০৫ মার্চ ২০২২

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৬৫





ধারাবাহিক উপন্যাস

শায়লা শিহাব কথন 

অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৬৫)
শামীমা আহমেদ 

ফোন কলে শিহাবের আসার কথা শুনে শায়লা এক ঝটকায় বিছানায় উঠে বসলো।দেয়াল ঘড়িতে চোখ নিয়ে দেখল সকাল সাতটা বাজতে এখনো  আরো দশ মিনিট বাকী। অর্থাৎ ছয়টা পঞ্চাশ বাজছে। তবে কি শিহাব রাতে ঘুমায়নি? কি ছেলেমানুষী করছে! নিশ্চয়ই সবকিছু নিয়ে টেনশন করছে। শায়লা বুঝতে পারছে না কেন শিহাব এত অধীর হচ্ছে? আমিতো কালই চলে যাচ্ছি না।অনেক করেইতো কাল বুঝালাম তবুও যেন তার ভয় কাটছে না।
শায়লার নিজের দিকে এতক্ষন কোন খেয়ালই ছিল না।আচমকা ঘুম ভাঙলে নিজের অবস্থানটা বুঝতে একটু সময় লেগে যায়। শায়লারও ঠিক তেমনটিই হচ্ছে।সে এখন কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। খুব দ্রুত বিছানা থেকে নেমে আয়নায় নিজেকে দেখে নিলো।চুলগুলো বেশ এলোমেলো হয়ে আছে।হাত বুলিয়ে তা একটু গুছিয়ে নিলো। রাতে ওড়নাটা যে কোথায় রেখেছে খুঁজে পাচ্ছে না।তাড়ার সময় ঠিক এমনটিই হয়।তাছাড়া  কাল সারাদিন শেষে রাতটা তার খুবই এলোমেলো কেটেছে। ঘরের এদিক ওদিক তাকিয়ে বিছানায় ওড়নাটা দেখতে পেলো।কোন মতে তা গায়ে জড়িয়ে হাতের মুঠোয় মোবাইলটা নিয়ে শায়লা ঘরের দরজা খুললো।ছুটির দিন হওয়াতে রাহাত এখনো ঘুমিয়ে আছে।
শায়লা ডাইনিংয়ের সাথের বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই শিহাবকে দেখতে পেলো।ওদের বাসার মুখোমুখি  'স্বপ্নবাড়ি'টার সামনে বাইক দাঁড় করিয়ে শিহাব বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে।
শায়লাকে দেখতে পেয়ে শিহাবের অভিব্যক্তিতে যেন এক চাতকের দৃষ্টি!শায়লা দেখলো  শিহাব গায়ে একটা ট্র‍্যাকসুট পরা,পায়ে কেডস,একেবারে  জগিং পোশাকে। তবে কি সে মর্নি ওয়াকে বেরিয়েছিলো? কিন্তু কেন তবে আবার বাইক সাথে! কেমন অগোছালো লাগছে তাকে।শায়লা শিহাবকে সবসময় খুবই পরিপাটি পোষাকে দেখেছে।আজ এত ক্যাজুয়াল পোশাক যদিও প্রথমে চেনা যায়নি কিন্তু এর মাঝেও একটা হ্যান্ডসাম লুক ঠিকরে বেরিয়ে আসছে।যদিও চুল  উস্কোখুস্কো আর চোখ দুটো  বেশ ফুলে আছে। শায়লা বুঝতে পারলো সারারাত সে ঘুমায় নি। বেচারা ভীষণ উৎকন্ঠায় ছিল।চোখের ভাষায় যেন কিছু বলতে চাওয়া।
শায়লা কল দিলো।
দুজনে খুব হলে কয়েকগজ দুরত্বে। তবুও কথা বলতে হচ্ছে ফোন কলে।
কি ব্যাপার এত্ত সকালবেলা এভাবে?
শায়লা তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল।
কেন?  হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে? 
হ্যাঁ, আমার মনে হচ্ছিল তুমি আজই চলে যাচ্ছো।
শায়লা হেসে উঠলো, বললো পাগল।
হ্যাঁ, শায়লা আমি তোমার জন্য মনে হয় পাগলই হয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু এখন এমন করলে কি চলবে?  মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।
আমরাতো ভালই ছিলাম শায়লা। কানাডার ফোনকল আমাকে টেনশনে ফেলে দিয়েছে।
আমিতো তোমাকে বারবার আস্বস্ত করছি কেন ভরসা পাচ্ছো না?
শায়লা তুমি খুব তাড়াতাড়ি আমার বাসায় চলে আসো।বলো কবে আমি তোমাকে নিতে আসবো?চোখে দেখার দুরত্বে মোবাইলের কল্যাণে দুজনার ভালোই কথা চলছিল।কিন্তু এর মাঝে বাধ সাধলো ঐ বাড়ির দারোয়ান। তাদের মেইন গেট খুলে সে বাইরে এসে এমন অচেনা একজন লোক বাইক নিয়ে দাঁড়ানো। বিষয়টি তার মনে রহস্যের জন্ম দিয়েছে।রহস্যজট খুলতে সে শিয়াবকে দুইবার প্রদক্ষিণ করলো।শিহাব বুঝতে পারলো লোকজন জেগে গেছে এখন চলে যাওয়াটাই উত্তম। দারোয়ানকে দেখে শায়লাও নিজেকে আড়াল করে নিলো।শিহাবের বাইকের স্টার্ট শুনে মোবাইল কল কেটে দিলো। গতকাল রাতটা যতটা অস্থিরতায় কেটেছে আজ সকালটা শিহাব যেন এক অনাবিল আনন্দে ভরিয়ে দিলো। আর এর রেশ ধরে শায়লার সারাটাদিন খুব ভালোই কাটবে। শায়লা ওয়াশরুম গিয়ে ফ্রেস হয়ে সকালের নাস্তা বানানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
রাহাত আর শায়লা নাস্তা সেরে নিলো।দুজনে চায়ের কাপ হাতে ডাইনিং থেকে উঠে এলো।
শায়লা বারান্দায় চলে এলো।রাহাত ড্রইং রুমের দিকে যেতেই দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো। শায়লা অবাক হলো এত সকালে কে হতে পারে? বুয়াতো আরেকটু পরে আসে। রাহাত, কে?  জানতে চাইলে দরজার ওপাশ থেকে সাড়া এলো,তোমগো রুহি খালা।দরজা খোল।
রাহাত দ্রুতই দরজা খুলে দিলো।  রুহি খালা ভাড়াটিয়া হলেও ওদের কাছে খুব সম্মানিত।
শায়লা বুঝতে পেরেই নিজের ঘরে চলে গেলো।নিশ্চয়ই নোমান সাহেবকে নিয়ে কিছু বলতে এসেছে।

রাহাত দরজা খুলতেই খালার প্রবেশ।রাহাত তাকে ড্রইং রুমে বাসাতে চাইলে খালা রাহাতকে ইশারায়  ডাইনিংয়েই বসতে বললো।জানতে চাইল শায়লা কই?রাহাত জানালো আপু ঘরেই আছে।এরপর শুরু হলো খালার লেকচার সেশন।
দেখো বাবা রাহাত,তোমগো ভাইবোনরে আমি কিছু কথা বলতে আসছি তুমরা মন দিয়ে শুনবা।আমি তোমগো মায়ের পেটের বইন খালা না হইলেও আপন খালার মতই তোমগো ভালবাসি।পুরান ঢাকায় আমার বাপের বাড়ি  থাকা সত্বেও  উত্তরায় আসছি আমার মাইয়া দুইটারে ভালো পরিবেশে রাইখা মানুষ করতে।মাইয়া দুইটার বিয়াও দিছি চাইলে এখন আমি চইলা যাইতে পারি কিন্তু যখনই ভাবছি চইলা যামু তখুনি তোমার আব্বা মারা গেলেন।তোমরা তিন ভাই বোন স্কুল কলেজে পড়ো।তোমার মাকে আমি বড় বইনের লাহান শ্রদ্ধা  করি।তার দূর্দিনে তাই তারে ছাইড়া যাই নাই।তোমগো ভালমন্দ আমি ভাড়াটিয়া হইয়াও দেখছি।আজ তোমরা বড় হইছো।তোমগো  বিয়া শাদীও আমি দ্বায়িত্ব মনে করছি।
এবার রাহাত বুঝতে পারলো খালার আগমনের হেতু আর এত কথার কারণ।খালার কথায় এখন পুরান ঢাকা আর শুদ্ধ ভাষায় মতো মিশ্রণ চলে। তবে শুদ্ধ ভাষাই বেশি চলে।সে বলেই চললো,দেখো তোমার বইন যা শুরু করছে তাতে কিন্তু দুইদিন পর পাড়া প্রতিবেশীদের মুখ বন্ধ রাখতে পারবানা।
আজ সকালে তোমার খালু নামাজ পইড়া সকালের হাঁটা সাইরা বাসায় আসতেই দেখে 
শায়লা বারান্দায় দাঁড়ায়া আছে আর সামনের বাসায় হোন্ডা লইয়া হেই পোলাটা দাঁড়ায়া দুইজনে ফোনে কথা কইতাছে।
সক্কাল বেলা বইলা এলাকাবাসী বুঝে নাই।রাহাত কথাটিতে ভীষণ অবাক হলো! আজ সকালের ঘটনা আপুতো কিছু বললো না?
খালার মুখ চলতেই লাগলো,দেখো বাবাজি,গত দেড় বছর নোমান বাবাজি শায়লার একাউন্টে নিয়মিত স্ত্রীর ভরনপোষণের টাকা পাঠাইছে।বিয়ার সময় সে একাউন্ট নাম্বার চাইয়া নিছে। তাইলে বলো সে কি স্বামীর দায়িত্ব পালন করে নাই?তোমার বইন একদিনও তারে ফোন করে নাই।সে ফোন দিলে কথা বলে না ঠিকমত।
এইসব তো সরমের কথা তাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার আমরা ক্যান জানুম? 
রাহাত এবার যেন কিছু বলার একটা সুযোগ পেলো,বললো,খালা নোমান সাহেবের দুইটা বাচ্চা আছে বিয়ের সময় এইটা গোপন রেখেছে এটা কি ঠিক হয়েছে? 
রাহাতের কথায় খালা যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো, বাচ্চা আছে তাতে কি হইছে? সেইটা কি আর এইদেশে কেউ জানতাছে? ঐ দেশে পোলাপান একটু বড় হইলেই বাপ মা ছাইড়া যায় আর স্বামীর কাছে গেলে শায়লারও বাচ্চাকাচ্চা হইবো।তহন তারে লইয়া স্বামী সংসার করবো।খালা যেন থামতেই চাইছে না,কত কথা যেন জমে আছে আজ বলেই যাচ্ছে,শায়লার তো বয়স হইয়া যাইতাছিল।আমগো দেশে তিরিশ বছরের মাইয়াগো বিয়া দেয়া এতো সোজা না।এইসব মাইয়ারা বিয়ার বাকি থাকে যদি কোন খুঁত থাকে।
রাহাত যেন এবার একটা যুক্তি খুজে পেলো।বললো,
কিন্তু খালা আপার বয়স হয়েছিল এটা ঠিক কিন্তু আপুরতো কোন খুঁত ছিল না! খালা যেন ক্রোধে ফেটে পড়লো, 
আরে বয়স হইয়া গেছে এইটাইতো বড়  সমস্যা।তোমার ছোট বোন নায়লার বিয়ার বসয় হইয়া গেছিল তাই আর কত দেরী করবা? রাহাত শুধু এই পয়েন্টটাতেই  অনুশোচনায় ভুগে।নায়লার ভালোর জন্য আপুকে আজ এত কিছুর সন্মুখীন হইতে হচ্ছে।
কিন্তু খালা মানুষের তো পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে,,
খালা যেন আজ সব যুক্তি খন্ডন করতেই এসেছেন।সাথে সাথে বলে উঠলেন,তবে কি শায়লার এই পছন্দ আগে থাইকাই ছিল? তাহলে বলো নাই ক্যান? আর না হইলে বিয়ার পর শায়লা ক্যামন কইরা অন্য সম্পর্কে জড়ায়? দেখো বাবা রাহাত তোমার বাবা একজন সম্মানিত মানুষ ছিলেন।এখন এলাকায় মরা বাপের অসম্মান কইরো না। তাছাড়া তোমার মায়ের বয়স হইছে।তার কি এত সব মানার আর ধৈর্য্য হইবো।বেচারী স্বামীহারা হইয়া বহুত কষ্ট করছে।এতকিছুতেও রাহাত যেন কিছুতেই নোমান সাহেবকে মেনে নিতে পারছে না।রাহাত ভাবলো খালা যখন প্রসঙ্গ তুলেছেই তখন বলে ফেলি,,রাহাত বললো,

চলবে,,,

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much