপ আছি। এরা আবার  নিজেরে অবিবাহিত বইলা পরিচয় দেয়।আরেকদিন যদি এই পোলারে আমি আমগো বাসার কাছে দেখি আমি কিন্তু পুলিশে খবর দিমু।থানার ওসি আমার খালাতো ভাই। তোমগো দিকে চাইয়া আমি এখনো কিছু কই নাই।
ঘরের ভেতরে শায়লা রুহি খালার প্রতিটি কথাই শুনছে আর  সাথে রাহাতের প্রতিবাদ করার চেষ্টা বারবার যে খালার কাছে টিকছে না তাও বুঝতে পারছে।শায়লা জানেনা এখন সে কি করবে?  খালার কথা রাহাতের চোখ খুলে দিলো। যেখানে আবেগ, ভালবাসা  সত্য মিথায়, বিশ্বাস অবিশ্বাসের কোন মূল্য নেই।শায়লার জন্য রাহাতের ভেতরটা কেঁদে উঠলো।আপুর জন্য সে কিছুই করতে পারছে না। আসলে সমালোচকরাই ভুল ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেয়।রুহি খালার বক্তব্য শেষে  রাহাত যেন তার কাছে সারেন্ডার করলো।আড়াল থেকে শায়লা তা বুঝে নিলো, খালার কথায় রাহাত পুরোপুরি  কনভিন্সভ হয়ে গেছে।তাহলে এখন যা করার তার নিজেরই করতে হবে।

চলবে...

কবি সৈয়দ আইরিন পারভীন এর মুক্তগদ্য






নারী তুমি জাগ্রত হও
সৈয়দ আইরিন পারভীন

কেয়ার কর্তৃক পরিচালিত নারীর ক্ষমতায়ন প্রজেক্টে একজন ট্রেনিং অফিসার হিসেবে বেশ কয়েক বছর আমি কাজ করেছিলাম। আমাদের কাজের যে কর্মসূচি ছিল তার মধ্যে ৬২ টা মডিউল ছিল  যার মাধ্যমে কিভাবে একজন নারী তার কাজে-কর্মে শিক্ষায়-দীক্ষায় তার জীবনাচরণ হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাবলম্বী। আর এর ফলশ্রুতিতে একজন নারী হয়ে উঠবে ক্ষমতায়িত।
আসলেই কি নারীরা ক্ষমতায়িত!
বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই নারী। দেশের সমগ্র নারী সমাজকে সাথে নিয়েই আমাদের উন্নয়নের পথে হাঁটতে হবে।২০৪১ সালের শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত আয়ের দেশে যেতে হলে আমাদেরকে নারী-পুরুষ সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
অসহায় দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত কিংবা কম সুবিধাপ্রাপ্ত নারীসহ সকল নারীদের তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং এ বিষয়ক সেবা প্রাপ্ত নিঃসন্দেহে নারীর ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করবে।
তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ "তথ্য আপা"ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন"শীর্ষক একটি প্রকল্প গৃহীত হয়। বিশ্বায়নের যুগে কোন দেশকে এগিয়ে যেতে হলে, কোন জাতিকে উন্নত করতে হলে নারীদের ক্ষমতায়নের যেমন বিকল্প নেই ,তেমনি তথ্যপ্রযুক্তির মত গুরুত্বপূর্ণ খাতে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণের কোন বিকল্প নেই। আধুনিক যুগে তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত।
 সমগ্র বিশ্বের মতো বাংলাদেশ সরকারও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীদের সম্পৃক্ত বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
সরকারের এত ফলপ্রসূ দৃষ্টিভঙ্গির পরেও কি দেশের নারীরা ক্ষমতায়িত হতে পারছে?
আজও অনেক পরিবারে নারীরা শিক্ষিত হলেও চাকুরি করতে পারে না। যদি সংসারের টানাপোড়নের ভিত্তিতে কারো চাকুরি করতে হয় তবে তাকে দৈনিক ১৮ ঘন্টা  সংসারের সব দায়িত্ব ঘানির মতো টেনে নিয়ে যেতে হয়। আর সংসারের সচ্ছলতা থাকলে  দুবেলা ভাত এর বিনিময়ে অবৈতনিক কর্মচারী হিসেবে জীবন যাপন করতে হয়। আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে লিখা এমনও দেখেছি শুধুমাত্র চাকুরি করতে চেয়েছে বিধায় একটি সন্তান নিয়ে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা ডিভোর্স হয়েছে।তাই  বলতে চাই নারী শুধু নারী তার আবার ক্ষমতা!
প্রতিটি সংসার এমন একটা ক্ষেত্র যা কিনা ইন্দুরের গ্যারাকল এর মত। সংসারের প্রয়োজন হলে আপনি চাকুরি করতে পারবেন সবকিছু করতে পারবেন কিন্তু আপনার ক্যারিয়ারের প্রয়োজনে নয়।

কবি নিধি আফরিন এর কবিতা




মানুষের স্বরূপ
নিধি আফরিন

জলেই গর্ভপাত হয়েছিলো ফুলের,
আগুনে ঝলসে গিয়েছিলো গাছ,
পাখিরা অন্য আশ্রয় ভালোবেসে,
উড়ে গেছে বহুদূর... 

শিকারী ভালোবাসে পাখি, পাখি ভালোবাসে গাছ, গাছ ভালোবাসে মানুুষ, মানুষ ভালোবাসে না কিছুই....

সময়ের তারাহুড়োয় মুখস্থ সূত্র ভুল হয়ে জীবনের অঙ্ক মিলে না কখনো, 
মরার পরে উপলব্ধি এসেছিলো আমি জন্মাইনি তখনো....

এভাবেই বর্ণ গুলো সেজে থাকে একাধিক প্রয়োজনে,
মানুষ মূলত কাঠ অক্সিজেন তা জানে।

কবি দেবব্রত সরকারের কবিতা



কেনো অন্ধকার হই
দেবব্রত সরকার 


শব্দরা উঠেছিল নাট্যচর্চার সাথে দেখা করতে
আমি মঞ্চের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছি
হঠাৎই নিখোঁজ পৃথিবীর আলো 
সিটে বসা দর্শক চিৎকার করে উঠল 
একি হলো তাহলে কি পৃথিবীতে আর আলো আসবে না কোন দিন ।
প্রশ্ন থেকে গেল একা মঞ্চের মধ্যিখানে।
নীরব প্রার্থনা করছি আমি তোমাকে ভালোবাসি বলে
ভাবছি কোথায় আছো 
ঠিক আছো তো 
এই নিখোঁজ পৃথিবীর আলো তাকে স্পর্শ করেনিতো 
চেয়ে দেখি অন্ধকার
প্রেম নেমে এলো 
ডোরাকাটা আমি
আলো আলো আলোচনা
শুনতে শুনতে 
আমি ধীরে ধীরে ধীরে ধীরে 
অন্ধকার হয়ে গেলাম ।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৬৫





ধারাবাহিক উপন্যাস

শায়লা শিহাব কথন 

অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৬৫)
শামীমা আহমেদ 

ফোন কলে শিহাবের আসার কথা শুনে শায়লা এক ঝটকায় বিছানায় উঠে বসলো।দেয়াল ঘড়িতে চোখ নিয়ে দেখল সকাল সাতটা বাজতে এখনো  আরো দশ মিনিট বাকী। অর্থাৎ ছয়টা পঞ্চাশ বাজছে। তবে কি শিহাব রাতে ঘুমায়নি? কি ছেলেমানুষী করছে! নিশ্চয়ই সবকিছু নিয়ে টেনশন করছে। শায়লা বুঝতে পারছে না কেন শিহাব এত অধীর হচ্ছে? আমিতো কালই চলে যাচ্ছি না।অনেক করেইতো কাল বুঝালাম তবুও যেন তার ভয় কাটছে না।
শায়লার নিজের দিকে এতক্ষন কোন খেয়ালই ছিল না।আচমকা ঘুম ভাঙলে নিজের অবস্থানটা বুঝতে একটু সময় লেগে যায়। শায়লারও ঠিক তেমনটিই হচ্ছে।সে এখন কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। খুব দ্রুত বিছানা থেকে নেমে আয়নায় নিজেকে দেখে নিলো।চুলগুলো বেশ এলোমেলো হয়ে আছে।হাত বুলিয়ে তা একটু গুছিয়ে নিলো। রাতে ওড়নাটা যে কোথায় রেখেছে খুঁজে পাচ্ছে না।তাড়ার সময় ঠিক এমনটিই হয়।তাছাড়া  কাল সারাদিন শেষে রাতটা তার খুবই এলোমেলো কেটেছে। ঘরের এদিক ওদিক তাকিয়ে বিছানায় ওড়নাটা দেখতে পেলো।কোন মতে তা গায়ে জড়িয়ে হাতের মুঠোয় মোবাইলটা নিয়ে শায়লা ঘরের দরজা খুললো।ছুটির দিন হওয়াতে রাহাত এখনো ঘুমিয়ে আছে।
শায়লা ডাইনিংয়ের সাথের বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই শিহাবকে দেখতে পেলো।ওদের বাসার মুখোমুখি  'স্বপ্নবাড়ি'টার সামনে বাইক দাঁড় করিয়ে শিহাব বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে।
শায়লাকে দেখতে পেয়ে শিহাবের অভিব্যক্তিতে যেন এক চাতকের দৃষ্টি!শায়লা দেখলো  শিহাব গায়ে একটা ট্র‍্যাকসুট পরা,পায়ে কেডস,একেবারে  জগিং পোশাকে। তবে কি সে মর্নি ওয়াকে বেরিয়েছিলো? কিন্তু কেন তবে আবার বাইক সাথে! কেমন অগোছালো লাগছে তাকে।শায়লা শিহাবকে সবসময় খুবই পরিপাটি পোষাকে দেখেছে।আজ এত ক্যাজুয়াল পোশাক যদিও প্রথমে চেনা যায়নি কিন্তু এর মাঝেও একটা হ্যান্ডসাম লুক ঠিকরে বেরিয়ে আসছে।যদিও চুল  উস্কোখুস্কো আর চোখ দুটো  বেশ ফুলে আছে। শায়লা বুঝতে পারলো সারারাত সে ঘুমায় নি। বেচারা ভীষণ উৎকন্ঠায় ছিল।চোখের ভাষায় যেন কিছু বলতে চাওয়া।
শায়লা কল দিলো।
দুজনে খুব হলে কয়েকগজ দুরত্বে। তবুও কথা বলতে হচ্ছে ফোন কলে।
কি ব্যাপার এত্ত সকালবেলা এভাবে?
শায়লা তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল।
কেন?  হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে? 
হ্যাঁ, আমার মনে হচ্ছিল তুমি আজই চলে যাচ্ছো।
শায়লা হেসে উঠলো, বললো পাগল।
হ্যাঁ, শায়লা আমি তোমার জন্য মনে হয় পাগলই হয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু এখন এমন করলে কি চলবে?  মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।
আমরাতো ভালই ছিলাম শায়লা। কানাডার ফোনকল আমাকে টেনশনে ফেলে দিয়েছে।
আমিতো তোমাকে বারবার আস্বস্ত করছি কেন ভরসা পাচ্ছো না?
শায়লা তুমি খুব তাড়াতাড়ি আমার বাসায় চলে আসো।বলো কবে আমি তোমাকে নিতে আসবো?চোখে দেখার দুরত্বে মোবাইলের কল্যাণে দুজনার ভালোই কথা চলছিল।কিন্তু এর মাঝে বাধ সাধলো ঐ বাড়ির দারোয়ান। তাদের মেইন গেট খুলে সে বাইরে এসে এমন অচেনা একজন লোক বাইক নিয়ে দাঁড়ানো। বিষয়টি তার মনে রহস্যের জন্ম দিয়েছে।রহস্যজট খুলতে সে শিয়াবকে দুইবার প্রদক্ষিণ করলো।শিহাব বুঝতে পারলো লোকজন জেগে গেছে এখন চলে যাওয়াটাই উত্তম। দারোয়ানকে দেখে শায়লাও নিজেকে আড়াল করে নিলো।শিহাবের বাইকের স্টার্ট শুনে মোবাইল কল কেটে দিলো। গতকাল রাতটা যতটা অস্থিরতায় কেটেছে আজ সকালটা শিহাব যেন এক অনাবিল আনন্দে ভরিয়ে দিলো। আর এর রেশ ধরে শায়লার সারাটাদিন খুব ভালোই কাটবে। শায়লা ওয়াশরুম গিয়ে ফ্রেস হয়ে সকালের নাস্তা বানানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
রাহাত আর শায়লা নাস্তা সেরে নিলো।দুজনে চায়ের কাপ হাতে ডাইনিং থেকে উঠে এলো।
শায়লা বারান্দায় চলে এলো।রাহাত ড্রইং রুমের দিকে যেতেই দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো। শায়লা অবাক হলো এত সকালে কে হতে পারে? বুয়াতো আরেকটু পরে আসে। রাহাত, কে?  জানতে চাইলে দরজার ওপাশ থেকে সাড়া এলো,তোমগো রুহি খালা।দরজা খোল।
রাহাত দ্রুতই দরজা খুলে দিলো।  রুহি খালা ভাড়াটিয়া হলেও ওদের কাছে খুব সম্মানিত।
শায়লা বুঝতে পেরেই নিজের ঘরে চলে গেলো।নিশ্চয়ই নোমান সাহেবকে নিয়ে কিছু বলতে এসেছে।

রাহাত দরজা খুলতেই খালার প্রবেশ।রাহাত তাকে ড্রইং রুমে বাসাতে চাইলে খালা রাহাতকে ইশারায়  ডাইনিংয়েই বসতে বললো।জানতে চাইল শায়লা কই?রাহাত জানালো আপু ঘরেই আছে।এরপর শুরু হলো খালার লেকচার সেশন।
দেখো বাবা রাহাত,তোমগো ভাইবোনরে আমি কিছু কথা বলতে আসছি তুমরা মন দিয়ে শুনবা।আমি তোমগো মায়ের পেটের বইন খালা না হইলেও আপন খালার মতই তোমগো ভালবাসি।পুরান ঢাকায় আমার বাপের বাড়ি  থাকা সত্বেও  উত্তরায় আসছি আমার মাইয়া দুইটারে ভালো পরিবেশে রাইখা মানুষ করতে।মাইয়া দুইটার বিয়াও দিছি চাইলে এখন আমি চইলা যাইতে পারি কিন্তু যখনই ভাবছি চইলা যামু তখুনি তোমার আব্বা মারা গেলেন।তোমরা তিন ভাই বোন স্কুল কলেজে পড়ো।তোমার মাকে আমি বড় বইনের লাহান শ্রদ্ধা  করি।তার দূর্দিনে তাই তারে ছাইড়া যাই নাই।তোমগো ভালমন্দ আমি ভাড়াটিয়া হইয়াও দেখছি।আজ তোমরা বড় হইছো।তোমগো  বিয়া শাদীও আমি দ্বায়িত্ব মনে করছি।
এবার রাহাত বুঝতে পারলো খালার আগমনের হেতু আর এত কথার কারণ।খালার কথায় এখন পুরান ঢাকা আর শুদ্ধ ভাষায় মতো মিশ্রণ চলে। তবে শুদ্ধ ভাষাই বেশি চলে।সে বলেই চললো,দেখো তোমার বইন যা শুরু করছে তাতে কিন্তু দুইদিন পর পাড়া প্রতিবেশীদের মুখ বন্ধ রাখতে পারবানা।
আজ সকালে তোমার খালু নামাজ পইড়া সকালের হাঁটা সাইরা বাসায় আসতেই দেখে 
শায়লা বারান্দায় দাঁড়ায়া আছে আর সামনের বাসায় হোন্ডা লইয়া হেই পোলাটা দাঁড়ায়া দুইজনে ফোনে কথা কইতাছে।
সক্কাল বেলা বইলা এলাকাবাসী বুঝে নাই।রাহাত কথাটিতে ভীষণ অবাক হলো! আজ সকালের ঘটনা আপুতো কিছু বললো না?
খালার মুখ চলতেই লাগলো,দেখো বাবাজি,গত দেড় বছর নোমান বাবাজি শায়লার একাউন্টে নিয়মিত স্ত্রীর ভরনপোষণের টাকা পাঠাইছে।বিয়ার সময় সে একাউন্ট নাম্বার চাইয়া নিছে। তাইলে বলো সে কি স্বামীর দায়িত্ব পালন করে নাই?তোমার বইন একদিনও তারে ফোন করে নাই।সে ফোন দিলে কথা বলে না ঠিকমত।
এইসব তো সরমের কথা তাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার আমরা ক্যান জানুম? 
রাহাত এবার যেন কিছু বলার একটা সুযোগ পেলো,বললো,খালা নোমান সাহেবের দুইটা বাচ্চা আছে বিয়ের সময় এইটা গোপন রেখেছে এটা কি ঠিক হয়েছে? 
রাহাতের কথায় খালা যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো, বাচ্চা আছে তাতে কি হইছে? সেইটা কি আর এইদেশে কেউ জানতাছে? ঐ দেশে পোলাপান একটু বড় হইলেই বাপ মা ছাইড়া যায় আর স্বামীর কাছে গেলে শায়লারও বাচ্চাকাচ্চা হইবো।তহন তারে লইয়া স্বামী সংসার করবো।খালা যেন থামতেই চাইছে না,কত কথা যেন জমে আছে আজ বলেই যাচ্ছে,শায়লার তো বয়স হইয়া যাইতাছিল।আমগো দেশে তিরিশ বছরের মাইয়াগো বিয়া দেয়া এতো সোজা না।এইসব মাইয়ারা বিয়ার বাকি থাকে যদি কোন খুঁত থাকে।
রাহাত যেন এবার একটা যুক্তি খুজে পেলো।বললো,
কিন্তু খালা আপার বয়স হয়েছিল এটা ঠিক কিন্তু আপুরতো কোন খুঁত ছিল না! খালা যেন ক্রোধে ফেটে পড়লো, 
আরে বয়স হইয়া গেছে এইটাইতো বড়  সমস্যা।তোমার ছোট বোন নায়লার বিয়ার বসয় হইয়া গেছিল তাই আর কত দেরী করবা? রাহাত শুধু এই পয়েন্টটাতেই  অনুশোচনায় ভুগে।নায়লার ভালোর জন্য আপুকে আজ এত কিছুর সন্মুখীন হইতে হচ্ছে।
কিন্তু খালা মানুষের তো পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে,,
খালা যেন আজ সব যুক্তি খন্ডন করতেই এসেছেন।সাথে সাথে বলে উঠলেন,তবে কি শায়লার এই পছন্দ আগে থাইকাই ছিল? তাহলে বলো নাই ক্যান? আর না হইলে বিয়ার পর শায়লা ক্যামন কইরা অন্য সম্পর্কে জড়ায়? দেখো বাবা রাহাত তোমার বাবা একজন সম্মানিত মানুষ ছিলেন।এখন এলাকায় মরা বাপের অসম্মান কইরো না। তাছাড়া তোমার মায়ের বয়স হইছে।তার কি এত সব মানার আর ধৈর্য্য হইবো।বেচারী স্বামীহারা হইয়া বহুত কষ্ট করছে।এতকিছুতেও রাহাত যেন কিছুতেই নোমান সাহেবকে মেনে নিতে পারছে না।রাহাত ভাবলো খালা যখন প্রসঙ্গ তুলেছেই তখন বলে ফেলি,,রাহাত বললো,

চলবে,,,