২৬ নভেম্বর ২০২০

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ



মধ্যরাত্রির নিঃশ্বাস

আপনার মৃত্যুর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন যাঁরা

রাত কেটে ফুটিয়ে তুলছেন গুচ্ছ গুচ্ছ নিঃশ্বাস 

নকশা বেঁধে চলছে শুশ্রূষার চাষাবাদ... 


সকল বৃত্তান্ত-ই যেন ভীত অথর্ব 

এক একটা আছড়ে পড়া কান্না

থমকে যাচ্ছে


টিভির পর্দায় পোড়া কাঠের গর্জন

হাসপাতালের রৌদ্রস্নাত নার্সের হাতে 

সকল সংক্রমণ মুছে

বিছিয়ে দিচ্ছেন বেঁচে থাকার উপত্যকা 


আর,

মৃত্যুর ঢেউয়ে ডুবিয়ে রেখেছেন 

নিজের সমস্ত আয়ু

শুভমিতা বিশ্বাস



টান

তোমার আমার মধ্যে এক সেতু আছে 

যার নাম টান।

হৃদয়ের গর্ভে আমাদের অনুভূতির চারাগাছের জন্ম।


কান্নার মিছিল তোমার চোখে যখন হাঁটে

উন্মাদ হয় রুমাল।

দূরত্ব লেখার তুমি কে?

সরলরেখার বিন্দু তুমি

যেখান থেকে আমি পথ খুঁজে পাই।

দূরে এগিয়ে গেলাম

 বিন্দু পথে ।

অন্তরে মোচড় দিয়ে ওঠে

বুঝলাম বিন্দুর থেকে দূরে গেলে ছিঁড়ে যাবো।

সানি সরকার



প্রাগৈতিহাসিক 


এই সব শস্য ক্ষেতের ভেতর 

ভালো লাগে না আর 


আমাদের ঘুমের ভেতর

প্রতিদিন পাখিটি আসে যায়...

ডানার ভাঁজ থেকে ভাঁজে

পদ্মের কুঁড়ি আর কিছু 

হিরন্ময় আলো ভেসে ভেসে ওঠে 


আমরা চুপ করে থাকি 

আমরা খুলে ফেলি একলক্ষ উঁটের কুঁজ... 

অতঃপর এইসব সিমেন্ট-বালুর শরীরে

তেত্রিশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎতের জ্যাকেট পরে নিই 


ওই ওষ্ঠের মেখলাবৃত ঢাল থেকে ঢালে 

এইভাবে কবে যে আগুনের জন্ম হয়েছিল 

পৃথিবী মনে রাখেনি

মধুমিতা রায় এর মুক্তগদ্য পড়তেই হবে



মন নিয়ে


মন নিয়ে কতটুকু ভাব? এই যে অর্থ বৈভব প্রতিপত্তি আর প্রতিযোগিতার  জীবনে ডুবে যাচ্ছ, সাঁতার জান তো?


মনের কিছু সার জল হাওয়া চাই বোঝো তা? কেবল বাইরের শরীরটার জন্যই যত চিন্তা যত ভাবনা যত আয়োজন... আর যাকে অবহেলায় সরিয়ে রাখ সেই মনই একসময় মস্তিষ্ককে খেয়ে ফেলবে জান সেটা?


অবসাদ বড় মারাত্মক জিনিস। ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে হেমলকের মতো। মনকে বন্ধু দাও সময় দাও খুশি দাও কান্নাও দাও আর হীরের টুকরোর মত ভালবাসা দাও।তারও তো ইচ্ছে করে ডানা মেলতে।


তুমি কি জান তোমার একটু কথা বা একটু হাসি আরেকজনকে ভালো রাখে যেমন তুমিও ভালো থাকো কারোর কথার ঝলকে।এই সম্পর্কগুলোকে যত্নে রাখো।কেমন আছ?...এই খোঁজটুকু রেখো পরিচিত জনের।তোমার সময় হয়ত খুবই মূল্যবান তবু তারগুলো ছিঁড়ে ফেলো না।ভেঙে ফেলা আঘাত করা খুব সহজ তাই বেশির ভাগ মানুষ তাই করে থাকে।ভালবাসতে শেখো।


ব্যস্ত থাকো সুন্দরের সাথে শিল্পের সাথে। মন আপনি ভালো হবে।এই তো একটুকরো জীবন।এত অহং এত ঈর্ষা না হয় নাই করলে।পৃথিবী  তো আজ শিখিয়ে দিয়েছে আমরা সবাই...  যার আছে সেও আর যার নেই সেও একই সারিতে দাঁড়িয়ে রয়েছি।


ভালো থেকো, ভালো রেখো, আনন্দ খুঁজে নাও নিজের মতো করে। 


মনকে যত্নে রেখো।....

হাকিকুর রহমান



বিবর্ণ পত্র

নবীন প্রাতে নামলো পথিক পথে,

শিশির ভেজা ঘাসে যে তার ভিজলো দু’চরণ-

উদাস বাউল পায় না খুঁজে সুর,

ক্ষত বুকে তৃষার প্রলেপ দিয়ে কাঁদে কোন বিরহিনী।


রাতের কাজল এখনও মোছেনি কার আঁখি হ’তে,

পত্রপুটে বাসা বাঁধে কোন এক বাহারি প্রজাপতি-

কি মায়া লয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অনামিকা গাঁয়ের বঁধু

কার অপেক্ষায়। কপোল বেয়ে নামে জল

ভরা তপ্ত নিঃশ্বাসে।


জীবনের পথে, জীবনটাতো আর চলেনা-

বিবর্ণ পত্রের ন্যায় ঝরে যায়,

না চলা পথের পরে।

দেবাশিস সাহা 'র দুটি কবিতা



মেয়ে ভারতবর্ষ 

মেয়ে ভারতবর্ষ জানে

আগুনের কোনো দোষ নেই


ওদের কয়লাজন্ম

পিঠে সারি সারি শলাকায়

বয়ে নিয়ে বেড়ায় আগুন


মেয়েভারতের গুহাপথ

ইন্ডিয়ান রেলওয়ে 


মালগাড়ি, লোকাল, এক্সপ্রেস 

সবার অবাধ যাতায়াত 


যোনীদেশ ছিঁড়ে গেলেও

রক্ত ঝরেনা

মুষলধারে ঝরতে থাকে অন্ধকার 


মেয়ে ভারতবর্ষের কয়লাজন্ম

আগুনের কোনো দোষ থাকতে পারেনা। 


হত্যাতন্ত্র

১.

হাওয়া ধারণ করেছে ধর্ম

ধর্ম জমে জমে মেঘ

মেঘ ফেটে গেলে 

রক্তে ভিজে যায় মানুষ 


২.

পাথর জানেনা কার হাতে আছে

কার দিকে ছুটে যাচ্ছে আঘাত নিয়ে

হৃদয় পাথর হলেই

সে চলে আসে হাতে

দিগবিদিক ভুলে ছুটে যায়

ভাইজান বা মা-বোনের দিকে


৩.দেশের ভিতর দিয়ে 

ছুটে যাচ্ছে অগ্রন্থিত বিড়াল

অপমান পাড়া বলে যাকে ডাকো

সেই তো তোমার আমার বোনেদের আশ্রয় 

লালটুকু তুলে রাখো

আমাদের স্নেহজ ভেসে ভেসে

চলে গে ছে লাশের সংগে

আত্মীয়তা থাক শিমূলে পলাশে

মনকে মরতে দিওনা

একান্ত বাউল রাত ওর দখলে 


৪.কোনো কোনো কান্না 

একা একা ছুটে যায়

গাছহীন এক অরণ্যের কাছে

সেখানে মা'কে খোঁজে 


সবার কি মা হয় 


সবার কি মা থাকতে আছে 


কান্নাগুলো পরিত্যক্ত কামরার ভিতর 

কাকে খোঁজে 

বিন্দু বিন্দু রক্তে ভেজা 

একটা ছেঁড়া ভারতবর্ষ 

শুষে নিচ্ছে কান্নাগুলোর মা'কে।

দুর্গাদাস মিদ্যা।


অভিনয়

যেভাবে বোঝালে মনে হল

এর বুঝি কোনো বিকল্প নেই

ঠায় দাঁড়িয়ে বুঝিয়ে দিলে

হাতে নাতে ফল পাবে অচিরেই। 

অথচ আজ পর্যন্ত ফল ফললো  না। 

মিথ্যুক বলি তাও হয়তো নয় 

তবু কোথায় যেন থেকে যায় সংশয়! 

তুমি বলেছিলে -যদি এভাবে শুরু করা যেত

তবে কাঙ্খিত ফসলে ভরে যেত মাঠ

গোলাভরা ধান উঠে আসতো ঘরে। 

এখন বুঝি সেসব সত্য নয়

বলার জন্য বলতে গিয়ে 

করেছ মিথ্যে অভিনয়।

অলোক দাস



প্রতিশ্রুতি 


যদি আমি হই চেয়ারম্যান তোমাদের ভোটে, করে দেবই ব্রিজ এই এলাকাতে, সভা থেকে কে একজন বলে উঠলো এখানে এ গ্রামে কোনো খাল নেই, আপনি ব্রিজ করবেন কিভাবে? চেয়ারম্যান বললো ও নিয়ে ভেবো না, প্রথমে খাল বানাবো, তারপর ব্রিজ বানিয়ে দেবোই, ইনক্লাব, জিন্দাবাদ, এই না হলে চেয়ারম্যান?

মোঃ রুহুল আমীন



তোমাদের মুখে হাসি ফোটাতে


হাঁটতে শিখিয়েছে যে তোমাকে 

    ছোট্ট হাত দু'খানা ধরে

তোমাদের মুখে অন্ন তুলে দিত

    নিজে থেকে অনাহারে। 

    

তোমাদের মুখে হাসি ফোটাতে

    যে কষ্টের সাগরে ভেসে

কান্নাগুলো সব বুকে চেপে রেখে

    সে চলেছে কৃত্রিম হেসে।


তোমাদের অভাব করতে পূরণ

    দিন রাত করেছে কাজ

এখন তোমরা চলেছ এগিয়ে

   সে পিছনে পড়েছে আজ।


নিজেকে নিয়ে ভাবেনি কখনও

   তোমাদের রেখেছে ঘিরে

আজকে তোমরা অনেক উচুঁতে

   দেখ কি পিছনে ফিরে? 


তোমরা থাকো মহাসুখে আজ

     ওই অট্টালিকার পরে

তার ঘরে আজ খড়ের ছাউনি

     বৃষ্টির পানি পড়ে ঝরে।


আজও তোমাদের সুখ দেখে

     সুখের সাগরে ভাসে

তোমাদের কোন সফলতায় 

   সে তৃপ্তির হাসি হাসে।

***************************************

শশাঙ্কশেখর পাল



পাতালঘর 

নিজের বুকে লুকিয়ে আছে তুকতাক 

কথোপকথন কবর থেকে বারমুডা চশমার ফ্রেম 

সারল্য অজগরে পেটে হরিণ 

দুজনেই মরে যায় একে অপরের কৃতকর্মে..


বন্ধু অবন্ধুরা জলরঙ

                              টুং-টুং 

মোহিত আয়নার পারা সরে গেলে

বেরিয়ে আসে বিষ

রজ্জুতেও ভয় পাও ভয় পাও..


তোমার নিজের মধ্যে কবর আছে 

                                      তুকতাক..