ধারাবাহিক উপন্যাস
শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত
(পর্ব ৬৬)
শামীমা আহমেদ
রাহাত বললো,খালা বিয়ের সময় নোমান সাহেবের যে ছবি দেখিয়েছেন সেটি তার ইয়াং কালের।যেটা দেখে আমরা রাজী হয়েছি। এটাতো ঠিক হয়নি। খালার কাছে যেন রাহাতের কোন অভিযোগই টিকছে না।খালার তৎক্ষণাৎ উত্তর,
বয়স হইছে তো কি হইছে? তার কি হাতে পায়ে কোন ডিফেক্ট আছে? পুরুষ মানুষের আবার বয়স কি? সোনার আংটি বাকাও দামী। সত্তর বছর বয়সেও পুরুষ মানুষ বিয়া করে।তার বেশুমার টাকা।পরে সবইতো শায়লার হইবো। শুধু তার সন্তান দুইটার জন্য তোমাদের কাছে নিচু হইয়া আছে। শায়লার কাছে বাচ্চা দুইটা মা করে নিতে চাইতেছে।মেয়েরা মায়ের জাত।সব সন্তানরেই তারা আপন করতে পারবো। এবার রাহাত দৃঢ় গলায় বলো,খালা আমরা আইনি সিদ্ধান্তে যাবো। আপা ডিভোর্স নিবে। আমরা শীঘ্রই ডিভোর্স লেটার পাঠাবো।
এই কথা শুনে খালা যেন আৎকে উঠলেন! কি কইলা,আইন আদালত করবা? তোমরা জানো নোমান বাবাজি কত টাকার মালিক? তার সাথে কোট কাচারি লড়ার মত তোমগো কি টাকা আছে? তাছাড়া বাবাজি মাথা ঠান্ডা কইরা শুনো, এইসব করলে মানুষ তোমাদেরই মন্দ কইবো।তাছাড়া তুমি এখন বড় হইছো ভালো চাকরি বাকরি করো।দুইদিন পর বিয়া শাদি করবা, নিযের সংসার করবা না বইনের মামলা মোকদ্দমা করবা? নায়লার শ্বশুর বাড়ি , তোমার নতুন শ্বশুর বাড়িতে কি সম্মান থাকবো? তাছাড়া শায়লার বয়স হইয়া যাইতাছে এইটা কি বুঝ? ছোট বইনের বাচ্চা হইয়া যাইতাছে? মানি,তোমগো পড়াশুনা করাইতে গিয়া আজ তার এত বয়স হইয়া গেছে আর এই লাইগাইতো টাকা পয়সা আলা ছেলে দেইখা বিয়া দিয়ে দিলাম।বিদেশে থাকবো।কত বড় ভাগ্য!" খালার চোখ দুটো কপালে উঠে গেলো! সব কথাই ঠিকই বলছেন খালা।
একে একে খালার সব কথাই রাহাত শুনলো। খালাতো কিছু ভুল বলেন নি।শিহাব ভাইয়ার সাথে সম্পর্কটা যদি আর কিছুদিন আগে হতো তবে হয়তো এই বিয়েটা হতোনা।রাহাত বুঝতে পারছে না।বরাবরই খালা তাদের ভালো চেয়েছেন।সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।তার কথাগলো তো ফেলনা নয়?
একটু বিরতি নিয়ে খালা আবার বলা শুরু করলেন,এবার যেন সব আক্রোশ শিহাবের উপর গিয়ে পড়লো।
দেখো রাহাত বাবাজি,আর ঐ ছেলেটাইবা কেমন? বিয়া হওয়া একটা মাইয়ারে নিয়া এত সব করতাছে।আমরা তো একটা সমাজে থাকি নাকি? ভাল কইরা তার খোঁজ খবর করো।তার নিশ্চয়ই কোন সমস্যা আছে নয়তো সবকিছু জাইনাও কেমনে সে শায়লার পিছে ঘুরে।এই সব ছেলেরা দুই নম্বর,দেখো গা আরেক জাগায় আরেকটা বউ আছে।এত বয়স হইছে বিয়া কি আর না করছে? তোমরা তার থিকা ফিরা আসো।হয়তো দেখবা এই রকম চরিত্রের জন্যউ আগের বউ ছাইড়া গেছে।এখন তোমগো বদনাম করতে আসছে।পুরুষ মাইনেস কি কিছু হইবো? কলংক হইবো তোমার বইনের। আর এইখান দিয়ে ঘুরঘুর করলে পাড়ার পুলাপান কিন্তু টের পাইলে হাড্ডি মাংস এক করবো।এলাকায় আমগো একটা মান সম্মান আছে।ভালো কইরা আমার কথাগিলান ভাই বইনে ভাবো।তোমার মা বাসায় নাই,তাই সব খোলামেলা বইলা গেলাম।রাহাত একেবারে চুপ হয়ে রইল। খালার যেন শিহাবকে নিয়ে আরো অনেক বলার আছে, বলে চললো,আরে এইসব পোলারা যায়গায় যায়গায় গিয়া ফস্টিন্সটি কইরা বেড়ায়। দেখো গিয়া নিজের হয়তো সন্তানও আছে। অন্য এলাকার আইসা ভালো পরিবারের সম্মান হানি করে?দেখো গা এক লগে কয়জন মাইয়ারে ঘুরায়। এরা আজকাল রাত জাইগা জাইগা ঘরের বউঝিগো ডিস্টার্ব করে। তোমার খালু দুইদিনে এর খোজ খবর সব আইনা দিতে পারে।কিন্তু তোমরা মাইন্ড করবা তাই আমরা চুপচাপ আছি। এরা আবার নিজেরে অবিবাহিত বইলা পরিচয় দেয়।আরেকদিন যদি এই পোলারে আমি আমগো বাসার কাছে দেখি আমি কিন্তু পুলিশে খবর দিমু।থানার ওসি আমার খালাতো ভাই। তোমগো দিকে চাইয়া আমি এখনো কিছু কই নাই।
ঘরের ভেতরে শায়লা রুহি খালার প্রতিটি কথাই শুনছে আর সাথে রাহাতের প্রতিবাদ করার চেষ্টা বারবার যে খালার কাছে টিকছে না তাও বুঝতে পারছে।শায়লা জানেনা এখন সে কি করবে? খালার কথা রাহাতের চোখ খুলে দিলো। যেখানে আবেগ, ভালবাসা সত্য মিথায়, বিশ্বাস অবিশ্বাসের কোন মূল্য নেই।শায়লার জন্য রাহাতের ভেতরটা কেঁদে উঠলো।আপুর জন্য সে কিছুই করতে পারছে না। আসলে সমালোচকরাই ভুল ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেয়।রুহি খালার বক্তব্য শেষে রাহাত যেন তার কাছে সারেন্ডার করলো।আড়াল থেকে শায়লা তা বুঝে নিলো, খালার কথায় রাহাত পুরোপুরি কনভিন্সভ হয়ে গেছে।তাহলে এখন যা করার তার নিজেরই করতে হবে।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much