২৩ নভেম্বর ২০২০

মধুমিতা রায়



মধ্যদুপুর

চলতে চলতে হঠাৎ দেখা,

সময় তখন মধ্যদুপুর

নদীর ঘাটে ছলাৎ ছলাৎ

মনকেমনের ঠুংরি নূপুর


একটা আকাশ এত্তো বড়

একটা মাঠে আকাশ ভরা

একটা বনে সূর্য ডোবা 

অন্য বনটি আলোয় গড়া


তেমন তেমন মেলে নি তো

যেমন যেমন কথা ছিল

সেই সুরে গান গায়নি তো সে

যেই গানটি গাওয়ার ছিল


চলতে চলতে হঠাৎ দেখা

সময় তখন মধ্যদুপুর

মেঘের বুকে মাদল বাজে

মনের মাঝে টাপুর টুপুর।

কাকলী দাস ঘোষ



পরাজয় 

আমি তোমার জন্য একটা ঝড়  তুলেছি 

যাতে সবকিছু শেষ হয়ে যায় 


আমি তোমার জন্য একটা পাহাড় খসিয়েছি 

যাতে সবকিছু ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় 

আমি তোমার জন্য হিংস্র হয়েছি

তোমাকে পাব তাই। 


আর শেষে আমি শীতল হয়েছি

কারণ আমার হিংস্রতা আসলে ভীষণ বীভৎস 

মৃত্যু আমাকে হারিয়ে দিয়েছে । 

ফাহমিদা ইয়াসমিন



তোমার ব্যস্ততা খুব 


তুমি এখন ব্যস্ত অনেক 

চর্তুদিকে কাজ

সময় তোমার অনেক দামী, আমার খোঁজে থাকে না তোমার চোখ। 

দায়-দায়িত্ব  এখন তোমার আগের চেয়ে ও বেশি। সেকেন্ড মিনিট হিসেব করে চলো কাজের ঘোরে। 

নষ্ট করোনা সময় মোটেও, চলছো গাড়ির মতো। 

চোখ মেলে দেখো না আমায় সুখে আছি কতো! 

এখন আর হয় না মনে আমার কথা। 

কেমন আছি জানার সময় নাই।

মাঝে মাঝে  মান অভিমান যতই করি চোখ তুলে চাওনা দেখে মনের   ভেতর জমাট ব্যথা। 

তবুও তুমি ভালো থেকো  প্রার্থনা তাই করি।

 সময় তোমার নেই তাতে কি ভালোবাসা নিয়ো।

 আমি তোমার তোমারি আছি থাকবো তোমারি হয়ে।

ব্যস্ত আছো থাকো তোমার কাজে 

আমি কেবল তোমার জন্য সুখ কামনা করি।

শুভমিতা বিশ্বাস


যে চোখে তুই

যে চোখে তুই আকাশ দেখিস

 নূপুর জলে সাঁতার কাটিস

জলছবির এই রান্নাঘরে

আমার সাথেই ঝগড়া করিস।


শহরতলির গভীরতায়

 আনমনা হই যখন তখন।

ইট ভাঙা ঐ পথের বুকে

তোর হাসিতেই রাঙাই জীবন।



মেঘলা নখে আঁচড় কাটিস

বারিস ছুঁড়ে মারিস বুকে

চুলের ক্লিপ ফুল হয়ে যাক

তোর আমার 'বিশ্বসুখে'।


যে চোখে তুই আকাশ দেখিস

কাজল ভেজাস মধ্যেরাতে..

নাকছাবিটা গান হয়ে যায়

সেই চোখেরই মল্লারেতে।

ইমন তালুকদার



বঁধু সাজে প্রিয়া

মন চায় তারে পায়     মনে সুখ পাই

ভবজুড়ে দেখি ঘুরে    তার তুল্য নাই। 

রাঙা ঠোঁটে হাসি ফোটে    গালে পড়ে টোল,

গানে সুরে বহুদূরে   বাজে প্রেম ঢোল। 


সারাবেলা রঙখেলা    বঁধু  সাজে প্রিয়া 

প্রেম জাগে হৃদবাগে   খুঁজে  সখি হিয়া। 

হাসি  মুখ পাই  সুখ     মন যায় ভরে 

 ঘুরি বনে তার সনে     প্রিয়া হাত ধরে। 


ভব মাঝে নব সাজে      সবচেয়ে দামী

প্রিয়া হাসি  ভালোবাসি   জানে অন্তর্যামী।

মন চায় সারাক্ষণ      থাকি যেন সাথে

মনে সুখে প্রিয়া মুখে   গান শুনি  রাতে। 


তুমি ছাড়া গৃহ হারা   বেঁচে থাকা দায় 

দিন যায় রাত আয়    করি হায় হায়, 

ভালোবেসে দেবো হেসে   রাঙা ঠোঁটে চুমি, 

একসাথে রবো রাতে   আমি  আর তুমি । 


জান পাখি বলে ডাকি   থাক  তুমি সুখে

প্রেমানলে অঙ্গ জ্বলে    মরি দুখে দুখে। 

তুমি হীন দুখ বীণ    হৃদে  বাজে সুর 

ছেড়ে ঘর করে পর    যাবে নাতো দূর।

মাহমুদা মৌ



ভুল ঠিকানা খুঁজিনা 

সময়ের ব্যর্থ ধারাপাত খুঁজে,  

আমি আর ভুল পথে হাঁটিনা এখন

কাঁদে রক্ত, মজ্জা, শরীর কেবল তোর কারণে,

তবু আমি আর ভুল পথে হাঁটিনা এখন

আমাতেই বিস্তৃত আমি আজ,

কান্নার গ্লাস কবেই শো-কেসে রেখেছি উঠিয়ে,

অভিমানের এভিনিউকে পাঠিয়ে দিয়েছি আফ্রিকার নিভৃত অরন্যে,

জীবনের ক্ষতগুলো নির্বিকার আজ

ফেলে আসা সময়কে বিষণ্ণ বিলাপ ছাড়া 

আর কিছুই ভাবিনা,

দহনে দাহনে কিয়দংশ জলে ডুবি তবু

আমি আর ভুল পথে হাঁটিনা এখন,

ভুল ঠিকানায় খুঁজিনা আশ্রয়,

ভরসন্ধ্যায় অথবা উল্লসিত প্রভাতে 

কখনো যদি আলগোছে উঁকি দিস 

আমি থিতু হই সমরেশ মজুমদারের সাতকাহনে,

তোর জন্য নেই আর অপেক্ষা- অনুযোগ 

ঠোঁটজুড়ে দীপাবলি নিয়ে দিনমান হাঁটিনা,

তুই থাক অনেকের মাঝে,

আমি হাঁটি সবুজ ঘাসে 

শ্রাবণের বর্ষণে ভিজি। 

ফেলে আসা কপাট বন্ধ করে দেই অষ্টপ্রহর ঘুম 

তবু আমি আর ভুল পথে হাঁটিনা এখন

ভুল ঠিকানায় খুঁজিনা আশ্রয়।

আমির হাসান মিলন



প্রশান্তি 

তোমাকে যখন দেখি , 

আমার বুকের প্রশান্তে প্রবল ভু-কম্পন সৃষ্টি হয় 

হৃদয় ছিটকে গিয়ে চাঁদের মতোন 

পৃথিবী মঙ্গল এর মাঝে স্থবিরতা প্রাপ্ত হয় । 


তোমাকে না দেখে, 

আমার ভিতর কোন এক সুদুর সুখের অব্যক্ত ব্যথায় 

শীতের সন্ধ্যার তারার মতো লাস্যময়ী হয়ে উঠে 

নিজেকে পেয়ে খুঁজে পাই হারানো সুর । 


তোমাকে যখন দেখি , 

হৃদপিণ্ড থেকে আমার উল্কা বৃষ্টি শুরু হয় 

হৃদয়ের অনু ছিঁড়ে ছিঁড়ে 

পাকস্থলীতে ভস্মের মহাস্তুপ সৃষ্টি করে । 


তোমাকে না দেখে,

আমার দুটি চোখ চৈতি পৃথিবীর মতো খর হয়ে উঠে

সেখানে দুঃখের অশ্রু প্রতিহিংসার তাপে 

বাষ্পীভূত হয়ে লীন হয় । 


অসামান্য রূপের আলোক ছটায় 

আলোকিত না হয়ে , ডুবে থাকি আরাধনায় ।

সুচি রহমান

প্রকৃতি ও তুমি 

ই শীত চলে গেল তুমি কাছে ছিলে না অামার,

যখন অসহ্য ঋতু হিমে হিমে রুক্ষ্ণ অাবরণে

বরফের বীজমন্ত্র বুনে দিয়েছিল চারিধার,

কবির মাতাল মন বিমর্ষ হইল যে কারণে ।


তবু এই দেহে মনে বয়ে চলেছিলো উচ্ছলতা

মাতাল যৌবন ভার-- পরিপূর্ণ বাড়ন্ত ফসলে ।

অথচ জাগেনি মনে এ-শীতের কোন প্রফুল্লতা

এ-অাঙ্গুল ছুঁয়নিও যেখানে যৌবন বয়ে চলে।


প্রকৃতির রিক্ততায় হইনি অবাক একেবারে,

মজেনিতো মুগ্ধচোখ আকাশের গাঢ় নীলিমায়,

শূন্যতায় ছিল তারা তুমিহীন এই অভিসারে,

তোমারই প্রতিচ্ছবি এ-হৃদয়ে শুধু বয়ে যায় ।


দেখেছি কেবল শীত-- সেদিনের রাত্রির বেলায়,

তুমিতো ছিলে না তাই শূন্যতায় কেটেছে খেলায় ।

শ্যামল রায় এর তিনটি কবিতা



আমি ঘর হতে চেয়েছি

আমি ঘর হতে চেয়েছি

খুঁজে নিতে চাইছি

 একদিকে সূর্য অন্যদিকে জোসনা রাত।

কিন্তু যৌবনে স্বপ্ন দেখাটা, একটু বাড়তি 

 ইছামতি নদীর মতো

কখনো বহতা

কখনো বালির চরা।

কোলাহলের কাছে উড়ে বেড়ায়

এক ঝাঁক প্রজাপতি

প্রিয় সন্ধ্যা নামলে সিঁদুর পরা নারী

নির্ভেজাল ভালোবাসাটা ভুলে যায়

পেরিয়ে যায় সকাল থেকে রাত

পালটায় হাত, ঠোঁট ,গোটা শরীর

আমি তোমার ঘর হতে চেয়েছি

আমি মেঘ হতে চাইনি

আমি প্রজাপতির ডানা হতে চাইনি

যৌবনের স্বপ্ন দেখায়

নির্ভেজাল কবিতা হয়ে ঘর খুঁজছি।


হৃদয়ের হাতে চিঠি


হৃদয়ের হাতে চিঠি পেতে

অন্তরের রানার খুঁজে যাচ্ছি রোজ

রানার চলেছে শুধুই রানার

খবরের বোজা হাতে।

শুকিয়ে যাওয়া খাস জমিতে

 একবার বসবো কিছুক্ষন,

ওখানে মায়াবী গান আছে

ওখানে ভালোবাসাগুলো আছে।

গান গেয়ে উঠবে পাখি

 আচল পাতা থাকবে

সবুজ ধানের ক্ষেতে সোনালী চাঁদ

জীবনের সজীব প্রাণে

বৃষ্টি হয়ে এসো কাছাকাছি।

 কুলকুল ধ্বনি শুনে

শুধুই দুই হাত বাড়াবো---

স্বপ্ন রঙিনে আঙুলের স্পর্শে

হৃদয়ের হাতে চিঠি পাবো

একবার এসো, বসি কিছুক্ষণ

 তবুও খুঁজে যাচ্ছি রানার

জীবনের গান হয়ে উঠতে

অন্তরের চিঠি হাতে--পেতে।


যে কথা বলা হয়নি


যে কথা বলা হয়নি তোমাকে

সে কথা বলতে----

 বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে

রোদ্দেরের তাপে পুড়েছি,

তবুও বলা হয়নি সেসব কথা।

 বলা হয়নি দুঃখ-যন্ত্রণার কথা

 নুন আনতে পান্তা ফুরোনের কথা।

তবুও ভেবেছি বলবো তোমাকে

বলা হয়নি যে সব কথা ।

মনোবল নিয়েই বলবো

নিসংগতা আর লুকিয়ে রাখবো না

 সাহসী হয়ে দাঁড়াবো

খুঁজে নেব বেঁচে থাকার শব্দগুলো,

ভালোবাসার শব্দগুলো

মুষ্টিবদ্ধ হাত ধরে 

চোখে চোখ রেখে বলবো

এসো আরো কাছাকাছি

এই ভাবেই বাঁচি--।

নতুন শব্দের বৃত্ত জুড়ে আমরা।

এখানে এখনো চাঁদ আছে

এখানে এখনো ভালোবাসা আছে

 এখানে এখনো দুঃখের পর সুখ আছে।

তাই বলবো,না বলা কথাগুলো--

 শুধুই তোমার জন্য------।

মমতা রায় চৌধুরী



জীবনটা অন্যরকম হতে পারতো 

জীবনটা হয়তো আমার অন্য রকম হতে পারতো, পারতো বদলাতে।

একমুঠো সোনালি রোদ্দুর

উঁকি দিতে পারতো।

সূর্যমুখী সকালবেলা হয়ে

ধরা দিতে পারতাম কারোর কাছে।

অথচ সারাটা জীবন কাটালাম

সংসারের যাঁতাকলে।

স্বামী-সন্তান ,শশুর শাশুড়ি

রান্নাঘরের তেলচিটে হাত হয়ে।

সবার কথা ভেবে গেছি

এরা সবাই আমার আপনা।

নিজের দিকে তাকাবার 

একটুও অবসরছিল না।

বেলা শেষে গোধূলি লগ্নে

হিসেব করছি দেখা যাচ্ছে

জীবন খাতায় শুধুই ভর্তি কাটাকুটিতে । অথচ

জীবনে বসন্তের দিনগুলিতে

হয়তো পারতাম শিমুল আর

কিংশুকের রঙে রঙিন হয়ে উঠতে।

প্রজাপতির মতো ডানা মেলে

পারতাম উড়ে যেতে।

জীবনটা আমার হয়তো অন্যরকম হতো।

আজ যেমনটি আছি ঠিক তার উল্টো।

আজ বসন্তের অনেকগুলো বছর পার করে এসেছি,

আর বারবার ফিরে পেতে চাইছি দুহাত দিয়ে আঁকড়ে।

কিন্তু সবকিছুই আজ ফাঁকা

রিক্ততায় পরিপূর্ণ জীবন।

একমুঠো হিমেল হাওয়ার

প্রত্যাশায় জীবনকে উষ্ণতায় ভরিয়ে তুলি বারবার।

আর ভাবি জীবনটা আমার অন্যরকম হতে পারতো।