১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

হা‌বিবুর রহমান এ‌র লেখা "সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা" ( ৪র্থ পর্ব )

ঘরের ভিতর থেকে কবি ধরেছেন দৃশ্যকথা গদ্যের ভাষায় ধারাবাহিক ভাবেই প্রকাশিত হয়ে চলেছে তাঁর অসাধারন সৃষ্টি। লিখতে সহোযোগিতা করুন লাইক ও কমেন্ট করে । পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল পাঠক পাঠিকা লেখক লেখিকা সকলের জন্য রইলো অনন্ত শুভেচ্ছা



সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা

                                                                                                       ( র্থ পর্ব ) 


‌যে‌কোন ধর‌নের লেখনী হ‌তে পা‌রে তা প্রবন্ধ, ক‌বিতা কিংবা গল্প এসব‌ কিছুর জন্যে যেটা প্রয়োজন তাহলো স্বচ্ছ ও সুন্দর মন দিয়ে চিন্তাভাবনার মাধ‌্যমে হৃদ‌য়ের অনুভূ‌তি‌কে উজাড় ক‌রে কলম চালা‌নো। লেখক বা লেখিকা‌গণ য‌দি সহৃদয়‌ কা‌ছের কেউ বা শুভাকাঙ্খী‌দের প‌ক্ষের কা‌রো কাছ থে‌কে নিয়‌মিত উৎসাহ ও অনু‌প্রেরণা পে‌য়ে থা‌কে ত‌বে ঐসব লেখকগণ কিংবা লে‌খিকাগণের প‌ক্ষে ভাল মা‌নের লে‌খা উপহার দেয়া সহ‌জেই সম্ভব। সহধ‌র্মিণী হয়ত সেই ভূ‌মিকাটাই ‌নিত‌্য পালন ক‌রে চ‌লেছেন।


লিখ‌তে যে‌য়ে যি‌নি আমা‌কে নিঃস্বার্থভা‌বে সব সময় সকল প্রকার সহ‌যো‌গিতা ও অনুপ্রা‌ণিত ক‌রে যা‌চ্ছেন সেই সহৃদয় ব‌্যক্তি‌টির কা‌ছে আ‌মি যারপরনাই কৃতজ্ঞ। এমন সহৃদয় ব‌্যক্তিত্ব পা‌শে থাক‌লে যে‌কেউ তার বহুমা‌ত্রিক সীমাবদ্ধতা থাক‌া স‌ত্বেও নিয়‌মিত লেখা লি‌খে যে‌তে পা‌রে ব‌লে আ‌মি বিশ্বাস ক‌রি। অা‌মি এ মহৎ হৃদ‌য়ের অ‌ধিকারী মানুষ‌টির নাম‌টি ঠিক এমুহূ‌র্তে এখা‌নে উচ্চারণ কর‌তে পার‌ছিনা যে‌হেতু তাঁর পক্ষ থে‌কে নি‌ষেধ আ‌ছে। 


 ইদা‌নিং লিখ‌তে যে‌য়ে কখনও কখনও সহধ‌র্মিণীর চোখ রাঙানি খে‌তে হয়। কারণ‌টি অবশ‌্য য‌থেষ্ট যু‌ক্তিযুক্ত। সারা‌দি‌নের অ‌ফিস শে‌ষে বাসায় এ‌সে কিছু সময় তো প‌রিবার প‌রিজন‌কে দেয়া এটা একজন গৃহকর্তা হি‌সে‌বে আমার নৈ‌তিক দা‌য়ি‌ত্বের ম‌ধ্যেই প‌ড়ে। সামা‌জিক মাধ‌্যমের সবগু‌লি‌তেই নিয়‌মিত বিচরণ আ‌ছে আমার। তাই অ‌ফিস শেষ ক‌রে বাসায় এ‌সে এগুলো শুধুমাত্র ভালমত না প‌ড়ে একট‌ু স্ক্যান কর‌তেও এক ঘন্টাকাল ‌কে‌টে যায়। 


তারপর ফেইসবুক বন্ধু‌দের লেখা প‌ড়ে মন্তব‌্য ও মতামত জানা‌তে য‌দি একঘন্টা সময়ও ব‌্যয় কর‌তে হয় তাহ‌লে হা‌তে আর তেমন সময় থা‌কে না। আর বাকী থাক‌লো নি‌জের লেখা চর্চাটা। হি‌সেব ক‌রলে দেখা যায়‌ স‌ত্যিকারা‌র্থেই সময় বের ক‌রে তা ব‌্যয় করার ‌তেমন সময় পাওয়া বড়ই দুষ্কর।


এমনই এক প‌রি‌স্থি‌তির ম‌ধ্য দি‌য়ে সহধ‌র্মিণীর একান্ত সমর্থন ছাড়াও সহৃদয় আপন বন্ধু ও ঘনিষ্ঠ‌দের‌কে অনুপ্রেরণায় মন্থর গ‌তি‌তে হ‌লেও আমার লেখনীর কাজটা  হা‌ঁ‌টি হা‌ঁ‌টি পা পা ক‌রে সম্মুখ পা‌নে এ‌গি‌য়ে চ‌লেছে। সৃ‌ষ্টিকর্তা‌কে সদা হা‌জির- না‌জির জে‌নে তাঁর উপর সদা তাওক্কাল বা ভরসা ক‌রেই চ‌লে আমার নিত‌্য কার্যক্রম।





ধারাবাহিক ৪র্থ  কিস্তি

মেঘশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়


অভিযোজন


প্রতি মুহূর্তের সাথে 
আমি পাল্টে যাই একটু একটু করে
বদলের ইতিহাস কালি কলমের প্রশ্রয় পায় না।
চুপি চুপি বয়ে চলে ফল্গু নদীর মত।

বাড়তি উপল পিছে ফেলে গেলে
হয়তো ভালো হত
তবু তাদের নিঃসঙ্গ করে
এগিয়ে যেতে মন চায় না। 

বেখেয়ালে ভরা সাজি 
কখনও উপছে পড়ে আপন মনে
রয়ে যায় পথের পাশে কোথাও।
সঙ্গমে পা রেখে হঠাৎ একদিন মনে পড়ে
সব তো আনা হল না…

অথবা সবই আনা হয়েছে
হয়তো স্রোতের টানে নয়…
অমোঘ অভিযোজনে।


 

রেহানা বীথি


উত্থান


নেমে যাও 

নিকট এবং নৈঃশব্দের দীর্ঘ আবেশে... 


একটি বিছানা, যেখান থেকে সমুদ্রের শুরু

সেখানে শুয়ে থাকো তুমি তোমার সঙ্গে 

বাধাহীন জল গড়িয়ে যাক আকাশে 


তোমার উত্থান ঘটছে জেনে রেখো 

এক অনন্ত তোমাকে ডাকে অবিরাম

তুমি পুলকিত হও নিজেকে মানুষ ভেবে 


নিজেকে মানুষ ভাবতে পারে না সবাই 

জীবন ও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে না সবাই


উম্মে হাবীবা আফরোজা


অন্তিমযাত্রা


মহাকালের যাত্রা ফেরিয়ে

ঘড়ির কাঁটাটা যেনো আজ বয়ে চলেছে

অন্তিমযাত্রার অভিমুখে।


মোহজালে বন্দী এই জীবন,

যেনো শত আলোকরশ্মির পিদিম জ্বেলে

মায়া অশ্রু-নয়নে আপাদমস্তক সমর্পিত হয়েছে

কোলাহল বিমুখতাময় জীবনের তরে।


হারিয়ে গেছে বর্ণিল সেই শৈশব,

ঘাস ফড়িং এর সেই প্রজাপতি মন,

স্বপ্নিল আবেশে ঘেরা কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি ছড়ানো প্রেমবিলাসী মন।


ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছি আমরা মানচিত্রের কাঁটাতারে বিচ্ছেদময় যাতনার রোষানলে।

হারিয়ে গেছে লাল টিপ, রেশমি চুঁড়ির ঝংকার,

আলোকচ্ছটাময় প্রাণচঞ্চল কিশোরীর মন।


হারিয়ে গেছে চিরতরে আমার প্রথম প্রেম, বাস্তবতার ব্যস্ততায়, নিদারুণ শূন্যতায়,

এমনি করে কালের স্বাক্ষী হয়ে হারিয়ে যাবেো আমি,তুমি, সেই বা তাহারাও।


সময়ের কাছে হারিয়ে যাবো আমরা সবাই,

এক কঠিন বাস্তবতায় অন্তিমযাত্রার সাথী হতে

তোমার অভিশপ্ত নাগরিক শহর থেকে

দূরে আরে দূরে।


রেবেকা সুলতানা (রেবা )


কান্দে ক্যারে মানুষ 


আচ্চা কইতে পারো মইরা গেলে

মানুষ  কান্দে ক্যারে?

আমি মরলে কি তোমার বুকের ভিতর 

সুমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ভেঙ্গেচুরে  কান্না আসবে?

তোমার কি মন খারাপ হবে?

পাগলের মতো কি ছুটে আসবে?

এক নজর দেখার আসায়।

আমার জন্য কি তোমার মাঝে

শুন্যতা অনুভব হবে?

মইরা গেলে কি মানুষের কাছে

আপন হওয়া যায়? ভালো হওয়া যায়?

ভালোবাসা পাওয়া যায়?

 তাহলে মিছা মায়ায় ক্যান্দে ক্যারে ?

মরার আগে মানুষ টা কি এমন চায়?

অবহেলার বিষে বিষে বুকের ভিতরকার

জমিন খানি ফাঁইটা চৌচির হয়, 

কষ্ট পুইষা রাখতে রাখতে ভিতর ঘর

পুইড়া ছাঁই হইয়া যায়,

চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকলেও

ক্যান প্রিয় মানুষের দেখা মেলেনা?

তবে ক্যান কান্দে মইরা গেলে?

সারা জীবনের জন্য মুক্তি দিয়ে গেলো

বলেই কি মাতম কইরা কান্দে?

নাকি মইরা গেল মানুষ ভালোবাসা বাড়ে?

বেঁচে থাকতে ক্যান ভালোবাসে না?

ক্যান অবহেলার চাদরে ঢাইকা রাখে ?


তাহমিনা শিল্পী


আবহাওয়া সংবাদ অথবা ছন্দপতন 


তুমি বলতে-

আমি হাসলে আকশে তারা জ্বলে মিটমিট।

অভিমান করলে জমে মেঘ। আমি বলতাম-

তুমি রেগে গেলে বিজলী চমকায়।

কাছে এলেই এলোমেলো  ঘূর্ণিপাক খায় লজ্জার ঢেউ!

আর ভালোবসলে?  ভালোবাসলেই প্রবল বর্ষণ।


তোমার মনের মত হাবার কী ভীষণ তৃষ্ণা ছিল আমার।

চুলের সিঁথিটা একপাশে করবো নাকি মাঝখানে, 

এই নিয়েই সারাবেলা চলত এক্সপেরিমেন্ট।

কি রঙের পোশাক পরলে তোমার চোখে আমায় দেখতে ভালোলাগবে!

হাতে-পায়ের নখের নেইলপলিশ, চোখের কাজল, টিপ, ম্যাচিং চুড়ি-দুল

সব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নিতাম বারবার।

ভুল করে কখনও লিপিষ্টিক পরলেই বাচ্চাদের মত তোমার সে কি রাগ!

ইনিয়ে বিনিয়ে কত কি বলে ভাঙাতে হত-

মনে পড়লে আজও ভীষণ হাসি পায়।


রাগ পড়ে গেলে,তোমার ছাইচাপা আহ্লাদেরা আকণ্ঠ পাঠ করতো প্রণয়ের মহাকাব্য।


তারপর তোমার ব্যস্ততা বাড়ে, তোমার চোখ বদলায় নিজস্ব রঙ ও ভাষা!


এখনও রোজ ভোর হয়।

এখনও রোজ সন্ধ্যা নামে।

ঘুরেফিরে আমরা পাশাপাশি কাটাই সকাল,দুপুর,রাত।

শুধু কোথাও আর আমাদের খুঁজে পাই না।

অথচ, আমরা দিব্যি বেঁচে আছি আমাদের সংসারের মানচিত্রে।

এখন আলগোছে দুঃখ পেলে মেঘের পাহাড়গুলো ভেঙে পড়ে নিঃশব্দে।

তোমার রাগ হলেও থাকে না বজ্রপাতের উঁকিঝুঁকি।

আমাদের যৌথ আকাশটা ভেসে যায় বিষাদের স্রোতে...

শুধু কেউ তার খবর জানে না,

কেউ তার খবর জানে না,

কেউ না।


শুভ্রা দাস


টান


তোমার সঙ্গে আমার শিকড় মাটির টান

তোমার সঙ্গে আমার বৃক্ষ ফলের টান

তোমার সঙ্গে আমার ভূমি জন্মের টান

তোমার সঙ্গে আমার মেয়ে বেলা খুনসুটির টান

তোমার সঙ্গে আমার চুম্বকের বিপরীত মুখী টান

তোমার সঙ্গে আমার গ্রহ উপগ্রহের টান

তোমার সঙ্গে আমার মান অভিমান আড়ি   ভাবের টান

এ টান যুগ কাল সময়ের ধারায় বয়ে যাবে রয়ে যাবে

তুমি আমি থাকি বা না থাকি এ টান সব সব ব্যথা সব কথা সয়ে যাবে

দেখো  এ টান  কেবল ভালোবাসি ভালোবাসি কয়ে যাবে।


তৌফিকুল ইসলাম তপু


পথিক


হাঁটছি একা এক বিকেলে 

পায়েচলা পথে কোথাও স্থির হয়ে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই

ঠিক করলাম আজ হাঁটব একা একা


চক্ষুদ্বয় হঠাৎ স্থির হলো একটা ফুলবিক্রেতার দিকে 

হাসিমুখে সে আমায় ডাক দিলে

লালবর্ণের একটা গোলাপ নিয়ে ফের হাঁটা শুরু করলাম


হাতে গোলাপ নিয়ে হাঁটছিলাম

বলে কতজন কতরকম চোখ দিয়ে আমায় দেখছে

আমি হাসিমুখে হাঁটছি

হাঁটতে হাঁটতে সূর্যাস্তকালে তোমার কাছে এসে পৌঁছলাম

লালবর্ণের গোলাপটি তোমার হাতে তুলে দিলাম


তোমার কাছে ঠিকানা চাইলাম

তুমি ঘরহীন ঠিকানা দিলে

ফের হাঁটা শুরু করলাম পায়েচলা পথধরে।

সুচিতা সরকার

 



জানিনা কেন


কিছু পিছু টান, কিছু ফেলে আসা গান,
নিত্য গভীর করে ক্ষত।
তবুও না জানি কেনো, ওদিকেই মন ছোটে এতো। 

কিছু ভুল, কিছু কাগজের হলুদ ফুল,
ডায়েরি লেখে প্রতিনিয়ত।
তবুও না জানি কেনো, 
জীবন হাতড়ায় পোড়া ছাই এতো। 

চুপ থাকতে থাকতে, 
ঠোঁট জোড়া আজ হয়েছে বোবা, 
হারিয়েছে কথা ছিল যতো।
কানে পড়ে শব্দগুলি হয় দিশাহীন,
মনের দরজায় ধাক্কা লাগে না আর আগের মতো।


সাইফুল আলিম


 শরৎ এর স্নিগ্ধতায়

 


এই তো সবে বর্ষার মুষলধারে বৃষ্টির নেষার ঘোড় কেটেছে মাত্র। 

আকাশে ভেসে বেড়ায় এক টুকরো সাদা মেঘ।

পড়ন্ত বিকেলে গোমতী নদীর তীরে মনের বাতায়ন খুলে ঘাসের উপরে বসে আছি আমি।

দমধমে মৃদু বাতাসে শন শন করে  মন ও শরিলকে হালকা ছোয়ায় সিক্ত করে দিলো নিমিষেই।

আমি আনমনে নদীর কলতানের সহিত প্রান খুলে আত্ম কথনে মগ্ন কিছু মুহুর্ত। 

কাশফুল হেলিয়া দুলিয়া শড়ৎকে নিমন্ত্রণ করে  স্নিগ্ধতায় ছন্দের তালে তালে।

আর, 

আমি প্রিয়াসির জন্য শড়ৎ ফুলের মালা বুনি মনের হরসে।

মমতা রায়চৌধুরী'র উপন্যাস "টানাপোড়েন" ২

অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করবার মতো আকর্ষণীয়  মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন" পড়ুন ও অপরকে পড়তে সহযোগিতা করুন  

 

 টানাপোড়েন / 

                                                                                ভুল

আজ যেন খুব বেশি রকমই তুমি রিঅ্যাক্ট করছ। আমি কি এমন করেছি বলে সুমিত। কি এমন করেছি? মানেটা কি? তোমার ফোনে এতগুলো মিস কল তারপর ফোন করেই যাচ্ছে ,তুমি ফোনটা কেটে দিচ্ছ। কে এমন বিশেষ ব্যক্তি এতবার ফোন করছে অথচ তুমি ফোন টা পর্যন্ত রিসিভ করছো না। দেখি ফোনটা দাও '-বলেই অনুমিতা ফোনটা কেড়ে নিতে যায়। কেন তুমি আমার ফোন নেবে কেন? কেন মানে? আমি ফোনটা দেখতে চাইছি? তোমার ভেতরটা যদি এতটাই সাদা হয়ে থাকে তাহলে দেখাতে আপত্তি কিসের? সুমিত হেসে -আপত্তি??? বাহ,খুব ভালো ছেলে তো ।অনুমিতা বলে। দাও দাও দাও দেখি। এবার জোর করেই কেড়ে নিতে যায় অনুমিতা। সুমিত সরিয়ে দেয়। কেন আমার কথা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না। ভালোবাসায় তোমার বিশ্বাস নেই। ছিল ইদানিং একটু কেমন কেমন মনে হয়। শোনো নি ভালোবাসার যদি বিশ্বাস টুকুই না থাকে সারাটা জীবন আমরা একসঙ্গে থাকবো কি করে? এগজ্যাক্টলি আমিও তো এই কথাই বলি ।আমাকে তোমার বিশ্বাস নেই কেন? দেখতে চাইছি তাহলে তোমার দেখতে দেয়া উচিত ।কারণ তোমার সমস্ত কিছুতে আমার অধিকার আর আমার সমস্ত কিছুতে তোমার অধিকার। এই নিয়ে দু'জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে।অথচ সুমিত আর অনুমিতার সম্পর্ক আজ চার বছরের। এর মধ্যে কত কিছু ঝড় ঝাপটা এসেছে তবুও বিশ্বাসের ভীত যেন আলগা হয়নি কখনো। আজ যেন টলোমলো কান্ডারী বিহীন তরী। পাঁচ-ছয় মাস হল সুমিতের ভেতরে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছে। আগে যখন বেকার ছিল তখনই যেন ভাল ছিল ।পরস্পরের ভেতরে একটা আত্মিক টান সব সময় অনুভব করতো। দিনে একবার হলেও দেখা করা বা ফোন করা এটা বাধ্যতামূলক ছিল। আর এখন সুমিতকে ফোন করলে ফোন বিজি আর দেখা তো দূরের কথা সপ্তাহে একদিন সেটাও যেন অনেক কষ্ট করে তাকে আসতে হয় । হাবেভাবে সেটাই বোঝাতে চায়। অথচ অনু সুমিতকে ভালবেসে তার জীবনের সেরা সময়টুকু দিয়েছে ।সেখানেই তো ভয়। আজ সমস্ত দি‌ক থেকে ভয় যেন অনুকে কুকুরতাড়া করে বেড়ায় ।আসলে পেটের ভেতরে যে বাড়ছে দিনকে দিন এ কথাটা সুমিতকে বলার জন্যই আজকে ডেকেছিল কিন্তু অকারণে কি একটা ঝামেলা হয়ে গেল। মনে মনে নিজেকে একটু শান্ত রেখে ,ধৈর্য ধরে অনু বলল-' সুমিত ঠিক আছে তোমাকে দেখাতে হবে না ।তোমার প্রতি আমার  বিশ্বাস আছে। তোমার কাছে আজকে একটা আমি কথা বলতে চাই। বলো কি বলবে? সুমিত বলে। আমার ভিতরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করছো সুমিত? পরিবর্তন ক ই সেরকম তো কিছু দেখতে পাচ্ছি না। অনু অবাক হয়ে যায় আগে মুখটা শুকনো থাকলেই সুমিতের যেন চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসত। চোখের কোনে আমার কালি একটা দুশ্চিন্তা সবসময় আমাকে গ্রাস করে আছে ।এটা‌ শুনে বুঝতে পারছে না। মনে মনে ভাবল। একটু ম্লান হাসল। সুমিত তাড়া দেয়,' কি বলবে যেন তুমি আমাকে ?বলো ।আমার তাড়া আছে। অনু একটু কিন্তু কিন্তু করতে লাগলো আর ভাবলো আজকে এই কথাটা মুখ ফুটে সুমিতকে বলতে পারছে না কেন? সুমিতকে বড্ড অচেনা লাগছে। কিছু না বললেও তো নয় ।বড্ড দেরী হয়ে যাবে। তখন কি করবে অনু। জানো তো আমি প্রেগন্যান্ট। মানে ,মানেটা কি? সুমিত বলে।আমি কি করবো? কথাটা শুনে অনুর  ভীষণ রাগ হয় ।কিন্তু রাগটাকে সামলে নিয়ে হেসে বলে -' কি কথা বলছ সুমিত। আমাদের ভালবাসার সময় উজার করে দিয়েছিলাম ।আজকে তুমি বলছো...? সুমিত বলে ওটা একটা এক্সিডেন্ট ।তুমি ভুলে যাও আর যত তাড়াতাড়ি পারো এবরশন করিয়ে নাও। কথাটা শুনে অনু কি বলবে ভেবে উঠতে পারল না ।ভেবেছিল আজকেই বলবে বাড়িতে বিয়ের কথাটা তুলতে কিন্তু সুমিতের যা হাবভাব দেখছে তাতে তো রাজি হবে না। তারপরেও দাঁতে দাঁত চেপে ভেতরে চাপা কষ্টটাকে রেখে অনু রিকুয়েষ্ট করে  'কি দরকার এবরশন করার বলো ।আমরা তো এখন বিয়ে করে নিতে পারি। এখন তুমি সেটেল হয়ে গেছ।' 'সুমিত বলে-বিয়ে করতে বললেই করা হয়ে যায়। এখন আমি বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছি না। এখন আমি কেরিয়ার নিয়ে ভাবছি। তাহলে আমার কি হবে অনুমিতা বলে। তোমাকে তো সমাধানের রাস্তা দেখিয়ে দিলাম ।তুমি তাই করো। শোনো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ,আমি আসছি। টাকা লাগলে ব'লো। আমি দিয়ে দেব। কথাটা বলেই বাইক স্টার্ট করে চলে যায়। অনুর পায়ের তলায় যেন মাটি সরে যাচ্ছে কি করবে ?কি করে এই লজ্জার কথা বাড়িতে বলবে ?আজকে লজ্জাই বটে অথচ ভালোবাসাটা কোন লজ্জার ছিল না ।দুজনই খুব কাছাকাছি এসেছিল ।সেদিন বৃষ্টি পড়ছিল ঝিরঝির করে ।অনু সুমিতের বাড়িতে দেখা করতে এসেছিল বাড়িতে কেউ ছিল না হঠাৎ এই দুজনের ভিতরে কি একটা চরম উত্তেজনা নিজেদেরকে হাড়িয়ে ফেলেছে সেদিনের সেই ভালোলাগা ভালোবাসার মুহূর্ত টুকু চির স্থায়িত্ব দিতে গেলে  নিজেই সমাজের কাছে কলঙ্কিত বলে প্রমাণিত হবে। কী করবে এখন অনু? কোথায় যাবে এখন অনু ।এই দ্বিধা সংশয় তাদের ভালোবাসাকে গ্রাস করল। যে ভালোবাসার বিশ্বাসের জন্য পরস্পর পরস্পরে হাজার হাজার মাইল দুঃখ কষ্টের পথ অতিক্রম করতে পারে ।আজ তাএক নিমিষে ভেঙে চৌচির হয়ে গেল। অনুর মাথা বনবন করে ঘুরতে লাগলো, দিশাহারা হয়ে গেল ।ভালোবাসাটা য় আজ আর কোনো বিশ্বাসের জায়গা থাকল না। অনুর এই ভুলটাকে  সারাটা জীবন ধরে মাশুল গুনতে হবে।



ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"  ক্রমশ

গোলাম কবির

 সে তুমি আমার প্রেম 


 না, লিখে দিইনি কাউকেই কোনো দাসখৎ!

 ভালবেসে চিরকাল বশ্যতা মেনেছি তোমার। 

 তবুও এই অবারিত সবুজের দিগন্ত সাক্ষী,

 ভালবাসার যৌবনের মধুর স্মৃতিময়

 দিনগুলোর দিব্যি করে বলছি , 

 তোমাকেই ভালবাসি চিরকাল! 

 বুকের ভিতর দিয়ে তিরতির করে 

 বয়ে যাওয়া প্রবহমান নদীটাও জানে তা!

 হৃদয়ের একদমই ভিতর থেকে গাঢ়তম

 উচ্চারিত প্রতিটি মুক্ত শব্দের মধ্যে 

 আমি খুঁজে পাই তোমারই পবিত্র নাম - 

 সে তুমি আমার প্রেম!