২২ জানুয়ারী ২০২২

মমতা রায় চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস ৯৬ পর্ব





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ৯৬
স্তম্ভিত
মমতা রায় চৌধুরী

উদভ্রান্তের মতো নদী ছুটে এসেছিল হাসপাতালে। চোখেমুখে ছিল এক আতঙ্ক। অজানা ভবিষ্যতের জন্য একরাশ আশঙ্কা আর মনের ভেতরে জমে থাকা অপরাধে  নদীর মনে হচ্ছিল সেই কি তবে তার মায়ের একমাত্র মানসিক চাপ ? কেমন সবকিছু হয়ে গেলো। নদী কি তাহলে একটা হিংস্র জন্তু? যেমনি করে হিংস্র জন্তু দের হাত থেকে গ্রামের মানুষ তাদের নিরীহ জীবগুলোকে ক্যানেস্তারা পিটিয়ে বাঁচায়।
অরুনাভদাকে হসপিটাল থেকে দেখে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ছিল আর ভেবেছিল, যাক একটু স্টেবল আছে। 
ডাক্তার বলেছেন রক্ত বেরিয়েছে তো? ভয়ের কিছু কারণ নেই, তবে স্ক্যান করাতে হবে। অবজারভেশন থাকুক। নদী যখন অরুনাভদার কাছে গেছিল ,তখন নদীর চোখ দুটো ছল ছল করে উঠেছিল। উচ্ছল অরুনাভ সেদিন কত কথাই না বলেছিল।
আর আজ দেখো কেমন অসহায় শিশুর মতো পড়ে আছে।
অরুনাভদাকে  দেখে নদী আনমনে মেডিকেল কলেজের উল্টোদিকের ফুটপাত ধরে
 হাঁটছিলো ।এতটাই অন্যমনস্ক ছিল যে কোন পথচারী যদি হঠাৎ তার সামনে এসে যায় খেয়াল করতে পারবে না। তীর্থ, সমুদ্র, মেঘলা,রথীন সবাই ওরা একটু নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিল। ঠিক,সেই সময় নদী বেরিয়ে পড়ে। মেঘলা রথিনকে ধাক্কা দিয়ে বলে 'হ্যাঁ রে, নদী কোথায় গেল?'
তীর্থ ,সমুদ্র, তো একেবারে হা হয়ে গেল কথা শুনে।
তীর্থ বলল'অরুনাভদার কেবিনে ছিল,দেখ ভালো করে গিয়ে।'
মেঘলা বলল-'আমি না দেখে কি আর তোদেরকে বলছি ।'
আজকাল নদী যেন কেমন  হয়ে যাচ্ছে।
সমুদ্র বলল  'চল, চল ,চল দেখি। খুঁজে দেখি।
তীর্থ বলল- ', হ্যাঁ , তুই তো বাইক আরোহী ছিলি
 বাবা ।কিছু হলে বুঝতে পারছিস.. বলেই রথিনকে চিমটি কাটলো।'
সমুদ্রের মুখটা ক্ষণিকের জন্য কেমন পানসে হয়ে গেল ।
সমুদ্র বললো 'তোরা যাবি ?না, আমি একাই 
যাবো ?'
উত্তরের প্রত্যাশা না করেই হনহন করে হাঁটতে শুরু করল।
রথীন  বলল  ', আরে, আরে, তুই যাচ্ছিস, তোর বাইকটা কি ফেলে রেখে যাবি ?'
সমুদ্র আবার ফিরে এসে বাইকের কাছে দাঁড়ালো ,বাইকটা স্টার্ট করে ছুটল।
রথীন পেছনে পেছনে ছুটতে ছুটতে বলল "আরে, আরে, আমাদের নিয়ে চল?'
তারপর হাঁপাতে শুরু করল 
তীর্থ হেসে বলল' কোন লাভ নেই ব্রাদার। সমুদ্র এখন নদীর খোঁজে। চলো আমরা হাঁটতে শুরু করি।'
মেঘলা বলল' আর আমাকে রেখে দিয়ে তোরা চলে যাচ্ছিস তার বেলা?'
তীর্থ রথিনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল' হ্যাঁ ,তাই তো রথীন তোকে নিয়ে যাবে। বলেই রথীনের কাঁধদুটোকে ঝাঁকালো।'
সমুদ্র বেশ খানিকটা পথ এগিয়েছে কিন্তু নদীকে দেখতে পাচ্ছে না।
 এবার সমুদ্র কায়দা করে  মেডিকেল কলেজের উল্টোদিকের পথ ধরল।
কিছুটা পথ যাবার পরই দেখতে পেল নদীকে  দূর থেকে দেখতে পেল নেবি ব্লু কালারের জিন্স প্যান্টের উপরে লাল কুর্তি। হাঁটার স্টাইল দেখে তো মনে হচ্ছে নদী।'
সমুদ্র একদম নদীর পাশে গিয়ে বাইকটাকে থামালো। আর কাছে গিয়ে বলল 
'কি ব্যাপার ,তুই একা একা যাচ্ছিস যে বড়ো ।আমি তো তোকে নিয়ে আসলাম ।আমাকে তো বলতে পারতিস?'
নদী কোন উত্তর দিচ্ছে না। হেঁটে চলেছে সমুদ্র সাইডে সাইডে যাচ্ছে আর বলছে
' কি ব্যাপার, উত্তর দিচ্ছিস
 না। কি হল তোর হঠাৎ?'
নদী এবার বলল 
'কেন রে সব সময় তুই আমার পেছনে আসিস?আমি কি যেতে পারবো না আমার বাড়িতে?'
সমুদ্র নদীর কথাতে কিছুটা হকচকিয়ে যায় । তারপর আস্তে আস্তে বলে ' কেন পারবি না?  আমি তোকে নিয়ে 
এসেছি।  আমারও তো একটা দায়বদ্ধতা আছে বল?'
 নদী এবার একটা সাইডে দাঁড়ালো।
 তারপর সমুদ্রকে একটা সিগারেট দিয়ে বললো
' নে ধর ,অনেকক্ষণ পিছু নিয়েছিস তো এটা তোর
 বকশিশ ।'
সমুদ্র প্রত্যাখ্যান করে বলল 'আমি খাব না সিগারেট?'
নদী একটু অবাক হয়ে বললো "হ্যাঁ, ভুতের মুখে রাম নাম?'
সমুদ্র তখনও চুপ করে 
দাঁড়িয়ে।
নদী এবার সমুদ্র পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে ওর চোখে মুখে দিতে লাগল। তারপর বলল
' কি রে'এখনো না বলবি?'
এ তো মনে হচ্ছে বিড়ালের কাছে মাছ রেখে ,মাছ পাহারা দেবার কথা বলার মতো অবস্থা।'
সমুদ্র এবার হাত বাড়ালো ।
নদী সমুদ্রকে একটা সিগারেট ধরিয়ে দিল।
এরমধ্যে নদীর ফোনে ফোন বেজে উঠল। রিং হতে লাগল''নদীর যেমন ঝর্ণা আছে..


সমুদ্র বলল হ্যাঁরে ফোনটা রিসিভ কর।
নদী বলল' ওই তো ফোন করবে হয় তো ঝরনা মাসি ।বলবে রাত হচ্ছে বাড়ি এসো খাওয়া-দাওয়া করবে ।নানা রকম কথা।'
সমুদ্র বলল' শুধু কি তাই? অন্য কোন মেসেজ দেবার ও তো থাকতে পারে ,দেখ না ফোনটা ধরে।'
নদী বলল 'বাবা ,তুই তো অনেক বেশী জেনে গেছিস রে?'
আবার ফোনে রিং হতে লাগল।
সমুদ্র এবার বলল 'এই ফোনটা ধর না রে বাবা ।'
নদী তখনো নিরুত্তর সিগারেট শেষে আরেকটা সিগারেট ধরিয়েছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে যাচ্ছে চারিদিকে।
 সমুদ্র নদীর ব্যাগের চেন খুলে হাতরে হাতরে ফোন বার করার চেষ্টা করছে।
নদী বলল' অন্যের ব্যাগ পারমিশন ছাড়া যে হাত দেয়া যায় না জানিস না তুই?'
সমুদ্র বললো 'সব জানি  কিন্তু তখনই সেই ব্যাগে হাত দেয়া যায় যখন নিজের মনে করা যায়।'
নদী বললো 'থাক তোকে অত ঘাটতে হবে না, আমি দেখছি।'
সমুদ্র বলল-'ইয়ে হুয়া না বাত।'
নদী এবার ফোনটা রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে বলল "তোমার মাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ।তুমি তাড়াতাড়ি এসো।'
নদীর কাছে এইরকম একটি মেসেজ অপ্রত্যাশিতভাবে আসাতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়।
 সমুদ্র বলল' কি হয়েছে রে? কি ব্যাপার?'
নদীর হাত থেকে সিগারেট পড়ে যায় শুধু বলে' মা,মা, মা।'
সমুদ্র বলে কি হয়েছে
 আন্টির? মা, মা করছিস যে?'
নদী বলে' মাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে?'
সমুদ্র বললl' সে কিরে? কোন হসপিটাল, সেটা শুনলি?'
নদী শুধু ঘাড় নেড়ে না করলো।
নদী হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো আসলে আজ মায়ের সঙ্গে ওরকম বিশ্রী ভাষায় কথা বলার পর….

মনে পড়ে গেল 'মাকে ও অনেক উল্টোপাল্টা কথা বলেছিল। তুমি ফুর্তি কর, ফুর্তি করো তুমি অফিসে? মেয়ের জন্মদিনে তোমাকে ফিরতে হয় অসুস্থ হয়ে?'
তখন রুপসা বলেছিল' আমার কত যন্ত্রণা ,তুই সেটা কখনও বুঝবি না?'

নদী আরও বলেছিল 'আমাকে জন্ম দেবার সময় তোমার মনে ছিল না?'
চিৎকার শুনে ঝরনা মাসি ছুটে এসেছিল আর বলেছিল' মায়ের সঙ্গে এই ভাষায় কথা বলছ মামনি?'
নদী বলেছিল 'আর মাসি তুমি মা দেখিও না ।মাকে মার মত হতে হয়।'
মেয়ের এই মূর্তি দেখে রুপসা একেবারে বিমূঢ় হয়ে গেছিল। আর মেয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে চুলের মুঠি ধরে সপাটে চড় মেরেছিল মেয়ের গালে।
চড় খেয়ে নদী কিছুটা মুহূর্ত হতভম্ব হয়ে গেছিল ।তারপর সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এসেছিল নিজের রুমে। আর ঠিক তখনই সমুদ্রের ফোনে ফোন এসেছিল অরুনাভদার অ্যাক্সিডেন্টের।
আবার  মাও হসপিটালাইজড এই বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে নদী ।অনুতপ্ত হতে থাকে।
এখন কান্নার সময় নয় মাথা ঠান্ডা কর ।
সুমুদ্র বলে 'দেখি ফোনটা লাগা ঝর্ণা 
মাসিকে ।কোন হসপিটালে নিয়ে গেছে ।সেখানে আমরা যাই,  গিয়ে দেখি কি হচ্ছে?'
নদী বলে' আমি কিছু ভাবতে পারছি না ।সমুদ্র আমি কিছু ভাবতে পারছি না ।আমার বাপি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি মাকে হারাতে চাই
না ।আমি মাকে হার্ট করতে চাই নি সমুদ্র ,বলেই সমুদ্রের বুকে নিজের মাথাটা রাখে।
রথীন ,তীর্থ ইতিমধ্যে এসে 
গেছে ।
রথীন তীর্থকে একটু গায়ে চিমটি কেটে টিপ্পনী কেটে বলে 'দেখ ,দেখ ,দেখ, লাভ সিন কাকে বলে দেখ। একেবারে রাস্তায়।'
তীর্থ বলে  'রথীন এটা কিন্তু লাভ সিন নয় ।ভালো করে দেখ নদী কেমন আকুলি-বিকুলি করছে। কিছু একটা হয়েছে। চল, চল ,চল যাই।'
রথীন বলে' ও মাঝে মাঝে এরকম নাটক করে?'
এই রাখালের গল্পটা পড়িস নি রোজই রাখাল বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করত। আর বোকা বানাতো। শেষে যেদিন সত্যিকারের বাঘ ধরল তার কি পরিণতি হয়েছিল?'
চল না, যাই। গিয়ে দেখি না কি হয়েছে?'
রতিন আর কোন কথা না বাড়িয়ে তীর্থর পেছ পেছ গিয়ে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
সমুদ্র দেখে বলে এই আংটি হসপিটালাইজড চল। আমরা এখন ওখানে যাব।
তীর্থ শুনে বলে ' কি বলছিস? কি হযেছে? কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে! কখন হয়েছে?
সমুদ্রহাত তুলে ওদেরকে বলে ', 'থাম ,থাম এত প্রশ্ন তো একসঙ্গে করলে আমি উত্তর দিতে পারবো না ।একটু ওয়েট কর ,তোরা  নদীকে ধর।'
একটা ফোন করে নিই নদীরবাড়িতে।
সমুদ্র ফোন লাগায় নদীর ফোন থেকে রিং হতে থাকে কেউ রিসিভ করে না ।
তারপর আবার ঢং করে অপরপ্রান্ত থেকে বলে "হ্যালো'
সমুদ্র বলে ঝরনা মাসি আমরা নদীর বন্ধু বলছি আন্টিকে কোন হসপিটালে নিয়ে যাওয়া  ?
ঝরনা মাসি বলে
'হসপিটালে না ।নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উডল্যান্ড নার্সিংহোম।
সমুদ্র বলল ', ওকে ।আমরা এক্ষুনি পৌঁছে যাচ্ছি।'
ঝরনা  মাসি উদ্বেগ কন্ঠে বলল' ঠিক আছে।'

কবি শিবনাথ মণ্ডল এর কবিতা




সন্তান কখন হয় শয়তান?
 শিবনাথ মণ্ডল


পিতা মাতা সন্তানদের বড়ো করে
খাইয়ে বুকের সুধা
তাদের মুখে হাসি ফোটাতে
লুকায় নিজেরক্ষুদা।
কষ্টকরে লেখাপড়া শিখিয়ে 
চাকুরী দিলে কিনে
বিয়ের পরে কিছু ছেলেরা 
বাবা মাকে রাখেনা মনে।
পিতামাতাকে ভাত দেয়না
বিদেশি কুকুর পোষে
সর্ব হারা বাবা মা এখন
চোখের জলে ভাষে।
চালাঘরে জায়গা দেয়
নতুবা সিঁড়ির তলায়
বাবামাকে খেতে দেবনা
বলে জোড় গলায়।
বন্ধু বান্ধব এলেপরে
তাদের যত্ন কত
বাবা মা চাইলে খেতে
গালি দেয় যত।
কষ্টকরে সন্তান মানুষ করে
পেলাম এই ফল
মরার সময় তোদের হাতে
চাইনা খেতে জল।।

কবি সেলিম সেখ এর কবিতা





বীর সৈনিক
সেলিম সেখ


ওহে বীর সৈনিকের দল তোমরা অবিচল,
রক্ষা করতে জন্মভূমিকে বদ্ধপরিকর।

তোমরা রণবীর,করনি নত শির,
দেশের মান রক্ষা করতে হয়েছো সৈনিক। 

 শত্রুদের করেছো পরাজয়,
তাই আজ করছে তারা ভয়। 

সৈনিক তুমি তোমার সাহসে দেশ যে সাহস পাই, 
দেশের ভিটে রক্ষা করো প্রাণ যদি চলে যায়। 

ওই দেখো ভাই বীর সৈনিক হারাচ্ছে আজ প্রাণ, 
ওদের রক্ত সাক্ষ্য দেবে আমরা দিয়েছি বলিদান। 

দেশরক্ষায় লিখিয়েছে নাম ওরা সকলেতে, 
তাইতো আজ পড়ে রয়েছে দেশের কোলেতে। 

ওদের বুকের ওপর থাকবে যেদিন দেশের পতাকা, 
ফুল দিয়ে শেষ বিদায় দেবে, দেবে শহীদের মর্যাদা। 

যুদ্ধের সময় তোমরা যদি না দেখাতে বীরত্ব, 
দেশ আজ হতোনা পরাধীনতা থেকে মুক্ত। 

তোমাদের আত্ম বলিদান ভুলবে না কভু দেশ, 
যতদিন থাকবে এই প্রাণটুকু অবশেষ।