০৫ ডিসেম্বর ২০২১

হাবিবুর রহমানের নতুন ধারাবাহিক "ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন"/১

শুরু হলো হাবিবুর রহমানের নতুন ধারাবাহিক "ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন"। এ এক মন কলম ধাড়ক । যার কলম থেকে ঝরে পড়ে জীবনদর্শনের কালি                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 

                                                                                                                                                                                                                                          


ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন-১ম পর্ব
            মোঃ হা‌বিবুর রহমান



                                                          ম‌নের গভী‌রের অন্তস্থল থে‌কে প্র‌তি‌নিয়ত স‌ন্দিহান ভ‌রে ‌যেন জানতে চে‌য়ে জিজ্ঞাসা কর‌ছে, হে ম‌নের অ‌ধিপ‌তি তু‌মি আজ ‌কি লিখবে? ভ্রমণ কা‌‌হিণী, বর্ণনামূলক না‌কি ধর্মীয় কোন বিষ‌য়ের অবতারনা ক'র‌বে? যা‌হোক, 'আ‌মি' নামক ম‌নের এ অ‌ধিপ‌তি কে-সে প্র‌শ্নের উত্তর আজও আ‌‌বিস্কার ক'র‌তে পা‌রি‌নি। ম‌নের গভী‌রের দ্বিধাদ্ব‌ন্দ্বে সৃষ্ট এমন স‌ন্দেহটি এতক্ষণে মোটা‌মো‌টি মুক্ত হ'য়ে চূড়ান্তভা‌বে ভাবলাম-হয় ভ্রমণ বিষয়ক, নাহয় বর্ণনামূলক কিংবা বাস্তবধর্মী হবে অবশ‌্যই আমার আজ‌কের লেখার উপজীব্য বিষয়টি। 

ত‌বে এমূহূর্তে তিন-চার‌টি বিষয় ম‌নের গভীর থে‌কে যেন কড়া নাড়‌ছে এবং আমা‌কে বল‌ছে যে, না তু‌মি আজ আমার সম্ব‌ন্ধেই লেখো, তাই অ‌নেকক্ষণ নিশ্চুপ থে‌কে মন‌কে বললাম, হে মন তু‌মি ঠিক ক‌'রে আমার হেড অ‌ফিস‌কে জানাও। হা, সমগ্র দে‌হের হেড অ‌ফিস না‌মে খ্যাত-ম‌স্তি‌স্ক ই‌তোম‌ধ্যে মনকে এমর্মে খবর পা‌ঠি‌য়ে‌ছে যে, তু‌মি আজ ভ্রমণমূলক কিছু একটা লি‌খে ফে‌লো। 

হেড অ‌ফি‌সের আ‌দেশ শি‌রোধার্য যা অমান্য করার সাহস ও সা‌ধ্যি কোনটাই আমার নেই। ত‌বে এত বয়স হ'ল আস‌লে 'আ‌মিটা' কে এখন পর্যন্ত না পারলাম জান‌তে, না পারলাম তা বুঝ‌তে। তাই কথাটা বার বার বল‌ছি। বোধ হয় এখন কিছুটা বেলাই‌নে চ‌'লে যা‌চ্ছি। এইতো ব‌ুঝি হঠাৎ ক‌'রেই আধ্যা‌ত্মিকতার দি‌কেই যা‌চ্ছিলাম, তাই হেড অ‌ফিস আমা‌কে সং‌কেত পাঠা‌লো এব‌লে যে, তু‌মি আজ‌কের ট‌পি‌তেই থাকো। ‌যেই হুকুম সেই কাজ।

১৯৯৪ সা‌লের ‌০৬ সে‌প্টেম্বর সকাল বেলা আনুমা‌নিক দশটার মত হবে। আমার আব্বা ও প‌রিবা‌রের দু' সদস্য এ‌সে‌ছে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জা‌তিক বিমান বন্দরে আমা‌কে বিদায় জানা‌তে। আমার ছোট প‌রিবারের সব‌চে‌য়ে ক্ষু‌দে সদস্য‌টির বয়স তখন মাত্র বছর খা‌নে‌কের কিছু বেশী হ‌বে। এখন সে বাংল‌া‌দেশ সেনাবা‌‌হিনীর মেজর পদবীর একজন অ‌ফিসার, আলহামদু‌লিল্লাহ। বাকী সদস্যা‌টি কে হ'তে পা‌রেন তা সহজেই অনু‌মেয়।

মা‌র্কিন মুল্লুক থে‌কে তদানীন্তন ক্লিনটন প্রশাসন (সরকার) ইউএসএর বিমান বা‌‌হিনীর বিশালাকার একটা বিমান পা‌ঠিয়েছে আমা‌দের নেবার জন্য। হাই‌তির রাজধানী, পোর্ট অব প্রিন্স আমা‌দের গন্তব্যস্থল। এর আ‌গে এত বড় বিমান আর দেখার সৌভাগ্য হয়‌নি আমার। দেখ‌তে ঠিক তি‌মি মা‌ছের সদৃশ। বোধ ক‌'রি এই মাছ নকল ক‌'রেই মা‌র্কিনীরা এত বড় আকা‌শ যান তৈরী ক‌'রে‌ছে। সে এক তাজ্জ্বব ব্যাপার! লে‌জের দিক থে‌কে ডজন খা‌নেক জীপ অকস্মাৎ বের ক‌'রে নি‌য়ে এ‌সে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জা‌তিক বিমান বন্দ‌রে দি‌ব্যি চা‌লি‌য়ে বেড়া‌চ্ছে যা আমা‌দের মত অন্য বাঙ্গালী‌দেরও দারুনভা‌বে নজর কে‌ড়েছি‌লো।

সা‌থে ক‌য়েকটা হেলিকপ্টারও (সি-৫) না‌মের এই বিশাল আকাশযা‌নে বহন ক‌'রে এ‌নেছিল ওরা যা এখনও আমার ম‌নে পড়ে। ম‌নে ম‌নে ভাব‌ছিলাম, কোন দে‌শে চ‌'লে‌ছি? একটু ভয় ভয় ক'র‌ছি‌লো আবার কি‌ঞ্চিত শিহরিতও হ'চ্ছিলাম। এর আ‌গে বেশ ক‌য়েকবার ডমে‌স্টিক ফ্লাই‌টে শুধুমাত্র ঢাকা-য‌শোর ক‌'রে‌ছি কিন্তু তখন অ‌ব্দি আন্তর্জা‌তিক বিমা‌নে ভ্রমণ করা কপা‌লে জো‌টে‌নি।

চল‌বে........

রাবেয়া পারভীন।





স্মৃতির জানালায় 
(৫ম পর্ব)


মেয়েটি উচ্চকন্ঠে ডাকল,
- বাবলু এই বাবলু
ডাক শুনে একটি আট নয় বছরের ছেলে এসে ঘরে ঢুকল।ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বোঝা গেল ছেলেটি  মেয়েটির ভাই। কাছে এসে ছেলেটি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল  
- কেন ডেকেছো আপা ?
- কাজেম কো বলো আমাদের কে চা নাস্তা দিতে।
-আচ্ছা
বলে বলে ছেলেটি বেরিয়ে গেল। মাহতাবের দিকে তাকিয়ে মেয়েটি বলল
- আব্বা এলে যে আপনার কথা বলব,  আপনার নামটাই তো জানা হলোনা।
আবার ঢোক গিলে মাহতাব
-আমার নাম মাহতাব উদ্দীন। 
- আমার নাম শবনম।  আপনি কোথায় থাকেন ?  
-বকসীবাজার  মেসে থাকি।
-গ্রাম থেকে এসেছেন বুঝি ?
-হ্যাঁ 
- কে কে আছেন  বাড়ীতে ?
- বাবা  আর দুই বোন।
-আর মা ?  
- মা নেই ,  অনেক আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
বলতে গিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মাহতাবের। এতক্ষনে তাঁর মনে হলো বুকও বুঝি শুকিয়ে  যাচ্ছে। আস্তে  করে বলল
-আমাকে  এক গ্লাস  পানি দিবেন ? 
- এক্ষুনি আনছি।
শবনম উঠে পানি আনতে গেল  এবং ফিরে এলো কাজের ছেলেটিকে সাথে  নিয়ে। ছেলেটির হাতে নাস্তার ট্রে। শবনম  ট্রে  টা নিজের হাতে নিয়ে মাহতাবের সামনে  টি টেবলের উপর রাখলো। কাজেম কে বলল 
- কাজেম তুই শিপলু বাবলু কে  ডেকে নিয়ে  আয়
মাহতাব পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেল। শবনমের সাবলীল ব্যাবহার  তার ভয় কমিয়ে দিচ্ছিল। সে স্বাভাবিক  হয়ে বসে শবনমের হাত থেকে সেমাই এর প্লেট নিয়ে খেতে লাগল। দুটি ছেলে এসে ঘরে ঢুকল,  একজনকে আগেই দেখেছিলেন  বাবলু, পাশের জন সম্ভবত  শিপলু। বয়স তের চৌদ্দ  হবে। শবনম পরিচয় করিয়ে দিল
- এরা আমার ছোট দুই ভাই  শিপলু আর বাবলু। শিপলু ইনি তোমাদের একজন ভাইয়া,  আব্বার ছাত্র।
ছেলেগুলি  মাহতাবকে ছালাম দিয়ে নাস্তা খাওয়ায় মনোযোগ দিল। এখন মাহতাবের আর মনেই হলোনা  এই বাড়ীতে সে প্রথম এসেছে। মনে হচ্ছে এদের অনেকদিন  ধরে চেনে। কত যেন আপন। চা খাওয়া শেষ হলে সেদিনের মত উঠে পড়ল মাহতাব। শবনমের কাছে বিদায় নিল। বলল
- আমি তাহলে আজকে যাই, স্যাররকে বলবেন
-ঠিক আছে যান,  আবার আসবেন। অনেক ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে ফেলেছি কিছু মনে করবেন না।
মৃদু হেসে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো মাহতাব। রাস্তায় হাটতে হাটতে মনে হলো এতোক্ষন ধরে ঘটে যাওয়া  ঘটনাটি যেন বাস্তব নয় স্বপ্ন। কিছুক্ষন আগে দেখা মেয়েটিকে  সে কি সত্যিই দেখেছে?  নিজের গায়ে চিমটি কাটলো সে। তারপর নিশ্চিত  হলো স্বপ্ন নয়  এতোক্ষন যা ঘটেছে সব সত্যি। তারপর কতদিন পেরিয়ে গেছে কখন যে শবনমের সাথে  তার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে গিয়েছিলো বুঝতেই পারেনি।
 চলবে.....

সামরিন শিরিন




এই পথটা ভীষণ প্রিয় 



এই পথটা ভীষণ প্রিয়। 
এ পথে অলীক মুখোশ ভেসে বেড়ায়
এক পরপত্যেস মুখ। 
এই পথের পা'য়ে পা'য়ে
এক ধোঁয়াশা গল্পের ভাংচুর। 
এই পথ মাড়িয়ে নিত্য হাঁটে চলে 
এক ছায়াশরীর। 
অথবা কারো বুকের ভেতর। 
এই পথের একেবারে যেই শেষ 
সেখানে হু হু করে নেমে আসে রোজ তুমুল বৃষ্টি ঝড়! 
অথবা কারো দুচোখ ভেঙ্গে। 
এই পথ, আচানক কিছু 
হারিয়ে ফেলার গল্প। 
এখানে স্থবির সোনালু গন্ধ অনেক মায়ায়।
এই পথ খুব বোকাটে, বিমূঢ় 
বিচ্ছিরি, বিবাগীনি। 

এই পথটা ভীষণ প্রিয়। 
এপথের হাওয়ায় হাওয়ায় উড়তে থাকে
পাষণ্ড এক অশ্বারোহীর ক্ষূরধুলি।

নূরজাহান শিল্পী ( ইংল্যান্ড )






অযাচিত অভিমান


উপচে পড়া জলের কথা তুমিই বলো
আমিতো জানি শুধু কান্নার রং গুলো
আমার ইচ্ছেরা অমাবস্যার আঁধারে লুকায়
নিজেকে বড় বেমানান লাগে ভরা পূর্ণিমায়
আমার কিছু নির্ঘুম রাত আছে কিছু কষ্টের কাহন জমা তাতে
মন খারাপের গল্প আছে
একাকিত্বের খরায় জলের গহীন রচে
জোসনার আমন্ত্রণে হৃদয় খুঁজি
ভালোবাসা বুকে নিয়ে ঘুরে চলছি আজন্ম সূর্য পথে
অপেক্ষার নাম হয়েছে দীর্ঘশ্বাস
গড়িয়ে পড়া অশ্রুগুলো মিথ্যে নয়
নির্বাক! সেও তো বোঝে ক্ষোভ
চোখের পাতায় অভিমান
সেও বুঝে উপলব্ধি বোধ
জড়িয়ে ধরে রোজ
আজ পালিয়ে বেড়ায় ক্ষত নিয়ে লৌকিক আঁধারে
মুমূর্ষ শহরের ইট পাথরের জীর্ণ দেয়ালে প্রতিধ্বনি  শুনি
মন ভালো নেই মন ভালো নেই...

মেহবুবা হক রুমা




সোনার আংটি


একটা সোনার আংটি 
হাতের আংগুল 
দখল করলো ভালোবাসায়।
সোনার ধরন ভালো ছিল না,
আংটির গড়ন তেমন ভালো ছিল না,
তবুও  সুন্দর হাতের সাথে মানিয়ে গেল।
মানিয়ে নেওয়া মেনে নেওয়ার জীবন হলো শুরু।
মেনে নেওয়াটা সবসময় একতরফা,
একজন যখন সব একাই মানতে থাকে,
সে একাই ক্লান্ত হয়, পরিশ্রান্ত হয়, একসময় তার ইচ্ছে
করে হাল ছাড়া মাঝি হতে,,
নৌকা যেদিকে খুশি যাক,
যেভাবে খুশি চলুক,,হালছাড়া নৌকা চলে না
গন্তব্যহীন ভাবে ভাসতে থাকে ভাসতে থাকে।
ভাসতে ভাসতে কোন এক বৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে
নৌকাডুবি।
একটা মৃত লাশ ভাসতে ভাসতে নদীর কিনারায়।
অভাবী রহিম মিয়া দেখে মরা লাশ হাতে সোনার
আংটি।
দ্রুত আংটিটা খুলে নিল, লোকজন জড় হলো লাশের
খোঁজ খবর শুরু।
রহিম মিয়া বাড়ি ফিরলো বুকটা দুরুদুরু।
বউয়ের হাতে তুলে দিল সোনার আংটি,
খুশিতে আটখানা হয়ে বউ বলে উঠলো,
আহারে সোনার আংটি,
আমার কত্ত দিনের সখ,কত্ত দিনের স্বপন।
বউ মুখের সুখের হাসিতে, আংটিটা মরা লাশের
কথাটা রহিম মিয়া করে গেল গোপন।

শহিদ মিয়া বাহার




গোধূলি  বেলায় 


আজ এই গোধূলি বেলায়
কি আবির ছড়ায়ে যায়
আহা একি  মমতায়, 
একি মিতালি হাওয়ায়  হৃদয়ে জড়ায়!

কত গোধূলির রঙ মাখিয়েছি গায়
কত শত সহস্র আবির 
এভাবেই পার হয়ে যায়
কত শত বিবাগী রাতের মলিন  জোছনা
না ফোটা রেণু-ফুল হাছনা হেনা 
মরমে মরে মনের যাতনা
কাহারে কাঁদায়  মাটিতে লুটায় এই বসুধায় ?
কত ঐ বৈরাগী রাত করেছি ভোর
কত সে তপ্ত  দুপুর
করেছি পার একা নিরালায়
পড়ন্ত বেলায়
কেউ নাই আজ------কেউ নাই পাশে
নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে
এই মন তাহারেই শুধু চায়!

 অস্ত গেল সূর্য আজ এমন সাঁঝে 
 এ কেমন বীণা বাজে
আধো আধাঁরে, হৃদয়ে আবার?
মনে পড়ে ক্ষণে ক্ষণে
রেখেছি যতনে
তোমার হৃদয়খানি হৃদয়ে আমার!




শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত (পর্ব ২৩)
শামীমা আহমেদ 

শিহাবের সাথে কথা হওয়ার পর আজ দুপুরটা শায়লার বেশ অস্থিরতায় কেটেছে। দুপুরে শিহাবের কথাগুলোতে শায়লা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি। কোথায় যেন একটা ভাললাগা মায়া ভালবাসা জমেছে তার জন্য আর তাকে কাছে পাওয়ার উদগ্রীব বাসনায় মনটা বারবার উদাস হয়েছে।খুব গোপন একটা অনুভুতিতে বারবার শিহরিত হতে থাকে তনুমন।মনে হচ্ছে শিহাবের স্পর্শ সে অনুভব করছে।শিহাবের নিঃশ্বাস সে শুনতে পাচ্ছে। শিহাবকে ভীষণ কাছে পেতে ইচ্ছে করছে।
দুপুরে খাবারের টেবিলে মা বিষয়টি খেয়াল করলেন।মায়েদের চোখ বোধহয় কিছুই এড়ায় না। তবে সবটা তারা বুঝে উঠতেও পারেন না।তারা খুব সরলভাবেই সবকিছু দেখেন।নোমান সাহেবের সাথে শায়লার বিয়ে পর্বটা হয়েছে তা প্রায় বছর ঘুরে আসছে। কাগজপত্র পাঠাতে কী এতদিন লাগে? মা মাঝে মাঝে বেশ চিন্তিত হয়ে উঠেন। মা তো বুঝতে পারছেন না শায়লার অনীহাতেই বিষয়টি পিছিয়ে যাচ্ছে। আজকাল শায়লাকে বেশ  আনমনা লাগে।মা ভাবছে হয়তো নতুন জীবন সাজানো নিয়ে শায়লা ভাবনায় ডুবে আছে।কিন্তু শায়লা যে ভীষণভাবে শিহাবের মাঝে ডুবে  আছে সেটা আর মাকে কোনদিন খুলে বলা হয় না। নাহ! কোনদিন তা বলাও হবে না। 
দুপুরের খাবার খেয়ে শায়লার নিজের রুমে আসতে প্রায় তিনটা বেজে গেলো। শায়লা টেবিল থেকে মোবাইলটা নিয়ে বিছানায় এলো। বিছানায় শুয়ে জানালায় আকাশের দিকে চোখ পড়লো।সাদা তুলোর মত মেঘ উড়ে উড়ে যাচ্ছে।আহ!  একাকী উড়ে বেড়ানো!ওদের কত স্বাধীনতা! কিন্তু শায়লার  শৃঙ্খলিত জীবন।তবে ইচ্ছে করলে শিহাব  তাকে মুক্ত জীবন দিতে পারে।শিহাবের কথা মনে পড়তেই শায়লা ভাবলো কী জানি দুপুরের খাবার খেয়েছে কিনা? নাকি একা একা আলসেমিতে ঘুমিয়েই কাটাচ্ছে? 
শায়লা মেসেজ পাঠালো,
দুপুরের খাবার খেয়েছেন?
তৎক্ষনাৎ উত্তর ভেসে এলো। হয়তো চোখটা ফোনের দিকেই ছিল।
হ্যাঁ,খেয়েছি।
কি খেলেন আজ? 
সেদিন মা আর ভাবী অনেক খাবার পাঠিয়েছে। সেগুলোই চলছে।
আচ্ছা, আপনাদের জিগাতলার বাসায় আর কে কে থাকেন? 
শিহাব বুঝে নিলো, শায়লা তার সম্পর্কে  জানতে চাইছে।
শায়লাকে আর অন্ধকারে না রেখে  শিহাব একে একে সবার কথা বললো।সাথে আরাফের নামটিও জুড়ে দিলো।
শায়লা সবাইকে মিলাতে পারল কিন্তু আরাফ কে সেটা বুঝতে পারছে না। জানতে চাইল আরাফ কে?
আমার ছেলে।বয়স তিন বছর।ওকে একমাসের রেখে ওর মা চলে যায় বা বলা যায় চলে যেতে বাধ্য করা হয়।
শায়লার কানে যেন কিছুই ঢুকছিল না।
শায়লার ভাবনায় শুধুই শিহাব। তার ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে শুধুই শিহাব।অন্য সবকিছুই যেন অগ্রাহ্য।
শিহাব শায়লার প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায়।
শায়লা কিছুটা নীরব থেকে জানতে চাইল আরাফ কার কাছে থাকে?
আমার মায়ের সাথে।তবে ভাবীই ওর মায়ের সবটুকু আদর ভালবাসা দিয়ে যাচ্ছে।
আরাফের একটা ছবি পাঠাবেন? খুব দেখিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
শিহাব ওর মোবাইলে সেভ করে রাখা আরাফের ছোট্ট বেলার দুটো ছবি শায়লাকে সেন্ড করে।আর লিখে পাঠালো রিশতিনার স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলছি।
আরাফের ছবি দেখে শায়লা বুঝে নিল আরাফ তার মায়ের মত হয়েছে।কারণ শিহাবের সাথে মুখটা মিলছে না।খুব মায়াভরা মুখটা! শায়লা  চোখে পানি ধরে রাখতে পারলো না।সব মেয়েই মনের ভেতর একটা ঘুমন্ত মাতৃত্ববোধ লালন করে। তবে সবার প্রকাশভঙ্গী এক নয়। আরাফকে দেখে শায়লার ইচ্ছে করছিল  এখুনি দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরি। এমন ফুটফুটে একটা শিশু  মায়ের আদর বঞ্চিত।
শায়লা পরম মমতায় ছবি দুটো সেভ করে রাখলো।শায়লা  বুঝতে পারে শিহাবের খুবই দূর্বলতম জায়গা এটা।যাক আর এ প্রসঙ্গে বেশিদূর না আগানোই ভালো।
শায়লা প্রসঙ্গ পাল্টালো।
আচ্ছা, আপনি কি কখনো সাগর দেখেছেন?
আমার খুব ইচ্ছে সাগরের বেলাভুমিতে হেঁটে বেড়াবো আর সাগরের ঢেউয়ে ঢেউয়ে পানি এসে পা ছুঁয়ে যাবে। 
হ্যাঁ, একবার গিয়েছিলাম। কলেজ থেকে একদল বন্ধুরা মিলে। সেই তারুণ্য ভরা মনে সবার চোখেই একটা স্বপ্ন ছিল জীবনসঙ্গিনীর সাথে আবার আসবে।অনেকেই গিয়েছে এরপর।আমার আর যাওয়া হয়নি।
শায়লা ভীষণ আবেগতাড়িত হয়ে উঠে।বলে ফেলে আপন মনে, আমার খুবই ইচ্ছে তোমার সাথে সাগর দেখতে যাবো। তোমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে পাশাপাশি দুজনে হাঁটবো।  সাগরের ঢেউ বারবার বেলাভুমিতে আছড়ে পড়বে আর আমাদের পা ছুঁয়ে যাবে। উত্তাল বাতাসে এলোমেলো চুলে আমার মুখটা ঢেকে গেলে তুমি তা যত্ন করে সরিয়ে দিবে। আর আমি চোখ বন্ধ করে তোমার ছোয়া অনুভব করছি। প্রচন্ড বাতাস এলে তোমার বুকে মুখ লুকাচ্ছি।
দু'প্রান্তে দুজনেই নীরব। শিহাব শায়লাকে ভেবে নিচ্ছে নীল শাড়িতে।গলায় ঝিনুকের মালা। বাতাসে এলোমেলো চুলে বারবার শায়লার মুখটা ঢেকে যাচ্ছে আর শিহাব হাত দিয়ে তা সরিয়ে দিচ্ছে। শিহাব শায়লার উষ্ণতা অনুভব করছে।যেন খুব কাছে দুজনে। শিহাব তার শক্ত হাতের বাঁধুনিতে শায়লাকে জড়িয়ে আছে। যেন আর কিছুতেই সে শায়লাকে হারিয়ে যেতে দিবেনা।
সাগরের বিশাল বুক যেন ভালোবাসার এক অতল গহ্বর। মানুষ  সেখান থেকে  তার খুব সামান্যই তুলে আনতে পারে। 
কল্পনায় দুজন হারিয়ে গেলেও দুজনারই জীবন অতীতে বাঁ ধা।কল্পনায় হিমালয় পার হওয়া যায়  কিন্তু মানুষের মনের সাড়া পাওয়া অধরাই থেকে যায়।
চলবে....

শ্রী স্বপন দাস




আমরা কোথায়

মানুষ কেমন যেন হয়েছে দিশেহারা
তবে কি সমাজ হয়েছে, দুর্নীতি ভরা।
চাকরি বাকরি ব্যবসা পত্তর,সবই কেমন শূন্যে ভরা
সুষ্ঠু সমাজে চলছে ক্ষরা,জঞ্জাল পূর্ণ মস্তিষ্ক ভরা।
চতুর্থ পর্ব আসছে ,জলজ্যান্ত করোনা
যশ আম্ফানের ঘটনা,প্রকৃতি কখনো আর এনোনা।

শ্রমিক কৃষক ডাক্তার শিক্ষক,ভাই ও হে!
উন্নত সমাজের আর দর্শন নাহি রে।
দেশের সকল নেতার মুখে শুনি উন্নতি আর উন্নতি
বাস্তবে দেখি,দেশ ভরা দুর্নীতি আর দুর্নীতি।

ভোটের সময় শোনা যায় উন্নয়নের খবর
পরিশেষে বোঝা যায়, নগদ/সম্পত্তির কত বহর।
মিডিয়া খবরের কাগজ টিভি তে দেখি সব কুকীর্তি
জানিনা, হে ভগবান,আদৌ হবে কি
দেশের উন্নতি।