১৭ নভেম্বর ২০২১

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৪৫

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "






 টানাপোড়েন ৪৫

যাত্রাপথে


'জয় গনেশ, জয় গনেশ ,জয় গনেশ দেবা' মনোজ রেখাকে বাথরুম থেকে বলল ' দেখো তো কে কলিং বেল বাজাচ্ছে?আমার মনে হয় পার্থ এসেছে।'
রেখা বলল ' হ্যাঁ, দেখছি ।কেন তুমি পার্থকে ফোন করেছিলে?'
মনোজ বাথরুমের কলটা খুলে দিয়ে বলে গাড়ির ব্যাপারে ।গাড়ি ঠিক না হলে তো আজকে যেতে পারবো না।'
রেখা বলল 'এরকম কথা বোলো না ।আমার ভালো লাগছে না ।যেদিনই যাবার চেষ্টা করছি কিছু না কিছু বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছি। দূর ছাই ভালো লাগে না'।

মনোজ বাথরুমের কলটা বন্ধ করতে করতে যখন কথা বলছিল,তখন বাথরুমের কলের জলের যে আওয়াজটা ছিল তা ক্রমশ মৃদু হয়ে এল ,আর মনোজ বলল  'আমি কি বলছি বলো? যদি না পায় তাহলে কি করবে বলো?'
রেখা বলল  'কেন যে এত অলক্ষুণে কথা বলো কে জানে বাবা?'
রেখা গজ গজ করতে করতে গিয়ে দরজা খুলল।
পার্থ বলল  'বৌদি কখন বেরোবেন?'
রেখা বলল 'এই তো নাস্তা করেই।'
পার্থ বলল  'ঠিক আছে ।তাহলে আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।'
রেখা বলল  'কি উপকার যে করলে ভাই ,তোমাকে আর ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না।'
পার্থ বলল  'কি বলেন যে বৌদি পাশাপাশি থাকি মানে প্রতিবেশী ।এটুকু করবো না ?তবে হ্যাঁ ,এটা আমার নিজের গাড়ি নয় ।আমার গাড়িগুলো সব বুকিং আছে?'
রেখা বললো  'তাহলে কি হবে?'
পার্থ বলল  'না বৌদি ,কোনো চিন্তা করবেন না ।আর দাদা কোথায় ?দাদাকেও চিন্তা করতে বারণ করবেন ।কারণ আমি যে গাড়ি দিচ্ছি ,তার ড্রাইভার খুব ভাল ।আপনারা নিশ্চিন্তে যাত্রা করুন।'
রেখা বাথরুম দেখিয়ে বলল  'ওই যে বাথরুমে।'
 পার্থ বলল  'আপনারা যখন যাবেন ই ,গতকাল বললেই তো পারতেন?'
রেখা বলল 'না গো ,এবার ভেবেছিলাম যে ট্রেনে যাবো ।সেজন্য  জানানো হয় নি।'
পার্থ বলল  'ও আচ্ছা।'
রেখা বলল  'ট্রেন তো মিস হয়ে গেল ।সেই তোমাকেই বলতে হল।'
পার্থ বলল  'না ,না এরকম কেন কথা বলছেন, আমরা তো সব সময়ই আছি।'
রেখা হেসে বলল  'হ্যাঁ ,সে তো ঠিকই।'
পার্থ বলল  'বৌদি তাড়া আছে আসছি ।আমার আবার ওই টাটা সুমো গাড়িটা ভাড়া যাবে, ওর ড্রাইভার এসেছে কিনা দেখি ।এ আবার  নতুন ড্রাইভার।'
রেখা বললো 'আরে সকালবেলা এসেছো ,একটু চা খেয়ে যাও ভাই।'
পার্থ বলল  'না বৌদি ,আপনাদের দেরি হয়ে যাবে চা করতে গেলে। আমি অন্যদিন খাব।'
রেখা বলল  ' কতক্ষণ  আর লাগবে?'
পার্থ বলল  'না, না, ঠিক আছে বৌদি। সেফ জার্নি। আসছি বৌদি।'
রেখা বলল ' ঠিক আছে ভাই এসো।'
রেখা দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছে ,তখনই দেখছে চৈতির মা।
চৈতির মা বলল ' দিদি একটা কথা আছে।'
রেখা একটু মনে মনে বিরক্ত হলো তবুও ভদ্রতা বশে স বলল  'কি কথা দিদি?'
চৈতির মা বলল 'একটু ভেতরে যাব গিয়ে বসে বলব ?একটু সময় লাগবে।'
রেখা বলল ' দিদি আমি এসে শুনি ।আমরা না আজকে এক জায়গায় যাব।'
চৈতির মা বলল ' কোথায় যাবেন দিদি?'
এমন সময় মনোজ হাঁক দিচ্ছে  'রেখা, রেখা ,রেখা।'
রেখা   দরজার দিকে তাকিয়ে বলল  'যাচ্ছি ।একটু কথা বলছি।"
চৈতির মায়ের এই কৌতুহলগুলো একদমই রেখার ভালো লাগে না কিন্তু মানুষ হিসেবে চৈতির মা খুবই ভালো ।
রেখা বলল 'দেশের বাড়ি যাবো।'
চৈতির মা বলল 'ও আচ্ছা। দিদি ,তাহলে আমি আসি ।পরে আপনাদের সঙ্গে কথা হবে।'
রেখা বলল ' আচ্ছা দিদি ।কিছু মনে করবেন না।'
চৈতির মা বলেল ' এরকম কথা কেন বলছেন দিদি ?'
চৈতির মা বলল 'না আমি না বুঝতে পেরে আপনাদের একটু বিরক্ত করলাম।'
রেখা বলল ' না না বিরক্তির কি আছে?'
রেখা দরজাটা বন্ধ করে দিল।
রেখা হন হন করে এসে ঢুকলো মনোজের ঘরে
বলল  'কি বলছো, বলো?'
মনোজ বলল  'কোন প্যান্ট ,কোন শার্ট পরবো কিছুই তো রেখে দাও নি।'(ওয়ারড্রব দরজা খুলে দাঁড়িয়ে)
রেখা একটু বিরক্ত হয়ে মনোজকে হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল'বাপরে বাপ একটা জিনিস কি তুমি নিয়ে নিতে পারো না?'
মনোজ একটু আহ্লাদের সুরে বলল'রেখা তুমি তো জানো আমি এসব পারি না । তুমিই আমাকে  বদঅভ্যাসে পরিনত করেছ।'
রেখা বলল  'তাই নাকি?'
মনোজ (রেখার চিবুক দুটো ধরে) বলল  'ইয়েস ম্যাম'।
রেখা বলল  'অতো আদিখ্যেতার দরকার নেই। এবার দেখো, ব্ল্যাক প্যান্ট আর black-white কম্বিনেশনের চেক শার্ট টা দিচ্ছি কেমন।'

রেখা প্যান্ট শার্ট বের করে দিয়ে মনোজকে বলল তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে খাবার টেবিলে এসো আমার অনেক কাজ বাকি আছে বলেই দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করলো। 
ঠিক তখনই মনোজ 'রেখা রেখা রে খা আ.. আ বলে ডেকে উঠল।
 রেখা কাছে এসে বলল ' কি হল ডাকছো কেন?'
'তুমি কার সঙ্গে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলে পার্থর সঙ্গে?'
রেখা বলল " আরে না চৈতির মা এসেছিল।'
মনোজ বলল  "কেন?'
রেখা বলল ' কে জানে?'
মনোজ বলল ' মেয়ের ব্যাপারে হতে পারে'
রেখা বলল'আমায় বলছিলে একটু সময় নিয়ে কথা বলতে হবে । আমি বললাম অন্য দিন আসতে'।
মনোজ বলল ' দেখছো না, অনেকদিন ধরে মেয়েটা আছে মনে হচ্ছে কিছু সমস্যা হয়েছে'।

রেখা বলল'তুমি তাড়াতাড়ি এসো আমি খেতে দিয়ে দেবো। এরপর মিলিদের খাবার আছে।' 
মনোজ চুলটা  নিয়ে বললো চলো।'
মনোজ খাবার টেবিলে বসে আর রেখা রান্নাঘরে।
মনোজ রেখাকে জিজ্ঞেস করছে 'আজ কি মেনু হয়েছে।'
রেখা বলল ' পরোটা আর আলুর দম।'
মনোজ বলল ,'নাও তাড়াতাড়ি দাও।'
রেখা রান্নাঘর থেকে পরোটা আলুর দম মনোজকে দেয়
মনোজ বলল মিলিদের খাইয়ে যাবে তো?'
রেখা বলল  'হ্যাঁ',
রেখা রান্নাঘর থেকে মেয়েদের খাবারটা নিয়ে দিতে গেল।
কিছুক্ষণ পর মনোজ রেখা রেখা বলে ডাকতে লাগল
রেখা বলল কি হয়েছে?
মনোজ বলল 'আর পরোটা হবে?'
রেখার হাতের আলুর দম খুবই টেস্টি।
রেখা বলল ' হ্যাঁ।'
রেখা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে পরোটা দিতে গেলো।
তখন মনোজ  বলল 'এক্সট্রা আছে তো?'
রেখা জানে আর এক্সট্রা নেই তবু বলল  'আছে?'
মনোজ  রেখাকে মাথায় হাত দিয়ে বললো  'সত্যি করে বলো?'
রেখা  হাত সরিয়ে নিয়ে বলল'আরে আমি আজকে ওটস খাব।'
মনোজ বললো ' কি ব্যাপার ওটস খাবে?'
রেখা বললো ' তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে তাই।'
মনোজ এখানেও ধরে ফেলল। ঘরে ওটস নেই কারণ মাসকাবারিতে এবার ওটস লেখানো হয় নি।
মনোজ বলল  'রেখা তুমি তোমার খাবারটা আমাকে দিয়ে দিলে।'
রেখা বলল ' তাতে কি হয়েছে তুমি খেতে ভালোবাসো আমি পা রুটি, কলা ,ডিম সেদ্ধ খেয়ে নেব।'
মনোজ বলল'তুমি এত ভালো কেন?'
রেখা বলল   এ আবার কি কথা?'
রেখা বললো  'এসব কথা ছাড়ো মিলিদের খাবার দেবার ব্যবস্থা করে গেলে।'
মনোজ বলল  'চিন্তা কি আছে দেবে গৌরী সেন।"
রেখা হেসে বললো ' তুমি পারোও বটে। নাও তাড়াতাড়ি ওঠো।'
ওদিকে পার্থর পাঠানো গাড়ি এসে হর্ন দিতে শুরু করলো। রেখা বলল 'দেখলে গাড়ি এসে গেছে এখনো আমার কিচ্ছু হলো না।'
মনোজ বললো টেনশন নিও না দেখছি।'
রেখা চটপট তৈরি নিল। তারপর গাড়িতে উঠল আবার গাড়ি থেকে নেমে পরল। মনোজ বললো ' কি হলো?'
রেখা বললো ' মিলি, মিলির বাচ্চাদের একটু দেখে আসি।'
তারপর আবার এসে গাড়িতে চাপল রেখা, আবার নেমে পরল।
মনোজ বললো 'এবার আবার কি হলো?'
রেখা বলল' চৈতির মাকে একটু বলে যাই। বলে গাড়ি থেকে নেমে ডাকতে শুরু করলো দিদি দিদি।'
চৈতির মা বলল ' কি হলো দিদি?'
রেখা বলল 'একটু খেয়াল রাখবেন'.।
চৈতির মা বললো'তা আর বলতে।'
রেখা বলল  ''আসছি।'
চৈতির মা বলল  'দুর্গা দুর্গা যাত্রা পথ শুভ হোক।'
রেখা গাড়িতে উঠে বসল । ড্রাইভার বলল' দাদা কোন দিক দিয়ে যাবেন।'
মনোজ বলল'ত্রিবেণী হয়ে কালনা রোড ধরে বৈচি দিয়ে মেমারি হয়ে।'
ড্রাইভার বলল  'ঠিক আছে দাদা দিয়ে গাড়ি ছোটালো'
গাড়িতে তখন বাজছে 'আমারো পরানো যাহা চায়।'
রেখা বললো  ' নতুন ড্রাইভার কি করে জানল আমার পছন্দের গান।'
মনোজ বলল'এই হচ্ছে পার্থ বেটার কাজ।'
রেখা বললো  'সত্যিই পার্থ ছেলেটা খুব ভালো।'
এমন সময় ব্যাগে রেখার ফোন বেজে উঠল ।
রেখা ফোনটা বের করে দেখে রিম্পা দি ফোন।
রেখা বলল  ''বলো।'
রিম্পা দি বলল বেরিয়ে গেছিস?'
রেখা বলল  'তোমার মনে আছে?'
রিম্পা দি বললো 'তা মনে থাকবে না। এখন কোথায় আছিস?'
রেখা বলল  'এই তো বৈঁচি ক্রস করে জিটি রোডে উঠছে গাড়ি।'
রিম্পা দি বলল ' ঠিক আছে। সাবধানে যা ।যাত্রাপথ শুভ হোক ।পৌঁছে কিন্তু আমাকে ফোন করিস কেমন।'
রেখা বলল  'অবশ্যই।'
রিম্পা দি বলল 'ঠিক আছে ফোন ছাড়ছি।'
রেখা বলল'ok'
রেখা অনেকদিন পর চেনা রোড দেখতে পেয়ে মনে পড়ে গেল তার সেই জনম দুখিনীর ঘরের কথা। তার দুচোখ বেয়ে জল বের হতে লাগলো। মা সন্তানের যে আত্মিক সম্পর্ক হয়তো আজ কাছে নেই কিন্তু মায়ের সেই চেনা গন্ধ মায়ের হাতের স্পর্শ করা জিনিসগুলো সমস্ত কিছু আজকে রেখা নিজের হাতে স্পর্শ করে দেখতে পারবে। একটাকা আনন্দের আর কি হতে পারে। আজ তাই বারবার কবি অরুণ মিত্রের কবিতা লাইন মনে পড়ছে'সলতেটা নেভার পরও এই ডাক ঘুরতে থাকবে।'এ যেন জননী তার ক্লান্ত প্রাণ সন্তানকে ঘরে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছে।
মনোজ দেখছে রেখার চোখে জল। তখন বলল'কাঁদছো কেন? না না থাকলেও মায়ের সমতুল্য তোমার কাকিমা আছেন তোমাকে ভীষণ স্নেহ করেন ভালোবাসেন। সেখানে গেলে তোমার খুব ভালো লাগবে। মনের ভেতরে কোন টানাপোড়েন রেখো না। যাত্রাপথ চোখের জলে সিক্ত ক'রো না। বলেই রেখাকে দু'হাত দিয়ে কাছে টেনে নিল। মনোজ রেখার কন্ঠে কতবার শুনেছি এই কবিতার লাইন তাই সে  বললো'বিভুঁই মনের মধ্যে পথ খুঁজে কতবার দিশেহারা'। আজ তুমি সেই পথের সন্ধানে চলেছ।

রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়/শেষ পর্ব

চলছে নতুন  ধারাবাহিক  উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম  লেখার। 
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে। 




উদাসী মেঘের ডানায় পর্ব 
শেষ পর্ব 


তৃৃষ্ণা কে সামিয়া,কিছুতেই রাজি করাতে পারলোনা
পার্লারে যেতে তৃষ্ণা,নিজেই সাজবে বললো সামিয়াকে
- তুমি তো কোর্স করেছিলে আমি ও কেন পার্লারে যাবো ওরা তো চেহারাই পালটে দিবে। আমি নিজে সাজবো হাত খোেপা করে বেলি ফুল জড়াবো শাড়িটা তুমি বেশ সুন্দর করে পড়াতে পারো কাজেই দরকার নেই,।শেষ পর্যন্ত তৃষ্ণা নিজেই সাজলো সামিয়াকে নিয়ে শাড়ি গহনা পড়িয়ে,সামিয়া অবাক হয়ে তৃষ্ণাকে
দেখছে, তৃষ্ণা লজ্জা পেয়ে বললো- খুব খারাপ লাগছে?
সামিয়া হেসে বললো- না,আমি চোখ ফেরাতে পারছিনা, অপুর কি করবে তোকে দেখে তাই ভাবছি।তৃষ্ণা- থাক,হয়েছে আর বলোনা।
এবার সবাই মিলে চলে গেলো চিন মৈত্রী তে।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ,হলো কান্নাকাটির পালা শেষ করে,অপু তৃষ্ণা কে নিয়ে গাড়িতে বসলো।
কিছু্ক্ষণ পর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ি এগুতে শুরু করলো তৃষ্ণা গাড়ির জানালায় মুখ বের করে কাদঁছে আর মাকে দেখছে। গাড়ি সবাইকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেলো, অপু তৃষ্ণার কান্না দেখে কি করবে ভাবছে, রুমাল দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে হাতটা নিজের হাতে নিয়ে আলতে চাপ দিয়ে কানের
কাছে মুখ নিয়ে বললো- ফুটবল টিম লাগবে মনে আছেতো, এখন আার উপায় নেই পালাবার।
তৃষ্ণা হেসে বললো - খালি দুষ্টমি কথা ছাড়া কিছুই জানোনা।
বাড়িতে ঢুকে অপুর রুমে নিয়ে এলো তৃষ্ণা অবাক হয় গেলো বেলি ফুল ওর প্রিয় ফুল তাই দিয়ে পুরো রুমটা সাজানেো হয়েছে ফুলের গন্ধে রুমটা ভরে আছে।
মুগ্বতায় ভরে,উঠলো মন, ওকে বসিয়ে এবার সবাই মেতে উঠেছে তৃষ্ণাকে নিয়ে, রাত প্রায় ১টা বাজতে
চলছে সবাই বিদায় নিলো অপু রুমের দরজা বন্ধ করে কাছে এসে বসলো।
ঘোমটা সরিয়ে গাইলো
বধু কোন আলো লাগলো, লাগলো চোখে
গান শেষ হতেই আলো নিভিয়ে দিলো।

ইকবাল বাহার সুহেল ( ইংল্যান্ড )




প্রেম পত্র



দেখে নিও আমিও কবি হবো 
সম্পূর্ণ জীবন .. বলে কিচ্ছু নাই
নদীর কষ্ট , নীল জলের ভেতর ক্রমশ বিলীন হয়
দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান প্রেম জীবনের গভীরতা ধরতে ব্যর্থ হয় , হয়তো ধরতে চেষ্টাও করে না কখনো !

চোখের ভেতর শূন্যতা দেখে ,মন যখনই কৌতূহলী হয় ! খুবই অচেনা লাগে তোমাকে 
তাতে কারো কিচ্ছু যায় আসে না .. অগনতি প্রেমিক আছে যাদের তাদের কবি হতে ও কবিদের প্রেম ভালোই তো লাগে .. 
যদি সে বলে সম্পর্কের সমীকরণে পাল্টে যায়

অনিন্দ্য সুন্দর কথামালায় সুনির্মল অনুভূতি সিক্ত অনুরণন ধ্বনি ,

চটপটি আমি খাওয়াবো চলে এসো... কোন এক বরষায় সাথে কদম ফুল গুজে দেবো !

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল"২৬

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল" 






বনফুল
                            ( ২৬ তম পর্ব ) 

আনন্দে আত্মহারা হয়ে জুঁই বাবাকে ফোন করে বললো আব্বু তোমার আসতে আর কতক্ষণ লাগবে? 
 ওয়াজেদ সাহেব মেয়েকে বললো জুঁই মা তোমার জন্য কিছু কি আনতে হবে?
জুঁই বললো না আমার কিছু লাগবে না  তুমি বাসায় চলে এসো। 
ওয়াজেদ সাহেব মেয়েকে বললো জুঁই আমি বাসার কাছাকাছিই আছি মিনিট দশেকের মধ্যে চলে আসবো। মেয়ের আজকের মতো খুশি এর আগে কখনো দেখেনি মা মনোয়ারা বেগম।
জুঁই পায়চারি করছিলো বাবা আসার অপেক্ষায়....
ওয়াজেদ সাহেব কলিংবেল বাজাতেই দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে বাবার হাতে ধরে বললো জানো  আব্বু পলাশ রেকর্ড মার্কস নিয়ে পাশ করেছে....
মেয়ের খুশি দেখে উনি বললেন এতো খুবই আনন্দের খবর।। 
বাবা-মা মেয়েতে আনন্দ করে বেশকিছু মিষ্টি খেলো, 
জুঁই বললো আম্মু আমি খেয়ে এসেছি,বাকিটা  তোমরা খেয়ে নাও।
এই বলে জুঁই নিজের রুমে চলে গেল। হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় শুয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলো...।

ওদিকে পলাশের বাসায়ও আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো।পলাশ ফোন রিসিভ করতে করতে ক্লান্ত। সব কাগজের সাংবাদিক, টিভি চ্যানেলের  রিপোর্টারদের বুঝাতেই পারছেনা ও আজ কোনো অবস্থাতেই সাক্ষাৎকার দিতে পারছেন না,ভীষণ ক্লান্ত।  কিন্তু ওনারা আজই  সাক্ষাৎকার নেবে,কেননা সাংবাদিকরা সবসময়  তাজা খবর কভার করতেই অভ্যস্ত ।  নিরুপায় হয়ে বিকাল পাঁচটায় আসতে বললো.....। 
পলাশ ছোট বোন তিথিকে ডেকে বললো বসার ঘরটা একটু গুছিয়ে রাখতে।  সাথে ছোট ভাই শিমুলও হাত লাগলো কারণ ঘড়িতে অলরেডি সাড়ে তিনটা বেজে গেছে। ঘর গুছানো শেষ হতে না হতেই সাংবাদিকদের দল এসে হাজির, সঙ্গে টিভি রিপোর্টারাও। 

                                                                                                                      চলবে...

রেহানা বীথি





চাঁদ ওঠে যুবক সন্ধ্যায়


নদীপথ তছনছ 
ভাবলাম, বাগানে যাই 
ওখানে পাখিরা আছে, ভোমরাও লীন হতে চায় 
কখনও তো আমিও লীন হতে চাই 
কথা বলি জানালায় হেলে থাকা হেমন্তের সাথে  

বাগানে পোড় খাওয়া রোদ 
বিষাদে কান্নায় মাখামাখি মধু-মঞ্জরী
আমাকে একটু আসন পেতে দেয়ার কথা 
ওদের মনেই এল না 
তবু আমি শুকনো পাতার আসন পেতে নিলাম
কিছু গল্প করলাম নিজেরই সঙ্গে 
রোদ হাসল

রোদের হাসি দেখে বললাম
জানো, নিরুদ্দিষ্ট নাবিকের মতো 
একবার হারিয়ে গিয়েছিলাম 
বাউলের পিছু পিছু, বাউলের পাশে পাশে 
বহুদূর ... 
বিরিক্ষির ছায়া ছেড়ে আরও আরও দূর 
যেন তেপান্তর... 

রোদ বলল, হারাতে হয় 
মাঝে মাঝে ওষ্ঠ ডুবিয়ে তুলে আনতে হয় জীবন 
তুলে আনতে হয় আদিম প্রত্ন-নিদর্শন 
ঠোঁট ডুবিয়ে...

বাগানে এসে  
একটি সিঁকেয় ঝুলে পড়ে শীতগন্ধ
লতায়-পাতায় জমে বিন্দু বিন্দু স্বেদ...
তছনছ নদীপথে নামে অথৈ কুয়াশা 
প্রাচীন স্তনের ধ্বংসাবশেষের মতো 
চাঁদ ওঠে যুবক সন্ধ্যায়  

আমি নেমে যাই 
বাগান থেকে শীতে 
শীত থেকে কুয়াশায় 
শৈশবে, যৌবনে 
বালখিল্যতায়...

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"১৫

 স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শামীমা আহমেদ'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "অলিখিত শর্ত"




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
                                              (পর্ব ১৫)
   শামীমা আহমেদ 

রাতের খাবারের টেবিলে ভা,ইবোন শায়লা আর রাহাতের  বেশ চুটিয়ে আড্ডা হলো।রাহাতের বন্ধুরা কে কোথায় কী করছে? কে কী হতে চেয়ে হতে পারেনি, সহপাঠী মেয়েদের কার কোথায় বিয়ে হয়েছে, কে মেয়ে খুঁজছে, কে দেশের প্রতি হতাশ হয়ে বিদেশে পাড়ি জমালো! এমনি নানান গল্প শেষে  শায়লা সাড়ে দশটার দিকে নিজের ঘরে এলো।প্রতিরাতে ঘুমাতে যাবার আগে শায়লা নিজেকে একটু ফ্রেশ করে নেয়।ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখটা ধুয়ে নেয়া, দাঁত ব্রাশ করা, খুব ভালো করে হাত, পা ধুয়ে নেয়া। ছোটবেলায় সারাদিন খেলাধুলা ছুটোছুটির কারণে  মা এই পা ধুয়ে ঘুমানোর অভ্যাসটা করেছেন।শায়লা নিজেও দেখেছে এতে বেশ ভালোই লাগে। ঘুমটা ভালো হয়।একটা  হালকা  ঢিলেঢালা পোশাক পরে নেয়া,চুলে ব্রাশ করা, শরীরের ক্লান্তি দূর করে দেয়।সবশেষে ময়শ্চারাইজার লাগানো।এতে ত্বকের আদ্রর্তা ঠিক থাকে।ত্বক রুক্ষ হয়না। কখনো মেকআপের জন্য  নয়, নিজের সৌন্দর্যটা ধরে রাখতে শায়লার একটু আধটু পার্লারে যাওয়া হয়। শায়লার গায়ের রঙটা শ্যামলা হলেও তার ছিপছিপে গড়নটা অনেকের কাছেই ঈর্ষার কারণ। শায়লা আয়নায় নিজেকে একটু দেখে নিলো। আজ কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে লজ্জাবোধ হচ্ছিল।
টুং শব্দে মেসেজ এলো! শায়লা মোবাইলটার দিকে এগিয়ে গেলো।
হু, শিহাব সাহেবের মেসেজ।
---এইতো ফিরলাম!
শায়লা  বেশ সহজভাবেই লিখে ফেললো,
এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকলেন?
বন্ধুদের সাথে গল্প আড্ডায় সময় কোনদিন দিয়ে কেটে গেছে বুঝিনি।
সবসময়ই কি এমনটা করেন?
আরে নাহ! মাঝে মাঝে।আচ্ছা ফ্রি হয়ে কথা বলবো। 
শায়লা বললো,  ঠিক আছে, খেয়ে নিন।
হু, ফ্রেশ হয়ে আভেনে খাবার গরম দিচ্ছি।
বলেই নিশ্চুপ হলেন।
অচেনা এই মানুষটার জন্য শায়লার মনটা হু হু করে উঠলো!কেমন যেন মায়া জন্মালো। মনে হচ্ছিল দৌড়ে গিয়ে টেবিলে  খাবার সাজিয়ে দিয়ে আসি !শায়লা নিজেকে মিলিয়ে নিল ভাবনার সাথে।
ইস! যেখানে বাঙালি মেয়েরা  না খেয়ে থেকে স্বামীর  ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকে,
নিজে হাতে খাবার বেড়ে খাওয়ায়,নিজে ভালোটা না খেয়ে স্বামীর প্লেটে তুলে দেয়, সেখানে তার এমন কেউ নেই,নিজের হাতেই সব করতে হচ্ছে? সে না হয় অনেক ছেলেরা তা করতে পারে কিন্তু ঘরের এই শূন্যতাতো কিছুতে পূরণ হওয়ার নয়।কেমন করে থাকে একা একা? নাকি কারো সাথে আবার প্রেম ট্রেম চলছে? তাই কি বউ চলে গেলো নাকি? আজকালতো পরকীয়ায় সমাজ ভরে গেছে। সত্যিকারের প্রেমের সংজ্ঞা বদলে গেছে। আর ব্রেকআপও খুবই  সাধারণ ঘটনা। এ যুগের মেয়েরা খুব সাহসী। 
নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছে সহজেই বাস্তবায়ন করতে পারে। শায়লা বুঝে না সে কোন যুগে পড়েছে? কেন সে নিজের মতামতটা শক্ত করে বলতে পারে না?
শিহাব আর কথা বাড়ায়নি।হয়তো খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত হলো।শায়লা কী তার জন্য অপেক্ষা করবে? 
কিন্তু কেনই বা অপেক্ষা করবে? আবার ভাবল, আহা! বেচারা ঘরে ফিরেই আমাকে জানিয়েছে।তাহলে নিশ্চয়ই আসতে পথে আমার কথা ভেবেছে।
মনের ভেতর কোন সন্দেহ রেখে শায়লা কখনো শিহাবকে কোন প্রশ্ন করেনি।পাছে আবার তার কাছে না ছোট  হতে হয়!
লোকটিতো তার উপর আস্থা রাখতে চাইছে।
একজন মনের কথা বলবার বন্ধু বা সঙ্গী সবারই আজীবনের চাওয়া।
শায়লা ভাবনা ক্রমেই ডালপালা গজাচ্ছে।তার সম্পর্কে অনেককিছু জানতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু কখনো জানা হচ্ছে না উনি কোথায় থাকেন, কী করেন? কত মানুষ কত ধরনের অবৈধ ব্যবসা করে। তেমন কিছুতে আবার জড়িত নয়তো? একা এভাবে একটা ফ্ল্যাটে থাকেন,বিষয়টি নিয়ে শায়লা বেশ চিন্তিত হলো।
শায়লার মনে যত ভয় উঁকি দিচ্ছে, সে নিজের মনে নিজেই তা খন্ডন করছে।শায়লা বুঝতে পারছে না কেন এমন করে সম্পর্কটা গাঢ় হচ্ছে। সেতো ভেবে নিয়েছিল কোন ভাবেই দূর্বল হওয়া যাবে না। তবে কেন এমন হচ্ছে?
নানান দ্বিধা দ্বন্দ্ব রেখেই সময় এগিয়ে চললো।
শিহাব নিজের হাতেই খাবার টেবিল সাজিয়ে নিল।তেমন খুব কিছুর আয়োজন নয়।এক প্লেটেই ভাত,মুরগির তরকারী আর বুটের ডাল সাজিয়ে আভেনে দুই মিনিটের জন্য ঢুকিয়ে দিল।রেফ্রিজারেটর  থেকে ঠান্ডা পানির  ক্যানটা বের করে নিল।নিজের হাতে মগটা ধুয়ে খাবার নিয়ে বসলো।শিহাব বাইরে নিজেকে যতই ব্যস্ত রাখলো ভেতরে কেমন যেন একটা একাকীত্ব বোধ করলো। শিহাবের চোখ দুটো জলে ভরে গেলো।খুব ইচ্ছা হচ্ছিল শায়লাকে একটা কল দিয়ে কথা বলতে। শায়লার সাথে পরিচয়ের পর থেকে প্রায়ই শিহাবের এমনটা হচ্ছে।তবে কি অবচেতন মনে সে শায়লার উপস্থিতি কামনা করছে।শায়লার সহজ সরলভাবে কথা বলা শিহাবকে খুব আবেগী করে তুলছে।
আজ বন্ধু মহলে গল্প আড্ডায় কিছুতেই যেনো তার মন বসছিল না। বারবার মনে হচ্ছিল সে কখন বাসায় ফিরবে আর শায়লাকে মেসেজ করবে।কয়েকজন বন্ধু তার এই অস্থিরতা ভাবটা টেরও পেয়েছে।বেশ ঠাট্টাও করছিল।কেন কার জন্যে এই অস্থিরতা? কিন্তু বন্ধুরা শিহাবের সবটাই জানে তাই কখনো ঠাট্টাচ্ছলে মনে আঘাত দিয়ে কিছু বলে না। শিহাবের ব্যবসার এই বন্ধুরা খুবই আন্তরিকভাবে তার সাথে মেশে।
এমনি আড্ডায় কয়েক কাপ চা ভেতরে চালান হয়ে যায় কিন্তু আজ যেন এক কাপই ফুরাতে চাইছে না।কিন্তু আড্ডার মধ্যমণি শিহাব চলে এলে বন্ধুরা মন খারাপ করবে।তাইতো সময়টা কোনভাবে পার করে বাইকটা স্টার্ট দিয়ে  সোজা বাসায় ফিরে আসা।
শিহাব ভাত খাচ্ছিল আর ঘড়ি দেখছিল।নাহ! ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁইছুঁই। এখন নক দেয়াটা অভদ্রতা  হবে। তাইতো খাবার টেবিল গুছিয়ে বিছানায় চলে এলো। আজ মোবাইলে গান শুনে রাতটা কাটিয়ে দিবে।
আহ! রিশতিনা,তুমি আমার জীবনে এক ধূমকেতু হয়ে এলে আর এভাবে হারিয়ে গেলে? মনের ভেতর এমনি অভিমান পুষে রেখেছে গত তিনটি বছর । 
হঠাৎ করে শায়লা এফবির প্রোফাইলের মুখটা ভেসে উঠল!  শিহাব বুঝতে পারছে না কেন এমন হচ্ছে?শায়লার মায়া ভরা মুখটায় কেমন যেন খুব আপন করে টানে।
তাইতো শিহাব নিয়মিত শায়লার খোঁজ খবর নিচ্ছে।নিজের চলাচল জানাচ্ছে।কখন কী করছে, যতটুকু জানানো যায় বা শেয়ার করা যায় তা করছে। শায়লাও তা জেনে রাখছে।
নিজেও টুকটাক মেসেজ দিয়ে রাখছে যেন একটা যোগাযোগ সর্বক্ষণ থাকে।


                                                                                                       চলবে...