১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

মমতা রায়চৌধুরী'র উপন্যাস "টানাপোড়েন" ২

অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করবার মতো আকর্ষণীয়  মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন" পড়ুন ও অপরকে পড়তে সহযোগিতা করুন  

 

 টানাপোড়েন / 

                                                                                ভুল

আজ যেন খুব বেশি রকমই তুমি রিঅ্যাক্ট করছ। আমি কি এমন করেছি বলে সুমিত। কি এমন করেছি? মানেটা কি? তোমার ফোনে এতগুলো মিস কল তারপর ফোন করেই যাচ্ছে ,তুমি ফোনটা কেটে দিচ্ছ। কে এমন বিশেষ ব্যক্তি এতবার ফোন করছে অথচ তুমি ফোন টা পর্যন্ত রিসিভ করছো না। দেখি ফোনটা দাও '-বলেই অনুমিতা ফোনটা কেড়ে নিতে যায়। কেন তুমি আমার ফোন নেবে কেন? কেন মানে? আমি ফোনটা দেখতে চাইছি? তোমার ভেতরটা যদি এতটাই সাদা হয়ে থাকে তাহলে দেখাতে আপত্তি কিসের? সুমিত হেসে -আপত্তি??? বাহ,খুব ভালো ছেলে তো ।অনুমিতা বলে। দাও দাও দাও দেখি। এবার জোর করেই কেড়ে নিতে যায় অনুমিতা। সুমিত সরিয়ে দেয়। কেন আমার কথা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না। ভালোবাসায় তোমার বিশ্বাস নেই। ছিল ইদানিং একটু কেমন কেমন মনে হয়। শোনো নি ভালোবাসার যদি বিশ্বাস টুকুই না থাকে সারাটা জীবন আমরা একসঙ্গে থাকবো কি করে? এগজ্যাক্টলি আমিও তো এই কথাই বলি ।আমাকে তোমার বিশ্বাস নেই কেন? দেখতে চাইছি তাহলে তোমার দেখতে দেয়া উচিত ।কারণ তোমার সমস্ত কিছুতে আমার অধিকার আর আমার সমস্ত কিছুতে তোমার অধিকার। এই নিয়ে দু'জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে।অথচ সুমিত আর অনুমিতার সম্পর্ক আজ চার বছরের। এর মধ্যে কত কিছু ঝড় ঝাপটা এসেছে তবুও বিশ্বাসের ভীত যেন আলগা হয়নি কখনো। আজ যেন টলোমলো কান্ডারী বিহীন তরী। পাঁচ-ছয় মাস হল সুমিতের ভেতরে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছে। আগে যখন বেকার ছিল তখনই যেন ভাল ছিল ।পরস্পরের ভেতরে একটা আত্মিক টান সব সময় অনুভব করতো। দিনে একবার হলেও দেখা করা বা ফোন করা এটা বাধ্যতামূলক ছিল। আর এখন সুমিতকে ফোন করলে ফোন বিজি আর দেখা তো দূরের কথা সপ্তাহে একদিন সেটাও যেন অনেক কষ্ট করে তাকে আসতে হয় । হাবেভাবে সেটাই বোঝাতে চায়। অথচ অনু সুমিতকে ভালবেসে তার জীবনের সেরা সময়টুকু দিয়েছে ।সেখানেই তো ভয়। আজ সমস্ত দি‌ক থেকে ভয় যেন অনুকে কুকুরতাড়া করে বেড়ায় ।আসলে পেটের ভেতরে যে বাড়ছে দিনকে দিন এ কথাটা সুমিতকে বলার জন্যই আজকে ডেকেছিল কিন্তু অকারণে কি একটা ঝামেলা হয়ে গেল। মনে মনে নিজেকে একটু শান্ত রেখে ,ধৈর্য ধরে অনু বলল-' সুমিত ঠিক আছে তোমাকে দেখাতে হবে না ।তোমার প্রতি আমার  বিশ্বাস আছে। তোমার কাছে আজকে একটা আমি কথা বলতে চাই। বলো কি বলবে? সুমিত বলে। আমার ভিতরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করছো সুমিত? পরিবর্তন ক ই সেরকম তো কিছু দেখতে পাচ্ছি না। অনু অবাক হয়ে যায় আগে মুখটা শুকনো থাকলেই সুমিতের যেন চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসত। চোখের কোনে আমার কালি একটা দুশ্চিন্তা সবসময় আমাকে গ্রাস করে আছে ।এটা‌ শুনে বুঝতে পারছে না। মনে মনে ভাবল। একটু ম্লান হাসল। সুমিত তাড়া দেয়,' কি বলবে যেন তুমি আমাকে ?বলো ।আমার তাড়া আছে। অনু একটু কিন্তু কিন্তু করতে লাগলো আর ভাবলো আজকে এই কথাটা মুখ ফুটে সুমিতকে বলতে পারছে না কেন? সুমিতকে বড্ড অচেনা লাগছে। কিছু না বললেও তো নয় ।বড্ড দেরী হয়ে যাবে। তখন কি করবে অনু। জানো তো আমি প্রেগন্যান্ট। মানে ,মানেটা কি? সুমিত বলে।আমি কি করবো? কথাটা শুনে অনুর  ভীষণ রাগ হয় ।কিন্তু রাগটাকে সামলে নিয়ে হেসে বলে -' কি কথা বলছ সুমিত। আমাদের ভালবাসার সময় উজার করে দিয়েছিলাম ।আজকে তুমি বলছো...? সুমিত বলে ওটা একটা এক্সিডেন্ট ।তুমি ভুলে যাও আর যত তাড়াতাড়ি পারো এবরশন করিয়ে নাও। কথাটা শুনে অনু কি বলবে ভেবে উঠতে পারল না ।ভেবেছিল আজকেই বলবে বাড়িতে বিয়ের কথাটা তুলতে কিন্তু সুমিতের যা হাবভাব দেখছে তাতে তো রাজি হবে না। তারপরেও দাঁতে দাঁত চেপে ভেতরে চাপা কষ্টটাকে রেখে অনু রিকুয়েষ্ট করে  'কি দরকার এবরশন করার বলো ।আমরা তো এখন বিয়ে করে নিতে পারি। এখন তুমি সেটেল হয়ে গেছ।' 'সুমিত বলে-বিয়ে করতে বললেই করা হয়ে যায়। এখন আমি বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছি না। এখন আমি কেরিয়ার নিয়ে ভাবছি। তাহলে আমার কি হবে অনুমিতা বলে। তোমাকে তো সমাধানের রাস্তা দেখিয়ে দিলাম ।তুমি তাই করো। শোনো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ,আমি আসছি। টাকা লাগলে ব'লো। আমি দিয়ে দেব। কথাটা বলেই বাইক স্টার্ট করে চলে যায়। অনুর পায়ের তলায় যেন মাটি সরে যাচ্ছে কি করবে ?কি করে এই লজ্জার কথা বাড়িতে বলবে ?আজকে লজ্জাই বটে অথচ ভালোবাসাটা কোন লজ্জার ছিল না ।দুজনই খুব কাছাকাছি এসেছিল ।সেদিন বৃষ্টি পড়ছিল ঝিরঝির করে ।অনু সুমিতের বাড়িতে দেখা করতে এসেছিল বাড়িতে কেউ ছিল না হঠাৎ এই দুজনের ভিতরে কি একটা চরম উত্তেজনা নিজেদেরকে হাড়িয়ে ফেলেছে সেদিনের সেই ভালোলাগা ভালোবাসার মুহূর্ত টুকু চির স্থায়িত্ব দিতে গেলে  নিজেই সমাজের কাছে কলঙ্কিত বলে প্রমাণিত হবে। কী করবে এখন অনু? কোথায় যাবে এখন অনু ।এই দ্বিধা সংশয় তাদের ভালোবাসাকে গ্রাস করল। যে ভালোবাসার বিশ্বাসের জন্য পরস্পর পরস্পরে হাজার হাজার মাইল দুঃখ কষ্টের পথ অতিক্রম করতে পারে ।আজ তাএক নিমিষে ভেঙে চৌচির হয়ে গেল। অনুর মাথা বনবন করে ঘুরতে লাগলো, দিশাহারা হয়ে গেল ।ভালোবাসাটা য় আজ আর কোনো বিশ্বাসের জায়গা থাকল না। অনুর এই ভুলটাকে  সারাটা জীবন ধরে মাশুল গুনতে হবে।



ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"  ক্রমশ

২টি মন্তব্য:

  1. লেখার মাদকতা টেনে নিতে পারছে। মুন্সিয়ানা আছে।
    বেশ ভালো লাগছে।
    চলুক কলম। পরিণতির অপেক্ষায় রইলাম-----

    উত্তরমুছুন

thank you so much