শুরু হলো হাবিবুর রহমানের নতুন ধারাবাহিক "ইউএন মিশনে হাইতিতে গমন"। এ এক মন কলম ধাড়ক । যার কলম থেকে ঝরে পড়ে জীবনদর্শনের কালি
ইউএন মিশনে হাইতিতে গমন-১ম পর্ব
মোঃ হাবিবুর রহমান
মনের গভীরের অন্তস্থল থেকে প্রতিনিয়ত সন্দিহান ভরে যেন জানতে চেয়ে জিজ্ঞাসা করছে, হে মনের অধিপতি তুমি আজ কি লিখবে? ভ্রমণ কাহিণী, বর্ণনামূলক নাকি ধর্মীয় কোন বিষয়ের অবতারনা ক'রবে? যাহোক, 'আমি' নামক মনের এ অধিপতি কে-সে প্রশ্নের উত্তর আজও আবিস্কার ক'রতে পারিনি। মনের গভীরের দ্বিধাদ্বন্দ্বে সৃষ্ট এমন সন্দেহটি এতক্ষণে মোটামোটি মুক্ত হ'য়ে চূড়ান্তভাবে ভাবলাম-হয় ভ্রমণ বিষয়ক, নাহয় বর্ণনামূলক কিংবা বাস্তবধর্মী হবে অবশ্যই আমার আজকের লেখার উপজীব্য বিষয়টি।
তবে এমূহূর্তে তিন-চারটি বিষয় মনের গভীর থেকে যেন কড়া নাড়ছে এবং আমাকে বলছে যে, না তুমি আজ আমার সম্বন্ধেই লেখো, তাই অনেকক্ষণ নিশ্চুপ থেকে মনকে বললাম, হে মন তুমি ঠিক ক'রে আমার হেড অফিসকে জানাও। হা, সমগ্র দেহের হেড অফিস নামে খ্যাত-মস্তিস্ক ইতোমধ্যে মনকে এমর্মে খবর পাঠিয়েছে যে, তুমি আজ ভ্রমণমূলক কিছু একটা লিখে ফেলো।
হেড অফিসের আদেশ শিরোধার্য যা অমান্য করার সাহস ও সাধ্যি কোনটাই আমার নেই। তবে এত বয়স হ'ল আসলে 'আমিটা' কে এখন পর্যন্ত না পারলাম জানতে, না পারলাম তা বুঝতে। তাই কথাটা বার বার বলছি। বোধ হয় এখন কিছুটা বেলাইনে চ'লে যাচ্ছি। এইতো বুঝি হঠাৎ ক'রেই আধ্যাত্মিকতার দিকেই যাচ্ছিলাম, তাই হেড অফিস আমাকে সংকেত পাঠালো এবলে যে, তুমি আজকের টপিতেই থাকো। যেই হুকুম সেই কাজ।
১৯৯৪ সালের ০৬ সেপ্টেম্বর সকাল বেলা আনুমানিক দশটার মত হবে। আমার আব্বা ও পরিবারের দু' সদস্য এসেছে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আমাকে বিদায় জানাতে। আমার ছোট পরিবারের সবচেয়ে ক্ষুদে সদস্যটির বয়স তখন মাত্র বছর খানেকের কিছু বেশী হবে। এখন সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর পদবীর একজন অফিসার, আলহামদুলিল্লাহ। বাকী সদস্যাটি কে হ'তে পারেন তা সহজেই অনুমেয়।
মার্কিন মুল্লুক থেকে তদানীন্তন ক্লিনটন প্রশাসন (সরকার) ইউএসএর বিমান বাহিনীর বিশালাকার একটা বিমান পাঠিয়েছে আমাদের নেবার জন্য। হাইতির রাজধানী, পোর্ট অব প্রিন্স আমাদের গন্তব্যস্থল। এর আগে এত বড় বিমান আর দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার। দেখতে ঠিক তিমি মাছের সদৃশ। বোধ ক'রি এই মাছ নকল ক'রেই মার্কিনীরা এত বড় আকাশ যান তৈরী ক'রেছে। সে এক তাজ্জ্বব ব্যাপার! লেজের দিক থেকে ডজন খানেক জীপ অকস্মাৎ বের ক'রে নিয়ে এসে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দিব্যি চালিয়ে বেড়াচ্ছে যা আমাদের মত অন্য বাঙ্গালীদেরও দারুনভাবে নজর কেড়েছিলো।
সাথে কয়েকটা হেলিকপ্টারও (সি-৫) নামের এই বিশাল আকাশযানে বহন ক'রে এনেছিল ওরা যা এখনও আমার মনে পড়ে। মনে মনে ভাবছিলাম, কোন দেশে চ'লেছি? একটু ভয় ভয় ক'রছিলো আবার কিঞ্চিত শিহরিতও হ'চ্ছিলাম। এর আগে বেশ কয়েকবার ডমেস্টিক ফ্লাইটে শুধুমাত্র ঢাকা-যশোর ক'রেছি কিন্তু তখন অব্দি আন্তর্জাতিক বিমানে ভ্রমণ করা কপালে জোটেনি।
চলবে........