০৯ নভেম্বর ২০২১

গুরুপ্রসাদ মহান্তি-এর গুচ্ছ কবিতা



বন্ধচোখের জাদুকৌশল



তোমরা দেখনি
আমার বুকের বাঁদিকে
বাক্সে বায়োস্কোপ বসানো
চোখ বন্ধ করলেই ছবির বৈভব
আমার মস্তিষ্কে
ছেলেবেলার বুদ্বুদ বানানোর খেলা
গাদি, ঘুড়ির চোঁ-চাঁ দৌড়

আমার ব্রেন-ম্যাপিঙের জন্য
বন্ধচোখের জাদুকৌশল চাই




তফাত্ যা



তফাত্ যা    তফাত্ যা
                      দাদরা এবং কাহারবা
তাল ছেড়ে যে বেতাল হব
                       না-সুরে গান গাইব গা

তফাত্ যা শৈশবের
স্বপ্ন মেলা, কৈশোরের
দৌরাত্ম্যিরাতদিবা
                   তফাত্ যা

তফাত্ যা যৌবনের
কড়িখেলা, মৌবনের
সাপলুডোসুখবহা
                   তফাত্ যা

তাল ছাড়ব, মাতাল হব
পায়া ছেড়ে ফেলব পা
                   তফাত্ সবই, তফাত্ যা





অকর্মণ্য


একসঙ্গে গ্যাস ওভেনের দুই অাঁচ
সামলাতে পারি না
খবর কাগজ পড়তে গিয়ে জুড়োয় চা
চা শেষ না করে ফোন ধরতেও আপত্তি
এমন অকর্মণ্য আসলে বোঝা

কবিতার একটি পংক্তি সামলাতে না সামলাতে
অন্যটি পালায়
ভাবনার পিছনে দৌড়ুতে দৌড়ুতে
উপে যায় রামধনু

স্বচ্ছতা মিশনের কর্মসূচিতে
এদেরও নিকেশ চাই...

রেহানা বীথি






মৃত্যু 



কিংশুক বন রেখে যাওয়া যায় না  
তবু চলে যায় খোঁপা রেখে রক্তজবা 
নিরুদ্দেশের পথে
যায় নীল শাড়ি নীল আসমানে  
ভোমরা বিহনে 

যদি বলি 
মৃত্যু এক সফেদ চন্দ্র-উঠোন
অনন্তের গাঢ় আদর 
এক গোছা অমলতাস 
আর নিম নিম প্রেমাবেশ
মানবে?  

তুমি ভাবতে পারো অন্য কিছু 
ভিনপথে মালতীর মালা গাঁথি আমি... 

যে মৃত্যুতে আমার নাম লেখা নেই 
সে মৃত্যুতেই রেখেছি বেঁধে  
আমরণ সুখ

আশ্রাফ বাবু




চোখ খোঁজে মন


চোখ খুব আপন মনে হয়
আজ পর্যন্ত যত আশ্চর্য হয়ে দেখছি
তা কিন্তু নিশ্চিত করে পাইনি,
এর সঠিক অর্থ আমার বোধগম্য হয়নি ।

যখন মনে হয় খুব আপন
নিশ্চিত করে মনে হয় প্রাপ্তি জঘন্য !
দেখা বাস্তব, পাওয়া স্বপ্নে মোড়া অথবা দুঃস্বপ্ন ;
নিশ্চয়তা যতটুকু পেয়েছি বিভীষিকা। 

দৃষ্টি আর চোখ খুঁজে ফেরে মন
মনে হয় খুব আদরে নির্জনে;
ভরপুর ক্ষমতার সীমা নেই কখনো মনে হয়
তবুও খুঁজে ফিরি দুরত্বের সীমানা।

বড় আকাশ তলে আমি লোকারণ্য 
সঠিক প্রবণতা মনে হয় ভালোবাসা, 
হৃদয়ের সীমা নেই কোনো, বলেই তৃষ্ণা
এর অর্থ নিরূপণে আমি কি পূর্নাঙ্গ?

সানি সরকার




৭ নভেম্বরের কবিতা 
 


পথের ওপর যে মানুষটি দাঁড়িয়ে আছে 
যাঁর বনে যাওয়ার কথা ছিল, বরফের ওপর 
শুয়ে থাকার কথা ছিল, বন ও বরফ ওঁকে নেয়নি 


তাঁর হাতে 
      বাঁশি
     লণ্ঠন 
     চোখের ভেতর দীর্ঘ রোড ম্যাপ 

মৃত্যুর কাছে দু'হাত বাঁধা 

হাসতে হাসতে 
রাস্তা দেখছে সে
হাসতে হাসতে 
বৃক্ষটির দিকে তাকিয়ে আছে 

এইখানে 
পৃথিবী থেমে যেতে পারত 
কিন্ত না 
মানুষটি কখন বৃক্ষ হয়েছে 
বৃক্ষটির সঙ্গে বৃক্ষটির পৃথিবীর একটিই নাড়ীর বাঁধা  

তাই এইখানে প্রাণজ্যোতি 
তৃপ্ত মাছের মতো খলবল করে সবসময় 

আমাদের ইরা এইসব দেখছে 
সুন্দর ও সৌন্দর্য চিনে নেয় নিজের মতন করে 
আমরা হাতে হাত রেখে চুপচাপ দেখছি পান করছি 
জল 
আর প্রেমের নৌকোয় প্রেমের ভেতর 
অনন্ত সুগন্ধি ঢেউ আছড়ে পড়ছে

কানন রায় এর অণুগল্প






অনি তনুর কথা



 দুটি ছেলেমেয়ে প্রতি দিন এই রাস্তা দিয়ে কলেজে যায়।মাঝে মাঝে ওরা আমার দোকানে আসে।কখনো পেন কেনে কখনো খাতা।কখনও বা বই আবার কখনো ফাইল কভার।দুটিতে খুব ভাব।কখনো নির্জন দুপুরে পথে পথিক তেমন একটা নেই।দুটিতে রোদে তেতে পুড়ে আমার দোকানে চলে আসে।কখনো বলে-
"কাকিমা একটু জল দাওনা। বাপরে কি রোদ"।
আবার কখনো বলে-
"একটু বসবো কাকিমা? হাপিয়ে গেছি।হেঁটে হেঁটে এলাম তো, রিক্সা চাপার পয়সা নেই"।এভাবে ওদের আসা যাওয়ার মধ্যে আমিও কখন ওদের একজন হয়ে গেলাম জানি না । ওরা কবে যেন আমার আপনজন হয়ে গেল।তাই তো ওদের কথা বলতে বসে গেলাম।
       মেয়েটির ডাক নাম অনি ভালো নাম অনিন্দিতা রাহা।ছেলেটি তনু ,তনুময় সরকার।ওরা এক কলেজে পড়ে।একে অপরকে ভলোবাসে।স্বপ্ন দেখে একটা ভালো বাসা বাঁধার।মেয়েটির মা নেই।সৎমায়ের অবহেলায় বেড়ে ওঠা একটা জীব মাত্র।মেয়ের বাঁচাবাড়া নিয়ে বাবার কোন হেলদোল নেই।এই যা হয় আর কি।দু তিনটে টিউশন করে পড়ার খরচটা চালিয়ে নেয়।আর এর সঙে আছে অদম্য ইচ্ছে নিজের পায়েও দাঁড়াবেই।
ছেলেটির দুর্গতি আরও ।মা দিনের বেলায় লোকের বাড়ি ঠিকে কাজ করে।আর সন্ধ্যের পরে ঘরে বসে ঠোঙা বানায়।দিনের বেলায় তনুর মায়ের সঙে দেখা কম হয়।কলেজ থেকে ফিরে এসে।সন্ধ্যের পর খেয়ে দেয়ে মা ছেলে মিলে ঠোঙা বানায় ,সুখ দুঃখের গল্প করে।জীবনের স্বপ্ন গুলি তুলে ধরে মায়ের কাছে।মা ই তো ওর সব।সেই ছেলে বেলায় বাবা ওদের ছেড় চলে গেছে ।আর কোনদিন ফিরে আসেনি।
এক সময় কলেজ শেষ হয়।এখন আর ওরা প্রতি দিন আসে না।মাঝে মাঝে আসে চাকরির ফর্ম ফিলাপ করতে।বেকার ছেলে মেয়েদুটি চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিল।এক সময় ওদের খুব ক্লান্ত লাগতো।তনুকে খুব হতাশ লাগতো।ধীরে ধীরে তনুকে ক্ষয় রোগে গ্রাস করলো। অনি পাগলের মতো ছুটলো ডাক্তারের কাছে।অনেক দৌড় ঝাপ করে একটা হাসপাতালে ভর্তি করে বাড়ি ফিরে আসে।বাড়ি ফিরে দেখে তার চাকরির appointment letter এসেছে।সারারাত দু চোখের পাতা এক করতে পারে নি।এক দিকে আনন্দ অন্যদিকে আতঙ্ক।খুব সকালে হাসপাতালে চলে যায়।তনুময়ের হাত দুটি ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিল।Appointment letterটা  তানুর হাতে দিয়ে বলেছিলো "আর ভয় নেই এবার আমার মাইনের টাকায় তোমার চিকিৎসা করাব"।
            তনু ম্লান হেসেছিল।ও বোধহয় টের পেয়েছিল ,ভেতরটা ওর সবই ক্ষয় হয়ে গেছে।----
          প্রথম মাসের মাইনে নিয়ে ছুটতে ছুটতে এসে থমকে দাঁড়ায় তনুর বেডের পাশে। একি? 
সাদা কাপড়ে ঢাকা কেন?ধীরে ধীরে অনির হাত থেকে খসে পরলো প্রথম চাকরির প্রথম মাইনে,প্রথম যৌবনের প্রথম আশা,হৃদয় নিঙরাণো প্রথম ভালোবাসা।
       তারপর অনির কি হয়েছিল কেউই জানেনা।এপথে তাকে আর কেউ কোনদিন হাঁটতে দেখেনি।

      

মমতা রায় চৌধুরী







 টানাপোড়েন পর্ব ৩৯

                                                 এক পশলা বৃষ্টির জন্য


মনোজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। রেখা অবাক হয়ে গেল। যা ঘুম কাতুরে। ব্যাপারটা কি?
রেখা বলল  'আজ কোথাও যাবে?'
মনোজ বলল  'হ্যাঁ'। সুমিতা আসে নি?'
রেখা বলল 'না।আডভ্যান্স টাকা নিল । তারপর থেকে ‌বেপাত্তা।'
মনোজ বলল  'ভালোই চালাচ্ছে। তুমি স্কুলে যাবে তো?'
রেখা বলল ' হ্যাঁ ।ভুলে গেলে আজ খাতা জমা দিতে হবে। আমার মিলির জন্য চিন্তা হচ্ছে। ওকে কে খেতে দেবে?'
মনোজ বলল  'কে দেবে গৌরী সেন'। কেন আমাদের সন্টু দা ?ওকে বলে যাব।'
রেখা বলল  ' কি ভাববে?'
মনোজ বলল ' কিছু ই ভাববে না। সন্টুদা তো ভালোবাসে ওদের।'
রেখা বলল   'দু শ্চিন্তা মুক্ত হলাম।'
এরমধ্যে মনোজের ফোন বেজে উঠল।
মনোজ ফোনটা রিসিভ করে বলল  'আমি ঠিক টাইমে পৌঁছে যাব।'
রেখা তখন রেডি হচ্ছিল স্কুলে যাবার জন্য ।কথাটা কানে আসলো কিন্তু কিছুই বললো না।
মনোজ বলল   'মিলিদের কিছু খাবার দিয়েছো?'
রেখা বলল  'দিয়েছি। (মুখে সেফটিপিনটা রেখে , শাড়ির কুচি কুচি করতে করতে )।এখন ওর একটু ঘন ঘন খিদে পায় না, দিতে তো হবেই। বলতে বলতেই তাড়াতাড়ি জুতোটা পরে নিল পায়ে আর বলল' বড্ড দেরী হয়ে যাচ্ছে' ।ট্রেনটা পেলে হয়?'
মনোজ বলল  'চলো তোমাকে আমি পৌঁছে দিচ্ছি ।অটোতে যেতে হবে না।'
রেখা বলল ' তুমি যে কোথায় যাবে ?তোমার দেরি হয়ে যাবে না?'
মনোজ বলল ' আমি ও তো স্টেশনে যাব।ট্রেন ধরবো?'
রেখা বলল  'ঠিক আছে চলো।'
রেখা মনে মনে বাইকে যেতে যেতে ভাবলো আজকে মনোজের মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে ,গত দু'দিন ধরে  যা চলছিল..।
স্টেশনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন ঢুকলো ।
রেখা  মনোজকে বলল  'আসি'।
মনোজ বলল  'সাবধানে?'
এবার মনোজের যাবার ট্রেন এসে গেল প্লাটফর্মে ।মনোজ ও ট্রেনে উঠে পড়ল। কিন্তু জায়গা পাওয়া যায় নি, যা ভিড়  ট্রেনে,?ভাবতে লাগলো কি হবে তিথির সঙ্গে দেখা করে ,কে জানে?'ভালো ভালো কথা ভাবতে লাগলো ।পুরনো দিনের। প্রথম যখন তিথিকে কলেজে দেখেছিল ।তখন খুব সহজ সরল ছিল আর সুন্দরী তো ছিল ই। প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মনোজ ও তাই। অপরিচিত পরিবেশ কিন্তু সুরঞ্জন ছিল মনোজের পরিচিত। মনে আছে সে দিনও খুব বৃষ্টি পড়ছিল ।তিথি লেটে পৌঁছেছিল ক্লাসে। তাই ওই ক্লাসের নোটটা নিতে চেয়েছিল মনোজ এর কাছে। মনোজের প্রথম দেখাতেই তিথিকে ভালো লেগেছিল। তাই তিথি যখন মনোজের কাছে নোটটা চেয়েছিল। মনোজ ও দ্বিধাহীনচিত্তে তাকে দিয়ে দিয়েছিল তার নোটের খাতা। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তিথির দিকে। তারপর আস্তে আস্তে মনোজের মনের কথাটা বলেছিল প্রায় ছমাস পর। তিথির ও ভালো লেগে ছিলো। তারপর কলেজ কমপ্লিট করে ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি। ইউনিভার্সিটি পর থেকেই বাকিটা ইতিহাস। কত  খুনসুটি চলেছে।
মনোজ  তিথিকে ভালোই বাসতো। কথা দিয়েছিল মনোজ কিছু একটা করলে ওরা দুজন একটা সুখের স্বপ্নের নীড় গড়বে। কিন্তু ভালো ইঞ্জিনিয়ারিং ছেলে পেয়ে তিথি চলে গেল বিদেশে। সেদিন মনোজের কত কষ্ট হয়েছিল। একবারও ভাবেনি মনোজ এর জন্য। আজ মনোজের জীবনে রেখা এসেছে। আজ সমস্ত হৃদয়াকাশ জুড়ে শুধুই রেখা। এখানে তিথির অস্তিত্ব ফিকে। তিথির জন্য ভেতরে কোনো   আলোড়িত হয় না। বরং যেন তার সুখের পৃথিবীতে তিথি বড়ো বেমানান। তবুও তার ডাকে সাড়া দিয়ে যেতেই হচ্ছে। শুধু বন্ধুত্বের দাবিতে যাচ্ছে ।যদি ওর ভেতরে কোন ক্রাইসিস থাকে সেটাকে মেটানোর জন্য। রেখা খুবই ভালো মেয়ে ওকে কোন দিনের জন্য কষ্ট দিতে পারবে না। দুইদিন খুব খারাপ ব্যবহার করেছে ওর সাথে। সে জন্য  খুব খারাপ লাগছে। বলতে বলতে ট্রেনে শিয়ালদা স্টেশনে থামলো।
ট্রেন থেকে নেমে রেখাকে কল করল। রেখার ফোন রিং হয়ে যাচ্ছে। রেখা তখন স্টাফ রুমে ছিল না।
রিম্পাদি ওর ফোনের রিং শুনতে পেয়ে রেখাকে ডাকতে গেল। রেখা তখন বড়দির ঘরে।
 রিম্পাদি বলল 'এই রেখা তোর ফোন বেজে যাচ্ছে। দু-তিনবার বাজলো।'
রেখা আশ্চর্য হয়ে বলল ' এই সময় আমার ফোন! কে করলো রে বাবা ।বড়দি তাহলে আমি আসছি।'
বড়দি বললেন' হ্যাঁ এসো।'
রেখা বলল 'আর একটা কথা বড়দি, আজকে আমি একটু তাড়াতাড়ি যেতে পারবো?'
বড়দি বললেন 'তোমার নম্বর সাবমিট করা হয়ে গেছে তো ?'
রেখা বলল-'হ্যাঁ বড়দি।'
বড়দি হেসে বললেন' কি করবে আর বসে থেকে।'
রেখা বলল 'এইজন্যেই দিদি আপনাকে সত্যিই এত শ্রদ্ধা করি, আমাদের সুবিধা -অসুবিধাগুলো আপনি বোঝেন বলে ।
থ্যাংক ইউ বড়দি।'
বড়দি বললেন'আমি চাই তোমরা সকলে খুশিমনে কাজ করো। তাহলে ছেলেমেয়েদের অনেকটা দিতে পারবে। শুধু শুধু প্রেশার ক্রিয়েট করে তো লাভ নেই ।তবে অনেকে আছেন/আছে  সুবিধা নিতে ব্যস্ত ।এটা আমাকে কষ্ট দেয়।'
রিম্পাদি বলল 'বড়দি আমার ব্যাপারটা।'
বড়দি হেসে বললেন 'হ্যাঁ তুমিও যাবে। রেখা না থাকলে তুমি কি আর থাকবে ,সেটা আমি জানি না?'
রিম্পাদি জোড়হাত করে মাথা নিচু করল।
রেখা বললো  'চলো রিম্পাদি দেখি কে ফোন করেছে?'
দুজনে মিলে স্টাফ রুমে আসলো ।রেখা ফোনটা ঘেটে দেখল তিন থেকে চারটি মিস কল হয়ে আছে মনোজের।
রেখা ফোনটা নিয়ে মনোজকে ফোন লাগালো কিন্তু নট রিচেবল।
রেখা রিম্পাদিকে  বললো  'চলো ট্রেনের
 টাইম হয়ে যাবে। টোটো ধরতে হবে।'
রিম্পাদি বাথরুমের দিকে যেতে যেতে বললো  'হ্যাঁ ,চল চল ,চল।'
রেখা মনে মনে ভাবল  'মনোজ কেন ফোন করেছিল কে জানে?'
অন্যদিকে মনোজ ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস এর কাছে এসে দেখে তিথি দাঁড়িয়ে আছে।চেনাই যাচ্ছে না। কি যেন একটা হতাশা ওর মন জুড়ে রয়েছে। কি চেহারা হয়েছে ওর?'
 মনোজকে দেখে তিথি উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল ।তারপর বললো  'চলো ন্যাশনাল লাইব্রেরী যাই।'
মনোজ মাথা নেড়ে বললো ' চলো।'
মনোজ মাথা নেড়ে বলল  'ঠিক আছে ।চলো।'
মনোজের একদমই ভালো লাগছে না ।তবুও যেতে হচ্ছে। আগে যে তিথির জন্য আবেগ ছিল, উত্তাপ ছিল। আজকে সেসব কিছুই নেই। আগে একটু ওর ছোঁয়া একটু পরশ পাওয়ার জন্য, এক পলক দেখার জন্য মনে ভেতরে একটা কেমন আনচান তৈরি হতো। 
আজ যেন শুধু কথা দিয়েছে আসবে  তাই।সেই চলায় কিছুই নেই। ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে পৌঁছে যখন দুজনে বসে ।তখন হঠাৎ তিথি মনোজকে জড়িয়ে ধরে । মনোজ কেমন হকচকিয়ে যায় ।ওর যেন কোনো তাপ উত্তাপ বলে কিছু নেই ।লোকে দেখছে ,কি দেখছে না? শেষে ৫ সেকেন্ড পর মনোজ তিথিকে বাহুবন্ধনে থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল আর বলল 'তিথি এটা তুমি করো না। বড্ড বেমানান ।'
তিথি বললো  'কেন আমি তো শুধু তোমার জন্য এসেছি ।আমি তো তোমাকে ভালবাসি ।'
 মনোজ  বলল  'আজ সেই ভালবাসার কোন মূল্য নেই। আজ তুমি আলাদা । আমি আলাদা। আমার সংসার আছে ।আমার স্ত্রী আছে ।আমি তাকেই সব থেকে বেশি ভালোবাসি ।তোমার কি সমস্যা তুমি আমাকে বল ?সে জন্যই আমি এসেছি।'
মনোজ বুঝতে পারছে যতই ওকে বাহুবন্ধন থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, কিছুতেই সেটা করতে পারছে না। তিথির ভেতরে যেন বহুদিনের সঞ্চিত আবেগ হঠাৎ করেই বাঁধ ভেঙেছে। মনোজকে সেই জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে দূর থেকে বহু দূরে কিন্তু মনোজ সেই ডাকে সাড়া দিতে পারছে না।
মনোজ বলল  'তিথি সবাই দেখছে ।একটু জোর করেই নিজেকে ছাড়ালো ।তারপর বলল ' তোমার কিছু বলার না থাকলে ,তাহলে আমি আসছি ।আমার ট্রেনের টাইম হয়ে গেছে।'
তিথি বললো  'আমি আজকে তোমার সঙ্গে সারাটা দিন কাটাতে চাই। আজকে কিছু বলব না আমি তোমায়। তুমি আমাকে সময়টুকু দাও।'
মনোজ বলল 'এ কথা তো ,তুমি আমাকে বল নি আগে ?আমার সময় নেই ।আমাকে যে বাড়ি ফিরতেই হবে।'
তিথি বলল  'সেটা কখনো সম্ভব নয়। তুমি আমাকে ফেলে দিয়ে যেতে পারো না।'
মনোজ অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল তার বাড়িতে সমস্যা গুলোর কথা বলল ।
তিথি বলল  ' ঠিক আছে।  বহুদিন পর দেখা ।ভেবেছিলাম যে ,তুমি অন্তত আমার সঙ্গে আমার ডাকে সাড়া দিয়ে কিছুটা সময় কাটাবে ।তাহলে তোমাকে আজকে কথা দিতে হবে, তুমি কবে আমার সঙ্গে আবার দেখা করবে ?'
মনোজ ভেবে দেখল  _আজকের মত মুক্তি পেতে হলে তিথিকে কথা দিতেই হবে ।তারপর পরে ভেবে দেখা যাবে ।
তখন মনোজ বলল  'ঠিক আছে। আমি অন্যদিন তোমার সঙ্গে দেখা করব। তুমি যাও ।ঠিক আছে ।আমিও আসছি।'
মনোজ ট্রেন ধরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো আর তিথি ওখানেই দাঁড়িয়ে যতক্ষণ মনোজকে দেখা যায় দেখতে লাগল ।
মনোজ কিন্তু একবারও তাকিয়ে দেখল না যে চাতক পাখির মতো তিথি কেমন তাকিয়ে আছে ,একপশলা বৃষ্টি কখন  তৃষ্ণার্ত বুকটাকে ভিজিয়ে দেবে।

রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"২৪

চলছে নতুন  ধারাবাহিক  উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম  লেখার। 
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে। 






উদাসী মেঘের ডানায় 
                                                   ( ২৪ পর্ব ) 


জীবনটা ভাঙা,গড়ার খেলার মৌন মুখর হয়ে ওঠে
কখন অবিশ্বাসের ঝড়ের দাপটে টুকরো টুকরো
হয়ে উড়ে যায় সব স্বপ্ন আশা,ভরসার আশ্রয় টুকু আপ্রাণ চেষ্টা করলেও ঝড়ে উড়ে যাওয়া ছাউনিটা শক্ত করে ধরে রাখতে চাইলেও আঘাতে কখন অজান্তে ছুটে যায় তখন আর ফিরে দেখা, হয়না।
আবার কেউ ব্যাস্ত নিপুন হাতের ছোঁয়ায় নতুন একটি
ছাদ মাথার উপরে একমাত্র ভালোবাসার ভরসার গড়া ছাদের। পৃথিবীটাই যেনো রঙ্গমন্ঝের এক নাট্যশালা
জীবনের কত অজানা গল্প লুকিয়ে থাকে ইটের প্রাচীরের ভিতর,কতযে আর্তনাদ জমে ওঠ দেয়ালে দেয়ালে কেইবা কার খবর রাখে।
একটা খবরই থাকে বিশ্বজুড়ে সেটা নারীদের কত রকমের দোষ আছে খুটিয়ে বের করা।
কারো,সব থেকে ও একা, কারো সব থেকো ও মর্ম বুঝেনা।সামিয়া একা এক মানুষ নারী আজ একা হয়েও,মুছে যায়নি তার নাড়ির বন্ধনের অপার এক গন্ধ তা কেবলই মাতৃত্বের এখানেই নারীর জয় আর সেই জয়কে আগলে রেখে আজ একাই পথ চলতে,হবে।কতটা পথ হাঁটতে হবে তার শেষইবা কোথায় হয়তোবা জানা নেই,।তার হৃদয়ে যে শক্তির আগুন জ্বলে উঠেছে অন্যায়ের প্রতিবাদি সেই আগুনের সাথে লড়াই করে বাঁচার যা দেখে আরও নারীরা যেনো বাচাঁতে পারে অপমান অপবাদের বিরুদ্ধে।হঠাৎ করে বদলে যাওয়া এক হাসিখুশি সামিয়াকে বদলে দিয়েছে কতটা কঠিন করে  তুলেছে
তাকে এ সমাজ,সংসার, কাজই যেনো তার জীবন
এযেনো এক অন্য সামিয়া ভুলে গেছে হাসতে কোথায় স্বপ্ন আবেগ সব কিছু আজ অতীত তাকে দাঁড়াতে হবে
একা একেবারেই একা। 
সামিয়ার ভাবনার অতলে হারিয়ে যেতে যেতে তৃষ্ণার
ডাকে চমকে উঠলো
তৃষ্ণা- কি ভাবছো সামিয়া, তোমাকে নিষেধ করেছিনা এভাবে মনমরা থেকোনা অসুস্থ হয়ে যাবে।
সামিয়া- নারে বেঁচে থাকার কথাই ভাবছি, এবারের
লড়াইটা একা টিকে থাকার লড়াই, আমারটা দেখে
আগামি প্রজন্ম ও শিখতে পারে সাহস পায়, আমরা নারী নই শুধ বিধাতার সৃষ্টির সেরা প্রকৃতি তাই শুধু নারীই যে সন্তান ধারণ ক্ষমতার আর এক সৃষ্টির
জন্ম দিতে পারে, আমরা সন্তান ধারণ করি বলেই পুরুষরা বাবা হতে পারে, তবে কেন আমরা এতো অবহেলিত হবো সংসার করতে যেয়ে স্বাক্ষরের কাগজের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীন স্বত্বাটুকু ও
ছিনিয়ে নিয়ে ভোগের সামগ্রীরূপে বেঁচে থাকার নামই
কি জীবন ? 
আর আমরা পরিবারের মান সন্মান রক্ষা করার জন্য তিলেতিলে ক্ষয় হবো
আমাদের জাগতে হবে জাগাতে হবে ওদের।
তৃষ্ণা-একদম ঠিক বলেছো, আমাদের কন্ঠ প্রতিবাদি
হবে এভাবে নিরবতায় মাঝে সব সয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা নয় আমাদের স্বপ্ন কে  বাচঁতে হবে বাচঁতে হবে মাথা উচু করে। 
যে দেশে নারী আপমানিত ও ধর্ষিতা হয় সেই দেশ বা রাষ্ট্রের কখনো কল্যান হতে পারেনা। 
 চলো মা ডাইনিং এ অপেক্ষা করছে রাত হয়েছে বেশ
 সামিয়া - চল 
চলবে...

কামরুন নাহার



কথোপকথন 


এই ছেলেটা

একটু দাড়া

নাম কিরে তোর!


আমার নাম!

সোনার তরী

এই যে নদী... 

তার ওপারেই আমার বাড়ি।


কিন্ত তুমি... 

এই এ বেলা যাচ্ছো কোথায়? 

কে ভাই তুমি?


আমি! 

আমি হলাম মেঘ দুলালী

মেঘের রাজ্যে আমার বাড়ি।


বাঃ!

নামতো তোমার মিষ্টি ভারী।


তুমি কি সেই!

যে গগন কাঁপায় 

বৃষ্টি ঝরায়

হঠাৎ হঠাৎ দমকা হাওয়ায়

বজ্র হয়ে ঝড়ে পড়ে!

আর চারিদিক ভাসিয়ে নেয়!


তুই তো বেশ কথায় পটু!

ঝগড়া করিস পা বাড়িয়ে

এমন করে বলতে আছে!


আমি হলাম 

কৃষক মায়ের মুখের হাসি।

বর্ষা দিনের প্রথম কদম

কিশোরীদের উচ্ছ্বসিত উচ্ছলতা 

বৃষ্টি ভেজা

যা যা তোর ভাষায় ওই তো আমি।

ভীষণ রাগী আর আকাশ কাঁদাই। 


হ্যা, হ্যা যাচ্ছি তো তাই

তুমি ডাকছো!

তাই কি আমায় থামতে হবে?

আমার কত কাজ রয়েছে 

হাঁটছি আমি দেখছো না কো!

দেখছি তোরে

তবে পারছি নাতো তাল মেলাতে।


তুই যে তরুণ 

উদ্দাম এক প্রান ঐশ্বর্য 

আমার বয়স শত বর্ষ

তোর সাথে কি পারি বল!


আচ্ছা তবে বিদায় নিলাম

তুই চলে যা তোরই পথে

এবার আমি বাঁক নেবো যে

তোর পথে আর যাবো না

তুই চলে যা সোনার তরী

ভালো থাকিস

আমার কথা মনে রাখিস

প্রয়োজনে আমায় ডাকিস

মনে থাকবে!


সন্ধ্যা হলো

আসতে পথে

আবার পিছু

ডাকছে কে যে!

এই ছেলেটা 

যাচ্ছো কোথায়?

দাড়াও না ক্ষণ!


আমি হলাম সোনার তরী 

এই যে নদী তার ওপারেই আমার বাড়ি। 


কেনো ডাকছো এমন করে

কে গো তুমি?

এই নিঝুম রাতে অন্ধকারে 

ডাকছো আমায় বারেবারে।


আমি হলাম জোনাক পোকা

রাতের বেলায়ই জেগে থাকা

হঠাৎ করে

তোমায় একা চলতে দেখা

ইচ্ছে হলো সাথী হতে

তোমার পাশে আলো জ্বেলে

তোমার হাতে হাতটি রাখার।


রাগছো কেনো?

রাগবো না! 

সকাল বেলা আসতে পথে

পথ কাটলো মেঘ দুলালী 

চললো আমার সাথে সাথে

গল্প জুড়ে সারাটা পথ

হাটলো আমার পাশে পাশে 

দিন গড়িয়ে রাত্রি এলো

তাও তারে ভুলছি না যে

মন টা যে তাই ভীষণ খারাপ। 


তাই ভেবেছি চলবো একা

করবো না আর গল্প কোন।

দেবো না হাত

একাই হাঁটো! 


আমি হোলাম 

সোনার তরী

যে একাই আসে 

ওপার থেকে 

মিষ্টি হেসে একটু ক্ষণ 

গল্প করে

ফের চলে যায়...

যেই পারেতে নিজের বাড়ি।


ভালো থেকো জোনাক পোকা 

রাতেই জ্বেলো তোমার পাখা

অন্ধকারে পথিক মনে আলো দিও।

ভালো থেকো।

কনিকা মাহমুদ





কল্পনায় ছুঁই তোমাকে


আমি তোমায় কাছে থেকে দেখেছি
কখনো স্পর্শ করার সুখ পাই নি
আমি কল্পনায় তোমাকে বহুবার স্পর্শ করেছি
স্পর্শের সুখটুকু আমায় ছোঁয়নি।

স্পর্শ করেছি তোমার চিবুক, তোমার ঠোঁট 
ঘন চুলে বুলেয়েছি হাত 
এভাবেই কল্পনায় সুখ কিনেছি
বহু দিন বহু রাত।

আমি কল্পনায় বিভোর হয়েছি
তোমার চেনা শরীরের গন্ধে 
বাঁকা চাহনিতে মুগ্ধ হয়েছি
অজানা সুখ অজানা আনন্দে।

কখনো যদি পড়ন্ত বিকেলে সুযোগ হয়
তোমার আঙ্গুলে আঙ্গুল স্পর্শ করার
কিছুক্ষন ধরে থাকতে দিও
তুমিও কিছু স্পর্শের সুখ বিনা দাবিতে নিয়ে নিও।

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল"২১

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল" 
 




বনফুল 
         ( ২১ তম পর্ব ) 
 

                          পলাশ মাথা নিচু করে বসে আছে ওনাদের সামনে। পলাশকে খানিকটা লজ্জা পেতে দেখে ওয়াজেদ সাহেব প্রশ্ন করলো রেজাল্টের পর কি করবে, কিছু ভেবেছো? পলাশ উত্তর দিলো জ্বি, না আঙ্কেল এখনো কিছু ভাবিনি,ওটা রেজাল্টের উপর নির্ভর করছে, যদি ভালো হয় ইচ্ছে আছে বাহিরের কোনো ভার্সিটি থেকে এম,বি,এ,করবো। 
জুঁইয়ের মা মনোয়ারা বেগম বুঝতে পারছে ছেলে মেয়েরা একটু গল্পগুজব করবে.....তাই নিজের স্বামীকে বললেন তুমি শাওয়ার করে এসো, 
আমি টেবিলে খাবার পরিবেশন করছি,এই বলে ওদের একটু সুযোগ করে দিলেন। 
বাবা-মা চলে যেতেই জুঁই পলাশ আর সৈকতকে উদ্দেশ্য করে বললো এ হচ্ছে আমার বান্ধবী অহনা, আর অহনাকে বললো জুঁই ও হচ্ছে...
কথা শেষ হবার আগেই অহনা বলে বসলো, বুঝেছি তোর ফাগুনের.... 
 পলাশ একটু লজ্জা পেলো।অহনা পলাশ কে উদ্দেশ্য করে বললো, তা পলাশ বাবু,মৌ জমেছে তো?পলাশ একদম চুপ করে আছে, বেশ মজা পাচ্ছে, কিন্তু মুখে কিছু বলছে না।
জুঁই আবার বললো, আর উনি হচ্ছেন পলাশের বন্ধু সৈকত ভাই। 
এবারে সৈকত মুখ খুললো,মৌ জমেছে বলেই না আজ আমার, আপনার নিমন্ত্রণ। 
অহনাও ওদের ইশারায় সালাম জানালো। তারপর অহনা পলাশকে বললো ভাইয়া আমার দুর্ভাগ্য ভার্সিটিতে চান্স না পাওয়ায় আমাদের আলাদা হতে হলো। পলাশ বললো জুঁই ও তুমি মাঝেমধ্যে একটু সময় বের করে একসাথে হবে সমস্যা কি? অহনা বললো সেতো হবো কিন্তু প্রতিদিন তো আর দেখা হচ্ছে না।
কথার মাঝখানে সৈকত ঢুকে বললো কি আর করা যাবে, বাস্তবতা কে মেনে নিতেই হবে। 
সৈকত কথা বলতেই, এবারে অহনা সৈকত কে ঠেস দিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বললো
সৈকত দেখতে পাচ্ছি কিন্তু সামনে ঊর্মিমালা কই?
দেখতে পেলাম না তো! 
সৈকত হেসে উঠলো। 
জুঁই বললো,হাসলেন কেন ভাইয়া? 
সৈকত বললো, ওনার কথা শুনে। 
আমার কথা শুনে?  কেন?
সব কিছু কি চোখে দেখা যায়, মন দিয়েও তো কিছু কিছু জিনিস দেখতে হয়,সৈকত জবাব দেয়।
অহনা,হুম্ম বলে চুপ করে যায়।
সৈকত আবার বলে, আমি তো দেখতে পাচ্ছি, তবে তার পানি লোনা না মিঠা জানিনা। 
এবারে জুঁই জবাব দিলো,পরিক্ষা প্রার্থনীয়।
সবাই হো হো হো করে হেসে ফেললো। 
একটু পরে, সৈকত পলাশ ও জুঁইকে একটু সুযোগ করে দেওয়ার কায়দায় বললো জুঁই আমি কি তোমাদের বাড়ীর ভিতর ঘুরে দেখতে পারি? জুঁই বললো,ওহ্,শিওর ভাইয়া,অহনাকে উদ্দেশ্য করে  জুঁই  বললো, তুই  কি সৈকত ভাইয়া কে নিয়ে বাড়ি টা ঘুরিয়ে দেখাতে পারবি? অহনা বললো  আপনি কি আমার সাথে যাবেন? সৈকত বললো আপনি  সহযোগিতা করবেন তাতে সমস্যা কোথায়? 
 অহনা বললো জ্বি ভাইয়া চলুন তাহলে, ঘুরে দেখবেন...।  ওরা দুজন চলে যেতেই জুঁই পলাশের পাশে বসলো, পলাশ সুযোগ বুঝে, জুঁই আজ তোমাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে... 
জুঁই প্রশ্ন করলো যেমন? 
ইস এতো কিছু বলা যায়! অন্যদিন থেকে বেশি এগ্রেসিভ  লাগছে........ 
জুঁই বললো, তাই বুঝি!তোমাকেও আজ বেশ বর বর মনে হচ্ছে।
পলাশ বললো, বর বর না-কি বর্বর? 
বলেই হাহাহা হাহাহা হাহাহা হেসে উঠলো । 
জুঁই বললো,হুমম,বুঝেছি রসিক নাগর।
 তুমি কি আমার রুম,আর ছাদ-বাগান দেখবে না ? এই বলে  পলাশের হাত ধরে বললো চলো দেখবে,
 প্রথমে ওর রুমে নিয়ে গেল। পলাশ অবাক হয়ে দেখছে আর ভাবছে জুঁই কতো শানশৌকতে বড় হয়েছে, আমি তা দিতে পারবো তো.... এই ভেবে একটু আনমনা হয়ে যায়, জুঁই পলাশের হাত ধরে বললো কি হলো তোমার! কি ভাবছো? 
জুঁই হাত ধরতেই পলাশ   বাস্তবে ফিরে এলো, জুঁইয়ের শরীরের পারফিউমের একটা আকর্ষণীয় সুবাস  অনুভব করলো.....। 
জুঁই এবারে পলাশের হাতে একটা আলতো চাপ দিতেই
পলাশ স্থবির হয়ে গেলো। জুঁই পলাশের এই অবস্থা টা খুব এনজয় করতে করতে পলাশের বুকে তার মাথা টা রেখে বললো, কি হলো, চুপ করে আছো কেন?কিছু বলো?
পলাশ মন্ত্রমুগ্ধ বালকের মতো জুঁই য়ের দুটো গালে হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে মাথাটা চেপে ধরে বললো, জুঁই, আমি কি....
কথা শেষ না হতেই 
মুহূর্তে জুঁই পলাশ কে জড়িয়ে ধরে বলে, হ্যাঁ তুমি, তুমি আমার, শুধু ই আমার।পলাশ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না,জুঁইয়ের কপালে চুমু খেয়ে  বললো জুঁই আমি তোমাকে এতো সাচ্ছন্দ্য দিতে পারবো তো? 
জুঁই আরো জোরে চেপে জড়িয়ে ধরতেই,পলাশ ভয় পেলো,বললো ছাড়ো,কেউ দেখে ফেলবে। 
জুঁই বললো, আমার ঘরে কেউ আসবে না। তুমি যে আমার অন্তরের সম্পদ,বাইরের এই বৈভব তার কাছে কিচ্ছু না।এইসব ভেবে তোমার মন খারাপ হচ্ছিল! 
পলাশ জুঁইয়ের মাথায়, ঘাড়ে হাত বুলাতে বুলাতে বললো হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কি? জুঁই এবার নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো এসব ভাবনা ছেড়ে এখন চলো বাগান দেখবে......
ছাদে উঠে পলাশ আরো আশ্চর্য হলো কি রুচিশীল জুঁই.... পলাশ নিজের অজান্তেই বলে উঠলো খুব সুন্দর তোমার বাগান, আসলে  তুমি নিজেই যে আরো বেশি সুন্দর। 
এরই মধ্যে ময়না ছাদের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে বললো আপা, খালাম্মা বলছেন খাবার টেবিলে আসার জন্য।


                                                                                                                                 চলবে...