২২ এপ্রিল ২০২২

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৫৯





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৫৯
দিবসও রজনী আমি যেন কার..
মমতা রায় চৌধুরী
৪.৩.২২. সন্ধ্যে ৭.৩৯


আচ্ছা জ্বালাতনে পড়ল রেখা।' ভদ্রলোক এতো প্রশ্ন করছেন কেন? '
"ম্যাডাম বলুন না?"
"একটু-আধটু লেখালিখি করি।"
"Wow ,অসাধারণ ,কনগ্রাচুলেশন্স।"
ভদ্রলোক হাতটা বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডসেক করবেন বলে।
রেখা দুই হাত জোড় করে নমস্কার জানালো।
"কোন পত্রিকায় বেরিয়েছে ম্যাডাম একটু বলুন না?"
"বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় পত্রিকায় ।কোনটা বলব বলুন?'
"ভদ্রলোক বললেন আপনার কন্টাক্ট নাম্বারটা দিতে বললাম দেবেন না?"
"কি করবেন আপনি কন্টাক্ট নম্বর নিয়ে ।
যদি লেখা পড়তে চান তাহলে তো পত্রিকাগুলো ঘাটলেই পেয়ে যাবেন।"
"না ফোন নম্বরটা থাকলে অন্তত বলতে পারব সবাইকে যে এরকম একজন বিখ্যাত লেখিকার কন্টাক্ট নম্বর আমার কাছে আছে। নিজেকে খুব প্রাউড ফিল করব।'
রেখা আর কি করবে  "বাধ্য হয়ে কন্টাক্ট নম্বর টা দিলো।
ভদ্রলোক বললেন অসংখ্য ধন্যবাদ।"
দেখতে দেখতেই ট্রেন পালপাড়া ক্রস করলো।
এরমধ্যে  রেখার ফোন বেজে উঠলো।
রেখা একটু জানলা দিয়ে অন্যমনস্ক ভাবে তাকিয়ে ছিল। তখন ভদ্রলোক রেখাকে বললেন  "আপনার ফোন বাজছে।'
রেখার যে ফোন বাজার আওয়াজ কানে আসে নি তা নয় ,কেন যেন ফোনটা বার করলো না। এখনও যেহেতু বেজেই যাচ্ছে ,তাই বাধ্য হয়ে  ফোনটা বার করলো।
ভদ্রলোক তখনও বলে যাচ্ছেন 'বোধহয় আপনার বাড়ি থেকে ফোন এসেছে না?'
রেখা মনে মনে ভাবলো যে এরকম অকারণ কৌতুহল মোটেই পছন্দ নয় কিন্তু কিছু করার নেই ফোনটা বের করে দেখছে বড়দি ফোন করেছে।
"হ্যালো দিদি।"
"তুমি এখনো বাড়ি পৌঁছাও নি?"
"না দিদি।"
"বেশ অনেকটা রাত হয়ে গেল না।"
"তা তো হবেই।"
"তাহলে ওয়ার্কশপ কদিনের?"
"আজকেই শেষ দিদি।"
"কি বলছ? "বড়দি অবাক হয়ে বললেন।
"হ্যাঁ আজকের ওয়ার্কশপ আজকেই শেষ হলো আর এরপরেও আরো অন্য কিছু হলে, সেটা ওনারা জানিয়ে দেবেন।'
বড়দি বললেন "তাই বল?'
রেখা বলল"আমি আপনাকে ফোন করতাম বেরিয়ে কিন্তু দিদি এমনিতেই মানে ট্রেন পেতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল এমন টাইমে ছেড়েছেন যার জন্য এসে ট্রেনে বসেছি তার পরে ভাবলাম থাক বাড়িতে পৌঁছে ফোন করবো।"
"ঠিক আছে। সেজন্য নয়। আমিও ফোন করলাম যে দেখি কালকের প্রোগ্রামগুলো কিরকম আছে না আছে জানার জন্য।'
*ঠিক আছে রেখা, কালকে যদি সেরকম হয় তুমি পরের ট্রেনটা তে এসো ।আজকে তো ফিরছ লেট করে।"
রেখা হেসে বলল" থ্যাংক ইউ দিদি।"এ জন্য "আপনাকে এত ভালোবাসি।'
"না ,না তোমাদের সুবিধা-অসুবিধা তো দেখতেই হবে বলো ?এই দেখো অনিন্দিতা যেতে পারল না অথচ ওর কথা ছিল তোমাকে বললাম তুমি রাজি হয়ে গেল তা তোমার এইটুকু সুবিধা করবো না?'
"ঠিক আছে ,তুমি সাবধানে ফিরো। রাখছি তাহলে?"
ফোন রাখতে না রাখতেই ভদ্রলোক বললেন "আপনার স্কুলের বড় দি ফোন করেছিলেন?'
"হ্যাঁ, মাথা নাড়িয়ে রেখা বলল।
"যেটুকু কথাবার্তায় বুঝলাম আপনার বড়দি তো বেশ ভালো।"
"হ্যাঁ তা ভালো।
এই কথা বলতে বলতেই কল্যাণী স্টেশন এসে গেল। রেখা ব্যাগপত্র নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
ভদ্রলোক বললেন' "আপনি কল্যাণীতে থাকেন?'
রেখা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
ভদ্রলোক বললেন" নাইস টু মিট ইউ।
"খুব ভালো লাগলো।"
"আশা করি আবার দেখা হবে আপনার সাথে।"
রেখা বলল পৃথিবীটা অভিগত গোলক নিশ্চয়ই কোনোদিন কোথাও না কোথাও দেখা হবে। ভালো থাকবেন।"
ভদ্রলোক হা করে রেখার কথা শুনল আর বলল "হ্যাঁ আপনিও ভালো থাকবেন।'
রেখা আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো ভদ্রলোক  উঠে রেখার চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রইল। এক সময় ট্রেন স্টেশনে থামলো।
ভদ্রলোক রেখাকে হাত নেড়ে বিদায় জানালো। রেখা ভদ্রতাবশত নিজেও হাত নেড়ে বিদায় জানালো।
তারপর দ্রুতবেগে হেঁটে অটো স্ট্যান্ডে আসল। 
চেনা  অটোওয়ালা নিজে থেকে ডাকলো" দিদি, ও দিদি আসুন, আসুন।"
রেখার  নিজেকে খুব টায়ার্ড মনে হচ্ছিল।
বলল" হ্যাঁ ,চলো।'
অটো ওয়ালা বলল 'আজকে আপনার লেট হল।
একটু কাজ ছিল?"
"তাই বলি যে টাইমে ফেরেন কিছুক্ষণ আপনার জন্য ওয়েট করছিলাম দেখতে  না পেয়ে চলে গেলাম।'
এরমধ্যে অটোওয়ালা হাঁকতে লাগলো  "বুদ্ধপার্ক কল্যাণী বি ব্লক' বাঘের মোর, আসুন ,আসুন ।কে যাবেন?"
রেখা অটোতে বসেই চোখটা যেন বুজে আসছিল।
কখন যে অটোতে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই 
পারেনি ।যখন অটো রেখার বাড়ির কাছে এসেছে তখন অটোওয়ালা বলল' ও দিদি এসে গেছেন নামুন'।
রেখার বুকটা কেঁপে উঠলো তারপর বলল" হ্যাঁ এইতো নামছি।" ব্যাগ থেকে হাতরে পার্স বের করে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে , গেটটার কাছে 
আসলো । ঠিক তখনই মিলি আর মিলির বাচ্চারা জোরে চিৎকার করে উঠলো আর বাচ্চাগুলো কাছে এসে আদর করতে লাগল।
রেখা কিছুক্ষণ ওদেরকে আদর করলো আর বলল "অনেকক্ষণ তোদের দেখিনি তোরাও আমাকে দেখিস নি  বল ?খাবার খেয়েছিস তো?
আদর খেয়ে ওরা একটু শান্ত হল।
রেখা কলিং বেল বাজালো কিন্তু কেউ দরজা খুললো না । ভাল করে দেখল বাইরে থেকেই লক করা। রেখার কাছে একটা ডুপ্লিকেট চাবি ছিল সেই চাবিটা দিয়ে লক খুলল। তারপর ঢুকলো।
"কি ব্যাপার মনোজ কি ফেরেনি ব্যাগটা রাখতে রাখতে ড্রইংরুমে রেখা নানা কথা ভাবতে 
লাগলো ।তারপর দেখল না ,না মনোজের জিনিসপত্র রয়েছে ।তো ফিরে গেছে। তাহলে আবার কোথায় গেল?"
রেখা এবার ফোন করলো
"হ্যালো"
হ্যাঁ তুমি কোথায়?
"আমি এইতো পার্থদের বাড়ি।"
"ওখানে কি করছ?"
আরে সবাই তো স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে । ওকে নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। তাই পার্থ ডেকেছে।'
"ও আচ্ছা আচ্ছা।"
"ফিরলে?"
" হ্যাঁ এইতো ফিরলাম।
"ঠিক আছে তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।"
রেখা বলল 'ঠিক আছে।"
রেখা ফ্রেশ হতে গেল। বাথরুমের সাওয়ারটা খুলে দিয়ে  মাথার সামনে ভিজিয়ে সারা গায়ে ভাল করে স্নান করে নিচ্ছে। আর বেশ গান গাইছে "দিবস রজনী আমি যেন কার, আশায় আশায় থাকি।…. চঞ্চল হয়ে ঘুরিয়ে বেড়াই, সদা মনে হয়
যদি দেখা পাই..।'
বাথরুমের শাওয়ারের কলটা এতটাই স্পিডে চলছে ,আর আপন-মনে গান গেয়েই যাচ্ছে ওদিকে মনোজ ডুপলিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে এসে বাথরুমের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রেখার গান শুনে যাচ্ছে মুগ্ধ হয়ে ।একসময় রেখার গান থামলো শাওয়ার কল টা বন্ধ করলো রেখা বলছে "বাপরে বাপ এই ক'দিনের মধ্যে এত গরম পড়ে গেল বলতে বলতে  টাওয়াল গায়ে দিয়ে বের হতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই ভুত দেখার মত চমকে উঠলো।
"একি তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো?'
'তোমার গান শুনছিলাম কতদিন পর বাথরুমে তুমি গান করলে।"
"বাববা যেন গান কখনো শোন নি ।বাথরুমের কাছে এসেই তোমাকে কান পেতে  গান শুনতে হচ্ছে ।'
"বলতে পারো সেরকমই।'
 "নাও হয়েছে ,হয়েছে ,চলো।"
রেখা ঘরে ঢুকে নাইটিটা পরে নিল। তারপর বলল "কি হয়েছে গো সোনাইয়ের।'
" আর ব'লো না সেই হারটা চুরি হয়ে যাবার পর থেকে  ওকে তো স্কুলে পাঠানো যাচ্ছে না।"
"  সে কি এখনো কি স্কুলে যায়নি? সেতো প্রথম প্রথম শুনেছিলাম যে স্কুলে যেতে চাইছে না ।'
"না গো ভেতরে একটা ভীতি কাজ করছে। যে ছেলে এত চনমনে এত কথা বলে ।না এখন আস্তে আস্তে একটু কমিয়ে দিয়েছে ।রেখা অবাক হয়ে বলল" কি বলছো তুমি?'
" হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি ।তাহলে তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আর ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।'
" আমিও সেরকমই বলে আসলাম জানো ।"
এ বাবা এ তো ভারি চিন্তার ব্যাপার হলো' হ্যাঁ ওর মা-বাবা ও এখন খুব চিন্তিত আছে।"
তাই আমাকে ডেকেছিল কোন ডাক্তারের কাছে যাবে ?তা আমি বললাম একবার কাউন্সিলিং করানোর দরকার তা কোন ডাক্তারের কথা বললে আমি একবার সুরোকে ফোন করেছিলাম সুরো কে  ।তখন ফোন ধরতে পারেনি ।পরে রিং ব্যাক করেছিল ।'ও বলল খোঁজ নিয়ে ও 
জানাচ্ছে ।তারপর পুরো ডিটেলস এর ঠিকানা নিয়ে পার্থ দেরকে জানিয়ে দিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি পারা যায় বাচ্চাটিকে সেখানে নিয়ে যেতে হবে  '
"একদমই তাই।'
" বাচ্চাদের দেখো কত রকম সমস্যা না?'
'আমাদের স্কুলের বড়দি ফোনে বলছিলেন অনিন্দিতার বাচ্চাটার সমস্যা ও কথা বলে না। সে তো এখন ওকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। স্কুল থেকে ওকে তাড়িয়ে দেবে বলেছে ।'
"এ বাবা কি বলছো তুমি?
" হ্যাঁ গো অনিন্দিতা তো এতদিন শুধু বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া এসবের দিকে নজর দিয়েছে বাচ্চার কথা বলার দিকে কোনো নজরই ছিলনা" এখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। দেখি ও বোধহয় কালকে স্কুলে গেলেই বুঝতে পারবো। আজকে বড়দি ফোন করেছিলেন কিন্তু আমি  ট্রেনে ছিলাম তো অপরদিকে আর ঘাঁটালাম না।"
"কি অবাক কান্ড দেখো?'
"ওদিকে তোমার নাতি নাতনীদের কান্ড শুনেছো?'
"ওরা আবার কী করল ওরা তো আমাদের ভাল বেবি।"
"সে তো ভালো বেবি বটেই। তাহলে আবার কি করেছ ওরা,?'
আজকে একটা মরা পাখি সেটাকে মুখে করে নিয়ে চলে এসেছে  গ্যারেজ রুমে। সেখানে এনে রেখে দিয়েছে আর কি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আমি তো গেটে পা দিয়েই সেই গন্ধ শুঁকে শুঁকে সেখানে গেলাম।
' যেন কত ভাল গন্ধ'!
তুমি গন্ধ শুঁকে শুঁকে ওখানে গেলে 
না গো ?তাছাড়া কি করব? 
"বাজে বন্ধ হোক যাই হোক গন্ধ শুঁকেই তোমাকে সেই জায়গা ঠিক করতে হলো।  তারপর সেটা ফেললাম জানো?"
"তা বেশ করেছো।'
রেখা একটু হাই তুলল।
বলল" রাত্রে কি খাবে?'
মনোজ বললো" যা খাওয়াবে ।'
"আমার না রান্না করতে ভালো লাগছে না ।খুব টায়ার্ড লাগছে।"
মনোজ বলল" ঠিক আছে ওট স খেয়ে নেব ।"
"আমি একটু 5 মিনিট গড়িয়ে নিই বুঝলে?"
ভালো হয় রবীন্দ্র সংগীতে।
 চালিয়ে দাও তো? আমার ঘুম গুরুদেবের গানেই ভাল হয় এবং একটু রিলাক্স হয়।"
"ঠিক আছে চালিয়ে দিচ্ছি ।তুমি কি গান 
শুনবে ?
"দাও না। রবি ঠাকুরের গান কোনটা 
 খারাপ লাগে নাকি?"
"দিবসও রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি..
চঞ্চল হয়ে ঘুরিয়ে বেড়াই , সদা মনে হয় যদি দেখা পাই….।"

কবি বিশ্বজিৎ মণ্ডল এর কবিতা "গোপন তরবারি"





গোপন তরবারি
বিশ্বজিৎ মণ্ডল

অদূরে পড়ে আছে বিষাদ মাখা ছুরি
হত্যা আঁকতে গিয়ে বার বার থেমে গেছে
অপ্রতুল বজ্রপাতে______

পড়ে আসা বিকেলে কনে দেখা আলোয়
মিশে যাওয়ার কথা ছিল যাচিত রক্তপাতে
অথচ ঘূর্ণির মত অনাহুত পোস্টকার্ডটা এসে
বলে গেল____ন হন্যতে..... 

ওখানেই যত বিপত্তি______
ছুরি ছেড়ে উড়ে গেলে হননের পিপাসা
থুবড়ে পড়ে থাকে,গোপন তরবারি...

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৯৬




ধারাবাহিক উপন্যাস 

শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৯৬)
শামীমা আহমেদ 



রাতের বেলা বন্ধ ঘরে ফুলের সুবাস আর মখমলী চাদরের কোমলতায় বিছানার কিনারায় শায়লা  নিজের অজান্তেই গভীর ঘুমে ডুবে আছে। বাইরের হাঁকডাক তার মাঝে কোন প্রভাব ফেলছে না। শিহাবকে পাওয়া না পাওয়ার উৎকন্ঠায় ক্রমশ তার মন একটু একটু করে ক্ষয়ে ক্ষয়ে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। কল্পনায় শিহাবের স্পর্শ পাওয়ার প্রবল এক আকুতিভরা নিবেদনে নিজেকে বিলীন করা, আবেশের ঘোরলাগা এক মাদকতায়, কখন যেন  নিজের অজান্তেই গভীর ঘুমে সে অচেতন হয়ে আছে। ঘুমের অতলান্তে এক স্বপ্নরাজ্যে সে শিহাবের হাত ধরে এক বিশাল গোলাপ বাগানে হেঁটে চলেছে।গোলাপের আবেশিত ঘ্রাণে বারবার শিহাব যেন তার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে।  আলতো করে তার ঠোঁট শায়লার গাল ছুঁয়ে যাচ্ছে। দোল দেয়া বাতাসে শায়লার চুল এলোমেলো হয়ে উড়ছে । শিহাব অবাক দৃষ্টিতে তা দেখছে । শায়লার তাতে চোখ পড়তেই শিহাবের চোখের চাহনীতে  লজ্জায় বারবার সে কুঁকড়ে যাচ্ছে। শায়লা নিজেকে আড়াল করতে চারপাশে তাকালো, সে দেখলো  এক মোহনীয় পরিবেশে সে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশে পাখিদের ওড়াওড়ি! কতইনা রঙবাহারের পাখি আর তাদের কিচিরমিচির ডাকে কানে যেন তালা লাগার উপক্রম হলো ! শায়লা দেখলো একটু দূরেই আপন গতিতে কলকল করে বয়ে চলেছে  জলধারা !  যেন তার ভীষণ তাড়া। শায়লা দেখলো খুবই স্বচ্ছ সেই জলের তলদেশে রঙিন মাছেদের জলকেলি ! একটু বামে তাকাতেই দেখতে পেলো এ জলধারার উৎসমুখ। পাহাড়ের গা ঘেষে  ঝর্ণার স্রোতধারা যেন ভূতলের অমোঘ টানে নেমে এসেছে।শায়লার মন ছুটে গেলো সেই পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে ! ঝর্ণা জলে শিহাবের মুখটি যেন ভাসছে। মিষ্টি  হাসিতে শায়লাকে কাছে টানছে।সে অপার মুগ্ধতায় আছন্ন হয়ে গেলো! তার চোখেমুখে বিস্ময় খেলে গেলো! কি এক আকর্ষণে সে এক দৃষ্টিতে সেদিকেই তাকিয়ে রইল। পাশে দাঁড়ানো শিহাবের অস্তিত্ব টেরই পেলো না। সে  চারপাশের সব কিছু বেমালুম  ভুলে গেলো। তার ভীষণ  ইচ্ছে হলো শিহাবের কাছে ছুটে  যেতে। শিহাব যেন তার জল তৃষ্ণা নিবারনে কাছে ডাকছে।শায়লা  সেদিকে  এক পা এগুতেই শিহাবের হাতের টান অনুভব করলো।  শিহাব তাকে পিছনে টেনে নিতে চাইছে। শায়লা ভীষণ চমকে গেলো! তবে ঐ ঝর্ণাধারায় সে কাকে দেখলো!  সহসাই শিহাব শায়লাকে তার বুকের কাছে টেনে নিলো! তবে সে কিছুই বুঝতে  পারছে না।  এখানে সে কিভাবে এলো ! তবে শিহাব তার সাথে আছে এটাতে সে নিশ্চিত। সে বেশ শক্ত করেই শিহাবের বাম হাতটি ধরে রেখেছে। শায়লা স্পষ্টই শুনতে পেলো, শিহাবের কন্ঠস্বর। শায়লা তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি।তোমাকে আমি আর হারিউএ যেতে দেবো না। তোমাকে আমার করে পেয়েছি। পৃথিবীতে আমার সব চাওয়ার আজ প্রাপ্তি হলো।  জল ভরা চোখে 
শায়লা  শিহাবের বুকে মুখ লুকালো। শায়লা যেন এক সাগর গোলাপের সৌরভে ডুবে  গেলো। শিহাবের স্পর্শ তাকে কি এক অস্থিরতায় ভরিয়ে দিলো। শায়লা চোখ বন্ধ দীর্ঘ নিঃশ্বাসে তার ভেতরটা ভরিয়ে নিচ্ছিল ! কতটা ক্ষন যে সে এভাবে নিস্প্রাণ হয়ে ছিলো সে তা অনুভবই করেনি। হঠাৎই  কেমন যেন একটা ভারহীন  অনুভবে শায়লা  চোখ মেলতেই দেখতে পেলো তার সামনে শিহাব নেই।চারদিকের এত সুন্দর পরিবেশটা নিমিষেই কালো অন্ধকারে ঢেকে গেছে। বাতাসের দাপাদাপিতে গাছপালার অবাধ্য চলাচল। পাখিদের কলকাকলি থেমে গেছে।ঝর্ণাধারা অলস ধারায় বয়ে চলছে। প্রচন্ড এক ঘূর্ণি বাতাসে গোলাপ বাগানটা তছনছ হয়ে গেলো। গোলাপ পাপড়িগুলো ছড়িয়ে পড়ছে মাটিতে। মূহুর্তেই শায়লার পৃথিবীটা উলোটপালোট হয়ে গেলো! এমন অবস্থায় শায়লা ভীষণ ভীত  হয়ে পড়লো । সে কেবল শিহাবকেই খুজে চলেছে। এইতো একটু  আগেই শিহাব এখানে ছিল! এখন সে কোথায় গেলো! শায়লা  উদ্ভ্রান্তের মত শিহাবকে খুঁজেতে লাগলো। এক্টা কালো আঁধারের চাদর যেন শিহাবকে গ্রাস করে নিলো।  বাতাসের তান্ডবে তার পরনের, শাড়ি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। চুলগুলো  দিকবিদিকে উড়ছে। সে কিছুতেই  তা সামাল দিতে পারছে না। পায়ের নিচে গোলাপের কাঁটা বিঁধছে। সে কেবল বলেই চলেছে,,  শিহাব  আমাকে একা ফেলে তুমি কোথাও যেও না। আমি তোমাকে ছাড়া  বাঁচবো না। কিন্তু জনমানবহীন এই প্রান্তরে  কোন উত্তর ফিরে এলো না। শিহাব তুমি সাড়া দাও,এমনি আকুতিতে সে বারবার বলেই যাচ্ছে। শায়লা শিহাবকে দেখতে না  এবার কেঁদেই দিলো। ঝড়ো বাতাসের সাথে এবার আকাশের গগনবিদারী শব্দে শায়লা অতীষ্ঠ হয়ে গেলো। সে দিশাহীন হয়ে গেলো। সে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। হঠাৎ দবকিছু কেমন যেন অদৃশ্য হয়ে গেলো। 
আচমকা  চোখ মেলতেই সে নিজেকে আলো আঁধারের মিশেলের  অচেনা এক পরিবেশে আবিস্কার করলো। তারপর চারপাশে তাকাতেই সে নিজেকে নিজের ঘরেই  দেখতে পেলো। যদিও টেবিল ল্যাম্পের আলোর স্বল্পতায় নিজের ঘরটা প্রথমে  অচেনাই  লাগছিলো। চারপাশে  তাকিয়ে বুঝতে পারলো সে তার বিছানায় শুয়ে আছে। তার হাত পা শরীর  অবসন্ন হয়ে বিছানায় লুটিয়ে আছে। সে  কিছুতেই নিজের শরীর নিজে টেনে  তুলতে পারছিল না। শায়লা এবার বেশ বুঝতে পারলো সে স্বপ্নে শিহাবের  মাঝে  হারিয়ে গিয়েছিল। পরক্ষণেই  তার গোলাপ বাগানের দৃশ্য  আর শিহাবের স্পর্শের ক্ষণটি তাকে চেতনায় এনে দিলো। সে খেয়াল করলো তার দরজায় মুহুর্মুহু বেশ জোরে  জোরে শব্দ হচ্ছে। ওপাশ থেকে কে যেন,  শায়লা আপু, শায়লা আপু করে ডেকে যাচ্ছে । কান পাততেই শায়লা কন্ঠস্বরটি চিনতে পারলো। বুবলী ! হ্যাঁ,বুবলীই তো! সে এক ঝটকায়  শোয়া থেকে উঠে বসলো। বুবলী বলেই চলেছে, শায়লা আপু শিহাব ভাইয়া এসেছে।তুমি দরজা খোল।দেখো,কে এসেছে ! আমাদের বাসায় শিহাব  ভাইয়া এসেছে।তুমি বেরিয়ে আসো।
শায়লা  খুব করে কান পেতে কথাগুলো  শুনলো। সে কি সঠিক  শুনছে না ঘুমের ঘোরে আবার স্বপ্ন দেখছে ! কিন্তু বুবলী ক্রমাগত  একই কথা বলে চলেছে। এবার শায়লা  তার মায়ের কন্ঠস্বর শুনতে পেলো।মা শায়লা, দরজা খোল মা। মায়ের কান্না গলায় ভীতির প্রকাশ! সাথে রাহাতের ডাকাডাকি  চলছেই,শায়লা আপু আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার ভুল হয়ে ছিল।এই যে দেখো,শিহাব ভাইয়াকে  নিয়ে এসেছি। তুমি মোবাইল ধরে দেখো,আমি কল দিচ্ছি। শায়লা এবার নিজের মোবাইল খুঁজতে লাগলো।মোবাইল  বালিশের নিচে আড়াল হয়ে ছিলো। সে মোবাইলের আলো দেখে স্ক্রীনে চোখ রাখতেই দেখতে পেলো  রাহাতের বিশটা মিসড কল! এবার শায়লা  বুঝতে পারলো, সে কতটা গভীর ঘুমে চলে গিয়েছিল।  দরজার বাইরে ডাকাডাকির কন্ঠস্বর বেড়েই চলেছে। রাহাত বলেই চলেছে আপু, শিহাব ভাইয়া এসেছে। দরজা খোল।শায়লা এবার তড়িঘড়ি করে বিছানা  ছাড়লো। দরজা খুলতেই সে দেখতে পেলো, বাসার সবাই তার দরজায় দাঁড়ানো।শায়লা ভীষণ লজ্জা পেলো। বুবুলী শায়লাকে  জড়িয়ে ধরলো।সে কান্নায় ভেঙে পড়লো।শায়লা আপু,তুমি কেন দরজা খুলছিলে না।
শায়লা তার মাথায় হাত বুলিয়ে  শান্ত করলো। এবার বুবলী মুখতুলে বললো, শিহাব ভাইয়া এসেছে। বাসার মেইন গেটে দাঁড়িয়ে আছে।শায়লা অস্টম আশ্চর্য চোখে রাহাতের দিকে তাকালো ! রাহাত চোখ বন্ধ করে বুবলীর কথায় সম্মতি জানিয়ে খবরটির সত্যতা জানান দিলো। বুবলী শায়লার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখেমুখে একরাশ হাসির ঝিলিক নিয়ে চারদিকের বাচ্চাদের বললো, এই সব বাচ্চারা তোমরা বাসার গেটে  যাও। নতুন বর এসেছে। সবাই গেট আটকাও। আমরা এত সহজে আপুকে নিতে দিবো না। সব বাচ্চারা হুরমুর করে নিচে নেমে গেলো। রাহাতও খুব দ্রুত নিচে  নেমে গেলো। বাসার ভেতরের চেঁচামেচিতে সে শিহাবকে গেটে দাঁড় করিয়ে রেখে উপরে ছুটে এসেছিলো। 
শিহাব বেশ অনেকক্ষন হলো বাসার মেইন গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। উপরে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে রাহাত ছুটে গেছে। শায়লার মায়ের কিছু হলো  কিনা  না শায়লা  তার প্রতি অভিমানে কোন অঘটন  করলো কিনা ? শিহাবের ভীষণ টেনশন হচ্ছিল। তার ভুলের জন্যই আজ ওদের সাথে যোগাযোগটা ঠিকমত হয়নি। তাহলে কত আগেই সে চলে আসতে পারতো।  শিহাবেরও  উপরে ছুটে যেতে ইচ্ছে করচ্ছিল। কিন্তু কেমন করে সে এত রাতে অচেনা একটা বাসায় ঢুকবে। সে রাহাতের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। সে একমনে বিয়ে বাড়ির লাইটিং দেখতে লাগলো। সাজানো বিয়ের গেটটিতে তার দৃষ্টি থামল। গেটটি দেখে  শিহাব মনে মনে একটু হাসল। তারই জন্য এমন সাজানো গেট অপেক্ষা করছে সেতো ঘুণাক্ষরেও তা জানতো না। বিধাতার বেঁধে রাখা চমকে আমরা কতটাই না অবাক হই! এই সময়টায়  শায়লাকে এক নজর দেখার জন্য তার মনটা  ভীষণ উদগ্রীব হয়ে আছে। শায়লাকে কাছে পেলে তার সব ভুলের জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিবে। শিহাব  কায়মনোবাক্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে নিবেদিত মনে বলেই যাচ্ছে,শায়লা যেন তাকে ভুল বুঝে কোন  ভূল সিদ্ধান্ত  না নেয়। শায়লার ভালোবাসার কাছে শিহাব বারবারই হার মেনেছে। কিন্তু সে শায়লাকে কখনোই ভালোমত বুঝাতে পারেনি শায়লার জন্য তার মনটা কতটা আবেগে ডুবে থাকে। ভাগ্য শায়লাকে  দূরে নিতে চেয়েও আজ আবার কাছে এনেছে। আজ যেন কোন অঘটনে শায়লাকে আবার হারাতে না হয়। চারপাশে মধ্যরাঙেতের শুনশান নীরবতা। শিহাব বাইকে পাশ ফিরে বসে নানান ভাবনার ডালপালা ছড়িয়ে শায়লাকে পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। রাহাত কখন নিচে ফিরবে। তাদের পরিবারের একটা মতামত জানাবে।শিহাব নিজেকে আবার সামলে নিয়ে ধৈর্য্য ধরলো।এতটা কাছে যখন এসেছে নিশ্চয়ই বিধাতা তাকে ফেরাবেন না। আবার অপর পৃষ্ঠে এটাও ভাবছে,মানুষের তো তীরে এসেও তরী ডুবে।অনেকে সময়ের অবহেলায়ায় গন্তব্যের ট্রেন মিস করে।শিহাব  জানে না তার ভাগ্যে কোনটা লেখা ! হঠাৎই এত রাতের নীরবতা ভেঙে একঝাঁক শিশুর হৈচৈ শুনে শিহাব পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো, নানান বয়সী শিশু, কিশোর ছেলেমেয়েরা বাড়ির মেইন গেটে যেন মানব বন্ধন করে দাঁড়িয়ে আছে। শিহাব কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। এরই মাঝ দিয়ে রাহাত বাসার বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। সবচেয়ে বড় কিশোরী মেয়েটি বলে উঠলো না না রাহাত ভাইয়া তুমি বাইরে যেতে পারবে না। তুমিতো আমাদের দলে। তুমি কেন বাইরে যাবে ? আমরা শায়লা আপুর বরকে এমনিতে বাসায় ঢুকতে দেবো না।আমরা গেট ধরেছি।
আমাদের টাকা দিয়ে তবেই দুলাভাইকে ঢুকতে দেবো।এমনিতেই অনেক দেরি করে এসেছে। তার জন্যও ফাইন হবে।এবার একজন কিশোর ছেলে বলে উঠলো,  হ্যা হ্যা, সব মিলিয়ে অনেক টাকা দিতে হবে। তার কথায় সবাই হ্যা হ্যা করে উঠলো!  বুঝা গেলো, এই দুইজন হচভহে এই বাহিনীর লিডার।তারা যা বলছে এরা তাতে শায় দিচ্ছে। শিহাব মনে মনে হাসলেও বাইরে সে ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। রাহাত বাইরে গিয়ে শিহাবকে এর থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করতে চাইছে। কিছুতেই শিশুদের লিডারের সম্মতি মিলছে না। তখন রাহাত বুঝাতে চাইলো,দেখো শিশুরা, ওপাধে শিহাব ভসিয়া একা, তার দলে কেউ নেই,কিন্তু উনিই আমাদের আজকের সবচেয়ে বড় মেহমান। তাকে তো এভাবে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা যায় না। আমি তারদিকে গিয়ে বুঝিয়ে তোমাদের ডিমান্ড আদায় করে দিচ্ছি। 
রাহাত ভাইয়া তুমি কিন্তু আমাদের ঠকাবে না, তাহলে তোমাকেও আটকে দিবো। আমাদের শায়লা আপুকে  নিয়ে যেতে দিবো না। রাহাত তাদের আশ্বস্ত করে বাইরে শিহাবের কাছে চলে এলো। শিহাব বুঝতে পারলো এদের থেকে সহনেই নিস্তার  মিলবে না। রাহাতের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করে পকেটে হাত দিলো। শিশুদের চাহিদা মত কিশোরী লিডারের কাছে নোট গুলো  গুঁজে দিলো। তারা বেশ সূক্ষভাবে নোট পরখ করে নিলো। তাদের চাহিদা মত আদায়ে সবাই তাদের বন্ধন ভেঙে শিহাবের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি মিললো। রাহাত শিহাবেত বাইক বাসার ভেতরে পার্ক করে রাখলো। শিশুরা  টাকা পেয়ে হৈ হৈ করে উপরে উঠে  গেলো। রাহাত শিহাবকে নিয়ে সিড়ির দিকে আগাতেই সিঁডিতে বুবলী এক গোছা রজনীগন্ধা নিয়ে শিহাবকে উপরে যেতে আমন্ত্রণ  জানালো। শিহাব সলজ্জ চাহনিতে  ফুল গ্রহণ  করে সিঁড়িতে  প্রথম ধাপটি ফেললো।


চলবে...

কবি মালা মুখোপাধ্যায় এর কবিতা "শুধু একবার বলো, এবার এসো"





শুধু একবার বলো, এবার এসো
মালা মুখোপাধ্যায় 



খুব কম কিছু নয় আমার বয়স দেখতে দেখতে আশি পার , তোমরা এখনও মায়ায় বেঁধে রেখেছো, এবার আমাকে যেতে দাও, তোমরা সকলে একসঙ্গে বলো, শুধু একবার বলো, এবার এসো। 

আমার এখন আর সূর্যের আলো দেখার তাড়া নেই
সকাল হলে মাঠে মাঠে ঘুরে ঘুরে সবুজ মাঠ দেখারও তাড়া নেই।

অসাড় হয়ে বিছানায় , দুই দুনিয়ার মাঝে বসে আছি মাঝির অপেক্ষায়।

চোখ বুঁজেও দেখতে পাই বড় থালার মতো লাল টুকটুকে পুবের আকাশে রবি
আবার জোৎস্না রাতে তোমার রূপের ছটা শশীর গায়ে।

আজ আমার অফিস যাওয়ার কোনো তাড়া নেই।
দুটো ভাত মুখে দিয়ে বাসের অপেক্ষারও তাড়া নেই।

তাড়াহীন জীবন
অচল জীবন
তেজহীন জীবন
এই পৃথিবীতে "কে কার"
বুঝতে শেখা জীবন
এসেছি একা যাবো একা
অনুভবে জীবন
বেঁচে মরে থাকা জীবন
হোক অবসান।

নেমে আসুক শান্তি
শুধু সকলে বলো, 
একবার বলো, এবার এসো।

কবি সালমা খান  এর কবিতা "ত্রিমাত্রিক নদী"





ত্রিমাত্রিক নদী
সালমা খান 

আমাকে পাহাড় সমান ভালোবাসবে বলে 
তুমি সাগর ছেড়ে ময়ূরাক্ষী নদী হয়ে কেনই বা এলে এই লিমুইছড়ির গভীর অরণ্যে। 
প্রকৃতির আঁধারে নিজেকে বিলিন করে সুখ খুঁজে নিতে চাও ? 
পাখির ভেজা পালকে আমার গায়ে তোমার জলের ছাপ ,
কিচিরমিচির শব্দে কি যেনো বলতে চায় ,
আমি পাখির ভাষা বুঝিনা হয়ত হবে, তোমার আমার ভালোবাসার গোপন কথা। 
পাহাড়ের পাদদেশে পাথর নূড়ির ঘর্ষণ জেনেও কেনো আমার অঙ্গ ধুয়ে দাও ?
আমার বুকের মাটি নিয়ে তোমার বুক ভরাট করো পলিমাটিতে। 
শুষ্ক হাওয়ায় বালুচরে ঢেকে রাখো তোমার অর্ধেক নদীর শরীর।
ঘোর বর্ষায় হারিয়ে ফেলো সঠিক পথের স্মৃতি চিহ্ন। 
তুমি অবিরাম ছুটে চলো দিকবিদিক সুখের অন্বেষণে। 
আমাকে ভালোবেসে নয় , তোমার হীম শীতল জলের পরশে আমাকেই করো ক্ষয়,
আমিও অবিচল খাঁটি বিশ্বাস নিয়ে এক পায়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকি ,
নির্বিকার হয়ে অরণ্যের বোঝা মাথায় চেপে পথের পথিক হয়ে আসবে ফিরে আমার দিকে ছুটে। 
তোমার জলে পা ডুবিয়ে আকাশ ছুয়ে দেখি,
তোমার ছায়া পড়ে নীল জলের আয়নার মায়ামোহে ,
তোমার ত্রিমাত্রিক প্রেম সমস্ত নীল চুরি করে নেয় মেঘনীলে। 
আর আমার চখের গভীরে ভাসে তোমার ছোট ছোট ডিঙি নৌকা অথৈ জলে ।