১৫ ডিসেম্বর ২০২১

এস.এ. তালুকদার




কথা রাখিনি
 

মন কেনো ধায় পেছন পথে
চেনা মুখ  খুঁজিবারে
বহুকাল আগে ভুলের পাথারে
হারায়ে ফেলেছি যারে__

চাঁদ জাগা রাতে কত অনুরাগে
দাড়ায়ে শিউলি তলে
ঝরা ফুলে গাঁথা সাজানো মালা
পড়িয়ে দিলো গলে __

মুখ খানা রেখে কাঁধের পড়ে
হাতটি রেখে হাতে
বলেছিলো সে ছেড়ে যাবেনা
চিরদিন রবে সাথে __

সে সুখের দিন হয়েছে বিলিন
নন্দিতা গিয়েছে চলে
একাকী আমার বিজন প্রহর
কাটে নয়নের জলে __

দুজনে দুজনায় কথা দিয়েছিনু
চিরকাল রবো সাথে
কিছু না বলে চলে গেলো সে
একাকী কেঁদেছি তাতে __

কথা দিয়ে মোরা কথা রাখিনি 
নন্দিতা গিয়েছে চলে
আমিও একাকী বেঁচে রয়েছি 
কথা রাখিনি বলে__

শান্তা কামালী/ ৪১ তম পর্ব





বনফুল
( ৪১ তম পর্ব ) 
শান্তা কামালী



                                                      দুদিন পরে বিকালে পলাশ জুঁই য়ের বাড়িতে আসার একটু পরেই জুঁই য়ের আব্বা পলাশ কে নিচে ডেকে পাঠালেন। 
পলাশ নিচে এসে ওনার সামনে বসলো। উনি বললেন, মাল্টা'য় তোমার যে সুযোগ এসেছে সেটা অতি উত্তম। আমি নিজে খোঁজ নিয়ে জেনেছি ইউরোপের মধ্যে এটা একটা উন্নত মানের এবং খুবই সাধারণ খরচের ভার্সিটি। তোমার পাশপোর্ট করা আছে? 
হ্যাঁ, আঙ্কেল,আছে। 
এবারে এডুকেশন ভিসার আবেদন করে দাও কালকেই। 
তুমি মাল্টা তেই যাবে,ওখানেই পড়বে।বাকি চিন্তা তোমার নয়,আমার।
কিন্তু, আঙ্কেল.... 
কোনো কিন্তু নয়,আমি সব শুনেছি,জেনে বুঝে তবেই বলছি,এটা আমার অনুরোধ বলো,আদেশ বলো সেটা তোমার বিশ্বাস। আমি জানি এটা আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ, আর আমার সারাজীবনের স্বপ্ন। তুমি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এবং একইসাথে  ইকোনমিকস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে যতোদূর পড়তে চাও,পড়ো।তুমি প্রস্তুতি নাও,আমি আছি।
এরপর পলাশ আঙ্কেল আর আন্টিকে সালাম জানিয়ে ওপরে জুঁই য়ের কাছে আসে।জুঁই তখন তার বিছানায় বসে মুচকি মুচকি হাসছে। পলাশ বললো জুঁই তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো,বুঝতে পারছি না, জীবনে এতো বড়ো সুন্দর সুযোগ তুমি না থাকলে কোনোদিন পাবো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। জুঁই বললো, আমি বলেছিলাম যে আমার আব্বুর কাছে এটা কোনো সমস্যা ই নয়।পলাশ বললো, এলাহি ভরসা।
জুঁই পলাশ কে কাছে ডাকলো। পলাশ কাছে আসতেই জুঁই বললো, ধন্যবাদ না,অন্যকিছু দাও,বলেই নিজের গলা টা বাড়িয়ে তার ঠোঁট দুটো এগিয়ে কিছু ইঙ্গিত করে। পলাশ মুহুর্তে পিছু সরে এসে বলে, না, না জুঁই, এখনো সময় আসেনি, সবে তো অঙ্কুর,একটা পরিনত বৃক্ষ হতে দাও,তারপর। এখনই জীবনের রোমান্স কে নষ্ট কোরো না। আমাকে আর দুটো বছর সময় দাও,তারপর তো সারাজীবন সমুদ্র সৈকতের মতো আমি থাকবো  তোমার নিত্যনতুন জলতরঙ্গ আছড়ে পড়ার জন্য।

চলবে....

মোঃ হা‌বিবুর রহমান




ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন 
৭ম পর্ব
মোঃ হা‌বিবুর রহমান





রানও‌য়ে থে‌কে যখন আমাদের ভীমাকৃ‌তির গগনতরী আকা‌শে উড়াল‌ দেবার ল‌ক্ষ্যে ভো-দৌড় দি‌য়ে‌ছিল তখন হনুলুলুর স্হানীয় সময় বিকাল পাঁচটার মত হ‌বে আর‌কি! হনুলুল‌ুর নীল আকাশে তখন এক তোলা প‌রিমাণও মে‌ঘের কোন চিহ্ন ছিলনা। ই‌চ্ছে হ‌'চ্ছিল হনুলুলুকে, হনুলুলুর নিজস্ব আকাশ প‌রিসীমা থে‌কে রা‌তের বেলায় তার বিদ্যুতব‌াতি ঝলকা‌নো নয়না‌ভিরাম দৃশ্য অবগাহন করা। কিন্তু সূ‌র্যি মামা তখনও প্রস্হান না করায় গগন থে‌কে হনুলুলুকে দি‌নের রু‌পে দেখ‌তে হ‌ো‌লো। 

তাই বু‌ঝি হনুলুলু‌কে তার নিজ অন্তরীক্ষ থে‌কে রা‌তের বেলার সা‌জে না দেখার একটা অতৃপ্ত বাসনা র‌'য়েই গে‌লো। টেকআপ সম‌য়ে হনুলুলুর নগরবাসী তখনও বসতবাড়ী কিংবা কলকারখানায়  সন্ধা-প্রদীপ ধরায়‌নি কিংবা ‌বিদ্যুতের সুইচ বো‌র্ডে সুইচ টি‌পে নিয়ন বাতি তখনও জ্বালায়‌নি। তাই সেদিন আকাশ থে‌কে রা‌তের হন‌ুলুলুর রূপ দর্শন থে‌কে ব‌ঞ্চিত হ‌ওয়ায় মনটা ছি‌লো বেশখা‌নি বিষন্নতায় ভরা।

এটা আকাশ ভ্রম‌ণের ব্যর্থতা হি‌সে‌বে আমার জীব‌নে একটা স্হায়ী সাইন‌বো‌র্ডের আকা‌রে চো‌খের সাম‌নে যেন সবসময়ই লটকা‌নো  আ‌ছে, ত‌বে পরবর্তী‌তে আ‌মি আমার অন্য একটা আকাশ ভ্রম‌ণের সময় আকাশ থে‌কে রা‌তের প্যা‌রিস দে‌খে তার কিছুটা ক্ষ‌তি পু‌ষি‌য়ে নি‌য়ে‌ছিলাম। যাহোক, হনুলুলু থে‌কে পোর্টোরি‌কো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এই ১২ ঘণ্টার একটানা এবা‌রের আকাশ প‌থের ভ্রমণ ছিল অ‌তীব চমৎকার ও আরামদায়ক। 

আবহাওয়াটাও ছিল প্রায় সময়টা ধ‌রেই আমা‌দের সম্পূর্ণ অনুকু‌লে।এরই ম‌ধ্যে বু‌ঝি তাই‌রে-নাই‌রে কর‌তে-কর‌তে ঘণ্টা দুই কা‌টি‌য়ে দি‌য়ে‌ছি। তখন সকাল হওয়া-হওয়া ভাব। মজার ব্যাপারটা হ‌'লো, এধর‌নের দীর্ঘ আকাশ ভ্রম‌ণে এক ধর‌নের দিবা-নিশির যে অনবরত ল‌ু‌কোচু‌রি খেলা চল‌তে থা‌কে সেটা সৃ‌ষ্টিকর্তা আমাকে বু‌ঝি বাই‌স্কো‌পের মত নিজ চাক্ষুষ দর্শ‌নে এ‌কেবা‌রে প‌রিস্কার জল-জলন্ত উদাহরণ হি‌সে‌বে দে‌খি‌য়ে দি‌লেন। 

হনুলুলুর আকা‌শ তখনও যেন ঠিক প‌রিস্কারভা‌বে প‌রিস্কার হয়‌নি, তখনও খা‌নিকটা অন্ধকা‌রে আচচ্ছন্ন। আমা‌দের বহনকৃত মা‌র্কিনী গগন‌ভেদী প‌ঙ্খিরাজটি তখন প্রায় চ‌ল্লিশ হাজার ফ‌ুট উপর দি‌য়ে বু‌ঝি আকা‌শের কোল ঘেঁষে গো-‌গো কিংবা ‌শো-‌শো র‌বে ১২০০ মাই‌লেরও বেশী বে‌গে ছু‌ট‌ছে আর বু‌ঝি জানান দি‌চ্ছে যে, "‌দে‌খো আ‌মি বি‌শ্বের সব‌চে‌য়ে ধনাঢ্য ও উন্নত দে‌শের বিমান বা‌হিনীর অন্যতম ও অদ্ভূত এক বৃহাদাকার দ্রুতগামী আকাশযান, স‌ুতরাং, আমার প‌থ থে‌কে তোমরা স‌রে দাঁড়াও, আ‌মি আজ আকা‌শ প‌থের রাজা, কেউ ধা‌রের কা‌ছে আস‌লে পা‌বে তার উপযুক্ত সাজা। 

হা, এই‌তো সূ‌র্যি মামার মুচ‌কি হ‌া‌সি বু‌ঝি এমাত্র প্র‌তিভাত হ‌লো। সূ‌র্যি মামাও যেন আমা‌দের সা‌থে ভ্রম‌ণে বে‌রি‌য়ে‌ছে সুদুর সে‌ানার বাংলার রাজধানী ঢাকা থে‌কে। হঠাৎ সিটবেল্ট বাধার হু‌শিয়ারী এ‌লো, বু‌ঝি জায়ান্ট প‌ঙ্খিরাজ এয়ার-প‌কে‌টে প‌ড়ে‌ছে, এযাত্রায় এটাই তার প্রথম ধাক্কা। খ‌ুব স্বাভা‌বিক ও আপনগ‌তি‌তেই চ'ল‌ছে সে গন্ত‌ব্যের দি‌কে। 

হঠাৎ ম‌নিট‌রের দিকে তা‌কি‌য়েই যেন চক্ষ‌ু চড়কগাছ। প্লে‌নের অ‌ল্টিচ্যুড ও গ‌তি‌বেগ যেন হঠাৎ ক‌রেই এ দু‌' দি‌নের স‌র্ব্বোচ্চ রেকর্ড ছা‌ড়িয়ে‌ছে। নী‌চের দি‌কে হঠাৎ তা‌কি‌য়ে দে‌খি বেশ ক‌য়েকটা প্লেইন নিম্ন অল্টিচ্যুডে ভূ-ভা ক‌রে বি‌ভিন্ন ডাই‌রেকশনে ভিন্ন-‌ভিন্ন গ‌তি‌তে এ‌দিক-ও‌দিক উ‌ড়ে চ‌লে‌ছে, দে‌খে ম‌নে হ‌চ্ছে যেন সেগুলো অবলীলায় তৃতীয় মহাযু‌দ্ধের মহড়ায় অবতীর্ণ হ‌'য়ে‌ছে।

বাঙ্গালীরা খুবই অনুকরণ প্রি‌য় তাই বু‌ঝি আ‌মিও এরই ম‌ধ্যে কিছুটা মা‌র্কিনীদের অনুকরণ ক‌রে ফে‌লে‌ছি; না বল‌তে পা‌রেন সে‌মি-আ‌মে‌রিকান সে‌জে গিয়ে‌ছি। হনুলুলু থে‌কেই যে জি‌নিসটা আমার নজর কে‌ড়ে‌ছি‌লো সেটা হ‌লো ওরা দশ মি‌নিট পর পর পা‌নি পান ক‌রে, তাই পা‌নির বোতল হ‌'য়ে‌ছে তা‌দের নিত্য সঙ্গী। যেটা বল‌তে যে‌য়ে বেলাইন হ‌'য়ে গিয়েছিলাম-এটা এভা‌বে বলা যায়, "When you are in Rome, behave like a Roman".

তাই এমআরই (MRE) এর কথা ভু‌লে যে‌য়ে বুঝি আমার মত ক্ষুদ্রাকৃ‌তির বাঙ্গালীর হা‌তে সদা-সর্বদা পা‌নির বোতল শোভা পা‌চ্ছিল। "ওরাও খায় তাই বু‌ঝি আমরাও খায়" ব্যাপার‌টি বুঝি ঠিক এমনই দাঁড়ি‌য়ে‌ছে। ঘ‌ড়ি দে‌খে নিশ্চিত হ'লাম তখন সকাল ন'টা, বু‌ঝি মে‌ঘে-মে‌ঘে বেলা হ‌'য়ে গে‌ছে এমন‌টি আর‌কি!

এরই ভিতর কোন রকম আওয়াজ না দি‌য়েই অকস্মাৎ আবার এক মা‌র্কিনী সার্জে‌ন্টের অভ্যুদয়, ঠিক কি মতল‌বে তার শুভাগমন এখনও তা আ‌বিস্কার ক'র‌তে পা‌রি‌নি। অপেক্ষা কর‌ছি, দে‌খি বাচাধন কি ব‌লে?

চল‌বে.....

শামীমা আহমেদ/পর্ব ৩২





শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত( পর্ব ৩২)
শামীমা আহমেদ 

নায়লার অনাগত সন্তানের আগমনের খবরে রীতিমতো একটনি ট্রাকের সমপরিমাণ জিনিসপত্র  কেনাকাটা করা হয়েছে। মা যেভাবে যা চেয়েছে, এছাড়া শায়লাও ইউটিউব দেখে দেখে মাকে অনেককিছু চিনিয়েছে।আজ সবই কেনা শেষ হলো। আগামীকাল ছুটির দিন। মা রাহাতকে নিয়ে, নায়লাকে দেখতে, নায়লার বসুন্ধরার বাসায়  যাবে। যদিও মাত্রই নায়লার সুখবরটি এসেছে তবুও, মেয়েদের সন্তান হবার খবর বাপের বাড়ি পৌছালে তখন অনেক দায়িত্ব পড়ে যায়।মা বেশ খুশি মনে আজ ঘুমাতে গেলো।কাল কোন শাড়িটা পরে যাবে সেটা যেন শায়লা গুছিয়ে দেয় মা কোমল অনুরোধ রাখল।অনেক কিছু রান্না করেও নেয়া হচ্ছে।মেয়ের এখন এমন সময় কখন কি খেতে চায়,কখন কেমন লাগে,আর জামাইয়ের প্রিয় ভুনা গরুর মাংস , পিঠা পায়েশ,সে এক বিশাল আয়োজন!মায়ের চোখে মুখে সে কি তৃপ্তির হাসি! আর মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে শায়লাও ভীষণ আনন্দিত! যদিও ভেতরে তার কী বয়ে যাচ্ছে সেটা বাসার কেউই বুঝতে পারছে না। সবকিছুকেই চেপে রেখে শায়লা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। সে খুব করেই  চাইছে,আর যেন মনে  শিহাবের ভাবনা না আসে।আর এলেও সেটাকে প্রশয় না দেয়া।
মা  কাল দুপুরের পর রাহাতকে নিয়ে নায়লার বাসায় যাবে।নায়লার শ্বশুরবাড়ি অবস্থা এমনিতে অনেক ধনী হলেও শায়লাদের পরিবারটিকেও তারা খুবই শ্রদ্ধার চোখে দেখে।
শায়লা রাতের খাবারের সব কিছু গুছিয়ে নিজের ঘরে এলো।কাল রাহাতের অফিস নেই।সকালে একটু ঘুমানো যাবে।শহুরে মানুষদের খুবই কাঙ্ক্ষিত এই ছুটির দিনটি।
শায়লার মনে এক ঝলক শিহাবের ভাবনা ভেসে এলো। কাল নিশ্চয়ই শিহাব জিগাতলার বাসায় যাবে মা বাবা কে দেখতে। ছোট্ট আরাফ সারা সপ্তাহ বাবার জন্য অপেক্ষায় থাকে। সবাইতো যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত।কেবল শায়লাই একাকী কাটাবে ছুটির দিনটি।আলাদা করে আর দিন উদযাপনের কিছু নেই তার জীবনে।
সেদিনের কথায় 
শায়লা বেশ বুঝে নিয়েছে শিহাবের বক্তব্য  বা শিহাব যা বুঝাতে চেয়েছে। যদি এমনি ভাবনা হবে তবে কেন এতো আবেগে কাছে আসা। সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করা।অচেনা অন্য একজন মানুষকে এতটা আপন ভাবা! 
শিহাবের প্রতি শায়লার মনে বেশ রাগ জমা হলো। তাইতো এমনটি ভাবতে কোন দ্বিধা কাজ করলো না।সে ভেবে নিলো অকপটে, 
আসলে এরা এমনি হয়, কিছুদিন কোন মেয়ের কাছাকাছি এসে তারপর একটা অজুহাত দেখিয়ে দূরে সরে যায়।আর আবেগী মেয়েগুলোও এদের কথাকে বিশ্বাস করে মনের খুব গভীরে জায়গা দিয়ে ফেলে। তারপর যা হবার তাই হয়। আঘাতের কষ্ট বুকে নিয়ে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে। শায়লা মনকে শক্ত করলো।সে শিহাবের স্মৃতিগুলো সব ভুলে যেতে চাইছে।ভেবে নিল সে হয়তো কোন ভুল পথে হাঁটছিল।ভালোই হলো অনেক বড় কোন  ভুল করবার আগে শিহাব তাকে সচেতন করে দিলো। যদিও এদিকটায় ভাবতে গেলে শিহাব একটি দায়িত্ববান মানুষেরই পরিচয় দিয়েছে।কিন্তু দিনের পর দিন সে যেভাবে শায়লার সাথে যোগাযোগ রেখে চলছিল তাতে শায়লা কি বুঝে নিবে?তার মনটাতো  কাদামাটির মত নরম ছিল।শিহাবইতো তাকে প্রতিমা গড়ে পুজার আসনে নিজেকে বসিয়েছিল। তার সাথে দেখা করা, সময়ে অসময়ে ফোন করা,শায়লাদের পরিবারের সবার খোঁজ খবর রাখা,শায়লার অতীতের সবকিছু জেনেও মনে ভেতর আশার প্রদীপ জ্বালানো,তাহলে আজ সবই মিথ্যা হলো। 
শায়লা তার অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক ভাবলো।ঘরের বাতি নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে আপন মনে ভেবে চলেছে। শায়লার  কোথা থেকে জীবনটা শুরু হলো আর আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। কেবলি হোঁচট খাওয়া আবার দাঁড়িয়ে পথ চলা। নিজের জন্য কিছুই ভাবেনি।পরিবারের সুখটাকেই বড় করে দেখেছে। রাহাত আর নায়লাকে মানুষ করেছে।আজ নায়লা সুখের সাগরে ভাসছে আর রাহাত জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে রুবানাকে নিয়ে  নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর।হঠাৎ বুকের মাঝে এক বিশাল শূন্যতা অনুভব করলো শায়লা।ভীষণ একাকী লাগছে নিজেকে।বারবার শিহাবের মুখটা ভেসে উঠছে। মনে হচ্ছে শিহাব এখন তার পাশে থাকলে খুব ভালো লাগতো।নানান ভাবনায় শায়লা অস্থির হয়ে উঠল।অন্ধকারে সে মোবাইলটা হাতরে বেড়ালো।নাহ! কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না।সে এখুনি শিহাবকে কল দিবে।এক্ষুনি চলে আসতে বলবে। শায়লার বিছানায় ছটফট করতে লাগলো।সিলিং ফ্যানটি ফুল স্পীডে চলছে। শায়লার চুলগুলো এলোমেলো  হয়ে উড়ছে।শায়লা বেশ ঘামছে।পা দুটো বারবার বিছানায় আছড়ে পড়ছে।শায়লা গোঙানির মত শব্দ করে কেবলই  শিহাবকে নাম ধরে ডেকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সে শিহাবকে দেখতে পাচ্ছে।সেই যে সেই প্রথম দেখার দিনের মত পরনে নীল জিন্সের শার্ট, চোখে রোদচশমা,শিহাব বাইকের স্টার্ট বন্ধ করছে।শায়লা নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে।প্রচন্ড বেগে তার হার্ট বিট করছে।হয়তো পালস বেড়ে গেছে।শায়লা চোখ দুটো সেই যে বন্ধ হয়েছে আর খুলতে পারছে না।বন্ধ চোখেও সে শুধু শিহাবকেই যেন দেখতে পাচ্ছে।শায়লা নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না।একসময় নির্জীব হয়ে বিছানায় স্থির হয়ে রইল। হাতের মুঠোয় মোবাইলটা ধরা ছিল, মনে হচ্ছে এই মোবাইলটাই যেন শিহাবের প্রানভোমরা।শায়লা তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে।কিছুক্ষন পর ঘরটা একেবারে নিঃশব্দে ঢেকে গেলো। দেয়াল ঘড়িতে  তখন রাত তিনটা বাজছে।



চলবে...

হাজেরা কোরেশী অপি






ত্যাগের বিনিময়ে


তব তরে ঋদ্ধ আমি
ওগো জন্মভূমি,
দূর প্রবাসে বসত করে
তোমার চরণ চুমি।

কল্প রাজ্যের গল্পতো নয়
তোমার বিজয় কথা,
কত প্রাণের বিনিময়ে
পেলে স্বাধীনতা।

যাদের খুনের বিনিময়ে
বিজয় এলো দেশে,
অনায়াসে জীবন বিলি
করে দিলো হেসে।

তাদের অর্জন কতটুকু
করছি সম্মান বলো?
হিসেব-নিকেশ করতে বসি
দল বেঁধে আজ চলো।

ওদের ত্যাগের বিনিময়ে
বলছি মনের মতো,
নিত্যদিনই লিখছি কাব্য
বাংলা বোলে যত।

বৃথা যেতে দিওনা গো
ওদের আত্মাহুতি,
সোনার বাংলার দিকে দিকে
ছড়াও সবে জ্যোতি।

নইলে কেহই পাবোনা ছাড়
জবাব দিতেই হবে,
ওদের কান্নায় চারিপাশটা
ভারী হয়েই রবে।

মোঃসেলিম মিয়া 






🇧🇩"১৬ ডিসেম্বর




পূর্ব বাংলা পশ্চিম বাংলা ভূখন্ড দুই নাম,
ভাষাগত জাতি বিভেদ পর্বতের সমান। 
চাকরি বাকরি উচ্চ আসন
সব কিছুতেই পেশির জোর। 
চাপিয়ে দিতে উর্দু ভাষা নিজের মত করে রুল!
শিল্প নীতি শ্রম নীতি সব কিছুতেই খুটির জোর, 
রাজনীতিতে বেজায় চাল 
ভোট ডাকাতির হুলুস্থুল! 
পূর্ব বাংলার উন্নয়নে 
সব কিছুতেই স্থবির রথ,
কথায় কথায় শোষণ পিড়ন 
রক্তে ভেজায় রাজপথ! 
স্বাধীনতার ডাক পেতে তাই
 শেখ মুজিবের উদ্ভব। 
বজ্রকন্ঠে দিলেন ডাক স্বাধীনতার মর্ম বাণী, 
ঝাঁপিয়ে পড়ে আপামর জনতা হটিয়ে দিলেন পাকবাহিনী। 
মুক্তি বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে গড়লেন প্রতিরোধ, 
পিছপা হয়নি জীবন দিয়ে নিয়েছেন প্রতিশোধ। 
বুকের মাঝে মাইন বেঁধে 
উড়িয়ে দিয়েছেন ট্যাংক,
পাক সেনার দল নতজানু 
গুটিয়ে নিয়েছে ভয়ে ঠ্যাং।
নয় মাস যুদ্ধ করে বিজয় যখন ঘরে,
মা বোনদের ইজ্জত বিলিন পাক-সেনাদের তরে।
ত্রিশ লক্ষ নিরীহ প্রাণ 
বুলেটে ক্ষত বিক্ষত!
তাজা রক্তে ভাসিয়ে পথ
হয়নি তবু অনুতপ্ত। 
পূর্ব বাংলা হয়েছে স্বাধীন পেয়েছি  স্বাতন্ত্র মানচিত্র। 
লাল সবুজের পতাকা এখন তরতরিয়ে উড়ে, 
১৬ডিসেম্বর বিজয়ের আনন্দ তাইতো ধ্বনিত প্রতি ঘরে!!!

মমতা রায় চৌধুরী/৬৯






উপন্যাস 
টানাপোড়েন ৬৯

প্রতিবন্ধীর স্বপ্ন

মমতা রায় চৌধুরী



মনোজের এতবার ডাকাতে রেখা একটু বিরক্তিস্বরে এসে বলল" কেন গো এত ডাকছিলে কেন? কি হয়েছে ?কি চাই?'
মনোজ যেন হঠাৎ করে রেখাকে এভাবে কথা বলতে দেখে  একটু বিস্মিত হয়।মনোজ ভাবতে থাকে এ  কোন রেখাকে দেখছে হঠাৎ করে  রেখার ভিতর এমন কি রেখাপাত করলো ?এমন কি দ্বন্দ্ব হলো? যার জন্য এভাবে কথা বলছে?"
রেখা বলল 'হ্যাঁ, করে মুখের দিকে তাকিয়ে কেন বল?"
মনোজ বললো 'না মানে তোমার ফোন?"
রেখা বললা" আমার ফোন কি হয়েছে?'
মনোজ বলল'তোমার ফোন বেজেছে কয়েকবার।'
রেখা বলল 'কে করেছে?'
মনোজ বলল 'আমি দেখি নি।'
রেখা বলল ' তুমি কি ফোনটা কে করেছে দেখলে না?
রেখা একটু গজ গজ করতে করতে ফোনটা ঘেটে দেখল কাকিমার মিস কল হয়ে আছে আর রিম্পাদির 
আরেকটা অচেনা নম্বরের মিসকল হয়েছে।
মনে মনে ভাবছে এই নম্বরটা তো ওর ফোনে সেভ করা নেই ।কে করতে পারে?
মনোজ  বললো  'কি ব্যাপার ফোনটা হাতে নিয়ে মিসকল দেখে এত চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লে?'
রেখা বলল 'দুটো নম্বর তো চেনা কিন্তু আর একটা নম্বর না আননোন নম্বর?'
মনোজ বলল 'তোমার চেনা কেউ হয় তো। না হলে এত বার মিসকল কেন করবে বলো?' 
রেখা বলল 'আননোন নম্বরটাই বেশি বার রিং হয়েছে। কিন্তু ফোন করব কিনা বুঝতে পারছি না? কি যে করি?'
মনোজ বললো 'একবার করে দেখো যদি কেউ তোমার চেনা কেও হয় ।হয়তো  নম্বরটা চেঞ্জ করেছে এমন হতো হতে পারে?'
রেখা বললো 'তাহলে করেই দেখি? না কি?'
মনোজ ঘাড় নেড়ে  সম্মতি জানালো।
রেখা নাম্বরটা ডায়াল করল********৩২
রেখা ফোন নম্বরটা ডায়াল করার সঙ্গে সঙ্গে রিং হলো
'আমি শুধু রইনু বাকি, যা ছিল গেল দূরে... ।'রেখা মনে মনে ভাবলো এত সুন্দর একটি গান কে হতে পারে ?নিশ্চয়ই তার মনটাও খুব সুন্দর। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একজন সুন্দর সুরেলা কণ্ঠে বলল' 'হ্যালো'।
রেখা একটু হকচকিয়ে গলায় বলল' হ্যালো আমার এই নম্বর থেকে ফোন এসেছিল?'
অপরিচিতা বলল'ম্যাডাম আমি নির্মলা বলছি।'
রেখা একটু অবাক হয়ে  বললো' কোন নির্মলা?'
নির্মলা বলল 'আমি আপনার প্রতিবন্ধী ছাত্রী নির্মলা।'
রেখা একটু মনে কষ্ট পেল ।তারপর বলল কিছু মনে করো না ,আসলে আমি চিনতে পারি নি তো তাই?'
নির্মলা বলল 'না, না ম্যাম ।এত এত মেয়ের মাঝখানে কি সবার কথা মনে থাকে?'
রেখা বললো' এখনও কিন্তু আমার মনে আছে ।তোমার অপরিসীম ধৈর্য, তোমার একাগ্রতা, আর মনোবলের জন্য। আসলে আর একজনের নাম ও তো নির্মলা ছিল ।এজন্য একটু জিজ্ঞেস করেছি গো, কোন নির্মলা? কষ্ট পাও নি তো?'
নির্মালা বলল' না ,না ,ম্যাম ।আপনার কথায় আমি কষ্ট পাব ?সেটা কখনো হয়। আপনি আমার জীবনে কি ?সেটা তো শুধু আমিই জানি।'
রেখা বলল 'না ,না , কি এমন করেছি আমি বলো?'
নির্মালা বলল 'সেটা তো আপনার মহানুভবতা ম্যাম।'
রেখা বলল'নির্মলা ,আমাকে ওই আসনে ফেলো না প্লিজ।'
নির্মালা  এবার হেসে বলল' প্রণাম নেবেন ম্যাম। আর আশীর্বাদ করুন জীবনে যেন অনেক বড় হতে পারি ।আর মানুষের মতো মানুষ হতে পারি।'
রেখা বলল 'কি যে ভালো লাগছে তোমার ফোনটা পেয়ে ,কি বলবো তোমায় ।কিছু মনে করো না তোমার ফোনটা বেজে গেছে ,আমি ধরতে পারি নি ।আমি একটু অন্য দিকে কাজে ব্যস্ত ছিলাম তো?'
নির্মলা বলল 'না আমারও ঠিক হয় নি ।এটা আমার বোঝা উচিত ছিল কাজের টাইম। আসলে আমি একটা খবর দেবার জন্যে আপনাকে ফোনটা করেছি।'
রেখা বলল 'ও তাই?'
নির্মলা বলল' হ্যাঁ ম্যাম ,আপনি যদি না থাকতেন আজকে আমার  এই দিনটা দেখা সম্ভব হতো না।
আমি এতদূর আসতেই পারতাম না।'
রেখা বলল' আমি আবার তোমার জন্য কি করলাম?'
নির্মলা বলল 'সে তো আমি জানি। আমি অতটা অকৃতজ্ঞ নই।'
রেখা বলল 'সে আমি জানি। তুমি কি খবর দিতে চাইছো? যেটা গেস করছি সেটাই কি? তোমার কি ফাইনাল ইয়ার কমপ্লিট হল?'
নির্মলা বলল' আমি' ল' নিয়ে  পড়ছিলাম ।আমার যেটা ইচ্ছে ছিলো , সেটা পূরণ হয়েছে ম্যাম ।আমার ফাইনাল ইয়ার কমপ্লিট হল।'
রেখা বলল 'তাই বুঝি? প্রথমে তোমাকে অনেক অনেক ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। সঙ্গে আমার স্নেহ ভালোবাসা আর আশীর্বাদ ।তুমি জীবনে আরো অনেক বড় হও ।কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হও। সঙ্গ
সুনামের সঙ্গে তুমি কাজ করো।'
নির্মলা বলল' থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাম'।
রেখা বলল 'ও একদিন তুমি আমার বাড়িতে চলে এসো।'
নির্মলা বলল 'যাব ,একদিন ম্যাম ।আপনাকে তো আমায় প্রণাম করতেই হবে ।যাবো সময় করে একদিন যাবো।'
নির্মলা বলল' ম্যাম আজকে আরো অনেক বেশি কথা বলতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু আমার একটা আর্জেন্ট কাজ এসে গেছে। আমি যার আন্ডারে প্র্যাকটিস করছি ,ওই স্যারের বাড়ি যেতে হবে।'
রেখা বলল'ও শিওর।'
নির্মলা বলল 'ফোনটা তাহলে রাখছি।'
রেখা বললো 'হ্যাঁ রাখো। ভালো থেকো। সর্বদা আনন্দে থেকো।'
হঠাৎই রেখার মনটা কেমন ফুরফুরে হয়ে গেল। ভাবতে লাগল প্রতিভা মানুষকে পরিচিতি দেয় আর সেই পরিচয় নিয়ে সমাজকে ফুলে ফলে বিকশিত করে তোলে ।সমৃদ্ধ হয় দেশ ।নিকষ কালো অন্ধকার জীবনে উজ্জ্বল আলোর বাতাবরণ তৈরি হয় । প্রতিভার মধ্যে দিয়েই সে রকম একজন প্রতিভাধারী হচ্ছে এই নির্মলা।'
মনোজ বলল 'কি গো ফোনটা কেটে কেমন যেন একটা স্বপ্নের মধ্যে চলে গেলে?'
রেখা বললো 'আজকে আমার আনন্দ করার দিন ।এত আনন্দ আমি কোথায় রাখবো ?আমি জানি না।
মনোজ বলল 'কি হয়েছে?'
রেখা বললো 'আমার একজন  প্রতিবন্ধী ছাত্রী । প্রথমে স্কুলে ভর্তি নেয়া হচ্ছিল না শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে। আমি এর জন্য ভীষণভাবে বরদি কে জোরজবস্তি করেছিলাম এবং অনেকটা লড়তে হয়েছিল বলা যায়। 
মনোজ বলল 'তাই বুঝি? জানো এই মেয়েটি
প্রতিনিয়ত লড়াই করেছে ।সেই লড়াই করার মানসিকতাকে পাথেয় করে ও লড়াকু আর সংগ্রামী হয়ে উঠেছিল।'
মনোজ বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় ছিল এবার উঠে বসে বলল'খুবই ইন্টারেস্টিং তো? বলো তুমি এর সম্পর্কে একটু শুনি। জানতে বড় লোভ
 হচ্ছে।'
রেখা বলল'  নির্মলা  ডাক নাম নিমু। জন্ম থেকেই ওর দুটো হাত আর একটা পা অকেজো।
মনোজ বলল 'বলছ কি?'
রেখা বললো 'ঠিকই বলছি ।শুধু তাই নয় জানো তো হাত দিয়ে লিখতে পারতো না, তাই পায়ের সাহায্য নিয়ে লিখত। ৮০শতাংশ প্রতিবন্ধী ,।তাই বলে কিন্তু সহজে হাল ছেড়ে দেয় নি। '
মনোজ বলল 'সঙ্গে ছিল দারিদ্র আর আর্থিক অনটন। এজন্য স্কুলে ভর্তি নেওয়া হলেও সমস্যা হচ্ছিল। তখন আমি নিজের দায়িত্বে ওকে ভর্তি করেছিলাম ।জানো তো আমার একটা চ্যালেঞ্জ ছিল ওকে নিয়ে ।কারণ আমি জানতাম ও পারবে ,ওর ভেতরে আমি সেই আগুনটা দেখতে পেয়েছিলাম ,ওর ভেতরে একটা খিদে ছিল জানো তো?
রেখা আপন মনে কথাগুলো বলে যাচ্ছে। মনোজ কথা বলা রেখার চোখের  দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর শুনছে।
হঠাৎ রেখা চোখ বোলাতে  বোলাতে বলল 'কি দেখছ তুমি এমন করে ?আমার কথা তুমি শুনছো না?'
মনোজ বলল' শুনছি, তুমি বলো।'
রেখা বললো 'জান ,ওর সেসময় ভর্তির টাকা ,তাছাড়া স্কুলে যে 'যাবতীয় খরচগুলো ছিল ।সেগুলো আমি  বেয়ার করতাম ।তোমাকে বলা হয় নি।'
মনোজ বলল' আমাকে বলো নি কেন? আমি বারন করতাম?'
রেখা বলল 'কি জানি কেন বললাম না তোমাকে?'
মনোজ বলল ' ঠিক আছে ।তার পরের কথা বলো?' রেখা বলল'বলছি ২০১৩ সালে তো আমাদের স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করল কৃতিত্বের সঙ্গে। তারপরে উচ্চমাধ্যমিক তারপর কলেজ ।এরপর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন :নিয়ে পড়াশোনা করল।'
মনোজ বলল 'তারপর?'
রেখা বলল 'ও একদিন কেঁদে কেঁদে বলেছিল ও প্রতিবন্ধী বলে ওর আশেপাশে যারা ছিল প্রত্যেকেই ওর কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল ।এমন কি পড়াশোনার ব্যাপারেও স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে ব্লক ,প্রশাসন কেউ  বিন্দুমাত্র কোন সহযোগিতা করে নি ।তারপর একদিন আমার কাছে আসলো । ওর খরচ আমিই চালিয়েছিলাম।
মনোজ বলল 'কলেজের খরচ কে চালাবে?'
বাড়ির লোকজন এই কথাটাই তো বলছিল' একদিন এসে খুব কান্নাকাটি শুরু করলো ।স্কুলের বাইরে আমাকে ডেকে নিয়ে তখন আমি বললাম যে ,তুই কান্নাকাটি করিস না। এই দুর্দিনে তোকে কেউ সাহায্য করুক না ,করুক আমি তোকে সাহায্য করবো ।সেই সময় তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে না যে, হঠাৎ করে তোমার এত টাকার প্রয়োজন এসে পড়ল? 60 হাজার টাকার মতো খরচ করেছিলাম ওর পড়ার জন্য ।আজ ও একজন সফল আইনজীবী হতে চলেছে ।এর থেকে গর্বের আর কী হতে পারে বল তো?'
মনোজ বলল 'এটা তো গর্ব করার মতোই।'
রেখা বলল 'জানো আমি চেয়েছিলাম যে প্রতিবন্ধী বলে হেলা ফেলা নয়। যদি প্রতিভা থাকে, মনের জোর থাকে , তাকে বাইরে থেকে আরও বেশি সাপোর্ট করা উচিত ।যেটা ওর ক্ষেত্রে হচ্ছিল না ।ওর বাবা-মা ও ভেঙে পড়েছিল ।'
মনোজ বলল 'তাই?'
রেখা বলল' ওর মা বাবা বলেছিল কি করে মেয়ের পড়াশোনার খরচ টা চালাবে ?তখন আমার কাছে এসেছিলো।'
মনোজ বলল 'তুমি এক মানবিক কাজ করেছো। এটাই করা উচিত ছিল।'
রেখা মনোজকে জড়িয়ে ধরে বলল 'সত্যি বলছো?'
মনোজ  বলল' হ্যাঁ গো।'
রেখা বলল' জানো, আজকে আমার টিচার হিসেবে মনে হচ্ছে , টিচাররা সত্যিই মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকতার পেশার মহান ব্রত  নিয়ে এসেছিলাম, তার কিছুটা হলেও করতে পেরেছি।'
মনোজ বলল'একদম ।তুমি ভেবো না ওই মেয়ে অনেক দূর এগোবে।'
রেখা বলল শারীরিক অক্ষমতা জীবনে সাফল্য পাবার জন্য কোন প্রতিবন্ধকতা নয় ।যদি মনের জোর ,অধ্যাবসায়, নিষ্ঠা ,একাগ্রতা এবং ধৈর্য থাকে তাহলে সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে যাবেই।'
মনোজ বলল' ১০০ বার।'
রেখা উচ্ছ্বসিত ভাবে বলে উঠলো'দেখো একদিন
 নির্মলা সকলকে তাক লাগিয়ে দেবে । স্বর্ণালী দিনের অপেক্ষায় যেদিন খবরের কাগজে বড় বড় করে হেডিং থাকবে প্রতিবন্ধী ছাত্রী নির্মলা একজন সফল আইনজীবী।'
মনোজ বলল' অবশ্যই ওর এই জীবন সংগ্রামের কাহিনি অন্যদেরকেও  উদ্বুদ্ধ করবে।'