১৫ ডিসেম্বর ২০২১

শামীমা আহমেদ/পর্ব ৩২





শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত( পর্ব ৩২)
শামীমা আহমেদ 

নায়লার অনাগত সন্তানের আগমনের খবরে রীতিমতো একটনি ট্রাকের সমপরিমাণ জিনিসপত্র  কেনাকাটা করা হয়েছে। মা যেভাবে যা চেয়েছে, এছাড়া শায়লাও ইউটিউব দেখে দেখে মাকে অনেককিছু চিনিয়েছে।আজ সবই কেনা শেষ হলো। আগামীকাল ছুটির দিন। মা রাহাতকে নিয়ে, নায়লাকে দেখতে, নায়লার বসুন্ধরার বাসায়  যাবে। যদিও মাত্রই নায়লার সুখবরটি এসেছে তবুও, মেয়েদের সন্তান হবার খবর বাপের বাড়ি পৌছালে তখন অনেক দায়িত্ব পড়ে যায়।মা বেশ খুশি মনে আজ ঘুমাতে গেলো।কাল কোন শাড়িটা পরে যাবে সেটা যেন শায়লা গুছিয়ে দেয় মা কোমল অনুরোধ রাখল।অনেক কিছু রান্না করেও নেয়া হচ্ছে।মেয়ের এখন এমন সময় কখন কি খেতে চায়,কখন কেমন লাগে,আর জামাইয়ের প্রিয় ভুনা গরুর মাংস , পিঠা পায়েশ,সে এক বিশাল আয়োজন!মায়ের চোখে মুখে সে কি তৃপ্তির হাসি! আর মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে শায়লাও ভীষণ আনন্দিত! যদিও ভেতরে তার কী বয়ে যাচ্ছে সেটা বাসার কেউই বুঝতে পারছে না। সবকিছুকেই চেপে রেখে শায়লা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। সে খুব করেই  চাইছে,আর যেন মনে  শিহাবের ভাবনা না আসে।আর এলেও সেটাকে প্রশয় না দেয়া।
মা  কাল দুপুরের পর রাহাতকে নিয়ে নায়লার বাসায় যাবে।নায়লার শ্বশুরবাড়ি অবস্থা এমনিতে অনেক ধনী হলেও শায়লাদের পরিবারটিকেও তারা খুবই শ্রদ্ধার চোখে দেখে।
শায়লা রাতের খাবারের সব কিছু গুছিয়ে নিজের ঘরে এলো।কাল রাহাতের অফিস নেই।সকালে একটু ঘুমানো যাবে।শহুরে মানুষদের খুবই কাঙ্ক্ষিত এই ছুটির দিনটি।
শায়লার মনে এক ঝলক শিহাবের ভাবনা ভেসে এলো। কাল নিশ্চয়ই শিহাব জিগাতলার বাসায় যাবে মা বাবা কে দেখতে। ছোট্ট আরাফ সারা সপ্তাহ বাবার জন্য অপেক্ষায় থাকে। সবাইতো যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত।কেবল শায়লাই একাকী কাটাবে ছুটির দিনটি।আলাদা করে আর দিন উদযাপনের কিছু নেই তার জীবনে।
সেদিনের কথায় 
শায়লা বেশ বুঝে নিয়েছে শিহাবের বক্তব্য  বা শিহাব যা বুঝাতে চেয়েছে। যদি এমনি ভাবনা হবে তবে কেন এতো আবেগে কাছে আসা। সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করা।অচেনা অন্য একজন মানুষকে এতটা আপন ভাবা! 
শিহাবের প্রতি শায়লার মনে বেশ রাগ জমা হলো। তাইতো এমনটি ভাবতে কোন দ্বিধা কাজ করলো না।সে ভেবে নিলো অকপটে, 
আসলে এরা এমনি হয়, কিছুদিন কোন মেয়ের কাছাকাছি এসে তারপর একটা অজুহাত দেখিয়ে দূরে সরে যায়।আর আবেগী মেয়েগুলোও এদের কথাকে বিশ্বাস করে মনের খুব গভীরে জায়গা দিয়ে ফেলে। তারপর যা হবার তাই হয়। আঘাতের কষ্ট বুকে নিয়ে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে। শায়লা মনকে শক্ত করলো।সে শিহাবের স্মৃতিগুলো সব ভুলে যেতে চাইছে।ভেবে নিল সে হয়তো কোন ভুল পথে হাঁটছিল।ভালোই হলো অনেক বড় কোন  ভুল করবার আগে শিহাব তাকে সচেতন করে দিলো। যদিও এদিকটায় ভাবতে গেলে শিহাব একটি দায়িত্ববান মানুষেরই পরিচয় দিয়েছে।কিন্তু দিনের পর দিন সে যেভাবে শায়লার সাথে যোগাযোগ রেখে চলছিল তাতে শায়লা কি বুঝে নিবে?তার মনটাতো  কাদামাটির মত নরম ছিল।শিহাবইতো তাকে প্রতিমা গড়ে পুজার আসনে নিজেকে বসিয়েছিল। তার সাথে দেখা করা, সময়ে অসময়ে ফোন করা,শায়লাদের পরিবারের সবার খোঁজ খবর রাখা,শায়লার অতীতের সবকিছু জেনেও মনে ভেতর আশার প্রদীপ জ্বালানো,তাহলে আজ সবই মিথ্যা হলো। 
শায়লা তার অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক ভাবলো।ঘরের বাতি নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে আপন মনে ভেবে চলেছে। শায়লার  কোথা থেকে জীবনটা শুরু হলো আর আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। কেবলি হোঁচট খাওয়া আবার দাঁড়িয়ে পথ চলা। নিজের জন্য কিছুই ভাবেনি।পরিবারের সুখটাকেই বড় করে দেখেছে। রাহাত আর নায়লাকে মানুষ করেছে।আজ নায়লা সুখের সাগরে ভাসছে আর রাহাত জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে রুবানাকে নিয়ে  নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর।হঠাৎ বুকের মাঝে এক বিশাল শূন্যতা অনুভব করলো শায়লা।ভীষণ একাকী লাগছে নিজেকে।বারবার শিহাবের মুখটা ভেসে উঠছে। মনে হচ্ছে শিহাব এখন তার পাশে থাকলে খুব ভালো লাগতো।নানান ভাবনায় শায়লা অস্থির হয়ে উঠল।অন্ধকারে সে মোবাইলটা হাতরে বেড়ালো।নাহ! কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না।সে এখুনি শিহাবকে কল দিবে।এক্ষুনি চলে আসতে বলবে। শায়লার বিছানায় ছটফট করতে লাগলো।সিলিং ফ্যানটি ফুল স্পীডে চলছে। শায়লার চুলগুলো এলোমেলো  হয়ে উড়ছে।শায়লা বেশ ঘামছে।পা দুটো বারবার বিছানায় আছড়ে পড়ছে।শায়লা গোঙানির মত শব্দ করে কেবলই  শিহাবকে নাম ধরে ডেকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সে শিহাবকে দেখতে পাচ্ছে।সেই যে সেই প্রথম দেখার দিনের মত পরনে নীল জিন্সের শার্ট, চোখে রোদচশমা,শিহাব বাইকের স্টার্ট বন্ধ করছে।শায়লা নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে।প্রচন্ড বেগে তার হার্ট বিট করছে।হয়তো পালস বেড়ে গেছে।শায়লা চোখ দুটো সেই যে বন্ধ হয়েছে আর খুলতে পারছে না।বন্ধ চোখেও সে শুধু শিহাবকেই যেন দেখতে পাচ্ছে।শায়লা নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না।একসময় নির্জীব হয়ে বিছানায় স্থির হয়ে রইল। হাতের মুঠোয় মোবাইলটা ধরা ছিল, মনে হচ্ছে এই মোবাইলটাই যেন শিহাবের প্রানভোমরা।শায়লা তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে।কিছুক্ষন পর ঘরটা একেবারে নিঃশব্দে ঢেকে গেলো। দেয়াল ঘড়িতে  তখন রাত তিনটা বাজছে।



চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much